শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩

মালদ্বীপ ভ্রমণ ২০২৩ (পর্ব-০৪)

 সূচীপত্র:

 ২৪-এপ্রিল-২০২৩ সোমবার

গতদিনে প্রাইভেট আইল্যান্ডে এসে দুই বেলা buffet খেয়ে পানিতে নেমে বেশ ভাল কেটেছে সময়। এই দিন দ্বীপটা আরেকটু ভাল করে ঘুরে দেখবো বলে ঠিক করলাম। যথারীতি পরিবারের লোকজন ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেতে যাওয়ার আগেই আমি একটু একা একা ঘুরে দেখতে বের হলাম।

আমাদের ভবনটাও বাইরে থেকে এমন দেখায়।

রুম থেকে বের হলে কেমন দেখায় সেটা এই 270 ডিগ্রী প্যানারমায় ধরে রাখলাম।  ছবিটা ক্লিক করলে আশা করি ঠিকভাবে দেখার অপশন দিবে।

ডানদিকেরটা আমাদের ভবন। আর এর পাশ দিয়ে ওপারের দ্বীপে যাওয়ার ব্রীজটায় + আমাদের নিজস্ব বীচে যাওয়ার পথ।

সকাল বেলা ভাটায় কম পানিতে ছোট ছোট হাঙর দেখলাম। এখানেই গতকাল আমরা পানিতে নেমেছিলাম।

আমাদের ভবনগুলোর পেছনদিকেই বীচ। আমাদের রুমটা ছিল দোতলায়। এখন ভাটার সময়।

এই ভাটাতে যেখানে পানি শেষে বালু শুরু, গতকাল বিকালের ভরা জোয়ারে সেখানেই গলা পর্যন্ত গভীর পানি ছিল।

এই রিসর্টে সাদা চামড়ার মানুষ বেশি। আর আমার মুরব্বীরা এদের সুইমিং কস্টিউমে বিব্রত হয়ে বীচেই আসে নাই ...

অগভীর পানিতে নিচের সাদা বালু আর কোরাল সরাসরি দেখা যাচ্ছে। দুরে গাঢ় নীল পানি হল গভীর জায়গা

ঐ যে দুরে বড় বড় ভবন দেখা যাচ্ছে সেগুলোই হুলহুমালের ২৫ তলা ভবন

আমাদের এই দ্বীপ থেকে পাশের দ্বীপে যাওয়ার ব্রীজ। ছবিতে ক্লিক করলে প্যানারমা দেখা যাবে।

সাত সকালে নিজের সেলফি

স্বচ্ছ টলটলে পানি। আর পাশের পাথরে কাঁকড়ার দল আছে সবসময়েই ...

বিভিন্ন রকম ইলেক্ট্রিক কার্টে করে মানুষ টানে, মাল টানে, লাগেজ টানে ...
 
ভীষন রোদে কার্টের জন্য অপেক্ষা না করে হন্টন। এতে বাসায় দেয়া ছাতার উপযুক্ত ব্যবহার হচ্ছে। এই ছাতা দ্বীপের সবখানেই কমন সম্পত্তি হিসেবে থাকে। যার যখন খুশি নিয়ে যাচ্ছে। একবার তো ছাতা রেখে খাওয়া শেষে buffet এর জায়গা থেকে বের হয়ে দেখি সেখানের স্ট্যান্ডে আর কোনো ছাতা নাই। সবাই নিজের মনে করে নিয়ে গেছে।

buffet এ খাওয়া দাওয়ার দুয়েকটা ছবি না দিলে কি চলে ..


নাস্তার পর খাওয়ার জায়গার পাশেই নিজেদের ফটোসেশন


কন্যার নানা নানীও বেশ উপভোগ করছেন বোঝা গেল ...

ইয়ে, আমি না থাকলেই মনে হয় ছবিটা সুন্দর দেখাতো .... তবে আমিও যে সেখানে ছিলাম এটার সাক্ষী হিসেবে তোলা হয়েছে

ভিলাগুলোর সামনের নিজস্ব বীচ। অবশ্য পুরা দ্বীপটার চারপাশেই এমন। সাদাটে পানি অগভীর, আর গভীর পানি গাঢ় নীল

আমিও ফটোসেশন করি। পানিতে নামবো এখনি

এই টিউবটা মোস্তফা মার্ট থেকে কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওখানে বলতেই ফুলিয়ে দিয়েছে।

ঘন্টাখানেক জলকেলীর পর, রিসিপশনের পাশের বারে সবই ফ্রী, তাই পপকর্ণ খাওয়া। পেছনে বিভিন্ন ওয়াটার একটিভিটি চলছে ...

এগুলো ওয়াটার ভিলা। রুম থেকে সরাসরি অগভীর পানিতে নামা যায়।


এবার লাঞ্চে যাই

চারিদিকের সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা


ভেতরের পথ এমন, হেঁটে কিংবা গলফ কার্টে করে যাওয়া আসা করা যায়


সন্ধ্যায় ব্রীজের দুপাশে এমন নীল বাতি জ্বালিয়ে দেয়

ব্রীজের আরেক মাথায় পৌঁছে একটা ছবি। ডানেরটা জিমনেসিয়াম, আর ওপাশেরটা পানির তলের রেস্টুরেন্ট

পানির তলের রেস্টুরেন্ট আমাদের প্যাকেজে ছিলনা। ৪ রকম সেট মেনু আছে, জনপ্রতি সম্ভবত ১২৫ ডলার। মূল খাওয়ার রুমটা পানির নিচে। সরাসরি সমূদ্রের কোরাল, মাছ ইত্যাদি দেখা যায়।

রাতের মনোহর দৃশ্য

২৫-এপ্রিল-২০২৩ মঙ্গলবার - বিদায় মালদ্বীপ

গতরাতেই অনলাইনে ঢুকে মোবাইল ফোন দিয়েই এমিগ্রেশনের IMUGA ফর্ম পূরণ করে রেখেছি। আমাদের বিমান দুপুর দেড়টায়। তাই ৯টায় চেক আউট করিয়ে ১০:৩০ এ এয়ারপোর্টে রেখে আসবে বলেছে। সকালে তাই কয়েকটা ছবি তুলে রাখলাম। গত সন্ধ্যায় বেশ ভাল বজ্র-বৃষ্টি হয়েছে।

এটার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে জীবনের প্রথম একটা ৩৬০ ডিগ্রী তোলার চেষ্টা করলাম। ছবিতে ক্লিক করলে দেখা যাব আশা করছি।


সকালে বের হয়ে দেখি কন্যার নানা-নানী ইতিমধ্যেই নাস্তার জন্য বের হচ্ছেন। ডেকে নিয়ে কয়েকটা স্মৃতি ধরে রাখলাম

কার্টে করে নাস্তা করতে যাচ্ছেন

আমরা আবার কার্টের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি না ... সুতরাং হন্টন


চেকআউট শেষে স্পীডবোটে ওঠার আগের ফটোসেশন

চেকআউট শেষে স্পীডবোটে ওঠার আগের ফটোসেশন

চেকআউটের পরেও তো পানি খেতে ইচ্ছা করে। তাই দৌড়ে সুইমিং পুলের পাশে Barএ চলে গেল ...

স্পীডবোট এয়ারপোর্টে পৌঁছে আমাদের লাগেজ নামিয়ে দিচ্ছে।

অবশেষে বিদায় মালদ্বীপ। ইউ-এস বাংলার ফ্লাইটে।

প্লেনের খাবারও ভাল। তবে প্রাইভেট আইল্যান্ড থেকে আসার পরে কোন কিছুই আর তেমন ভাল মনে হয় না ;)

প্রাইভেট আইল্যান্ডের খরচ প্রচুর (গুগলে দেখুন - যা দেখায় তা সত্য), কিন্তু আমাদের মনে  হয়েছে এখানকার সার্ভিস এবং সবকিছু মিলে সেই পয়সা উসুল। ওখানে শুধু সুভ্যেনির কিনতে একবার ডলার খরচ করতে হয়েছে। আর কোনো খরচ নাই। খাওয়া দাওয়া ছাড়াও রুমে লাইফ জ্যাকেট, সুইমিং পুলের বা বীচের এক্টিভিটির যন্ত্রপাতি সবই প্যাকেজের মধ্যে - আলাদা কোনো বিল নাই।

বাই দা ওয়ে, এয়ারপোর্টের ভেতরে রুফিয়া পরিবর্তন করে ডলার নেয়ার কোনো অপশন নাই। তবে সুভ্যেনির চকলেট ইত্যাদির দাম এখানে সবচেয়ে সস্তা। এয়ারপোর্টের দোকানে ডলারে দাম লেখা থাকলেও রুফিয়াতে পেমেন্ট করা যায়। তবে প্রাইভেট আইল্যান্ডে রুফিয়া নেয় না, কিছু সুভ্যেনির কিনলে ডলারে দাম দিতে হয়।

 (সমাপ্ত)


মালদ্বীপ ভ্রমণ ২০২৩ (পর্ব-০৩)

 

সূচীপত্র:

 ২৩-এপ্রিল-২০২৩ রবিবার

মালদ্বীপ ভ্রমণের ৩য় দিনে আমরা মালে থেকে প্রাইভেট আইল্যান্ডে গেলাম। এই লেখার সেটার ছবিগুলো থাকবে। গতদিনে আমরা মালেতে ঘুরেছি আর সাবমেরিন রাইডে গিয়েছিলাম।

নতুন জায়গাতে বেড়াতে গেলে ভোরের সূর্যোদয় দেখার একটা ইচ্ছা থাকে সবসময়ই। তাই ভোরে চলে গেলাম হোটেলের সামনে। কিন্তু সেদিন পূর্ব আকাশে মেঘ ছিল তাই সূর্য ওঠার দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দী করতে পারি নাই। কিন্তু ঐ সময় ভাটা, তাই সামনের প্রাকৃতিক সুইমিং পুলে (অন্তত আমার তাই মনে হয়েছিল) কার্যত এক হাঁটু পানি। বামে একটা লোক সেই এক হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে।

এরপরে নাস্তা খাওয়ার আগেই কন্যা সমেত এখানে একটু জলকেলী করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ধরা খেয়েছি। কারণ পায়ের নিচের বালু - মোটেও বালু নহে। এখানে ধারালো কোরাল পাথর দিয়ে ভর্তি। পায়ের তলায় প্রচুর ব্যাথা পেয়ে ভগ্ন মনোরথে ফেরত আসতে হয়েছিল।

নাস্তার পর সবকিছু প্যাক করে রেডি হয়ে চেকআউট করলাম আর হোটেলের আয়োজিত গাড়ি আমাদেরকে সেই এয়ারপোর্টে দিয়ে আসলো। সেখানে একজন মহিলা অফিসার প্রাইভেট আইল্যান্ডের পক্ষে আমাদের বুঝে নিল। আমাদের সব লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে একটু অপেক্ষা করতে বললো। কারণ আগের যে স্পীড বোট যাওয়ার কথা সেটা এখন ছাড়বে। ১৫ মিনিটের পথ। তাই কিছুক্ষনের মধ্যে ফিরে এসে আমাদের নিয়ে যাবে। এই কিছুক্ষণ মানে ৪৫ মিনিট যেটা আরেকজন স্টাফ আমাদের আগেই বলেছিল।

কন্যা নানা-নানীর সাথে বসে অপেক্ষারত। আর এদিকে আমি আর গিন্নি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াই আর গরমে কাহিল হই, কারণ এয়ারপোর্টের এই অংশ নন-এসি

প্রাইভেট আইল্যান্ডের লোকজনই আমাদের লাগেজ তুলে নিল। তারপর যাত্রীদের উঠতে বললো।

আমাদের লাগেজ তোলা শেষ। এই যে আমরা ঘাটে স্পীডবোটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, পেছনে রাস্তার ওপারেই কিন্তু এয়ারপোর্ট।

সকলকে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে সেইরকম সোফাওয়ালা স্পীডবোটে করে রওনা দিলাম। জায়গাটা ১৫ কিলোমিটারের পথ।

আইল্যান্ডে পৌঁছেই মন ভালো হয়ে যায় চারপাশের দৃশ্যে। গরমেও খারাপ লাগে না।

ওয়েলকাম ড্রিংক, চেক ইন। পাশেই বার। OBLU XPERIENCE, Ailafushi। আইলাফুসি হল দ্বীপটার নাম।

আমাদের পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে বললো তোমাদের রুমে লাগেজ পৌঁছে যাবে, রুম রেডি হতে হতে বরং লাঞ্চ করে আস। সুইমিং পুলের ঐপাশেই buffet লাঞ্চের জায়গা। সেখানে গেলেই একজন আমাদের নতুন দেখে পুরা জায়গাটা চিনিয়ে দিল। একদিকে এশিয়ান, আরেকদিকে ইন্ডিয়ান, আরেকপাশে কন্টিনেন্টাল, আরেকদিকে সালাদ+ডেজার্ট সেকশন। ড্রিংকস সেকশন দুইটা - একটাতে ৫ রকম জুসের সাথে ফ্রিজ ভর্তি সফট ড্রিংকস, পানি ও বিয়ার। আরেকটাতে ১০ রকম কফি, চা, দুধ সহ সাদা-বাদামী এবং সুগার কাট চিনি ইত্যাদি। গরম দেখে আমরা খুব করে ড্রিংকস, আইসক্রিম ইত্যাদিও খেলাম।

 Buffet এর খানা
এরপর রিসিপশনে ফিরে আসার পর বললো তোমাদের রুম রেডি। রুম কার্ড দিল। আর বললো ওখানে অপেক্ষা কর কার্ট (গলফ কার্ট) তোমাদেরকে নিয়ে যাবে। আমরাও গলফ কার্টে চড়ে ভুলবশত উল্টাপথে পুরাটা ঘুরে সমস্ত ওয়াটারভিলা দেখে টেখে তারপর অন্য মাথায় আমাদের ভবনে পৌছালাম।
মূল বেডরুমের বাইরের দৃশ্য। বারান্দাতেও একটা বিশাল ডিভান আছে।

মোটামুটি একটা স্টুডিও এপার্টমেন্ট ৫০বর্গমিটারের।

মাস্টার বেডের সাথে লাগোয়া ড্রেসিং রুম। ওপাশে বিশাল ওয়াশরুম।


এদিকে একটা চিলড্রেনস বেডরুম। এটার সথেও একটা বড় ওয়াশরুম। এটাতেও টিভি এসি আছে।

বারান্দা দিয়ে বাইরের দৃশ্য। প্যানারোমা। এখানে ক্লিক করলে ঘুরিয়ে দেখা যাবে বলে আশা করছি।

পেছনের সমুদ্রে অনেকক্ষণ দাপাদাপি করে এসে রুমের ওয়াশরুমে শাওয়ার নিলাম। ভেঁজা কাপড় বারান্দায় মেলে ভেতরে বসে বসে বিকেল দেখা। আর আয়েস করে চা। সাথে গতকাল সন্ধ্যায় হুলুমালে থেকে কেনা স্ন্যাকস ... আহা

রাতে আবার সেই ডাইনিং এ গিয়ে বিশাল খাওয়া দাওয়া করে আসলাম। পানি ছাড়াও রুমের মধ্যে ফ্রিজে স্প্রাইট, কোক আর বিয়ার দেয়া --- সবই রুমের সাথে ফ্রী।

আমাদের এই প্যাকেজে প্রতিদিন ৩ বেলা করে buffet দেয়া ছিল। ওদের ওয়েবসাইটে গেলে আরো বিভিন্ন অপশন পাওয়া যাবে।


 (পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)