বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৭

আমার ফাস্টফুড ... ...

ইদানিং শুধু পরীক্ষায় ইনভিজিলেশনের ডিউটি থাকে ... সবই সন্ধার পর। তাই দুপুরের খাওয়াটা বাসাতে করেই বের হই। কিন্তু অন্যান্য সময় যখন দুপুরের আগেই অফিসে (প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি) যাই তখনই দুপুরে ফাস্টফুড খাই। অফিস বিল্ডিঙেই ক্যান্টিন .. ইন্টারকমে বলে দিলেই রূমে খাদ্য হাজির।

ফাস্টফুড .... তবে মনে হয় জাঙ্কফুড নয় ... কারণ আমি খাই চারটি সিঙ্গারা।

মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০০৭

অবশেষে কম্পিউটার কিনলাম

আজ ১১ই ডিসেম্বর ২০০৭। গতকাল আমাদের বাসায় একটা নতুন কম্পিউটার কিনলাম।

আগের ল্যাপটপ কাহিনী:
গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে জাপান থেকে আনা আমার ল্যাপটপ কম্পিউরটারটার ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে যায়। তারপরে বেশ কিছুদিন এর ওর কম্পিউটারের সি.আর.টি মনিটরের সাথে ল্যাপটপের সংযোগ দিয়ে ডিসপ্লে করিয়ে কাজ করেছি কয়েকবার। জরুরী কিছু ফাইল সিডিতে সংরক্ষণ করেছি। আর একজন সহকর্মীর পোর্টেবল হার্ডডিস্কে কিছু ব্যাকআপ রেখেছি। তারপর গতমাসে ল্যাপটপটির মনিটর/ডিসপ্লে ঠিক করার জন্য মেরামতের দোকানে দিয়েছিলাম। ওরা তো ঠিক করতে পারেইনি বরং এখন ল্যাপটপ অন করলেও সেটি চালু হয় না। শুরুতে যেটা ছিল মনিটরের ডিসপ্লে কন্ট্রোলকারী চিপের সমস্যা সেটি এখন মাদারবোর্ডের ইনপুট-আউটপুট চিপের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। NEC ব্রান্ডের আমার ল্যাপটপের সমতুল্য কোন মডেল বাংলাদেশে এখনও বানিজ্যিকভাবে আসেনি, তাই এর সাথে মানানসই (compatible) চিপ আছে কি না এ বিষয়েও মেরামতকারী নিশ্চিত নয়। অন্য একটি সার্বজনিন চিপ লাগিয়ে দিতে পারবেন তবে সেটার কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন না।

কম্পিউটারের প্রকট অভাব:
আমার অফিসে চমৎকার ইন্টারনেট সংযোগ সহ একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার পাই আমি। সুতরাং ব্রাউজিং, ইমেইল সহ কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ ওখানেই করে ফেলতে পারি। তবে কিছু কিছু কাজ, যেমন - লেখালেখি .. .. ওভাবে করে অভ্যস্থ নই। কারণ কাজগুলি প্রচুর সময় নেয় এবং এজন্য মাথা থেকে অন্য চিন্তা বের করে দিয়ে স্থিরচিত্তে কাজ করতে হয়। অফিসে (একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়) সেটি করার কোন উপায় নেই কারণ, বাসা থেকে একের পর এক অভিযোগের ফোন আসতে থাকে। সুতরাং কাজগুলি বাসায় বসে করাটাই সমাধান। কম্পিউটারের অভাবে সেই ধরণের কোন কাজ করতে পারছিলাম না মোটেই। এ তো গেল আমার কথা ... এবার আসি বউয়ের কথায়: বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছে, ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে এসাইনমেন্ট দেয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজেই ওসব কাজ করার জন্য কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট থাকা অত্যাবশ্যক। সুতরাং বাসায় একটা কম্পিউটারের ব্যবস্থা না করে আর উপায় ছিল না।

কম্পিউটারে কী আছে:
খুবই সাধারণ একটা কম্পিউটার কিনলাম। কারণ বাসায় আমরা কেউই গেমার নই। সিনেমা দেখা বা গান শোনাও তেমন একটা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস ... কারণ ওসবের পরিপূরক টেলিভিশন ও কেবল সংযোগ আছে। এছাড়া এম.পি.থ্রি সহ অন্যান্য সাধারণ ফরম্যাটের গান বাজানোর উপযোগী সিডি প্লেয়ারও বাসায় আছে। সুতরাং আমার বিবেচনায় শুধু লেখালেখি, হিসাব নিকাশ, প্রেজেন্টেশন, ইন্টারনেট ব্যবহার, কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং সফটওয়্যার এবং সীমিত কিছু ছবি/গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহারের মধ্যেই আমাদের কম্পিউটারের ব্যবহার সীমাবদ্ধ থাকবে।

হার্ডওয়্যার: তাই আর আকাশচুম্বী দামের কোর-টু-ডুয়ো বা ওই মাত্রার কোন প্রসেসরের পেছনে না দৌড়িয়ে সেলেরন প্রসেসর (৩.০ গিগা) নিলাম। RAM ৫১২ মেগাবাইট। ইন্টেলের ৯১৫ চিপসেটসহ ইন্টেল মাদারবোর্ড। ৮০ গিগা সাটা হার্ডডিস্ক। ১৫ ইঞ্চি LG Flatron এল.সি.ডি মনিটর। অপটিকাল ড্রাইভ আপাতত নাই, কারণ আমার নষ্ট/অকার্যকর ল্যাপটপের চমৎকার ডিভিডি রাইটারসহ ড্রাইভটাকে ইউ.এস.বি. ড্রাইভ হিসেবে রূপান্তরিত করছি। এছাড়া ল্যাপটপের হার্ডডিস্কটাকেও পোর্টেবল ইউ.এস.বি. হার্ডডিস্কে রূপান্তরিত করব, ফলে ওটা ব্যাকআপ হার্ডডিস্ক হিসেবে কাজ করবে। কিবোর্ড আর অপটিকাল মাউসের কথা নাই বা বললাম। এছাড়াও ৬০০VA ক্ষমতার একটা ইউ.পি.এস কিনেছি। সবমিলিয়ে দাম পড়ল বত্রিশ হাজার টাকা। এছাড়াও অপটিকাল ড্রাইভ এবং হার্ডডিস্ক রূপান্তরে আরও আড়াইহাজার টাকার মত খরচ হবে বলে শুনেছি।

সফটওয়্যার: আপাতত পাইরেটেড এক্স.পি. দিয়ে চলছে। সাথে অফিসটাও পাইরেটেড। সম্ভবত ম্যাকাফিটাও ক্র্যাক করা। বাকী সবই ফ্রীওয়্যার। ক্যাডের কাজ করার জন্য প্রোজক্যাড নামক ফ্রীওয়্যার, বাংলার জন্য অভ্র, পিডিএফ রিডার হিসেবে ফক্সইট আর মেসেঞ্জার হিসেবে পিজিন ইতিমধ্যেই ইনস্টল করেছি। সামনে ইনস্টলের তালিকায় আছে ওপেনঅফিস, পিডিএফ রাইটার, ফ্রী-ডাউনলোড-ম্যানেজার, ফায়ারফক্স, GIMP, কোন একটা ফ্রী-এন্টিভাইরাস, IrfanView ইমেজ ভিউয়ার ইত্যাদি। এছাড়া ডুয়েল বুটিং অপশনসহ উবুন্টু/কুবুন্টু লিনাক্স থাকবে অতিশীঘ্র।

শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০০৭

চুরির কবলে!

গত ১২ই নভেম্বরে আর সবদিনের মতই অফিসে (প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি) আসলাম। নাহ্... আর সবদিনের মত বললে ভুল হবে। এই দিনে আমি আমার পিঠে ঝুলানো ব্যাগের ভেতরে ভরে এনেছিলাম অনেক কিছু। কলিগের জন্য নিয়ে এসেছিলাম লিনাক্সের সমস্ত সিডিগুলো। সাথে ল্যাপটপ, পোর্টেবল হার্ডডিস্ক ইত্যাদি। কিন্তু অফিসের ভেতর থেকেই আমার ব্যাগটা চুরি হয়ে গেল। চুরি যাওয়া ব্যাগের ভেতরে ছিল আমার সমস্ত সিডির কালেকশন (লিনাক্সের অনেকগুলি ডিস্ট্রো-সিডি, ডিভিডি রিপজিটরি, গান, সফটওয়্যারের সিডি, লাইসেন্সেড মাইক্রোসফট অফিসের মূল সিডি দুইটা), পোর্টেবল হার্ডডিস্ক (১২০ গিগা, সমস্ত ডেটা/ডিস্ট্রোর ব্যাকআপ), দুটো ইউ.এস.বি. ফ্লাশ ড্রাইভ, একটা মোবাইল সিম, ডেটা কর্ড দুইটি, নোকিয়া ফোনের হেডসেট, কিছু জরুরী কাগজপত্র ইত্যাদি।

এখানকার অফিসে সবকিছু খোলাই থাকে (থাকতো)। ইতিপূর্বে কখনই কেউ চুরির শিকার হয়নি। আমিই উদ্বোধন করলাম। মনটা বড়ই খারাপ। এইখানেও হয়ত ইয়াবাখোর রয়েছে ... তা নাহলে আর চুরি কেন!

মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০০৭

পাসপোর্ট নবায়ন করিয়েছিলাম

২০০৬ সালের কথা। এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তাই নবায়ন করতে হবে। সে সময়ে থাকতাম জাপানে। রিসার্চের কাজে বছরে গড়ে চারবার করে দেশে যেতে হলেও সেই সফরের স্বল্প সময়ে পাসপোর্ট অফিসের খপ্পরে পড়তে মন সায় দেয়নি। বলা তো যায় না, শেষে দেখা যাবে আমার কনফার্ম করা রিটার্ন টিকিটের ফ্লাইটে চড়তেই পারছি না। তাছাড়া ডেটা সংগ্রহের কাজে ঢাকার বাইরে থাকা অবস্থায় এদিকেও তদারকি করা সম্ভব না। তাই ঠিক করলাম কপালে যাই থাক জাপান থেকেই পাসপোর্ট নবায়ন করাবো।

বাংলাদেশ এম্বেসীর ওয়েবসাইট ঘেটে জানতে পারলাম কিভাবে কী করতে হবে। ফর্ম ডাউনলোড করে সেটা পূরণ করে সবচেয়ে দ্রুত করার জন্য প্রয়োজনীয় ফী সহ পাসপোর্টটি পোস্ট করে দিলাম এম্বেসীর ঠিকানায়। দুই দিন পরে ফোন করে জানলাম জিনিষ পৌছেছে জায়গামত। তারপর শুধু অপেক্ষা।

৩ দিনে নবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ফী সহ পাঠিয়েছিলাম, সেই হিসেবে সব মিলিয়ে মোট ৭ দিন (২+৩+২) লাগার কথা। কিন্তু ৮ দিন পরেও কোন খবর নাই। একটু টেনশন লাগছিল। অবশ্য পরে ভাবলাম, এখানেও বোধহয় পাসপোর্ট অফিসের কালচার হবে ... দালাল টাকা নেয় ৩ দিনের তারপর ঘুরাতে থাকে। অবশেষে ১৫ দিন পরে দেয়। ৩ দিনের চেয়ে ১৫ দিনের ফী অনেক কম। বাকী টাকা দালালের পকেটে।

তাই, অপেক্ষা করতে থাকলাম। এখানে হয়তো ৭ দিনের অপশনে করবে। যা ভেবেছিলাম তাই হল বোধহয় ১১ দিনের (২+৭+২) মাথায় পাসপোর্ট হাজির। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হল কিছু টাকা (ইয়েন) ফেরৎ এসেছে। এম্বেসীর কর্মকর্তা ৭ দিনের ফী জমা রেখে বাকী টাকা (ইয়েন) ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০০৭

ভারত ভ্রমনের কবলে!

পরিকল্পনাটা ছিল এমন - ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে জাপানে পি.এইচ.ডি. শেষে দেশে ফিরে একবার ভারত ভ্রমন করবো। কারণ এর পরপরই আমার স্ত্রী মাস্টার্সে ভর্তি হবে তাই এর আগেই ভারত ভ্রমন করতে হবে। তাছাড়া পরবর্তীতে বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে ওদের নিয়ে ইউরোপ/আমেরিকা ভ্রমন করা গেলেও ভারত ভ্রমন করা যাবে না।

যেই ভাবা সেই কাজ। ভারতে ভ্রমনের জন্য ভিসার আবেদন করলাম অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে (১লা অক্টোবর)। পরিকল্পনা ছিল স্থলপথে বাসে ঢাকা-কলকাতা হয়ে ট্রেনে দিল্লি তারপর আগ্রা, জয়পুর, আজমির ঘুরে ঢাকা ফেরৎ। ইতিমধ্যে আবার বুয়েটে মাস্টার্সের সার্কুলার দিয়েছে যেখানে আমার স্ত্রী ভর্তিচ্ছু। সামনে পড়েছে ঈদুল ফিতর আর তার পরে পুজার বন্ধ। লম্বা ছুটি বলে ভ্রমনেচ্ছু ভিসাপ্রার্থীপ্রচুর। আমাদের পক্ষেও দেরীতে গেলে ওর মাস্টার্সের ভর্তির আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই গেলাম ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে।

আগের সপ্তাহেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমার ছোটভাই ভারতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিল। লাইনে প্রায় ২০০০ প্রার্থীর পেছনে দাঁড়িয়েছিল। তখন একজন দালাল এসে বলেছিলো যে, ৩০০ টাকা দিলে সামনে ভালো জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেবে। অনন্যোপায় হয়ে ও তাই করে প্রায় ২০০ জনের পেছনে দাঁড়াতে পেরেছিলো। ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে পেরেছিলো, ভিসাও পেয়েছিলো। অবশ্য এজন্য ওকে একবার বাসায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র এবং ফলাফলের ফটোকপি দিতে হয়েছিলো ছাত্রত্ব প্রমাণের জন্য। ভিসার জন্য এমন লম্বা লাইনের কথা শুনে একটু আশাহত হয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর পরিচিতা একজন জানালেন যে, মহিলাদের লাইন অনেক ছোট হয় আর সেখানে জমা নেয় তাড়াতাড়ি।

আমার এবং স্ত্রীর ভিসা আবেদনপত্র জমা দিতে সকাল ৭টায় হাজির হলাম ভিসা অফিসের কাছে। পুরুষদের লাইন ভিসা অফিস থেকে বেশ দুরে অবস্থিত গুলশান শুটিং ক্লাবের সামনে চলে এসেছে ইতিমধ্যে, কিন্তু মহিলাদের লাইন অনেক ছোট - ১৩৪ জনের পেছনে দাঁড়ালো। জমা নেয়ার সময়ও মহিলাদের ক্ষেত্রে দ্রুত জমা নিল এবং সকাল ১০:৩০ এর মধ্যে জমা দিয়ে বের হয়ে এলো। অবশ্য টুরিস্ট ভিসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার শেষ সার্টিফিকেটের ফটোকপি চাইলো।

পরদিন পেয়ে গেলাম দুটি পাসপোর্ট। স্ত্রীকে ভিসা দিয়েছে আর আমারটিতে ভিসা দেয়নি। পাসপোর্ট তুলতে গিয়েছিলো আমার স্ত্রী - ও কাউন্টারে জিজ্ঞেস করেছিল কেন এই অবস্থা? বলেছিলো যে আমার কাগজপত্রে ওদের মনে সন্দেহ হয়েছে - শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের সত্যয়িত ফটোকপি (অনুলিপি) দিতে হবে!! দুজনের কাগজপত্র একই হওয়া সত্ত্বেও একজনকে নিঃসন্দেহে ভিসা দিল আর আরেকজনকে দিল না ... তা-ও টুরিস্ট ভিসার আবেদনে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট চেয়ে!

আমার শ্বাশুড়ী শিক্ষকতা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওনার কয়েকজন সহকর্মীও ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন ... স্ত্রীকে দিয়েছে স্বামীকে দেয়নি - এমন হয়েছে সকলের ক্ষেত্রেই। আমার শ্বশুড়ের পরিচিত অনেক সহকর্মীরও একই অবস্থা। কিছু কাহিনী শুনলাম যে, বাবা-মা, আর বাচ্চার মধ্যে বাচ্চাকে ভিসা দিয়েছে, বাবা-মা কে দেয়নি। চিকিৎসার্থে ভারতগামী রোগীর সহযাত্রীদের ভিসা হয়েছে কিন্তু রোগীর হয়নি। অথচ, ভিসা অফিসের বাইরে কিছু লোক বলছে যে পাসপোর্ট প্রতি ৪০০০ টাকা দিলে ভিসা পাইয়ে দিবে। এসব দেখে মূলা ঝূলানো স্টাইলে ভিসা দেয়ার কারণ অনুমান করা যায়!

