শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১

নিজের ল্যান/IP ঠিকানাগুলো কোথায় পাব (উইন্ডোজ)


লিনাক্সে অনেক নতুন ব্যবহারকারী নেটওয়র্ক সেটআপ করতে পারেন না। বিভিন্ন টিউটোরিয়ালে নেটওয়র্ক ম্যানেজারে নিজের আইপি, ডিএনএস সার্ভার ইত্যাদি বসিয়ে করার কথা দেখানো থাকলেও সেই আইপিগুলো উইন্ডোজের নেটওয়র্ক থেকে কিভাবে বের করতে হবে সেটা দেয়া থাকে না। এই ছবিতে শুধু সেই অংশটুকু দেখানোর প্রয়াস নিলাম।

পুরাতন ব্যবহারকারীগণ এই লেখা দেখে হয়তো হেসে কুটিকুটি হবেন। কিন্তু আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যাঁরা দীর্ঘদিন থেকে কম্পিউটার ব্যবহার করা সত্ত্বেও এই বিষয়টা জানেন না। যিনি এই ব্যাপারটার জন্য আটকে যান, তার জন্য এটাও একটা জরুরী তথ্য, তাই সহজ বলেই টিউটোরিয়াল হিসেবে এসব খুটিনাটি বিষয়গুলো অবহেলা করা ঠিক নয়।

আমি উইন্ডোজ এক্সপি সিস্টেম থেকে কিভাবে নেটওয়র্কের জরুরী বৈশিষ্টগুলো বের করতে হয় সেটা দেখাচ্ছি:


১। চিত্রের মত স্টার্ট মেনু থেকে নেটওয়র্ক কানেকশনে ক্লিক করুন। এতে ২ নং এর মত উইন্ডো খুলবে।
২। লোকাল এরিয়া কানেকশনের উপরে মাউসের ডান বোতাম (রাইট বাটন) ক্লিক করুন। এতে একটা মেনু খুলবে, সেখানের সবশেষে Properties এ ক্লিক করুন। এতে ৩ নংএর মত উইন্ডো খুলবে।
৩। এ থেকে TCP/IP ওয়ালা অপশনটা সিলেক্ট করা অবস্থায় নিচের ডানদিকে প্রোপার্টিজ বাটনে ক্লিক করুন। এতে ৪ নং এর মত উইন্ডো খুলবে।
৪। এখান থেকে নম্বরগুলো টুকে রাখুন। এগুলোই যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমে নেটওয়র্ক সেট করতে কাজে লাগবে। এমনকি লাইভ সিডি বা ইউএসবি চালানোর সময়েও এই তথ্যগুলো দিয়ে নেট কনেক্ট করতে পারবেন।


-- অতিরিক্ত তথ্য --

উইন্ডোজ ভিস্তাতে (আমার কাছে নাই, তাই স্ক্রিনশট দিতে অপারগ)


১। স্টার্ট মেনু থেকে Control Panel এ ক্লিক করুন।
২। যেই উইন্ডো খুলবে সেখান থেকে Network and Sharing Center আইকনে ডবল ক্লিক করুন।
৩। এতে যেই উইন্ডো খুলবে সেটার বামের মেনু থেকে Manage Network Connections ক্লিক করুন।
৪। এতে নেটওয়র্ক কানেকশন উইন্ডো আসবে, সেখানে লোকাল এরিয়া কানেকশন আইকনের উপরে মাউসের ডান বোতাম (রাইট বাটন) ক্লিক করুন; এতে খোলা মেনুর Properties এ ক্লিক করুন। এতে আরেকটি উইন্ডো খুলবে।
৫। এ থেকে Internet Protocol Version 4 (TCP/IPv4) অপশনটা সিলেক্ট করা অবস্থায় নিচের ডানদিকে প্রোপার্টিজ বাটনে ক্লিক করুন। এতে উপরের ছবির ৪ নং এর মত উইন্ডো খুলবে। সেখানে নম্বরগুলো পাবেন।

উইন্ডোজ সেভেন-এ (আমার কাছে নাই, তাই স্ক্রিনশট দিতে অপারগ)


১। Control Panel > Network and Internet > Network and Sharing Center
২। বাম প্যানেলে Change Adapter Settings এ ক্লিক করুন।
৩। View your active networks এর অধীনে Local Area Connection এ রাইট মাউস ক্লিক করে প্রোপার্টিজে ক্লিক করুন।
৪। এতে নেটওয়র্ক কানেকশন উইন্ডো আসবে, সেখানে লোকাল এরিয়া কানেকশন আইকনের উপরে মাউসের ডান বোতাম (রাইট বাটন) ক্লিক করুন; এতে খোলা মেনুর Properties এ ক্লিক করুন। এতে আরেকটি উইন্ডো খুলবে।
৫। এ থেকে Internet Protocol Version 4 (TCP/IPv4) অপশনটা সিলেক্ট করা অবস্থায় নিচের ডানদিকে প্রোপার্টিজ বাটনে ক্লিক করুন। এতে উপরের ছবির ৪ নং এর মত উইন্ডো খুলবে। সেখানে নম্বরগুলো পাবেন।

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

Simplicity Linux: পাপ্পি লিনাক্সে পূর্ণ শক্তির ডেস্কটপ

পাপ্পি লিনাক্স অত্যন্ত হালকা একটা লিনাক্স হলেও এর ডিফল্ট ভার্সনে হালকা থাকার স্বার্থে অফিস এবং গ্রাফিক্স সফটওয়্যারে ছাড় দিতে হয়েছে। তাই পাপ্পি অনেকের পছন্দ হলেও সম্পুর্ন সময়ের জন্য এটা ব্যবহার করে নিজের কম্পিউটিং চাহিদা মিটাতে পারবেন না। পাপ্পি লিনাক্স আমার পছন্দ হলেও সবসময়ই এতে লিব্রে অফিসের অভাব অনুভব করতাম। তাই লিব্রে অফিস সহ একটা পাপ্পি ডেরিভেটিভ (পাপলেট) দেখে সেটা একটু নামিয়ে চালিয়ে দেখলাম।

এটাকে অবশ্য আমার পছন্দের মাল্টিবুট ইউএসবি তৈরীর সফটওয়্যার থেকে লাইভ করতে পারিনি। তাই সিডি বার্ন করে নিয়েছিলাম। লাইভ সিডি থেকে চালানোর সময়ে এর একটা স্ক্রিনশট দেখুন:
  • স্ক্রিনশট নেয়ার আগে আমার বাংলা ফন্টের ফোল্ডারটাকে .fonts নামে এটার রুট ডিরেক্টরিতে কপি করে নিয়েছিলাম। 
  • এটাতে নিচের বামকোনায় একটা মেনু আছে। সেই মেনুর আইটেম অনেক সুবিন্যস্ত মনে হলেও সেখানে খুঁজে লিব্রে অফিসের টিকিটিও পেলাম না।
  • স্ক্রিনের বামদিকে আর উপরে অটোহাইড হয়ে যাওয়া আরও দুটি প্যানেল আছে। আমি স্ক্রিনশট নেয়ার সময়ে দেখানোর সুবিধার্থে ওগুলোর প্রোপার্টি পরিবর্তন করে অটোহাইড বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ডিফল্ট এই মেনুগুলোতে ইচ্ছা করলে আরো আইটেম যোগ করা যায়।
  • বামদিকের প্যানেলটায় আমার সমস্ত কাজের জিনিষগুলো পেলাম। লিব্রে অফিস, গিম্প, ট্রান্সমিশন বিট টরেন্ট ক্লায়েন্ট, ব্রাউজার, ভিএলসি প্লেয়ার ইত্যাদি এদিকে রাখা আছে।
  • উপরের মেনুটাতেও বেশ কাজের কিছু জিনিষ রাখা আছে।
  • স্ক্রিনশটের বামদিকে লিব্রে অফিসে আমার হার্ডডিস্কে থাকা একটা বাংলা ফাইল ঠিকমতই দেখাচ্ছে।
  • বামদিকে pcmanfm ফাইল ব্রাউজারটাও বেশ সুদৃশ্য। 
  • মজিলা ব্রাউজারে বাংলা ফোরাম দেখাচ্ছে ঠিকভাবেই। কিউবির নেট পেয়েছে অটোমেটিক।
  • দ্রুত অ্যাপ খোঁজার জন্য একটা প্রোগ্রাম দেখলাম এখানে - যা উইন্ডোজ মেনু সিস্টেমের কথা মনে করিয়ে দেয়।
  • ডেস্কটপে খোলা সবগুলো আইটেমের জন্য দৃষ্টিনন্দন ট্রান্সপারেন্সি দেয়া আছে।
  • এই স্ক্রিনশটটা গিম্প দিয়ে নেয়া হয়েছে।


৪৫৫ মেগাবাইটের সিম্প্লিসিটি ডেস্কটপে xfce এনভায়রনমেন্ট ব্যবহার করেছে বলে লিখেছে। কিন্তু এর আগে যুবুন্টু ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় ঐ ডেস্কটপে যে এ্যাত কিছু করা যেতে পারে তা কল্পনাতে ছিল না।

এরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পাপ্পিতে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যোগ করে কয়েকরকম ফ্লেভারের ডিস্ট্রো বানিয়েছে। যেগুলোর ডাউনলোড লিংকগুলো এখানে দিয়ে দিলাম।
Obsidian 11.07 (123mb): এটা শুধু নেট ব্রাউজের জন্য হালকা পাতলা এডিশন। এটাতে ব্রাউজার, ফ্লাশ আর নেটওয়র্ক ম্যানেজার দেয়া আছে। এটা ছাড়া আর বাকী সবগুলোই xfce এনভায়রনমেন্ট ব্যবহার করেছে।
Desktop 11.07 (455mb): এটার কথাই উপরে বর্ণনা করলাম। খুব বেশি বড় আকার না করেও পরিপূর্ণ ডেস্কটপ হওয়ার জন্য কোনরূপ ছাড় দেয়া হয়নি এতে। অনলাইন এবং অফলাইন দুই অবস্থাতেই এটা দারুন কাজের।
Netbook 11.07 (209mb): এটা নেটবুকের জন্য। এখানে xfce এনভায়রনমেন্ট ছাড়াও ফায়ারফক্স অরোরা, ফ্লাশ এবং ওয়েব নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন দেয়া হয়েছে।
Media 11.07 (202mb): এই রিলিজটা বেশ মজার। মূল প্রোগামাররা গুগল টিভি আর গুগল IO দেখে উৎসাহিত হয়ে পাপ্পি লিনাক্স ব্যবহার করে সিম্প্লিসিটি বানানোর চেষ্টা করেন। এটা ছোট হলেও এটা বেশ কাজের এবং এটা দিয়ে ওনারা পুরাতন ল্যাপটপকে ২২ ইঞ্চি মনিটরে কানেকশন দিয়ে সেটাতে মুভি দেখেন। অফিসের লাউঞ্জে একটা মিডিয়া সেন্টার হিসেবে পুরাতন ল্যাপটপের সাথে ওয়্যারলেস মাউস আর কীবোর্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।


মূল ওয়েবসাইট: http://simplicitylinux.org/

পাপ্পি লিনাক্স সম্পর্কে আরেকটু জানতে আমার এই পোস্ট দুটি পড়তে পারেন:
Puppy Linux দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ (২৪-জানুয়ারী-২০০৯ এ লেখা)
Macpup: সুন্দর পাপ্পি লিনাক্স ডেরিভেটিভ

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১

Macpup: সুন্দর পাপ্পি লিনাক্স ডেরিভেটিভ

পাপ্পি লিনাক্স খুবই হালকা একটা লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন। অস্ট্রেলিয়ার এই ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে ভারী কোনো প্রোগ্রাম না থাকলেও সাধারণত ডিফল্ট ভাবে বিভিন্ন অফিস ডকুমেন্ট সাপোর্ট করে। আর পুরাপুরি র‍্যাম থেকে চলে বলে অসম্ভব দ্রুতগতির। আমি সহ অনেকেই এটাকে দেখা দ্রুততম ডিস্ট্রিবিউশন বলি। যা হোক, কিছুদিন পর পর পাপ্পি'র আপডেট হয়। এছাড়া উবুন্টুর উপর ভিত্তি করে যেমন মিন্ট, জোরিন, বোধি সহ অনেক ডিস্ট্রিবিউশন তৈরী হয়েছে তেমনি পাপ্পির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের বা বৈশিষ্টের ডিস্ট্রিবিউশন বা পাপ্পি ডেরিভেটিভ তৈরী হয়েছে; এগুলোকে পাপলেট বলা হয়। আজ তেমনি একটি পাপলেটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। পাপ্পি সম্পর্কে জানতে লেখার শেষে দেয়া বাংলা পোস্টের লিংকগুলো একটু ঘুরে আসতে পারেন; ওগুলো পুরাতন লেখা হলেও মোটামুটিভাবে এখনও প্রযোজ্য। তবে কিছু লেখার আগে ডিস্ট্রোওয়াচ থেকে এর একটা স্ক্রিনশট দেখি:

এর সাথে পাপ্পি লিনাক্সের মূল ভার্সনের তুলনা করলেই এটা নিয়ে মুগ্ধতার বিষয়টা পরিষ্কার হবে। দেখুন একই ভার্সনের পাপ্পির ডিফল্ট রূপ:

Macpup 525 পাপ্পি লিনাক্সের সর্বশেষ ৫.২.৫ লুসিড পাপ্পির উপর ভিত্তি করে একটি অফিসিয়াল ডেরিভেটিভ বা পাপলেট (puplet)। এই ভার্সনগুলোর উবুন্টুর লুসিড লিংক্সের বাইনারী প্যাকেজের সাথে কম্পাটিবল। এটাতে লুসিড পাপ্পির সমস্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলো তো আছেই, এছাড়া এতে ফায়ারফক্স ৪.০.১ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এতে অপেরা বা গিম্প সহজেই ইনস্টল করার অপশন দেয়া আছে। এই ভার্সনে আরও আছে এনলাইটেনমেন্ট E17 উইন্ডো ম্যানেজার (পাশাপাশি মূল JWMও আছে)। এটা দেখতে ম্যাক ওএস এর মত করা হয়েছে বলে এটাকে ম্যাকপাপ নাম দেয়া  হয়েছে। এটার মূলত i386 আর্কিটেকচারে চলে। এটাতে GOffice নামক অফিস প্রোগ্রাম দেয়া আছে (অ্যাবিওয়র্ড, জিনিউমেরিক ইত্যাদি), যা মাইক্রোসফট এবং ওপেন ডকুমেন্ট পড়তে ও লিখতে পারে।

এর মূল ওয়েবসাইট: http://macpup.org/
মূল সাইটে গেলে লিংক করা ইউটিউব ভিডিও হিসেবে রিভিউ দেখতে পাবেন।

এবার আমার ডেস্কটপে লাইভ ম্যাকপাপের দুইটা স্ক্রিনশট দেখাই:

এই স্ক্রিনশটের বর্ণনা:
  • উপরের ছবিতে দেখুন এটা মাত্র ৬৭ মেগা র‍্যাম খরচ করছে। 
  • এতে আমার পিসির হার্ডডিস্ক ব্রাউজ করছি। 
  • আর ডেস্কটপে রাইট মাউস ক্লিকে খোলা মেনুতে কিভাবে স্ক্রিনশট নিলাম সেটার রহস্য ফাঁস করে দিলাম।


এই স্ক্রিনশটের বর্ণনা:
  • এই ছবিতে আরেকটু ডিটেইলিং করার চেষ্টা করলাম। এতে ডিফল্টভাবে বাংলাকে জটিল বাক্স আকারে দেখায়। তাই আমার হার্ডডিস্ক থেকে বাংলা ফন্টের ফোল্ডারটা এখানকার রুটে .fonts নামে কপি করে নিয়ে আসলাম। তারপর ফায়ারফক্সের সেটিংস থেকে বাংলা ফন্ট সিলেক্ট করে দিলাম। এবার দেখুন বাংলা ফোরাম কেমন সুন্দর দেখা যাচ্ছে। 
  • এছাড়া আরেকটা খোলা উইন্ডোতে আমার পুরাতন .odt ফরম্যাটের বাংলা ফাইল চমৎকার দেখা যাচ্ছে। 
  • উপরের দিকে খোলা উইন্ডোতে আমার পিসির হার্ডডিস্ক ব্রাউজ করছি, ওতে বাংলায় লেখা নামগুলো ঠিকভাবে দেখাচ্ছে না।
  • খেয়াল করে দেখুন ডেস্কটপের ডান প্রান্তে একটা ইউএসবি এবং আরেকটা আইকন দেখা যাচ্ছে। এগুলো হল মিনিমাইজ করা একটা ফাইল ব্রাউজার এবং একটা Htop প্রোগ্রামের (আগের স্ক্রিনশটে যেটাতে মেমরি দেখাচ্ছে) উইন্ডো - যা মিনিমাইজ করলে এভাবে পাশে জমা হয়।
  • এবার নিচের ডক বারটা লক্ষ্য করুন। বামদিকে ইংরেজি M অক্ষরের মত আইকনের ডানদিকে দুইটা স্পেসে দুইটা ডেস্কটপের মিনিয়েচার দেখাচ্ছে।
  • স্ক্রিনশট নেয়ার সময় মাউসটাকে ডানদিকে শাটডাউন বাটনের উপরে রেখেছিলাম। এতে অন্য বাটনগুলোর মত এটার নামও ভেসে উঠেছে এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া ঢেউয়ের মত একটা এনিমেশনও হচ্ছিলো।

ম্যাকপাপের সারসংক্ষেপ:

  • ভিত্তি: পাপ্পি লিনাক্স
  • মূল: ম্যাকপাপ
  • আর্কিটেকচার: i386
  • ডেস্কটপ: Enlightenment, JWM
  • ক্যাটগরি: ডেস্কটপ
  • অফিস সফটওয়্যার: GOffice

পাপ্পি লিনাক্স সম্পর্কে আমার পুরাতন পোস্ট:


পাপ্পি লিনাক্স দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ: (১৬ই জানুয়ারী ২০০৯)
http://hussainuzzaman.blogspot.com/2009/01/puppy-linux.html


পাপ্পি লিনাক্সে বাংলা লেখা:
http://hussainuzzaman.blogspot.com/2009/01/puppy-linux_31.html

বায়োপাপ্পি: (তপু ভাইয়ের লেখা)
http://forum.projanmo.com/topic14583.html

পাপ্পি লিনাক্স নিয়ে বাংলায় আরো তথ্য ও আলোচনা পাবেন বিভিন্ন জায়গায়।
http://forum.projanmo.com/topic28977.html
http://forum.projanmo.com/topic9886.html
http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=42&t=2803&p=23301#p23301

প্রথম দুইটা ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা:

http://distrowatch.com/table.php?distribution=macpup
http://distrowatch.com/table.php?distribution=puppy

সরাসরি ডাউনলোড (১৫৫ মেগাবাইট)

http://macpup.org/redirect.php?myurl=52501

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

গিম্প টিউটোরিয়াল: স্ক্রিনশট নেয়া

GIMP এর পুরা হল GNU Image Manipulation Program যা অনেকটা ফটোশপের মত। এই দারুন ক্ষমতাবান সফটওয়্যারটি ওপেনসোর্স এবং ফ্রী; তাছাড়া, উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক সব প্লাটফর্ম সাপোর্ট করে। এর আগে গিম্প দিয়ে সাধারণ এনিমেটেড ছবি তৈরী করা দেখিয়েছিলাম। এবার দেখুন গিম্প ব্যবহার করে স্ক্রিনশট নেয়া যায় কিভাবে।

নিচের ছবির মত গিম্পের মেনু থেকে File -->  Create --> Screenshot নির্বাচন করুন। এতে ভেতরে থাকা Screenshot নামক উইন্ডো খুলবে। সেখান থেকে আপনার পছন্দমত স্ক্রিনশট নেয়ার অপশন নির্বাচন করুন। ছবির Area হিসেবে: সিলেক্ট করা উইন্ডো, পুরা স্ক্রিন অথবা স্ক্রিনের নির্দিষ্ট অংশ সিলেক্ট করে স্ক্রিনশট নেয়া যায়।


ব্যক্তিগতভাবে আমি একটু সময় নিয়ে স্ক্রিনশট নিতে পছন্দ করি, তাই Delay হিসেবে কিছু সময় সিলেক্ট করে দেই। এতে ছবি নেয়ার কমান্ড হিসেবে Snap বাটন ক্লিক করার পর এটা মিনিমাইজ করে যা দেখাতে চাই সেগুলো স্ক্রিনে আনার সময় পাওয়া যায়। উপরের ছবিটা চিত্রের মত করে ২য় অপশন সিলেক্ট করে নেয়া হয়েছে, তাই আমার স্ক্রিনের সবকিছুই এতে চলে এসেছে। পরের ছবিগুলো ১ম অপশন দিয়ে নেয়া। এই অপশন নির্বাচন করলে, পরবর্তীতে পছন্দের উইন্ডো (যেটার ছবি নিতে চান) সিলেক্ট করার জন্য + চিহ্নের মত একটা পয়েন্টার আসবে সেটা দিয়ে যেই উইন্ডো ক্লিক করবেন সেটার ছবি নেবে।

স্ক্রিনশট নেয়ার পর ছবিটা গিম্পেই খুলবে। আপনার দরকার হলে এতে কিছু এডিট করতে পারেন। কিছু জিনিষ মার্ক করতে পারেন কিছু জিনিষ ঝাপসা করতে পারেন। যা হোক এরপর ছবিটাকে প্রচলিত ফরম্যাটে সংরক্ষণ করতে চাইলে উপরের File মেনু থেকে Save As নির্বাচন করতে হবে। শুধু Save দিলে গিম্পের ডিফল্ট ফরম্যাট .xcf এ সংরক্ষিত হবে।


Save As দিলে, এতে নিচের মত উইন্ডো খুলবে। সেখানে পছন্দের নাম এবং এক্সটেনশন দিন। কোথায় সংরক্ষণ করবে সেটা দেখিয়ে দিন। খেয়াল করে দেখুন নিচের দিকে Browse for other folders আছে যেটা দিয়ে Save in folder এর সীমিত অপশনের বাইরে যে কোন জায়গা দেখিয়ে দেয়া যাবে। আর এক্সটেনশন হাতে লিখে দেয়ার ব্যাপারে দ্বিধা থাকলে পরের Select File Type এ ক্লিক করে সেখান থেকে পছন্দের ধরণটা বেছে নিতে পারেন। তারপর Save বাটনে ক্লিক করুন।


এই পর্যায়ে নিচের মত মেসেজ আসতে পারে। সেটা জেনে Export এ ক্লিক করুন।


এই পর্যায়ে আপনার ছবির কোয়ালিটি নির্বাচনের জন্য আরেকটি অপশন আসবে।


কোয়ালিটি ১০০% করলে আকার একটু বড় হবে। কোয়ালিটি কমালে ছবির আকার কম হবে। উপরের সবগুলো ছবিই এই চিত্রের মত ৮৫% কোয়ালিটিতে সংরক্ষণ করা। ব্যাস এটাই শেষ ধাপ, Save এ ক্লিক করুন। ছবি সংরক্ষিত হবে।

শুধুমাত্র স্ক্রিনশট নেয়ার জন্য অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায়। যেমন আমার উইন্ডোজ এক্সপিতে এজন্য snagit নামক ফ্রী সফটওয়্যার ব্যবহার করতাম। যদিও কম্পিউটারের Print Screen বাটন এবং পেইন্ট ব্যবহার করেও স্ক্রিনশট নেয়া যায়। উইন্ডোজের পরের ভার্সনগুলোতে সম্ভবত এজন্য নিজস্ব টুল দেয়া আছে (তবে Delay সুবিধা আছে কি না জানিনা)। এছাড়া  লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশনে স্ক্রিনশট নেয়ার জন্য টুল দেয়া থাকে।

গিম্প ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে:
উইন্ডোজের জন্য (১৯.৪ মেগাবাইট): http://www.gimp.org/windows/
সরাসরি ডাউনলোড


ম্যাকের জন্য:
http://www.gimp.org/macintosh/

লিনাক্সের জন্য:
http://www.gimp.org/downloads/

বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে স্ক্রিনশট নেয়ার আরও উপায় জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকে:‌
http://en.wikipedia.org/wiki/Screenshot

আলাদা সফটওয়্যার ছাড়া উইন্ডোজে স্ক্রিনশট নেয়ার পদ্ধতি বর্ণনা আছে এখানে:
http://www.wikihow.com/Take-a-Screenshot-in-Microsoft-Windows

শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

SliTaz: ৩১.৫ মেগাবাইটের অপারেটিং সিস্টেম

সাইজ খুব ছোট দেখে এটা একটু চালিয়ে দেখার খায়েশ জাগলো। চেহারাটাও পরিচিত। তবে ৩১.৫ মেগাবাইটের মধ্যে কী কী দেয়া সম্ভব সেটা দেখার কৌতুহলও হচ্ছিলো খুব।

ছবি অনেক কিছুই বলে দেয়। ডিস্ট্রোওয়াচ থেকে এটার স্ক্রিনশট দেখুন:



মেনুতে অনেকগুলো আইটেম দেখালেও আসলে এটাতে ভারী কোনো প্রোগ্রাম নাই। কিছু আইটেম আছে যেটাতে ক্লিক করলে ইনস্টল করার অপশন আসে। হ্যাঁ স্লিটাজের নিজস্ব রিপো আছে। গতকাল ওতে খুঁজে দেখলাম, ইতিমধ্যেই ওপেন অফিস আছে, আর লিব্রে অফিসও সাবমিট করা হয়েছে।

স্লিটাজ বুট করার সময় অনেকগুলো ভাষার লোকেল পছন্দ করার সুযোগ দেয় (en, de_DE, en_GB, en_US, es_ES, fr_FR, pt_BR, pt_PT, ru_RU); অপশনগুলোতে ইংলিশ, জার্মান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তূগীজ, রাশিয়ান ভাষা দেখলাম বলে মনে হল। এরপর কীবোর্ড ম্যাপ বেছে নিতে বলে। আমাদের ব্যবহৃত USA ম্যাপের নাম সবার শেষে। কাজেই না দেখে OK করলে বিপদে পড়তে হতে পারে।

এটাতে আমার হার্ডডিস্ক এবং পেনড্রাইভে থাকা txt, pdf, image টাইপের ফাইল খুলতে পারলেও, doc, odt, ods বা মিডিয়া ফাইল খুলতে পারে নাই। অবশ্য এই আকারের মধ্যে অত ক্ষমতা আশাও করিনি। এছাড়া লাইভ সিস্টেমটা আমার নেটবুকের reiserfs এবং ext4 ফাইলসিস্টেমের পার্টিশন খুলতে পারেনি। তবে অনায়েসেই ntfs এবং পেনড্রাইভ fat খুলেছে।

ইন্টারনেট চ্যাটের জন্য ক্লায়েন্ট ছাড়াও মিদোরি (মজিলা ফায়ারফক্সের মত) ব্রাউজার, ট্রান্সমিশন বিট টরেন্ট ক্লায়েন্ট এবং টুইটার মাইক্রোব্লগ ক্লায়েন্ট আছে বলে দেখলাম। এছাড়া এতে ghttpd ওয়েব সার্ভার, SQLite ডেটাবেস, রেসকিউ টুলস, IRC ক্লায়েন্ট, SSH ক্লায়েন্ট ও সার্ভার যা Dropbear পাওয়ারড, X উইন্ডো সিস্টেম, JWM (Joe's Window Manager), gFTP, Geany IDE, AlsaPlayer, GParted, sound file editor রয়েছে।

এটা পুরাতন 486 মডেলের কম্পিউটারকে টার্গেট করে বানানো হলেও n470 এটম প্রসেসর যুক্ত আমার নেটবুকেও চললো। তবে নিচের স্ক্রিনশটটা আমার সেলেরন ডেস্কটপ থেকে নেয়া; এটা নিতে স্লিটাজের মেনুতে দেয়া গ্র্যাব স্ক্রিনশট নামক এ্যাপ ব্যবহৃত হয়েছে। দেখুন অনায়েসেই আমার কিউবি ইন্টারনেট চলছে।


স্লিটাজ খুবই হালকা অপারেটিং সিস্টেম, এটার আকার দেখেই সেটা বুঝে ফেলার কথা। এটা নিজেকে পুরোপুরিভাবে RAMএ কপি করে নেয় এবং এরপর লাইভ মিডিয়া বের করে নিতে দেয়, অর্থাৎ একটি লাইভ সিডি বা ইউএসবি দিয়েই পর পর অনেকগুলো মেশিনে একই সাথে লাইভ সিস্টেম চালানো যাবে -- একটি মেশিন বুট হলেই ওখান থেকে সিডি বা ইউএসবি বের করে আরেকটা বুট করতে হবে।

এর প্যাকেজগুলো রাখা আছে রিপোতে। হার্ডডিস্কে ইনস্টল করার পর এখান থেকে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে নেয়া যাবে।
স্টেবল প্যাকেজ লিস্ট: http://mirror.slitaz.org/packages/stable/packages.list
কুকিং প্যাকেজ লিস্ট: http://mirror.slitaz.org/packages/cooking/packages.list

আরও জানতে ঢু মেরে আসুন:
http://www.slitaz.org/
http://en.wikipedia.org/wiki/SliTaz
http://distrowatch.com/table.php?distribution=slitaz

স্টেবল ভার্সন ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে (৩১.৫ মেগাবাইট):
http://mirror.slitaz.org/iso/3.0/slitaz-3.0.iso

Austrumi: আরেকটি কাজের হালকা ডিস্ট্রো

এই লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমটা আগ্রহ নিয়ে দেখানোর কারণ এটার আকার মাত্র ২১০ মেগাবাইট, অথচ এর মধ্যেই লিব্রে অফিস, গিম্প এবং ইঙ্কস্কেপের মত প্রোগ্রাম দেয়া আছে। খুব সম্ভবত আকীক নামে এক লিনাক্স পাগল আমাকে এটি দিয়ে গিয়েছিল। তবে ও আমাকে যেই ভার্সন দিয়েছিলো তার পরে আরও দুইটি ভার্সন রিলিজ হয়েছে। আমি সর্বশেষ 2.4.0 ভার্সনটা ব্যবহার করে সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই লেখাটা লিখছি। কিছু শুরু করার আগে এটার একটা স্ক্রিনশট দেখি ওদের সাইট থেকে:


লাইভ ইউএসবি বুট করেই যেই সমস্যাটায় পড়তে হয় সেটা হল এটার ভাষা ইংরেজি নয়, লাটভিয়ান। তবে ঘাবড়াবার কিছু নাই কয়েকটা সহজ ক্লিকেই এটাকে ইংরেজি করা যায়। ইংরেজি করতে হলে যা করতে হবে:
১। ডেস্কটপে ক্লিক করুন (সাধারণত যেভাবে করি, বামদিকের মাউস বাটন), এতে উপরের চিত্রের মত একটা মেনু খুলবে।
২। Istatiejumi তে ক্লিক করলে সাবমেনু খুলবে সেটাতে Voludys (সবচেয়ে নিচের অপশন) ক্লিক করুন।
৩। এতে কয়েকটি দেশের পতাকা ও নাম সহ একটা ছোট উইন্ডো খুলবে। সবচেয়ে উপরে ইংলিশ, যা ইংরেজিতেই লেখা - ওতে ক্লিক করুন। এতে পর মুহুর্তেই ডেস্কটপটা ইংলিশে লোড হবে।

এবার আরেকটা মজার জিনিষের কথা বলি। এটাতে মোট ৫ রকম ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট থীম রয়েছে। উপরের ছবিতে যেই থীমটা দেখা যাচ্ছে সেটাকে ওরা নাম দিয়েছে: R-Panel Theme। এছাড়া U-Gadgets Theme, Windows Theme, Versatile Theme, Cairo dock theme আছে।

এটাতে আমার নেটবুক থেকে স্ক্রিনশট নেয়াটা একটু ঝামেলার মনে হল। তারপরও কীভাবে জানি দুইটা স্ক্রিনশট নিয়ে ফেলেছি। ১ম শটটা উইন্ডোজ থীমের, আর পরেরটা কায়রো ডক।


উইন্ডোজ থীমটা আমাদের সেই পরিচিত পুরাতন উইন্ডোজের মত। এতে ফাইল ব্রাউজার হল pcmanfm যা নপিক্সেও ব্যবহৃত হয়। দেখুন এতে লাইভ সিস্টেম থেকেই মিদোরি (মজিলা) ব্রাউজারে ব্রাউজ করছি, আর আমার অন্য পার্টিশন থেকে একটা মিডিয়া ফাইল চালাচ্ছি। বলাই বাহুল্য যে ইন্টারনেট সেট করতে হয়নি, অটোমেটিক পেয়েছে (DHCP ল্যান অটো পাওয়াটাই স্বাভাবিক মনে হয়।)।


কায়রো ডক থীম। এটাতে আবার মেনু থেকে কংকি চালু করেছিলাম। আর সার্ভিসেস এন্ড ডিমোন নামে আরেকটা অ্যাপ চালিয়ে দেখছিলাম। এছাড়া ডেস্কটপে দুইটা গেজেট ছিল -- ও দুটাকে কোনায় ক্লিক করাতে ডকের ডানদিকে বসে গেল।

থীম পরিবর্তনও খুব সোজা; এজন্য
১। ডেস্কটপে রাইট ক্লিক করুন (মাউসের ডানদিকের বাটন), এতে আরেকটা মেনু খুলবে।
২। মেনু থেকে Themes --> Windows Theme অথবা অন্য যে কোনোটা সিলেক্ট করলেই থীম পরিবর্তন হয়ে যাবে।

এটার মধ্য আরও অনেক জরুরী এপ্লিকেশন দেয়া আছে।
- লিব্রে অফিস, গিম্প আর ইঙ্কস্কেপের কথা শুরুতেই বলেছি।
- ৮টি ছোট গেম দেয়া আছে।
- কায়রো ডকের আইকনগুলো খেয়াল করুন। জিনি এডিটর, ব্রাউজার আর স্কাইপের আইকনগুলো সহজেই চেনা যাচ্ছে।
- Htop সিস্টেম ইনফো, MC (মিডনাইট কমান্ডার) এগুলো ছাড়াও আরও অনেক টুল দেয়া আছে।

এটা স্ল্যাকওয়্যারের উপর ভিত্তি করে তৈরী। এটা চালাতে পেন্টিয়াম-২ বা ভাল প্রসেসর এবং ৫১২ মেগা মেমরি লাগবে। এটা সম্পর্কে আরো জানতে নিচের লিংকগুলোতে ঢু মারতে পারেন।
http://cyti.latgola.lv/ruuni/
http://distrowatch.com/table.php?distribution=austrumi
http://en.wikipedia.org/wiki/AUSTRUMI_Linux

এটার লোগোটা সেইরকম: (উইকি থেকে লোগো দিলাম)

আই এস ও ডাউনলোড (২১০ মেগা): ftp://austrumi.ru.lv/austrumi-2.4.0.iso

মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১১

লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি: ইনস্টল না করেই একটি অপারেটিং সিস্টেম চালিয়ে দেখার উপায়

লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি
ইনস্টল না করেই একটি অপারেটিং সিস্টেম চালিয়ে দেখার উপায়

লাইভ সিডি কী?

লাইভ সিডি বা লাইভ ডিভিডি কিংবা লাইভ ডিস্ক বলতে বুঝায় যে এটাতে একটা বুট যোগ্য কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। কম্পিউটারে কোনরকম হার্ডডিস্ক বা স্টোরেজ ডিভাইসের সাহায্য ছাড়াই একটা সম্পুর্ন ও আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম চালানোর এটা একটা অনন্য উপায়। লাইভ ইউ.এস.বি ফ্লাশড্রাইভগুলোও লাইভ সিডির মত, তবে এগুলো কখনও কখনও লাইভ সিডির চেয়েও অনেক বেশি কাজ করতে পারে; যেমন এর মধ্যেই সিস্টেমের পরিবর্তনগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।

অপারেটিং সিস্টেমটি এজন্য তার প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ফাইলগুলো কম্পিউটারের মেমরি বা RAMএ কপি করে নেয়, এবং সেখান থেকেই চলে, হার্ডডিস্কে একটি আঁচড়ও ফেলে না। লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশন বা অপারেটিং সিস্টেমের সিডি, ডিভিডি এই সিস্টেমে করা হয় যেন ইনস্টলের ঝামেলায় না গিয়েই কৌতুহলী কেউ এটা সম্পর্কে জানতে পারে। একটি পেনড্রাইভে একত্রে অনেকগুলো লাইভ অপারেটিং সিস্টেমও রাখা যায়। মেমরি ড্রাইভে এটা নেয়ার সুবিধা হল, দরকার না হলে এটা মুছে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।

লাইভ সিস্টেমের সুবিধা ও ব্যবহার

  • ইনস্টল না করেই একটা অপারেটিং সিস্টেমে কী আছে আর কী নাই সেটা বোঝা যায়, ফলে এটা আমার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম কি না সেটা ইনস্টল না করেই চালিয়ে দেখে নেয়া যায়।
  • হার্ডডিস্ক ছাড়াই কম্পিউটার চালানো যায়। হার্ডডিস্ক কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন হার্ডডিস্ক ক্রয়ের আগ পর্যন্ত এভাবে কাজ চালানো যাবে।
  • কিংবা পাসওয়র্ডের কারণে কোন কম্পিউটার খুলতে না পারলে লাইভ বুট করে সেটা দিয়ে আপনার কাজ করতে পারেন (মেইল চেক, ডকুমেন্ট লেখালেখি, কাউকে আপনার করা কাজের ফাইল দেখানো ইত্যাদি)
  • ভাইরাস বা অন্য কোনো কারণে একটা কম্পিউটার হার্ডডিস্ক থেকে চালু হতে না পারলে, লাইভ সিডি বা ইউএসবি থেকে বুট করে এটার হার্ডডিস্কে থাকা জরুরী ফাইল অন্য মিডিয়াতে কপি করে আনা যায়। দরকার হলে হার্ডডিস্কে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা ভাইরাসও মুছে ফেলা যায়। (রিকভারি টুল)
  • কারো পেনড্রাইভে প্রয়োজনীয় ফাইলের সাথে চুপিসারে ভাইরাস আসছে এমন আশংকা করলে আর নিজের এন্টিভাইরাসে ভরসা না থাকলে, লাইভ লিনাক্স বুট করে তারপর সেই পেনড্রাইভ থেকে জরুরী ফাইল কপি করে নেয়া যায়, আবার ভাইরাস ফাইল দেখলেও ওগুলোকে দেখে দেখে মুছে ফেলা যায়।
  • কোনো কম্পিউটারের ম্যালওয়্যার আপনার সংবেদনশীল ডেটা, পাসওয়র্ড এসব চুরি করছে এমন আশংকা করলে, লাইভ সিডি থেকে বুট করে কাজ করে সেই আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। (অনলাইন ব্যাংকিং‌)
  • কোনো হার্ডওয়্যার কেনার সময়ে সেটা আপনার সিস্টেমে চলবে কি না সেটা লাইভ সিস্টেম দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায়।
  • ছোট অপারেটিং সিস্টেমগুলো নিজেকে পুরোপুরি মেমরিতে কপি করে নেয় বলে এগুলো অসম্ভব দ্রুত চলতে পারে।
  • পুরোপুরি মেমরিতে কপি করে নিলে, হার্ডডিস্ক বা সিডি ড্রাইভ চালানোর প্রয়োজন হয় না বলে, ছোট অপারেটিং সিস্টেমগুলোর লাইভ চালাতে সাধারণত কম বিদ্যূৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।
লাইভ সিস্টেমের অসুবিধা
  • সিডি / ডিভিডি থেকে প্রোগ্রাম চালু করা বড় আকারের অপারেটিং সিস্টেমগুলো একটু ধীরগতির হয়। কারণ সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের গতি হার্ডডিস্ক থেকে ডেটা ট্রান্সফারের অন্তত ১৫ ভাগের একভাগ। এছাড়া ঐ প্রোগ্রামগুলো কম্প্রেস করা অবস্থায় থাকে, ডেটা ট্রান্সফারের পর সেগুলোকে আবার ডিকম্প্রেস করে তবেই ব্যবহার করে। সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের সময়টা ইউ.এস.বি লাইভে কমিয়ে আনা যায়, তবে এতেও ডিকম্প্রেস করার সময়টা এড়ানো সম্ভব হয় না।
  • সাধারণত লাইভ সিডি সিস্টেমের কাস্টমাইজেশন সংরক্ষিত হয় না। অবশ্য পেনড্রাইভ বুটেবল করলে নিজের সেটিংসগুলো সংরক্ষণ করা যায়।

লাইভ সিডি তৈরী করবেন যেভাবে

লাইভ সিডি তৈরী করার জন্য অপারেটিং সিস্টেমটির একটা ইমেজ ফাইল প্রয়োজন হয়। এই ফাইলগুলোর নামের শেষে .iso লেখা থাকে। তাই এই ইমেজ ফাইলগুলোকে আই.এস.ও ফাইলও বলা হয়। বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই আই.এস.ও ফাইলগুলো ডাউনলোডের জন্য দেয়া থাকে। এই ফাইল ডাউনলোড করার পর সেটাকে ইমেজ ফাইল হিসেবে সিডিতে বার্ন করতে হয়। যে কোন প্রমিত সিডি রাইটার সফটওয়্যারে ইমেজ ফাইল রাইট করার জন্য পদ্ধতি দেয়া থাকে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সিডিতে ইমেজ ফাইল রাইট করার জন্য কিছু ফ্রী সফটওয়্যার পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হল।

উইন্ডোজ ৯৫ / ৯৮ / ME / ২০০০ / XP / সার্ভার ২০০৩ / ভিস্তাঃ ইনফ্রা রেকর্ডার

  • প্রথমে http://infrarecorder.sourceforge.net থেকে ইনফ্রা রেকর্ডার ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন।
  • সিডি রাইটারে একটা ব্ল্যাংক সিডি প্রবেশ করান। যদি একটা অটোরান ডায়লগ আসে তবে Do nothing বা Cancel সিলেক্ট করুন।
  • ইনফ্রা রেকর্ডার চালু করুন এবং মূল স্ক্রিনে 'Write Image' বোতামে ক্লিক করুন।
  • বিকল্প হিসেবে আপনি Actions' menuতে গিয়ে Burn image সিলেক্ট করতে পারেন।
  • এরপর আপনার উদ্দিষ্ট ফাইলটা সিলেক্ট করে দিন এবং 'Open'এ ক্লিক করুন।
  • OK ক্লিক করুন।

উইন্ডোজ XP / সার্ভার ২০০৩ / ভিস্তাঃ ISO Recorder

  • http://isorecorder.alexfeinman.com/isorecorder.htm থেকে সঠিক ভার্সনের ISO Recorder ডাউনলোড ও ইনস্টল করুন।
  • ডিভিডি রাইটারে একটা আনফরম্যাটেড ডিভিডি প্রবেশ করান (ভিস্তাতে এই সফটওয়্যার দিয়ে শুধুমাত্র ডিভিডি রাইট করা যাবে)
  • উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার খুলুন, অপারেটিং সিস্টেমের ISO ফাইলটার উপরে মাউসের ডান ক্লিক করুন এবং 'Next' সিলেক্ট করুন।
Windows 7
  • ISO ইমেজ ফাইলটার উপরে মাউসের ডান ক্লিক করুন এবং 'Burn disc image' নির্বাচন করুন।
  • আপনার সিডি বা ডিভিডি রাইটারটা সিলেক্ট করে দিন এবং 'Burn' বাটনে ক্লিক করুন। ঠিকমত রাইট হয়েছে কি না সেটা পরীক্ষা করাতে চাইলে 'Verify disc after burning' এ টিক দিয়ে দিন।

লাইভ ইউ.এস.বি তৈরী করবেন যেভাবে

উইন্ডোজ

  • কমপক্ষে ২ গিগাবাইট খালি জায়গাসহ একটা ইউএসবি ডিস্ক কম্পিউটারে লাগান।
  • http://www.pendrivelinux.com/downloads/Universal-USB-Installer/Universal-USB-Installer.exe
  • উপরের ঠিকানা থেকে ইউনিভার্সাল ইউএসবি ইনস্টলার ডাউনলোড করুন।
  • Run এ ক্লিক করুন।
  • সিকিউরিটি ডায়লগ আসলে Run এ ক্লিক করে নিশ্চিত করুন।
  • লাইসেন্স চুক্তি পড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য 'I Agree' নির্বাচন করুন।
  • Step 1এ ড্রপডাউন লিস্ট থেকে আপনার উদ্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচন করুন।
  • Step 2এ 'Browse' এ ক্লিক করে ডাউনলোড করা ISO ফাইলটা দেখিয়ে দিন।
  • Step 3এUSB ড্রাইভ নির্বাচিত করুন এবং 'Create'এ ক্লিক করুন।
Unetbootin নামক সফটওয়্যার দিয়েও USB বুটেবল করা যায় (উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স)
http://unetbootin.sourceforge.net/ থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন। নিচের ডিস্ক ইমেজের স্থলে iso ফাইলটা দেখিয়ে দিন; যদি সেটিংস সংরক্ষণ করাতে চান, তাহলে এর নিজস্ব একটা ড্রাইভ বানানের জন্য জায়গার পরিমাণ দিন; আর শেষে USB ড্রাইভটা দেখিয়ে দিন।

লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি থেকে কম্পিউটার চালু করবেন যেভাবে
হার্ডডিস্কের বদলে লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি থেকে কম্পিউটার স্টার্ট বা বুট করতে হলে এর মাদারবোর্ডে থাকা বায়োসে অপারেটিং সিস্টেম কোথায় খুঁজবে (ফ্লপি, হার্ডডিস্ক, সিডি ইত্যাদি) সেটা সেইমত বলে দিতে হয়। এটাকে বলে Boot order। কম্পিউটার চালু করলেই প্রথমে বায়োস নামের এই লুকানো প্রোগ্রামটা মাদারবোর্ড থেকে চালু হয়।

ধাপ ১: বিভিন্ন কম্পিউটারে বায়োসে প্রবেশ করার পদ্ধতি ভিন্ন হয়। কম্পিউটার চালু করে প্রথমেই স্ক্রিনে যে লেখাগুলো আসে সেখানে কোন এক জায়গায় (সাধারণত একেবারে নিচের দিকে) এমন কিছু লেখা থাকে: Press 'X' to Enter Startup যেখানে X এর জায়গায় F2 বা DEL কী লেখা থাকে। নিচের ১নং চিত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্পিউটারের জন্য কোন key চাপতে হয় সেটা দেখানো হল। কম্পিউটার চালু করেই এই key টা বার বার চাপতে থাকুন, যদি ইতিমধ্যেই স্ক্রিনে উইন্ডোজ লোগো চলে এসে থাকে তাহলে ইতিমধ্যেই কী চাপতে দেরী হয়ে গিয়েছে। কম্পিউটার রিস্টার্ট করে আবার চেষ্টা করুন।

(যদি USB কীবোর্ড ব্যবহার করে বায়োসে ঢুকতে না পারেন তাহলে একটা স্ট্যান্ডার্ড PS2 কীবোর্ড ব্যবহার করলে সমস্যা মিটতে পারে।)

ধাপ ২: বায়োস চালু হলে আসা স্ক্রিনে কম্পিউটারের অনেক সেটিংএর অপশন দেখাবে। এই স্ক্রিনে মাউস কাজ করবে না। কাজেই কীবোর্ডের তীর চিহ্নিত বাটনগুলো দিয়ে বিভিন্ন মেনুতে যেতে হবে। সাধারণত স্ক্রিনের নিচের দিকে কোন Key দিয়ে কোন কাজ করা যাবে সেটা লেখা থাকে। আপনার কম্পিউটারের বায়োসের চেহারা এই চিত্র থেকে ভিন্ন হতে পারে।

ধাপ ৩: বুট সংক্রান্ত সেটিংটা খুঁজে বের করে সিলেক্ট করুন। এটার জন্য Boot Order, Boot Sequence, First Boot Device, Boot Management, অথবা এই ধরণের কিছু লেখা থাকতে পারে। পরের চিত্রে Boot লেখা দেখা যাচ্ছে।

ধাপ ৪: বুট অপশনের স্ক্রিনে কম্পিউটারটি কী কী দিয়ে চালু বা বুট করতে পারে তার একটা তালিকা দেখাবে। এই তালিকার ক্রম পরিবর্তন করে সিডি বা ইউ.এস.বি প্রথমে নিয়ে আসতে হবে।

নিচের চিত্রে খেয়াল করে দেখুন; কীভাবে এগুলোর ক্রম পরিবর্তন করতে হবে তা ডানদিকে লেখা আছে। এক্ষেত্রে দেখুন এক জায়গায় + / - চিহ্ন দিয়ে একটি ডিভাইসকে উপরে বা নিচে সরিয়ে ক্রম পরিবর্তন করা যাবে বলে লেখা আছে।

এই পর্যায়ে এসে কোন বুট ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করার অপশন থাকে কোনো কোনো বায়োসে। এইরকম কিছু করার সময় সতর্ক বিবেচনার প্রয়োজন। হার্ড ড্রাইভ বা সিডি রম বা ইউ.এস.বি নিষ্ক্রিয় করলে সেটা থেকে কম্পিউটার চালু হতে পারবে না।

ধাপ ৫: বুট ক্রম পরিবর্তনের পর এটাকে সংরক্ষণ করে তারপর বায়োস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বেশিরভাগ বায়োসেই F10 key বা ESC key দিয়ে এই কাজ করা যায়, যার নির্দেশ স্ক্রিনের নিচের অংশেই দেয়া থাকে। যখন পরিবর্তন সংরক্ষণে কথা জিজ্ঞেস করবে তখন চিত্রের মত ‘Yes’ নির্বাচন করবেন।

ধাপ ৬: বায়োসে কম্পিউটার চালু হওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন ও সংরক্ষণ করার পর, আপনার লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি টি কম্পিউটারে ড্রাইভে প্রবেশ করান এবং কম্পিউটার রিবুট করুন।

ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটার হলে এটাতে উইন্ডোজ চালু অবস্থায় কখনই লাইভ ইউ.এস.বিটা লাগাবেন না, এতে এটার ফাইলগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আপনার বায়োসের চেহারা আগের ছবিগুলোর মত না হলে ঘাবড়াবেন না। স্ক্রিনেই কিভাবে কী করতে হবে তার নির্দেশনা দেয়া থাকে। বোঝার সুবিধার্থে অন্য ধরণের একটা বায়োসের ছবি দেখুন:

প্রথমে কম্পিউটার চালুর পরে বায়োসে প্রবেশের নির্দেশনা:

এবার অন্যরকম চেহারার বায়োস: এখানে লাল রংয়ে সিলেক্ট করা ২য় অপশনটার ভেতরে ঢুকতে হবে।

এবার অপশন পরিবর্তন করার স্ক্রিন

তথ্য ও চিত্রের জন্য কৃতজ্ঞতা:

লাইভ সিস্টেমের ব্যাপারে:
আরও বিস্তারিত এখানে: http://en.wikipedia.org/wiki/Live_CD

লাইভ সিডি তৈরীর ব্যাপারে:
http://www.ubuntu.com/

লাইভ ইউএসবি তৈরীর ব্যাপারে:
www.ubuntu.com
http://unetbootin.sourceforge.net/

বায়োস পরিবর্তনের ব্যাপারে:
http://www.whitecanyon.com/how-to-change-boot-order.php ;
http://www.notebookdatabase.com/2008/03/14/how-to-boot-your-notebook-from-a-cd-or-dvd/

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

বহুদিন যাবৎ নপিক্স চালিয়ে বেশ মজা পাচ্ছি


নপিক্স (knoppix) লিনাক্স ভিত্তিক আরেকটি অপারেটিং সিস্টেমের নাম। এটা সরাসরি ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে জার্মানীতে তৈরী। জনপ্রিয় উবুন্টুও কিন্তু ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে তৈরী, তবে উবুন্টু টিম নিজেরাও একটা সফটওয়্যার রিপোজিটরি মেইনটেইন করে। নপিক্সের বৈশিষ্ট হল এটা একটা লাইটওয়েট বা হালকা অপারেটিং সিস্টেম যেটা মূলত লাইভ মোডে চলার জন্য তৈরী করা হয়েছে। তবে চাইলে এটা হার্ডডিস্কেও ইনস্টল করা যায়, যার ইনস্টলার এর সাথেই দেয়া আছে। নপিক্সের বর্ণনা করার সাথে সাথে বোঝার সুবিধার্থে হালকা আর লাইভ বলে কী বুঝায় সেটাও ব্যাখ্যা করছি।
হালকা সিস্টেম
হালকা বলতে বুঝানো হচ্ছে যে এটা চালাতে রিসোর্স কম লাগে -- কম ক্ষমতার প্রসেসর এবং কম মেমরিতেও এগুলো চলে। তবে বেশ কিছু রিভিউয়ে নপিক্সকে দৈত্য বলা হয়েছে এর আকারের কারণে (ক্ষমতার কারণেও বলা হতে পারে  dream )। আরও অনেকগুলো হালকা অপারেটিং সিস্টেম আছে যেগুলোর আকারও খুব ছোট। একটা অপারেটিং সিস্টেমকে যত বেশি সুবিধাজনক করার চেষ্টা করা হবে সেটার আকার এবং চাহিদা তত বাড়তে থাকবে। তাই হালকা অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে মূলধারার অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক সুবিধাকেই ছাড় দিতে হয়। একটা মূলধারার অপারেটিং সিস্টেম লাইভ চালাতে ৩৮৪ মেগাবাইট মেমরি লাগে, আর এর ব্রাউজার, অফিস সহ অন্য নিত্য ব্যবহার্য সফটওয়্যারসহ চালাতে অন্তত ৫১২ মেগাবাইট ড়্যাম রিকমেন্ড করা হয়। আমার বাসার পিসিটাতে প্রসেসর সেলেরন ডি (পেন্টিয়াম ৪ এর তূল্য) আর মেমরি ৫১২ মেবা - এতে খুব চমৎকার ভাবেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন উবুন্টুতে সমস্ত কাজ করছি।
প্রথমেই যে জিনিষটা হালকা সিস্টেমগুলোতে আলাদা বা ছাড় দেয়া হয়েছে সেটা হল গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস বা ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট; ভয়ের কিছু নেই এতে DOS এর মত টেক্সট বা কমান্ড লাইন ভিত্তিক কিছু দেয়া হয় না, বরং এতেও মূলধারার মতই একই রকম দেখতে একটা গ্রাফিকাল ইন্টারফেস দেয়া হয়। তবে সেই ইন্টারফেসে অনেক ধরণের অপশন বা সুবিধা মূলধারার ইন্টারফেসের তুলনায় কম থাকে। কম সুবিধা নিয়ে কাজ করতে হয় বলে এগুলো কম রিসোর্সে অনায়েসেই চলে। উইন্ডোজে ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টে উইন্ডো ম্যানেজার হল এক্সপ্লোরার, একই সাথে ফাইল ব্রাউজারও এক্সপ্লোরার এমনকি ইন্টারনেট ব্রাউজারও এক্সপ্লোরার  -- এজন্যই কখনো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার চালু না হলে, ফাইল ব্রাউজারের এড্রেস বারে ওয়েব ঠিকানা লিখে দিলেই সেটাই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে রূপ নেয়। এক্সপির ক্ষেত্রে এর নাম ছিল লুনা, উইন্ডোজ সেভেনে সেটার নাম এ্যারো; আবার ম্যাকেরটার নাম অ্যাকোয়া। লিনাক্সের মূলধারার ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট হল গনোম (gnome), উবুন্টুতে এর মধ্যে নটিলাস নামক ফাইল ম্যানেজার ব্যবহৃত হয়। আবার কুবুন্টুতে KDE বা K Desktop Environment ব্যবহৃত হয়, যা অনেক বেশি ফীচার সম্পন্ন এবং এর মেমরি চাহিদাও বেশি। হালকা এনভায়রনমেন্টের মধ্য XFCE, LXDE, ROX, Ambient ইত্যাদি রয়েছে। নপিক্সে LXDE ব্যবহৃত হয়েছে, এর ফাইল ম্যানেজার বা ব্রাউজার হল: PCManFM। আরো হালকা পাপ্পি লিনাক্সে ROX ব্যবহৃত হয়।
অপর যেই মূল জিনিষটাতে ছাড় দেয়া হয় সেটা হল অফিস সফটওয়্যার। পূর্ণ ফীচার সম্পন্ন লিব্রে অফিসের বদলে হালকা সিস্টেমগুলোতে কম ফীচার সম্পন্ন টেক্সট বা ডকুমেন্ট এডিটর ও স্প্রেডশীট প্রোগ্রাম দেয়া হয়। ঠিক এই কারণেই হালকা সিস্টেমগুলো আমার ক্লাসরুমে বা পিসিতে ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে না। কারণ আমার কাজের ধরণের জন্য মূল কাজগুলো এই অফিস সফটওয়্যার নির্ভর, তাই সেটাতে পূর্ণ শক্তি চাই আমার। নপিক্সে এই ব্যাপারটায় ছাড় দেয়নি, পূর্ণ শক্তির লিব্রে অফিস দেয়া হয়েছে, যা লাইভ সিস্টেম থেকেও ব্যবহার করা যায়।
আমার নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে এবং লেখাটাকে সহজপাচ্য রাখার জন্য বিস্তারিত কিছু লিখলাম না। ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়াতে এই সংক্রান্ত পৃষ্ঠাটি দেখতে পারেন (http://en.wikipedia.org/wiki/Desktop_environment)

লাইভ মোড
লাইভ সিডি কী সেটা আপনার জানা থাকলে এই অংশটা বাদ দিয়ে পড়তে পারেন।
লাইভ মোড হল লাইভ সিডি বা লাইভ ইউএসবি থেকে একটা সিস্টেমকে ইনস্টল না করেই চালানো। হার্ডডিস্কে কোন কিছু ইনস্টল না করেই এক্ষেত্রে সিডি, ডিভিডি বা পেনড্রাইভ থেকে একটা অপারেটিং সিস্টেমকে চালানো হয়। অপারেটিং সিস্টেমটি এজন্য তার প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ফাইলগুলো কম্পিউটারের মেমরি বা RAMএ কপি করে নেয়, এবং সেখান থেকেই চলে, হার্ডডিস্কে একটি আঁচড়ও ফেলে না। লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশন বা অপারেটিং সিস্টেমর সিডি, ডিভিডই এই সিস্টেমে করা হয় যেন ইনস্টলের ঝামেলায় না গিয়েই কৌতুহলী কেউ এটা সম্পর্কে জানতে পারে। তাই লাইভ সিডির অর্থ দাঁড়ায় - এটা জীবিত এবং নিজে নিজেই সবকিছু করতে পারে :p।
লাইভ সিস্টেমগুলো শুধু সিডিতেই হয় তা নয়, এগুলো বড় আকার হলে ডিভিডিতে নেয়া যায়। আবার পেনড্রাইভ এবং ফ্লাশ মেমরি কার্ডও লাইভ বুটেবল করা যায়। এমনকি একটি পেনড্রাইভে একত্রে অনেকগুলো লাইভ অপারেটিং সিস্টেমও রাখা যায়। মেমরি ড্রাইভে এটা নেয়ার সুবিধা হল, দরকার না হলে এটা মুছে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।
লাইভ সিস্টেমের সুবিধা হল, 
  • ইনস্টল না করেই একটা অপারেটিং সিস্টেমে কী আছে আর কী নাই সেটা বোঝা যায়, ফলে এটা আমার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম কি না সেটা ইনস্টল না করেই চালিয়ে দেখে নেয়া যায়।
  • হার্ডডিস্ক ছাড়াই কম্পিউটার চালানো যায়। হার্ডডিস্ক কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন হার্ডডিস্ক ক্রয়ের আগ পর্যন্ত এভাবে কাজ চালানো যাবে।
  • কিংবা পাসওয়র্ডের কারণে কোন কম্পিউটার খুলতে না পারলে লাইভ বুট করে সেটা দিয়ে আপনার কাজ করতে পারেন (মেইল চেক, ডকুমেন্ট লেখালেখি, কাউকে আপনার করা কাজের ফাইল দেখানো ইত্যাদি)
  • ভাইরাস বা অন্য কোনো কারণে একটা কম্পিউটার হার্ডডিস্ক থেকে চালু হতে না পারলে, লাইভ সিডি বা ইউএসবি থেকে বুট করে এটার হার্ডডিস্কে থাকা জরুরী ফাইল অন্য মিডিয়াতে কপি করে আনা যায়। দরকার হলে হার্ডডিস্কে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা ভাইরাসও মুছে ফেলা যায়।
  • কারো পেনড্রাইভে প্রয়োজনীয় ফাইলের সাথে চুপিসারে ভাইরাস আসছে এমন আশংকা করলে আর নিজের এন্টিভাইরাসে ভরসা না থাকলে, লাইভ লিনাক্স বুট করে তারপর সেই পেনড্রাইভ থেকে জরুরী ফাইল কপি করে নেয়া যায়, আবার ভাইরাস ফাইল দেখলেও ওগুলোকে দেখে দেখে মুছে ফেলা যায়। (আমি আগে অফিসে বাধ্য হয়ে উইন্ডোস ব্যবহারের সময় এই কাজ করতাম)
  • কোনো কম্পিউটারের ম্যালওয়্যার আপনার সংবেদনশীল ডেটা, পাসওয়র্ড এসব চুরি করছে এমন আশংকা করলে, লাইভ সিডি থেকে বুট করে কাজ করে সেই আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। (কিছু অনলাইন ব্যাংকিং‌-এর জন্য এমন লাইভ সিডি দেয়ার কথা শুনেছিলাম)
লাইভ সিস্টেমের কিছু অসুবিধাও রয়েছে:
  • এটা যেহেতু সিডি বা ডিভিডি থেকে প্রোগ্রাম চালু করে, তাই একটু ধীরগতির হয়। কারণ সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের হার হার্ডডিস্ক থেকে ডেটা ট্রান্সফারের অন্তত ১৫ ভাগের একভাগ। এছাড়া ঐ প্রোগ্রামগুলো কম্প্রেস অবস্থায় থাকে, ডেটা ট্রান্সফারের পর সেগুলোকে আবার ডিকম্প্রেস করে তবেই ব্যবহার করে। সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের সময়টা ইউএসবি বুটেবল করলে কমিয়ে আনা যায়, তবে ডিকম্প্রেস করার সময়টাকে এড়ানো সম্ভব হয় না এতেও।
  • সাধারণত সিস্টেমের কাস্টমাইজেশন সংরক্ষিত হয় না। অবশ্য পেনড্রাইভ বুটেবল করলে নিজের সেটিংসগুলো সংরক্ষণ করা যায়।

নপিক্সের অন্য সুবিধাসমূহ

হালকা ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট হওয়ার পরেও পূর্ণশক্তির অফিস সফটওয়্যার থাকাতে নপিক্সকে আমার বেশ পছন্দ। কারণ এতে করে দূর্বল পিসিতেও এখন সম্পুর্ন প্রয়োজন মেটাতে পারছি। আর বাড়তি হিসেবে এর লাইভ সিডিতেই দারুন সব গ্রাফিকাল ইফেক্ট চালু অবস্থায় থাকে। ক্লাসরুমে এই ঝাকানাকা গ্রাফিকেল ইফেক্ট দেখেই কিছু ছাত্র আমার কাছ থেকে এটা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে। এছাড়া এটাতে মাল্টিমিডিয়া চালানোর কোডেকগুলো দেয়া থাকে, ফলে অতিরিক্তি কিছু ডাউনলোড বা ইনস্টল না করেই সাধারণ গান বা মুভি চালানো যায়।
নপিক্সের যেই সফটওয়্যারগুলো এর লাইভ সিডিতেই দেয়া থাকে তার কয়েকটা হল এমন:
  • অফিস: লিব্রে অফিস - লেখালেখি, হিসাব নিকাশ, প্রেজেন্টেশন, আঁকাআঁকি, ডেটাবেস সবগুলো কাজই করা যায় অনায়েসে। মাইক্রোসফট অফিসের ফাইলগুলোও এতে খোলা ও এডিট করা যায়। এছাড়া সরাসরি পিডিএফ বানাতে পারা লিব্রে অফিসের পুরাতন একটা দারুন বৈশিষ্ট।
  • ব্রাউজার: ক্রোমিয়াম - দারুন এই ব্রাউজারটা সম্পর্কে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নাই।
  • গ্রাফিক্স:  গিম্প - গ্নুহ ইমেজ ম্যানিপুলেশন প্রোগ্রাম বা গিম্প হল ছবি এডিট করার জন্য দারুন একটা সফটওয়্যার। ছোটখাট এডিটিংএর কাজ করার জন্য এটা ফটোশপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর ইন্টারফেসটাও ফটোশপের মত।
  • সিডি ডিভিডি রাইটার:  ব্রাসেরো নামের সফটওয়্যারটা দেয়া আছে।
  • মাল্টিমিডিয়া: গনোম প্লেয়ার, যা অডিও ও ভিডিও চালাতে পারে। এছাড়া শব্দ মিশানোর জন্য অমিক্স নামে একটি সরল মিক্সার দেয়া আছে।
  • মেসঞ্জার: পিজিন - এটা দিয়ে একই সাথে ইয়াহু, গুগল সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় মেসেঞ্জারের সাথে সংযুক্ত হয়ে চ্যাট করা যায়।
  • এছাড়া উইন্ডোজের প্রোগ্রাম রান করার জন্য এতে wine নামক একটা প্রোগ্রাম দেয়া আছে।
  • ডিস্ক পার্টিশনিঙের জন্য জিপার্টেড। IP ট্রাফিক অ্যানালাইজার ইত্যাদি সহ অনেক দারুন সফটওয়্যার দেয়া আছে এতে -- যার বেশিরভাগই আমি ব্যবহার করি না ;-p ।
অনেকদিন পর আমার দূর্বল নেটবুকটাকে খুব সাবলিলভাবে চলতে দেখছি এই নপিক্সের কল্যানে। আমি অবশ্য হার্ডডিস্কে ইনস্টল করে নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছি। এই লেখাটিও নপিক্সে বসেই লেখা। এর একটা স্ক্রিনশট দেখুন:
https://lh6.googleusercontent.com/-bb7OG0Jm8wI/TlnGiqyaqqI/AAAAAAAABAw/f1F7W4kvPec/s640/Knoppix%252520on%252520my%252520netbook.jpeg
আমার নেটবুক হল HP mini 1001TU এটম n470 প্রসেসর, ১ গিগা ড়্যাম।
তবে নপিক্স চালানোর জন্য কমপক্ষে যেই ক্ষমতা লাগবে তা হল:
  • ইন্টেল কম্পাটিবল প্রসেসর (i486 অথবা পরেরগুলো)
    ৩২ মেবা RAM এ এটা টেক্সট মোডে চলবে। কমপক্ষে ৬৪ মেবা লাগবে LXDE গ্রাফিক্স মোডে চালানোর জন্য (অন্য অফিস প্রোগ্রাম চালানোর জন্য কমপক্ষে ১২৮ মেবা ড়্যামের সুপারিশ করা হয়।)
    বুটযোগ্য সিডি রম ড্রাইভ, কিংবা একটা বুট ফ্লপি এবং সাধারণ সিডিরম(IDE/ATAPI or SCSI)
    আদর্শ SVGA-কম্পাটিবল গ্রাফিক্স কার্ড
    সিরিয়াল বা PS/2 মাউস বা IMPS/2-কম্পাটিবল USB-মাউস
ডাউনলোড
বেশিভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের মতই নপিক্স একটি ফ্রী অপারেটিং সিস্টেম। এটা ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে (৬৯৭মেবা):
বিট টরেন্ট: http://torrent.unix-ag.uni-kl.de/
কিংবা: http://www.knopper.net/knoppix-mirrors/index-en.html
সরাসরি সিডি বা সফটকপি সংগ্রহ
FOSSBD থেকে আমরা কিছু নপিক্স সিডি রাইট করিয়েছি। সেটা সংগ্রহ করতে চাইলে(২০ বা ২৫ টাকা লাগবে) কিংবা সফট কপি নিজের পেনড্রাইভে নিতে চাইলে আমার বা contact এট fossbd.org সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
https://lh5.googleusercontent.com/-elpF1cJTj30/TloUF4wP3SI/AAAAAAAABBQ/xNWl8j96EaQ/s800/knoppix_cd.jpg

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১১

"লিনাক্স ডে - ২০১১" - বাংলাদেশ, কুড়ি বছর পূর্তির উৎসব আয়োজন

লিনুস টোরভাল্ড নামক একজন দুষ্টু ছাত্র সেই সময়ে জানতো না যে তার এই দুষ্টামীর ফলে বৈপ্লবিক কিছু ঘটে যাবে ২০ বছর পর। সে এটাও জানতো না যে 'ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ' নামে একটি দুষ্টু সংগঠন ২০১১ সালে তার দুষ্টামীর জন্মদিন পালন করার নিয়ত করবে। ঐ দুষ্টু লোকটি আরও জানতো না যে সেই জন্মদিন আবার রোজা রমজানের দিনে পড়বে। জানলে নিশ্চয়ই ঈদের পরের কোন তারিখে সেই দুষ্টামি রিলিজ দিত। অবশ্য তাতেও শেষরক্ষা হত না, কারণ কোনো না কোনো বছর সেটা রোজা রমজানের দিনে পড়তোই, কারণ আরবী চন্দ্রবর্ষ ধরে যেই ক্যালেন্ডার সেটা প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে সাধারণত ১১ দিন কম থাকে - তাই প্রতিবছরই রোজা বা ঈদগুলো ১১ দিন করে এগিয়ে আসে।

দুষ্টু ছাত্রটি তার স্যারের দেয়া অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। এ আর এমন কি! .... এরকম অসন্তুষ্ট তো আমরা হর-হামেশাই হই। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারদের দেয়া বাঁশগুলো রাখার মত জায়গা থাকে না; তা-ও ভদ্রতা করে হাসিমুখে নিয়ে ফেলি। কিন্তু এই দুষ্টু ছাত্র করলো কি, সেটা নিতে রাজি হল না। শুধু নারাজি হল তা-ই না, ব্যাটা নিজেই একটা কার্নেল লিখে ফেললো। লেখার পার্টটা আমরা সবাই কম বেশি পারি, কিন্তু এটা একটা কার্নেল, যা কিনা অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ ভোমরা। ঐ দুষ্টু ছাত্র অবশ্য এই অপারেটিং সিস্টেম নিয়েই লেখাপড়া করতেছিলো - তাই হয়তো এরকম দুষ্টামি করা ওর জন্য সহজ হয়ে গিয়েছিল। হুহ্ ... ... নাইলে আমিও ঐ রকম কিছু একটা কইরে ফেলতাম। তবে চরম দুত্তু লিনুস সেই সুযোগও দিতে চায় নাই অন্যদের -- তাই তার লেখা সেই কার্নেলটা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিল।

উন্মুক্ত কার্নেল পেয়ে দুনিয়ার অন্য দুষ্টু আর বোকাগুলো করলো কি, সেটাকেই আরো শক্তিশালী করার জন্য এইটা সেইটা কোডিং যোগ করতে লাগলো। ফলে সেই কার্নেলটা আস্তে আস্তে শয়তানের মত শক্তিশালী হয়ে উঠলো। পরবর্তীতে সেটা নিয়ে লুকজন সার্ভারের ব্যবসা করে রমরমা হইলো -- দুনিয়ায় এখনো বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভার লিনুস দুষ্টুর সেই শয়তান সিস্টেম, যেটার নাম লিনাক্স, দিয়ে চলে। পরে আরো কিছু খারাপ লোক এইটা দিয়ে ডেস্কটপও সহজ করে বানিয়ে ফেললো ... ....

উফ্ ....টাইপ করতে করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। যাই, চা খেয়ে আসি .... ওহহো কেমনে কি! রোজা রমজান বলে কথা! -- চা খাওয়াও যাবে না এখন। বাকী কাহিনী জানতে চাইলে অনুষ্ঠানে আইসেন। এইবার ঘটনাটা এবার একটু অফিসিয়াল ভাষায় দেই:====
"লিনাক্স ডে - ২০১১" - বাংলাদেশ, কুড়ি বছর পূর্তির উৎসব আয়োজন।

১৯৯১ সালের ২৫শে আগস্ট, হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তির এক ছাত্র লিনুস টরভ্যাল্ডস ঘোষনা দেন উন্মুক্ত সোর্স ভিত্তিক কার্নেল “লিনাক্স” রিলিজের। সেই থেকে আজ অবধি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম সারা বিশ্বের সার্ভারের জগৎটা দাপিয়েই বেড়াচ্ছে। কিন্তু লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো এখন আর শুধুই সার্ভারের জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই বিষয়টা প্রযুক্তিপ্রেমী সব বাংলাদেশী কে জানাতে, বোঝাতে এবং ডেক্সটপ দুনিয়ায় লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের বীরত্বপূর্ণ সাফল্য গাঁথার কিছু ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ (Foundation for Open Source Solutions Bangladesh) বা সংক্ষেপে এফওএসএস বাংলাদেশ (FOSS Bangladesh) এবছরে লিনাক্সের ২০ তম জন্মবার্ষিকীতে “লিনাক্স ডে – ২০১১” উদযাপন করতে যাচ্ছে। আপনি যদি প্রযুক্তিপ্রেমী হোন এবং লিনাক্স সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকেন তো চলে আসুন আমাদের এ আয়োজনে।

আয়োজনের তারিখ ও সময়: ২৫ শে আগস্ট, ২০১১ইং, বৃস্পতিবার। সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এ আয়োজন।

আয়োজন স্থল: ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বা টিএসসি (লবি ও গেমস রুম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আয়োজনের বিস্তারিত সূচী:
১। সকাল ১০টায় ব্যানার-ফেস্টুন সহ পদযাত্রা/শোভাযাত্রা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে শুরু হয়ে, রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র পাখি চত্বরে এসে শেষ হবে।

২। সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী টিএসসির করিডোর আর লবিতে বিভিন্ন ধরনের লিনাক্স ডিস্ট্রোর ইতিহাস আর চিত্রসহ ডঙ্গল, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে প্রদর্শনী চলবে এবং এ আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

৩। আরো থাকছে ওপেন সোর্স এবং লিনাক্স নিয়ে আমাদের এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংগঠনের সেবামূলক কাজকর্মের ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, দিনব্যাপী।

৪। বিকাল ৪টা থেকে শুরু হবে আমন্ত্রিত অতিথি ও দশর্কদের মাঝে মত বিনিময় এবং আলোচনা অনুষ্ঠান।

৫। এছাড়াও আয়োজনস্থলে বিভিন্ন জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোর পেনড্রাইভ বা পছন্দের মিডিয়াতে অথবা সিডি/ডিভিডিতে বিতরনের ব্যবস্থা থাকবে।
====

আপনি আসতেছেন এইটা আগে থেকেই জানাতে চাইলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন এখানে ক্লিক করে

ঐদিন টিএসসি বন্ধ থাকে। তাই ইফতার করতে চাইলে আশেপাশের ডাস ও অন্যান্য জায়গায় যেতে হতে পারে।

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

এবার সিলেটে পেঙ্গুইন মেলা (১৫-জুলাই-২০১১)

পাইরেসির কালিমামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে লিনাক্স ও ওপেন সোর্স ভিত্তিক সফটওয়্যারকে ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ (এফওএসএস বাংলাদেশ) এর আয়োজনে ও সিলেটের মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির সহযোগীতায় লিনাক্স ও উন্মুক্ত সোর্স ভিত্তিক সফটওয়্যার ও সেবাসমূহ নিয়ে জনসচেতনতামূলক আয়োজন ''পেঙ্গুইন মেলা - ২০১১'' অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ই জুলাই ২০১১ইং, শুক্রবারে।

'পেঙ্গুইন মেলা - ২০১১'র সিলেট বিভাগীয় এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে সিলেটের জিন্দাবাজারে (আলহামরা) অবস্থিত মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির সম্মেলন কক্ষে। উক্ত অনুষ্ঠানে পাইরেসি, ওপেনসোর্স ও লিনাক্স বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরো রয়েছে আগত দর্শকদের সাথে মতামত বিনিময় ও আলোচনার সুযোগ। এছাড়া অনুষ্ঠানস্থল থেকে ওপেনসোর্সড থ্রি-ডি গেমসহ লিনাক্স মিন্ট ১০ জুলিয়া'র সংকলিত ডিভিডি সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া ইউএসবি মেমরি কার্ডেও লিনাক্সের সিডির সফটকপি সংগ্রহ করা যাবে। ২০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে অনুষ্ঠানের দিন উক্ত স্থানেই রেজিষ্ট্রেশন করার মাধ্যমে আগ্রহী যে কেউই এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

====
অনুষ্ঠানের শিরোনামঃ "পেঙ্গুইন মেলা - ২০১১" সিলেট বিভাগ

আয়োজকঃ ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ

সহযোগীতায়ঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয়, জিন্দাবাজার, সিলেট

তারিখ ও সময়ঃ ১৫ই জুলাই ২০১১, রোজ শুক্রবার। বিকাল ৩:৩০মিনিট থেকে সন্ধ্যে ৬:৩০ মিনিট

আয়োজন স্থলঃ মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষ, জিন্দাবাজার, সিলেট

অনুষ্ঠানের বিস্তারিত সূচীঃ

লিনাক্স পরিচিতি, ইনস্টলেশন ও ব্যবহার
   (বিকাল ৩:৩০মিনিট থেকে সন্ধ্যে ৫:০০ মিনিট)
    => লিনাক্স পরিচিতি                                            -- ৩০ মিনিট             
    => লিনাক্স মিন্ট পরিচিতি                                      -- ৩০ মিনিট
    => লিনাক্স মিন্ট ইন্সটল ও কনফিগার করা                   -- ৩০ মিনিট
 
চা-বিরতি                                                    -- ৩০ মিনিট

সমস্যা সমাধান
   (বিকাল ৫:৩০মিনিট থেকে সন্ধ্যে ৬:৩০ মিনিট)
    => দর্শকের অংশগ্রহনে আলোচনা                            -- ৩০ মিনিট
    => প্রশ্নোত্তর ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান                     -- ৩০ মিনিট

===
দেখা হবে সিলেটে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১১

কাজ-কর্ম নিয়ে উর্বর(!) চিন্তাভাবনা

ঢিসক্লেইমার: এই লেখাটা আমার উর্বর মস্তিষ্কের সাময়িক উত্তেজনা এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে নামানো হয়েছে। কাজেই ইহার কোন তথ্যসূত্র চাইলে নিজ দায়িত্বে খুঁজিয়া লইতে হইবেক -- আমার মনে হয়, এর সূত্রগুচ্ছগুলোর কিছু অংশ আমার তথাকথিত উর্বর মস্তিষ্কে জটা পাকাইয়া রহিয়াছে।

যদি বলা হয় কী কাজ কর? তাহলে আমার মেয়ে হয়তো বলবে "কুকুল দেখি' -- আসলেই সে ইউটিউবে চালিয়ে রাখা কুকুরের ঘেউ ঘেউ দেখছে। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমার প্রতিষ্ঠান আর পদবী বলবো হয়তো। অর্থাৎ কাজ বলতে আমি চাকুরী বাকুরীকেই বুঝিয়ে থাকি -- এই কাজের বিনিময়ে আমি বেতন পাই। এই লেখার পয়েন্ট অব ভিউ হল, যেই কাজ কোন না কোন ভাবে সমাজে অবদান রাখে। ... ... নাহ্ ঠিক মনমত হল না ... ... আরেকবার একটু গুছিয়ে শুরু করার চেষ্টা করি:

আমার মেয়ের বয়স ১বছর ৮মাস ৭ দিন। ওর কাজ হিসেবে "কাপল ধুই' কিংবা "কাক দেখি' ঠিক আছে বলেই মনে হয়। আবার এর চেয়ে একটু বড় হলে ওকে স্কুলে পাঠাতে হবে -- তখন কাজ হবে লেখাপড়া শেখা এবং তার সাথে সাথে অন্য মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, অন্য প্রাণীদেরকে তো এ্যাত কঠিন স্কুল লাইফ পার করতে হয় না, আমাদের হয় কেন? কেন এই শৃঙ্খলা, কেন আমরা অন্য প্রাণীদের মত পারি না? এই প্রশ্নের একটা সুন্দর উত্তর হয়তো আছে ... ... । সেটা যাই হোক মোটা দাগে মনে হয়, বড় বা এডাল্ট হওয়ার আগে আমরা শিশু, কিশোরদেরকে সংসারের বৃহৎ কর্মযজ্ঞে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি -- তাই শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর মধ্যে কোন একটা দক্ষতা বা স্কিল উন্নয়নের চেষ্টা হয়। তাহলে ব্যাপারটা হল -- সেই কর্মযজ্ঞটাই হল আসল কাজ, আর আগেরগুলো কাজ হলেও সেটা সেই আসল কাজের পূর্বপ্রস্তুতি!

আর এই আসল কাজ বলি সেগুলোকেই যেগুলোর বিনিময়ে আয় উপার্জন হয় এবং যা সমাজব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভাল বা পজিটিভ অবদান রাখে। কে কী কাজ করে বা একটা সমাজে বা দেশে বা এলাকায় কাজের অবস্থা কী, এসব পরিসংখ্যান বা অর্থনৈতীক হিসাব কিতাবে আমরা তাই "কুকুল দেখা'কে গণ্য করি না কিন্তু "সকালে বাবা কাজে যায়' এটা হিসাবে ধরি। বেকারত্বের হিসাবের সময়েও এই ব্যাপারটাকেই উল্টাদিক থেকে হিসাব করি।

চাকুরী বা ব্যবসা করা যে কাজ সেটা আমরা জানি, কিন্তু যদি একটু বোকার মত কিংবা বেশি চালাকের মত প্রশ্ন করি -- ভিক্ষা করা, চুরি করা কিংবা খেলাধুলা করা, কবিতা লেখা কি কাজ? এগুলো সম্পর্কে আমার কিছু বিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনা আছে। সেই চিন্তাভাবনাকে সরলীকৃত রূপে বলার জন্য কাজের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার সাহায্য নিতে পারি:

বিজ্ঞান বইয়ে পরেছিলাম: কাজ = বল x সরণ .... .... যদিও এই সংজ্ঞার মধ্যে বিরাট ফাঁক আছে সেটা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় (আপেক্ষিক গতি স্খিতি + প্রাথমিক ও শেষ অবস্থা ইত্যাদি)। তাই সরাসরি এর গাণিতিক অর্থ নিয়ে মাথা ঘামাবো না। বল অর্থ কতটুকু ইফোর্ট বা প্রচেষ্টা দেয়া হচ্ছে, আর সরণ = বলে কতটুকু পরিবর্তন করছে সেটা ধরে নিলেই আমার তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে করি। তবে, আবার একটু মনে করিয়ে দেই, ইহা একটি তথাকথিত বিশ্লেষন অথবা চিন্তাভাবনা - যা মাথায় কুটকুট করছিল দেখে বের করে দিলাম।

ভিক্ষা করা
সারাদিনে একজন ভিক্ষুকে ভিক্ষা সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয় এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকার কথা না। কিন্তু সেটা কি কোনো প্রোডাক্টিভ কাজ? এই কাজকে কি আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে গণ্য করি? প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম এতে কম নয়, কিন্তু সরণ? এটা তো মনে হয় ঋণাত্নক। সমাজে এটা বিরক্তি ছাড়া কিছুই দেয় না।

আচ্ছা, ভিক্ষুকদেরকে যদি একটা অপশন দেয়া হয়, যে সারাদিনে তারা একই পরিমাণ পরিশ্রম করবে এবং একই পরিমান ইনকাম করবে কিন্তু সেটা ভিক্ষা করে নয় - বরং একটা ভাল কাজ করে: সেটা কেমন হয়? একমাসে যা ভিক্ষা দেই সেটা সেই কাজ করার ফান্ডে দিয়ে রাখবো। এই কাজ কেমন হতে পারে সে জন্য একটা ব্রেইন স্টর্মিং দরকার, আর প্রয়োগের জন্য একটা আগ্রহী আর্গানাইজিং গ্রুপ দরকার। ব্রেইন স্টর্মিং এর শুরুতেই কিছু আইডিয়া দিয়ে রাখি:
১। কোলে শিশু নিয়ে ভিক্ষা করে যে: বাসায় বাচ্চা রাখার কাজ।
২। সাধারণ ভিক্ষুক: রাস্তায় বা অন্য কোনো পাবলিক প্লেস (স্টেশন, স্কুল) পরিষ্কার রাখার কাজ + ভোকাল: দয়া করে বা আল্লার ওয়াস্তে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
৩। বিকলাঙ্গ: অফিসের বিভিন্ন ইনফরমেশন বলবে -- যেমন: মানি অর্ডার করতে হলে ৪ নম্বর কাউন্টারে যান। ইত্যাদি।


চুরি ডাকাতি করা
এই কাজ করতেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আবার পদাধিকার বলেও কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমে এই কাজ করে থাকেন। এগুলো কি কাজ?

কবিতা বা অন্য সাহিত্য চর্চা
এগুলো সমাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান - সেটা অস্বীকারের কোন উপায় নাই। কিন্তু একজন লোক কখন কাজ হিসেবে এগুলোর কথা বলতে পারে? -- যখন কবিতা আবৃত্তি করে, গান গেয়ে, বা গল্প-কবিতা-উপন্যাস ইত্যাদি লিখে বই ছাপিয়ে বা নাটক সিনেমার স্ক্রিপ্টে দিয়ে উপার্জন করতে থাকে -- তাই তো! হুমায়ুন আহমেদ -- লেখক; কিন্তু আমি এই ব্লগ লেখা কি কাজ হিসেবে সহজেই বলতে পারি?

স্পোর্টস
কেউ যদি নিজের আনন্দের জন্য খেলাধুলা করেন তাহলেও কিন্তু সাপোর্টিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য সেটা লাভজনক। কারণ খেলা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সরাঞ্জাম বিক্রি বাড়বে এতে। খেলাধুলা করা মানুষের কর্মদ্যোম ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটাকে কি আমরা কাজ বলি? কী কাজ করেন -- এমন প্রশ্নের জবাবে যদি বলা হয় ক্রিকেট খেলি - তাহলে বুঝতে হবে পেশাদার খেলোয়ার। শখের খেলা কিংবা অবসর বিনোদনের খেলাকে সাধারণত আমরা কাজ করা হিসেবে বলি না, তবে নিঃসন্দেহে সেটা কাজের অনুঘটক হিসেবে বেশ কার্যকর।

কম্পিউটারে কাজ করা
এখানেও যদি উপার্জনের সাথে জড়িত করে চিন্তা করি তাহলে বেশ একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দাঁড়াবে। আমার জন্য অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার কাজ - কারণ আমার লেকচার, প্রশ্নপত্র এবং প্রেজেন্টেশন বানাতে হয় চাকুরীর প্রয়োজনেই। মাঝে মাঝে সেই ডকুমেন্টগুলোতে গ্রাফিক্সের কাজ যথা: কিছু লোগো, কিছু ডিজাইন, কিছু ড্রইং লাগে। কিন্তু আমাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার বলা যাবে না। আমার গ্রাফিক্স, ডিজাইন বা ড্রইং দিয়ে উপার্জনক্ষম কোন পত্রিকা বা প্রকাশনা হয় না। ব্রাউজিং কোনো কোনো সময় কাজ -- কারণ, আমি এর দ্বারা প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাই যা লেকচার, প্রেজেন্টেশনে কাজে লাগে; পাশাপাশি জরুরী দাপ্তরিক ইমেইল, নোটিশ ইত্যাদিও এর মাধ্যমে পাই। তাই ব্রাউজিং কাজ। ব্লগিং, ফেসবুক আমার বিনোদন - এ থেকে উপার্জনক্ষম কোনকিছু এখন পর্যন্ত করিনি, তবে যারা ফেসবুকের অ্যাপস বানিয়ে উপার্জন করে তাঁদের জন্য ফেসবুক কাজের ক্ষেত্র বটে, আর ফেসবুক নির্মাতা বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে।

এখন চেপে রাখা প্রশ্নটা করেই ফেলি -- কম্পিউটারে গেম খেলা কি কাজ? আমার তো গেমের নেশা প্রায়ই কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ... তাই আমার ক্ষেত্রে এটা নেগেটিভ কাজ বা অকাজ। যদি এটা কাজ না হয় তবে, কোন সিস্টেমে যদি গেমিং অপশন তেমন শক্তিশালী না হয় তাহলে এটাকে অকাজের সিস্টেম বলাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে? কিংবা শুধু গেমিং সুবিধা বেশি বলে একটা সিস্টেমকে বেশি কাজের বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে? ... ... এখানে সুক্ষ্ণ বিভেদটা খেয়াল রেখে জবাব দিতে হবে - আমার জন্য যা কাজ না (হয়তো বিনোদন), সেটা অন্য কারো জন্য কাজ হতেও পারে।

শেষ পর্যন্ত কাজ নিয়ে চিন্তাভাবনার জট খুললো নাকি আরো বিষগিট্টু লাগলো সেটা নিয়েই চিন্তাভাবনা বাড়ালাম বলে মনে হয়।

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১১

আরো কত অবাক হওয়া বাকী কে জানে!

কয়েকদিন আগে টেকটিউনস নামক একটি ব্লগ সাইটে লিনাক্স নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম (বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার)। সেখানের একটা মন্তব্যে একজন লিনাক্স সিডি জোগারের উপায় জানতে চেয়েছিলেন। আমি ওনাকে ঠিকানা দিতে বলে জানিয়েছিলাম পাঠিয়ে দেব। সেই অনুযায়ী ওনাকে (এবং আরো দুইজনকে) পরবর্তীতে লিনাক্স মিন্টের ডিভিডি কুরিয়ার করে পাঠিয়েছিলাম।

দেশের লিনাক্স কমিউনিটিতে প্রচলিত প্রথা হল, এমন ক্ষেত্রে সিডির মূল্য আর কুরিয়ারের খরচটা পরবর্তীতে গ্রহীতা, প্রেরকের মোবাইলে ফ্লেক্সি, আইটপআপ ইত্যাদি করে দিয়ে দেন। তবে আমি শুরু থেকেই এরকম করি নাই। একবার অবশ্য নিয়েছিলাম। আমি বলি, আপনি ডিভিডি বা সিডি বুঝে পান, চালিয়ে দেখুন তারপর জানাবেন -- আমি কিভাবে মূল্য শোধ করবেন জানিয়ে দেব।

এই পর্যায়ে আমি তাদেরকে যেটা বলার পরিকল্পনা করে রাখি এবং বলি, সেটা হল: আমাকে এর মূল্য পরিশোধের দরকার নাই; আপনি অন্য একজন সাহায্যপ্রার্থীকে এই একইরকম সাহায্য করবেন -- এতেই আপনার ঋন (!) শোধ হয়ে যাবে। কারণ শুধু আপনার আর আমার মধ্যে লেনদেন সীমাবদ্ধ না থেকে এটা তাহলে ছড়িয়ে পড়বে -- আর সমাজটা এভাবেই সামাজিক হয়।

এই ধারণাটা নতুন কিছু নয়। ছোটবেলায় বড়ভাইদের পকেটের উপর দিয়ে অনেক কিছুই পার করেছি -- তাদেরকে তো সেটা দেয়া যাবে না। আমি সেটা দেই ছোটভাইদেরকে। একইভাবে জুনিয়র কলিগ যদি আমার সাথে ক্যাবে বাসায় আসার পথে লিফট নেয়, তাঁকে বলি শেয়ারটুকু সঞ্চয়ে রাখো, আমি যেমন আগে বড়ভাইদের কাছ থেকে নিয়েছি তেমনি তোমাকেও সামনে ছোটভাইদেরকে দিতে হবে।

বিদেশে যখন নতুন গেলাম, ওখানকার বড়ভাইরা অনেক সাহায্য করেছেন। আমিও যখন একটু পুরানা হলাম, নতুন আগতদেরকে সাহায্য করতাম। --- এভাবেই পারষ্পরিক ভাতৃত্ববোধ বাড়ে, এভাবেই চলা উচিত --- লেনদেনগুলো দুইপক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটা তাই আমার পছন্দ নয়।

অবাক হলাম গতকাল। উনি আমাকে এক ব্যাগ আম পাঠিয়ে দিয়েছেন (জনাব আব্দুর রব সাহেব চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ)। সেই ছড়িয়ে দেয়ার মূলনীতি থেকে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন হলেও আমি সত্যিই আপ্লুত। অন্তত এতে বাসায় - বনের মোষ তাঁড়ানোর জন্য প্রক্ষেপিত কটু কথাগুলো একটু হলেও কমবে।

পঠনের প্রায় ২০ বছর পর নতুন করে এই কবিতাটার মর্মার্থ উপলব্ধি হচ্ছে

The Arrow and the Song
- Henry Wadsworth Longfellow

I shot an arrow into the air,
It fell to earth, I knew not where;
For, so swiftly it flew, the sight
Could not follow it in its flight.

I breathed a song into the air,
It fell to earth, I knew not where;
For who has sight so keen and strong,
That it can follow the flight of song?

Long, long afterward, in an oak
I found the arrow, still unbroke;
And the song, from beginning to end,
I found again in the heart of a friend.

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১১

এ্যাত লাফালাফি, চিল্লাপাল্লা করি কিল্ল্যাইগ্গা?

যাঁরা জানেন না, তাঁদের অনেকেরই মনে চিন্তা খেলা করে, এই লোকগুলো নিজেরা লিনাক্স ব্যবহার করে ভাল কথা, কিন্তু আমাদের পিছে লাগছে ক্যান? এঁদের স্বার্থ কী? এদের কি মহাপুরুষ রোগে ধরছে? কাউরে ইমপ্রেস করতে চায়? নাকি কেউ কি এঁদের টাকা দেয়?: দেয় মনে হয়, অবশ্যই দেয় …. নাইলে কার ঠেকা পড়ছে পকেটের টাকা খরচ করে সিডি বানায় দিবে, সময় খরচ করে আমাদের পেছনে ঘুরবে, ইনস্টল করে দিয়ে যাবে, সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে। আমি আমার মত ভাল আছি, ভাইরাস মারতেছি, রিইনস্টল করছি, এন্টিভাইরাস কিনতেছি … প্রতিনিয়ত এই প্রতিকূল পরিবেশেও আমাকে কত কিছু শিখতে হচ্ছে, লিনাক্সে গেলেও তো শিখতে হবে। … কী?! তোমরা টাকা পাও না কারো কাছ থেকে! তাহলে কি শুধুই দলে ভারী হইতে চাও জন্য এ্যাত কিছু কর? … আচ্ছা ভাল কথা, আমারে বাদ দিয়ে হিসাব কর। … যাও মিয়া ভাগো, আমি চোরাই উইন্ডোজ ব্যবহার করি আমার রিস্কে, তোমার তাতে কী!

জ্বী ভাই, আমার তাতে এসে যায়। আপনি জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আমি কখনই আপনাকে লিনাক্স নিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে যাব না, যদি ইতিমধ্যেই গিয়ে থাকি তবে সেটা ভুল হয়েছে, কিন্তু আপনি চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে তাতে আমার সমস্যা হয়। কীভাবে জানতে চান নাকি?

সম্মান হারাতে চায় না কেউ। বড়লোকের হারানোর মত অনেক কিছু থাকতে পারে, কিন্তু গরীবের সম্মান ছাড়া আর আছে কী? (এই রে! বাংলা ছিঃনেমার ডায়লগ দিয়ে ফেললাম মনে লয় ...) বংশের সম্মান, ব্যক্তির সম্মান ইত্যাদিকে ঘিরে কত ঘটনাই না আবর্তিত হয় চারিদিকে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা আজও দেখছি অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে অপমানিত আত্মসম্মানী মানুষ। আবার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিপথগামী সদস্য বা সদস্যাকে হত্যা করে অনেক জায়গায়: এটাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অনার কিলিং বলে একটা শব্দ আছে ইংরেজিতে।

আপনি চোরাই উইন্ডোজ ব্যবহার করলে আমার সম্মান হারাই আমি। জ্বী, ঠিকই শুনেছেন ….. আপনি চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে শুধু আপনি না সাথে আমিও সম্মান হারাই। আর হারানো সম্মান ফিরানোর জন্যই আমরা নিজেদের পকেটের টাকা আর মূল্যবান সময় খরচ করি, কিন্তু কোনো রকম আত্মহত্যা বা খুনাখুনি করি না (দেখেছেন, আমি কত্ত ভালো!)।

বাংলাদেশ খারাপ মানুষের দেশ, দূর্নীতিতে আগে টানা চ্যাম্পিয়ন ছিল, আর বর্তমানে এটা পৃথিবীতে সফটওয়্যার পাইরেসী তথা চুরীতে ৩য়। এর আগে ২য় পজিশনে ছিল, ইট্টুর লাইগা ফাস্ট হইতে পারে নাই …. আফসুস! এই ব্যাপারটা আপনি উপভোগ করেন কি না আমি জানিনা, তবে আমার কাছে এদেশের নাগরিক হিসেবে অসম্মানজনক মনে হয়।

নিজে জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করেও যদি আপনাদের চোরাই সফটওয়্যারের কারণে আমাকে নাগরিক হিসেবে এই অপমানের ভাগ নিতে হয়, আমার দেশমাতাকে অপমানিত হতে হয় তাতে আমি ক্ষিপ্ত হই। কিন্তু ঐ যে বললাম, সম্মান রক্ষার্থে এখনও খুনাখুনি করি না, তাই লিনাক্স প্রচার করি। আমি টাকা দিয়ে আপনাকে জেনুইন সফটওয়্যার কিনে দিতে পারবো না (দিতে পারলেও সেটা নিতে কি আপনার নিজেকে ছোট মনে হত না?!) - তাই লিনাক্স ব্যবহার করতে বলি। কারণ, বিনামূল্যে জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করার এটাই এখন পর্যন্ত জানা একমাত্র রাস্তা। আর এটা কারো দান নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই ফ্রী সফটওয়্যারের আন্দোলন। এতে আমি সহ সমস্ত ব্যবহারকারীর বিভিন্নভাবে কন্ট্রিবিউট করি - কীভাবে জানতে চান? আজকে থাক, তবে চিন্তা (=দুশ্চিন্তা) কইরেন না, সেই কন্ট্রিবিউশন নিয়ে শীঘ্রই আরেকটা ত্যানা প্যাচানি লেখা নামাবো।

ভাইরাস মাইরাস, সিকিউরিটির সমস্যা অথবা উত্তেজনা - সেটা আপনার ব্যাপার, এগুলো আপনি এনজয় করলে আমার তাতে কী! বরং এইসব নিয়া আপনাদের পেরেশানী দেখলে আমিও আমোদিত হই, কারণ, আসলে আমিও খারাপ লুক, আর এই পেরেশানীর দলে আমিও ছিলাম এককালে। তারপরেও লিনাক্স নিয়া চিল্লাপাল্লা করার ইয়্যাকমাত্র কারণ - আমি আমার সম্মান বাঁচাতে চাই।

কখনো যদি এই দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করি তারপরেও এই দেশটাই আমার মা (টিপিকাল বাঙালীর মত, একটু বেশি আবেগ হইয়ে গেল মনে লয়) – এর গায়ে অপমানের থুথু আমৃত্যূ আমার গায়েও এসে পড়ে।

শুক্রবার, ২০ মে, ২০১১

পৃথিবীতে কারা কারা লিনাক্স ব্যবহার করেন

লিনাক্স যদিও মূলধারার অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে বেশ নতুন, তবুই ইতিমধ্যেই অনেক রকম পরিবেশেই এটা ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান।

সরকার

বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সরকারগুলো বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে অনবরত মেধাস্বত্ব রক্ষার ব্যাপারে চাপের মধ্যে থাকে। এই চাপ এড়াতে অনেক স্থানীয় সরকারই লিনাক্স এবং অন্যান্য ফ্রী সফটওয়্যার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে, কারণ এগুলো তাদের ক্ষমতার মধ্যে থেকেই মাইক্রোসফট, অ্যাপেল বা অন্য কোম্পানিগুলোর দামী কিংবা ক্র্যাকড সফটওয়্যারের আইনসঙ্গত বিকল্প। লিনাক্সের প্রসারের ফলে এই উন্নত দেশগুলোর সরকারী কাজের জন্য স্বল্পোন্নত দেশের কম্পিউটারে দক্ষ মানবসম্পদ দ্বারা কাজ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দামী সফটওয়্যার ছাড়া এমন অন্য কোন বিকল্প না থাকলে তাদের পক্ষে এমন কাজ করা কখনই সম্ভব হত না।

  • ব্রাজিলের পিসি কানেক্টাডো প্রোগ্রাম লিনাক্সে চলে। এটা ২০০৩ সাল থেকে ব্রাজিলের সরকারী প্রোগ্রাম। এতে ফেডোরা নির্ভর  অপারেটিং সিস্টেম সহ কম্পিউটারে ট্যাক্স মওকুফ পাওয়া যায়। এখানকার কম্পিউটারগুলো সব ১২৮ বা ২৫৬ মেগাবাইট মেমরিতে সেলেরন ভিত্তিক প্রসেসরে ৪০ বা ৮০গিগাবাইট হার্ডডিস্ক সহ পাওয়া যায়। এই প্রজেক্টের শুরুতে মাইক্রোসফট কমদামে তাদের এক্সপি স্টার্টার এডিশন দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সেই উপায়ে মারাত্নক রকম সীমাবদ্ধতা থাকায় সরকার সেটা গ্রহণ করেনি। মুক্ত সফটওয়্যারে ইঙ্কস্কেপ, গিম্প, ওপেন অফিস ও আমারক এখানে বহুল ব্যবহৃত।
  • মিউনিখ শহরে ২০০৩ সালে এর ১৪,০০০ ডেস্কটপ কম্পিউটারে ডেবিয়ান নির্ভর LiMux ব্যবহার করা শুরু করার উদ্যোগ নেয়। তবে ২০১০ পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রার ২০% অর্জন করেছে।
  • যুক্তরাস্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (United States Department of Defense) লিনাক্স ব্যবহার করে। আমেরিকান আর্মি রেড হ্যাট লিনাক্সের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। এছাড়া আমেরিকার নৌবাহিনীর পারমানবিক সাবমেরিনগুলো লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • ভিয়েনা শহর কর্তৃপক্ষ এর পিসিগুলোকে ডেবিয়ান নির্ভর উইয়েনাক্সে (wienux) নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদের প্রয়োজনীয় কাস্টমাইজড সফটওয়্যারের উপযুক্ত লিনাক্স বিকল্পের অভাবে এই পরিকল্পনা ত্যাগ করা হয়।
  • ২০০৩ সালে স্পেনকে লিনাক্স গ্রহণে সবচেয়ে অগ্রবর্তী ছিল। তাঁদের এক্সট্রিমাদুরা (Extremadura) প্রদেশে সরকারী উদ্যোগে এজন্য LinEx নামক ডিস্ট্রিবিউশন তৈরী করা হয়। তাঁরা পত্রিকার সাথে ২ লক্ষ লিনাক্স সিডি বিতরণ করে এবং আরো ৭০ হাজার কপি ডাউনলোড করা হয়। ঐ প্রদেশের শতকরা ১০ ভাগ লোক লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • চীন সরকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না (ICBC) এর ২০,০০০ শাখায় ওয়েব সার্ভার এবং নতুন টার্মিনাল প্লাটফর্মে লিনাক্স ইনস্টল করছে (২০০৫ সালের খবর)।
  • ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসন রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্সে চলে আসা সম্পন্ন করার ঘোষনা দেয়। এতে তাদের পরিকল্পিত সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ সময়ে সম্পন্ন হয় আর এতে তাঁদের ১৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়।
  • ২০০২ সালে পাকিস্থান সরকার টেকনোলজি রিসোর্স মবিলাইজেশন ইউনিট গঠন করে, যাতে পেশাদার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। লিনাক্স এতে একটা বিকল্প হিসেবে ছিল। পাকিস্থানের সরকারী স্কুল এবং কলেজে মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় এবং তারা আশা করছে যে  খুব শীঘ্রই তাদের সমস্ত সরকারী সেবা লিনাক্সের মাধ্যমে দেবে।
  • ফরাসী পার্লামেন্ট তাদের ডেস্কটপ পিসিগুলোতে উবুন্টু ব্যবহার করছে।
  • জার্মানীর ফেডারেল কর্মসংস্থান অফিস (Bundesagentur für Arbeit) তাদের ১৩,০০০ কম্পিউটার ওয়র্কস্টেশন উইন্ডোজ এনটি থেকে ওপেনসুযেতে নিয়ে এসেছে। (ওপেনসুযে একটি জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন)
  • চেক প্রজাতন্ত্রের পোস্টাল সার্ভিস তাদের ৪০০০ সার্ভার এবং ১২,০০০ ক্লায়েন্টকে নভেল লিনাক্সে নিয়ে এসেছে ২০০৫ সালে।
  • জার্মানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ১১,০০০ ডেস্কটপগুলোকে লিনাক্স এবং অন্য মুক্ত সফটওয়্যারে নিয়ে আসা শুরু করেছে। ২০০১ সালে সার্ভারগুলোকে আর ২০০৫ সালে ডেস্কটপগুলোকে, আর সবগুলো ল্যাপটপেই ডেবিয়ান লিনাক্স চলে। ২০১১ সালে তারা আবার মাইক্রোসফট অফিস, আউটলুক এবং উইন্ডোজে ফিরে যাওয়ার ঘো‌‌ষনা দিয়েছে; কারণ হিসেবে হার্ডওয়্যার চালনায় অসুবিধার অযুহাত দেখিয়েছে, তবে এর পেছনে মাইক্রোসফটের দেয়া প্রণোদনাও (incentive) ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • কিউবার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন সায়েন্স-এর ছাত্ররা 'নোভা' নামে নিজেদের লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন চালু করেছিল। এটা দিয়ে তার সরকারী এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ প্রতিস্থাপন করতে চায়; আর এই প্রজেক্টটা এখন সরকারী সমর্থন পেয়েছে। ২০১১ সালের শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০০ পিসিতে এই নতুন অপারেটিং সিস্টেমে চালানোর ঘোষনা দেয়া হয়।
  • ক্যান্টন অব সোলথুর্ন নামক সুইজারল্যান্ডের অঙ্গরাজ্য ২০০১ সালে এর কম্পিউটারগুলো লিনাক্সে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০১০ সালে সুইস প্রশাসন পুরা উল্টা ঘুরে ডেস্কটপগুলোতে উইন্ডোজ-৭ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
  • ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনী এর ৯০,০০০ ডেস্কটপগুলোকে উইন্ডোজ এক্সপি থেকে উবুন্টুতে নেয়া শুরু করে ২০০৭এ। কারণ এতে উইন্ডোজ ভিসতার জন্য যে প্রশিক্ষণ লাগবে তার চেয়ে কম প্রশিক্ষণ লাগবে। এই প্রতিস্থাপন ২০১৫ সাল নাগাদ শেষ হবে; ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এভাবে সফটওয়্যার লাইসেন্স বাবদ ৫০ মিলিয়ন ইউরো সাশ্রয় হয়েছে।
  • ফ্রান্সের কৃষি মন্ত্রণালয় ম্যানড্রিভা লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • মেসিডোনিয়ার বিজ্ঞান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্লাসে ১,৮০,০০০ এরও বেশি উবুন্টু নির্ভর ডেস্কটপ ব্যবহার করছে এবং প্রতি ছাত্রকেই উবুন্টু ওয়র্কস্টেশন ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করছে।
  • প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার লক্ষ্যে চীন সেদেশের Loongson প্রসেসর পরিবারের জন্য অপারেটিং সিস্টেমে শুধুমাত্র লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • আমেরিকার পারমানবিক নিরাপত্তা প্রশাসন বিশ্বের তৃতীয় দ্রুততম সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে, এটার নাম আইবিএম রোডরানার – যা ফেডোরা এবং রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স ব্যবহার করে চলে।
  • ২০০৪ সালে স্পেনের অ্যান্ডালুসিয়া অঞ্চলের স্বায়ত্বশাসিত সরকার Gaudalinex নামে তাদের নিজস্ব লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন তৈরী করে নিয়েছে।
  • দক্ষিন আফ্রিকান সামাজিক নিরাপত্তা সোসাইটি মাল্টি স্টেশন লিনাক্স ডেস্কটপ ব্যবহার করে তাদের ৫০টি প্রত্যন্ত এলাকার বাজেট এবং অবকাঠামোগত অসুবিধা মোকাবেলা করছে।
  • ২০০৩ সালে তুরস্কের সরকার তাদের নিজস্ব লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের জাতীয় ইলেক্ট্রনিক্স ও ক্রিপ্টোগ্রাফি রিসার্চ ইনস্টিটিউট Pardus নামক এই ডিস্ট্রিবিউশন তৈরী করা শুরু করে এবং ২০০৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর এটার ১.০ ভার্সনের অফিসিয়াল ঘোষনা দেয়।
  • ২০১০ সালে ফিলিপিনসে উবুন্টু চালিত জাতীয় ভোট গ্রহণ সিস্টেম চালু করা হয়।
  • ২০১০ সালের জুলাই মাসে মালয়েশিয়ার সরকারী ৭২৪টা এজেন্সির মধ্যে ৭০৩টায় লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে ফ্রী এবং ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা শুরু হয়। সরকারের প্রধান সচিব বলেছিলেন যে, এটার মূল লক্ষ্য হল উন্নততর মান, উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা, অধিকতর পরিবর্তনযোগ্যতা (flexibility) এবং স্বল্প খরচ।
  • ২০১০ সালের শেষের দিকে ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়া ফেডারেশন সরকারের ২০১২ সালের মাঝামাঝির মধ্যে লিনাক্স এবং ফ্রী সফটওয়্যারে সরে আসার একটি পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করেন।
  • আমেরিকার ফ্লোরিডার লার্গো শহরের প্রশাসন লিনাক্স ব্যবহার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করে। এটা থেকে শহর ব্যবস্থাপনার প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ের ব্যাপারটা বোঝা যায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

শিক্ষার জন্য উবুন্টুর একটা ভার্সন আছে - যা এডুবুন্টু নামে পরিচিত।

প্রায়শঃই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোতে এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হয়। এটা বিনামূল্যে উপলব্ধতা এবং অসংখ্য সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ থাকা এর পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কম্পিউটার সায়েন্স এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকেও লিনাক্সে কিছু অবদার রাখে। আইবিএম "লিনাক্স ইজ এডুকেশন" নামে একটা বিজ্ঞাপন তৈরী করেছে, যেখানে একটা ছোট ছেলেকে দেখানো হয় যে বড় হয়ে লিনাক্স (লিনুস?) হয়।

বৃহৎ পরিসরে লিনাক্স গ্রহণকরার কিছু উদাহরণ নিচে তুলে ধরা হলঃ

  • OLPC XO-1 (ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড: যা আগে এমআইটির ১০০ ডলার ল্যাপটপ প্রজেক্ট বা বাচ্চাদের ল্যাপটপ নামে পরিচিত ছিল) হল একটা সস্তা ল্যাপটপ যা লিনাক্সে চলে; এই ল্যাপটপটি মূলত: উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি শিশুর জন্য একটি ল্যাপটপ প্রজেক্টের অধীনে কয়েক মিলিয়ন শিশুর মধ্যে বিতরণ করার লক্ষ্যে তৈরী করা হয়েছে।
  • মেসিডোনিয়ার ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে ৪৬৮টি সরকারী স্কুল এবং ১৮২টি কম্পিউটার ল্যাবে ৫০০০ উবুন্টু চালিত ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে উবুন্টু চালিত আরো ১,৮০,০০০ থিন ক্লায়েন্ট কম্পিউটার চালু করা হয়। (থিন ক্লায়েন্ট হল একটা শক্তিশালি সিপিইউ থেকে অনেকগুলি মনিটর, কিবোর্ড ও মাউসের সাহায্য অনেকে ব্যবহারের সুবিধা - অনেকটা মেইনফ্রেম কম্পিউটারের মত)
  • ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইটালির বোলযানোর ১৬,০০০ স্কুল ছাত্রের ক্লাসরুমে ব্যবহারের জন্য একটা সংকলিত লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন চালু করে। (FUSS Soledad GNU/Linux)
  • ব্রাজিলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সরকারী স্কুলগুলোতে প্রায় ২০,০০০ লিনাক্স ডেস্কটপ চলছে।
  • ভারতের কেরালা রাজ্যের সরকারী কর্মকর্তারা ঘোষনা করেন যে, তারা কম্পিউটার শিক্ষার জন্য শুধুমাত্র লিনাক্সে চালিত ফ্রী সফটওয়্যার ব্যবহার করবে;  ২,৬৫০টি সরকারী ও সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় দিয়ে এটা শুরু করা হয়।
  • ২০০৬ সালে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ২২,০০০ ছাত্রের জন্য তাদের উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে লিনাক্স ওয়র্কস্টেশন ব্যবহারের সুযোগ ছিল।
  • ২০০৭ সালে জার্মানি এর ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫,৬০,০০০ ছাত্র লিনাক্স ব্যবহার করবে বলে ঘোষনা দিয়েছে।
  • ফিলিপিনসে ১৩,০০০ ডেস্কটপে ফেডোরা চলে, যার প্রথম ১০,০০০ ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ASI (Advanced Solutions Inc) এগুলো সরবরাহ করে। মাইক্রোসফট ২০ ডলারে উইন্ডোজ আর ৩০ ডলারে অফিস দেয়ার প্রতিযোগীতামূলক অফার দেয়ার কারণে এই প্রজেক্টের সিদ্ধান্ত ৪/৫ মাস পিছিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাসত্ত্বেও লিনাক্স আরো স্বল্পখরচের সমাধান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই প্রজেক্টে আরো ১০,০০০ এডুবুন্টু ও কুবুন্টু ডেস্কটপ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
  • লাইসেন্স খরচ বাঁচাতে ২০০৭ সালের অক্টোবরে রাশিয়া সমস্ত স্কুলের কম্পিউটার লিনাক্সে চালানোর ঘোষনা দেয়।
  • ২০০৪ সালে জর্জিয়া এর সমস্ত স্কুলের কম্পিউটারগুলো এবং লিনাক্স টার্মিনাল সার্ভার প্রজেক্টের (LTSP) থিন ক্লায়েন্টগুলো লিনাক্সে চালানো শুরু করে। এখানে মূলত কুবুন্টু, উবুন্টু এবং হালকা ফেডোরা নির্ভর ডিস্ট্রো ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ৯০০০ কম্পিউটারে লিনাক্স ও ওপেন অফিস ব্যবহার শুরু হয়।
  • ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে ছাত্রদেরকে ১,০০,০০০ লিনাক্স ল্যাপটপ বিতরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। (২০০৮)
  • অভ্যন্তরীন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে চীন সরকার ১৫ লক্ষ লিনাক্স loongson পিসি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া জিয়াঙ্গসু প্রদেশে ২০০৯ সাল থেকে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ১,৫০,০০০ loongson প্রসেসর চালিত লিনাক্স পিসি স্থাপন করা হবে।
  • ভারতীয় সরকাররের ছাত্রদের জন্য ট্যাবলেট পিসি প্রজেক্টের লক্ষ্য হল ১,৫০০ রুপীর (৩৫ ডলার) কমে ট্যাবলেট পিসি বানানো, এই পিসিগুলো লিনাক্সে চলে।

আবাসিক গৃহে

  • সনির প্লেস্টেশন-৩ এর ভেতরে হার্ডডিস্ক (২০, ৬০ ও ৮০ গিগাবাইট) দেয়া হয়েছে এবং এটা সহজে লিনাক্স ইনস্টলের উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে। অবশ্য এর ৩ডি গ্রাফিক্স ফীচারগুলো লিনাক্সে চালানোর সুযোগ দেয়া হয় না। এছাড়া সনি এর প্লেস্টেশন-২ এর জন্যও লিনাক্স কিট ছেড়েছে। সহজ ইনস্টলেশন আর তুলনামূলক কম দামের কারণে (প্লেস্টেশন-৩ এর তুলনায় সমপর্যায়ের অন্য হার্ডওয়্যার ক্রয়ের ক্ষেত্রে) ছোট পরিসরে ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং পরীক্ষার জন্য মাঝে মাঝে এই লিনাক্স চালিত প্লেস্টেশন হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয়। নিরাপত্তা বিবেচনায় ২০১০ সালের ১লা এপ্রিলে লিনাক্স ইনস্টলের সুবিধা রহিত করে এবং ফার্মওয়্যার ৩.২১ ব্যবহার শুরু করে।
  • ২০০৮ সালে নেটবুকের অনেকগুলো মডেল হালকা লিনাক্স (xandros, linpus) ইনস্টল করা অবস্থায় সরবরাহ করা হত। এতে এর সীমিত ক্ষমতা সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যেত।
  • ২০০৭ ও ২০০৮ এ ব্যবহারবান্ধবতা বিচারে উবুন্টুর মত লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, ফলে ডেলের মত কিছু নির্মাতা উবুন্টু এবং অন্য লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন চালিত ডেস্কটপ কম্পিউটার মডেল বাজারে ছাড়ে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ

রেডহ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স, সুযে লিনাক্স এন্টারপ্রাইজ ডেস্কটপ এবং লিনস্পায়ারের মত বাণিজ্যিক লিনাক্স সমাধানগুলো কিছু কর্পোরেটে ব্যবহৃত হয়।

  • ১৯৯৯ সাল থেকে বার্লিংগ্টন কোট ফ্যাক্টরি (Burlington Coat Factory) শুধুমাত্র লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • ২০০০ সাল থেকে আর্নি বল (Ernie Ball) নামক সুপার স্লিংকি গিটারের স্ট্রিং প্রস্তুতকারক লিনাক্স ডেস্কটপ চালায়।
  • নোভেল উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর ৫,৫০০ কর্মীর মধ্যে ৫০% এপ্রিলের ২০০৫ নাগাদ সফলতার সাথে লিনাক্সে চলে এসেছে। নভেম্বর মাস নাগাদ এটা বেড়ে ৮০% হওয়ার কথা।
  • Wotif নামক অস্ট্রেলিয়ান হোটেল বুকিং ওয়েবসাইট তাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষায় উইন্ডোজ সার্ভার থেকে লিনাক্স সার্ভারে সরে আসে।
  • ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিয়ন ব্যাংক খরচ কমানোর জন্য এর আইটি অবকাঠামো রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স উপযোগী করার ঘোষনা দেয় ২০০৭ সালের জানুয়ারী মাসে।
  • ২০০৭ সালে ইউরোপের গাড়ি প্রস্তুতকারক Peugeot ঘোষনা করে যে এরা ২০,০০০ কপি নোভেলের লিনাক্স ডেস্কটপ, সুযে লিনাক্স এন্টারপ্রাইজ ডেস্কটপ এবং ২,৫০০ কপি সুযে লিনাক্স এন্টারপ্রাইজ সার্ভার চালু করবে।
  • মাইন্ডব্রিজ নামক একটা সফটওয়্যার কোম্পানি ২০০৭ সালে ঘোষনা দেয় যে, এটা অনেকগুলো উইন্ডোজ সার্ভার থেকে কমসংখ্যক লিনাক্স সার্ভার এবং কিছুসংখ্যক বিএসডি সার্ভারে প্রতিস্থাপন করবে। এরা এভাবে বেশ বড় পরিমান সাশ্রয় করেছে বলে দাবী করেছে।
  • আমেরিকার বাজেট এয়ারলাইন, ভার্জিন আমেরিকা এর বিমানের REDএন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম লিনাক্সে চালায়।
  • আমেরিকার ইন্টারনেট ভিত্তিক বেচাকেনা প্রতিষ্ঠান আমাজন.কম এর ব্যবসার প্রতিটা ক্ষেত্রেই লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • গুগল Goobuntu নামক উবুন্টু ভিত্তিক একটা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে।
  • আইবিএম লিনাক্সের প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত, এবং তাঁদের অফিসে সার্ভার এবং ডেস্কটপে লিনাক্স ব্যবহার করে। এছাড়া “IBM supports Linux 100%” শিরোনামে একটা টিভি বিজ্ঞাপন করেছে।
  • উইকিপিডিয়া ২০০৮ সাল থেকে এর সার্ভারগুলো উবুন্টুতে চালায়, এর আগে রেড হ্যাট এবং ফেডোরার সমন্বয়ে চালাতো।
  • ড্রিমওয়র্কস এনিমেশন কোম্পানি ২০০১ সাল থেকে লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে। এদের ১,০০০ এরও বেশি লিনাক্স ডেস্কটপ এবং ৩,০০০ এর বেশি লিনাক্স সার্ভার রয়েছে।
  • শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ সমস্ত কম্পিউটিং অবকাঠামোই লিনাক্সে চালায়, এবং এটা ব্যবহার করে এক কোয়াড্রিলিয়ন ডলারের বেশি লেনদেন সম্পন্ন করেছে।
  • Chi-X প্যান ইউরোপিয়ান ইক্যুয়িটি এক্সচেঞ্জ এর মার্কেটপ্রিজম ট্রেডিং প্লাটফর্ম সফটওয়্যারটি লিনাক্সে চালায়।
  • লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ লিনাক্স নির্ভর মিলেনিয়ামআইটি মিলেনিয়াম এক্সচেঞ্জ সফটওয়্যারটা ব্যবহার করে সমস্ত ট্রেডিং পরিচালনা করে। উইন্ডোজের বদলে লিনাক্স ব্যবহারের ফলে ২০১১‌-১২ অর্থবছরে তাঁদের কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ইউরো (১৪.৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ বাঁচবে বলে অনুমান করেছে।
  • নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এর সমস্ত ট্রেডিং সফটওয়্যার লিনাক্সে চালায়।
  • আমেরিকার ইলেক্ট্রনিক মিউজিক কম্পোজার কিম ক্যাসকোন তার মিউজিক স্টুডিও, পার্ফর্মেন্সে ব্যবহার এবং এডমিনিস্ট্রেশনের সমস্ত কাজ ২০০৯ সাল থেকে এ্যাপল ম্যাকের বদলে উবুন্টুতে করছেন।
  • ম্যাকডোনাল্ডস এর ম্যাক ক্যাফেতে উবুন্টু ব্যবহার করে।
  • উইন্ডোজের স্পাইওয়্যার সমস্যার কারণে লাফিং বয় রেকর্ডস এর মালিকের নির্দেশে এর রেকর্ডিং‌এর কাজ উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে নিয়ে এসেছে ২০০৪ সালে।
  • ২০১১ সাল থেকে কাজ শুরু করা ন্যাভ কানাডার নতুন ইন্টারনেট ফ্লাইট প্লানিং সিস্টেম পাইথনে করা এবং রেড হ্যাট লিনাক্সে চলে।
  • স্মার্ট রেফ্রিজারেটর ইলেক্ট্রোলাক্স ফিজিডেয়ার ইনফিনিটি আই‌-কিচেন লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে যার মধ্য একটা এমবেডেড ৪০০ মেগাহার্টজ্ ফ্রীস্কেল I.MX25 প্রসেসর এবং ১২৮ মেবা RAM এবং ৪৮০x৮০০ টাচ প্যানেল রয়েছে।

বৈজ্ঞানিক সংস্থা সমূহ

  • আমেরিকার পারমানবিক নিরাপত্তা প্রশাসনে পৃথিবীর ৩য় দ্রুততম সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে; এটার নাম আইবিএম রোডরানার, এবং এটা রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স এবং ফেডোরা দিয়ে চলে।
  • লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার এবং এর ২০,০০০ অভ্যন্তরিন সার্ভার চালানোর জন্য সায়েন্টেফিক লিনাক্স ব্যবহার করে এর গবেষণাপ্রতিষ্ঠান CERN।
  • ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে কানাডার সবচেয়ে বড় সুপার কম্পিউটার, আইবিএম আইডেটাএক্স ক্লাস্টার কম্পিউটার, চালাতে লিনাক্স ব্যবহার করে।
  • ইন্টারনেট ক্যাটালগ করতে ইন্টারনেট আর্কাইভ এর শত শত এক্স৮৬ সার্ভার সবই লিনাক্সে চালায়।
  • ASV Roboat নামক স্বায়ত্বশাসিত রোবোটিক নৌকা লিনাক্সে চলে।
  • অক্টোবর ২০১০ পর্যন্ত বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার Tianhe-I, লিনাক্সে চলে। এটা চীনের তিয়ানজিনে ন্যাশনাল সেন্টার ফর সুপারকম্পিউটিংএ অবস্থিত।
  • FermiLabএর Dark Energy Camera এবং সংশ্লিষ্ট ৪মিটার টেলিস্কোপ যা The Dark Energy Survey প্রগ্রামের অংশ, পরিচালনা এবং এর সমস্ত ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য লিনাক্স ব্যবহার করবে।
  • যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টস্মাউথ পৃথিবীর বিভিন্ন টেলিস্কোপের ডেটা বিশ্লেষনের জন্য একটা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী (cost effective) কম্পিউটার চালু করেছে। এটা দিয়ে ব্রক্ষ্মান্ড সম্পর্কে প্রচলিত তত্বগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। এটা সায়েন্টিফিক লিনাক্স নামক অপারেটিং সিস্টেমে চলে। পোর্টস্মাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ডেভিড বেকন বলেন  "Our Institute of Cosmology is in a great position to use this high performance computer to make real breakthroughs in understanding the universe, both by analysing the very latest astronomical observations, and by calculating the consequences of mind-boggling new theories...By selecting Dell’s industry-standard hardware and open source software we’re able to free up budget that would have normally been spent on costly licenses and reinvest it."।

তথ্যসূত্র:

এই লেখাটি মূলত একটি অাংশিক অনুবাদ। নিচের লিংকগুলোর ইংরেজি থেকে কিছু অংশ এখানে বাংলা করা হয়েছে।

১। http://en.wikipedia.org/wiki/Linux_adoption
২। http://en.wikipedia.org/wiki/PC_Conectado
৩। http://en.wikipedia.org/wiki/LinEx
৪।  http://www.computerworld.com.au/article/204950/23_000_linux_pcs_forge_education_revolution_philippines/?pp=1

বাংলাদেশে:

এদেশেও কিছু মানুষ আর প্রতিষ্ঠান আছে যারা ঘরে ও অফিসে লিনাক্স ব্যবহার করে। তথ্যের অভাবে সব দেয়া সম্ভব হল না। তবে কিছু বোকা লোকের একটা তালিকা ইদানিং তৈরী করা শুরু হয়েছে। এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন