শনিবার, ৬ জুন, ২০১৫

এমন একটা ছাতাওয়ালা বাইক কিনতে মন চায়

ঢাকা শহরের জ্যাম কার না চেনা। বিভিন্ন কারণে অকারণে জ্যাম লেগেই থাকে। একেতো রাস্তার তুলনায় অনেক বেশি গাড়ি, তার উপর আছে ভিআইপিদের প্রটোকলের কারণে জ্যাম। ফুটপাথ পরিষ্কার হয় না --- সেথায় বাজার বসে, মানুষ রাস্তায় == জ্যাম: আর এই জ্যাম থামার নয়, ফুটপাথ পরিষ্কার হওয়ার নয়, কারণ এই ফুটপাথ থেকে প্রতিদিন পুলিশের কামাই আড়াই কোটি টাকা!

যা হোক, মটরসাইকেলে গেলে শহরের যানজটের মধ্যেও দেখা যায় দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় (প্রায়োরিটি বাসলেনে চলা বাসের চেয়েও ৫ গুন কম সময়ে)। কারণ এটা চিপা-চুপা দিয়ে আগে যেতে পারে। ফুয়েল এফিশিয়েন্সিও গাড়ির তুলনায় অনেক ভাল - কাজেই জিনিষটা পরিবেশবান্ধবও বটে। তবে অসুবিধা হল, নিরাপত্তা। দুই চাকার কারণে ব্যালেন্স হারাতে পারে যে কোনো অসতর্ক মূহুর্তে। তবে সেটা না হলেও অসুবিধা বিশেষত বৃষ্টিতে, আর প্রখর রোদে সাধারণ গাড়ির তুলনায় একটু বেশি রোদই মাথায় নিতে হবে -- আর তুলনাটা যদি এসি গাড়ির সাথে করা হয় ... ...। তবে এই সব কষ্ট দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আনন্দে মেনে নেয়া যায়।

মটরসাইকেলের সুবিধা অসুবিধাগুলো শুধু আমার জানা আছে তা না -- পৃথিবীর গাড়ি নির্মাতাগণও এই বিষয়ে সচেষ্ট। তাইতো মার্কেটে এই অসুবিধাগুলো দুর করতে কত রকম মনলোভা স্কুটি .... ...

হোন্ডা জাইরো ক্যানোপি মাত্র ৫০ সিসি'র একটা স্কুটি বাইক -- যা জাপানে দারুন সফল। এটার পেছনের দিকে দুটো চাকা, সামনে একটা। এছাড়া সামনে একটা বিরাট উইন্ডস্ক্রিন আর ছাদ আছে। ১৯৮২ সাল থেকে এটা জাপানে চলছে। পেছনের দিকে বড় বক্স বা ক্যারিয়ার লাগিয়ে এগুলোকে শহরের কুরিয়ার বা ডেলিভারি ভ্যান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


 তবে নিচেরটার মত বিটকেল সুন্দর জিনিষের উপযুক্ত এখনও আমরা হইনি কিন্তু ...

টয়োটা আই-রোড হল আরেক কাঠি সরেষ। মটরসাইকেলকে পুরা গাড়ি বানিয়ে দিয়েছে ... ২০০৯ সালে এই তিন চাকার মটরসাইকেল-গাড়িটা টয়োটা কয়েকটা দেশে টেস্ট করেছে। কোনদিন জানি হুট করে মার্কেটে আসার ঘোষনা দিয়ে দেয়। এই গাড়িটা পুরা ব্যাটারিতে চলে, এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার - অর্থাৎ আমি কিনলে জ্যাম-ট্যাম সহ অন্তত দুইদিন এক চার্জে অফিস যাতায়াতে চালাতে পারবো মনে হয়। আরেকটা ব্যাপার হল, গাড়িটার ব্যালেন্স অটোমেটিকভাবে ঠিক থাকে। আর একটা গাড়ির পার্কিংএ এই সাইজের জিনিষ তিনটা পার্ক করে রাখা যায়।


নিশান (নিস্সান) সবসময়ই একটু হেভি ডিউটি গাড়ি বানায় বলে আমার ধারণা। এই বিষয়েও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে তাদের ল্যান্ড-গ্লাইডার গাড়িটি চার-চাকার ব্যাটারী চালিত গাড়ি, তাছাড়া এটার পেছনে আরেকজন বসতে পারবে, দুইজনের দুইটা সিট - হেলান দেয়ার জায়গা সহ। এছাড়া মোড় ঘোরার সময়ে এটা অটোমেটিকভাবে কাইত হয়ে ব্যালেন্স ঠিক রাখে। ২০০৯ সালে এটার প্রোটোটাইপ দেখালেও এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর নাই।


এই সরু গাড়ির ক্যাটাগরির মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে Tango ইলেক্ট্রিক কারকে সবচেয়ে সফল বলে মনে করা হয় - গুগলের সের্গেই বিনসহ অনেক হাই প্রোফাইল লোকই এই চার-চাকার ট্যাংগো ব্যবহার করে। বিভিন্ন রেঞ্জের ব্যাটারী ব্যবহার করে এই কারটা প্রতি চার্জে ৪০ - ২০০ মাইল যেতে পারে। আমার অবশ্য এটার শেপটা ততটা পছন্দ হয় নাই। Tango Electric Car লিখে গুগল করলে এটার ছবি, ভিডিও দেখতে পারেন।

জাপানিগুলো দেখার আগে ইটালির একটা স্কুটি বেশ পছন্দ হয়েছিলো এটার নাম ADIVA। শুরুতে Benelli নামক মেকারের সাথে থাকলেও পরে Adiva নামে আলাদা কোম্পানি হয়েছে। এদের কয়েকরকম পাওয়ারের (১২৫, ১৫০, ২০০, ২৫০ cc) সামনে দুই-চাকাওয়ালা থ্রি-হুইলার এবং নরমাল টু-হুইলার আছে -- তবে ইউটিউবে ভিডিও দেখে থ্রি-হুইলারটা ব্যালেন্সের দিক দিয়ে দূর্দান্ত মনে হল। দুইজন বসার উপযোগী স্কুটিটার ছাদটা কনভার্টিবল - ইচ্ছা করলে পেছনের বক্সে গুটিয়ে রাখা যায়।




এগুলো ছাড়াও BMW, Piaggio Vespa সহ আরো অনেক মেকারই এই ধরণের ছাদওয়ালা ওয়েদারপ্রুফ মটরসাইকেল বানাচ্ছে। এমনকি একটা কোম্পানি দেখলাম জাইরোস্কোপ ওয়ালা টু-হুইলার কার-মটরসাইকেল বানাচ্ছে -- মটরসাইকেলের মত দুই চাকা হলেও যেটাকে পাশে জোরে ধাক্কা দিলে সোজা থাকে।

মটরসাইকেল সম্পর্কে আমার আগ্রহ আগে থেকে খুবই কম -- কারণ এটা ডেঞ্জারাস বাহন (যদিও এক সময়ে ১৮৫ সিসি মটরসাইকেল চালিয়ে অফিস করতে হয়েছে)। তবে হঠাৎ ইউটিউবে এগুলো দেখে বেশ আগ্রহ জন্মালো। তবে শেষ পর্যন্ত এমন একটা চালানোর সুযোগ কোনোদিন হবে কি না জানিনা।

আর, আগেই বলে রাখছি, এগুলোর দামের কথা আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। নাম দিয়ে সার্চ দিলে এগুলোর দাম পাওয়া যায় - বিদেশে কেউ কিনতে চাইলে সেটা কাজে লাগবে। কিন্তু ঐ গাড়ির মেকারগণ গবেষণা আর টেকনোলজি খাটিয়ে বানিয়ে লাভটাভ সহ ওগুলোর যা দাম রাখে, বাংলাদেশের সরকার দয়া করে ওগুলো চালানোর কোনোরকম কিছু রাস্তা বানিয়ে আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতাভারে আবদ্ধ করে তার সেই দামের চেয়ে বেশি ট্যাক্স নিয়ে নেন -- কাজেই ... ... ...

কোন মন্তব্য নেই: