সোমবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১১

শেয়ার মার্কেট - ঘটনাটা কী?

শেয়ার মার্কেট কী জিনিষ? আমি ঠিক বুঝি না .... কেউ যদি বেসিক আইডিয়া দিতে পারতো ... .... (ডিসক্লেইমার: মরহুম অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া আমার কেউ নয়)shame মনের মধ্য প্রশ্ন ঘুরঘুর করে: একটা শেয়ারের মূল্য বাড়ে বা কমে কখন ... ... এর পেছনের বেসিক কারণ কী? thinking

আমি শেয়ার নিয়ে কিছু বুঝি কি না সেটা শেয়ার করা মুশকিল। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলাম - ঐটাই ঠিকমত বুঝি না আর শেয়ার ......তবে এখন এই বিষয়ে আগ্রহী অনেক বান্দা আছেন মনে হয়। নিশ্চিতভাবেই অনেকে ভাল বুঝেন। তাই কোন সহৃদয় যদি এটা নিয়ে লিখতেন তবে একটু কৌতুহল মিটতো। এই নিয়ে আমার জানার দৌড়টা এর আগে শেয়ার করি একটু। তাহলে এই অধমকে পরামর্শ দিতে সুবিধা হবে।

সহজ সরল ভাবে দেখলে - একটা কম্পানির মূলধন দরকার ধরুন ১০ কোটি টাকা। কিন্তু মালিক/উদ্যোক্তার হাতে আছে ৬ কোটি। বাকি টাকা সে ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে, অথবা পাবলিকের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রি করে নিতে পারে। ধরুন ঐ ৪ কোটি টাকা ১০০ জন লোক প্রত্যেকে ৪ লাখ করে দিল। শেয়ার বিক্রি অর্থ হল এখন ১০ কোটি টাকা মূলধনের ৬ কোটি একজনের - কাজেই কম্পানির মালিকানার ৬০% মালিক সে। আর বাকী ৪০% মালিকানা শেয়ার করা হয়েছে। প্রতিজন ৪ লাখ টাকা করে দেয়াতে ঐ ১০০ জনের প্রতিজন ০.৪%  করে মালিকানা পাবে।

বছর শেষে ঐ কম্পানি ধরি ৫ কোটি টাকা মুনাফা করে, এবং এ থেকে ২ কোটি টাকা ব্যবসা সম্প্রসারনে ব্যয় / পূণর্বিনিয়োগ করলো। তাহলে বাকি ৩ কোটি টাকার মধ্যে
মালিক/উদ্যোক্তা পাবে - ১কোটি ৮০ লাখ (যেহেতু ৬০% মূলধন তার)
শেয়ার হোল্ডার প্রতিজন পাবে - ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে। (১০০ জনে = ১কোটি ২০ লাখ = ৪০% লাভ)

এখন কেউ যদি তার শেয়ার রাখতে না চায় তবে ঐ লাভ নেয়ার পর ৪ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার ৪লাখ ৮০ হাজারে বিক্রি করতে পারবে। কারণ এখন ব্যবসার মূল্য ১০+২=১২ কোটি। কাজেই ১২ কোটি * ০.৪% = ৪ লাখ ৮০ হাজার। আর লভ্যাংশ না নিয়েই বিক্রি করলে দাম পাবে ৬ লাখ।
এভাবে ৪ লাখ টাকা ১ বছরে ৬ লাখ হল। কারণ মূল ব্যবসা একই অনুপাতে লাভ করেছে।

শেয়ার মার্কেটে যখন মানুষ বিনিয়োগ করে তখন এগুলোর কোন নাম নিশানা আমি দেখিনা। তার মানে ইহা ভিন্ন কোনো জিনিষ। এখানে হু হু করে দাম কেন বাড়ে, হুট করে কমেই বা কেন? ১০ টাকার ফেসভ্যালুর শেয়ারের মূল্য যখন দেখি ৩০০ টাকা - এর অর্থ আমার বুঝামতে ঐ কোম্পানি যখন শেয়ার ছে‌ড়েছিলো তখনকার তুলনায় ব্যবসা  ৩০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ... ... আসলেই কি তাই ঘটেছে? ঐ শেয়ারের ক্রেতা কি এই তথ্যের ভিত্তিতেই আরো প্রবৃদ্ধিজনিত লাভের আশায় শেয়ারের মালিক হয় নাকি এর পেছনে অন্য কোনো শক্ত থিওরী আছে? এ্যাত টাকা বিনিয়োগ যখন করছে তখন নাড়ি নক্ষত্র না জেনে নিশ্চয়ই করেনি ... ... সেই নাড়ি নক্ষত্র কী কী -- কোন পুরাতন কেস স্টাডি করে দেয়া যাবে কি?

আমার বুঝা ঠিক কি না জানিনা। তবে এটা ঠিক হলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই হুজুগে চলে - যাদের মূলধন হল লোভ; বিনা পরিশ্রমে বড়লোক হওয়ার দিবাস্বপ্ন। আর এর সুযোগ নেয় ঘাঘু ঠকবাজরা। লোভ করে নিজের কল্লা জবাই হওয়ার রিস্ক নিয়ে পেতে দিলে সেটা কাটা পড়তেই পারে। এজন্য কার ঘাড়ে দোষ চাপাবেন? ---  মাইন্ড খাইয়েন না -- পাগলের সুখ মনে মনে -- আমি এইসব ভেবে ও থেকে দুরে থাকার বুঝ নেই মনে মনে।

==আপডেট: আরো কিছু টেক্সট যোগ করি==

বিভিন্ন চিপায় লেকচার শুনে যা জানি তা হল: একটা বস্তুর দাম বাড়ে যখন কোন ভাবে এটাতে ভ্যালু এডিশন হয়।

সবচেয়ে বেশি ভ্যালু এডিশন হয় শিল্প কারখানাতে: ১০০ টাকার লোহার টুকরাতে আরো ৪০০ টাকার মেশিন/লেবার খরচ করে সেটা ৫০০০ টাকা মূল্যের বস্তুতে পরিণত হয়। কিংবা ধরুন ৬০ টাকার তুলাতে ৩০ টাকার মেশিন / লেবার খরচ করে ১২০ টাকার সুতা তৈরী হয়। সেই সুতা থেকে কাপড় বা কাপড় থেকে তৈরী পোশাক -- সবই ওরকম।

এছাড়াও ভ্যালু এডিশন হয় বিপননে। ৫০০০ টাকার বস্তু এনে সেটার পেছনে আরো ৩০০০ টাকার চমৎকার আলোকসজ্জা, ডিসপ্লে, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি দিয়ে ১০০০০ টাকায় বিক্রয় করা হয়। কিংবা ধরুন ১২০ টাকার সুতা ১৫ টাকার পরিবহন, গোডাউন, প্যাকেজিং, ডিসপ্লে ইত্যাদি পার হয়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

মোদ্দা কথা হল, শিল্প কারখানায় ভ্যালু এডিশন হয় বিপননের চেয়ে অনেক বেশি। সেজন্য বিনিয়োগ করতে হলে ঐ খাতে করাই বেশি বুদ্ধিমানের লক্ষণ। কিন্তু আমাদের এখানে শিল্প কারখানা বাদ দিয়ে কয়েকশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যমুনা ফিউচার পার্ক টাইপের বিপনন কেন্দ্র বানানো দেখে একজন দুঃখ করে এসব বলেছিলেন আমাকে।

আমার প্রশ্ন হল, এসেট ভ্যালুর সাথে শেয়ারের মূল্য যদি সংগতিপূর্ণ না হয় তবে এর ভ্যালু এডিশন হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে? যতদুর বুঝি তাতে - সত্যিকার অর্থে যদি এর ভ্যালু এডিশন না হয়, তাহলে সেটা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।

কিছুদিন আগে বিশ্বমন্দা এ ধরণের কিছু শেয়ার কেলেংকারির জন্যই হয়েছিলো। তখন যা ঘটেছিলো তা মেকানিজম ছিল অনেকটা এমন:
একজন ১০০ টাকা মূলধনে ব্যবসা করে ৩০ টাকা লাভ করলো - ফলে শেয়ারের মূল্য বাড়লো ৩০%। আরেকজন নিজের ৫০ টাকা মূলধনের সাথে আরো ৫০ টাকা লোন নিয়ে ১০০ টাকার মূলধন বানিয়ে সেটা দিয়ে ব্যবসা করে সে-ও ৩০ টাকা লাভ করলো। কিন্তু হিসাবে দেখালো - আমার ৫০ টাকা মূলধন কিন্তু লাভ ৩০ টাকা .... অর্থাৎ শেয়ারের মূল্য ৬০% বৃদ্ধি পেল - যেটা আসলে ঠিক নয় (কারণ তারও ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি আসলে ৩০%)। ব্যবসার জন্য লোনগুলোতে অনেক জায়গাতেই প্রথম কয়েক বছর সুদ দেয়া লাগে না - তাই এর সুযোগ নিয়েছিল কেউ কেউ। ফলে কী হল? যে শেয়ারের আসল ভ্যালু এডিশন ৩০% সেটা ম্যানিপুলেট করে ৬০% এ কেনা বেচা হচ্ছে --- --- এভাবে কতদিন আর ধামাচাপা দেয়া যায়? এক সময় না এক সময় আসল থলের বেড়াল বের হয়ে পড়ে, আর এর আগেই আসল খেলোয়ারগণ নিজের শেয়ারগুলো বিক্রয় করে দেয়।


ফলে সাধারণ বিনিয়োককারীর অবস্থা হয় কৃষিকাজ বাদ দিয়ে বেশি দামে বানর কিনে বসে থাকা মানুষের সেই গল্পের মত। আসল জায়গায় ভ্যালু এডিশন না হয়ে যদি দাম বাড়ে তাহলে সেই অতিরিক্ত টাকা কারো না কারো পকেট থেকেই যাবে।