শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

জল ও জঙ্গলের কাব্যতে বেড়ানো

১।
বেড়ানোর সুযোগ সবসময় আসে না। কিছু মানুষের হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়াতে এবং বিশেষ বিবেচনায় বেড়ানোর সুযোগ হয়ে গেল। মিনিবাস ভাড়া করে হৈ হৈ করতে করতে চলে গেলাম "জল ও জঙ্গলের কাব্য"তে। সময়টা ছিল অক্টোবরের শেষ শুক্রবার (২০১৫)। ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু দেশে সরকারের কৃপায় নিরাপত্তার খাতিরে স্বাভাবিক উপায়ে ফেসবুক দেখা যাচ্ছে না; তাই এবার এখানে শেয়ার করলাম।

২।
ভুল জায়গা টায়গায় নাকাল হয়ে শেষমেষ যখন পৌঁছুলাম তখন প্রায় সকাল ৯টা বাজে। ঢোকার পরেই গাছপালা দেখে মন ভাল হয়ে যায়।

৩।
ভেতরে যতটা সম্ভব গ্রাম্য ছাপ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর চারিদিকে পানিতে টুইটম্বুর বর্ষাকাল হল এটাতে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময়। সম্ভবত সেই বর্ষার কাদার কথা চিন্তা করেই ভেতরে কিছুদুর পর্যন্ত হাঁটার পথটুকু পাকা করে রেখেছে। পুকুর পাড়দিয়ে আরেকদিকে এগোতেই একটা টেবিলে শরবত নিয়ে স্বাগতম জানালো। তারপর এগিয়ে যেতে বললো। গাছের ছায়ায় গায়কের দল গান করছে। অলসভাবে কুকুর শুয়ে রয়েছে -- সবকিছুতেই একটা সহজ ধীরস্থির ভাব।
৪।
আমাদেরকে একটা কটেজ দেখিয়ে বললো, এটা আপনাদের কটেজ। এভাবে সমস্ত ভিজিটরদেরকেই তাঁদের জন্য আলাদা স্থান দেখিয়ে দেয় এখানে - সেটা তিন-চার জনের ফ্যামিলি হোক কিংবা বড় গ্রুপই হোক। গাছপালার ভেতর থেকে একটা খোলা উঠানে বের হয়ে ডানদিকের প্রথম কটেজটাই আমাদেরকে দিয়েছিলো। কটেজের ভেতরে তিনটা খাট, সোফা সেন্টার টেবিল, খাওয়ার টেবিল, কাউচ সবই ছিল। তবে মাথার উপর ঝুলানো বোতলে ভরা বাতিটা সবচেয়ে আগে দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো।


৫।
সোফাটোফাগুলো যথেষ্ট আরামদায়ক। কটেজে একটা শক্তিশালি প্যাডস্ট্যান্ড ফ্যানও ছিল। দুপুরে খাওয়ার পর সকলে যখন অন্যদিকে হাঁটতে গিয়েছিলো, তখন আমি একফাঁকে কয়েকমিনিট ঘুমিয়েও নিয়েছিলাম বলে মনে পড়ে। কটেজের সবদিকেই খোলা ঝাপের জানালা, মাটি দিয়ে লেপা মেঝে।

৬।
খোলা চত্বরে বের হয়ে ডানদিকের প্রথম কটেজটাই আমাদেরকে দিয়েছিলো। এক দফা ফুটবল খেলা চলছে!

৭।
খোলা চত্বরের অপর দিকে হল খাওয়া-দাওয়া রান্নার কেন্দ্র। এখান থেকেই তিনবার প্রতি কটেজে একেবারে বুফে সাজিয়ে দিয়ে আসে। ঢেকিতে চালের আটা বানিয়ে সেটার রুটি আর চিতুই তৈরী করে গরম গরম সার্ভ করে। লাকড়ির চুলায় রান্না হয়। ওপাশে আরেকটা ঘর হল চা-খোরদের স্বর্গ।

৮। এই সেই ঢেঁকি যে কিনা স্বর্গে গেলেও ধান ভানে ... ... (বিকালে অবসর সময়ে ছবিটি তোলা হয়েছিলো)

৯।
চা-খোরদের স্বর্গ। দুই পাশে দুই ড্রাম ভর্তি দুধ চা আর রং চা। মাঝে কফির ব্যবস্থা -- চাইলেই বানিয়ে দেয়। যত খুশি, যতবার খুশি নিন ... ... বুফে সিস্টেম বলে কথা।

১০।
রান্না বান্না শেষ। শেষ আমাদের দুপুরের খাওয়া দাওয়াও।

১১।
এটাই সম্ভবত সকালের রুটি, পিঠার কারখানা!

১২।
জায়গাটা বুফে সরবরাহ কেন্দ্র বলে মনে হচ্ছে।

১৩।
খাওয়া দাওয়ার ছবি নাই। তবে সেগুলো খুব ভাল ছিল, প্রচুর পরিমানে এবং সবগুলো আইটেম খেয়া দেখার মত জায়গা আমার মত ভুড়িয়ালের পেটেও ছিল না। বেড়াতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু বেশি ইয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাই একটু ঘুরে ফিরে দেখাই চারপাশটা

১৪।
ঐ পাড়ে লাল শাক আর মূলা ছিল ক্ষেতে। আমার মেয়ে সম্ভবত এই প্রথম মাটিতে হওয়া তরিতরকারী দেখলো (ছবিতে নাই)।

১৫।
আব্বাজান জিন্দাবাদ ... ...

১৬।
গুগল ইমেজে এই পুকুরটা পুরাই শুকনা দেখায়। এখনকার ম্যাপের ইমেজটা জানুয়ারী ২০১৪তে নেয়া বলে হয়তো।

১৭।
 খোলা চত্বরের দোলনার সামনে থেকে দক্ষিনের দিকে তাকালে এমন দেখায়। বর্ষাকালে আসার লোভ জাগাচ্ছে। গুগল ইমেজে সব সবুজ ক্ষেত-ক্ষামার!

১৮।
খানিকটা বামে তাকালে ... আসলে চত্বর থেকে সোজা তাকালে সেটা দক্ষিন-দক্ষিন-পূর্ব দিক হবে ....

১৯।
সামনের খোলা নিচু জায়গায় নেমে পেছন ফিরে চাইলে কেমন দেখায় ... ...

২০।
আর যদি অন্যদিকে তাকাই। বর্ষাকালে এটা একটা ছোট্ট দ্বীপ হয়ে থাকে নিশ্চয়ই। বাঁশের চৌকি বানানো আছে, তাতে গদি আর বালিশও দিয়ে রেখেছে ... আহা কি শান্তি!

২১।
বাচ্চালোগ খুশি থাকলে বড়দের ডিস্টার্ব দেয় না মোটেও ... ...

২২।
মেয়ে বান্দরামি করলে মানা করা করি নাই: ডেয়ারিং বাপ; ডরাইলেই ডর ... ...

২৩।
নতুন স্টাইল শিখলাম কিন্তু ... ...

২৪।
পদ্মপুকুরের ঘাটের পাশে টিউব দেয়াই ছিল। নিয়ে নামলেই হয়।


২৫।
জায়গাটা ঢাকার অদুরেই পূবাইলে। নিচে ম্যাপ দিয়ে দিলাম। গুগল ম্যাপে সার্চ করলে ভুল জায়গা দেখায়, আসল লোকেশন আরেকটু উত্তরে (আরো ২ কিমি) -- ম্যাপে দেখিয়ে দিলাম। খরচ প্রতিজন ১৫০০/- সারাদিন খাওয়া-দাওয়া (নাস্তা, লাঞ্চ, বিকালে রিফ্রেশমেন্ট) এবং সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে। বাচ্চাদের সম্ভবত ৮০০/-। আলাদাভাবে চমৎকার টয়লেট ও গোসলখানার ইউনিট রয়েছে (কলে পানি, কমোড, প্যান, টাইলস বসানো, বেসিন, আয়না, শাওয়ার ইত্যাদি)।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০১৫

কম্পুতে হাতুড়ে ডাক্তারীর গপ্পো

গত শুক্রবার (১২-জুন-২০১৫) সকালে ঘুম থেকে কেবল উঠেছি। ভাবছি ছুটির দিনটায় আরেকটু গড়াগড়ি দিব। এই মুহুর্তে নিচ থেকে আমার সম্বন্ধি এসে হাজির (একই বিল্ডিংএ থাকি)। হেল্প দরকার। জার্মানী থেকে কেনা ওর প্রিয় আসুস ল্যাপটপটা স্টার্ট নিচ্ছে না। নিচের মত ম্যাসেজ দিচ্ছে।
Windows failed to load because the system registry file is missing or corrupt. Status:Oxc000014C
অপারেটিং সিস্টেম ভিস্তা।
মুখে বললাম "হয়তো সমস্যা তেমন কিছু না ... .." কিন্তু ঐ স্টার্ট নরমালি আর কি কি জানি অপশন কোনোটাই কাজ করে না।
একটু ভাব নিয়ে বললাম  -- "আমার পরিচিত অনেক জিনিয়াস পোলাপাইন আছে কিন্তু তারা আবার উইন্ডোজে এখন সাপোর্ট দেয় কি না জানিনা ... ..."। তারপর মিন মিন করে বললাম "দেখি হাসপাতালে যাওয়ার আগে- নেটে কোনো সমাধান পাওয়া যায় কি না।" আমার ল্যাপটপ খুলে সেটা থেকে গুগলে এই এরর মেসেজ লিখে সার্চ দিয়ে সহজেই এই সমস্যায় আক্রান্ত আরো মক্কেল খুঁজে পেলাম এখানে। সেখানে সমাধানও দেয়া আছে।
সমাধান হল বুট সিডি দিয়ে বুট করে কি কি জানি করতে হবে। কিন্তু এদিকে মুশকিল হল ওর ল্যাপটপের সিডি ড্রাইভই নষ্ট। আর সেই অরিজিনাল ভিস্তার রিকভারি সিডি জার্মানী থেকে আসার সময় নিয়ে আসছে কি না, নাকি কোথায় সেটা জার্মানী থেকে ফেরার ৫ বছর পর কি আর মনে আছে। তাই বিকল্প অন্য পদ্ধতি খুঁজতে মন দিলাম।
ঐ সমস্যা নিয়ে যে মেইল লিস্ট সেটার নিচের দিকে দেখলাম BartPE বুট সিডি নামে একটা জিনিষ ফার্গুসন নামে একজন এমএস-এমভিপি বানিয়েছেন যেটা দিয়ে গ্রাফিকালি এই পরিস্থিতি মেরামত করা সম্ভব। কয়েকজন সেই মেইল লিস্টে তাকে থ্যাংকসও দিয়েছে। যদিও সেইটা মাইক্রোসফট এফিলিয়েটেড না তবুও ভাবলাম ঐ ওয়েব সাইটে গিয়ে সেই বুট সিডি দিয়ে ট্রাই দেব নাকি। যেহেতু সিডি ড্রাইভ নষ্ট তাই ওটাকে ইউএসবি বুটেবল করতে হবে। কিন্তু ঐ সাইটে যতগুলো ডাউনলোডেবল ফাইল সবগুলোই উইন্ডোজ ভিত্তিক exe ফাইল, যা সরাসরি সিডি রাইট করায় দিবে মনে হল। অথচ আমি খুঁজতেছিলাম ইমেজ ফাইল -- যা নাই।
কাজেই মনে হল, আইডিবিতে যাওয়া দরকার। তবে ওখানে আবার কার পাল্লায় পড়ে পুরা সিস্টেমের তেরোটা বাজানোর আগে ওর ডেটা ব্যাকআপ নেয়া উচিত। ওর পেনড্রাইভ থেকে কিছু জায়গা খালি করে সেটাতে নপিক্স  বুটেবল করলাম। তারপর সেটা দিয়ে ওর ল্যাপটপটা বুট করে তারপর ওর ফাইলগুলো C থেকে D ড্রাইভে সরিয়ে রাখলাম। আর আরো কিছু ফাইল অন্য একটা ইউএসবি ড্রাইভ দিয়ে একটু একটু করে ওর অন্য ল্যাপটপটায় সরিয়ে নিতে থাকলাম। এই নতুন ল্যাপটপটা ১৪ ইঞ্চি আর হালকা ডেল -- কিছুদিন আগে আমিসহ গিয়ে কিনেছিলাম। কিন্তু আসুসটা বিশালাকার সম্ভবত ১৫.৬ ইঞ্চি  ডিসপ্লে, আর নাম্বার প্যাড আছে কী বোর্ডে। ওর প্রিয় আসুসটা বাসায় থাকে, কম প্রিয়, হালকা ও ছোট ডেল ল্যাপিটা অফিসে নিয়ে যায়।
ফাইল কপি আর ট্রান্সফার হতে বেশ ভালই সময় লাগে। এর মধ্যে হঠাৎ মাইক্রোসফটের সাইটের প্রথম সমাধানটার এক জায়গায় কিভাবে জানি চোখ গেল ... সেখানে লেখা ছিল উইন্ডোজ ভিস্তা সিডি থেকে কমান্ড লাইন ওপেন করে (সম্ভবত লাইভ বুট) সেখানে ... ব্লা ...  ব্লা ... ব্লা ... .... তারপর নিচের কমান্ডগুলো
a.    CD C:\Windows\system32\config\RegBack
b.    copy SYSTEM.OLD C:\Windows\system32\config\SYSTEM
দেখে ভাবলাম "ওঃ এই কথা! এখন তো নপিক্স দিয়ে লাইভ বুটে আছে। গ্রাফিকালিই তো কাজটা করে দিতে পারি।" সুতরাং, কমান্ড লাইনে অকুতোভয় পুরাতন জিএনইউ-লিনাক্স ব্যবহারকারী হিসেবে গ্রাফিকাল সিস্টেমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম  wink। মূল সিস্টেম ফাইলটাকে রিনেম করে অন্য ড্রাইভে সরালাম আর ব্যাকআপ থেকে ওল্ড সিস্টেম ফাইলটা নিয়ে ঠিকমত নাম দিয়ে সেটাকে সেখানে বসালাম। তারপর মেশিন রিস্টার্ট দিতেই সব আগের মত ঠিক। মাঝখান থেকে শুধু শুধু ডেটা সরানোর কষ্টগুলো করা ... ...


cool

====
প্রজন্ম ফোরামে আমার এই লেখা দেখে একজন ভাই বললেন, আমজনতা কোড দেখে ঠুস করে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে; তাই ঐ দুইলাইন কোডের তরজমা দিয়ে দিলাম এখানে।
সংযুক্তি: কোডের তরজমা
এগুলো সম্ভবত ডস কমান্ড
প্রথম লাইনে CD C:\Windows\system32\config\RegBack দিয়ে C ড্রাইভের Windows ফোল্ডারে system32 --> config --> RegBack ফোল্ডারে প্রবেশ করা হয়েছে। CD কথাটার অর্থ চেঞ্জ ডিরেক্টরি। অর্থাৎ বলা হচ্ছে চেঞ্জ ডিরেক্টরি টু ঐ লোকেশন। আবার, "cd .." (cd স্পেস দুইটা ডট)মানে হল প্যারেন্ট ডিরেক্টরিতে যাও ইত্যাদি।
পরের লাইনে সেই লোকেশন থেকে একটা ফাইল কপি করে অন্য লোকেশনে পেস্ট করা হয়েছে। সিনটেক্স হল "copy একটা-ফাঁকা-স্পেস সোর্স-ফাইলের-নাম একটা-ফাঁকা-স্পেস ডেস্টিনেশন-ফাইলের-নাম"
যেহেতু আগের লাইনের কমান্ড দিয়ে সোর্স ফাইলের ফোল্ডারে প্রবেশ করা হয়েছে তাই সোর্স ফাইলের নামের সাথে আর লোকেশনের পাথ (C:\Windows\system32\config\RegBack) দিতে হয় নাই। পুরা লাইনটার মানে দাঁড়াচ্ছে এই জায়গার SYSTEM.OLD নামক ফাইলটা কপি করে C:\Windows\system32\config\ ফোল্ডারে SYSTEM নামে পেস্ট করা হচ্ছে

শনিবার, ৬ জুন, ২০১৫

এমন একটা ছাতাওয়ালা বাইক কিনতে মন চায়

ঢাকা শহরের জ্যাম কার না চেনা। বিভিন্ন কারণে অকারণে জ্যাম লেগেই থাকে। একেতো রাস্তার তুলনায় অনেক বেশি গাড়ি, তার উপর আছে ভিআইপিদের প্রটোকলের কারণে জ্যাম। ফুটপাথ পরিষ্কার হয় না --- সেথায় বাজার বসে, মানুষ রাস্তায় == জ্যাম: আর এই জ্যাম থামার নয়, ফুটপাথ পরিষ্কার হওয়ার নয়, কারণ এই ফুটপাথ থেকে প্রতিদিন পুলিশের কামাই আড়াই কোটি টাকা!

যা হোক, মটরসাইকেলে গেলে শহরের যানজটের মধ্যেও দেখা যায় দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় (প্রায়োরিটি বাসলেনে চলা বাসের চেয়েও ৫ গুন কম সময়ে)। কারণ এটা চিপা-চুপা দিয়ে আগে যেতে পারে। ফুয়েল এফিশিয়েন্সিও গাড়ির তুলনায় অনেক ভাল - কাজেই জিনিষটা পরিবেশবান্ধবও বটে। তবে অসুবিধা হল, নিরাপত্তা। দুই চাকার কারণে ব্যালেন্স হারাতে পারে যে কোনো অসতর্ক মূহুর্তে। তবে সেটা না হলেও অসুবিধা বিশেষত বৃষ্টিতে, আর প্রখর রোদে সাধারণ গাড়ির তুলনায় একটু বেশি রোদই মাথায় নিতে হবে -- আর তুলনাটা যদি এসি গাড়ির সাথে করা হয় ... ...। তবে এই সব কষ্ট দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আনন্দে মেনে নেয়া যায়।

মটরসাইকেলের সুবিধা অসুবিধাগুলো শুধু আমার জানা আছে তা না -- পৃথিবীর গাড়ি নির্মাতাগণও এই বিষয়ে সচেষ্ট। তাইতো মার্কেটে এই অসুবিধাগুলো দুর করতে কত রকম মনলোভা স্কুটি .... ...

হোন্ডা জাইরো ক্যানোপি মাত্র ৫০ সিসি'র একটা স্কুটি বাইক -- যা জাপানে দারুন সফল। এটার পেছনের দিকে দুটো চাকা, সামনে একটা। এছাড়া সামনে একটা বিরাট উইন্ডস্ক্রিন আর ছাদ আছে। ১৯৮২ সাল থেকে এটা জাপানে চলছে। পেছনের দিকে বড় বক্স বা ক্যারিয়ার লাগিয়ে এগুলোকে শহরের কুরিয়ার বা ডেলিভারি ভ্যান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


 তবে নিচেরটার মত বিটকেল সুন্দর জিনিষের উপযুক্ত এখনও আমরা হইনি কিন্তু ...

টয়োটা আই-রোড হল আরেক কাঠি সরেষ। মটরসাইকেলকে পুরা গাড়ি বানিয়ে দিয়েছে ... ২০০৯ সালে এই তিন চাকার মটরসাইকেল-গাড়িটা টয়োটা কয়েকটা দেশে টেস্ট করেছে। কোনদিন জানি হুট করে মার্কেটে আসার ঘোষনা দিয়ে দেয়। এই গাড়িটা পুরা ব্যাটারিতে চলে, এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার - অর্থাৎ আমি কিনলে জ্যাম-ট্যাম সহ অন্তত দুইদিন এক চার্জে অফিস যাতায়াতে চালাতে পারবো মনে হয়। আরেকটা ব্যাপার হল, গাড়িটার ব্যালেন্স অটোমেটিকভাবে ঠিক থাকে। আর একটা গাড়ির পার্কিংএ এই সাইজের জিনিষ তিনটা পার্ক করে রাখা যায়।


নিশান (নিস্সান) সবসময়ই একটু হেভি ডিউটি গাড়ি বানায় বলে আমার ধারণা। এই বিষয়েও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে তাদের ল্যান্ড-গ্লাইডার গাড়িটি চার-চাকার ব্যাটারী চালিত গাড়ি, তাছাড়া এটার পেছনে আরেকজন বসতে পারবে, দুইজনের দুইটা সিট - হেলান দেয়ার জায়গা সহ। এছাড়া মোড় ঘোরার সময়ে এটা অটোমেটিকভাবে কাইত হয়ে ব্যালেন্স ঠিক রাখে। ২০০৯ সালে এটার প্রোটোটাইপ দেখালেও এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর নাই।


এই সরু গাড়ির ক্যাটাগরির মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে Tango ইলেক্ট্রিক কারকে সবচেয়ে সফল বলে মনে করা হয় - গুগলের সের্গেই বিনসহ অনেক হাই প্রোফাইল লোকই এই চার-চাকার ট্যাংগো ব্যবহার করে। বিভিন্ন রেঞ্জের ব্যাটারী ব্যবহার করে এই কারটা প্রতি চার্জে ৪০ - ২০০ মাইল যেতে পারে। আমার অবশ্য এটার শেপটা ততটা পছন্দ হয় নাই। Tango Electric Car লিখে গুগল করলে এটার ছবি, ভিডিও দেখতে পারেন।

জাপানিগুলো দেখার আগে ইটালির একটা স্কুটি বেশ পছন্দ হয়েছিলো এটার নাম ADIVA। শুরুতে Benelli নামক মেকারের সাথে থাকলেও পরে Adiva নামে আলাদা কোম্পানি হয়েছে। এদের কয়েকরকম পাওয়ারের (১২৫, ১৫০, ২০০, ২৫০ cc) সামনে দুই-চাকাওয়ালা থ্রি-হুইলার এবং নরমাল টু-হুইলার আছে -- তবে ইউটিউবে ভিডিও দেখে থ্রি-হুইলারটা ব্যালেন্সের দিক দিয়ে দূর্দান্ত মনে হল। দুইজন বসার উপযোগী স্কুটিটার ছাদটা কনভার্টিবল - ইচ্ছা করলে পেছনের বক্সে গুটিয়ে রাখা যায়।




এগুলো ছাড়াও BMW, Piaggio Vespa সহ আরো অনেক মেকারই এই ধরণের ছাদওয়ালা ওয়েদারপ্রুফ মটরসাইকেল বানাচ্ছে। এমনকি একটা কোম্পানি দেখলাম জাইরোস্কোপ ওয়ালা টু-হুইলার কার-মটরসাইকেল বানাচ্ছে -- মটরসাইকেলের মত দুই চাকা হলেও যেটাকে পাশে জোরে ধাক্কা দিলে সোজা থাকে।

মটরসাইকেল সম্পর্কে আমার আগ্রহ আগে থেকে খুবই কম -- কারণ এটা ডেঞ্জারাস বাহন (যদিও এক সময়ে ১৮৫ সিসি মটরসাইকেল চালিয়ে অফিস করতে হয়েছে)। তবে হঠাৎ ইউটিউবে এগুলো দেখে বেশ আগ্রহ জন্মালো। তবে শেষ পর্যন্ত এমন একটা চালানোর সুযোগ কোনোদিন হবে কি না জানিনা।

আর, আগেই বলে রাখছি, এগুলোর দামের কথা আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। নাম দিয়ে সার্চ দিলে এগুলোর দাম পাওয়া যায় - বিদেশে কেউ কিনতে চাইলে সেটা কাজে লাগবে। কিন্তু ঐ গাড়ির মেকারগণ গবেষণা আর টেকনোলজি খাটিয়ে বানিয়ে লাভটাভ সহ ওগুলোর যা দাম রাখে, বাংলাদেশের সরকার দয়া করে ওগুলো চালানোর কোনোরকম কিছু রাস্তা বানিয়ে আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতাভারে আবদ্ধ করে তার সেই দামের চেয়ে বেশি ট্যাক্স নিয়ে নেন -- কাজেই ... ... ...

বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৫

পরিবেশ প্রকৌশলীর খারাপ (গরীব) ক্যামেরার হিজিবিজি

১। গত ২৪ জানুয়ারী ইপিজেডে গিয়েছিলাম। মনে আছে সেই লেখাপড়া মার্কা পোস্টটা? -- সেদিনই এই ছবি তোলা, ওখানকার পাওয়ার স্টেশনের ছাদ থেকে। বেশি জানতে ইচ্ছা করলে গুগল ম্যাপকে 23.947858, 90.275323 লিখে সার্চ দেন।
https://lh3.googleusercontent.com/LQxZxTM8nteoRkNm7Ih-PKmHh8aQOpUd6NfadgQcCNM=w732-h549-no
২। ঐ একই জায়গা থেকে ইপিজেডের দিকে শট। আমাদের বাহন জলপাই বাসটাও দেখি ছবিতে আছে।
https://lh6.googleusercontent.com/-DHQG5LQCDOs/VRNCGLjsJyI/AAAAAAAAD1k/v2990ZTIA9s/w732-h549-no/20150124_161458.jpg
৩। অনলাইনে রকমারী ডট কম থেকে প্রথম (এবং শেষ) বই কেনা। শেষেরটা বই না -- পেপার টেকনোলজি সহ কিন্ডেল: সেখানে চাঁদের পাহাড় (সিনেমা হয়েছে) ডাউনলোড এবং কনভার্ট করা।
https://lh4.googleusercontent.com/-tBpNMO_LFaU/VRNCGqECFOI/AAAAAAAAD1s/HlNmfg_33IU/w732-h549-no/20150219_221335.jpg
৪। কনস্ট্রাকশন করতে গিয়ে রাস্তার অর্ধেকই দখলে। আশা করি তাদের যথাযথ অনুমতি নেয়া আছে। ছবিটা বনানি পোস্টঅফিসের পাশের লোকেশনের। ছবির উপরে (একটু বামের দিকে) ওখানকার স্টার-কাবাবের অংশ বিশেষ দেখা যাচ্ছে।
https://lh4.googleusercontent.com/-xVd6QGZyV_E/VRNCIENcWpI/AAAAAAAAD10/sb0iR-RCGyU/w732-h549-no/20150305_150259.jpg
৫। জঙ্গলে মঙ্গল -- বাসার গলির মাথায়। দেখলেই যেতে ইচ্ছা করে -- একদিন হয়তো গিয়ে হাজির হব।
https://lh4.googleusercontent.com/-dgc2vqc9zXI/VRNCJ0rC7-I/AAAAAAAAD2E/wH8hnZ-4DCE/w732-h549-no/20150314_084001.jpg
৬। মেঘনা ব্রীজের উপর, বাসের জানালা থেকে ভাটির দিকে ক্লিক। ২৪-মার্চ-২০১৫ এই যাত্রায় গরমে সিদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।
https://lh6.googleusercontent.com/-FyPwFMhRioQ/VRNCJeojZsI/AAAAAAAAD2A/LxtofrsPl4Q/w732-h549-no/20150324_092203.jpg
৭। এর আগে এটার থ্রি-ডি ইমেজ পোস্ট করেছিলাম (প্ল্যানিং ধাপে)। এবার আসল জিনিষের পালা ... প্রায় কমপ্লিট: ২৪-মার্চ-২০১৫ টেস্ট রান শুরু করলাম। জায়গার নাম: লাকসাম --> মনোহরগঞ্জ --> বচইড়। গ্রামের পাইপ লাইন।
https://lh4.googleusercontent.com/-PfeTsJdrKsA/VRNCLYpaeYI/AAAAAAAAD2M/K2s5WRe8Tro/w732-h549-no/20150324_130040.jpg
৮। একই জিনিষ। টাওয়ারের মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটায় উঠে এদিকে নেয়া। আগের ছবিটা ডানের ঐ পুকুরের ভেতরে নেমে নেয়া। গাছপালার পাতা থেকে রক্ষা করতে এই ইউনিটগুলোর উপরে ঢাকনা দেয়া হয়েছে।
https://lh4.googleusercontent.com/-YYRzjyk76VE/VRNCNJFwRmI/AAAAAAAAD2Y/UkrdKTj61Zs/w732-h549-no/20150324_131841.jpg
৯। এটার উপরে উঠে ঢাকনা সরিয়ে একটু উঁকি দিয়ে দেখলাম। এটার নাম টিউব-সেটলার।
https://lh3.googleusercontent.com/-3335Xm-KPsY/VRNCNLFIacI/AAAAAAAAD2c/NehOMW9gULU/w412-h549-no/20150324_163047.jpg
১০। এটা আরেকটা। টেস্ট রান পরেরদিন শুরু করার কথা। জায়গা: লাকশাম --> মনোহরগঞ্জ --> মির্জাপুর
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjexiZHQ69yYUNZgTXoLUI9Z7MPVnwgp6VqD_YKjtyQVZhmZS3TdLZTUVlkzhKPljhv5_nwk9IFOZfNlnDRCqXbNDUU-NdHT5JjacMe_cFygktOYud6k9J_hBHuysQnkEGgoNmaO0Ymk7nT/w732-h549-no/20150324_172104.jpg
১১। অফিসের ছাদের রেনোভেশন চলছে। শেষ হলে আরও সুন্দর হবে, কারণ লেকের ভিউটা ভালভাবে দেখা যাওয়ার জন্য ক্যান্টিনের কিচেন সরিয়ে ফেলা হয়েছে + আরও কিছু মেজর কাজ করা হয়েছে।
https://lh6.googleusercontent.com/-7TU6MazohMw/VRNCPgPSizI/AAAAAAAAD2s/-Uh2VGjg2vE/w732-h549-no/20150325_170404.jpg
১২। এই ধরণের পাইপ ফিটিং আগে সামনাসামনি দেখিনি। তাই ফটুক তুলে রাখলাম। এগুলোর দাম লোহার পাইপ ফিটিংয়ের চেয়ে বেশি।
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh7MLvS7C2_JvoHQ_PweFuV07l3MBZAyX1Hvl3Gjxk9TlDPAEOW4aPBwAgE-jxcTtmnyxIrowNBDyO-J_aEI9636I11F-Ee1fR81G_VmwwGdPbiCdjbiwEKOL7LukDWk-c_PdAQReXoXp2K/w732-h549-no/20150325_170414.jpg
সবগুলো ছবিই মোবাইলের গরীব ক্যামেরায় তোলা। আজেবাজে (!) ছবি ধৈর্য ধরে দেখার জন্য আগাম ধন্যবাদ।

সোমবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ফুলের কাঁটা, ফুলের পিন

এদেশে খুব বেশিদিন হয়নি ফুল একটা বৃহৎ বাণিজ্য। ব্যক্তিগত ভাবে উপহার হিসেবে (দেয়া কিংবা নেয়া) আমি ফুলের চেয়ে খাবারদাবার বেশি পছন্দ করি। আমার এই পছন্দের ক্রমটা নিজের জন্য বেশ ক্ষতিকারক হয়েছে -- অধমের বিশাল ভূঁড়ি দেখলেই সেটা অনুভব করবেন। গত ভ্যালেন্টাইন ডে'তে আমার কলিগগণ একটা সারপ্রাইজ গিফট দিলেন আমাদের দুজনকে (মিয়া-বিবি); আমার জন্য কেক আর ওনার জন্য ফুলের ঝুড়ি (banquet)। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি: আমরা মিয়া-বিবি একই যায়গায় চাকুরী (মাস্টারি) করি।

ফুলের ঝুড়িতে অনেকগুলো বিশালাকৃতি লাল গোলাপের কুঁড়ি ছিলো, যেগুলো তাদের পুষ্ট স্বাস্থ্যের জন্যই হয়তো ভীষন রকম দৃষ্টি আকর্ষক ছিলো। বাসায় আসার সময়ে সেই ঝুড়ি নিয়ে আসা হল, কারণ পরের ৩ দিন তথাকথিত হরতাল ডেকেছে ... ...। বাসায় ফুলগুলোকে আলাদা করে নিয়ে একটা ফুলদানিতে পানিতে রাখা হল।

আজ সকালে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ফুলের কাণ্ডে একটা তার পেঁচানো। আরেকটু ভাল করে লক্ষ্য করে দেখি ফুলগুলোতে পিন ফুটানো। বৃতির অংশগুলো পাপড়িগুলো সহ পিন দিয়ে আটকানো, অনেকসময় টিস্যূ পেপার যেভাবে স্যান্ডউইচের সাথে টুথপিক দিয়ে গাঁথা থাকে সেভাবে।

ফুলটিকে ফুটতে না দিয়ে এর আকৃতি আধাফোটা কুঁড়ির মতই রাখতে হয়তো এই আয়োজন। দুটো ফুল থেকে পিনগুলো খুলে দিলাম -- গুনে দেখি ১১টি পিন বের হয়েছে। ভালমত না দেখলে এই তার বা পিনগুলোকে দুর থেকে বোঝা যায় না। খুলে দেয়ার আধাঘন্টার মধ্যেই ঐ দুটি কুঁড়ি থেকে অর্ধপ্রষ্ফুটিত ফুলে পরিণত হল ... ..

অনেকরকম ভাবনা মাথার মধ্যে খেলে যাচ্ছে -- যাকে কিনা বলে মিশ্র অনুভুতি।
- বিভিন্ন কাব্যিক বর্ণনার সুন্দর নিষ্পাপ ফুল আর নেই। এটা পিনকুশন হয়ে গিয়েছে।
- বাণিজ্য ফুলের স্বাভাবিকতা নষ্ট করছে। কেএফসির চিকেন যেমনভাবে উৎপন্ন হয় বলে কিছু গা-শিউরানো ছবি ও ভিডিও দেখেছিলাম -- এই ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই মনে হল।
- খুবই বুদ্ধিদীপ্ত অভিযোজন। এভাবে ফুলের আকৃতি অটুট থাকবে। কোনো অনুষ্ঠানে ফুল ব্যবহৃত হলে সেটা পুরা সময় জুড়ে ঠিক যেমন চাই তেমন থাকে।
- বাণিজ্যের কাছে প্রকৃতির স্বাভাবিকতা হেরে যাচ্ছে বারবার। জোর করে স্বাভাবিকতায় অস্বাভাবিকতা আরোপ করা হচ্ছে। আর আমরাও প্রকৃতির স্বাভাবিকতার চেয়ে আরোপিত সৌন্দর্যে বেশি আপ্লুত হচ্ছি .... ....

যা হোক এই পর্যন্ত পড়ে থাকলে হয়তো ভাবছেন -- ব্যাটা এক ফুল নিয়ে কত ত্যানা প্যাঁচাইতে পারে! ... ...

মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৫

+8801731216486

+8801731216486 (+৮৮০১৭৩১২১৬৪৮৬) -- জ্বী ভাই, এটা আমার ফোন নাম্বার যা ২০০৭ সাল থেকে ব্যবহার করছি। কিন্তু, একজন মানসিক বিকারগ্রস্থ ছাত্র আমার এই নম্বরটা বিভিন্ন অশালীন ছবি/ভিডিও'র সাথে একাধিক মেয়ের নামের সাথে ভূয়া একাউন্ট থেকে পোস্ট করেছে (ঐ একাউন্টটাও একটা মেয়ের নামে)। আমি সেই ছাত্রকে চিনি, আর নিশ্চিত ভাবে জানি সে-ই দায়ী, কারণ এর আগে তাকে একজন ছাত্রীকে হ্যারাস করার জন্য শো-কজ করা হয়েছিল + আমার নাম্বারের সাথে ঐ ডিপার্টমেন্টের আরেকজন সহকারী প্রক্টরের নাম্বারেও সেইম ঘটনা ঘটেছে। ইতিপূর্বে এই দুজনের নাম্বার দিয়েই বিভিন্ন বিক্রয়ের সাইটে অদ্ভুদ বাইসাইকেল, ট্যাব ইত্যাদি বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন গিয়েছিলো (এরকম সাইটের সিকিউরিটির জন্য এইটা বিরাট আজিব ব্যাপার) - যা হোক সেসব সাইটের কমপ্লেন করে সেগুলো বন্ধ করা গেছে। কিন্তু ইউটিউবে কমপ্লেন করলে তারা বলেছে কমিউনিটি গাইডলাইন ভঙ্গ হয় নাই!

এটার ইফেক্টে এখন প্রতিদিন ও রাতে গড়ে শ-খানেক ফোন আসে -- তার অনেকগুলো আবার অদ্ভুদ নাম্বার থেকে (১১১, ১২৩৪৫ ইচ্ছামত নম্বর বসানো) অর্থাৎ সফটওয়্যার দিয়ে করে। আর কিছু আসে সরাসরি কান্ট্রি কোড সহ -- যার ম্যাক্সিমাম মিডলইস্ট থেকে আসে -- যারা আমার কন্ঠস্বর শুনে আর কথা বলে না।

তাই, আমার ফোন মোটামুটি সবসময়ের জন্যই সাইলেন্স মোডে রেখেছি। মাঝে মাঝে মিসড্ কল লিস্ট দেখে পরিচিত নম্বরের কল মিস হলে কল ব্যাক করছি। যদি আপনার কল না ধরি, প্লিজ কল ধরতে না পারার অভব্যতাকে ক্ষমা করবেন। আর যদি সন্দেহ হয়, যে আপনার নাম্বার আমার ফোনবুকে নাই, তবে প্লিজ একটা SMS দিবেন -- আমি আপনাকে কলব্যাক করবো, ফোনবুকেও টুকে রাখবো।

শুক্রবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৫

পহেলা জানুয়ারীর ঘোরাঘুরি (২০১৫)

অফিস ছুটি বেশ কয়েকদিন। যদিও ছুটিটা নামকাওয়াস্তে - কারণ বাসায় বসে বসে অফিসের কাজই করতে হচ্ছে অবিরত (পরীক্ষার খাতা দেখা)। বাচ্চার স্কুলও বন্ধ -- এক মাসেরও বেশি লম্বা ছুটিতে বাসায় থেকে থেকে ওরও খারাপ লাগে। তাই ঠিক করলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা যাক। ১লা জানুয়ারী দিনটা মেঘলা হলেও তেমন ঠান্ডা ছিলো না, বরং ঘুরাঘুরি করার জন্য দারুন একটা না-গরম, না-ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল। রেডি হয়ে বের হতে হতে বিকাল। বাসার গেট থেকে বেরুতেই রিকশা পেলাম। সেটাতে করে গেলাম চারুকলা ইনস্টিটিউট। মেয়ে তো রিকশায় উঠে মা-কে বলছে, "জানো ওটার পাশে মিউজিয়াম আছে, তোমাকে দেখাবো"। মা তো অবাক, ও জানলো কি করে! কারণ গত ডিসেম্বরেই ওদের স্কুল থেকে মিউজিয়ামে নিয়ে এসেছিলো; তো সেদিন আমি ওখান থেকে ওকে নিয়ে চারুকলার বাইরে দিয়ে দেখিয়ে নিয়ে এসেছিলাম, আর এবার যাওয়ার সময় বলেছিলাম।
চারুকলার সামনে নেমেই চুড়িওয়ালা মহিলার শ-দুয়েক টাকার বিক্রি হল (থ্যাংকস টু মাই ওয়াইফ)। শহরে এপার্টমেন্টে থাকা বাচ্চারা অনেকটা ফার্মের খাঁচায় বড় হওয়া মুরগীর মত। এতটুকু প্রকৃতি, গাছপালা, ছাড়া-কুকুর পেয়ে সে অভিভূত। হৈ হৈ করে দৌড়ে বেড়াতে লাগলো এদিক থেকে সেদিক। একটা পাথর দেখে চিৎকার -- বাবা বাবা দেখো একটা পাথর!! উপরের ছবিটা চরুকলা ইনস্টিটিউটের দক্ষিন দেয়াল ঘেষে থাকা একটা বাচ্চাদের অংকন শেখানোর স্কুল। বউ মহা খুশি, কারণ তাঁর কাপড়ের রঙের সাথে ম্যাচ করা রঙে দেয়াল টইটুম্বুর। ছাদের উপরে বড়ই গাছ, আর পেছনে কলা গাছ সব মিলিয়ে দৃশ্যটা বেশ চমৎকার লাগছিলো।
জানিনা কে এই নোটিশটা লাগিয়েছে, কেন লাগিয়েছে। তবে এটা দেখলেই এর গোড়ায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলার একটা ইচ্ছা জেগে উঠবে মানুষের -- এই ভেবে যে "বাপরে! দশ টাকা দেয়া লাগবে --- কি না কি!" যা হোক, দাঁড়িয়ে বানানটা ঠিক নাই ;) ।
মেয়ে পোজ দেয়া শিখেছে বেশ ভালই!
ইয়ে, এটার ব্যাখ্যা ট্যাখ্যা নিজের মত বুঝে নেন। মেয়েকে খালি বলেছি একজন মা এক হাতে কলস আরেক হাতে বাচ্চাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ক্ষুদিপানা, কচুরীপানা তুলে নিয়ে মেয়ের হাতে দিলাম। দাড়ির মত শেকড় দেখিয়ে বলেছি যে আমাদের টবে যেই গাছগুলো আছে ওগুলোরও নিচে মাটিতে এমন শেকড় আছে।
ছবি তুলতে কোনো আপত্তি নাই ...
বের হতেই চাচ্ছিলো না। জোর করেই বের করতে হল। এরপর বউয়ের পরিকল্পনা ছিল সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে ঢুকবে। কিন্তু আমার মনে হল, মেয়ের ভাল লেগেছে গাছপালা -- ঐ লাইব্রেরীতে সে হয়তো মজা পাবে না। তাই রাস্তা পার হয়ে অন্যপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকলাম। ঢুকেই মনে হল খাবারের স্ট্রিট-মার্কেটে ঢুকেছি। গাছপালা আছে ঠিকই কিন্তু দুইপাশে অনেকগুলো স্ট্রিটফুডের দোকান। ওগুলো খেয়েও মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকে -- এই বিষয়টা আমাকে মানুষের সক্ষমতা সম্পর্কে বেশ ভাবায়।
হাঁটতে হাঁটতে পেছনে বউ গজর গজর করছে --- "এই মানুষটার রুচি আর ভাল হল না। কোথায় লাইব্রেরী যাব, তা না ধুলা বালুর মধ্যে নিয়ে এসেছে"। আমি একটু কনফিউজড (কারণ বউ তো আমিই পছন্দ করেছিলাম, আর আমাকে পছন্দ করেছিলো ও) আর না শোনার ভান করে হন হন করে সামনে আগাতে থাকলাম। কারণ মাঝে স্বাধীনতা স্তম্ভতে কখনো যাইনি; অন্যেরা গিয়ে ছবি দেয়, নেটে ছবি দেখি, কিন্তু নিজে কখনো যাইনি। আজ দেখেই যাব। ওয়াকওয়ে ছেড়ে ধুলাবালি, ছোট ওয়াল- এসবের উপর দিয়ে হাঁটতে পেরে মেয়ে মহা খুশি। এমন করতে করতে সামনে একটা শিখা জ্বলছে এমন জায়গায় পৌঁছুলাম। ডানে তাকাতেই চমৎকার চত্বর, গাছগুলো সাইজ মত কাটা। পরিচ্ছন্ন অবস্থায় দেখলে বিদেশ মনে হবে। তবে আমরা তো আর সভ্য হইনি, তাই এসব জায়গায় মোটরসাইকেল তুলে দেই ডাঁটে।
কাঙ্খিত স্বাধীনতা স্তম্ভে পৌঁছে সকলের মন নিমেষেই ভাল হয়ে গেল। অসাধারণ একটা দৃশ্য! যদিও নিচে মানুষজন, মটরসাইকেল, সাইকেল আর ঠোঙ্গা দিয়ে ময়লা করে ফেলেছে, কিন্তু ঢাকা শহরে এমন ভাবে চোখের সামনে খোলা আকাশ + দিগন্তে গাছ ইদানিং কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তার উপর আকাশে মেঘের সাজটাও অদ্ভুদ সুন্দর লাগছিলো।
মেয়ে অবশ্য ক্লান্ত, আমার বা ওর মায়ের শরীরে হেলান দেয়ার চেষ্টা করছে, তাই কোলে নিলাম। ব্যাগে ওর খাদ্য (বিরাটাকার চকলেট) ছিলো। পাশে বসে সেগুলো খেয়ে আবার ফুল চার্জে চাঙ্গা হয়ে গেল। এই ফাঁকে আমি অদ্ভুদ সুন্দর আকাশে আলোছায়াগুলো ক্যামেরায় ধরার চেষ্টা করতে লাগলাম।

উপরের দৃশ্যটা দেখে ভুলবেন না। ক্যামেরার চোখ একটু নিচু করে তুলতেই এমন দেখাবে। পরিচ্ছন্ন থাকলে অবশ্য এটাও অসাধারণ একটা দৃশ্য হত।

আকাশ দেখার বিলাসিতা।
ক্যামেরায় চোখে দেখা সৌন্দর্য আর রঙ ধরা যায় না। এরকম সময়ে ভাল ক্যামেরার জন্য আফসোস লাগে কিছুটা।
সভ্য হওয়ার আগেই সভ্যতা চাপিয়ে দিলে যা হয় আর কি! এখানে কিছুদুর পর পর স্থানের স্থাপত্যের সাথে মানানসই ডিজাইনে ওয়েস্ট বিন দেয়া উচিত বলে মনে হয়। আর প্রতি ঘন্টায় যদি ময়লা কুড়ানো টোকাই নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে এটা অসাধারণ সুন্দর একটা জায়গা হতে পারে। পরিচ্ছন্ন জায়গা দেখলে এমনিতেই বাকীরা সেটাতে ময়লা-ঠোঙ্গা ইত্যাদি ফেলতে দ্বিধা বোধ করবে, ডাস্টবিন খুঁজে ময়লা ফেলবে। ফলে পরবর্তীতে পরিচ্ছন্ন কর্মীগণ অন্য কাজেও সময় দিতে পারবেন।



শুধু ময়লাই না, জায়গায় জায়গায় ছাই দেখে বোঝা যাচ্ছে শীতে এখানে আগুনও জ্বালিয়েছে!!
ফেরত আসার সময়ে দুয়েকটা ছবি না তুললেই না। মুশকিল হল যখনই নীলিয়াকে পেছনে শিশুপার্ক দেখালাম, ও বলে "যেতে চাই"; ভেতরে মানুষ গিজগিজ করছে, প্রতিটা রাইডের সামনে লম্বা লাইন দেখে আমার ওখানে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না, কিন্তু যার জন্য বেড়াতে বের হওয়া সে-ই যখন আগ্রহী তখন আর কী করা! প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কাজেই অন্যপাশ দিয়ে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের /রমনার গেটের দিকে) বের হয়ে একটা রিকশা চড়ে সময় আর এনার্জি সংরক্ষণ করে দ্রুত শিশুপার্কে আসলাম।
লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যখন নীলিয়া আর ওর মা রাইডে চড়ছিলো, আমি তখন একটা ছাউনির মধ্যে বসে বসে অপেক্ষায় পপকর্ন চিবাচ্ছিলাম। একসময় ফোন দিয়ে বলে, যে নীলিয়া ট্রেনে চড়বেই - তাই ওরা লাইনে দাঁড়িয়েছে। লাইন এ্যাতটাই লম্বা যে ওদের সুযোগ আসার আগে অন্তত ৬-৭ রাউন্ড পার হয়ে যাবে। আমিও ওপাশে গেলাম। তারপর ওর মা বললো, "তোমার নিশ্চয়ই আমার মত হাইটফোবিয়া নাই -- তাহলে যাও - আমি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি তুমি মেয়েকে নাগরদোলায় চড়াও"। নাগরদোলায় চড়ার আগ পর্যন্ত ভালই ছিলাম। তারপর উচ্চতার ব্যাপারটা ভুলে থাকার জন্য মেয়েকে দুরে অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে আলো ছড়ানো স্বাধীনতা স্তম্ভ দেখাচ্ছিলাম। মেয়ে তো ভয় পাওয়ার মত বড় হয়নি, কাজেই ও আমাকে মাঝে মাঝে অভয় দিচ্ছিলো!!
ওখান থেকে আসার পরও অনেক সময় লাগবে ট্রেনে উঠতে। তাই ওকে নিয়ে নিচু জায়গাটায় (শুকনা পুকুরের মত) নামলাম, উঠলাম; একজায়গায় বসে পপকর্ন খাওয়ালাম। যা হোক অপেক্ষার পালা শেষে একসময় ওরা ট্রেনেও ঘুরে এল। ওর মায়ের সামনে লাইনে যেই হুজুর দাঁড়িয়ে ছিল, লাইন শেষ হওয়ার আগে আগে তার দলবল - বোরখাপড়া মহিলা, আন্ডা-বাচ্চার দল, আল্ট্রা-মডার্ন পোশাকের ছেলে মেয়ের দল মিলে গোটা ১৫ জন যোগ দিয়েছিলো!!
ট্রেন থেকে নামার পর বললাম "চলো পেছন দিক থেকে আলোকজ্জ্বল স্তম্ভটা দেখে তারপর বের হই"। যাওয়ার পথে দোলনা, ঢেকি (সী-সঅ), স্লিপার দেখে ওগুলোতে ওঠার কোর্সও কমপ্লিট করলো নীলিয়া! তারপর আরো একটা টিকিট থাকাতে আর লাইন না থাকাতে ফুলের মত ঘুরে যে রাইডটা সেটাতে উঠলো (এটা আজ ২য় বার); হয়তো "আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী" রাইডটাতেও আবার উঠতে মন চাচ্ছিলো। কিন্তু আমরা বের হয়ে আসলাম।
ভ্রমন শেষ করলাম খাওয়া দাওয়া দিয়ে। গেট থেকে বের হয়ে বেশ খানিকটা প্রাকৃতিক ফুটপাথ (মানে হাঁটার সময় খানা-খন্দ, ভেজা, ধুলা সব মিলিয়ে মনে হবে প্রাকৃতিক পাহাড় পর্বত দিয়ে হাঁটছেন) হেঁটে শাহবাগে এসে রিকশা নিয়ে বাসার কাছের জিনজিয়ান। রিকশায় মোটামুটি অবসন্ন হয়ে আমার ঘাড়ে মাথা ছেড়ে ঘুমালেও, এখানে এসেই নীলিয়া এদের বাচ্চাদের খেলার সেকশনে মহানন্দে আরেক দফা খেলাধুলা করলো। এমনকি খাওয়া দাওয়া শেষেও বের হওয়ার আগে মিনিট দশেক খেলার পর মোটামুটি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বের হয়ে এসেছিলো।
সব মিলিয়ে নীলিয়ার জন্য দিনটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে মনে হয়। কারণ ভোরে উঠে রাত থেকে আকাশ ফর্সা হয়ে সকাল হওয়া দেখেছে (অবশ্য ভোরে উঠেছিলো কাশতে কাশতে); তারপর যতক্ষন পেরেছে কার্টুন দেখে ড্রইংরুমেই ঘুমিয়েছিলো দুপুর পর্যন্ত। তারপরে তো ফ্রেশ হয়ে এই ঘোরাঘুরি।