সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮

বেতন বিষয়ক হাবিজাবি চিন্তাভাবনা ... ...

১।
বহু বছর পূর্বে আমার স্ত্রী ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত স্বনামধন্য একটা স্কুলে চাকুরীর জন্য আবেদন করছিলেন। বিজ্ঞাপনে ভাল ভাল কথাবার্তা লেখা ছিল। তিনদিন ট্রায়াল ক্লাসও নিলেন। তারপর অফার লেটার পেলেন। অফার ছিল মাসে ৭/৮ হাজার টাকা। সেই অফার দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সাধারণ অফিসের ভব্যতা তালাবদ্ধ করে রেখে একটা ডিনায়েল লেটার লিখেছিলাম আমরা – যে: আমার বাসার ড্রাইভারকেও আমরা এর চেয়ে বেশি বেতন দেই, এই অফার করে অপমান না করলেও পারতেন। ওনারা মুখে বলেছিলেন, আরে এটা কোনো সমস্যা না, এই চাকুরীটা থাকলে (এটার নাম ভাঙিয়ে) টিউশনি করে মাসে আপনি বেতনের ৩/৪ গুন কামাতে পারবেন। যা হোক ওনারা অফার লেটার ফেরত চেয়ে নিলেন। ব্যাস ঘটনা ঐখানেই সমাপ্তি।

- প্রশ্ন হল, আমাদের সিস্টেমের ডিজাইনই যদি এমন হয় যে টিউশনি করতে হবে তাহলে ক্লাসে লেখাপড়ার মান বাড়বে কিভাবে আর টিউশন বাণিজ্যই বা থামবে কিভাবে?

২।
বাচ্চার স্কুলের বেতন দেখলাম নতুন ক্লাসে উঠার পর বিরাট একটা লাফ দিয়েছে। হিসাব কষে দেখলাম ১০% বেড়েছে। মেনে নিলাম – কারণ মূদ্রাস্ফীতির ঠেলা সামলাতে ঐটুকু বাড়া স্বাভাবিক।

৩।
বছর শেষে নতুন বছরে বেতন বাড়বে, অন্ততপক্ষে মূদ্রাস্ফীতির ঠেলা সামলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা আগের মত রাখার জন্য হলেও। তারপর, কর্মী গত একবছরে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলো সেটা তার কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে - সেটার প্রতিফলনের জন্য মূদ্রাস্ফীতি পাশাপাশি আরেকটু অতিরিক্ত বৃদ্ধিও আশা করা উচিত। অনেকে সেটাকে সিনিয়রিটি বললেও বুঝতে হবে বর্তমান কর্ম বাজারে বয়স নয় বরং আউটপুটই আসল অবস্থান নির্ণায়ক হতে চলেছে।

বেতন বৃদ্ধি যদি এমন হয় যে সেটা শুধুমাত্র মূদ্রাস্ফীতি কাভার করে কিন্তু এর অতিরিক্ত কিচ্ছু না, তাহলে বুঝে নিতে হবে গত একবছরে অর্জিত অভিজ্ঞতা কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্যহীন। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান বলতে চায়: তোমার থাকা না থাকায় এই প্রতিষ্ঠানের কিছু এসে যায় না - তুমি একজন একজন নতুন/ফ্রেশ লোকের চেয়ে আলাদা কোন গুরুত্ব বহন কর না।

বেতন বৃদ্ধি যদি মূদ্রাস্ফীতির চেয়ে কম হয়, কিংবা বেতন যদি না বাড়ে – তার অর্থ হল, কর্মীর ক্রয়ক্ষমতা আগের চেয়ে কমে গেল। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান বলতে চাচ্ছে: তোমাকে আসলে আমার দরকার নাই; রাস্তা মাপতে পারো।

প্রশ্ন হল, প্রতিষ্ঠান আপনাকে কী বলতে চাচ্ছে তা কি বুঝতে পারছেন?
(সম্পুর্ন ব্যক্তিগত অভিমত)