যা হোক পরদিন আবার সকাল ৬:৩০শে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালো। এত সকালেও প্রায় ৩০০ জন মহিলার পেছনে দাঁড়ালো আমার স্ত্রী। আজকে কিন্তু আগের দিনের মত মহিলাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফর্ম জমা নেয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১২:৩০শে ভিসা জমা দিতে ঢুকে ২:৩০শে জমা দিয়ে বের হয়ে আসলো। সাধারণত দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফর্ম জমা নেয়, কিন্তু প্রার্থী বেশি বলে প্রায় দুপুর ১টা পর্যন্ত ফর্ম জমা নিয়েছে । কিন্তু তা পরদিনের খাতে জমা নেয়া দেখিয়েছে। পরদিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় ওদিনের জমা পাসপোর্ট ফেরৎ দিবে পরের রবিবার (শুক্র, শনি সাপ্তাহিক বন্ধ)। আমার ছোটভাইয়ের স্ত্রীও লাইনে দাঁড়িয়েছিলো কিছুটা পেছনে। ওর ১০/১২ জন আগে গেট বন্ধ আর জমা নিবে না বলে ঘোষণা আসলো, অথচ তার কিছুক্ষণ আগে কনসুলার এসে বলে গিয়েছিলো যে সমস্ত মহিলাদের জমা নেয়া হবে। বেচারী ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলো। নিরাপত্তারক্ষীগণ টাকা খেয়ে লাইনের সামনে কয়েকজনকে ঢুকিয়েছে .... এরা (নিরাপত্তারক্ষীরা) লাইনের পেছনের দিকে এসে বলে লাইন সোজা করেন ইত্যাদি, আর সামনের দিকে লাইন নেই - সব বিশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে। তাদেরকে যতই বলা হয় সামনের লাইন ঠিক করেন ততই না শোনার ভান করে ... ওখানে অবৈধভাবে লাইনে দাঁড় করাচ্ছে, কাজেই লাইন সোজা হলে তো সমস্যা! এই দিন ছিলো প্রচন্ড গরম। গরমে ডিহাইড্রেশন হয়ে বেচারী কাহিল, রাস্তায় প্রায় পড়ে যাওয়ার দশা।

ইতিপূর্বে অতিকষ্টে রবিবার রাত্রে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা-কলকাতা বাসের টিকিট পেয়েছিলাম। তাই রবিবার বিকালে খুব চিন্তায় থাকলাম পাসপোর্ট ফেরৎ পাওয়া নিয়ে। কিন্তু আমার পাসপোর্ট আর পাওয়া গেল না। ওদিকে অফিসের ভেতরে আমার স্ত্রীর তদন্তে বের হল যে, যেগুলো পাসপোর্টে ভিসা দিয়েছে সেগুলোতেও আমার পাসপোর্ট নেই, যেগুলো ভিসা পায়নি সেগুলোতেও নেই। সম্ভবত আমাকে সাক্ষাতকার নিতে ডাকবে। আমার বাসের টিকিটের দেড় হাজার টাকাও গচ্চা গেল।

পরদিন আমাকে ভিসা অফিস থেকে ফোন করে সাক্ষাতকারের স্লিপ সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে বললেন। তারও পরের দিন সাক্ষাতকার দিতে গেলাম। এবার আমার চাকুরীর কাগজপত্র দেখতে চেয়েছেন কর্তৃপক্ষ (!! টুরিস্ট ভিসা চেয়েছিলাম)। সাক্ষাতকারটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ছিলো আমার জন্য।

বললো, আপনি এর আগে গতবছর ভারতে গিয়েছিলেন ... বললাম হ্যা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ছিল, প্রফেশনাল কাজে গিয়েছিলাম। আমার রেফারেন্সের কথা জিজ্ঞেস করল ... জানালাম একজন আমার আপন মামা, আরেকজন একটি এন.জি.ওর প্রধান যার সাথে আমাদের প্রফেশনাল কাজ হয়। আমাকে চাকুরীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে বললাম যে আমি দুই সপ্তাহ আগে জাপান থেকে ফিরেছি, এই মুহুর্তে বেকার। জাপান যাওয়ার আগের কাগজপত্র দেখতে চাইলো তখন ... বললাম, সেগুলো আমার আছে তবে সাথে নিয়ে আসিনি, তাছাড়া আমার আর ভিসার প্রয়োজন নেই, এমনকি ভিসা দিলেও আমি ভারতে যাবো না, কারণ আমার বাসের টিকিট করা ছিলো আরো দুই দিন আগে; এখন চেষ্টা করলেও টিকিট পাবো না, আর ঈদ/পূজার বন্ধের পরেও আমার যাওয়া সম্ভব নয় কারণ আমার স্ত্রীর মাস্টার্সের ভর্তি সংক্রান্ত কাজগুলি পড়বে সেই সময়ে। জবাবে সাক্ষাতকারগ্রহনকারী বলেন যে এমন করলে আপনি কিন্তু আপনার পাসপোর্ট আর ফেরৎ পাবেন না। আমি লোকটির স্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে গেলাম - আমার দেশে বসে আমার পাসপোর্ট আটকে রাখতে চায়!! পরে মনে হল, উল্টা পাল্টা বলে আমাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছে যেন আমি অন্যপথে যেতে চাই (বাইরে তো দালালরা দাঁড়িয়ে আছেই)। যা হোক আমি জবাবে বললাম, আমার পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। শুনে ব্যাটা বলে যে, আমার রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে আপনার পাসপোর্টের কী হবে, এমন হতে পারে আপনাকে আর কখনো ভারতে ভিসা দেয়া হবে না .... আমি বললাম, আমার অসুবিধা নেই। তখন ঐ লোক আরো বলে, এমন হতে পারে আপনার পাসপোর্ট আমরা ফেরৎ দেবো না, আপনার দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ফেরৎ পাবেন ... জবাবে আমি বললাম, আমার কোনই অসুবিধা নেই, আপনার যেমন ইচ্ছা রিপোর্ট লিখুন তবে আমার পাসপোর্ট ওভাবে ফেরৎ দিলে আমাকে সঠিক ভাবে সেটা আপনাদের জানাতে হবে। তবে পাসপোর্টটি আগামী ১৭ তারিখের আগে ফেরৎ দেবার দরকার নেই। আজ সন্ধ্যায় আমি কুড়িগ্রাম যাচ্ছি। চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কুড়িগ্রাম কোথায়? ... বললাম দেখুন আমার পাসপোর্টে আমার স্থায়ী ঠিকানা লেখা আছে, ওখানে আমার দাদার বাড়ী। ভারতে যেহেতু যেতে পারছি না, তাই ওখানেই যাবো; আমাকে ভিসা দেয়ার দরকার নেই, শুধু পাসপোর্টটি ফেরৎ দিবেন। সাক্ষাতকার শেষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমার পাসপোর্টের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবো - বললেন যেখানে জমা দিয়েছেন সেখানে। এখানে বলে রাখা ভালো, সাক্ষাতকারটি হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসের ভিসা সেকশনে, আর পাসপোর্ট জমা নেয় অন্য একটি ভবনে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার অধীনে।

আমার ছোটভাই অতিকষ্টে বাসের দুটি টিকিট কেটে রেখেছিলো লালমনিরহাট হয়ে বুড়িমারী সীমান্ত পথে ভারত যাওয়ার উদ্দেশ্যে কিন্তু ওরা তো ফর্ম জমা দিতেই পারেনি। তাই ঐ টিকিটে আমি আর আমার স্ত্রী লালমনিরহাট হয়ে কুড়িগ্রাম চলে গেলাম। বেশ আনন্দের সাথে ঈদ করলাম সেখানে।

২২-অক্টোবর গিয়েছিলাম পাসপোর্ট আনতে। দেখি, পাসপোর্ট এসেছে (সাক্ষাতকার গ্রহণকারী ব্যাটা আমাকে ব্লাফ দিয়েছিলো) আবার ভিসাও দিয়েছে ১৫ দিনের। এই ভিসার জন্য গুলশান যাতায়াত আর কলকাতার বাস-টিকিট মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার টাকা নষ্ট হয়েছে আমার। অবশ্য ভারত ভ্রমনে গেলে এর ১৫/২০ গুণ বেশি খরচ হত নিঃসন্দেহে ... সেটা থেকে বেঁচে গেলাম (আঙ্গুর ফল টক )।

ভিসার আবেদন করতে যে ভোগান্তি হল সেটা কোন সভ্য দেশে হতো না বলেই মনে হয়। জাপানে থাকা অবস্থায় পাসপোর্ট নবায়ন করিয়েছি বাংলাদেশ এম্বেসী থেকে -- সবই ডাকযোগে। এছাড়াও আমি জাপানে থাকা অবস্থায় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপাল, ভিয়েতনামের ভিসা পেয়েছি অনায়েসে। এমনকি ভারতের ভিসার জন্য তো কনসুলার অফিসেও যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ফোনে কনসুলার সাহেবের সাথে কথা বলে ওনার কথামত সব কাগজপত্র ও পাসপোর্ট ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আর ওনারাও ভিসা দিয়ে ডাকযোগে ফেরৎ পাঠিয়েছিলো কাগজপত্র। ঢাকা থেকে আমার স্ত্রী সিঙ্গাপুরের ভিসার জন্য আবেদন করেছিলো ইতিপূর্বে - সিঙ্গাপুর এন্বেসী থেকে ১০টি সংস্থাকে (ট্রাভেল এজেন্সী) ভিসা প্রসেসিং ক্ষমতা দিয়েছে। ভিসার জন্য যে কোন সময়ে ওগুলোর কোনটাতে গিয়ে কাগজপত্র এবং প্রসেসিং ফী জমা দিলেই ওরা পরদিন সেগুলো এম্বেসীতে নিয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে সাক্ষাতকার গ্রহনের জন্য ডাকে আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাক্ষাতকার ছাড়াই ভিসা দিয়ে দেয় বলেই শুনেছি। আমার স্ত্রীর ভিসার জন্য সাক্ষাতকার দরকার হয়নি। গত সপ্তাহে দেখলাম ব্রিটিশ এম্বেসী অনলাইনে ভিসা আবেদন করার পদ্ধতি চালু করেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কোথায় পড়ে আছে!

মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০০৭

জাপানের শেষ দিনগুলি

বিদায় আসন্ন:

দেখতে দেখতে জাপান থাকার সময় শেষ হয়ে গেল ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ২৩শে সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনে করে ফুকুওকা থেকে ভায়া সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকা ফিরে যাচ্ছি।

যাই যাই ভাবটা শুরু হয়েছিলো গত জুন মাস থেকেই। সম্বন্ধীর বিয়ে উপলক্ষে আমার বউ দেশে চলে গেল ১৭ই জুন। আমিও ফুকুওকা গেলাম বিদায় জানাতে। নাইট বাসে করে গিয়েছিলাম। জুলাই মাসে সম্বন্ধীর বিয়ের পরে বউ আবার জাপানে ফিরবে কি না সেটা নিয়ে একটু ধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে যাই দুজনেই। কারণ হিসেব মত সেপ্টেম্বরে আমার পি.এইচ.ডি. শেষ হলে আমার ফিরে আসতে হবে। কাজেই ও যদি জাপানে আসেও তাহলেও দেড় দুইমাস পরেই আবার বাংলাদেশে ফিরতে হবে। আর ট্যাকের যে অবস্থা তাতে এ্যাত ঘনঘন আসাযাওয়া করলে সামনে অন্ধকার ... ... তাই কষ্ট হলেও দুজনেই ঠিক করলাম যে, যদি না জাপানেই আমার কোন চাকরী বা পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চারের কাজ জোটে তাহলে ও আর জাপানে আসবে না। আর, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তও নেয়া যাচ্ছিলো না কারণ, পোস্ট ডক্টরালের জন্য আবেদনের ফলাফল দেয়ার কথা অগাস্টের ২০ তারিখের দিকে। সুতরাং অন্ততপক্ষে ঐ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমার আর ওটা হয়নি, যদিও খুব আশা করেছিলাম যে রিসার্চের প্রস্তাবটা গৃহীত হবে। আমার প্রফেসরও খুব ভালভাবে রেকমেন্ড করে দিয়েছিলেন কিন্তু তাও হলোনা।

যা হোক বউ জাপানে ছিল না সেই জুন মাস থেকে। এবং ঐ সময়ে আমার কাজের চাপ অত্যধিক বেশি ... শেষ টার্ম বলে কথা। থিসিস ডকুমেন্টের একটার পর একটা ড্রাফট ঠিক করছি আর প্রফেসরদের পরীক্ষা কমিটি ওগুলোতে গাদা গাদা সংশোধনী দিচ্ছে... হাতে সময়ও কম। এটার কাজ করতে করতে রাত-দিনের হুশ পাই না। তাই বউ যাওয়ার আগে ওকে সময়ও দিতে পারিনি যথেষ্ট। বউ চলে যাওয়ার পরে, সময় দেয়ার দায়িত্ব একটু কমে গেল বটে, তবে স্বাভাবিক জীবন যাপন বাঁধাগ্রস্থ হল প্রবল ভাবে। বউয়ের সতর্ক দৃষ্টির আড়ালে থেকে নিয়মিত ব্যায়াম বাদ পড়ে গেল ... ... অবশ্য এর পিছনে অসম্ভব গরমটাও দায়ী ছিল বহুলাংশে।

গরমের সময়ে মনে হয়েছিলো যে, এই সময়ে বউ এখানে না থেকে খুব ভাল হয়েছে ... এখানে নির্ঘাত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তো -- ওর ঠান্ডা লাগার ধাত আছে, এয়ার কন্ডিশনার সহ্য হয় না ... তাই বাসায় এ.সি.ও লাগানো নাই। গরমের সাথে অসম্ভব আদ্রতা ... মনে হয় সেটা ঢাকার চেয়েও বেশি। কারণ সম্ভবত আমাদের শহরটার অবস্থান। প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে শহরটা, আর আমাদের বাসার পূর্বদিকে বড়জোর তিন কিলোমিটার দুরেই মহাসাগর, দক্ষিন দিকে দুই কি আড়াই কিলোমিটার দুরে পাহাড়, সুতরাং ভ্যাপসা আবহাওয়া।

থিসিস ডিফেন্স ও ডিগ্রী প্রাপ্তি:

বউ ঢাকায় থাকাতে ওর এই অসহ্য গরম সহ্য করতে না হলেও আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়েছিলো। যা হোক একটু একটু করে সমস্ত কাজ শেষের পথে চলে আসলো আর দোসরা অগাস্টে আমার ফাইনাল ডিফেন্সের তারিখ পড়লো। ঠিক তার পরে পরেই ৫ তারিখে আমার প্রফেসরসহ বাংলাদেশে একটা রিসার্চ ট্রিপের পরিকল্পনা ছিল, যেখান থেকে ১৯ তারিখে আবার জাপানে ফিরবো। সব প্রস্তুতি শেষ, তবে ডিফেন্সের আয়োজনটাকে বলা যায় এলাহি কারবার .... .... কারণ এর আগেও কয়েকজনের পি.এইচ.ডি থিসিস ডিফেন্স দেখেছিলাম এখানে। দর্শক হয় হাতে গোনা কয়েকজন। পরীক্ষক বাদে নিজ ল্যাবের দুই/একজন, স্বামী বা স্ত্রী, আর বাইরের দর্শক বলতে আমি! কিন্তু আমার বেলায় প্রফেসর দাওয়াত দিয়েছিল অনেককে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা ছিল যে মোটামুটি ভাবে ফাইনাল প্রেজেন্টেশনের হ্যান্ডআউটের ২০ কপি করলেই তা দর্শকদের জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু প্রফেসরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করাতে উনি যা বললেন তা শুনে আমি তো অবাক। উনি প্রথমেই ফরেন স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের গ্রুপ মেইলৈ একটা মেইল করিয়েছেন (আমিও সেটা পেয়েছিলাম), তারপর দাওয়াত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে এমন দুটি সংগঠনের যতজন এই শহরে আছে সকলকে (এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়র্ক এবং রিসার্চ গ্রুপ অব এপ্লাইড জিওলজি), এছাড়া দাওয়াত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু প্রফেসরকে, সবশেষে উনার ল্যাব থেকে গত ১০ বছরে যতজন পাশ করে গেছে সকলকে। উনি হিসাব দিলেন পঞ্চাশ কপির বেশি করতে হবে, মোট সত্তর কপি করতে বললেন। সব কপি করলাম, স্ট্যাপল করে সেট বানালাম ... এসব করতে করতে আমার অবস্থা কেরোসিন। এদিকে হয়েছে আরেক কারবার ....

আবহাওয়া রিপোর্টে দেখাচ্ছিল যে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে একটা টাইফুন ধেয়ে আসছে এবং সমস্ত পূর্বাভাষ বলছে এটা সরাসরি আমাদের শহরের (মিয়াজাকি) উপর দিয়ে ভূমিকে আঘাত হানবে। তবে সেটা আঘান হানবে ৩রা অগাস্ট সকালের দিকে, সুতরাং ২রা অগাস্টের দুপুরে আমার প্রেজেন্টেশন হতে কোন সমস্যা নাই কারণ ঝড় শুরু হবে মাঝরাত থেকে। ১লা অগাস্টের বিকালের আবহাওয়া রিপোর্টে বলল যে টাইফুন এর গতি পরিবর্তন করে আরও দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে এবং পরদিন দুপুরে আমাদের শহরের উপর দিয়ে ভূমিতে আঘাত হানবে!! সন্ধ্যা ৬:১৫তে প্রফেসর বললেন টাইফুনের কারণে আগামীকালের থিসিস ডিফেন্স পিছিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ (না করে উপায় নাই, কারণ দুপুর ২টা থেকে ৩টা ডিফেন্স আর ঐ সময়েই টাইফুনের কেন্দ্র আমাদের উপর দিয়ে যাবে!)। পিছিয়ে দিয়েছে কবে?? ২০শে অগাস্ট। কারণ আমরা ৫ই অগাস্টে ট্যুরে যাচ্ছি, আর টাইফুনের পরের দুই/একদিন কে কী অবস্থায় থাকে তার ঠিক নাই .... অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে ১৯শে অগাস্ট দুপুরে জাপানে আমাদের শহরে ফিরে পরদিন দুপুরে প্রেজেন্টেশন।

পরিচিত সকলেই (জাপানি সহ) বলছিল.... এ তো খুব ধকল যাবে, বিমান ভ্রমনের জেট ল্যাগ কাটার আগেই প্রেজেন্টেশন। অবশ্য আমি চিন্তিত ছিলাম না কারণ, ইতিপূর্বে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছি। এমনও হয়েছে যে ভোরে ওখানে বিমান থেকে নেমে দুপুরে প্রেজেন্ট করেছি। কাজেই এটাতেও সমস্যা হবে না। যা হোক, ভেবেছিলাম থিসিস ডিফেন্স করে মাথা থেকে এই বোঝা নামিয়ে হালকা মাথায় দেশে যাবো, সেটা আর হলো না। তবে একটা লাভ হয়েছিলো। দেশে কাজের ফাকে (যশোরে) ওখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের এবং যশোরে ডি.পি.এইচ.ই-জাইকা আর্সেনিক মিটিগেশন প্রজেক্টের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাদের সামনে প্রায় একই জিনিষ একবার প্রেজেন্টেশন করে নিজেকে একটু ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। এই প্রেজেন্টেশনটা আসলে দেয়ার কথা ছিল আমার প্রফেসরের, কারণ উনি উক্ত প্রজেক্টের টেকনিকাল এক্সপার্ট হিসেবে গিয়েছিলেন। এখানে উপস্থিত সকলেই সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন জন্য বিষয়টার খুটিনাটি ভালো জানেন এবং বোঝেন, ফলে ওনাদের সাথে প্রেজেন্টেশনের পরের প্রশ্নত্তোর পর্বটা থিসিস ডিফেন্সের চেয়ে কার্যকর হবে এটাই আশা করেছিলাম। কারণ থিসিস ডিফেন্সে যাঁরা আসবেন ওনারা আমার কাজ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না... কাজেই মূল লক্ষ্যটা হবে ওনাদের মাথায় বিষয়টা সম্পর্কে ধারণা দেয়া, বিষয়ের গভীরে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। কিন্তু যশোরের টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশনে বিষয়ের খুব গভীরে গিয়ে আলোচনা/প্রশ্নত্তর পর্ব হয়েছিল কারণ, ওনারা আসলে আমার গবেষণার ফলাফলটাকেই মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করছেন ঐ প্রজেক্টে। আর ওটাতে খুব ভালভাবেই উৎরে গিয়েছিলাম।

মিয়াজাকি ফিরে এসে তাই থিসিস ডিফেন্স করতে কোন অসুবিধা অনুভব করিনি। মোট ৪৩ জন উপস্থিত ছিলো ঐ সময়ে। আর ডিফেন্সের পরে পরীক্ষক কমিটির প্রফেসরগণ বললেন আমার প্রেজেন্টেশন আর প্রশ্নোত্তর পর্ব আশাতীত ভাল হয়েছে। কাজেই সাথে সাথেই দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছিলাম। আমাকে ডক্টরাল সার্টিফিকেট দেয়া হল ১৩ই সেপ্টেম্বর, আর তার দশদিন পরে জাপান ত্যাগ করলাম।

গৃহহীন হওয়ার পর্ব:

ডিগ্রী পেতে অসুবিধা না হলেও ওখানকার বাসা এবং অন্য সবকিছু ছেড়ে আসতে অসম্ভব ঝামেলা পার করতে হয়েছে। প্রথমত বাসা থেকে সমস্ত আসবাব সরাতে হয়েছে। আশেপাশের বিদেশী ছাত্রদের এবং বাঙালী ভাইদেরকে তিল তিল করে গড়ে তোলা প্রথম সংসারের সমস্ত জিনিষ বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে দিতে প্রচন্ড কষ্ট হলো। এরপর পরিষ্কার করতে হলো সমস্ত ময়লা। এখানে ময়লা ফেলার আগে ওগুলোকে ভাগ করে বিভিন্ন ভাগে ফেলতে হয়। দহনযোগ্য, অদহনযোগ্য, প্লাস্টিক, রিসাইকেল, বোতল/ক্যান ... ময়লা ভাগ করার কত যে প্রকারভেদ।

কয়েকমাস ধরে জমানো শুকনা ময়লা বেছে আলাদা আলাদা করে ফেললাম। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও কাজটা খুবই বিরক্তিকর এবং সময় সাপেক্ষ ... একটু ব্যাখ্যা করি। দেশে কাগজের প্যাকেটে যেমন জুস পাওয়া যায়, এখানে তেমন দুধ/জুস ইত্যাদি পাওয়া যায়। ঐ প্যাকেট ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিয়েছেলাম, কারণ ওটাকে স্বাভাবিক ময়লার সাথে দহযোগ্য হিসেবে ফেলা যাবে না। প্রতিটি প্যাকেটকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে তারপর সেগুলোকে একসাথে বেঁধে রেখে আসতে হবে রিসাইকেলযোগ্য (পূণর্ব্যবহারযোগ্য) ময়লা হিসেবে। মোট ৬৭টি প্যাকেট জমেছিলো আমার বাসায়।

এরপর আসি ড্রিংকের বোতলের কথায়। বোতলগুলো সাধারণত PET বোতল, ওগুলোকে আলাদা ফেলতে হবে। তবে বোতলের মুখগুলো আবার অন্য প্রকৃতির ময়লা (প্লাস্টিক রিসাইকেল) এছাড়া বোতলের গায়ের লেবেল লাগনোগুলো কাগজের হলে দহনযোগ্য আর প্লাস্টিক/পলিথিনের হলে প্লাস্টিক ময়লা। বুঝুন ঠেলা ... বোতলের মুখ/ক্যাপ একদিকে, লেবেল ছিড়ে আলাদা করে একদিকে আর বোতল আরেকদিকে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর গত কয়েকবছরে ব্যবহৃত আর অব্যবহৃত কাপড়চোপড় ... ... নতুন পুরাতন মিলিয়ে মোট দশ বস্তা কাপড় ফেলে দিতে হলো - পূণর্ব্যবহারযোগ্য ময়লা হিসেবে। থালাবাটি কিছু ফেলা হল অদহনযোগ্য ময়লা হিসেবে আর কিছু বিভিন্ন লোকজন নিয়েছে। পর্দা, পর্দা লাগানোর রেইল সব খোলা হল .... .... ...। নতুন টেলিভিশন কিনেছিলাম। কিন্তু ওটা শেষে একটু সমস্যা করতো। তাই ওটা ফেলে দিলাম। টেলিভশন ফেলতে ৩৩০০ ইয়েন ফী দিতে হল!

এরপর ছিল কাগজপত্র আর বই। নিজের বই ছিলো প্রায় ৪০-৫০ কেজি। তার মধ্য শুধু যেগুলোতে নিজের কোন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ওগুলো (১২ কেজির মত) আর দেশ থেকে আগে নিয়ে আসা কাঁথা চাদর মিলিয়ে ২০ কেজি মাল দেশে পাঠালাম পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ... খরচ ১২০০০ ইয়েন। বাকী বইপত্র সব ল্যাবে দিয়ে আসলাম। ওরা যদি সামনে কখনো বাংলাদেশে ট্যুরে আসে তাহলে কয়েকটা বই নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করে আসলাম .... ওখানে জাপানে কেনা বই যেগুলো ছিলো ওগুলোর মূল্য ১০০০০ ইয়েনের বেশি। এছাড়া বিভিন্ন জিনিষ কেনার সময়ে বাসায় প্রবেশ করা কাগজের বাক্স (কার্টন) ফেলতে পারলাম না। এগুলো ফেলতে হয় আলাদা ভাবে। সবগুলো ভাঁজ করে একসাথে নির্দিষ্ট দিনে (অন্যান্যগুলোও নির্দিষ্ট দিনে ফেলতে হয়) ফেলতে হয়। ল্যাবের জাপানি জুনিয়র বললো ওগুলো ল্যাবে রেখে যেতে, পরবর্তী বৃহস্পতিবার ফেলার একটা তারিখ আছে তখন ওরা ফেলে দেবে।

এই সব কাজ করতে করতে শেষের সপ্তাহ দুই মন ও শরীরের উপরদিয়ে স্টীম রোলার গেল। শেষ দুইরাত দুই দিন মিলিয়ে মোট চার ঘন্টা ঘুমিয়েছি। কাজ করতে করতে শরীর এতই অবসন্ন হয়ে যায় যে মনে হয় নিজের শরীরের ভার নিজেই বহন করতে পারি না। রাতে পরিষ্কারের কাজ আর দিনে ল্যাবের শেষ দিকের কাজ যেমন সি.ডি. বানানো, অন্য প্রফেসরের কামলা খাটা, অফিসিয়ালি সমস্ত সার্ভিস (মোবাইল ফোন, ল্যান্ডফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস, ভাড়া-বাসা, স্বাস্থ্যবীমা, ক্রেডিটকার্ড, পোস্টঅফিস একাউন্ট, ব্যাংক একাউন্ট, বিদ্যূৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি) বন্ধ করার জন্য ছোটাছুটি, ফোন করা ইত্যাদি। গাড়িটা ফেলে দিতে চেয়েছিলাম ... গাড়ি ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় ফী (৯৪০০ ইয়েন) জমা দিয়েছিলাম অনেক আগেই। যেই দোকান থেকে গাড়ি কিনেছিলাম ওখানে যখন গাড়িটা কয়েকদিন আগে নিয়ে গিয়ে বললাম গাড়িটাতো ফেলতে চাই, দোকানের মালিক কাগজপত্র দেখে বলে গাড়িটা যথেষ্ট ভাল আছে এখনও (বয়স ১৩ বছর) তাই এটা ফেলো না, কারণ তাহলে ওরা গাড়িটা ভেঙ্গে ফেলবে। তার চেয়ে আমি এটা কিনে নিচ্ছি। নামমাত্র মূল্যে গাড়িটা কিনে নিলেন .. (আমি তো ফেলেই দিতাম .. কাজেই যা পাওয়া যায় তাই লাভ)। সবার শেষের দিন অর্থাৎ গতকাল (২২-সেপ্টেম্বর) বাসার চাবি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে তারপর গাড়িটা দিয়ে আসলাম ... গৃহহীন ও গাড়িহীন হলাম।

অবশেষে বিদায় মিয়াজাকি:

(গতকাল ২২শে সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ইফতার পার্টি হল বাঙালি বড় ভাইয়ের বাসায়। বাঙালী সাড়ে চার পরিবারের সকলেই এসেছিলো (আমি একা, তাই অর্ধেক পরিবার!)। খুব জমেছিল ইফতার ও তার পরের আড্ডা। তারপর রাত ১১টার বাসে চলে আসলাম ফুকুওকা। আমাকে বাসস্ট্যান্ডে এগিয়ে দিয়ে গেল ওখানের সকল পুরুষগণ। এছাড়া ল্যাব থেকেও ৩জন ছেলে ওখানে এসেছিল বিদায় জানাতে। বিদায় নিতে তেমন কষ্ট হলো না ... খারাপ লাগলো না তেমন একটা। কারণ, গত কয়েকদিনে তিল তিল করে গড়ে তোলা আমাদের প্রথম সংসারটার স্থাবর অংশগুলো দান করতে আর ময়লা হিসেবে ফেলতে ফেলতে কষ্টের যে শেল মনে জমা হয়েছে (অধিক শোকে পাথর) তার তুলনায় এই বিদায় তো তেমন কিছু না। বিদেশের কঠিন পরিবেশে জীবনযুদ্ধের মাঝে আপনজন বাঙালিদের সাথে দেখা হয় হয়তো মাসে একবার ... ... আর সংসারটা ছিল পুরা সময় জুড়ে কত স্মৃতির ধারক হয়ে। তাই বিদায় দিতে তেমন কষ্ট লাগেনি ... ... ...।

মিয়াজাকিকে আসলেই খুব মিস করবো আমি আর আমার বউ - এখানে আমাদের নিজেদের মত করে সংসার করার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।।

এই মুহুর্তে বসে আছি সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে; ৫ ঘন্টা ট্রানজিট। তাই বসে বসে গত কয়েকদিনের স্মৃতিচারণ করে ল্যাপটপটার সদ্ব্যবহার করলাম।

মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

আমাদের প্রযুক্তি ফোরাম

প্রযুক্তির সবকিছু চাই বাংলায়...এই শ্লোগাণকে সামনে রেখে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে বাংলা ভাষায় বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রথম অনলাইন ফোরাম 'আমাদের প্রযুক্তি'।

অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের দেশী ফোরাম সাইট থাকলেও বেশির ভাগই বিনোদন নির্ভর ও আড্ডার। শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ফোরাম সাইট নেই। আর যেগুলো আছে সেসবেও মতামত আদান প্রদানের মাধ্যমও ইংরেজী কিংবা বাংরেজী। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যেকোন কিছু বোঝা বা জানার জন্য মাতৃভাষার চেয়ে আর কোন কার্যকরী মাধ্যম হতে পারে না। আর একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্বে আমরা অন্যদের চেয়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি। এর কারণ হলো, আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উপকরণের খুব অভাব রয়েছে। সেই অভাবটি পূরণের জন্যই এই ফোরাম সাইটটি তৈরি করেছেন বুয়েটের শেষ বর্ষের চার শিক্ষার্থী বিপ্র রঞ্জন ধর, সবুজ কুমার কুন্ডু, দেবজ্যোতি নাথ এবং মোঃ তাসিকুল আলম। এই চারজনের মাঝে সবুজ কুমার কুন্ডু কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এবং বাকী তিনজন ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন। আমাদের প্রযুক্তি টিমকে বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে সাহায্য করেছেন বতর্মানে জাপানে অবস্থানরত বাংলাদেশী পরিবেশ প্রকৌশলী ড. মিয়া মোহাম্মদ হুসাইনুজ্জামান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক অন্যান্য বাংলা সাইটের চেয়ে এই সাইটটি একটু আলাদা। কারন এখানে অন্যান্য সাইটের মত শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তিকে প্রাধাণ্য দেয়া হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি রয়েছে ন্যানোপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, আবাসন প্রযুক্তি, রোবট প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল সহ বিভিন্ন বিভাগ যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রায় সব শাখার মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এছাড়া প্রযুক্তি সংবাদ, ক্যারিয়ার, প্রযুক্তি পণ্য, প্রকাশনা ইত্যাদি বিভাগও রয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা সহায়িকা বিভাগ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে যা বাংলাভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের নোটের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও রয়েছে কফি হাউজ নামে একটি বিভাগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জটিল আলোচনায় ক্লান্ত হয়ে পড়লে এখানে আড্ডা দিতে পারবেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

সম্পূর্ণ ইউনিকোড ভিত্তিক এই সাইটটি তৈরি করা হয়েছে বহুল ব্যবহৃত ফোরাম ইঞ্জিন পিএইচপি বিবি । ইঞ্জিনটিকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন আমাদের প্রযুক্তি টিমের দুই সদস্য সবুজ কুমার কুন্ডু এবং বিপ্র রঞ্জন ধর। এছাড়াও এ সাইটে রয়েছে ওয়েব ভিত্তিক ইউনিকোড কি-বোর্ডের মাধ্যমে কোন ধরনের বাংলা সফটওয়্যারের সাহায্য ছাড়াই বাংলা লেখার সুবিধা। এই উন্মুক্ত ওয়েব ভিত্তিক কি-বোর্ডটি পিএইচপি প্রোগ্রামার হাসিন হায়দারের তৈরি করা। ভবিষ্যতে এটাকে পি.এইচ.পি. বিবি'র অফিসিয়াল বাংলা ভার্সান হিসেবে ওপেনসোর্স ভান্ডারে যুক্ত করার ইচ্ছা পোষন করছে এর ডেভেলপারগণ।

আমাদের প্রযুক্তি টিমের এই চার তরুন স্বপ্ন দেখেন চীন, জাপান, কোরিয়া কিংবা রাশিয়ার মতো আমাদের দেশেও একদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষায় নিয়মিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার মাধ্যমে তারা সে পথেই এগিয়ে যেতে চান। এক্ষেত্রে অনলাইন বেছে নেয়ার কারন হিসেবে তারা জানিয়েছেন, প্রযুক্তি মনস্ক মানুষের একটি বড় অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তবে তারা ভবিষ্যতে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও মানুষকে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় উদ্ভুদ্ধ করতে কাজ চালিয়ে যেতে চান। তাই তারা আশা করেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মনস্ক প্রতিটি মানুষ তাদের এই আহবানে এগিয়ে আসবেন।

আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। বাঙ্গালী জাতির এই মহান আত্মত্যাগের স্বীকৃতি মিলেছে, বাংলা ভাষার বিজয় কেতন উড়েছে দিক থেকে দিগন্তে। এখন আমাদের এগিয়ে যেতে প্রযুক্তির বিশ্ব বিজয়ের স্বপ্নে। তবে স্বপ্ন একা একা দেখা যায় না, স্বপ্ন দেখতে হয় সবাই মিলে। তাই এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে আপনার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা মাতৃভাষায় তুলে ধরতে ক্লিক করুনঃ


http://forum.amaderprojukti.com

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০০৭

আমার বুদ্ধি কম্পিউটারের মত!!

১. ছোটবেলার কথা। বিকালে মাঠে খেলাধুলা করে বাসায় ফিরেছি। আম্মার কমান্ড আসলো .... হাতমুখ ধুয়ে আয়। বাধ্য ছেলে হাত মুখ ধুয়ে চলে এলাম (কোন কারণে ক্ষিপ্ত থাকায় বুদ্ধি কম্পুটারসম হইলো) - পাগুলো ধুলিময় রয়ে গেল... শুধু হাত-আর মুখ ধুয়ে চলে এসেছিলাম!

২. একই সময়ে আরেকরকম কমান্ড আসতো, যা নাস্তা খাবি, টেবিলে বস্। যথারীতি অতিবাধ্য ছেলে তাঁর কম্পিটারসদৃশ বুদ্ধি প্রয়োগ করলো .... চেয়ার টেনে ওটার সাহায্যে টেবিলে চড়ে বসা হলো!

৩. এখন পর্যন্ত মাঝে মাঝেই মাথা কম্পু হয়ে যায়। খাওয়া প্রসঙ্গে কেউ যদি প্রশ্ন করে কী দিয়ে খেলে -- উত্তরটা হয়: হাত দিয়ে তুলে তুলে মুখ দিয়ে চিবিয়ে খেলাম!

৪. মাঝে মাঝে অর্ধাঙ্গিনীর সাথে কিঞ্চিৎ মনোমালিন্য হয়। তখন শুনতে হয় - আমি মরে যাবো ... ...। কম্পুটার ব্রেনের রেসপন্স: এই সময়ে কোন মোড়ে যাবে; ঐখানে গিয়ে কী করবে? একা যাইয়ো না ... ...

৫. চ্যাটে/ফোনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন আসে: এখন কী করছেন? উত্তর: এইতো আপনার সাথে চ্যাট করছি / ফোনে কথা বলছি।

এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে.... সত্যই আমার বুদ্ধি কম্পিউটারের মত!! :(

জাপানে এই ধরণের উত্তর দিলে ওদের সাথে বেশ মেলে। ;)


(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০০৭

রূপকথাঃ ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো

রূপকথাঃ রূপক অর্থে যে কথা বলা হয়। লেখাটা মূলত: প্রজন্ম ফোরামের জন্য লেখা হয়েছিলো।



ব্যাখ্যাঃ
খেয়াল করার ব্যাপার এখানে দুইটা। প্রথমত: এখানে একটি বাহন বা ঘোড়া আছে আর আছে একজন মর্দ (নারী নয়, পুরুষ)। দ্বিতীয়তঃ এখানে টুইস্ট হলো ঘোড়ায়/বাহনে চড়ার পরেও মর্দ নিজে হাঁটছে। ঘোড়ার চেয়ে লম্বা ঠ্যাঙের ব্যাখ্যাটা মজার হলেও এখানে আসলে ঘোড়া আর মর্দকে একই সত্তা (Entity) বুঝানো হয়েছে। যে চালক, সে-ই বাহন।

আধ্যাত্ববাদে এই কথাটা দারুন একটা দর্শনকে তুলে ধরে। সেটা হলো ব্যক্তির আমিত্বকে ত্যাগ করার ক্ষমতা। যারা এই দুনিয়াকে প্রচন্ডভাবে আঁকড়ে ধরে, তারা এই আমিত্বকে ত্যাগ করতে পারে না। তাই বিশ্বাস করতে পারে না যে এই নশ্বর দেহ ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখানে শুধু কয়েকদিনের জন্য এই রঙ্গিলা দুনিয়া। সৃষ্টিকর্তা একটা দেহের মালিক করে দিয়েছেন তাকে সাময়িক ভাবে। এটা সম্পুর্নভাবে তার নয়। এটা তার বাহন মাত্র। কিন্তু এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে না বলে বাহনের মালিক হতে পারে না বরং বাহনে সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এই আঁকড়ে ধরার স্বভাবটাকে বিভিন্ন দর্শনেই নারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে - আকর্ষিত সত্তা। আর যাঁরা আকর্ষনকে ত্যাগ করতে পারে তাঁদেরকে পুরুষ বা মর্দ হিসেবে বলা হয়েছে। এখানে পুরুষ/মর্দ কিংবা নারী সত্তা আদতে রক্ত মাংসের পুরুষ বা নারী না-ও হতে পারেন। এটা স্বভাবকে নির্দেশ করে। পুরুষকে মহাপুরুষ বলে অনেক সময়। আর দেহটা যেটা দেখে আমরা পুরুষ বা নারী বলি, সেটা হলো ঘোড়া বা বাহন।

কাজেই নারী ঘোড়ায় চড়তে পারে না - কারণ সে আমিত্বকে ত্যাগ করতে পারে না বা ঘোড়াটাকে সত্তা থেকে আলাদা করতে পারে না। মর্দ ঘোড়ায় চড়ে, তারপর আবার হেঁটে যায়।


(ব্যাখ্যাটা আমার বানানো নয় - একজন গুরুর কাছে থেকে শুনে, উপলব্ধি করে লেখা/বলা)

মুখে তুলে খাওয়ানো রীতির সমস্যা

আগের একটি পোস্টে লিখেছিলাম যে, জাপানে সব শিল্পপণ্যতেই একটা অতিরিক্ত যত্বের ছাপ দেখা যায় যেটা উৎকর্ষবাদীতার একটা লক্ষণ। আরো যে জিনিষ দেখা যায়, সেটা হলো যে কোন বর্ণনার ক্ষেত্রে ডিটেইলিঙের পরিমান। সামান্য একটা কথাকেও এরা অত্যন্ত বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করে - যে কোন অনভিজ্ঞ লোকও সেটা সহজেই বুঝতে পারবে।

যেমন, কিছুদিন আগে একটা বুলেট ট্রেন (শিংকানসেন) লাইনচ্যূত হয়েছিল ভয়ঙ্কর এক ভুমিকম্পের সময়ে। সাধারণত ভূমিকম্প এলেই লাইনের ভিত্তি বা খুটিগুলোথেকে ভূ-পৃষ্ঠের অনেক গভীরে প্রবেশ করানো সেন্সর থেকে সেটার খবর পেয়ে যায় একটা যন্ত্র এবং সেই খবর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ লাইনে চলাচলকারী এবং কম্পনের উৎসের কাছাকাছি বুলেট ট্রেনে পৌছিয়ে যায়, ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেনের ব্রেক চালু হয় এবং সেটা থেমে যায়। এই বিশেষ ট্রেনটা লাইচ্যূত হওয়ার কারণ হলো ভূমিকম্পটার উৎসের খুব কাছে হওয়াতে সময় না পাওয়া। যখন ট্রেনে খবর পৌছালো, প্রায় ৩০০-৩৫০ কি.মি./ঘন্টা বেগে চলমান ট্রেন তখন থামা শুরু করেছে। আর সবচেয়ে দ্রুত হারে থামতে হলেও সেই প্রক্রিয়াতে সময় লাগে কিছুক্ষণ। ট্রেনটি যখন লাইনচ্যূত হয় (শুধু লাইন থেকে চাকাগুলো পাশে নেমে গিয়েছিলো) তখন এর গতিবেগ ছিল ১০০ কি.মি./ঘন্টা এর মত। পুরা ব্যাপারটাকে সংবাদে এ্যাত বিস্তারিত দেখানো হল যে আমার মত জাপানী-নাবুঝদেরও বুঝতে তেমন সমস্যা হয়নি। খবর বয়ানের পাশাপাশি এ্যানিমেশনের মাধ্যমে পুরা প্রক্রিয়াটা - ভূমিকম্প থেকে শুরু করে, এর সেন্সর, খবর, ব্রেক, লাইনচ্যূতি - দেখানো হল। সাথে সমস্ত তথ্যও। এর সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ভূমিকম্পের মূল ব্যাপার, এর বিভিন্ন রকম তরঙ্গ ও ওগুলোর গতিবেগ ইত্যাদি বিষয় সহজ ভাষায় এবং চিত্র ও এনিমেশনের সাহায্যে বুঝিয়ে দিল।

আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে, এটি আমার দাদাবাড়ীর। ওখানে সেচকাজের জন্য অনেক দাম দিয়ে জাপানি ইয়ানমার মেশিনযুক্ত পাম্প কেনা হয়েছিলো। একই সময়ে চীনের ডংফেং মেশিনের দামের চেয়ে এটা ৩ গুন বেশি দামী। কিন্তু চাচার কাছে শুনলাম যে এই ইয়ানমার মেশিন চলছে এখনও, যেখানে ডংফেং কিনেছিলো যারা তাদের পাল্টাতে হয়েছে কয়েকবার। কারণ, ইয়ানমারে একটা কিছু সমস্যা দিলে এটার বিকল্প আরেকটা ব্যবস্থা মেশিনের মধ্যেই করা আছে ইত্যাদি।

শেষ যে ঘটনাটা বয়ান করছি সেটা আমাদের বাসার। বাসায় গ্রামের একটা ছেলে থাকতো। কাজ করতো। ও একটু বড় হওয়ার পর ওকে এস.ও.এস. স্কুলে ট্রেড কোর্সে ভর্তি করা হল। সফলভাবে ওটা সম্পন্ন করার পর ৬ মাস এটলাস বাংলাদেশে (হোন্ডার ডীলার) শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করল। তারপর, চাকরী পেল মেনোকা মটরস-এ। এই কম্পানী ভারতের বিভিন্ন মটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ এনে দেশে সংযোজন করে। ওর প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা হলো, প্যাঁচ কাটা। ও হোন্ডার আন্দাজে ক্রু টাইট দিতে গিয়ে প্যাঁচ কেটে ঢুকে গেল - খালি হাতেই ক্রু-ডাইভার চালিয়েছিল। ধাতুর মানে এতটাই পার্থক্য।

জাপানের মাঙ্গা খুব বিখ্যাত। এগুলো কার্টুনের বই। যে কোন কাহিনীই এখানে ছবিময়। ফলে ব্যাপারটা ভিজুয়ালাইজ করা যায় সহজে।

শিরোনামে সমস্যা বলেছিলাম। কেন সেটা বলি -

সবকিছু এ্যাত সহজে পাওয়া অভ্যাসে পরিনত হওয়াতে এদের জটিল জিনিষ বোঝার ক্ষমতা মারাত্নকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ডিটেইলিং ছাড়া নিজ বুদ্ধি খরচ করে কোন জিনিষ এরা বুঝতেই চায়না। বাঙালীকে যেমন ক বললেই কলিকাতা বা কলা বা কমলা -- ঠিকভাবেই বুঝে নেয়। ওদের ক্ষেত্রে ক বললে তো হবেই না, কলা বললেও হবে না, কলার ছবি এঁকে পাশে লিখে তারপর মুখে বলে দিতে হবে। চাই কি, ছবিতে একটু কলার ফ্লেভার/গন্ধও যোগ করে দিতে হতে পারে!

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ২য় কিংবা ৩য় বর্ষে এসে শিখলাম বিব-কক। এটা হলো পানির কলের ইঞ্জিনিয়ারিং নাম। যে কোন বইয়েই বিব-কক (bib-cock) লেখা থাকে। ট্যাপ লিখলে স্যারগণ মাইন্ড করে। অবশ্য এতে আমেরিকা ব্রিটেনের ইংলিশ গ্যাঞ্জাম থাকতে পারে (পীচ আর অ্যাসফল্ট আদতে একই জিনিষঃ পার্থক্য হলো পীচ ব্রিটিশ টার্ম আর অ্যাসফল্ট আমেরিকান টার্ম)। আমার কথা বিশ্বাস না হইলে গুগলে bibcock লেখে একটু ইমেজ সার্চ দিয়েন (সেফ সার্চ)। এই আনকমন টার্মটা সাধারণ মানুষ না জানলেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের সকল ছাত্র এবং পেশাজীবি জানেন বলেই আমার ধারণা ছিল। Guess what? আমার থিসিসের পরীক্ষক (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের জাপানি প্রফেসর) ওটা জানেন না! :O :S =(( :-? X(

স্মৃতি মনে করে মেজাজ খারাপ করার আগেই লেখা বন্ধ করলাম।


(একই সাথে সচলায়তনে প্রকাশিত)

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০০৭

উৎকর্ষবাদীতা - যেভাবে দেখি

উৎকর্ষবাদীতা/পারফেকশনিজম হলো কোন একটা কাজ করার সময় ওটাকে বার বার নিখুত করার চেষ্টা এবং মনমত সুন্দর হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটার উন্নয়নে কোন বিরতি না দেয়ার একটা দারুন বৈশিষ্ট - যা কিছু মানুষের স্বভাবে থাকে। ব্যাপারটাকে খুতখুতে স্বভাবও বলা যেতে পারে। খুতখুতে স্বভাবটা আমি নিজেও পরিমিত পরিমানের বেশি পছন্দ করি না। বিশেষতঃ কিছু মানুষের এই ব্যাপারটা যখন মানসিক বিকারের পর্যায়ে চলে যায় - তখন তো নয়ই। যেমন ধরুন, কারো কারো পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বড়ই খুতখুতে স্বভাব। অসুখ বলি তখনই যখন এজন্য তিনি দিনে ৭বার গোছল করবেন, আয়নার সামনে কয়েকঘন্টা ব্যয় করবেন। কোন কোন ব্যক্তি আছেন, মাছ যতই ধোয়া হউক না কেন তাঁদের মন ভরে না - মনে হয় ময়লা তো রয়েই গেছে।

জাপানে এসে আর এদের সাথে কাজ করে বুঝলাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা পারফেকশনিস্ট বা উৎকর্ষবাদী মনোভাবের। ধরুন মেকানিকাল ল্যাবরেটরিতে কোন ছাত্র একটা যন্ত্রাংশ বানাবে, সে সেটা নির্দিষ্ট আকার দেয়ার জন্য ঘষার যন্ত্র দিয়ে ঘষতেই থাকবে ঘষতেই থাকবে -- যতক্ষণ না মনমতো হচ্ছে। সময়ের কোন ব্যাপার নাই, সন্ধা ৬টায় ল্যাব বন্ধ হয়, কিন্তু ঐ ব্যাটা দেখা যাবে রাত ১০টা পর্যন্ত ঘষতেছে। যে কোন ল্যাবে, একটা প্রেজেন্টেশন বানাবে, সেটা নিয়ে কি যে আদিখ্যেতা -- অক্ষরের রঙের ব্যাপারে, আকারের ব্যাপারে, ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন রং ইত্যাদি। দেশে কাজ করতে গিয়েছি ইউনিভার্সিটি থেকে, সাথে জাপানি প্রফেসর, আরও কয়েকজন ছাত্র। একটা ম্যাটেরিয়াল ময়লা, ব্যাস ... সবাই মিলে বসে গেলাম সবগুলো হাতে ঘষে ঘষে ধোয়ার কাজে - ১ ইঞ্চি আকারে ছোট ছোট করে কাটা ০.৫ ইঞ্চি ব্যাসের প্লাস্টিক পাইপের এক বস্তা টুকরা, ধরুন, একবস্তা ছোট ইটের খোয়ার মত পরিমান -- সবগুলো ধুলাম সবাই মিলে, প্রফেসরও বাদ নাই।

প্রথম প্রথম এসব আদিখ্যেতা মনে হলেও এখন বুঝি, জাপানের উন্নতির মূলকারণগুলোর একটি হয়ত এই উৎকর্ষবাদী মনোভাব। এরা নিজেরা কম্পিউটার বা গাড়ীর আবিষ্কর্তা না; আমেরিকা বা অন্য কোন দেশ থেকে এনেছে টেকনোলজি ---- তারপর সেই অক্লান্ত ঘষাঘষি। জাপানের প্রতিটি শিল্পপন্যের মধ্যেই এই অতিরিক্ত যত্নের ছাপটা চোখে পড়ার মত। যেমন এর ভেতরের কলকব্জা তেমনি এর বাইরের ফিনিশিং। ফলাফল ব্যবসা সফল। এ প্রসঙ্গে ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপরে নির্মিত বিভিন্ন সিনেমায় দেখা জার্মানদের কথা মনে পড়ে। ওদের প্রতিটি গাড়ী, অস্ত্রের অতিরিক্ত যত্ন নেয়া হত - তাই সবকিছুই চলতো দারুন।

এখানে একজন উড়িষ্যার বাঙালি দাদাবাবু থাকতেন, পশ্চিমবঙ্গে চাকরি, লেখাপড়ার সুবাদে বাংলা দারুন বলতেন। বলতেন এই এটিচ্যুডের পার্থক্যটা বড়ই চোখে পড়ার মত দেশে আর জাপানে। ওখানে কেনা সবচেয়ে দারুন মটরসাইকেল হিরো হোন্ডা কিনে দুদিন পরে আর ঠিকমত স্টার্ট নেয় না। সার্ভিস সেন্টারে বলে - আরে দাদা ওটা ব্যাপার না, কয়েকদিন বেশি করে কিক দিন, ঠিক হয়ে যাবে; অথচ ঐ একই ঘটনা এখানে ঘটলে কী হতো, সার্ভিস সেন্টারের প্রধান দৌড়ে আসতেন, মাথা ঝুকিয়ে গলায় কাতরতা ঢেলে দিয়ে সুমিমাসেন সুমিমাসেন (দূঃখিত অর্থে) বলে একাকার করতেন। তারপর, ওটার বদলে আরেকটা ভালো দেয়ার চেষ্টা করতেন। সার্ভিস চার্জ নিতেন না, কারণ এটা তাঁদের ত্রুটি। --- দাদাবাবু ঠিকই বলেছিলেন মনে হয়।

আমি নিজেও একটু খুতখুতে স্বভাবের মনে হয়। বিশেষত টাইপ করার সময়ে বানানের প্রতি অতিযত্ন নেবার প্রবণতাটাকে ঐ স্বভাবেরই এক রূপে বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে। যখনই টাইপ করি, কোন বানানের ব্যাপারে মনে একটু সন্দেহের উদ্রেক হলেই অভিধান ঘাটার চেষ্টা করি। অবশ্য কখনো কখনো খুব ক্লান্ত থাকলে অবশ্য ... ভুল হচ্ছে, এই ধরণের কোন অনুভুতি/সন্দেহই মনে কাজ করে না - ফলে লেখাটা হয়ে যায় দায়সারা গোছের।

অবশ্য শুরু থেকে এমন উৎকর্ষবাদী ছিলাম না। স্কুলে খাতায় এমনভাবে লেখতাম, যে হাতের লেখা দেখে বাবা বলত, যে তুই তো স্যারকে বাসায় টেনে আনবি, কিংবা, তোর হাতের লেখা পড়ার জন্য স্যার তোকে ডেকে নিয়ে যাবে। নিজের হাতের লেখা সম্পর্কে আমার নিজের ধারণাও ওরকমই ছিল। তবে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করতাম, স্যার ঠিকই পড়ে নম্বর দিত -- স্যারদের যোগ্যতা দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে যেত :D । পরবর্তীতে কোন এক সুন্দর দিনে ঠিক করলাম --- নাহ্ এভাবে অন্যদের কষ্ট দেয়া আর নয়। সুন্দর না হোক, অন্তত বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারে এমন পাঠযোগ্য করে লিখতে হবে। হ্যাঁ - ঠিকই ধরেছেন --- উৎকর্ষবাদীতা আমাকে দখল করলো বোধহয়।

ধুর ...... ...... ব্যাপার ঠিক তা না; একটু খুলে বলিঃ মূল উৎসাহ (!?) বা আগ্রহটা পেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়; বন্ধু সৌরভ (বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক), কিংবা পান্থ (ওকলাহোমাতে আছে) বা আবীর (সাউথ ডাকোটাতে আছে) সকলের হাতের লেখার পাশে আমারটা খুলতে ইচ্ছা করতো না। কিন্তু আমার ক্লাসনোট নেয়া ছিল খুব ভাল। কোচিং করার সময়েই পান্থর সাথে পরিচয় - ও ব্যাটা চার রঙের কালিতে নোট নিত। কোন লাইন কালো কালি, কোনটা নীল আবার কোনটা লাল বা সবুজ। দেখাদেখি আমিও শুরু করেছিলাম। যা হোক, ক্লাসনোট নেয়ার সময় কালির ব্যবহার আর বিস্তারিত টুকে রাখার জন্য (স্যার এই সময়ে একটু খুক খুক করে কাশলো ... এই টাইপের ডিটেইলিং ;) ) পরীক্ষার আগে কিছু ক্লাসনোট উদাসীন বন্ধু এসে আমার খাতা ফটোকপি করতো পড়ার সুবিধার জন্য। ওদের বরংবার এসে আমাকে ঘুম থেকে তোলা থেকে বাঁচার জন্যই হাতের লেখাটা একটু উন্নয়ন করতে বাধ্য হলাম শেষে (হল/ছাত্রাবাসে থাকতাম)।

সেই সুন্দর করার ইচ্ছাটা মনে প্রভাব ফেলেছিল নিঃসন্দেহে। কারণ নিজের পাঠযোগ্য লেখায় খাতার ফটোকপি দেখে নিজেই মুগ্ধ হতাম - প্রেরণা পেতাম :D ।

থিসিস করার সময় পার্টনার ছিল পান্থ। ব্যাটাও ওরকম। আমি যখন ছেড়ে দিতাম ও তখন দ্বিগুণ উৎসাহে সৌন্দর্য বর্ধনে বসতো। কাজ ছিল সফটওয়্যার বানানো, যেটা যে কোন কাঠামোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হিসাব করে দিতে পারবে। কোডিং করার পর ঐ ব্যাটা আবার বসতো সৌন্দর্য বর্ধনে .... ইনপুট, আউটপুট আর গ্রাফিকাল ফিল্ডের রূপচর্চা। থিসিস লেখার সময়ে, ও ব্যাটার জ্বালায় বিরক্ত হয়ে যেতাম .... কিন্তু দেখা যেতো, ও ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলে আমি আবার একই ভূমিকা নিতাম। সমমনা না হলে আর বন্ধুত্ব কেন ... ...

নিজের অনেক গুণগান করলাম :D । তবে, এখন আর ১০০% শুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করি না আমি। সবসময়ই চেস্টা করি মোটামুটি ৯৫% বা এর বেশি শুদ্ধ করতে। কারণ ৫০-৭০% উৎকর্ষ বা শুদ্ধভাবে লেখার জন্য এ্যাতদিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা অর্জিত দক্ষতাই যথেষ্ট। কিন্তু সেই ৭০ থেকে আগে বাড়ার জন্য জ্যামিতিক হারে চেষ্টা/যত্নের পরিমানটা বাড়াতে হয়। এসকল ক্ষেত্রে ১০০% সবসময়ই একটি কাল্পনিক ব্যাপার মনে হয়। তাই থামতে জানতে হবে। জানতে হবে কখন ও কোথায় থামতে হবে .... ...তা না হলে ঘষতে ঘষতেই জীবন পার হয়ে যাবে, অন্য কিছুই আর করা হয়ে উঠবে না।


৭-জুলাই-২০০৭
(লেখাটি সচলায়তন এবং খিচুড়ী ব্লগে প্রকাশিত হল)

বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০০৭

প্রজন্ম ফোরামের বিজ্ঞাপন

প্রজন্ম ফোরাম
করি বাংলায় চিৎকার

অনলাইনে আড্ডা ও আলোচনার জন্য সম্পূর্ণ বাংলা ফোরাম
http://forum.projanmo.com


বৈশিষ্টসমূহঃ
  • ইন্টারফেস বাংলায়: নির্দেশাবলী, মেনু, মেসেজ সবকিছুই বাংলায়।
  • বিল্টইন বাংলা স্ক্রীপ্ট: বাংলায় লেখার জন্য দরকার নেই আলাদা কোন সফটওয়্যার।
  • ইউনিজয় এবং ফোনেটিক লে-আউট সাপোর্ট (বিল্ট-ইন)
    • ইউনিজয় প্রায় বিজয়ের মতই একটি ওপেনসোর্স লেআউট।
    • ফোনেটিক হল ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার লেআউট। ইংরেজি অক্ষরে বাংলা উচ্চারণ যেভাবে চ্যাট করার সময় লেখা হয়, এতেও প্রায় ওরকম করে লিখলেই ওটা বাংলায় চলে আসে। বাংলা টাইপিং-এ সম্পুর্ন অনভিজ্ঞ হলেও এটাতে অভ্যস্থ হতে আধা ঘন্টার বেশি লাগবে না কোনক্রমেই। (Ami = আমি; blo = বলো)
    • টাইপিং-এর চমৎকার টিউটোরিয়াল আছে।
  • বাংলা টাইপিং জানেন না? নো চিন্তা ডু ফুর্তি ... আপাতত ইংরেজিতেই লিখুন। দু-একদিনের মধ্যেই ফোরামের অভিজ্ঞ সদস্যবৃন্দ নতুনদের বাংলা টাইপিং শিখিয়ে দেবে খুশি মনেই। (আড্ডা মারার সঙ্গী বাড়লে কে না খুশি হয়!)
  • ইতিমধ্যে পাঁচ-শতাধিক সদস্য, ১৫০০ এর বেশি টপিকে ১৫০০০ এর বেশি পোস্ট করেছেন।
  • বৈচিত্রময় বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন সাব-ফোরাম। অর্থনীতি, রাজনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, ট্রাবলশুটিং, সাহিত্য-সংস্কৃতি, পড়াশোনা, বিনোদন, চায়ের কাপে ঝড়, হাসির বাক্স সহ ২০টির অধিক বিভাগ রয়েছে।
  • সাধারণ আড্ডা থেকে সিরিয়াস আলোচনা সবই আছে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে।

সদস্য হোন, আড্ডা দিন বাংলায় ... সবই সম্পূর্ণ ফ্রী। লগ ইন করুন
http://forum.projanmo.com

প্রজন্ম ফোরাম
করি বাংলায় চিৎকার

বুধবার, ৪ জুলাই, ২০০৭

নামে কী বা এসে যায় !

(পোস্টটি গতকাল সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিলো)

নিজের নাম নিয়েই একটা ছোট অনুভুতি লেখব বলে মনস্থির করলাম। যদিও এ ধরণের তুচ্ছ ব্যাপারে লেখা আদৌ উচিৎ হচ্ছে কি না সেটার ব্যাপারে মনে একটু সন্দেহ রয়েই গেল।

জগৎ-সংসারে এ্যাত বিষয় থাকতে নিজের নাম নিয়ে কেন পড়লাম? সেটা হয়ত আমিত্বকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তবে লেখার মশলা মনে জমা হয়ে ছিল অনেক দিন আগে থেকেই, আগের লেখায় হাসান মোরশেদ ভাইয়ের একটা মন্তব্য দেখে ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।

যা হোক, আমার নামটা বেশ ... মানে বেশ ভালই লম্বা। দৈর্ঘ্যের কারণেই নামে কিছু ব্যাপার এসে যায় আমার নিত্যজীবনে।

ছোট বেলা থেকেই বিড়ম্বনার শুরু। সবার খাতার নাম লেখার জায়গায় সুন্দর নাম এটে যায়... আমারটা হয় না। তারপর, পরীক্ষার ফর্ম পূরণ, বেতন বই, ব্যাংকের জমা বই সমস্ত জায়গাতেই নিজের নামের স্থান সংকুলান করতে ন্যারো ফন্টে হাতের লেখা শিখতে হয়েছে। টোফেল পরীক্ষা দেয়ার সময় তো কানের পাশ দিয়ে গুলি গেল, আর একটা অক্ষর বেশী হলেই ফর্মে নাম আটতো না। পাসপোর্টের নামের ঘরেও বেচারা অফিসার এক লাইনে নাম লিখতে পারে নাই। আর স্কুলের ক্লাসের স্যাররা আমাকে নাম ধরে ডাকতে গেলেই কেমন জানি ঘুম ঘুম হয়ে যেত তাঁদের কন্ঠস্বর।

আমার গবেষণার কাজে, প্রফেসরের পয়সায় প্রায়ই দেশে পাঠায়, নমুনা সংগ্রহ করতে হয় -- বিমানে চড়া/নামা আর ইমিগ্রেশনের ফর্ম পূরণ করতে আমার সবসময়ই সহযাত্রীদের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

যা হোক সবচেয়ে বড় ফাপরে পড়েছিলাম জাপানে এসে। এখানে স্বাক্ষর করার তেমন চল নেই। সকলেই তার বদলে ছোট্ট সীল ব্যবহার করে। সীলগুলো গোলাকার বা চারকোনা। গোলাকার সীলগুলো মোটাসোটা একটা কলমের মত ৩ /৪ সে.মি. লম্বা এক টুকরা কাঠ। তাঁর নিচের মাথায় নামের কাঞ্জি বা জাপানী আকিবুকিমার্কা অক্ষরে নাম লেখা থাকে।

কাহিনী হলো, আমাকে দেশ থেকেই পরিচিতিমূলক সমস্ত মেইলে আমার দেশের প্রফেসর শামীম নামেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমার নতুন জাপানী প্রফেসর আমার লম্বা নাম জানলেও সবসময় সুবিধাজনক ছোট শামীম নামে ডাকতেন। জাপানে আসার পরপরই ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সেই সীল (হাংকো/ইনকান বলে) লাগবে। প্রফেসর আমাকে সহ গিয়ে অর্ডার দিলেন ... জাপানী অক্ষরে শামীম। ওটা দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুললাম। এরপর গাড়ী কেনার সময়ে জানা গেল এ জন্য সীলটাকে সিটি অফিসে নিবন্ধিত করতে হবে। কিন্তু ওখানে বলে এটা তো তোমার পাসপোর্টের নামের অংশ না এটা করা যাবে না। তখন ওখানকার অফিসার ফোনে আমার প্রফেসরকে না পেয়ে একটা চিঠি লিখে দিলেন।

চিঠি পড়ে প্রফেসর বললেন তোমার মূল নাম এ্যাত বড় যে এটা দিয়ে সাইজমত সীল বানানো অসম্ভব, তাই শেষাংশ জামান দিয়ে সীল বানাও। ওটার অর্ডার দিলাম -- কয়দিন পরে ওটা নিয়ে গেলাম সিটি অফিসে .... আবার বলে হবে না। তোমার নাম ভেঙ্গে কোন অংশ দিয়ে হবে না। তাই শেষ পর্যন্ত সীল হল ছোটখাটো মিয়া।

ওহহো.. আমার নামটাই তো দেয়া হল না: মিয়া মোহাম্মদ হুসাইনুজ্জামান (Miah Mohammad Hussainuzzaman)।

যশোরের প্রজেক্ট অফিসে আমাকে বলে মিয়াজাকির মিয়া ভাই।

তাই বলি, নামে এসে যায়। আমার পরবর্তী বংশধরদেরকে এ ধরনের ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ঠিক করেছি খুব ছোটখাট নাম রাখবো ওদের।

এ্য্যতক্ষণ শুধু অসুবিধাই বললাম। বড্ড একপেশে হয়ে গেল ব্যাপারটা। তাই বড় নামের একটা সুবিধার কথা বলে শেষ করি: এ্যাত বড় নাম সাধারণত হয় না জন্য একনামে চেনা যায়। আমার নামের মূল অংশ দিয়ে কোন ইমেইল বা অন্যকিছু রেজি: /নিবন্ধন করতে গেলে কখনই অসুবিধা হয় না। আর, কখনো যদি এই নাম দিয়ে গুগল করেন, নিশ্চিতভাবেই আমাকে খুঁজে দেবে।

রবিবার, ২৪ জুন, ২০০৭

কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব - ইতিহাস

(ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে অনুবাদ করলাম)

ইতিহাস:

বিরাটাকার পরিব্যাপ্তিতে ছাপাখানার প্রসার হওয়ার আগে পর্যন্ত মেধাস্বত্ব উদ্ভাবিত হয়নি। আঠারো শতকের শুরুর দিকে ছাপাখানাগুলোর একচেটিয়া আচরণের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে ব্রিটেনে এরকম একটা আইনের ধারণা জন্ম নেয়। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় চার্লস বইগুলির অনৈতিক অনুলিপি তৈরীর ব্যাপারটা সম্পর্কে সচেতন হয়ে, রাজকীয় বিশেষাধিকার প্রয়োগ করে লাইসেন্স বিধিমালা ১৬২২ জারি করেন; এর ফলে লাইসেন্স প্রাপ্ত/অনুমোদিত বইগুলির একটি নিবন্ধন তালিকা প্রতিষ্ঠা হয়, এবং এটার একটা অনুলিপি সমস্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হয়, এবং প্রয়োজন অনুসারে সুপ্রতিষ্ঠিত সমস্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অনুমোদন দেয়া চালানো হয়। 'দা স্টাচু অব অ্যান' ছিল মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত প্রথম কাজ, এবং এটা এর লেখককে নির্দিষ্ট সময়ের মেধাস্বত্ব প্রদান করেছিল, এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ের পরে মেধাস্বত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল। মেধাস্বত্ব/কপিরাইট বই এবং মানচিত্র প্রকাশের এবং অনুলিপি নিয়ন্ত্রণের একটি আইনগত বিষয় থেকে বেড়ে একটি প্রায় সকল আধুনিক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাববিস্তারকারী বিষয় হয়েছে, যার আওতাভুক্ত হয়েছে শব্দ রেকর্ডিং, ফিল্ম/চলচ্চিত্র, ছবি (ফটোগ্রাফ), সফটওয়্যার এবং স্থাপত্যের কাজ।


দি বার্ন কনভেনশন
১৮৮৬ সালের বার্ন কনভেনশন প্রথমে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মেধাস্বত্বের স্বীকৃতি দেয়। এই বার্ন কনভেনশন অনুসারে, মৌলিক কাজের মেধাস্বত্ব অর্জন করতে বা ঘোষণা করতে হবে না, কারণ সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সৃষ্টির সাথে কার্যকর হয়: বার্ন কনভেনশন গ্রহণকারী রাষ্ট্রের একজন লেখককে মেধাস্বত্বের জন্য কোন আবেদন বা নিবন্ধন করার প্রয়োজন হবে না। যখনই কাজটা সম্পন্ন হবে, অর্থাৎ লিখিত কিংবা কোন মাধ্যমে রেকর্ড করা হবে, এর স্রষ্টা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেই কাজ এবং সেখান হতে উৎপন্ন অন্যান্য কাজের সমস্ত মেধাস্বত্বের অধিকারী হবেন, যদি না সেই স্রষ্টা সুনির্দ্দিষ্ট ভাবে সেটার স্বত্ব ত্যাগ করার ঘোষণা করেন কিংবা মেধাস্বত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। বিদেশী লেখকের মেধাস্বত্বের অধিকারও বার্ন কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ স্বদেশী লেখকদের মতই সমভাবে নিশ্চিত করে।
যুক্তরাজ্য ১৮৮৭ সালে বার্ন কনভেনশনে স্বাক্ষর করে কিন্তু কপিরাইট ডিজাইন এন্ড প্যাটেন্ট বিধিমালা ১৯৮৮ অনুমোদিত হওয়ার আগের ১০০ বছর এটার বিরাট অংশের প্রয়োগ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৯ সালের আগ পর্যন্ত বার্ন কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।
বার্ন কনভেনশনের বিধিমালা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার TRIP চুক্তিতে একত্রীভূত করা হয়েছে, এবং এভাবে বার্ন কনভেনশন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।



বিস্তারিত বার্ন কনভেনশন পাবেন এখানে

শনিবার, ২৩ জুন, ২০০৭

কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব কী?

(ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে অনুবাদ করলাম)

মেধাস্বত্ব কোন একটি বিশেষ ধারণার প্রকাশ বা তথ্য ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কিছু অধিকারের সমষ্টি বা সেট। সবচেয়ে সাধারণ ভাবে, শাব্দিক অর্থে এটা কোন মৌলিক সৃষ্টির 'অনুলিপি তৈরীর অধিকার' বুঝায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অধিকারগুলো সীমিত সময়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কপিরাইটের চিহ্ন হল ©, এবং কিছু কিছু স্থানে বা আইনের এখতিয়ারে এটার বিকল্প হিসেবে (c) বা (C) লেখা হয়।

সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পের বিভিন্ন প্রকার কাজের একটা বিরাট পরিব্যাপ্তিতে মেধাস্বত্ব থাকতে পারে বা হওয়া সম্ভব। কবিতা, থিসিস, নাটক এবং অন্যান্য সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, কোরিওগ্রাফির কাজ (নাচ, ব্যালে ইত্যাদি), মিউজিকাল কম্পোজিশন, অডিও রেকর্ডিং, চিত্র বা পেইন্টিংস, আঁকা বা ড্রইং, স্কাল্পচার বা মূর্তি/প্রতিকৃতি বানানোর শিল্প, ফটোগ্রাফ, সফটওয়্যার, রেডিও ও টেলিভিশনের সরাসরি ও অন্যান্য সম্প্রচার, এবং কিছু কিছু এখতিয়ারে শিল্প-নকশা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) এর অন্তর্গত।

নকশা বা শিল্প-নকশাগুলোর (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) জন্য কোন কোন এখতিয়ারে আলাদা বা যুগপৎ/অধিক্রমণকারী (ওভারল্যাপিং) আইন থাকতে পারে। মেধাস্বত্ব আইন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (ইন্টেলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি) সংক্রান্ত একটি ব্যাপ্ত বিষয়ের অধীনে অনেকগুলি আইনের একটি।

মেধাস্বত্ব আইন শুধুমাত্র ঠিক কী উপায়ে বা কী রূপে ধারণাসমূহ (আইডিয়া) অথবা তথ্য পরিবেশিত হবে সেটা বিবেচনা করে। এটা মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের মূল ধারণা, মূলনীতি (কনসেপ্ট), সত্য (ফ্যাক্ট), ধরণ (স্টাইল) অথবা পদ্ধতিটিকে আওতাভুক্ত করে না বা করার চেষ্টা করে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিকিমাউস কার্টুন বিষয়ে যে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা আছে, এটা অননুমদিত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই কার্টুন বিতরনের অধিকার রহিত করে এবং অননুমদিত কেহ ডিজনীর সৃষ্ট মানুষসদৃশ মিকিমাউসের মত একই রকম কোন ছবির অনুলিপি বা নকল করতে পারবে না; কিন্তু এই আইন সাধারণভাবে মানুষের মত দেখতে অন্য কোন ইঁদুর আঁকতে বা সৃষ্টি করতে বাধা দেয় না - যতক্ষণ সেগুলো ডিজনীর মূল নকশা থেকে যথেষ্ট অন্যরকম থাকে এবং ওটার (মিকিমাউসের) নকল বা অনুলিপির মত না হয়। কিছু কিছু এখতিয়ারে, মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের বিদ্রুপাত্মক বা ব্যাখ্যামূলক কাজ প্রকাশেরও উপায় থাকে। ট্রেডমার্ক এবং প্যাটেন্ট-এর মত অন্যান্য আইনের ধারা পুনঃপ্রকাশ বা পুনঃউৎপাদন কিংবা ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যেটা মেধাস্বত্ব আইন করে না ।

মেধাস্বত্ব আইনগুলোকে কোন কোন দেশে বার্ন কনভেশনের মত আন্তর্জাতিক সমঝোতার মাধ্যমে স্বীকৃত ও প্রমিতকরণ করা হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলিতে এটা প্রয়োজন হয়।

মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০০৭

কম্পিউটারে ব্যবহৃত রঙের কথা

(ইতিপূর্বে প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত হয়েছিলো)

ভুমিকা


কম্পিউটারে স্ক্রীনের রংগুলো আসলে তিনটা মৌলিক রঙ মিশিয়ে তৈরী হয়।
লাল
সবুজ
নীল
এই তিনটি রঙকে বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে যে কোন রঙ তৈরী করা যায়।
যেমন:
নীল+সবুজ =
নীলাভ-সবুজ
হালকা লাল+হালকা সবুজ+হালকা নীল = ধুসর
লাল+নীল+সবুজ = সাদা(সাদা)

যে কেহই তাঁর ইচ্ছামত রঙ দিতে পারেন। এজন্য রংটাকে লেখা হয় ৬ অংকের একটা সংখ্যা দিয়ে এভাবে, সাদা = #ffffff ; কালো = #000000 - এবং সংখ্যাটার আগে একটা # চিহ্ন দিতে হয়।

যেমন, উপরের লেখায়
নীলাভ-সবুজ লেখায় রঙ দিতে আমি কোড ব্যবহার করেছি color:#00ffff

লাল-সবুজ-নীল সংকেত:

সঠিকভাবে এই ব্যাপারটা বুঝার জন্য যেটা জানা দরকার সেটা হল RGB রঙের কোড। RGB হলো Red Green Blue এর সংক্ষিপ্ত রূপ। রঙের কোডের ৬টি অংকের প্রথম দুটি অংক দিয়ে লাল বা Red, মাঝের দুটি দিয়ে সবুজ বা Green, এবং শেষ দুটি অংক/অক্ষর দিয়ে নীল বা Blue রং কি পরিমান মিশাতে হবে তা বলে দেয়া হয়।

যে কোন রঙের পরিমান দিতে ০ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত মোট ২৫৬টি মাত্রা দেয়া যেতে পারে । উপরের ধুসর বর্ণের লেখায় আমি লাল=সবুজ=নীল=১১৯ ব্যবহার করেছি। কোডটা ছিল color:#777777 । নীলাভ সবুজ লেখায় ব্যবহার করেছি, লাল = ০, সবুজ = ২৫৫, নীল = ২৫৫। এর কোডটা ছিল, color:#00ffff। সাদার জন্য লাল = সবুজ = নীল = ২৫৫; আর কোড হল, color:#ffffff।

এখানে আপনারা হয়ত লক্ষ্য করবেন, মাত্রা = ১১৯ দেয়ার জন্য কোডে লেখা হয়েছে 77, আবার মাত্রা = ২৫৫ এর জন্য কোড = ff। এই মাত্রা থেকে কোডের ব্যাপারটা খুবই সোজা, যেটা আমি পরবর্তী অংশে বলছি। মজার ব্যাপার হলো, এভাবে লাল, সবুজ এবং নীলের মিশ্রন মোট ২৫৬x২৫৬x২৫৬ ভাবে হতে পারে!!!


মাত্রা থেকে কোড নির্ণয় : ডেসিমেল টু হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা


যারা হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা জানেন তাদের আর পড়ার দরকার নেই ... শুধু জেনে রাখুন মাত্রাটাকে ডেসিমেল সংখ্যা থেকে হেক্সাডেসিমেলে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়।

যারা জানেন না, তাদের জন্য প্রথমে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা কি - এখান থেকে শুরু করি।

ধরুন আপনার কাছে দেখতে একই রকম অনেকগুলো বাক্স আছে। যারা রান্না করেন, তাদের কাছে বিভিন্ন মশলা রাখার জন্য একই রকম অনেক কৌটা থাকতে পারে। চেনার সুবিধার্থে এগুলোকে চিহ্নিত করা দরকার। আপনার কাছে চিহ্ন দেয়ার জন্য কোন কলম নাই যে, নাম লিখে রাখবেন।


আমাদের পরিচিত ডেসিমেল/দশ-ভিত্তিক সংখ্যা:


আপনার কাছে দেয়া হল দশটি প‌্যাকেট, প্রতিটিতে একই রকমের অনেকগুলো স্টীকার আছে। বুঝার সুবিধার জন্য ধরি স্টীকারগুলো ০, ১, ২,..... ৯ লেখা। তাহলে তো কথাই নাই। প্রতিটা কৌটা/বাক্সের গায়ে, ০, ১, ২, ৩, ৪,..... ৯ লাগিয়ে দেবেন। তারপরের গুলোতে ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, .... ১৯; তারপরের গুলোতে ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ....২৯ .... এভাবে চলতে থাকবে -- বুঝতে কোন অসুবিধা নাই!! কারণ আমরা এই সংখ্যাগুলো ব্যবহার করে অভ্যস্থ।

বাইনারী/ দুই-ভিত্তিক সংখ্যা


কিন্তু যদি এমন হয় আপনার কাছে শুধু দুই রকম স্টীকার আছে - ০, ১ তাহলে কেমন হবে কৌটার নামগুলো? ০, ১; তারপর ১০, ১১, তারপর, ১০০, ১০১; তারপর ১১০, ১১১ ......... এভাবে। এটাই হল বাইনারী সংখ্যা। যদি স্টীকারগুলো ক, খ হয় তাহলে নামগুলো হবে, ক, খ; তারপর কক, কখ; তারপর, খক, খখ; তারপর ককক, ককখ, কখক, কখখ, খকক, খকখ, খখক, খখখ ... এভাবে। অর্থাং মাত্র দুটি ভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করে আমরা সবগুলো কৌটাকে ভিন্ন নাম দিতে পারব।

হেক্সাডেসিমেল/ ষোল-ভিত্তিক সংখ্যা


এখানে স্টীকার হলো ১৬ রকম। সরাসরি বুঝার সুবিধার্থে ইংরেজী কোডের মত করে দিচ্ছি ... ১৬ টি চিহ্ন হল: 0, 1, 2, ......8, 9, a, b, c, d, e, f। তাহলে আলাদা আলাদা চিহ্নগুলো হবে এরকম:
প্রথম ১৬টি: 0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 a b c d e f
পরের ১৬টি: 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 1a 1b 1c 1d 1e 1f
এর পরের ১৬টি: 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 2a 2b 2c 2d 2e 2f

অনেক বেসিক জ্ঞান বিতরণ করলাম। ইতিমধ্যে অধিকাংশ পাঠক বিরক্ত হয়ে গেছেন নিশ্চয়ই। এবার আসি কিভাবে এক পদ্ধতির সংখ্যা থেকে অপর পদ্ধতিতে যাব -- যেহেতু আমরা দশভিত্তিক সংখ্যায় অভ্যস্থ তাই এটাকে কেন্দ্র করেই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে।


ডেসিমেল - হেক্সাডেসিমেল


আমাদের পছন্দমত রং মেশাতে চাইলে ০ - ২৫৫ যে কোন মাত্রাকে আমরা কোডে পরিবর্তন করব এভাবে ...

দুটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করছি:
মাত্রা দিতে চাই ১০০: এজন্য ১০০কে ১৬ দিয়ে ভাগ করতে হবে... আর প্রতিবারের ভাগফলগুলোকে আর ভাগশেষ গুলোকে পাশা পাশি লিখতে হবে। তারপরে আবার আগের ভাগফলকে ভাগ করতে হবে ১৬ দিয়ে .... যতক্ষণ না ভাগফল ০ হয়। শেষে সবগুলো ভাগশেষকে উল্টা সিরিয়ালে একত্রে লিখে কালার কোড বানাতে হবে ...

প্রথমে, ১০০/১৬ = ভাগফল ৬, ভাগশেষ ৪
তারপরে, ৬/১৬ = ভাগফল ০, ভাগশেষ ৬

--> এটাকে এভাবে লিখি:
16।100
__________এখানে ১০০ কে ১৬ দিয়ে ভাগ দিলাম
16।6 - 4
__________ভাগফল ৬ - অবশিষ্ট ৪; আবার ১৬ দিয়ে ৬ কে ভাগ দিলাম
___0 - 6__________ভাগফল ০, অবশিষ্ট ৬

রঙের কোড হল 64 নিচ থেকে উপরের দিকে ভাগশেষ বা অবশিষ্টগুলি লিখলাম, যথাক্রমে ৬ এবং ৪

মাত্রা দিতে চাই ২২৫:
16।225
__________এখানে ২২৫ কে ১৬ দিয়ে ভাগ দিলাম
16।14 - 1
_________ ভাগফল ১৪ - অবশিষ্ট ১; আবার ১৬ দিয়ে ১৪ কে ভাগ দিলাম
__0 - 14_________ভাগফল ০, অবশিষ্ট ১৪


রঙের কোড হল e1 নিচ থেকে উপরের দিকে ভাগশেষ বা অবশিষ্টগুলি লিখলাম, যথাক্রমে ১৪=e এবং ১

মনে রাখতে হবে যে, a =10, b =11, c = 12, d = 13, e = 14, f = 15

এখন দেখা যাক ১০০ মাত্রার রংগুলি কেমন
১০০ মাত্রার লাল: কোড - color:#640000
১০০ মাত্রার সবুজ: কোড - color:#006400
১০০ মাত্রার নীল: কোড - color:#000064
১০০ মাত্রার মিশ্রন, ফলাফল ধুসর!: কোড - color:#646464

এখন দেখা যাক ২০০ মাত্রার রংগুলি কেমন
২০০ মাত্রার লাল: কোড - color=#c80000
২০০ মাত্রার সবুজ: কোড - color=#00c800
২০০ মাত্রার নীল: কোড - color=#0000c8
২০০ মাত্রার মিশ্রন, ফলাফল ধুসর!: কোড - color=#c8c8c8

হেক্সাডেসিমেল - ডেসিমেল


একটি পছন্দের রং দেখে তার কোড থেকে মিশ্রনের মাত্রা বের করতে চাইলে এইরকম পরিবর্তনও দরকার হবে ....

এক্ষেত্রে রঙের কোডকে তার স্থানীয় মান দিয়ে গুণ করে মাত্রা বের করা যায়।

যেমন: কোড = #c877ff এর অর্থ হল:

লাল = c8 = c.16+8 = 12x16+8 =192+8= 200
সবুজ = 77 = 7x16+7 = 112+7=119
নীল = ff = f.16+f = 15x16+15 = 240+15=255

দেখিতো রংটা আসলে কেমন:
ওরে বাবা

আরো কিছু রঙের নমুনা সহ কালারকোড দেখতে হলে এখানে দেখতে পারেন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০০৭

সাহায্য চাওয়ার বিড়ম্বনা

জাপানীরা খুবই বিনয়ী ও সাহায্যপ্রবণ জাতি। অন্তত জাপানে থাকার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় এরকমই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে একটু বেশি সময় থাকলে বোঝা যায়, আসলে এরা বাঙালিদের মতই সামজিক। মেকি ভদ্রতা, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, রেষারেষি, অপরের ছিদ্রান্বেষন, গীবত গাওয়া সবই আমাদের মতই। তবে অর্থনৈতিক চাপ মুক্ত সমাজ (বাংলাদেশের তুলনায় তো বটেই) বলে সাধারণভাবে এদের শিষ্টাচার ও আদর্শগত অবস্থান আমাদের চেয়ে বেশি বলেই মনে হয়। - আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এসব বিচার করার চেষ্টা না করাই ভালো।

প্রথমবার যখন জাপানে আসলাম। বিমান থেকে নামার পর অতি সহজেই ইমিগ্রেশন পার হলাম, আর তারপর কনভেয়ার বেল্ট/ব্যাগেজ সেকশনে গিয়ে দেখি এক তরুনী স্টাফ ইতিমধ্যেই আমার ব্যাগেজ দুইটা সংগ্রহ করে একটা ট্রলিতে তুলে রেখেছে, আর আমি আসতেই এগিয়ে দিল। পরে বুঝেছি যে, আমার ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আসার আগেই বেশিরভাগ যাত্রী বের হয়ে গিয়েছিল আর আমার ব্যাগেজ অনাথের মত বেল্টে ঘুরছিল!!

যা হোক এখানে আসার পরে ভাষাগত সমস্যা ছিল প্রচন্ড; এখনও রয়েছে, তবে সমস্যার তীব্রতাটা কিছুটা কমেছে। প্রথম থেকেই যেখানেই সাহায্য চেয়েছি, তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে। যেমন, কোন দোকানে জিজ্ঞেস করলাম বস্তুটার ভেতরে কোন প্রাণীজ চর্বি আছে কি না ... ক্যাশ কাউন্টারে না জানলে ম্যানেজারকে ডেকে এনেছে। রাস্তায় কাউকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে, পারলে পৌছিয়ে দেয়। কারো সাথে পরিচিত হলে জিজ্ঞেস করে কোন সমস্যা আছে কি না ইত্যাদি। এ বিষয়ে প্রথম ভিন্নমত শুনলাম এক বড়ভাইয়ের কাছে। আমি এখানে (ইউনিভার্সিটি যে শহরে) আসার পরে উনিই পরিচিত হওয়া প্রথম বাঙালি (পোস্টডক্টরাল রিসার্চার).... আসার একঘন্টার মধ্যেই। প্রচুর সাহায্য করেছিলেন।

আমি আসার প্রায় ছয়মাস পরে আমার বউ এখানে আসল। একেবারে আসা নয়; তখনও লেখাপড়া শেষ হয়নি বলে ছুটিতে বেড়াতে এসেছিল। সেই ভাই আর আমি এয়ারপোর্টে যাব ওকে রিসিভ করতে। উনি আমাকে ইন্টারন্যাশনাল ডর্মিটরির সামনে থেকে ওনার গাড়িতে তুলে নিয়ে যাবেন - এমনই কথা হয়েছিল। আমি অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য্য হয়ে গেলাম কিন্তু ওনার খবর নাই। উনি সময়ের ব্যাপারে খুবই সিনসিয়ার মানুষ। চিন্তা হতে থাকল, কোন দূর্ঘটনায় পড়লেন কি না। উনি থাকতেন সামনের ফ্যামিলি এ্যাপার্টমেন্টে, কিন্তু তখন আসবেন ডিপার্টমেন্ট থেকে। যা হোক উনি এসে পৌছুলেন। ঘটনা কী তা তিনি এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে বললেন। আমার বউকে ওয়েলকাম জানানোর জন্য তিনি ফুল কিনেছিলেন..... এখন ফুলের গোছাটার নিচের দিক মুড়ানোর জন্য উনি কিছু চকচকে কাগজ আছে কি না জানতে চেয়েছিলেন। ব্যাপার হল, উনি জাপানি পারতেন না তেমন। ফলে বলেছিলেন ইংরেজিতে। দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের ব্যক্তি সাহায্য করার জন্য সিরিয়াস হয়ে গেলেন.. নিজে বুঝেন না তো কি হয়েছে.. ম্যানেজার আসল... ম্যানেজারও বুঝেন না....কোথায় জানি ফোন করলেন মোবাইল থেকে - সম্ভবত এই কথার মানে জিজ্ঞেস করতে। তারপর বললেন একটু অপেক্ষা কর, ভেতর থেকে অনেক ঘেটে ঘুটে প্রায় দশ মিনিট পরে কিছু রেপিং পেপার আনলেন। ইতিমধ্যে ঐ ভাইয়ের যা দেরী হওয়ার হয়ে গেছে কারণ এয়ারপোর্ট এখান থেকে মাত্র ৬ কি.মি. দুরে! রাস্তার সমস্ত ট্রাফিক সিগন্যালগুলো বিবেচনায় আনলে ওখানে যেতে মোটামুটি ১০ মিনিট লাগে। কাজেই ৫ মিনিট দেরী হওয়া মানেই অর্ধেক পথ পিছিয়ে পড়া, যেটা জোরে চালিয়ে ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব না। -------------- কাজেই সাহায্য চাইতে গিয়ে দেরী হয়ে গেল।

এদিকে হয়েছিল আরেক ব্যাপার। অর্ধেক পথ যেতেই আমার মোবাইলে একটা ফোন আসল। কথা বলে বুঝলাম এয়ারপোর্ট থেকে কোন জাপানি মহিলা.... তারপর উনি আমার বউকে দিলেন। আমি বললাম ৫ মিনিটের মধ্যে আসতেছি... পথে আছি। বাকী কাহিনী ওর (আমার বউ) মুখে শোনা। দুটি মিলিয়ে ঘটনা এমন:
এটা ছিল ওর প্রথম বিমান ভ্রমন। ঢাকা-সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর-ওসাকা, ওসাকা-মিয়াজাকি (অভ্যন্তরীন ফ্লাইট)। টিকিট কাটার সময়ই সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানানো ছিল --- লেডি ফ্লাইং এলোন, ফ্লাইং ফর দা ফার্স্ট টাইম। কাজেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের স্টাফগণ ওকে প্রতি পদক্ষেপে অতিরিক্ত যত্ন নিয়েছে। এমনকি ওসাকায় নামার পরেও ডোমেস্টিক ফ্লাইটে বোর্ডিংএ বলে দিয়েছে। মিয়াজাকিতে পৌছানোর পরে আমাদেরকে না দেখে ও বসে ছিল অপেক্ষা করার জন্য। ইতিমধ্যে সাহায্যপ্রবণ এয়ারপোর্ট স্টাফের চোখে পড়ে গেল। হয়ত ওদেরও জানা ছিল যে একা এসেছে... তার উপর বিদেশি মহিলা.... এসে জিজ্ঞেস করাতে ও তো লা-জওয়াব ....... কারণ একবর্ণ জাপানি বুঝে না ও। তখন মহিলা স্টাফগণ দৌড়ে গিয়ে খুঁজে আনল একজন স্টাফকে যে ইংরেজি জানে। তারপর ওর কাছে জেনে আমাকে ফোন করল।

সেও আরেক কাহিনী। প্রথমে নাকি ওর কাছে লেখা ফোন নম্বরটা ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি কোড সহ ডায়াল করেছে। ফোন তো যায় না। ও সেটা বুঝতে পেরে এক আঙ্গুল দিয়ে কান্ট্রি কোড ঢেকে রেখে বলল..... এইটা ডায়াল কর। তারপর ফোন আসল!

যে কোন ব্যাপারেই কোন জাপানীর কাছে সাহায্য চাইলেই ওরা খুব সিরিয়াস হয়ে যায়। আগে ব্যাপারটাকে খুব অদ্ভুদ লাগতো। এখন মনে হয়, এই ব্যাপারটায় আমাদের সাথে ওদের খুব মিল। আমরাও দেশে বিশেষত রাজধানী থেকে দুরে কোন বিদেশী দেখলে, কৌতুহলি হয়ে উঠি; আর সাহায্য চাইলে তো জান দিয়ে দেই (অবশ্য সুযোগ নিতে চায় এমন লোকও আছে)।

ইদানিং তাই দোকানে বা কোথাও গেলে পারতপক্ষে জাপানীদের কাছে সাহায্য চাওয়া এড়িয়ে চলি। শপিং-এ মাঝে মাঝেই বউ ঝাড়ি দেয়.... এ্যাত খুজছ কেন... কাউকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয় ... । আমি মাথা নাড়ি...... নাহ্ .....

হায়রে বাংলা ভাষা

ভাষাভিত্তিক জাতি আমরা। বাংলা ভাষা বলা হয় এই দেশে তাই এটা বাংলাদেশ। এই দেশের উৎপত্তির অন্যতম একটা ইস্যূ ছিল ভাষা। সেই ভাষাই যখন বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত হয় সেটা দেখতে মন খারাপ লাগেই। যেমন অনেক সময় দেয়ালের লিখনে দেখি "জাতিয়" বানান ... মনটা এ্যাত যে খারাপ লাগে। "জাতীয়" বানানটা এমন -- কিন্তু সেই বানানটারই জাত মেরে দিয়েছে .... পরোক্ষ ভাবে এই প্রিয় ভাষা, যার জন্য এত মানুষ আবেগপ্রবণ হয়েছে, প্রাণ দিয়েছে সেই মানুষগুলোর আবেগ, বিবেচণাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অবমাননা করা হয় বলেই মনে হয়। জাতিয় বানানটা নিশ্চয়ই আঞ্চলিকতার ধোপে শুদ্ধ হবে না। (কিছুটা এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা হয়েছে প্রজন্ম ফোরামে: http://forum.projanmo.com/t921.html)।

তবে এই লেখাটার উদ্দেশ্য লিখিত ভাষা নয়, বরং কথ্য ভাষা সম্পর্কে।

মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটু প্রাসঙ্গিক কিছু উদাহরণ লিখি। ভারতীয়দের ট ট মার্কা ইংরেজী শুনে ইংরেজী ভাষা-ভাষীগণ মুখ টিপে হাসে। যদিও চমৎকার ইংরেজি বলেন এমন ভারতীয় প্রচুর। কিন্তু মিডিয়াতেও সেইরকম হাস্যকর ইংরেজি আসছে। বিবিসির একটা প্রামান্যতে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের ইংরেজি ভাষ্যর নিচে ইংরেজি সাবটাইটেল ছিল ..... !! ইংরেজি থেকে আসা শব্দগুলোর অপভ্রংশকে ওরা ইংরেজি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। ইউটিউবের একটা রেসিপি ব্লগে শুনলাম টম্যাটোকে তেমাটার বলছে!!

একই কথা প্রযোজ্য সাধারণ জাপানিদের ইংলিশ শুনলে। ইংরেজি বেড (বিছানা) ওরা বলবে বেদ্দো!! তাছাড়া ল উচ্চারন করতে পারে না বিধায় ল যুক্ত সকল শব্দই হয়ে যায় র!! মালিহাকে বলে মারিহা!! ব্যাপারটা দারুন কৌতুককর। এটা জাপানিগণও জানে। তাই ওরা সহজে ইংরেজি বলতে চায় না .... জানা থাকা সত্ত্বেও।

যতদুর বুঝি আমেরিকান, ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়ান, নিউজিল্যান্ডের .... কোন জায়গার কথ্যটাই স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশ নয়। ব্যক্তিগত লেভেল যেভাবেই বলা হউক, কিন্তু প্রচার মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড ভাষা হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। দেশে বা বাইরে, প্রায় সকল নামকরা চ্যানেলগুলোর খবরেই ইংরেজি একই রকম -- নিজের উচ্চারন ঠিক করার চেষ্টা করি ওগুলো শুনে।

কিন্তু আমাদের এত আবেগ ঘেরা, আত্মত্যাগের ইতিহাসে সমৃদ্ধ বাংলা ভাষাতেই আমাদের বিকৃতি দেখি প্রচার মাধ্যমে। আঞ্চলিক ভাষাগুলো বাংলা ভাষার একটা অংশ... কোন সমস্যা নাই আমার সেটাতে। আঞ্চলিক ভাষা শুনলে মনে হয় দেশের কথাই শুনছি ..... খারাপ লাগে না কোনক্রমেই। ভাষাটাও পরিবর্তনশীল - কাজেই উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি পাল্টাবেই ---- ৫০ বছর আগের বাংলা আর এখনকার ভাষা তো এক নয়, কাম্যও নয়। কিন্তু তার পরেও কিছু কিছু ব্যাপার মনের মাঝে খচখচ করতে থাকে।

বাংলা রেডিও চ্যানেলগুলোর মধ্যে মাঝে মাঝে এন.এইচ.কে. (জাপানের) থেকে খবর শুনতাম আগে। বিকৃত ভাষা শুনে রাগে গা জ্বলে যায়। ফীড ব্যাক ফর্মে জানিয়েছিও। কিন্তু যেই আর সেই .... .... অসহ্য... তাই ওটা এখন আর শুনিনা।

আরেকটা হল, ইদানিংকার কিছু দেশি চ্যানেল.... ফুর্তি? মেট্রোওয়েভ?... আমি নামগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত নই। এক বা দুইদিন শোনার পরে আর শুনিনা। দেশের কথা/ গান শুনতে গিয়ে মেজাজ খারাপ করার কোন মানে নাই -- এর চেয়ে না শোনা ভাল। শুধু বলব, এদের উপস্থাপকের বাংলা শুনলে মনে হয় সংশপ্তক নাটকের লর্ড ক্লাইভ বাংলা বলছে........ অসহ্য লাগে।

মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০০৭

ফিল্ডওয়র্কে গুরুত্বপূর্ণ তুচ্ছ ব্যাপারসমূহ

বেশ কিছু ছোট ছোট বিষয় মাঝে মাঝে বড় মনে হয়। বেশ কিছুদিন আগে চাপাইনবাবগঞ্জ শহরের কাছে চুনাখালি গ্রামে গেলাম কাজ করতে। মূল কাজ নলকূপের পানির নমূনাসংগ্রহ বা স্যাম্পলিং। ওখানকারই একটা ছোট ছেলে স্বত:প্রনোদিত হয়ে প্রচুর সাহায্য করছিল। অবশ্য আমাদের সাথে কৌতুহলীদ্দপক পদার্থ হিসেবে জাপানী ছাত্র ও প্রফেসর ছিলেন, সাথে ছিল অনেক যন্ত্রপাতি - সুতরাং উৎসাহি দর্শকের অভাব ছিল না। যেখানেই যাচ্ছিলাম, মোটামুটি একটা মিছিল সহযোগেই যাচ্ছিলাম। যা হোক, আমাদের গ্রুপের একদল, মানে দুই জন, একজায়গায় বসে ফিল্ডকিটের সাহায্যে পানির আর্সেনিক পরীক্ষা করছিল। আর অপরদল, আমরা ঘুরে ঘুরে পানি সংগ্রহ করে কিছু অংশ পাঠিয়ে দিচ্ছিলাম সেখানে - ঐ ছেলেটি বার বার যাওয়া আসা করে স্যাম্পলগুলি দিয়ে আসছিল। আমরা অন্য সব পরীক্ষা করছিলাম আর চাপকলগুলির জি.পি.এস. অবস্থানও রেকর্ড করছিলাম।

যা হোক, দু-দিনের কাজ শেষে প্রফেসর বললেন যে ছেলেটিকে কিছু টাকা দিবেন। যথারীতি ছেলেটাকে গাড়ীতে তুলে সবার আড়ালে টাকা দেয়া হল - যেন সে টাকা নিচ্ছে এটা লোকজন দেখলে সে লজ্জা না পায়। ক্ষুদ্র যে ব্যাপারটি আমি খেয়াল করলাম, সেটা হল টাকাটা যতদুর সম্ভব ছোট নোটে দিলাম (১০-২০ টাকার নোট): কারণ ঐ ছেলেটা টাকা পেয়েছে এটা অনেকেরই গাত্রদাহের কারণ হতে পারে। অপরদিকে, যখন ও কোন দোকানে কিছু কিনতে যাবে, বড় নোট দিলে অবধারিতভাবেই প্রশ্ন এসে যেতে পারে, এ্যাত টাকা সে কই পেল। তারপর কথাটা ছড়িয়ে যাবে, যেটা অনেকক্ষেত্রেই ছেলেটির ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ছোট নোট -- ব্যাপারটা অতি তুচ্ছ হলেও আমার কাছে জরুরী মনে হয়েছিল। আবার, যেই ব্যক্তি আমাদের সাহায্য করেন, তাঁকে টাকা দেয়ার সময় বলতাম চলেন একটু পানি খাওয়ান, আপনার কূয়ার পানি আমার খুব ভালো লাগে -- বলে বাসার ভেতরে গিয়ে, সবার থেকে আড়ালে টাকা দেয়া হত।

আরেকটি ব্যাপার। আমাদের ফিল্ড ট্যূরগুলির একটা বৈশিষ্ট হল, প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই একটা স্থায়ী রেফারেন্স মানুষ থাকেন। কারণ আমরা মূলত আর্সেনিক দূরীকরণের যন্ত্র স্থাপনের পর সেগুলো মনিটরিং বা মেইনটেনেন্সের কাজেই যেতাম। এর আগে যতবারই কোথাও ফিল্ডট্যুরে যাওয়া হত, দুপুরের খাবার দোকান থেকে আনিয়ে নেয়া হত। তারপর সেইসকল গুরুপাক আর পচা তেলের খাবার খেত সবাই ... অবশ্য তেল এড়ানোর জন্য রুটি, ডিমভাজি বা সিঙ্গারাও খাওয়া হত। ঠিক করলাম যে, যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই খাওয়ার আয়োজন করতে হবে। যেইখানে যাই, ওখানেরই একজনের বাসায় খাই, বিনিময়ে হোটেলে খেলে যেমন টাকা খরচ হত সেটা দিয়ে দেই। অনেকগুলো সুবিধা তাতে, প্রথমত: দোকানে কি পাওয়া গেল না গেল তা নিয়ে চিন্তার কারণ নাই; রান্নার উপাদানের মান নিয়ন্ত্রত; টাকাটার প্রবাহ কার্যক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকল; ঘনিষ্ঠতা বাড়ল; ওখানে সাময়িক হলেও একটা কর্মসংস্থান হল। অফিসের মোটামুটি সকলেই ব্যাপারটা সমর্থন করল ... .. কিন্তু আগে থেকে কেউই এই নিয়ে নিজ থেকে কিছু বলেনি। অভিজ্ঞ সমাজ-বিজ্ঞানীদের (সোশাল সায়েন্স থেকে পাশ করে রিসার্চার হিসেবে সহকর্মী) সাথে আমার ফিল্ডে চাকরী করার পূর্ব অভিজ্ঞতাই কি এই ধরনের সামাজিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য দায়ী ? -- হতে পারে.. ... অভিজ্ঞতা তাই এ্যাত মূল্যবান।

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০০৭

এক্সাইটিং সময়!

ইদানিং ভীষন একটা এক্সাইটিং সময় পার করছি। এক্সাইটিংই বলা যায়। কারণ আমার থিসিস ডিফেন্স করার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই থিসিস আউটলাইন আর শিরোনাম নিয়ে একবার পরীক্ষকদের সামনে প্রেজেন্ট করতে হল। ওনারা আমার এ পর্যন্ত হওয়া সমস্ত প্রকাশনাগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করলেন। কোথায় প্রকাশিত হয়েছে তা পুঙখানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রায় দিলেন .. হ্যাঁ এই ছাত্র ডিগ্রী আবেদন করতে পারে। এসকল শেষ করতে করতে মে মাস চলে আসল। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জাপানে পরপর ৪ দিনের বিভিন্ন ছুটি থাকে; তার সাথে সপ্তাহান্তের দুদিন যোগ করে মোটামুটি টানা এক সপ্তাহ ছুটি পাওয়া যায়। এজন্য এ সময়টাকে গোল্ডেন উইক বলা হয়, সারাবছরে এত বড় ছুটি আর নেই। তাই সকলেই এই সময়ে বিভিন্ন রকম বেড়ানোর পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করে। সমস্ত বেড়ানোর জায়গাগুলোতেও ব্যবসা হয় রমরমা। প্লেনের ও অন্যান্য যানবাহনের ভাড়াও সিজন হিসেবে বেশি থাকে। যাই হোক, এবছর আমারও কয়েকটা জায়গায় বেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। তাছাড়া জাপানে এটা আমার সম্ভবত শেষ বছর, বউও ফেরৎ চলে যাবে কয়েকদিন পরেই - ওর ভাইয়ের বিয়েতে অংশগ্রহন করে আমার আসার অপেক্ষা করবে বলে। কিন্তু ছুটি শুরুর ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় আমাকে জানানো হল যে থিসিসের একটা খসড়া জমা দিতে হবে। তাও আবার ঠিক চার দিন পরে, যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ঠিক সেদিন। পূর্ব পরিকল্পিত বেড়ানো কাট-ছাট করতে হল, কিন্তু পুরোপুরি বাদ দেয়া গেল না। দিনে বেড়িয়ে রাতে কাজ। রাত জেগে জেগে মোটামুটি দাঁড় করালাম থিসিসের ড্রাফট। কি যে লিখেছি নিজেই ঠিকমত জানিনা .... শুধু কোনরকমে জমা দেয়ার মত একটা কিছু প্রস্তুত করা।

ইতিমধ্যে চারজন পরীক্ষক ওটা দেখে উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়েছেন। ওগুলো সমন্বয় করে তারপর আবার জমা দেয়ার মাঝখানে তিন সপ্তাহ সময়। এর মাঝেই ডিগ্রীর জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে হল। সে আরেক ঝক্কি। সমস্ত ফরমগুলো জাপানিতে। ওগুলোর সফটকপি থেকে জাপানিগুলো কপি করে ইন্টারনেটের ট্রানস্লেশন সাইট থেকে কিছুটা ইংরেজি করে করে অর্থ বুঝার চেষ্টায় গেল দুই দিন। যা হোক আমার প্রফেসরের আন্তরিক সহায়তায় ওগুলো পূরণ করা গেল.... বেশিরভাগ কাজ প্রফেসরই করে দিলেন। এখন থিসিসটার পরবর্তী পর্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজ করছি। এর পরে এটা চুড়ান্ত রূপে আসার আগে আরোও দুইবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরামর্শ-উন্নয়ন হবে। আমন্ত্রিত এক্সামিনারগণ দেখবেন। তারপরে ফাইনাল ডিফেন্স।

আরো একটা ডিগ্রীর ছোঁয়া অনুভব করছি... তাই এ্যাত খাটুনির পরেও এক্সাইটেড লাগে। আশা করছি, এর ফলে ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাব .... দেখা যাক।

শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০০৭

শ্রোতার বিবর্তন

এখন দেশ থেকে দুরে থাকি। দেশের গান টাটকা শুনতে পারি না, আর জানিওনা যে কোন কোন নতুন গায়ক/গায়িকা/ব্যান্ড আসছে, ঝড় তুলছে। ভরসা ইন্টারনেট। তাছাড়া গত ৩ বছরে প্রায় ১২ বার দেশে গিয়েছি গবেষণার স্যাম্পলিং এর কাজে, প্রতিবারই কিছু এম.পি.থ্রী বা ভিডিও সিডি/ডিভিডি নিয়ে এসেছি। আরও এনেছি বেশ কিছু ক্যাসেট - যে গাড়ীটা ব্যবহার করি, ওটা বেশ পুরানো মডেল। শুধু ক্যাসেট প্লেয়ার আছে। এখন অবশ্য সিডি প্লেয়ার থেকে সেখানে গান বাজানোর একটা সিস্টেম করেছি। তাই গানের প্রবল অভাব অনুভব করি না।

বিবর্তন বলতে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন বুঝায়। আমি শ্রোতা হিসেবে আমার পছন্দের বিবর্তনকে ক্রোনোলজিকাল অর্ডারে দিলাম।

আম্মার কাছে গল্প শুনেছি... যখন গ্যাদা বাচ্চা ছিলাম তখন নাকি সেজ চাচা রেডিওতে গান ছেড়ে দিয়ে আমার সামনে এসে লিপসিং করত। আমি হা করে দেখতাম। হয়ত ভাবতাম, আহারে এই লোকটা কত ভাল গান গায় ..... ...

যখন বেশ ছোট ছিলাম: প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম তখন বাসায় গান শুনতো ছোটচাচা। বিভিন্ন রকম হিন্দি গান, নজরুল আর রবীন্দ্র আর অাধুনিক। ওনার গলায় গান শুনে নিজেরও ওভাবে গাইতে ইচ্ছা করত। তখন শুনতাম: আমি চিনি গো চিনি তোমারে....; আমি দুর হতে তোমারে দেখেছি ইত্যাদি গান। ভূপেন হাজারিকা'র গানও ভাল লাগত শুনতে। আবার হেমন্তের ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে... মুখস্থ ছিল।

হাইস্কুলের শেষের দিক ছিল ব্যান্ডের যুগ। ঈদের সালামি দিয়ে শুধু ক্যাসেট কিনতাম ..... চাইম, ফীডব্যাক, উইনিং, ডিফরেন্ট টাচ, অবসকিওর শুনতাম খুব। তারপর হলাম এল.আর.বি'র ভক্ত। সাথে সাথে ইংলিশ রক শুনতাম খুব। তবে সেটার সোর্স ছিল প্রতিদিন দুপুরে রেডিওর ওয়র্ল্ড মিউজিক অনুষ্ঠানটি। দুইটা সিনেমার ট্রেইলার শুনে ওয়র্ল্ড মিউজিক মিস করতাম না বাসায় থাকলে। মূলতঃ সেখান থেকেই বিভিন্ন বিদেশী শিল্পীর গান পছন্দ করা শুরু করলাম।

আব্বার ঝোক ছিল মারেফতি বিষয়ের প্রতি। তাই উনি গিয়ারে থাকলে, ক্যাসেটপ্লেয়ার ফ্রী-পাওয়া যেত না। তখন লালণগীতি এবং অন্যান্য বাউল সংগীত খুব বাজত বাসায়। আবার কখনো ডেকে জোর করে তা শুনানো হত। আশেপাশে শেয়ার করার কাউকে না পেয়ে লালণগীতির মর্মকথা আমাকেই ব্যাখ্যা করে শুনাতো। আমি আব্বার মন রক্ষার্থে সেসব চিরতার পানির মত গিলতাম। অবস্থা এমন দাড়িয়েছিলো যে, মনে লালনগীতি ভীতি ঢুকে গিয়েছিলো। স্কুল থেকে বা খেলা শেষে বাসায় ফেরার সময় দুর থেকে লালন বা বাউল বাজতে শুনলেই, বাসায় ঢোকার সময় বেড়ালের মত নিঃশব্দে ঢুকে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে বাইরে ভেগে যেতাম! বা চুপে চুপে থাকতাম বাসায়।

১৯৯০ সালে এস.এস.সি. পাশ করলাম। এরপর নটরডেম কলেজে ভর্তি হলাম। বাসা মিরপুর ১১তে। প্রতিদিন বাসা টু কলেজ আসা যাওয়া করে আর কলেজের পড়ার চাপে সব সময় আর গান শোনার শক্তি থাকত না। তারপরেও যাওয়া আসার পথে গুলিস্থানের স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে ক্যাসেট কিনেছি মাঝে মাঝে। রেডিওর ওয়র্লড মিউজিকে গান শুনেছিলাম, তাই কিনলাম Def Leppard ব্যান্ডের একটা ক্যাসেট। ভাল কোয়ালিটির ক্যাসেট বলে দাম নিল ৯০ টাকা, যেখানে সাধারণ ক্যাসেটের দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা। গান শুনে তো মুগ্ধ। এরপর একে একে Iron Maiden, Metallica, AC DC কিনলাম। তাছাড়া অন্যান্য পুরানো হেভী মেটাল ব্যান্ডের গানও শুনতাম। পাশাপাশি Rap শুনতেও খারাপ লাগত না তেমন --- তবে সেই ভাল লাগা খুব বেশি স্থায়ী হয়নি; এটা মাঝে মাঝে শুনতে ভালই লাগে।

এরপর বুয়েট লাইফ.... সেখানেও হেভী মেটাল, হার্ড রক। গীটার শেখার চেষ্টা করলাম একবার। ৩ মাস নীলয় দাসের ওখানে ক্লাসও করলাম। তারপর ভাগারাম। ৩য় বর্ষের শেষের দিকে আর ৪র্থ বর্ষে আস্তে আস্তে আবার মান্না দে, কিশোর .. এদের গান শুনা শুরু করলাম। যদিও হেভী মেটাল ভক্তদের ওসব প্যানপ্যানানি ভাল লাগার কথা না, আমার কাহিনীটা একটু অন্যরকম। রূমমেট ও ব্যাচমেট ও ক্লাশমেট আবীর শুনত ঐ গানগুলো। শুনতে শুনতে দেখলাম আমারও ভাল লাগতে শুরু করল। আফটার অল ছোটকালে আমার ছোটচাচাও এই গানগুলো শুনতেন। তাই হয়ত পাশ করার পর প্রেমে পড়তে মন চাইল, চাকরী পেলাম। বিয়ে করলাম।

বিয়ের পর গানের জগতে আরো কিছু যোগ হল। জাগজিৎ সিং-এর গজল; প্রথম দিকে ভাল লাগত না... এখন মন্দ লাগে না। বউয়ের পছন্দে বাপ্পার গান শুনলাম। শুনেই তো হিট ..... আসলে এর আগে টিভিতে দলছুট ব্যান্ডটার পারফর্মেন্স দেখে খুব ভাল লেগেছিল। তাই দলছুটের ভোকালিস্ট দেখে একটা আকর্ষন তো ছিলই। এখন আমি বাপ্পার গানের একজন ভক্ত। তাছাড়া কুমার বিশ্বজিতের গানও এভাবে ভাল লাগায় স্থান করে নিল। রেঁনেঁসা ব্যান্ডটা সবসময়ই ভাল লাগত - বলা হয় নি আগে।

এখন বয়স বাড়ার সাথে সাথে মনের চাহিদা পরিবর্তন হচ্ছে... তাই পছন্দের গানের ব্যাপ্তিও বেড়ে যাচ্ছে। কিছু গান ভাল লাগে মিউজিক কম্পোজিশনের জন্য। কিছু গান ভাল লাগে কথার জন্য। তবে কোন একটা গান ভাল লাগার পেছনে আমার মনে হয় মনের অবস্থাটা সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। এখানে উল্লেখিত শিল্পী/ব্যান্ড ছাড়াও আরো অনেক গানই আমার পছন্দ; সবগুলো পছন্দ হয়ত লেখাতে আসেনি। এ পর্যন্তই........


বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০০৭

সুইজারল্যান্ডের এক কোনা ভ্রমনের বিশাল অভিজ্ঞতাঃ পর্ব-৩ (যাত্রা হল শুরু)

(....পূর্বের পর্ব হতে চলমান)

কোনরকম ঝুট ঝামেলা ছাড়াই চেক ইন করলাম। আমার ফ্লাইট ছিল বিমানে ঢাকা থেকে মুম্বাই, তারপর ৫ ঘন্টা ট্রানজিট, আর তারপর সুইস এয়ারে মুম্বাই থেকে যুরিখ। ঝামেলা পাকাল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। অযথা হয়রানী করল, ঘুষ দাবী করল। এটা আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ .... ভয় পাইছিলাম; ঘুষ দিলাম, সাথে দিলাম একগাদা গালাগালি (মনে মনে অবশ্য)। পরের ছোট্ট ঝামেলা স্টীলের কাটাচামচ .... ঐটা ফেলে দিতে হল বোর্ডিঙের সিকিউরিটি চেকিঙের সময়।

প্লেন টেক অফ করার সময় তো অবস্থা যায় যায় .... ... প্রথমেই দেখাল কিভাবে সীট বেল্ট বাঁধতে হয়, তারপর জরুরী অবস্থায় করণীয় – ভয় লাগা শুরু করল..... এ্যাত কিছু দেখাইতেছে কেন? বিপদ কি আবশ্যম্ভাবী? তারপর টেকঅফের জন্য বাতি নিভায় দিল; আশেপাশের সহযাত্রীরা দেখলাম বিকারহীন; ওনাদের দেখে মনে সাহস নিয়ে বসে থাকলাম। রানওয়ের মাথা থেকে যখন ছিলা মুক্ত তীরের মত ছুটা শুরু করল প্লেনটা তখন যে কিরকম অনুভুতি হয়েছিল বোঝানো মুশকিল ..... প্রথমবার রোলার কোস্টারে চড়ার মত (তখনো একবারও চড়িনি)।

বিমানে কি যে খাওয়াইছিল মনে নাই এখন। তবে যে জিনিসটা অবাক করেছিল সেটা হল সীটের সাইজ .... তেমন একটা আরামদায়ক না ... টিভি বিজ্ঞাপনগুলাতে যেরকম দেখায় তার সাথে মিল নাই একটুও! তাছাড়া আছে গোঁ গোঁ বিরক্তিকর একটা শব্দ। জানালা দিয়ে বাইরে কেমন দেখায় দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল কিন্তু আমার সীটটা ছিল মাঝের দিকে.... জানালা থেকে অনেক দুরে।

সময়মত মুম্বাই পৌছালাম। ল্যান্ড করার সময় আরেকবার আতঙ্কিত হলাম। প্লেন থেকে নেমে বোর্ডিং ব্রীজ থেকে করিডোরে পা রাখা মাত্র দেখলাম একজন সুন্দরী এয়ারপোর্ট স্টাফ সুইস এয়ার সুইস এয়ার বলে ডাকছে .... মিরপুর, গুলিস্থান বাসের হেলপার/ কন্ডাকটরদের সাথে এর কোন তুলনা চলে না। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম যে, আমি সুইস এয়ারের যাত্রী। আমাকে বলল ওনাকে ফলো করতে .... আর জিজ্ঞেস করে জানলাম আমিই একমাত্র যাত্রী বিমান থেকে সুইস এয়ারে যাব – আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এই আশায় যে কোন দেশী সহযাত্রী পাইলে একটু ভাল লাগত এই আশায়। যা হোক ঐ মহিলাকে দেখে অন্ততপক্ষে এটুকু আশ্বস্ত হলাম যে, আমি একেবারে অবহেলিত না । এখন বুঝতেছি যে, এয়ার টিকিট আনার সময় আমার আনকোরা পাসপোর্ট দেখে সুইস এয়ারের ট্রাভেল এজেন্ট “সাহায্য দরকার, প্রথমবার আকাশপথে ভ্রমনকারীঁ” - এ ধরনের একটা অনুরোধ করে রেখেছিলেন।

এয়ারপোর্ট স্টাফের সাথে একটা লম্বা করিডোর দিয়ে হেটে চলছি তো চলছিই..... বামপাশে গ্লাস প্যানেল, প্লেন, রানওয়ে আর অন্যান্য জিনিস দেখা যাচ্ছে, আর ডান পাশে দেয়াল। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে গেল ........... শেষ পর্যন্ত ট্রানজিট লাউঞ্জ নামক একটা জায়গায় এসে পৌছালাম। ওখানের ট্রান্সফার ডেস্কের স্টাফকে গিয়ে এই মহিলা স্টাফ কি জানি বলল; আমার হাতে একটা খাওয়ার কুপন ধরায় দিয়ে বলল রাত ৮টা থেকে ১১টার (?) মধ্যে পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে নিতে আর সময়মত পরবর্তী প্লেনে চড়তে। তারপর এ্যাতবড় লাউঞ্জে যাত্রী হিসেবে আমি একা - আর ট্রান্সফার ডেস্কে একজন কর্মকর্তা ।

৫ ঘন্টা যাত্রাবিরতি ছিল .... .... তার মধ্যে ঐ রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে এসেছি (যতদুর মনে পড়ে, বুফে সিস্টেম ছিল).... ... বাকী সময়টা যে কি বিরক্ত লাগছিল: বলার মত না। যা হোক, নির্দিষ্ট সময়ে পরবর্তী প্লেনে চড়লাম। এবারও সীট মাঝখানের দিকে তবে চলাচলের রাস্তার সাথে (আইল সিট)। আগেরটা ছিল ৩ কি সাড়ে ৩ ঘন্টার যাত্রা.... আর এটা সম্ভবত ৭ ঘন্টার। কি যে বিরক্তিকর। একে তো সীট আটোঁসাটো, গোঁ গোঁ শব্দ (ফ্লাই এমিরেটস-এর বিজ্ঞাপনওয়ালারা যে কি বিরাট মিথ্যূক!) তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে খারাপ আবহাওয়া, টার্বুলেন্স .... .... মনে হল ঢাকা-উত্তরবঙ্গের বাসও এত ঝাকায় না (সীটও এর চেয়ে আরামের)-- শালার প্লেন ভ্রমন! আধো অন্ধকারে দেখলাম কেউ কেউ এর মধ্যে ঘুমাচ্ছে ... .... আমি মাঝে মাঝে হাটছি, একটা বন্ধ এক্সিট দরজার সামনে দাড়িয়ে, মাঝখানের জানালার মত জায়গা দিয়ে বাইরেটা দেখছি মাঝে মাঝে। আকাশের উপরটা অদ্ভুদ রকম মায়াবী। প্লেনের নীচে বিরাট একটা মেঘের সমুদ্র, উপরে চাঁদ, চারিদিকে জোৎস্না।

আরো কিছু পরে ঝাকুনি থেমে গেল, কিন্তু বিরক্তিকর শব্দটা থামল না। সামনের একটা স্ক্রীনে প্লেনের যাত্রাপথের মানচিত্র, আর তার মাঝে আমাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। একসময় খেয়াল করলাম ইরানের উপর দিয়ে যাচ্ছি, নীচে পাহাড়। কৌতুহলি হয়ে গেলাম সেই জানালায় (এক্সিট ডোর)। আবার বিমোহিত হলাম: পরিষ্কার আকাশের নীচে চাঁদের আলোয় প্লাবিত প্রান্তর.... ... ধুসর লালচে (রাতে কেন যে লালচে দেখাচ্ছিল কে জানে) ন্যাড়া পাহাড়ী অঞ্চল দেখা যাচ্ছে। ধারনা ছিল পাহাড় হলে তো জঙ্গল থাকবে; কিন্তু এটা ন্যাড়া দেখাচ্ছে কেন? মনের মধ্যে যুক্তি হাতড়াচ্ছিলাম... .... একেই তো রাত, আসল রঙ যে সবুজ না তা নিশ্চিত করে বোঝা সম্ভব না, তার উপর প্লেন উড়ছে প্রায় ১০ কি.মি. উচ্চতায় ... হতে পারে এটা কি আফগানিস্থান বা তার আশেপাশে; কারণ, র‌্যাম্বো সিনেমার একটা পর্বে আফগানিস্থানের রূক্ষ প্রান্তর আর ন্যাড়া পাহাড় দেখাইছিল... আর ইরান তো আফগানিস্থানের পাশেই; কাজেই ন্যাড়া হওয়া অসম্ভব নয় --- কতক্ষন দাড়িয়ে দেখেছি জানি না, কিন্তু পাহাড়ী অঞ্চল আর শেষ হল না। ... ... প্লেন কি এ্যাত আস্তে চলে... তাই হবে হয়ত, আকাশের মাঝে ছোট ছোট প্লেন তো আস্তেই যেতে দেখি!! আবার এসে বসলাম... ... একসময় মনে হয় তন্দ্রা মত এসেছিল।


(.... চলবে)

মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০০৭

সুইজারল্যান্ডের এক কোনা ভ্রমনের বিশাল অভিজ্ঞতাঃ পর্ব-২ (প্রস্তুতি)

(....পূর্বের পর্ব হতে চলমান)

আবেদনপত্রে একটা জায়গা ছিল যে, তুমি কেন নিজেকে এই প্রশিক্ষনের একজন উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে কর। ঐ জায়গাটায় ডঃ ফিরোজ আহমেদ স্যারের একটা প্রবন্ধের ভুমিকার শেষ প্যারাটা একটু ইনায় বিনায় মেরে দিলাম। অনলাইনে অ্যাপ্লাই করার সময় আব্বা পাশে বসে ছিলেন। ফর্মটা পুরণকরে পাঠায় দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে অর্টোমেটিক রিপ্লাই আসল যে আমার আবেদন পেয়েছেন। তা দেখে আব্বা তো অবাক .... এ্যাত তাড়াতাড়ি চিঠি (!) পাইল! .... .... নাহ. ইন্টারনেট, কম্পিউটার তো দারুন কাজের জিনিস; ইন্টারনেট লাইন নি্য়ে খুব ভালো করছিস --- এই ছিল ওনার বক্তব্য। এক বছর আগে চাকরী থেকে রিটায়ার করা আব্বার কথাবার্তা অবশ্য সবসময়ই এরকম .... .... এর আগে প্রিন্টার কেনার আগে অনেক গজগজ করেছিলেন – শুধু শুধু পয়সা নষ্ট বলে ... কিন্তু দেখা গেল ওইটা আসার পর ওনার চিঠি লেখা বেড়ে গেল..... আমাকে বা শাহেদকে (আমার ছোটভাই) দিয়ে বাংলা টাইপ করিয়ে, প্রিন্ট নিয়ে তারপর আবার খামের উপর ও ঠিকানা প্রিন্ট করায় তারপর চিঠি পাঠানো হত। এরকম ছাপার অক্ষরে চিঠি পেয়ে ঐ প্রাপকগণ নিশ্চয়ই খুব অবাক হতেন।

এই ফাকে বলে রাখি আব্বা ১৯৬৮ সালে সরকারি মেধাবৃত্তি নিয়ে ২ বছর কানাডায় বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশনের উপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেছিলেন .... আর ঘুরেছিলেন অনেকগুলা দেশ। ফলে উনি বিদেশ ভ্রমনের পূর্বশর্ত বা প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পর্কে জানতেন কিন্তু সবসময় উনার চিন্তা ভাবনাগুলো ৩০ বছর পুরাতন পরিপ্রেক্ষিতে হত। আর খালি ঝাড়ি দিতেন ... এখন ও আবেদন করিস নাই! এখন ও পাসপোর্ট হয়নি ... ... এখনো ভিসার জন্য যাসনি ....এয়ার টিকিট হয়নি... ইত্যাদি ইত্যাদি । পরে আম্মার কাছে শুনেছি যে, আব্বা নাকি উনাকে দূঃখ করে বলেছিলেন যে... শামীমটা বোধহয় যেতে পারবে না.... ওর কাজ কাম যে ঢিলা!!

যা হউক, সব কাজ সুন্দরমত এগোলেও এক জায়গায় ঝামেলা বাধলো। ঐ ১৫দিন ভ্রমনের ও থাকা খাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করবে ওখানকার কর্তৃপক্ষ আমাকে শুধু ৫০০ ডলার দিতে হবে। আমার হিসেবে সমস্ত খরচের তুলনায় ঐ টাকা কিছুই না ... বরং একেই তো বিদেশ ভ্রমণ হবে তার উপর এইটা একটা শর্ট একাডেমিক ট্রেনিং জন্য ভবিষ্যতে আমার CV সমৃদ্ধ করবে। কাজেই খুশিমনেই টাকাটা বিনিয়োগ(!) করতে রাজি হলাম। কিন্তু ব্যাংক থেকে টাকা পাঠাতে গিয়ে শুনি, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ২০০ ডলারের বেশি পাঠানো যায় না .... পাঠাতে হলে আরো কি কি জানি আগডুম বাগডুম করা লাগবে। আমি তাও রাজি কিন্তু ওতে যা সময় লাগবে তাতে আমরা টাকা পাঠানোর শেষ সময় পার হয়ে যাবে।

মাথায় বুদ্ধি খেলল.... সুইজারল্যান্ডে ডঃ স্টেফান কে মেইল করলাম ..... খুলে বললাম সমস্যার কথা; তারপর অনুরোধ করলাম, উনি কি আমার হয়ে ৫০০ ডলার দিয়ে দিতে পারবে কি না .... আমি সুইজারল্যান্ডে এসে ওনাকে ক্যাশ ডলার দি্য়ে দিব। উনি সানন্দে রাজি হলেন আর বল্লেন যে, ফেরৎ যাওয়ার আগে যুরিখ-এ ২ দিন থেকে যেতে .... উনি আমাকে ওনার ল্যাব দেখাবেন। এতো মেঘ না চাইতেই জল – আমিও একপায়ে খাড়া। অবশ্য এ জন্য পরে আমাকে এয়ার টিকিট পিছাতে হয়েছিল..... কিছু ফী এর বিনিময়ে।

যা হোক, নতুন অফিসে জয়েন করার একমাসও হয়নি তখন, তাও ছুটি পেলাম – এক্সট্রা অর্ডিনারি লিভ (মানেটা জানতাম না তখন!)। এর মাঝে ভ্রমনের সময়ের ভিতরে মাস্টার্সের একটা পরীক্ষার ডেট পড়ছিল. ... তাও ত্যাগ করলাম বিদেশ ভ্রমনের লোভে। সমস্ত নিয়মকানুন মেনে যাত্রার দিন এয়ারপোর্টে হাজির হলাম।

(...চলবে)

সোমবার, ৯ এপ্রিল, ২০০৭

সুইজারল্যান্ডের এক কোনা ভ্রমনের বিশাল অভিজ্ঞতাঃ পর্ব-১ (পূর্ব কথা)

২০০১ সালের আগস্ট মাসে আমি সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলাম। তবে, ঐ ঘটনার সুচনা ঐ বছরেই বেশ আগে। তখন আমি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবে রিসার্চ এসিসট্যান্ট হিসেবে চাকরী করছিলাম। পাশাপাশি একই বিষয়ে মাস্টার্স করতেছিলাম পার্ট টাইম ছাত্র হিসেবে।

একদিন সকালে ল্যাবে গিয়ে দেখি ল্যাবের পাশের খোলা স্পেসে একজন বিদেশী লোক দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখা মাত্র সে কি জানি বলা শুরু করল; খেয়াল করে বুঝলাম উনি ইংরেজিতেই বলছেন কিন্তু উচ্চারনটা একটু ভিন্ন রকম। একসময় আমার বাসায় এক বন্ধু আসতো টোফেল পরীক্ষার জন্য লিসনিং প্র্যাকটিস করতে, কারণ ওর বাসার টেপ রেকর্ডার নষ্ট ছিলো। প্র্যাকটিসটা যে আমারও খুব ভাল হয়েছিল তা আমি সেই সময়েই বুঝেছিলাম, কারণ তারপর থেকে আমি ফরিদা পারভিনের লালন গীতির কথা বুঝতে পারতাম।

কাজেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে বুঝার চেষ্টা করলাম যে উনি কি বলতেছেন। যতটুকু বুঝেছিলাম উনি বলতেছিলেন যে উনি খুব খুশি কারণ ওনার হারিয়ে যাওয়া লাগেজটা পাওয়া গেছে, আজ সকালে এয়ারপোর্ট গিয়ে নিয়ে এসেছেন। উনি এমন ভঙ্গিতে বলছেন যে আমি ওনার কতদিনের চেনা। ভাবলাম উনার চাইনিজ সিন্ড্রোম হইছে - সব বাঙালি একই রকম লাগছে ওনার কাছে; আমাকে অন্য কেউ বলে ভুল করছে। জিজ্ঞেস করে জানলাম উনি কার কাছে এসেছেন এবং পৌছায় দিলাম। উনি সুইস ফেডেরাল ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র রিসার্চার, নাম স্টিফেন হুগ, এসেছিলেন আমারই আন্ডারগ্রাজুয়েট সময়ের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার স্যারের কাছে। যা হউক, পরবর্তীতে ওই ভদ্রলোককে ফিল্ড ওয়র্কে সাহায্য করেছিলাম বেশ কয়েকদিন। দেড় দিন পর থেকে ওনার কথা পুরোপুরি বুঝতে পারতাম।

বুয়েটের ঐ প্রজেক্টটা শেষের পথে ছিল। তাই চাকরীর চেষ্টা হিসাবে বেশ কিছুদিন আগে SWMC নামে একটা প্রতিষ্ঠানে CV জমা দিয়ে রাখছিলাম। হঠাৎ করেই ওখান থেকে একদিন ইন্টরভিউয়ের জন্য ডাকল, আর আমি সহ ৬ জনের চাকরী হল। কিন্তু তখনো আমার মাস্টার্স শেষ হয়নি তাই ক্লাশ করার জন্য বুয়েটে যেতে হত নিয়মিত।

এর কিছুদিন পরে একদিন বদরুজ্জামান স্যার (বর্তমানে প্রফেসর) আমাকে ডেকে একটা প্রিন্টেড ইমেইল দিয়ে বলল যে, এখানে অ্যাপ্লাই কর, কাউকে কিচ্ছু বলার দরকার নাই, আমি রিকমেন্ড করে দেব। আর স্টেফানও তোমাকে রেকমেন্ড করবে, কাজেই হয়ে যাবে। ওটা ছিল সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য একটা সামার ক্যাম্পের জন্য, ওখানে মূলতঃ পোস্ট গ্রাজুয়েট ছাত্রদেরকে টেকসই উন্নয়নের (Sustainable development) উপর ২ সপ্তাহ প্রশিক্ষন দেবে। বাসায় এসে অনলাইনে আবেদন করলাম।

(.....চলবে)

শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০০৭

ডায়লগ!

ঘটনা-১
রাজাঃ আনি আনি, তোর কপালোত ক্যা অক্ত?
রাণী (ডায়লগ ভুলে গেছে!)ঃ অক্ত নোয়ায় অক্ত নোয়ায় আজা, অং অং।

ঘটনা-২
অভিনেতা (ডায়লগ ভুলে গেছে!)ঃ স্টেজোত উঠিয়া দেখনু সামিয়ানাখান ফাড়া; তার মইধ্যে দেইখনু মুই আকাশের চান তারা ..... ...

(বৃহত্তর রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়)

শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০০৭

নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র!

বাড়ীর দরজা জানালা ঠিক করাতে হবে; গৃহকর্তা কাঠের খোঁজে আছেন। এমন সময় কাজের লোক খবর নিয়ে এল ---

কাঁয় বা কৈছিল্, কার বা বাড়িত্, কয়খান বা, কিসেরো বা তক্তা আছে ... ...

--- বুঝুন ঠেলা!


_____________________________________________________________
কমেন্ট:
====================================================
মাহবুব সুমন বলেছেন :
২০০৭-০১-১৯ ১৫:৫২:২২

কেনে বাউ ?
====================================================
ভাসমান বলেছেন :
২০০৭-০১-১৯ ১৬:২৮:২৩

হু
====================================================
তাহসিন সাঈদা মুন বলেছেন :
২০০৭-০৪-০২ ১২:২৭:৪৪

(হাসি)
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৭-০৪-০২ ১২:৩০:০২

তিনতলায় আমি বসি। বিলডিংটা ছয়তলা। তারউপরে সিড়ি ঘর আছে। সিড়ি ঘরের উপরে একটা মোবাইলের টাওয়ারও আছে। সেইখানে গিয়া দেখলাম বেশ দূরে কিছু মেঘ দেখা যাইতেছে। আপনার পোস্টটা সেই মেঘের উপর দিয়া উইড়া গেল! ধরতে পারলাম না।
====================================================
অতিথি বলেছেন :
২০০৭-০৪-০৭ ০৩:১৪:০১

@কৌশিক: (অবাক)



বাংলা তরজমা দিলাম:

কে যেন বলেছিল... কার বাড়িতে যেন .... কয়টা জানি .... কিসের জানি (কোন গাছের কাঠ) ..... তক্তা (সাইজ করা কাটা কাঠের টুকরা) আছে!!!



- তথ্যপ্রদানকারী শুধু জানেন কাঠ পাওয়া যাবে ... তবে....

১. তথ্য কার কাছে পেয়েছে তা ভুলে গেছে

২. কোথায় কাঠ আছে তা ও জানেনা

৩. কি পরিমানে পাওয়া যাবে তা ও জানেনা

৪. কোন প্রজাতির কাঠ (সেগুন নাকি কাঠাল...) তা ও অজানা
====================================================
ফরিদ বলেছেন :
২০০৭-০৪-০৭ ০৪:২৩:২৮

কঠিন!
====================================================

মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০০৭

স্বাস্থ্যকর চিল্লাচিল্লি (কাকরাইল মসজিদের কথা বলছি না!)

(পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিলো)

চিল্লালে বা চিৎকার করলে যে মানসিক চাপ কমে (স্ট্রেস রিলিজ) তা বেশ আগে থেকেই জানতাম। দুই একবার জোরে চিল্লায়ও দেখছি দারুন কাজে দেয় .... ... সমস্যা একটাই – চারপাশের লোকজন কেমন কেমন করে জানি তাকায়!

জাপানে প্রথম যখন এসেছিলাম তখন আমার অফিস/ল্যাবের কাছেই দেখতাম প্রতিদিন বিকালে প্রায় একঘন্টা একদল ছেলে মেয়ে দল বেধে চিল্লায়। প্রথমে খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম, আর তখন ভাষাটাও বুঝতাম না মোটেও। পরে দেখি আরেক কারবার, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে (আমি আসছিলাম অক্টোবর মাসে) এখানে ইউনিভার্সিটি ফেস্টিভ্যাল হয় ... ... ওখানে এক পাশে এই দলটা দাড়িয়ে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে চিল্লিয়ে যায়। ধরেন প্রতি মিনিটে ১ বার ; পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, হটাৎ একসাথে ২০/২৫ জন হো...... করে চিল্লায় উঠল --- পিলা চমকায় উঠে!

মাঝে মাঝে মনে হয় ওদের সাথে গিয়ে চিল্লাই – মনটা ফুরফুরা লাগবে। কিন্তু পারিনা ... ... ভাষাগত সমস্যা রয়ে গেছে। কিন্তু খুব চিল্লাতে ইচ্ছা করে। বাসায় দুই একবার চিল্লাইছি ... ... কিন্তু বউ ভয় পায় – আবার প্রতিবেশি কমপ্লেন না করে বসে! ভাষাটা ভাল জানলে এখানকার আবাসিক এলাকার লিডারকে প্রস্তাব দিতাম সপ্তাহে অন্তত একঘন্টা চিল্লানোর জন্য ফ্রী করে দেয়ার জন্য – ঐ সময়ে যে কেউ কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে চিল্লায় আসতে পারবে। আর ইচ্ছা আছে যে, ভবিষ্যতে দেশের ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড কমিটিকে প্রস্তাব দিব – স্বাস্থ্যকর বাসার পূর্বশর্ত হিসেবে, প্রতিটি আবাসিক বিল্ডিংএ একটা করে সাউন্ডপ্রুফ রূম রাখতে হবে।

আরেকটা কথা চুপি চুপি বলে রাখি ... ... কাঁচের জিনিস ভাঙ্গলেও রাগ কমে - সত্য সত্যই দুইবার আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে দেখছি। সুবিধা হচ্ছে, শব্দ তেমন একটা বেশি হয় না; তবে সমস্যা একটাই – ভাঙ্গা টুকরাগুলো পরিস্কার করা। তবে ভাঙ্গাভাঙ্গির কাজটা নিজ মালিকানাধীন জিনিস দিয়ে হওয়া উচিৎ। আর ভাঙ্গার জন্য বেছে নিন ছোট সাইজের আর কম আসবাবযুক্ত ঘর – পরিস্কার করা সহজ হবে!

কাজেই আর দেরী নয় – ভাঙ্গা যায় এমন পুরানো/বাতিল কাঁচ/সিরামিকস এর তৈজসপত্র আলাদা করে রাখুন; রাগ উঠলেই ঠুস্ ।