শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

মালদ্বীপ ভ্রমণ ২০২৩ (পর্ব-০২)

সূচীপত্র:

 ২২-এপ্রিল-২০২৩ শনিবার

প্রথম দিন ঢাকা থেকে মালে এসে হোটেলে উঠেছিলাম। আর চারিদিকে একটু হেঁটে দেখেছি। পরদিন শনিবার ২২-এপ্রিল আমরা মালে শহরে গিয়ে whale submarine ride এ সমূদ্রের নিচে ডাইভ দিয়েছি। এরপর মালে শহরটা একটু হেঁটে ঘুরে দেখেছি। 

Whale submarine এ চড়তে হলে সেটা আগে থেকে বুক করতে হবে। জনপ্রতি ৭১ ~৮৫ ডলার করে লাগে বলে ওয়েবসাইটে দেখেছি। আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট বলেছিল ৭৫ ডলার লাগবে। ঈদের দিন কিংবা বৃষ্টি থাকলে এই রাইড হয়তো বন্ধ থাকবে, তাই দেশ থেকে সেটা বুকিং দিয়ে যেতে পারিনি। শুক্রবার এখানে পৌঁছে দেখি সেদিন মালদ্বীপে ঈদ, কাজেই পরদিন এই রাইড চলবে। তাই আগেরদিন হোটেলে পৌঁছেই রুমে যাওয়ার আগেই কাউন্টার থেকে এটা বুকিং দিতে বললাম। ওনারা প্রথমে বললো ৮৫ ডলার করে লাগবে। পরে যখন বললাম আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট বলেছে ৭৫ ডলার, তখন বললো, আচ্ছা দেখি একটু যোগাযোগ করে। কিছুক্ষণ পর, এসে বললো ঠিক আছে। সাথে সাথেই ৫ জনের জন্য ৭৫*৫ = ৩৭৫ ডলার দিয়ে দিলাম। ঠিক হল, পরেরদিন সকালের রাইডে জায়াগা নাই, তাই দুপুরের রাইডে যাব। আমাদের সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে রওনা দিতে হবে। আর মালে'র জেটি থেকে নৌযান ছাড়বে ১১:৪৫ মিনিটে।

সকাল বেলা উঠে বারান্দা থেকে অসাধারণ দৃশ্যটা দেখে হোটেলের প্যাকেজের নাস্তা খেতে নিচে নামলাম

সামনে কোরাল রীফটা দেখা যাচ্ছে। এখন ভাটা। তাই ঢেউ ওপাশে। গত সন্ধ্যায় পানি বেশি ছিল। এখন সামনের অংশটুকুতে আক্ষরিক অর্থেই হাঁটু পনি

এখানে নাস্তা বুফে নয়। প্রথমে ফল আর জুস দিল। তারপর ডিম (২টা), পাউরুটি (২ স্লাইস), সসেজ (১টা) আর মাখন দিল। শেষে কফি। নাস্তা বেশি কিংবা কম মনে হয় নি।


আমাদের হোটেলের সামনের সাইনবোর্ড

হোটেলের নিচতলায় রেস্টুরেন্টের সামনে সমূদ্র দেখা যায় এভাবে

এরপর কন্যা এবং তাঁর নানা-নানী সহ আমরা একটু হাঁটাহাঁটি করতে বের হলাম। উদ্দেশ্য হল, গতকাল হাঁটাহাঁটি করে ফেরার পথে হোটেলের খুব কাছে যে দোকানপাট দেখেছি, সেগুলো দেখানো, যেন প্রয়োজনে পানি বা অন্য জরুরী কিছু কেনাকাটা করতে পারে।

হোটেলের সামনের রাস্তা। ডানপাশেই বীচ।

হোটেলের পেছনে একপ্লট পরে যে রাস্তা সেটা মোটামুটি আবাসিক। প্রতিবাসাতেই বাইক আছে।

হোটেলের পেছনের রাস্তা। এর পরের রাস্তা একটা মেইন রোড যার ওপারে বেশ অনেক দোকান পাট আছে।
নিচের ছবিতে খেয়াল করলে গাছপালার ফাঁক দিয়ে বীচ দেখা যাবে। ঐখানে বাম পাশে চার/পাঁচটা প্লট পরেই আমাদের হোটেল। এইখানে রাস্তার পাশে অনেক দোকান পাট। গতকাল এই পথেই সেন্ট্রাল পার্ক থেকে সোজা ফিরে এসেছিলাম (গতপর্বের ম্যাপ দেখলেই বুঝতে পারবেন)।

দোকান পাটের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ওখানকার কর্মীদের নিজেদের মধ্যে বাংলায় হাক-ডাক শুনতে পাওয়া যায়।


১০টার আগেই কিছু কেনাকাটা করে ফিরে এলাম। আমরা একটা স্টেশনারী দোকানে ঢুকেছিলাম। সেখানেও কয়েকজন বাংলাদেশী কর্মী রয়েছেন। কন্যা দুইটি বই কিনেছে। আমি পছন্দ করে একটা ম্যাগনেটের সেট কিনে দিয়েছি। ওর নানা-নানীও আরেক নাতনীর জন্য দুয়েকটা উপহার কিনেছে।

এবার রেডি হয়ে হোটেলের নিচে বসে অপেক্ষায় রইলাম। কারণ সাবমেরিন রাইডের প্যাকেজের মধ্যে এখান থেকেই আমাদেরকে হোটেলের ভাড়া করা গাড়িতে মালেতে ঘাটে পৌঁছে দিবে।


গতকাল যেই দেশী ভাই আমাদেরকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসেছিলেন, উনিই আবার আজকে মালে পৌছে দিলেন। মোট ১৫ মিনিটের পথ। এই পথে এয়ারপোর্ট পার হয়ে হুলুমালে থেকে মালে দ্বীপে যাওয়ার জন্য একটা ব্রীজ পার হতে হয়। দুপাশের দৃশ্য দারুন।

অবশেষে আমরা প্রেসিডেন্সিয়াল জেটিতে পৌঁছালাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন দেশের আরো লোকজন এখানে এনে জড়ো করা হয়েছে। এখানে আমাদেরকে রাইডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার (মহিলা) এর কাছে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে ড্রাইভার সাহেব চলে গেলেন। এছাড়া ফেরত আসার পর রেস্টুরেন্ট আর অন্য দোকানপাট কোনদিকে সেটাও দেখিয়ে দিয়ে গেলেন।

আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, তার উল্টাপাশই প্রেসিডেন্টের বাসভবন। মাঝে একটা খোলা চত্বর। এটার নাম Republic Square। এখানে প্রচুর কবুতর দলবেধে উড়ে বেড়াতে দেখলাম। আর প্রেসিডেন্টের ভবনের দেয়ালে বিশালাকৃতির একটা ডিজিটাল ডিসপ্লে, এতে বিভিন্ন রকম বানী দেখাচ্ছিল।

Presidential Jettyর একপাশে (পশ্চিম)

Presidential Jettyর উল্টা পাশে বামে (পূর্ব) এই ভবনটি

Presidential Jetty

জেটির ব্রেকওয়াটার আর বিভিন্ন রকম নৌযান ইয়ট ...

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমাদেরকে টিকেট দিল, আর একটা নৌযানে করে সাবমেরিনের ডকে নিয়ে গেল। এটা আগের দিনের ম্যাপের নিচে বামদিকে যেখানে Rasfannu Artificial Beach লেখা, সেই বরাবর মোটামুটি আধা কিলোমিটার সমুদ্রের মাঝে। ওয়েবসাইটে গেলে নিচের মত ছবি পাওয়া যাবে।


 কিছুক্ষন অপেক্ষার পর আমরা একে একে সাবমেরিনে প্রবেশ করলাম। আমদের তোলা ছবির চেয়ে ওয়েবসাইটের ছবিটা বেশি ভাল তাই বোঝার সুবিধার্থে সেটা এখানে দিয়ে দিলাম

আমরা সাবমেরিনে প্রবেশের পর আস্তে আস্তে সেটা সমু্দ্রে তলে ডাইভ দিল। আমাদের ক্যাপ্টেন একজন মহিলা। চারপাশে নানান মাছ দেখতে দেখতে একসময় সমূদ্রের নিচের মেঝে দেখতে পেলাম।

সমুদ্রের তলায় আস্তে আস্তে যেতে যেতে আমরা একটা কোরাল রীফের ধারে পৌঁছালাম। সেখানেই অনেক সময় আস্তে আস্তে দেখতে লাগলাম। কত রকম মাঝ, ঈল, চারকোনা মাঝ দেখলাম তার হিসাব নাই। এভাবে প্রায় ৫০ মিনিট সমুদ্রের তলায় কাটিয়ে আবার উপরে ভেসে উঠলাম। তারপর আস্তে আস্তে আবার সেই ডকে চলে আসলাম।


এই সেই সাবমেরিন

সাবমেরিনের ডক থেকে মালে শহরটা এমন দেখা যায়।

সাবমেরিন রাইড শেষে ফেরার পথে সমূদ্র থেকে মালে শহরের দৃশ্য উপভোগ করি

এই পথেই দেখা মেলে মালে সী-পোর্ট


 
এবার আমরা দুপুরে খওয়ার সন্ধানে বের হলাম। কিন্তু এখানে একের পর এক মানুষ এসে আমাদের দোকানে আসেন। কম দাম -- এই বলে ডাকাডাকি করছে। আমরা বললাম আমরা খাব, রেস্টুরেন্ট কোনদিকে। একজন আমাদেরকে বেশ অনেকদুর হেঁটে একটা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দিল।  সেই রেস্টুরেন্টেও দেশি লোকজন পেলাম। সেখানে খেয়ে আমরা হাঁটতে বের হলাম। শহরটা একটু দেখবো, সুলতান পার্ক দেখবো।

পথেই পেলাম ন্যাশনাল মিউজিয়াম। কিন্তু সেদিন ঈদের পরদিন। সম্ববত এজন্য বন্ধ। এর পাশেই পেলাম এই মসজিদটা। নিচের ছবিতে ছোট একতলা চৌচালা - এইটা। এটার নাম Kalhuvakaru Miskiy। এটার ২০০ বছরের ইতিহাস। মসজিদটা আগে অন্য জায়গায় ছিল। তারপর সেটা খুলে নিয়ে এসে এখানে সেট করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে ইচ্ছা করলে এর নাম দিয়ে ইন্টারনেটে খুঁজলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে।




নিচের ছবির বামে ন্যাশনাল মিউজিয়াম রাস্তাগুলো ছিমছাম

আমরা সুলতান পার্কে যাব। কিন্তু পেছনের দিকের গেটগুলো বন্ধ। বাইরে থেকে একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করাতে বললো সামনের গেট খোলা। তাই আমরা ঘুরে সেদিকে গেলাম।

Sultan Park

Sultan Park

Sultan Park

Sultan Park

Sultan Park

Sultan Park

Sultan Park। এই ছবিতে আমরা ভেতর থেকে উত্তর দিকে মেইন গেটের দিকে দেখছি। সামনে ডানে প্রেসিডেন্টের বাসা। আর গেট বরাবর সেজা সেই প্রেসিডেন্সিয়াল জেটি দেখা যাচ্ছে, ওখান থেকেই আমরা সাবমেরিন রাইডের জন্য যাত্রা শুরু করেছিলাম।

Sultan Parkএর গেটের ঠিক সামনেই এই প্রেসিডেন্টের ভবন। এর বাম পাশোর রাস্তা বরাবর সমূদ্র আর জেটি দেখা যাচ্ছে। সকালে ঐ জেটি থেকে সাবমেরিন ড্রাইভে গিয়েছিলাম।

সুলতান পার্কের সামনে, প্রেসিডেন্ট ভবনের পাশেই Ministry of Islamic affairs Maldives এর দৃষ্টিনন্দন ভবন

Ministry of Islamic affairs Maldives এর ভবন

প্রেসিডেন্টের ভবনে আর জেটির মাঝে এই Republic Square। এটাকে Pigeon square ও বলে অনেকে।

এখান থেকে বের হয়ে পাশেই থাকা সুভেনির দোকানে ঘোরাঘুরি করে কিছু কেনাকাটা হল। বাইরে থেকে একজন আমাদেরকে (ধরে) নিয়ে গিয়েছিল। সুভেনিরের গায়ে যা দাম লেখা, ঐ লোকের কল্যানে তার তিন ভাগের এক ভাগ দামে সব কেনা গেল !

সুভেনির শপের এই চেয়ারটা পছন্দ হয়েছিল। সম্ভবত প্লাস্টিকের তৈরী।

এর পর আমরা প্রেসিডেন্সিয়াল জেটির সামনে দাঁড়িয়ে একটা ট্যাক্সি ক্যাব পেলাম। সেটাতে করে আমাদের হোটেলে ফেরত এলাম। তখন সূর্য প্রায় ডুবে গিয়েছে। ১০০ রুফিয়া ভাড়া লেগেছে। এসেই রুমে যাওয়ার আগে হোটেলের নিচতলায় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে গেলাম। তবে রুমে যাওয়ার পর আবার ফোন দিয়ে ২/১টা আইটেম না থাকায় অর্ডার পরিবর্তন করে নিতে হয়েছিল। সম্ভবত ঈদের ছুটির কারণে সবকিছু সবসময় পাওয়া যাচ্ছিলো না।




এর মধ্যে পরদিন আমাদের কখন চেক আউট করবো আর কখন কোথায় আমাদের প্রাইভেট আইল্যান্ডের জন্য পিক করবে সেগুলো ঠিক করে রিসিপশনে বুঝিয়ে দিতে হল। সেই অনুযায়ী পরদিন সকাল ১০টায় আমাদেরকে হোটেল থেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিবে। আর এয়ারপোর্ট থেকেই প্রাইভেট আইল্যান্ডে যাওয়ার পিকআপ সার্ভিস। প্রাইভেট আইল্যান্ড এই যাত্রার সবচেয়ে খরুচে জায়গা ছিল। কিন্তু সেটা কেমন, সে সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই আগে থেকে ছিল না। যদিও সেটার নাম লিখে গুগল কিংবা ইউটিউবে সার্চ দিলেই সব পাওয়া যায়। কিন্তু ইচ্ছা করেই আমি সেগুলো জানতে চাইনি। দেশে সবকিছু আয়োজন করেছে আমার সহধর্মিণী, কাজেই ও হয়তো ইতিমধ্যেই আমার চেয়ে বেশি জানে।

(পরের পর্ব ... )

কোন মন্তব্য নেই: