মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০০৮

সহকর্মী কি সবসময় নিরপেক্ষ বিচারক?

কয়েকদিন আগে, আমি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করি সেখানের এক জুনিয়র শিক্ষক (বিবিএ) এখানেই এম.বি.এ.তে ভর্তি হতে চাইলে একাডেমিক এডভাইজার কড়া করে না করে দিয়েছেন এবং বলেছেন এটা অনৈতীক। কারণ তাঁর সহকর্মীই যখন সরাসরি শিক্ষকতা করবেন তখন পক্ষপাতিত্বের অবকাশ রয়ে যেতে পারে। ঘটনাটা বিরাট একটা নাড়া দিয়েছে মনে। ..... তাইতো ! ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি ঘটনা মনে পড়ে গেল।

বুয়েটের ভিসি ড. রশিদ সম্পর্কে একটা গল্প প্রচলিত আছে। শিক্ষকদের সভায় প্রস্তাব করা হল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এখানেও শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য ভর্তির কোটা রাখা হউক। ড. রশিদ স্যার সায় দিয়ে বলেছিলেন যে খুবই ভাল প্রস্তাব। বুয়েটের শিক্ষকদের সন্তানেরা যেহেতু বুয়েটের পড়ালেখা সম্পর্কে বাইরের অন্য যে কোন ছাত্র থেকে বেশি ওযাকিবহাল এবং ক্যাম্পাসেই থাকেন তাই তাঁদের জন্য আলাদা কোটা দরকার। এঁরা যেহেতু অন্যদের চেয়ে একটু বেশি সুবিধা পাচ্ছে তাই এদের জন্য ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আলাদা ভাবে আরো একটু কঠিন হলে সকলের জন্য ন্যায়বিচার হবে। আপনারা প্রস্তাবটা অফিসিয়ালি পেশ করুন, অবশ্যই কোটার ব্যবস্থা নেয়া হবে। .... বলাই বাহুল্য, এর পরে আর এ বিষয়ে আলোচনা এগোয়নি।

বর্তমানে যদি কোন শিক্ষকের সন্তান বা নিকট আত্মীয় ভর্তি পরীক্ষা দেয় তবে সেই শিক্ষক ঐ পরীক্ষার্থীর সিট যেখানে তার আশে পাশে অবস্থান করতে পারেন না। যদি ভুলক্রমেও সেই হলে প্রবেশ করেন তবে পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। কথিত আছে একজন সিনিয়র শিক্ষকের সন্তান বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সময়ে উনি কেবল ঐ রূমে গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন প্রশ্ন কেমন হয়েছে ..... বেচারার পরীক্ষাই বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু, সেই বুয়েটেই নিয়ম আছে যে কেউ লেকচারার হিসেবে যোগ দিলে বুয়েটেই মাস্টার্স করতে হবে। তারপর শিক্ষাছুটি নিয়ে পি.এইচ.ডি করতে যেতে পারে। অনেক ভাল শিক্ষক এটা না মেনে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে গিয়েছেন। তারপর নিরপেক্ষ জায়গায় নিজেদের প্রমাণ করে সব পড়া সফলভাবে শেষ করে এসে আবার ইন্টারভিউ দিয়ে জুনিয়রদের সাথে যোগ দিয়েছেন। বলাই বাহুল্য যে, তাঁদের পরে যোগ দিয়েও অনেকে বুয়েটেই মাস্টার্স করে তারপর শিক্ষাছুটিতে পি.এইচ.ডি করে চাকুরীতে সিনিয়র হয়ে গিয়েছেন। সমস্ত পদন্নোতি কয়েক বছর আগেই পেয়েছেন! বুদ্ধিমান কেউ কেউ অবশ্য বুয়েটে মাস্টার্স করার পরেও আবার বাইরে মাস্টার্স লিডিং টু পি.এইচ.ডি করেছেন।

আমরা কি ঠিক পথেই যাচ্ছি? আন্ডারগ্রাজুয়েটের গ্রেডিং কি ফুলপ্রুফ? যেই ছাত্র সেখানে ভাল করেছে, মাস্টার্সের ভিন্ন আঙ্গিকের মেধা যাচাইয়েও যে সে শ্রেষ্ঠ হবে সেটা কি নিশ্চিত? আসলেই কি এখানে অন্য কেউ আরও ভাল করতে পারে না? .... যিনি শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেয়েছেন তার জি.পি.এ কিন্তু যে শিক্ষকতার চাকুরী পায়নি তার চেয়ে মাত্র ০.০১ বেশি হতে পারে। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন বছরে পাশকৃত সমমানের ছাত্রদের জি.পি.এ. বিভিন্ন কারণে (!) বেশ আলাদা হতে পারে।

সহকর্মী সিনিয়র শিক্ষকগণ কি আত্মীয়ের চেয়ে অনেক বেশি নিরপেক্ষ?.... নাহ্ বুঝি না; ব্যক্তিগত কারণে অসম্ভব খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে বলে স্বীকার করেও যখন একজন লেকচারার ঐ বিষয়ে একমাত্র এ প্লাস পাওয়া ছাত্র হয় (বুয়েটের আন্ডারগ্রাজুয়েটের A+ = ৮০% কিন্তু মাস্টার্সে সেটা ৯০%) ..... তখন মনে হয় যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এডভাইজার ঠিকই বলেছিলেন।

সচলায়তনে প্রকাশিত। মন্তব্যগুলো দেখতে পারেন।