উল্টা পাল্টার দেশে
শুরুতে একটা রূপকথার গল্প সংক্ষেপে:
রাজার পুত্র, মন্ত্রী পুত্রের সাথে দেশভ্রমনে বের হয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে এক দেশে গিয়ে দেখে সেখানে তেলের যে দাম, ঘিয়েরও একই দাম। বড় বাড়ির যেই ভাড়া ছোট ঘরেরও সেই ভাড়া। রাজার ছেলে বেজায় খুশি --- সেখানেই বিলাস জীবন যাপনের আয়োজন করতে লাগলো। মন্ত্রি পুত্র বললো যে দেশে কোন ন্যায় নীতি নাই সেই দেশ বিপদজনক, আমি চললাম -- এই বলে সে নিজ দেশে ফিরে এল। এদিকে সেই দেশে এক চোর ধরা পড়লো, বিশাল আয়োজনের বিচারে ওখানকার রাজা দেখে যে চোর ব্যাটা শুকনা-পটকা হাড্ডিসার আধমরা চেহারার গরীব লোক। 'এই ব্যাটাকে শুলে চড়ানো দেখতে মজা হবে না -- প্রহরী-ই-ই, যা মোটা তাজা দেখে একটাকে ধরে নিয়ে আয়, এটার বদলে ওটাকে শুলে চড়াই।' ঐখান দিয়ে যাচ্ছিলো সেই রাজার ছেলে, সে আবার এ কয়দিনে ঘি, মাখন খেয়ে খেয়ে গায়ে গতরে দারুন মেদবহুল হয়ে গিয়েছে। প্রহরীরা গিয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে আসলো, আর সাইজ দেখে রাজারও ওকে শুলে চড়ানোর জন্য পছন্দ হল ... ...। কোন ওজর আপত্তি অনুনয় বিনয়ে কাজ হল না। দুপুরে তাকে শুলে চড়ানো হবে সেজন্য আয়োজন চলছে, আর ওকে একটা খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘটনাক্রমে রাজার ছেলেকে খুঁজতে মন্ত্রীর ছেলে সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত হল। পরিস্থিতি বুঝে সে ওখানকার রাজা মশাইকে গিয়ে বললো -- এই ব্যাটার কাছে আমি অনেক টাকা পাই, একে তাই কষে কিছু কানমলা দিতে চাই। রাজা তো এতে আরো মজা পেলেন -- যাও কানমলা দিয়ে আস। তখন মন্ত্রীর ছেলে রাজার ছেলের কানে কানে বললো, যে দেশে তেল আর ঘিএর একই দাম, নিয়ম নীতি নাই, সেই দেশে চোর আর নির্দোষেও পার্থক্য থাকবে না তা তো স্বাভাবিক, এখন বাঁচতে চাইলে আমার কথামত কাজ কর -- বলে কিছু টেকনিক শিখিয়ে দিল। রাজার ছেলেও কিছুক্ষণ পর পর ব্যাকুল দৃস্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য দেখতে লাগলো। সেখানকার রাজার কৌতুহলের জবাবে বললো 'দয়া করে ঠিক দ্বিপ্রহরে আমাকে শুলে চড়াবেন কারণ ঐ সময়ে শুলে চড়ে মরলে সোজা স্বর্গে যাওয়া যাবে বলে শাস্ত্রে লেখা আছে' --- --- রাজা সেই ফাঁদে পা দিলো আর স্বর্গের লোভে নিজেই শুলে চড়ে বসলো। রাজার ছেলেও সে যাত্রা রক্ষা পেয়ে তওবা করে নিজ দেশে ফিরে গেল।
রূপকথার অর্থ হল রূপক অর্থে কথা। রূপকথার গল্পগুলোতে রাজা, রাজপুত্রের আড়ালে আসলে আমাদের সমাজের কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়। রাজা প্রজা, রাক্ষস ক্ষোক্কস সবই রূপক - আমাদের চারপাশেই থাকে --- শুধু দেখার জন্য কপালে তৃতীয় নয়ন থাকতে হয়। ;-)
যা হোক সেই রূপকথার দেশের মত না হলেও এর চেয়েও উল্টা ঘটনা চারপাশে ঘটতে দেখি -- এখানে তেল আর ঘি এর দাম সমান নয় বরং ঘি এর দাম কম ..... এক এক করে দেখাই:
১। ব্যবহারের আগেই অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে সার্ভিস কিনলে দাম বেশি আর ব্যবহারের পর বিল দিলে (তাদের পোস্টাল খরচ করে বিল পাঠাতে হয়, ইচ্ছা করলে কাস্টমার ফাঁকিও দিতে পারে যেটাতে) সেটার দাম কম --- ব্যাপারটা অজিব হলেও সত্য। বিশ্বাস না হলে বিভিন্ন প্রোভাইডারের দেয়া প্রিপেইড আর পোস্ট পেইড ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো খেয়াল করুন।
২। বছরের পর বছর থেকে যে আপনার ভক্ত তাকে কোন সুবিধা না দিয়ে যে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করে তাকে মাথায় তুলে নাচা হয় এখানে। -- এই আজিব ব্যাপার দেখবেন আপনার মোবাইল সেবাদাতার অফারে। আপনি বছরের পর বছর নিয়মিত তার সার্ভিস ব্যবহার করে তাঁর পেট ভরাচ্ছেন অথচ 'ফিরে এস', "আপনার বন্ধ সীম চালু করুন' ইত্যাদিতে উপহারের পর উপহার - লয়াল কাস্টমারের কোন খবর নাই।
৩। গুরুজনে বলে 'কথা কম কাজ বেশি' - এটা উন্নতির পূর্বশর্তও বটে। আর আমাদের এখানের তেনারা নেচে গেয়ে কথা চালিয়ে সকলকে বাচাল বানাতে চায় -- বেশি কথায় নাকি বেশি লাভ। লাভটা কার?
৪। বাইরের দেশে সবসময় ক্রিসমাস উপলক্ষে বিভিন্ন রকম ছাড়ের অফার থাকে সব দোকানেই। দেশে থাকলে ঈদের সময়েই সবখানে ছিল্যা কাইট্যা লবণ ... ... বাসের টিকেট কাটেন কিংবা দোকান থেকে কিছু কিনেন ...
আপাতত ক্ষ্যামা দেই ... ... দেশ ছেড়ে না ভাগলে বরং শুলে চড়ার জন্য প্রস্তুতি নেই ... ...
রাজার পুত্র, মন্ত্রী পুত্রের সাথে দেশভ্রমনে বের হয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে এক দেশে গিয়ে দেখে সেখানে তেলের যে দাম, ঘিয়েরও একই দাম। বড় বাড়ির যেই ভাড়া ছোট ঘরেরও সেই ভাড়া। রাজার ছেলে বেজায় খুশি --- সেখানেই বিলাস জীবন যাপনের আয়োজন করতে লাগলো। মন্ত্রি পুত্র বললো যে দেশে কোন ন্যায় নীতি নাই সেই দেশ বিপদজনক, আমি চললাম -- এই বলে সে নিজ দেশে ফিরে এল। এদিকে সেই দেশে এক চোর ধরা পড়লো, বিশাল আয়োজনের বিচারে ওখানকার রাজা দেখে যে চোর ব্যাটা শুকনা-পটকা হাড্ডিসার আধমরা চেহারার গরীব লোক। 'এই ব্যাটাকে শুলে চড়ানো দেখতে মজা হবে না -- প্রহরী-ই-ই, যা মোটা তাজা দেখে একটাকে ধরে নিয়ে আয়, এটার বদলে ওটাকে শুলে চড়াই।' ঐখান দিয়ে যাচ্ছিলো সেই রাজার ছেলে, সে আবার এ কয়দিনে ঘি, মাখন খেয়ে খেয়ে গায়ে গতরে দারুন মেদবহুল হয়ে গিয়েছে। প্রহরীরা গিয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে আসলো, আর সাইজ দেখে রাজারও ওকে শুলে চড়ানোর জন্য পছন্দ হল ... ...। কোন ওজর আপত্তি অনুনয় বিনয়ে কাজ হল না। দুপুরে তাকে শুলে চড়ানো হবে সেজন্য আয়োজন চলছে, আর ওকে একটা খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘটনাক্রমে রাজার ছেলেকে খুঁজতে মন্ত্রীর ছেলে সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত হল। পরিস্থিতি বুঝে সে ওখানকার রাজা মশাইকে গিয়ে বললো -- এই ব্যাটার কাছে আমি অনেক টাকা পাই, একে তাই কষে কিছু কানমলা দিতে চাই। রাজা তো এতে আরো মজা পেলেন -- যাও কানমলা দিয়ে আস। তখন মন্ত্রীর ছেলে রাজার ছেলের কানে কানে বললো, যে দেশে তেল আর ঘিএর একই দাম, নিয়ম নীতি নাই, সেই দেশে চোর আর নির্দোষেও পার্থক্য থাকবে না তা তো স্বাভাবিক, এখন বাঁচতে চাইলে আমার কথামত কাজ কর -- বলে কিছু টেকনিক শিখিয়ে দিল। রাজার ছেলেও কিছুক্ষণ পর পর ব্যাকুল দৃস্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য দেখতে লাগলো। সেখানকার রাজার কৌতুহলের জবাবে বললো 'দয়া করে ঠিক দ্বিপ্রহরে আমাকে শুলে চড়াবেন কারণ ঐ সময়ে শুলে চড়ে মরলে সোজা স্বর্গে যাওয়া যাবে বলে শাস্ত্রে লেখা আছে' --- --- রাজা সেই ফাঁদে পা দিলো আর স্বর্গের লোভে নিজেই শুলে চড়ে বসলো। রাজার ছেলেও সে যাত্রা রক্ষা পেয়ে তওবা করে নিজ দেশে ফিরে গেল।
রূপকথার অর্থ হল রূপক অর্থে কথা। রূপকথার গল্পগুলোতে রাজা, রাজপুত্রের আড়ালে আসলে আমাদের সমাজের কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়। রাজা প্রজা, রাক্ষস ক্ষোক্কস সবই রূপক - আমাদের চারপাশেই থাকে --- শুধু দেখার জন্য কপালে তৃতীয় নয়ন থাকতে হয়। ;-)
যা হোক সেই রূপকথার দেশের মত না হলেও এর চেয়েও উল্টা ঘটনা চারপাশে ঘটতে দেখি -- এখানে তেল আর ঘি এর দাম সমান নয় বরং ঘি এর দাম কম ..... এক এক করে দেখাই:
১। ব্যবহারের আগেই অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে সার্ভিস কিনলে দাম বেশি আর ব্যবহারের পর বিল দিলে (তাদের পোস্টাল খরচ করে বিল পাঠাতে হয়, ইচ্ছা করলে কাস্টমার ফাঁকিও দিতে পারে যেটাতে) সেটার দাম কম --- ব্যাপারটা অজিব হলেও সত্য। বিশ্বাস না হলে বিভিন্ন প্রোভাইডারের দেয়া প্রিপেইড আর পোস্ট পেইড ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো খেয়াল করুন।
২। বছরের পর বছর থেকে যে আপনার ভক্ত তাকে কোন সুবিধা না দিয়ে যে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করে তাকে মাথায় তুলে নাচা হয় এখানে। -- এই আজিব ব্যাপার দেখবেন আপনার মোবাইল সেবাদাতার অফারে। আপনি বছরের পর বছর নিয়মিত তার সার্ভিস ব্যবহার করে তাঁর পেট ভরাচ্ছেন অথচ 'ফিরে এস', "আপনার বন্ধ সীম চালু করুন' ইত্যাদিতে উপহারের পর উপহার - লয়াল কাস্টমারের কোন খবর নাই।
৩। গুরুজনে বলে 'কথা কম কাজ বেশি' - এটা উন্নতির পূর্বশর্তও বটে। আর আমাদের এখানের তেনারা নেচে গেয়ে কথা চালিয়ে সকলকে বাচাল বানাতে চায় -- বেশি কথায় নাকি বেশি লাভ। লাভটা কার?
৪। বাইরের দেশে সবসময় ক্রিসমাস উপলক্ষে বিভিন্ন রকম ছাড়ের অফার থাকে সব দোকানেই। দেশে থাকলে ঈদের সময়েই সবখানে ছিল্যা কাইট্যা লবণ ... ... বাসের টিকেট কাটেন কিংবা দোকান থেকে কিছু কিনেন ...
আপাতত ক্ষ্যামা দেই ... ... দেশ ছেড়ে না ভাগলে বরং শুলে চড়ার জন্য প্রস্তুতি নেই ... ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন