শনিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩

স্কাইফল শ্রবন অভিজ্ঞতা

জ্বী ঠিকই ধরেছেন --- এটা কার্বাইড কিংবা ফর্মালিন দেয়ার যোগ্য কোনো ফল নহে বরং জেমস বন্ড মুভির কথাই বলছি। ... ... ... ... ন ... না না না ... ... কোনো মুভি রিভিউও না এটা। শুধু আজকে আমার সিনেপ্লেক্সে এই সিনেমা শোনার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করবো।
হ্যাঁ দেখার নয়, শোনার অভিজ্ঞতা, সিনেপ্লেক্সেই। কাহিনী একটু লম্বাই বটে --- জ্বী জ্বী আমার কাহিনীর কথা বলছি স্কাইফলের নয়।

গত উইকএন্ডে বউকে নিয়ে গিয়েছিলাম আর্মি স্টেডিয়ামে, সেখানে লাইভ এস এ টিভি'র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখলাম, মশাদেরকেও আপ্যায়ন করে এলাম। গত রাতে আবার বাসায় ফিরে দেখি উনি ইউটিউবে অ্যানি ফ্রাংকস ডায়েরি মুভি দেখছেন। এর পর আজকেও যখন আবার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে চাইলো আমার চক্ষু তো চড়কগাছ! কাম কাজ নাই, প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট নাই .... খালি মুভি! আমার অত ফালতু সময় নাই --  ঐ সময়ে ঘুমাইলেও লাভ, টিভি দেখলেও লাভ অন্তত হুদাই অতগুলা টাকা খরচ করা লাগবে না। আমারে ভুজুং ভাজুং দেয় -- বলে মুভির টিকিট ১২৫ কি ১৪০ হবে; আমার বিলক্ষন মনে আছে আগেরবার স্পাইডার ম্যান থ্রিডির সময়ে ৩৭০ করে নিয়েছিলো ... ... ... ...

আমার আপত্তি কি আর ধোপে টেকে! বাসার পাশেই বসুন্ধরা শপিং মল তথা সিনেপ্লেক্স। উনি চলে গেলেন মুভির টিকিট কাটতে। আমার উপর কড়া নির্দেশ যে ফোন পেলে সেই অনুযায়ী চলে যেতে -- ঘাড়ে একটাই মাথা কাজেই ... ... ...। টিকিট পাইলেন - টেলিভিষন বা স্নো হোয়াইট নাকি চোরাবালি কোনটারই না পেয়ে স্কাইফলের টিকিট কেটেছেন, সিনেমা শুরু হতে আরও দেড় ঘন্টার বেশি বাকী --- বাসা থেকে ওটা ৩ মিনিটের হাঁটা পথ হলেও বাসায় আসবেন না বরং ঐ সময়ে উনি ইভিনিং ওয়াক করবেন নিচের মোস্তফাতে। জ্বী ঠিকই শুনেছেন -- নাম শুনে খ্যাত লাগলেও, গত ১২ই জানুয়ারী থেকে বসুন্ধরার বেসমেন্টে চালু হওয়া মোস্তফা মার্ট সিঙ্গাপুরের খুব বড় একটা শপিং মলের শাখা। এখানে জিনিষপাতিও সেইরকম পাওয়া যায়।

যা হোক, ৭টা ০৫ মিনিটে শুরু হবে সিনেমা, আমি গিয়ে দুইজনে পোনে ৭টাতেই ঢুকে পড়লাম। টিকেট প্রতিজন ২২৫ টাকা। সাথে সাথে তো আর হলে ঢুকতে দেয় না --- আগের শো শেষ হওয়ার পর ক্লিনাররা বের হল, তারপর আমরা ঢুকলাম।

চুপচাপ বসে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। আমি দেখুম না তো দেখুমই না .... .... হুহ্ ।

শুধু জাতীয় সংগীতের সময়ে চোখ খুলে দাঁড়িয়েছি। বাকী সময় চোখ বন্ধ। তাই শুধু শুনেছি।

ইন্টারভেলের আগের পর্বের মাঝামাঝি সময়ে মনে হল কোথায় জানি নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি। কিছুক্ষন পর আবার, এবার আস্তে করে বামে ঘুরে চোখ পিট পিট করে খুলে আমার পাশের ব্যক্তির দিকে তাকালাম -- কান্ডটা ঐ ভদ্রলোকেরই। হিংসাই লাগলো --- এই কষ্টকর খাড়া চেয়ারে বসে, কানফাটানি ডলবি সাউন্ডেও কত আরামে ঘুমিয়ে নাক ডাকে! surprised সাথে সাথে বউকে দেখালাম  hehe --- দেখো খালি আমিই না, আমার চেয়েও সরেষ লোক আছে!

আবার চোখ বন্ধ, কিন্তু ১০ মিনিট পর পাশে একটু নড়াচড়ার আভাস পেয়ে তাকিয়ে দেখি নাহ উনি আবার ঢুলু ঢুলু চোখে দেখছেন -- আবার ঘুমাবেন হয়তো। এর কিছুক্ষন পর ইন্টারভেল। আমি একটু ফ্রেশরুমে যাবো, পাশের লোককে পার হয়ে বের হতে হবে। দেখলাম উনি আধা জাগন্ত অবস্থায় -- পা বাড়িয়েও দাঁড়াতে হল, কারণ ওনার পাশে ওনার সঙ্গীনিও চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেন। ওনাকে একটু ইশারায় বললাম, যে ম্যাডামকে একটু পা সরাতে বলুন। উনিও সঙ্গীনিকে ডেকে তুললেন। ফ্রেশরুম থেকে সিটে ফেরত আসার সময়েও আরেকবার একইভাবে ভদ্রলোকের সাহায্য নিয়ে ওনার সঙ্গীনিকে জাগাতে হয়েছিলো।

আবার চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে বসে আছি। তবে মাঝে মধ্যে বামপাশের ভদ্রলোকের নাক ডাকার শব্দও পাই। এর মধ্যে একবার মোবাইল বের করে ঘড়ি দেখার সময়ে ডানে বউয়ের পাশের দুটো সিট ফাঁকা দেখলাম --- বউ বললো তাঁর দুই পাশে দুই চিড়িয়া। একজন আমি - চোখ বন্ধ, আর পাশের দুইজনের কথা শুনে বুঝেছে ওরা না জেনেই এই হলে ঢুকেছে এবং হাফটাইমে ভেগে গেছে!!

মুভি শেষ হলে বউ আমারে গুতা দিয়ে বলে চোখ খুলে ওঠ যাই। জাতীয় পতাকা আর ইন্টারভেলের পর এই আরেকবার স্ক্রিনের দিকে তাকালাম যখন কলাকুশলীদের নাম দেখাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম - তাহলে এম ফুলের দোকানে কাজ নিয়েছে। ও বললো না এম তো মারা গেছে আগের এ্যাকশনে। ওহহো, তাইতো কোথায় জানি পড়েছিলাম স্কাইফলে এম মারা যায় ... ... ... গত কয়েকদিন কাজের চাপে প্রায় পুরা সময়েই হয় কম্পিউটার নাইলে প্রজেক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে, তাই এই আড়াই ঘন্টা চোখ বন্ধ রেখে বেশ আরামই লাগলো -- আর মুভির আবহ সংগীত যে একটা ব্যাপার সেটাও অনুভব করতে পারলাম অন্যমাত্রায়।

এই প্রসঙ্গে মনে পড়লো বেশ অনেকদিন আগে ঢাকায় বেড়াতে আসা ছোট্ট চাচাতো ভাইয়ের অনুরোধে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম খোঁজ দ্যা সার্চ দেখতে। সেবারও চোখ বন্ধ রেখেছিলাম শুরুতে। কিন্তু সিনেমা শুরুর একটু পরেই চোখ খুলে দেখতে বাধ্য হয়েছিলাম -- হল ভর্তি দর্শকের হাসাহাসিতে নিজেকে বঞ্চিত করতে মন মানে নাই - অনন্ত জলিল রকস্। আর আজকের রাতের শো বলেই হয়তো অর্ধেকের বেশি সিট খালি ছিল (যদিও চোরাবালি বা অন্য সিনেমাগুলোর টিকিট পায় নাই) - তখন ক্লান্ত চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকাতে এম্নিতেই ইচ্ছা করছিলো না।

শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩

উল্টা পাল্টার দেশে

শুরুতে একটা রূপকথার গল্প সংক্ষেপে:
রাজার পুত্র, মন্ত্রী পুত্রের সাথে দেশভ্রমনে বের হয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে এক দেশে গিয়ে দেখে সেখানে তেলের যে দাম, ঘিয়েরও একই দাম। বড় বাড়ির যেই ভাড়া ছোট ঘরেরও সেই ভাড়া। রাজার ছেলে বেজায় খুশি --- সেখানেই বিলাস জীবন যাপনের আয়োজন করতে লাগলো। মন্ত্রি পুত্র বললো যে দেশে কোন ন্যায় নীতি নাই সেই দেশ বিপদজনক, আমি চললাম -- এই বলে সে নিজ দেশে ফিরে এল। এদিকে সেই দেশে এক চোর ধরা পড়লো, বিশাল আয়োজনের বিচারে ওখানকার রাজা দেখে যে চোর ব্যাটা শুকনা-পটকা হাড্ডিসার আধমরা চেহারার গরীব লোক। 'এই ব্যাটাকে শুলে চড়ানো দেখতে মজা হবে না -- প্রহরী-ই-ই, যা মোটা তাজা দেখে একটাকে ধরে নিয়ে আয়, এটার বদলে ওটাকে শুলে চড়াই।' ঐখান দিয়ে যাচ্ছিলো সেই রাজার ছেলে, সে আবার এ কয়দিনে ঘি, মাখন খেয়ে খেয়ে গায়ে গতরে দারুন মেদবহুল হয়ে গিয়েছে। প্রহরীরা গিয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে আসলো, আর সাইজ দেখে রাজারও ওকে শুলে চড়ানোর জন্য পছন্দ হল ... ...। কোন ওজর আপত্তি অনুনয় বিনয়ে কাজ হল না। দুপুরে তাকে শুলে চড়ানো হবে সেজন্য আয়োজন চলছে, আর ওকে একটা খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘটনাক্রমে রাজার ছেলেকে খুঁজতে মন্ত্রীর ছেলে সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত হল। পরিস্থিতি বুঝে সে ওখানকার রাজা মশাইকে গিয়ে বললো -- এই ব্যাটার কাছে আমি অনেক টাকা পাই, একে তাই কষে কিছু কানমলা দিতে চাই। রাজা তো এতে আরো মজা পেলেন -- যাও কানমলা দিয়ে আস। তখন মন্ত্রীর ছেলে রাজার ছেলের কানে কানে বললো, যে দেশে তেল আর ঘিএর একই দাম, নিয়ম নীতি নাই, সেই দেশে চোর আর নির্দোষেও পার্থক্য থাকবে না তা তো স্বাভাবিক, এখন বাঁচতে চাইলে আমার কথামত কাজ কর -- বলে কিছু টেকনিক শিখিয়ে দিল। রাজার ছেলেও কিছুক্ষণ পর পর ব্যাকুল দৃস্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য দেখতে লাগলো। সেখানকার রাজার কৌতুহলের জবাবে বললো 'দয়া করে ঠিক দ্বিপ্রহরে আমাকে শুলে চড়াবেন কারণ ঐ সময়ে শুলে চড়ে মরলে সোজা স্বর্গে যাওয়া যাবে বলে শাস্ত্রে লেখা আছে' --- --- রাজা সেই ফাঁদে পা দিলো আর স্বর্গের লোভে নিজেই শুলে চড়ে বসলো। রাজার ছেলেও সে যাত্রা রক্ষা পেয়ে তওবা করে নিজ দেশে ফিরে গেল।

রূপকথার অর্থ হল রূপক অর্থে কথা। রূপকথার গল্পগুলোতে রাজা, রাজপুত্রের আড়ালে আসলে আমাদের সমাজের কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়। রাজা প্রজা, রাক্ষস ক্ষোক্কস সবই রূপক - আমাদের চারপাশেই থাকে --- শুধু দেখার জন্য কপালে তৃতীয় নয়ন থাকতে হয়। ;-)

যা হোক সেই রূপকথার দেশের মত না হলেও এর চেয়েও উল্টা ঘটনা চারপাশে ঘটতে দেখি -- এখানে তেল আর ঘি এর দাম সমান নয় বরং ঘি এর দাম কম ..... এক এক করে দেখাই:

১। ব্যবহারের আগেই অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে সার্ভিস কিনলে দাম বেশি আর ব্যবহারের পর বিল দিলে (তাদের পোস্টাল খরচ করে বিল পাঠাতে হয়, ইচ্ছা করলে কাস্টমার ফাঁকিও দিতে পারে যেটাতে) সেটার দাম কম --- ব্যাপারটা অজিব হলেও সত্য। বিশ্বাস না হলে বিভিন্ন প্রোভাইডারের দেয়া প্রিপেইড আর পোস্ট পেইড ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো খেয়াল করুন।

২। বছরের পর বছর থেকে যে আপনার ভক্ত তাকে কোন সুবিধা না দিয়ে যে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করে তাকে মাথায় তুলে নাচা হয় এখানে। -- এই আজিব ব্যাপার দেখবেন আপনার মোবাইল সেবাদাতার অফারে। আপনি বছরের পর বছর নিয়মিত তার সার্ভিস ব্যবহার করে তাঁর পেট ভরাচ্ছেন অথচ 'ফিরে এস', "আপনার বন্ধ সীম চালু করুন' ইত্যাদিতে উপহারের পর উপহার - লয়াল কাস্টমারের কোন খবর নাই।

৩। গুরুজনে বলে 'কথা কম কাজ বেশি' - এটা উন্নতির পূর্বশর্তও বটে। আর আমাদের এখানের তেনারা নেচে গেয়ে কথা চালিয়ে সকলকে বাচাল বানাতে চায় -- বেশি কথায় নাকি বেশি লাভ। লাভটা কার?

৪। বাইরের দেশে সবসময় ক্রিসমাস উপলক্ষে বিভিন্ন রকম ছাড়ের অফার থাকে সব দোকানেই। দেশে থাকলে ঈদের সময়েই সবখানে ছিল্যা কাইট্যা লবণ ... ... বাসের টিকেট কাটেন কিংবা দোকান থেকে কিছু কিনেন ...

আপাতত ক্ষ্যামা দেই ... ... দেশ ছেড়ে না ভাগলে বরং শুলে চড়ার জন্য প্রস্তুতি নেই ... ...