রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০০৮

যুদ্ধের কী দরকার!

একটা সময় যখন কোথাও হত ভাতের কষ্ট,
তেড়ে গিয়ে অন্য দেশে করতো জীবন নষ্ট।
লুট করতো গরু বাছুর, ধন-সম্পদ যত,
মারতো মানুষ, পুড়তো বাড়ী, অনেক হতাহত।

লুট করেও অনেকের হয়না অভাব শেষ,
ধরে নিয়ে যেত, দিতো দাসের বেশ।
আমেরিকার কথাই ধরো, ওবামার ঐ দাদা,
আফ্রিকাতে বাড়ি তাঁদের, দাস ছিল একদা।

ভারতের পাশে আছে, দেখো সোনার দেশ,
ইংরেজরা ছুটে এল, করলো সবই শেষ।
নিজের দেশে নাই সম্পদ, নাই তো থাকার জায়গা,
কী করা তাই, করায় হেথায় নীল চাষ আর মংগা।

করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে, সম্পদ যা ছিলো,
সবই তখন জাহাজ চেপে, ঐদেশেতে গেলো।
এদেশেরই রক্ত চুষে, চকচকে হয় দেশ,
ধন-সম্পদ সবই গেল, মরে সবাই শেষ।

এখন দেখ আবার তাঁদের, অভাব তাড়া করে,
নিজ দেশেতে নাই সম্পদ, রক্ত চক্ষু ঘোরে।
মারবে নাকি লোক আবারো? করবে কি লুটপাট?
অভাব তাঁদের একার নাকি! অন্যেরা কি বাদ?

খুনাখুনি, নীলচাষী, দাসের দিন শেষ,
তাতে কি, সমস্যা নাই, চলো বাংলাদেশ।
মোবাইল ফোনের ব্যবসা, লাভ কত জানো!
বছর শেষে শত কোটি ডলার গুনে আনো।

আরো আছে কত শত, ঠকানোর উপায়,
পেপার-খেলায় পয়সা ঢালো, কে আর ঠেকায়!
ঘুষ দিলে সবই ভুলে দিবে কাপড় তুলে,
যতই মারো, প্রতিবাদ করবে নাতো ভুলে।

তাইতো বলি, অবস্থাটা বদলেনি একটুও,
একই ভাবে যাচ্ছে সবই, একটু ভাবিও।
লোক মেরে আর লাভ কি বল! কয় টাকা আর পাবে!
তার চে ভাল এইভাবেই, সবই তাঁদের হবে।

সম্পদ চাও? এই যুগে ভাই দরকার নাই যুদ্ধ,
ব্যবসা কর ইচ্ছামত, লোকগুলো সব বুদ্ধু।
মারামারি, কাটাকাটির দিনতো কবে শেষ,
সবাই এসে শোষন করে সোনার বাংলাদেশ।

=====

কেমন করে ঠেকাবো তা, সেটাই শুধু খুঁজি,
থাকবো ঝকমকে দেশে, চোখ না খুলেই বুঝি।
আপাতত মাথায় কিছুই খেলছে নারে ভাই,
সবে মিলে মানুষের সচেতনতা বাড়াই।

বেশির ভাগই যদি বুঝি ওদের চতুরতা,
জেগে জেগে ঘুমালে কেউ. পিন দিয়ে দেব গুতা।

তারপরেতেও ঘুমানোর ভান করে থাকলে,
শত মাথা কুটলেও কভু না জাগলে ...
ধরে দেব কষে মাইর ...
লাথি, চাটি দুই চাইর
গদি থেকে নামাবো
ঘুম সব ভাঙ্গাবো।

(প্রজন্ম ফোরামসচলায়তনে প্রকাশিত)

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০০৮

হাতুড়ের লিনাক্স দর্শন এবং একটি আমন্ত্রণ

স্মৃতিচারণ:

২০০৬ সালে আমার প্রাক্তন ল্যাবের পিসি আপগ্রেড করা হইলো। আগে একটা পিসিতে উইন্ডোজ ৯৮ ছিল। ওটার ব্রাউজারটাকে ইংরেজি করে নিয়েছিলাম .... বাকী সবগুলো, এমনকি আমার ব্যবহারের জন্য দেয়া ল্যাপটপ/ডেস্কটপ সবগুলোই জাপানিতে। নতুন ভার্সনগুলোতে জাপানি থেকে ইংরেজি করার কোন অপশনই ছিল না। ওঁয়া ওঁয়া

এতে ব্রাউজ করায় সমস্যা না হলেও অনেকরকম অপশন ব্যবহার করতে পারতাম না। অফিস এবং অন্য সফটওয়্যারগুলো হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ব্যবহারের কষ্ট স্বীকার করে নিয়েছিলাম কিন্তু জাপান থেকে বাইরের পৃথিবীর জানালা ব্রাউজারে এই রকম অত্যাচার মনটা বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছিল। তাই অনেক ভেবে মাথায় বুদ্ধি আসলো যে কোন একটা ইংরেজি ব্রাউজার ডাউনলোড করলে কেমন হয়! ফায়ারফক্সের নাম জানতাম ... ওটা ফ্রী দেয় জেনে ডাউনলোড করে ফেললাম। আহ্ কি শান্তি।

ধীরে ধীরে ওপেন সোর্স এবং পাইরেসি সম্পর্কে এবং এর থেকে সম্মানের সাথে বেরিয়ে আসার এক দারুন উপায় জানতে পারলাম। হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছা আর কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে ওয়েবের নির্দেশমতো ফ্রী লিনাক্সের একটা অপারেটিং সিস্টেম (উবুন্টু) ডাউনলোড করে সিডি রাইট করে (প্রথমবার ডেটা হিসেবে বার্ণ করে ভুল করেছিলাম) তারপর সেটা দিয়ে সেকেন্ড স্ট্রীট থেকে কেনা বাসার পুরানা ডেস্কটপটা চালিয়ে দেখলাম ... কোন কিছু ইনস্টল ছাড়াই সিডি থেকে বুট করিয়ে সেটা দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করেছি কোন কিছু সেটআপ ছাড়াই। বউ দেশে বেড়াতে এসেছিল, আর মাইক্রোসফট পাইরেসি ধরার জন্য একটা কিল সুইচ নামক উইজেট ছাড়ার ঘোষনা দিল। তাই কয়েকদিন ওয়েবের ইনস্ট্রাকশন ঘেটে সাহস করে বাসায় ওটা ইনস্টল করে ফেললাম।

বাসায় কম্পিউটারে সমস্ত কাজই আরামে এবং নিশ্চিন্তে (পাইরেসি এবং ভাইরাস ফ্রী) করতে পেরে, আমি এবং পরবর্তীতে বউ .... উইন্ডোজ কী তা-ই ভুলে গিয়েছিলাম প্রায় (ল্যাপটপে জাপানি সিস্টেম ছিল)।

সে এক বিরাট কাহিনী ... সেবার উবুন্টু ৬.১০ এর রিলিজ ক্যান্ডডেট (রিলিজ ক্যান্ডিডেটের অর্থও জানতাম না) নামিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রতিশ্রুতিমত প্রতি ছয়মাসে একবার করে উবুন্টু আপগ্রেডেড ভার্সান ছেড়েছে। সাল এবং মাস মিলিয়ে ভার্সানগুলোর নম্বর সহজেই মনে রাখা যায়; যেমন ৬.১০ = ২০০৬ সালের অক্টোবরে রিলিজ। ধারাবাহিকভাবে ৭.০৪, ৭.১০, ৮.০৪ এবং সবশেষে ৮.১০ রিলিজ হল সময় মতই।

৮.১০ বাদে সবগুলো ভার্সানই ব্যবহার করেছি। আমার বাসায় সেই অক্টোবর ২০০৬ থেকে উবুন্টু চলছে (জাপানে এবং দেশে)। এর মধ্যে ডেস্কটপগুলোর সুবিধা বেড়েছে অাশ্চর্যরকম। লিনাক্সকে টেকিদের জিনিষ বলে যারা ভয়ে সরে আছে ... তারা এটার সুবিধা, গ্রাফিক্স এবং ব্যবহার বান্ধবতা (কোন রকম কমান্ড ছাড়াই, ক্লিক করে সবকিছু) দেখে রীতিমত টাশকি খাবে বলেই আমি মনে করি।

আমন্ত্রণ

আগামী ২১শে নভেম্বর, শুক্রবার বিকাল ৪টা-৭টা সময়ে বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজারস্ এলায়েন্সের উদ্যোগে উবুন্টু ৮.১০ ইন্ট্রাপিড আইবেক্সের রিলিজ পার্টি অনুষ্ঠিত হবে।

কোথায়: প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, কনফারেন্স হল (রুম ৪০১), বাসা১১/এ, রোড-৯২, গুলশান-২, ঢাকা ...... গুলশান ২নং মোড় থেকে আমেরিকান এম্বেসির/ নতুনবাজারের রাস্তায় এগোলে অ্যারোমা/বি.এফ.সি/এইচ.এস.বি.সির পাশের রাস্তায় (গুগল ম্যাপ)।

ফ্রী ডিভিডির এবং অনুষ্ঠান বিষয়ে বিস্তারিত: এখানে

আগ্রহী সকলে আমন্ত্রিত।

সংযোজন: কিছু কপি-পেস্ট দিলাম

উদ্ধৃতি

গত ৩০শে অক্টোবর জনপ্রিয় উবুন্টু লিনাক্সের সর্বশেষ সংস্করণ ৮.১০ ইন্ট্রাপিড আইবেক্স রিলিজ হয়েছে। বাংলাদেশের লিনাক্স অনুরাগীদের সাথে এই নতুন ভার্সনের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এবং সেই সাথে ব্যবহার করতে ইচ্ছুকদের হাতে উবুন্টু লিনাক্স সরবরাহের জন্য আগামী ২১শে নভেম্বর উবুন্টু ইন্ট্রাপিড আইবেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজারস্ এলায়েন্স ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

আপনি যদি লিনাক্স ব্যবহারে আগ্রহী, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারেননি, অথবা কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না তবে এই অনুষ্ঠান আপনার জন্য। উক্ত অণুষ্ঠানে উবুন্টু লিনাক্স ইনস্টল, কনফিগারেশন, মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট, নেটওয়ার্কিংসহ বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হবে। সেই সাথে আপনি উবুন্টু আইবেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে আপনার কাঙ্খিত উবুন্টু/কুবুন্টু সিডি/ডিভিডি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন নিবন্ধনের জন্য এখানে যান।
নিবন্ধন আগে আসলে আগে ভিত্তিতে। (প্রথম ১০০ জন নিবন্ধনকারী বিনামূল্যে উবুন্টু ডিভিডি পাবেন)
(আপনি যদি আসলেই আসেন কেবল তখনই নিবন্ধন করুন অযথা অন্যকে সুবিধাবঞ্চিত করবেন না)

অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয়বস্তু:

১) বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষীতে ওপেনসোর্স ও লিনাক্স
ওপেনসোর্স ও লিনাক্স কি এবং কেনো। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষীতে ওপেনসোর্স ও লিনাক্সের ভূমিকা

২) উবুন্টু লিনাক্স ইনস্টল ও ডেস্কটপ পরিচিতি
উবুন্টু লিনাক্স ইনস্টলেশন (মূলত পার্টিশনিং অংশ) এবং ডিফল্ট ডেস্কটপ পরিচিতি

৩) প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার পরিচিতি
ওপেনঅফিস পরিচিতি, গিম্প

৪) ইন্টারনেট সংযোগ ও নেটওয়ার্কিং
মডেম, মোবাইল, ল্যান অথবা pppoe সংযোগ স্থাপন

৫) হার্ডওয়্যার ডিটেকশন ও ড্রাইভার ইনস্টলেশন
স্ক্যানার, প্রিন্টার, মোবাইল, ক্যামেরা প্রভৃতি হার্ডওয়্যার সংযোজন ও পরিচালনা

৬) মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট
কোডেক ইনস্টল থেকে প্লেয়ার পরিচিতি

৭) ওয়াইন ও ক্রসওভার
ওয়াইনের মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত কিছু এ্যাপ্লিকেশন কনফিগার ও চালানো

৮) ডেস্কটপ কাস্টোমাইজেশন
বাংলা লোকালাইশেসন, থিম, কম্পিজ ফিউশন,

৯) সিস্টেম/এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সফটওয়্যার
স্যাইন্যাপটিক, টার্মিন্যালসহ কিছু এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা

১০) ভার্চুয়ালাইজেশন (ভার্চুয়াল বক্স/ভিএমওয়্যার)
ভার্চুয়াল মেশিনে উইন্ডোজ অথবা অন্য কোন ডিস্ট্রো পরিবেশন

১১) গেমস্
লিনাক্স গেমস্, ওয়াইন, ক্রসওভার লিনাক্স গেমস্

১২) স্বেচ্ছাসেবক কর্মকান্ড
কিভাবে লিনাক্স ও ওপেনসোর্সের প্রচার সম্ভব। অনুবাদ, প্রচার, লেখালেখী প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা।

শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৮

আইজাক আসিমভের ফাউন্ডেশন

আইজাক আসিমভ (১৯২০-১৯৯২) নামে আমেরিকান-ইহুদী একজন বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর ফাউন্ডেশন নামক একটা বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লিখেন। উইকিপিডিয়ায় Issac Asimov শিরোনামে খুঁজলেই এই প্রতিভাবান বিজ্ঞান লেখকের কীর্তি জানতে পারবেন। অধুনা আই.রোবট সিনেমাটাও ওনার গল্প।

ফাউন্ডেশন এত জনপ্রিয় হয় যে, এটার অনেকগুলো সিকুয়েল বেরিয়েছে। একটা সায়েন্স ফিকশন হওয়া সত্ত্বেও এটার কাহিনী (বাংলা অনুবাদ) আমার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল ভিন্ন কারণে। প্রতিটি লেখকের মনেই একটি বক্তব্য থাকে যেটা প্রকাশ করার জন্য উনি বেছে নেন একটি কাহিনী, যেখানে কাহিনীর পরতে পরতে তাঁর দর্শনটা বিকাশ লাভ করে। সায়েন্স ফিকশনের লেখক এ জন্য বেছে নেন কাল্পনিক একটা জগত, অনেকটা রূপকথার মতই। আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যেও অনেক দর্শন রূপক গল্পের আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যেটা না বুঝে অনেকেই সারফেসের অর্থ নিয়ে লম্ফঝম্ফ করেন দেখা যায়।

ফাউন্ডেশনের প্রায় ৪০০ বছর বিস্তৃত এই কাহিনীতে একদল অত্যন্ত প্রতিভাবান বিজ্ঞানীকে প্রচলিত শাসকদের বিরোধীতা করায় গ্যালাক্সীর প্রান্তে একটি বিবর্ন গ্রহে নির্বাসন দেয়া হয়। গ্রহটিতে খনিজ পদার্থের আকাল ... ফলে বিজ্ঞানীরা বাধ্য হয়েই এমন সব জিনিষপাতি আবিষ্কার করেন যেগুলো কম রিসোর্স ব্যবহার করে তৈরী হয়। যেমন- প্রচলিত দুই তলা ভবনের সমান নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের ক্ষমতা ওরা হাতের তালুতে এঁটে যায় - এমন আকারের যন্ত্রে নিয়ে আসেন।

এই গ্রহের প্রতিবেশি ৩টি গ্রহগুলোও গ্যালাক্সীর কেন্দ্র থেকে বহুদুরে হওয়াতে অনুন্নত (অজ পাড়া গাঁ)। চমৎকার কাহিনীর মধ্যে দেখা যায় যে বিজ্ঞানীদের গ্রহ থেকে অন্য গ্রহগুলোতে প্রযুক্তির পণ্য সরবরাহ করা হয় - কিন্তু বলা হয় যে ওগুলো দেবতাদের গ্রহ থেকে এসেছে ঐশ্বরিক শক্তি নিয়ে। লোকজনও সেগুলো বিশ্বাস করে, এদের নিযুক্ত ধর্মনেতারা সেই ধর্মের বাণী ছড়ায়, শাসকরা প্রযুক্তির সুবিধা একটু বেশি পায়। মাঝে মাঝে ধর্ম নেতাদের সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর জন্য দেবতাদের গ্রহে এনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একবার তাঁদের গ্রহ দখল করতে পাঠানো যুদ্ধজাহাজ (স্পেস-শাটল)ও সেটার চালক ফিরিয়ে নিয়ে উল্টা নিজেদের উপর আক্রমন করে .... কারণ সেটার চালকও ছিল দেবতাদের গ্রহে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, আর সেই স্পেসশাটলটাও দেবতাদের গ্রহেই মেরামত করে দেয়া হয়েছিল। আক্রমণের নির্দেশ পেয়ে শাটলের ক্যাপ্টেন অবাক হয়ে যায়, বিদ্রোহ করে .... যেই দেবতারা তাঁকে এ্যাত সম্মান খ্যাতি দিয়েছে, রাজা কিনা তাদেরই আক্রমণ করতে বলে! কাহিনী এগোতে থাকে। এভাবে সফলভাবে অন্য গ্রহগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে রেখে চলেছিল প্রায় একশতক।

এরপর, উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরী দূর্দান্ত দ্রব্যগুলো বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন দুরবর্তী গ্রহে এবং কেন্দ্রে অবস্থিত শাসকগোষ্ঠির কাছাকাছি জায়গাতেও বিভিন্ন রিসোর্সের বিনিময়ে বিক্রি শুরু করে। যেমন, জ্বলজ্বল করে তিনমাস জ্বলবে এমন পুতির মালার বা আংটির বিনিময়ে সোনা বা অন্য দামী খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি নিয়ে আসা শুরু হয়। এই ব্যবসায়ীরা এতই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে এক পর্যায়ে বিজ্ঞানী গ্রহের শাসনক্ষমতাও এদের হাতে চলে আসে। বিভিন্ন কুট কৌশলে এরা অন্য গ্রহ থেকে সম্পদ নিজেদের গ্রহে আনা শুরু করে। কাহিনী এমন পর্যায়েই শেষ হয়ে যায়।

এই কাহিনীতে রূপকের মাধ্যমে একটা দারুন দর্শন তুলে ধরেছেন লেখক। সেটা হল এই দুনিয়ার রাজনীতি কীভাবে চলে তার সরলীকৃত চিত্র বা মূলনীতি। পেশিশক্তি দিয়ে দখলের যুগ শেষ হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের অস্ত্র বা উপায় ছিল ধর্ম। ধর্ম আনুগত্য আনে .. ফলে অনেক বেশি অনায্য সুবিধা আদায় করা সহজ হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এটার বদলে শোষনের মূল শক্তি হয়ে যায় বাণিজ্য। কাহিনীটার দর্শনটা বুঝলে অনেকগুলো জিনিষ মনের মধ্যে ফকফকা হয়ে যায়।

আমরাও দেখে আসছি যে ধর্মকে শোষণের বা নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসতে .... ইউরোপে চার্চের ক্ষমতা ছিল অসাধারণ, যে কোন ফতোয়া চার্চ থেকে বের হলে সেটা সকলে অন্ধ বিশ্বাসে পালন করতো। শাসকরা চার্চ নিয়ন্ত্রণ করতো /করে। দ্যভিঞ্চিকোড সিনেমায় চার্চের একজন ধর্মোন্মাদ খুনি ছিল (সাদা চুল) ... ওর ভয়ংকর পতিত অবস্থা দেখলে মনে হয় বাংলাদেশর এরকম ধর্মোন্মাদ কর্মীরাও এর ব্যতিক্রম নয়।

ধর্ম মানুষকে উন্নত সত্ত্বার কাছে সারেন্ডার করতে শিখায়, বিনা প্রশ্নে কমান্ড পালন করতে শিখায়। নিয়ন্ত্রন করার জন্য এটা খুবই জরুরী। তাই বিনাবাক্য ব্যয়ে বা যৌক্তিকতার প্রশ্ন করাকে ইদানিং ধর্মে নিরূৎসাহিত করা হয়। নিরূৎসাহিত হয় জ্ঞান চর্চা। ইবনে সিনার যুগে সম্ভবত ধর্মকে নিয়ন্ত্রনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়নি। তাই তখন ছিল জ্ঞানচর্চা ... আর এখন যে কোন আবিষ্কারের পরে - ওটা ১৪০০ বছর আগেই কোরআনে বলা আছে বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা দেখা যায়; তারপর ঐ তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হলে হুজুরদের টিকিটিও দেখা যায় না। জ্ঞানচর্চা করলে যে মানুষ নত হবে না ... তাই জ্ঞান চর্চা এখন নিষিদ্ধ। কোন প্রশ্ন করা যাবে না - এটাই এখন ধর্মের চর্চা।

বিনাবাক্য ব্যয়ে নির্দেশ পালন শিখায় আর কোথায়? সেটা সেনাবাহিনীতে। তাই নিয়ন্ত্রন করতে চাইলে ধর্ম আর সেনাবাহিনীর উপর সওয়ার হওয়াই সবচেয়ে সুবিধাজনক। জানেন তো, দেশের রাজনীতিতে বেসিক এই কৌশলগুলোই সফলভাবে প্রয়োগ করে জামাত। অন্য দলগুলো যখন পেশীশক্তি আর আদর্শের কথা বলে, জামাত তখন পেশীশক্তির পাশাপাশি ধর্মের আনুগত্যও দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে অনেকদুর। তাইতো মুক্তচিন্তা নিরূৎসাহিত হয়, মওদুদী হাদিস নিয়ে প্রশ্ন করা নাজায়েজ হয়।

উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠিগুলোর মত শুধু প্রাথমিক দুটো উপায়েই খেলছে না সকলে। শেষ এবং সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো - অসম বাণিজ্য করে, IMF, WTO ইত্যাদি বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন করে কীভাবে শোষন করছে সেটা অন্য কিছু বিশ্লেষনে দেখেছেন, বিশেষ করে দিনমজুর ভাইয়ের বিশ্লেষনটা খুবই চমৎকার মনে হয়েছে।

তাই দেশের অবস্থায় ঘুরে ফিরে ফাউন্ডেশনের কাহিনীরই সফল মঞ্চায়ন বলে মনে হয়। শুধু সেখানে কামিয়াবীরা ছিল নায়ক, আর এখানে ভিলেন।

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০০৮

গুড়াদুধ রাখার জরিমানা - উদোর পিন্ডি কার ঘাড়ে?

খবরে দেখলাম/শুনলাম মেলামাইন পাওয়া গেছে এমন গুড়াদুধ রাখার দায়ে কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করেছে RAB এর ম্যাজিস্ট্রেট। প্রশ্নটা তখনই জাগে কেন?

সরকার ক্ষতিকারক দুধ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বাস্তবেও কার্যকর করতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর(নাকি বুদোর চিন্তিত ) ঘাড়ে চাপানোর মত করে ফেলছেন বলেই মনে হচ্ছে।

এর আগেও খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য জরিমানা হয়েছিল ... সেখানে আপত্তি করি নাই বরং মানসিক সমর্থন ছিল, কারণ, ক্রেতার জন্য ক্ষতিকারক জিনিষগুলো ঐ ব্যবসায়ীরাই স্বেচ্ছায় বানিয়েছিল। কাজেই ওরাই শাস্তিযোগ্য।

কিন্তু গুড়াদুধের মেলামাইনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। আমি মনে করি না যে ব্যবসায়ীরা এরকম একটা ক্ষতিকর জিনিষ জেনেশুনে তাঁদের দোকানে এনেছেন/রেখেছেন। বরং আমদানীকারক ব্যবসায়ী হয়তো জেনেশুনে কাজটি করেছে (তেজষ্ক্রিয় গুড়াদুধের পর্বটা মনে পড়ে যায়)।

বার্ড ফ্লু-র সময় আক্রান্ত মুরগী মেরে ফেলায় সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। এরকম ভাবে ব্যবসার জন্য দুধ এনে যখন দেখা গেল ঠকিয়েছে এবং ক্ষতিকারক জিনিষ গছিয়ে দিয়েছে, তখন সেটা ফেলে দিয়ে সরকারের কি উচিত না আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদেরকে যুক্তিসংগত ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং জেনেশুনে ক্ষতিকারক পদার্থ সরবরাহকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা?

দুষ্ট কিছু ব্যবসায়ী হয়তো এখান থেকেও অন্যায় সুবিধা আদায় করতে চাবেন .... গুড়োদুধ বলে চুন ফেলে দিয়ে ক্ষতিপুরণ নেবেন। কিন্তু তাই বলে যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে কি অন্য সব ব্যবসায়ী তাঁদের আর্থিক ক্ষতি বাঁচাতে অন্যের বাচ্চা মারতে দ্বিধা করবে? দেশের ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে এই পথে ঠেলে দেয়ার জন্য আসল দায়ী কে হবে?

কারো পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য পোস্ট করছি না। আবার এটা ভাবারও কোন কারণ নাই যে আমার সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ ব্যবসায়ী। একই ভাবে ঐ দুধও আমি বাজারে চাই না।

(হুট করে লেখা অগোছালো পোস্ট - এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী)

(সচলায়তনে প্রকাশিত)