মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৬

ভাল রে ভাল

ক্লাস ফোর এ (সম্ভবত) পড়ার সময় সুকুমার রায়ের এই ছড়াটা পড়ে পাউরুটি আর ঝোলা গুড় খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। আব্বা আম্মার কাছে বায়না ধরেছি যে আমাকে এ বস্তু খাওয়াতেই হবে। ওনারা পড়লেন বিপদে, কারণ তখন ঝোলা গুড়ের সময় না .... আমিও নাছোড়বান্দা। কিন্তু উপায় নাই ; বেশ মন খারাপ হলেও তক্কে তক্কে থাকলাম, ঝোলাগুড় বাজারে আসা মাত্র খেতে হবে পৃথিবীর সবচাইতে ভাল খাবার। আফটার অল ... ... দেশেই যখন পাওয়া যায়!

বলাই বাহুল্য, ঐ বস্তু খাওয়ার পরে সুকুমার রায়ের রুচির প্রতি শ্রদ্ধা কমে গেল .... ... কি ধরাটাই না খেলাম

----------------
ভাল রে ভাল
আবোল তাবোল --- সুকুমার রায়

দাদা গো! দেখ্‌ছি ভেবে অনেক দূর---
এই দুনিয়ার সকল ভালো,
আসল ভালো নকল ভালো,
শস্তা ভাল দামীও ভালো,
তুমিও ভালো আমিও ভালো,
হেথায় গানের ছন্দ ভালো,
হেথায় ফুলের গন্ধ ভালো,
মেঘ-মাখানো আকাশ ভালো,
ঢেউ-জাগানো বাতাস ভালো,
গ্রীষ্ম ভালো বর্ষা ভালো,
ময়লা ভালো ফর্‌সা ভালো,
পোলাও ভালো কোর্মা ভালো,
মাছ-পটোলের দোল্‌মা ভালো,
কাঁচাও ভালো পাকাও ভালো,
সোজাও ভালো বাঁকাও ভালো,
কাঁসিও ভালো ঢাকও ভালো,
টিকিও ভালো টাকও ভালো,
ঠেলার গাড়ি ঠেল্‌তে ভালো,
খাস্তা লুচি বেল্‌তে ভালো,
গিট্‌কিরি গান শুনতে ভালো,
শিমূল তুলো ধুন্‌তে ভালো,
ঠাণ্ডা জলে নাইতে ভালো,
কিন্তু সবার চাইতে ভালো---
পাঁউরুটি আর ঝোলা গুড়।


_____________________________________________________________
কমেন্ট:
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-১৯ ১১:১৫:৪৩

হা হা হা। খেঁজুর রসের বেলায় আমি এই টাসকিটা খেয়েছিলাম। খেঁজুর রস নিয়ে সবার এত লাফালাফি। খাওয়ার সময় ততোটা খারাপ লাগে না, কিন্তু খাওয়ার পরে মুখে একটা বিচ্ছিরি স্বাদ থেকে যায়, ইয়াক!
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-১৯ ১১:২২:৫৩

আহা রে ... ... খেজুরের রস! সুপারী খাব এর পর ... ...
====================================================

শিশুর মানসিক বিকাশে আমাদের ভূমিকা

(পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিলো)

চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়ে ধারণা হয়েছে যে, শিশুর মানসিক বিকাশ শুরু হয় মায়ের গর্ভ থেকেই। মায়ের মানসিক অবস্থাও গর্ভের শিশুর উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। মা হাসিখুশি, প্রফুল্ল থাকলে শিশুটিও হাসিখুশি ধরনের হবে। আর মা যদি খিটমিটের মধ্যে থাকে, গালাগালির মধ্যে (শুনে বা দিয়ে) দিন কাটায়, শিশুটির মানসিক গড়নেও সেটার ছাপ পড়বে। তাই আমার আশেপাশের মানুষগুলোকে বলতে শুনি, গর্ভবতী মায়েদেরকেও তার শিশু সম্পর্কে ভাল এবং পজিটিভ কথা বলা উচিৎ। একজন মানুষ যা করে, যে ধরনের অভ্যাস গড়ে তোলে তা তো তার জেনেটিক রেকর্ডকেও পরিবর্তন করে - যা তার শিশুর মধ্যে সঞ্চালিত হয়। যা হোক এখনো বাবা হই নাই- কাজেই ব্যাপারটা অত গভীরভাবে অবলোকন/পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাই নাই।

এখন বলি শিশুর কথা। বেশ কিছু দিন আগে (১০-১২ বছর) আমি আমার চাচার বাসায় বেড়াতে গেছিলাম, আমার চাচাতো বোনের বয়স তখন ১ মাস। বাচ্চা খুবই শান্ত ধরনের। যে ভাবে শোয়ায় রাখা হয় সেভাবেই শুয়ে থাকে - কোন ঝামেলা করে না। আমি ঐ কয়দিন ওকে কোলে নিয়ে খুব ঘুরালাম, এটা ওটা দেখাই আর বলি -- আপু দেখো এটা ফুল, ঐযে নীল আকাশ ইত্যাদি। ভাবছেন ১ মাসের বাচ্চাকে আমি কি পাগলের মত বুঝাইতে চেষ্টা করছি! কিন্তু অবাক ব্যাপার, এর পর থেকেই ও আর ভাল (তথাকথিত) থাকল না -- খালি কোলে উঠতে চায়, এদিক ওদিক যেতে চায় (কোলে নিয়ে দাড়ায় থাকলেও প্যাঁ প্যাঁ করে)। আমাকে চাচী বলল -- তুই ওরে এমন দুষ্ট বানালি। আমি বলেছিলাম - আমি ওর মানসিক বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছি।

পয়েন্টটা হল - শিশুকে শিখতে দেয়া উচিৎ। আরেকটা গল্প বলি (ওহ্ বোরিং ;) ).....

আমার এখানে প্রতিবেশী বাঙালি সিনিয়র ভাই-ভাবীর ৩য় সন্তানকে নিয়ে। ওর বয়স তখন প্রায় ১.৫ বছর। আমরা মগে চা নিয়ে বসলেই থাবা দিতে চায়। যতই মানা করা হয় বলা হয় ... না (জাপানীতে - দামে ) বিপদজনক (জাপানীতে - আবুনাই), গরম (আৎসুই) উ: উ: .... ও আরো মজা পেয়ে যায় -- ভাবখানা এরকম -- পাইছি, আমার দিকে তো এমন করলেই বেশী মনোযোগ দেয়.... তাইলে এইটাই করি।

আমার তখন মনে হলো - আরে! গরম (আৎসুই) যে, কি জিনিস সেটাই তো এ জানে না। ভয় পাবে বা সতর্ক হবে কেন - এটা তো ওর মনোযোগ আকর্ষনের জন্য একটা আকর্ষনীয় খেলা। আমি ওকে কোলে নিয়ে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বল্লাম - “কোরে আৎসুই, আবুনাই“ (এটা গরম, বিপদজনক)। কিন্তু ও যখন থাবা দিল তখন থামালাম না -- একটু ছেকা লাগতে দিলাম কিন্তু হাত ডুবানোর আগেই মগ সরায় নিলাম। বেচারা ভ্যাঁ -- তাড়াতাড়ি হাত মুছে ফূ.. ফু..; আবার শান্ত। আবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বল্লাম -- (এবার বাংলা আর জাপানীজ মিশায়.... কারণ আমার জাপানীজের অবস্থাও সেরকম!) “বললাম না কোরে আৎসুই“। এফেক্টটা রিমার্কেবল। এখন আর ও এই কাজ করে না -- যদি কখনো বলা হয় রিদওয়ান কোরে আৎসুই (রিদওয়ান, এটা গরম---- ওর নাম রিদওয়ান) তখন ও করে কি... দারুন একটা সমঝদার মুখভঙ্গি করে বলে - আচ্চুই উ: , আর একটা আঙ্গুল বাড়ায় দেয় ছুঁয়ে দেখার মত করে।

ইতিমধ্যে অনেক তেনা প্যাচায় ফেললাম। তাই আর উপসংহার টানলাম না। শুভেচ্ছা সহ।

শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৬

আমি কেন এদের ঘৃণা করি

লোভ, ক্রোধ, ঘৃণা এই ঋপূগুলোর চর্চা ভালো জিনিস নয় বলেই জানি। কিন্তু তারপরেও রাজাকার, তাদের সমমনাদেরকে সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে তীব্র ঘৃণা না করে পারিনা। তবে সেটা তাদের স্বাধীনতা বিরোধী ভুমিকার জন্য নয়। প্রথমে বলি কেন নয়? তারপর বলি ঘৃণার কারণ। (পুরাটা পড়ে আমারে গালি দেন, আপত্তি নাই; তার আগেই গালি দিলেও দিতে পারেন .... সেটা আপনার অভিরুচি)

কেন নয়?

হাজার হাজার মাইল দুরের দুটো বিচ্ছিন্ন ভূখন্ডের দেশ, মাঝখানে অপর একটি দেশ, কোনক্রমেই টিকতে পারে না। অন্ততপক্ষে আমার তা বিশ্বাস হয় না। আমার ধারনা, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষও এটাই বুঝতো যে, এই দেশ টিকবে না। কাজেই একমাত্র যুক্তিসম্পন্ন কাজ কি হতে পারে -- যতটুকু পারি লাভ তুলে নেই; ফলাফল - শোষন, অত্যাচার।

সবাই সুবিধা চায়; আপনি বাঁচলে বাপের নাম। এই দেখুন, বিকল্প থাকা সত্ত্বেও আমি-আপনি সবাই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। দেশি ছায়াছবি বাদ দিয়ে বেশি আকর্ষনীয় বিদেশী ছায়াছবি দেখছি প্রতিনিয়ত। দেশী কাপড়, বুটিক ইত্যাদি বাদ দিয়ে সম বা খারাপ মানের বিদেশী কাপড় পরছি। দেশের কসমেটিকস্ বাদ দিয়ে বিদেশী জিনিস ব্যবহার করছি; বিমান বাদ দিয়ে আমিরাত, থাই ইত্যাদিতে ভ্রমন করছি। দেশের উন্নয়নমূলত প্রকল্প - বেতন কম জন্য, বিদেশী শোষনকারী ‌প্রতিষ্ঠানে - বেশী বেতনে চাকরী করছি, গুনগান করছি - আবার ঐ দেশের সাথে নিজ দেশের গ্যাঞ্জামের কারনে কম্পানী গুটানোর অবস্থা দেখলে সরকারকে গালি দিচ্ছি ... ... উদাহরণ দেয়া যেতে পারে অনেক - দুরে যেতে হবে না; আমাকে-আপনাকে দিয়েই।

স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা ছিল তারা এরকমই স্বল্পদৃষ্টি সম্পন্ন স্বার্থপর মানুষ। শোষন-অত্যাচার মুক্ত স্বাধীন দেশে যে আর সকলের মত তাদেরও সম্ভাবনা অনেক বেশী এটা বুঝতে না পারার জন্য ঘৃণা জন্মে না; ওদের জন্য করুণা লাগে।

তাহলে ঘৃণা করি কেন?

কারণ ইজ্জ্বত। যারা অন্যের হাতে ভোগের জন্য নিজ বা অপরের মা-বোনকে তুলে দেয় তাদেরকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু করা যায় না। এরা পশুর চেয়েও অধম।

তীব্র ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা
_____________________________________________________________
কমেন্ট:
======================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-১৬ ০৩:৫১:৩৭

ভাই এতো সরল আবেগে স হজ ভাষায় সত্যটা প্রকাশ করলেন কি ভাবে?

মুগ্ধ !



অভিনন্দন আপনাকে ।
======================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-১৬ ০৪:১৬:১৬

যুক্তিকে আবেগের উপরে রাখতে চেষ্টা করি ... ...



ধন্যবাদ, পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য।
======================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-১৬ ০৫:১৪:১২

Wishing u 12 months of happiness,
52 weeks of fun,
365 days of laughing,
8760 hours of good luck,
525600 minutes of joy,
31536000 seconds of sucess.

HAPPY VICTORY DAY.
======================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-১৬ ০৫:৩০:৫২

ধন্যবাদ, মেমন।



মাত্র হিমুর পোস্টটা পড়ে আসলাম। ওখানেও একই কথা - মাইন্ড খাইতে খাইতে সামলায় নিলাম।



কারণ ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা - এই কথাগুলা বার বার বললেও মাইন্ড খাই না! এটাও তো সেই রকমই একটা কথা!



তবে আঁধার না থাকলে যেমন আলোর মূল্য বোঝা যায় না, তেমনি শুধুমাত্র আনন্দ, হাসি, সৌভাগ্য ইত্যাদিও কাম্য নয়।
======================================================

আজ ওদেরও বিজয় দিবস!

কাজের মত একটা কাজ ঠিকই করছিলো আমার পূর্বের প্রজন্ম। তারপর থেকে কথা-সর্বস্ব রূপ আমাদের। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করল কারা? তারাই তো ... ... আর বাকীরা কি করল? দায়িত্ব শেষ (!)। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি শোককে শক্তিতে রূপান্তরের কদর্য রূপ। ধিক্ আমাকে। করুক ওরা ওদের বিজয় আস্ফালন।

প্রভু আমাকে ওদের কাছ থেকে শিখতে দাও ... ... অহং আর গর্ব যেন আমার চোখ আন্ধা না করে রাখে। আমিন।
_____________________________________________________________
কমেন্ট:
=============================================================
পথিক!!!!!!! বলেছেন :
২০০৬-১২-১৬ ০৯:১০:৩২

হুঁ
=============================================================

শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৬

গরম লেমুর কেরামতি

গরম লেমু (একটা কোল্ড! ড্রিংকসের নাম) পান করতে নিশ্চয়ই খুব মজা! অন্তত: ওদের বিজ্ঞাপন দেখে তাই মনে হল। কেউ গরম লেমু খেয়ে থাকলে একটু সত্যয়িত করে দিবেন দয়া করে।

কি দেখে এমন মনে হল:
গরম মরুভুমিতে হেটে যাচ্ছে পথহারা দুই অভিযাত্রী। একজনের ঝোলায় আছে এক বোতল লেমু ড্রিংক। হঠাৎ দুরে একটা প্রাসাদ; মুখ ঢাকা রমনীগণ তাদের বরণ করতে অপেক্ষা করছে। এ দেখে অভিযাত্রীদের দিল ঠান্ডা .... .... কিন্তু গলা ঠান্ডা করার জন্য ঝোলা হাতরিয়ে আর লেমু খুঁজে পায় না; কি উপায়? লেমু খুজতে ফিরে গেলেন উনারা।

অভিযাত্রীগণের উল্টা দৌড় দেখে কি মনে হল:
১। গরম লেমু খেতে মজা
২। গরমে মাথা আউলায় গেছে
৩। ভুত-পেত্নীর ভয় পাইছে
৪। মরীচিকা ভাবছে (সম্ভাবনা কম)
৫। শ্যূটিং এর ভুল সেটে ঢুকে পড়ায় নিজ সেটে প্রত্যাবর্তন
৬। আগে টয়লেট সাইরা আসি ........ (ফার্স্ট কামস্ ফার্স্ট)

কি হলে ভালো হত:
... এইটা আপনারাই বলেন



_____________________________________________________________
কমেন্ট:
====================================================
হযবরল বলেছেন :
২০০৬-১২-১৬ ০১:৫৫:০২

রমণী দেখার পরও উল্টা দিক হাঁটা দেওয়া থেকে একটা বিষয়ই বোঝা যায়, ওদের বড় মাপের সমস্যা আছে । অতি শীঘ্র ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত ।
====================================================

সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৬

ঘুসের ব্যাপারে উসখুস

(পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিলো)

বাসায় বসে বসে ভাবছিলাম পরের শুক্রবার কোথায় আড্ডা দেব, এমন সময় আমার কাজিন আনন্দ হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে ঢুকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল: নাহ শামীম ভাই, ঘুসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দিলে আর চলতেছে না।

আমি তো হতবাক - এই পোলা কয় কি! অলরেডী দেশে যেমনে ঘুসের মহোচ্ছব চলতাছে... এর উপর আবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে তো, ঐ রূপের ঝলকে চোখ আন্ধা হইয়া যাইবো; মনের কথাটা কোৎ করে গিলে ফেলে জিজ্ঞেস করলাম: ক্যান?

আনন্দ বেশ ঝাঁঝের সাথে বলতে লাগল: দ্যাখেন যে অফিসেই কোন কাজের জন্য যাই, চা-নাস্তা করার জন্য কিছু চায়। আমিতো নিরূপায় হয়ে এক জায়গায় চা-সিঙ্গারা আনার জন্য ঐ অফিসের পিয়নকে ডেকে ৫০টাকা হাতে দিসলাম - তখন ঐ অফিসার ব্যাটা বলে কি... আরে আপনি দেহি কিসুই বোজেন না, এমুন করলে তো আপনার কাম হইবো না; বেরেনটা এট্টু খরচ করেন - আমি কি কই বোজার চ্যাষ্টা করেন। তখন আমি ঐ ৫০ টাকা পিয়নের কাছ থেকে ফেরৎ নিয়ে ঐ ব্যাটার টেবিলে রাখলাম। ব্যাটা টাকা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলে, ১০০০ টাকা দিতে হইবো। আরে আমি কি পকেটে অত টাকা নিয়ে ঘুরি? ....

ও আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো, আমি বাধা দিয়ে বললাম: তুইতো বেকুবি করছিস, শুরুতেই ৫০ টাকার নোট দেখাইছিস ... ১০০০ টাকা তো চাবেই; উচিৎ ছিলো ১০ টাকা বের করা, তাইলে ঐ ব্যাটা ২০০ টাকার বেশি চাইতো না ---- বলে ঘুষ বিষয়ক বিশেষজ্ঞের মতো ভাব নিলাম।
আনন্দ নিজের ভুল স্বীকার করে বলল: আসলেই ভুল হইছে; কিন্তু যেসব অফিসে ডাইরেক্ট কিসু মাল ছাড়তে বলে? ------- বলে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।

বললাম: ডাইরেক্ট জিগাবি - রেট কত? আমরা তো টেলিফোনের লাইনম্যানের সাথে এভাবেই ডীল করছি, কারণ হুদা কামে বেশী পয়সা দিয়ে তো লাভ নাই, আবার কম দিলেও ধুনফুন করবো; তাই লজ্জা শরম করে লাভ নাই, ডাইরেক্ট রেট জিগাইতে (জিজ্ঞেস করতে) হবে; বি প্রোফেশনাল ম্যান!
ও লা জওয়াব দেখে আমি জিজ্ঞ্যেস করলাম: তা ... তুই প্রাতিষ্ঠানিক রূপের ব্যাপারে কি জানি বলতেছিলি?

দম নিয়ে আনন্দ বেশ সোসৎসাহে বলা শুরু করল: এমন হলে ভালোী হতো না যে, প্রতি অফিসে কোন কাজের কত রেট তা সাইনবোর্ড দিয়ে ঝুলায় রাখবে; তাহলে কাউকেই আর কাজটা করানোর জন্য কত পয়সা পকেটে নিয়ে যেতে হবে তা নিয়ে টেনশন করতে হবে না, আর ওদেরকেও নির্লজ্জ চামারের মত চাইতে হবে না।
আমি আবার ওকে বাধা দিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম: হুঁ তা তো বুঝলাম, কিন্তু ওভাবে সাইনবোর্ড টাঙ্গাতে হলে তো আইনের ব্যাকআপ লাগবে।

ও তো দমে গেলই না, বরং আরো উৎসাহের সাথে বলতে থাকল: আরে সেই কথাটাই তো বলতে চাচ্ছিলাম। এটার আইনগত বৈধতা থাকবে।
শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম, কোনমতে বললাম: কক্ কিভাবে?
ও বলতে থাকল: বুঝলেন না .... এটা হবে ট্যাক্সেবল ইনকাম। তাতে সাপও মরল আর লাঠিও ভাঙ্গলো না। তবে এ বিষয়ে আইন পাশ করতে হবে আগে।

আমি বললাম: তাহলে তো ওরা আইন দ্যাখায় ইচ্ছামত লোকের গলা কাটবে ......
আনন্দ: না... না... ব্যাপারটা হলো, ওরা এখন যে রেটে ঘুস নেয় সেই রেটই ফিক্স থাকবে। প্রথমে ক্লায়েন্ট সরকারি ফী যথারীতি জমা দেবে, তারপর নির্ধারিত ঘুস ফী অফিসেই একজনের কাছে জমা দিবে এবং এখান থেকেও একটা রিসিট নেবে। তারপর সেই রিসিট দেখায় কাজ করায় নেবে। আর অফিসের সংগৃহীত ঘুসফী সেন্ট্রালি ডিসট্রিবিউট হবে - পুলিশের মত। তাতে দ্যাখেন কত লাভ .... ক্লায়েন্টকে অযথা হয়রান হতে হল না .... দেশের অর্থনীতি মজবুত হল ....ঘুসখোরগুলা লাইনে থাকল ..... আর, আপনাদের মত মানুষ যারা সাধারণ মোরালিটির কারণে ঘুস খেতে পারেনা কিন্তু বাটে পড়ে ঘুস দিতে বাধ্য হন তারাও খুশি থাকলেন ....

আনন্দ আরো কিছু বলার আগেই জিজ্ঞেস করলাম: অর্থনীতি নিয়া টান দিলা যে?
ও বলতে থাকল: দাড়ান, আগে উপকারের লিস্টটা শেষ করে নেই তারপর ব্যাখ্যা দিচ্ছি, যদি লাগে ..... কই জানি ছাড়লাম ... ও মনে পড়ছে .... আপনারা খুশি থাকলেন .... বৈষম্য দুর হবে ... দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লাগবে না .. ইত্যাদি। এখন বলতেছি, ইকোনমিকাল পয়েন্ট অব ভিউ .... .... দেখেন এ দেশে লিগালি যত লেনদেন হয় তার চেয়ে বেশী হয় ইল্লিগালি - এ কথাটা তো মানেন?

বললাম: তা না হয় আপাতত মেনে নিলাম ..... তো?
আনন্দ: এই ইল্লিগাল লেনদেনের ম্যাক্সিমাম হলো ঘুস ....... আর এটা যদি ট্যাক্সেবল হয় তাহলে রেভিনিউ কত বাড়বে চিন্তা করেন!

আমি: কিন্তু ...
আনন্দ: কিন্তু কিন্তু করেন ক্যান ... এর আগেও তো কালো টাকা সাদা করার অনেক পলিসি করছে সরকার ... কি করে নাই?

আমি: আচ্ছা এটা নাহয় আপাতত মেনে নিলাম কিন্তু বৈষম্য?
আনন্দ: আরে আপনি আবার আপাতত আপাতত করতেছেন ক্যান ... বৈষম্য বুঝলেন না ... এটাতো সবচেয়ে সোজা। অফিসগুলাতে সৎলোকগুলা একই পরিমান কাজ করে কিন্তু ওই কম বেতনে টানাটানি করে সংসার চালায়, অথচ তাদের চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোক ঘুসের জোরে কি করে ফেলতেছে ... এখন সেন্ট্রালি ডিসট্রিবিউট হলে তো সেই বৈষম্য দুর হবে ... কি ঠিক বলি নাই?

আমি: এটাও নাহয় বুঝলাম, কিন্তু প্রমোশন বানিজ্যের কি হবে? আমরা আর কতদিন এভাবে নিজেদের আকামগুলো ঢাকতে তত্বাবধায়ক সরকার টাইপের নিত্যনতুন সিস্টেম বের করব?
আনন্দ এ্যাতক্ষনে একটু ব্রেক মারল মনে হল ...

শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০০৬

মুর্গার সাহস দেইখ্যা টাশকি খাইলাম

দেশে থাকিনা বলে দেশী টেলিভিশনও তেমন একটা দেখা হয় না। কিন্তু ইদানিং ক্লোজআপ ওয়ান দেখছি সরাসরি। গতকাল রাতেও (জাপান টাইম) রাত ১২:১৫ এর দিকে টিভি, থুক্কু, ইন্টারনেট স্ট্রিমিং ভিডিও খুলে বসছি। যথারীতি এ্যাড চলতেছিল। হঠাৎ "প্রাণ চিকেন বাইট" চিপসের বিজ্ঞাপন দেখে তাজ্জব হয়ে গেলাম। অ্যানিমেটেড এই বিজ্ঞাপনে এক মোরগ নেচে গেয়ে চিকেন ফ্লেভারড চিপস্ খাওয়াচ্ছে দুই বাচ্চাকে। গরু যদি দুধের প্রোডাক্ট খাওয়ানোর জন্য নাচা-গানা করে তা মানা যায় কিন্তু মুর্গা তার নিজ ফ্লেভারড চিপস্ খাওয়াচ্ছে! জানের ভয় নাই! সত্যি টাশকি খাইলাম!

_____________________________________________________________
কমেন্ট:
====================================================
আপন তারিক বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ০৮:১৭:২০

টাশকি খাওয়ার মতোই ব্যাপার!
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ০৯:২৬:৩৬

আসলেই তো!

মুরগাটা মনেহয় জেহাদী জোশে আছে!
====================================================
পথিক!!!!!!! বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ০৯:৩১:৩০

আমগো ব্লগের মুরগা কই।
====================================================
মদন বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ০৯:৪৩:৫২

নিজের জীবন দিয়ে জনসেবা
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ১২:৩১:১৭

বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের কমন সেনসের অভাব।
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ১২:৫১:০৬

বাংলাদেশে এমন উদভট এ্যড আরো বহু আছে।

একটা কি যেনো সাবানের এ্যড দেয়-একসাবানে কাপড় কাচা, সেই সাবানেই গোসল।

====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ১৫:২৭:২৭

বাঙালী পাবলিক টাইপ মুরগী
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-০২ ১৫:৩১:২৭

মোটালোকদের প্রতি আমার একটা সফট কর্নার আছে । মোটা লোকেরা সাধারণত উদারপন্থী হয় ।
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৬-১২-০৩ ০০:৫৫:৩৪

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

স্পেশাল ধন্যবাদ সুমন চৌধুরী ভাইকে - নরম কোনার জন্য।
====================================================