শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১০

যানজট নিরসনে তাহলে প্রতিদিন হরতালই কি সেরা সমাধান?

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
ইদানিংকালে যানজট নিরসনে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের বেশ কিছু বক্তব্য আমাকে বিষ্মিত করেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, উনি অর্থমন্ত্রী - যোগাযোগ মন্ত্রী নন!

এর মধ্যে একটি হল প্রাইভেট কারে ৫ জন ছাড়া চলা যাবে না। আহা ... ... এতে সঙ্গিযাত্রী হিসাবে কিছু বেকারের নিশ্চিত কর্মসংস্থান হবে। বাসা থেকে ৫ জন বের হল। বাচ্চা স্কুলে নামার পর ৫ জনের কোটা পূরণ করার জন্য সেখান থেকে একজন সঙ্গিযাত্রী উঠবে গাড়িতে (ঘন্টা হিসাবে মজুরি দিতে হবে) .... এভাবে শেষজন নামার আগ পর্যন্ত লোক অফিসে নামবে সঙ্গিযাত্রী উঠবে। ফেরার পথেও একই রকম কাহিনী। সঙ্গিযাত্রী বা প্রক্সি/ডামি যাত্রী হিসেবে কর্মসংস্থানের ফলে কিছু লোকের হয়তো বেকারত্ব দুর হবে (ছিনতাই বৃদ্ধির আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না), তবে উৎপাদনশীলতা বাড়বে না, বরং অতিরিক্ত ভারবহন করার কারণে জ্বালানী খরচ বাড়বে।

নির্দিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা না থাকলে এই রকম ব্যবস্থাটা (যার টেকনিক্যাল নাম কার-পুলিং car pooling) মানুষের ভোগান্তি আরেকটু বাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। যানজট বেশি হয় অফিস টাইমে, অর্থাৎ, অফিস শুরু এবং ছুটির সময়ে। তখন হঠাৎ করে (খুব কম সময়ের ব্যবধানে) বিপুল সংখ্যক লোক রাস্তায় নেমে আসে। নির্দিষ্ট আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এলাকা থাকলে দেখা যায় যে একই আবাসিক/বাণিজ্যিক এলাকা থেকে ৪/৫জন লোক ৪/৫টা গাড়ি ব্যবহার করে একই বাণিজ্যিক/আবাসিক এলাকায় যাচ্ছে। যাত্রা শুরু এবং গন্তব্যস্থল একই হওয়াতে এরা ৪/৫টি গাড়ির বদলে একটি গাড়ি দিয়েই যাতায়াত করতে পারে, যার ফলে রাস্তা থেকে কিছু গাড়ি কমে গিয়ে যানজট কমাতে সাহায্য করে।

ঢাকায় আমার জানামতে নির্দিষ্ট সময়ে এরকম নির্দিষ্ট যাতায়াতের জন্য কার শেয়ারিং বা কার পুলিং খুব ভালভাবেই বিদ্যমান। অফিসের কর্মকর্তা যাত্রাপথে অন্য সহকর্মীদেরকে তার গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু এক বাসা থেকে বের হওয়া ৪ জনের গন্তব্য ভিন্ন হলে তখন কী হয়? বাড়ির একজন সিটি কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা, ওনাকে কলেজে নামিয়ে তারপর ছেলে আর ছেলের বউয়ের অফিস মিন্টো রোডের পাশের রাস্তায় (ওল্ড এলিফ্যান্ট রোড); এরপর কনসালট্যান্ট কর্তার ৩/৪টি কর্মস্থলের যে কোনো একটিতে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট / মগবাজারের কনস্ট্রাকশন ফার্ম/ মনিপুরিপাড়ার কনস্ট্রাকশন ফার্ম / মহাখালি / অন্য কোনো অফিস)। এরকম একটা কর্মঠ ও কর্মব্যস্ত পরিবারের অতি প্রয়োজনীয় গাড়ি চালাতে তবে এরপর থেকে প্রথমে উল্লেখ করা সঙ্গিযাত্রী বা ডামি যাত্রী ছাড়া পথ খোলা থাকবে না। আর তা না করতে চাইলে হয় ক্যাব বা রিক্সা ... ... যা যানজট কমাবে কীভাবে সেটা বুঝি না।

বিদেশের কিছু কিছু শহরে কার পুলিং সফলতার সাথে প্রযুক্ত হয়েছে .... .... প্রশ্ন হল কীভাবে?
এসব শহরে পরিকল্পিত ভূমির ব্যবহার প্রযুক্ত হয়েছে, ফলে নির্দিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠেছে। এছাড়া ঐ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা যুক্ত করে এমন নির্দিষ্ট রাস্তা আছে। আসা এবং যাওয়ার জন্য দুইপাশে নির্দিষ্ট লেন ছাড়াও রাস্তার মাঝ বরাবর একটা অতিরিক্ত বিশেষ লেন আছে। এই লেনে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এই লেনটির বিশেষত্ব হল, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এটি দিয়ে আবাসিকের দিক থেকে অফিসের দিকে আর দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উল্টাদিকে (অফিস-আবাসিক) চলাচলের জন্য খোলা থাকে। অর্থাৎ যেদিকে চাহিদা বেশি সেদিকে সেবা দেয়। এই লেন ব্যবহার করে অনেক দ্রুত যাওয়া যায়, কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে এটা ব্যবহার করা যায়। বাস কিংবা কমপক্ষে ৪জন যাত্রী আছে এমন কার বিনা বাঁধায় এই লেন ব্যবহার করতে পারে। অন্যরা ব্যবহার করতে চাইলে উচ্চমাত্রায় টোল দিয়ে করতে পারে। অর্থাৎ কার পুলিং করলে বিশেষ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে ... ... ... "পেটে খেলে পিঠে সয়', ঢাকায় প্রাইভেট কারের জন্য এমন কোন সুবিধার ব্যবস্থা আছে কি? আর, প্রাইভেট কারের বদলে পাজেরো (পাবলিক না হয় নির্লজ্জ্ব মন্ত্রী বা এমপিদের মত বিনাট্যাক্সে নাই কিনলো) ব্যবহার করা শুরু করলে তখন নিয়মটা কেমন হবে?

এরপর আরেকটা উদ্যোগের কথা জেনে হাসবো নাকি কাঁদবো তা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। এটা হল জোড় আর বেজোড় সংখ্যার প্রাইভেট কার বিষয়ক। অন্যান্য গাড়ির মতই ১০০% ট্যাক্স দিয়ে কেনা এই গাড়িগুলোর দোষ হল, এরা সংখ্যায় বেশি। তাই একদিন জোড় সংখ্যা বিশিষ্ট ও অন্যদিন বেজোড় নম্বরবিশিষ্ট কার রাস্তায় চলাচল করতে পারবে। যাদের একটি মাত্র গাড়ি তারা তাহলে বাকী কর্মদিবসগুলোতে কীভাবে যাতায়াত করবে? এমনতো নয় যে যথেষ্ট পরিমান গণপরিবহন ব্যবস্থা করা সত্বেও দুষ্টু মানুষ ওগুলো ব্যবহার না করে শুধু শুধু গাড়ি বের করে রাস্তায় যানজট বাড়াচ্ছে। বরং অকার্যকর এবং অনুপযোগী গণপরিবহন ব্যবস্থায় অতীষ্ট হয়েই স্বল্প আয়ের এই দেশেও, মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়েই, অন্য দেশের চেয়ে আড়াইগুন দামে প্রাইভেট কার কিনছে। নাহলে কোন মধ্যবিত্তের ঠেকা পড়েছে যে বেতন দিয়ে ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে, এদের তেল/পার্টস্ চুরি ও মোবাইল হারানো সহ্য করে, রিক্সার ঘষা খেয়ে, ২/৩ ঘন্টা গ্যাসের জন্য সিরিয়াল ধরে গাড়ি চালানোর?

ট্যাক্সির ধারণাটাই হল যাত্রী এতে উঠে কোথায় যেতে হবে যাত্রী তা বলবে - শহরের যে কোনো জায়গায় যেতে এরা বাধ্য ... ... অথচ ঢাকায় ক্যাব/ট্যাক্সিকে গন্তব্যে যাবে কি না সেটা জিজ্ঞেস করতে হয় আগেই, এবং ওরা সেখানে যেতে চায় না; আবার গেলেও ৬০ টাকার ভাড়া ১৫০টাকার কমে যায় না। আর এখানে প্রাইভেট কার ব্যবহারকারীদেরকেও ঠেলে দিলে আরও কী তুঘলকী কাণ্ড ঘটবে তা কল্পনা করা দুরূহ।

গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত না করলে এবং ট্রিপ ডিমান্ড না কমালে যানজট কমানোর উদ্যোগগুলো সফল হবে না - এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না। গণপরিবহণ প্রসঙ্গে গত ২২শে ডিসেম্বর রাতে দেশ টিভিতে সোজাকথা নামক টক-শোতে আমন্ত্রিত অতিথি জনাব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া সাহেব (শুরু থেকে দেখিনি বলে ওনার পদমর্যাদা জানা হয়নি) সরকারের তরফ থেকে যে সকল উদ্যোগের কথা জানালেন সেগুলোকে আমার চমৎকার এবং সঠিক মনে হল। উনি বলেছিলেন যে, পর্যায়ক্রমে (১০-১৫ বছর) তিনটি রুটে MRT / মেট্রো ট্রেন চালু করা হবে। দেশের বিদ্যূৎ ব্যবস্থা, ভূতত্ব এবং খরচ বিবেচনা করে এগুলো যতদুর সম্ভব মাটির উপরে এবং উড়াল লাইনে (স্কাই ট্রেন) করা হবে। সামান্য কিছু জায়গায় হয়তো স্থানাভাবে বাধ্য হয়ে পাতালে যেতে হতে পারে। তাহলে সিঙ্গাপুর বা ওসাকা/টেকিওর মতই কিছু উপরে আর কিছু নিচে হচ্ছে। আর, ব্যাংককের মতই রাস্তার ডিভাইডার থেকে কলাম তুলে উপরে লাইন হবে। MRT করতে প্রচুর অর্থ লাগবে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের উপর বিরাট ঋনের বোঝা চাপিয়ে দেবে।

তবে আগামী বছরেই যা হবে সেটা হল কিছু কিছু রুটে BRT বা বাস রেপিড ট্রানজিট। এটাতে উপরোল্লিখিত কার পুলিং লেনের মতই বাস চলাচলের জন্য রাস্তায় বিশেষ সুরক্ষিত লেন আলাদা করা হবে। এখানে চলাচলের জন্য সুপরিসর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস আনা হবে (কোরিয়া বা ভারত থেকে এবার যেগুলো আসছে সেগুলো নয়)। বাসে ওঠা-নামা করার জন্য প্ল্যাটফর্ম এমন হবে যেন অতি দ্রুত ওঠা/নামা যায় (মেট্রো'র মতই)। বিভিন্ন ক্রসিংএ ও সিগনালে এই বাসগুলো অগ্রাধিকার পাবে। ফলে বাসে যাতায়াত হবে আরামদায়ক এবং প্রাইভেট গাড়ির চেয়ে দ্রুততর। সারা ঢাকাতে এই সুবিধা ছড়ানোর জন্য দুই তিনটি প্রাইভেট কম্পানিকে লিজ দেয়া হবে। এজন্য পরিবহন কম্পানিগুলো একিভূত করার জন্য কাজ চলছে। MRT'র তুলনায় কম যাত্রী বহন করলেও BRTতে খরচ সেই তুলনায় অনেক কম হবে।

ট্রিপ ডিমান্ড কমানোর প্রসঙ্গে চমৎকার একটা উদ্যোগ ছিল এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক বন্ধের আইডিয়াটা। এখন পর্যন্ত আমি এই উদ্যোগের সুফল ভোগ করছি। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশের কারণেও ট্রিপ ডিমান্ড বা যাতায়াত চাহিদা কমেছে। এভাবে অফিসের কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে (ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি, অনলাইন বুকিং, অনলাইন আবেদন পত্র জমা দেয়া ইত্যাদি) ততই যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা কমে তা যানজট কমানোতে সাহায্য করবে।

এরকম যৌক্তিক কাজকর্মগুলো এ বিষয়ে পেশাদারগণ যাতে দক্ষভাবে করতে পারে সেটা নিশ্চিত করলেই মন্ত্রী মহোদয় সকলের অকুন্ঠ সমর্থন পাবেন। যানজট বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা বুঝাতে অযথা উদ্ভট কাজকর্ম করার প্রয়োজন নাই। নাহলে দেখা যাবে আজ প্রাইভেট কার বন্ধ করার পর উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীতে সরকার-ই প্রতিদিন হরতাল না ডেকে বসে।

শেষে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত, জাতীয় স্থল পরিবহন নীতিমালা, এপ্রিল ২০০৪ হতে ঢাকা মহানগরীর জন্য নীতিমালা অংশটি আপনাদের জন্য সংযুক্ত করলাম। এতে চমৎকার দিক নির্দেশনা আছে।

এইটা পড়ার আগেই বলি, এটা ডাউনলোড করতে পারবেন এখানে ক্লিক করে (মাত্র ৪১৫ কিলোবাইট)। তবে ওটার বাংলা লেখাগুলো কোনোভাবেই ইউনিকোডে আনতে না পেরে শেষে টাইপ করে ফেললাম।

৯. ঢাকা মহানগরীর জন্য নীতিমালা

৯.১ পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম

৯.১.১ সরকার ঢাকা নগরীর পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করবে।
৯.১.২ গণপরিবহনের উন্নতি, যানজট হ্রাস ও পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করবে। এ ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
     ১. মহানগরীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী আধুনিক গণ-পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা প্রণয়ন
     ২. অধিক সংখ্যায় সুপরিকল্পিত বাস রুট চালু;
     ৩. গণ-পরিবহন ব্যবস্থায় উচ্চমানের যানবাহন ব্যবহার এবং সার্ভিসের মান বৃদ্ধি;
     ৪. বেসরকারী খাতের বাস অপারেটরদের অংশগ্রগণের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি; 
     ৫. বাস সার্ভিসকে অগ্রাধিকার প্রদান; 
     ৬. সব ধরণের যানবাহন থেকে দূষণ হ্রাস;
     ৭. সড়কের উপর পার্কিং এবং সড়কের অনধিকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ;
     ৮. ট্রাফিক ব্যবস্থারনার উন্নয়নে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ;
     ৯. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার;
     ১০. পদযাত্রীদের জন্য উন্নততর সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি; 
     ১১. গণপরিবহন ব্যবস্থার মূল্যায়ন;
     ১২. সকলের জন্য বিশেষ করে দূর্ঘটনা প্রবণ (vulnerable) সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য উন্নততর নিরাপত্তা ব্যবস্থা; 
     ১৩. পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা; এবং
     ১৪. উন্নত ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা।

৯.২ অযান্ত্রিক যানবাহন

৯.২.১ প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিক্সা চলাচল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। অপ্রধান সড়কে চলাচলকারী রিক্সাকে কেবল প্রধান প্রধান সড়কের নির্ধারিত স্থানেই ক্রসিং করতে দেয়া হবে।
৯.২.২ সড়ক সংযোগস্থল (intersection) উন্নতিকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সড়ক সংযোগস্থলের ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে বজায় রাখার স্বার্থে সড়ক ও ফুটপাথের সন্ধিস্থল (curb side) রিক্সামুক্ত করা হবে।
৯.২.৩ শহরতলীর যেসব এলাকায় বাস নেটওয়ার্ক অপেক্ষাকৃত স্বল্প এবং/অথবা চলাচল কম সে সব এলাকায় ফিডার সার্ভিস হিসেবে রিক্সা ব্যবহার হবে।
৯.২.৪ আগামী ১০ বছরে রিক্সার ট্রিপ অর্ধেকে কমিয়ে আনা হবে।

৯.৩ অটো রিক্সা

৯.৩.১ ২-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যানবাহনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে ঢাকায় ৪-স্ট্রোক সিএনজি অথবা পেট্রোল চালিত অটো-রিক্সা ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৯.৩.২ প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিক বাস সার্ভিস প্রবর্তনের পর ঐসব রুটে পর্যায়ক্রমে অটো-রিক্সা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
৯.৩.৩ কেবলমাত্র বাস এবং রেল পরিবহনের ফিডার সার্ভিস হিসেবে অটো-রিক্সা ব্যবহার উৎসাহিত করা।
৯.৩.৪ চূড়ান্ত পর্যায়ে অটো-রিক্সা চলাচল বন্ধ করা।

৯.৪ প্রাইভেট কার

৯.৪.১ জরুরী সার্ভিস সমূহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (যেমন সড়ক পার্শ্বে পণ্য বোঝাই-খালাসের জন্য সাময়িক বিরতিস্থল নির্ধারণ) রেখে সড়কের উপরে পার্কিং নিয়ন্ত্রণের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
৯.৪.২ পুরাতন ঢাকা এবং এরূপ অন্যান্য যে সকল স্থানের সড়ক কার ব্যবহারের জন্য অনুকুল নয় সে সকল স্থানে শুধু পায়ে চলার ব্যবস্থা প্রবর্তনের কার্যক্রম গ্রহন করা।
৯.৪.৩ ২০২২ সালে ঢাকার প্রাইভেট কারের ব্যবহার মোট যান্ত্রিক যানবাহন ট্রিপের ৩০% এর মধ্যে সীমিত রাখা।

৯.৫ ট্রাক

৯.৫.১ সকল নতুন বাণিজ্যিক ও শিল্প স্থাপনার জন্য সড়কের বাইরে ট্রাকে পণ্য বোঝাই-খালাসের প্রয়োজনীয় সুবিধা গড়ে তোলা।
৯.৫.২ ঢাকার রাস্তায় দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে পর্যালোচনা করা।
৯.৫.৩ কন্টেইনার ট্রাকে মালামাল ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য নতুন সুবিধাদি সৃষ্টি করা।

৯.৬ রেলওয়ে

৯.৬.১ জয়দেবপুর-নারায়নগঞ্জ লাইনে রেল কমিউটার সার্ভিস প্রবর্তন।
৯.৬.২ ২০১২ সালের মধ্যে কমিউটার রেল সার্ভিসের মাধ্যমে দৈনিক ২,০০,০০০ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।
৯.৬.৩ গণ-পরিবহন (Mass Transit System) পরিকল্পনা প্রণয়ন, পাতাল, এলিভেটেড ও সার্কুলার রেলওয়ে ব্যবস্থা প্রবর্তন, পরিবহন সেক্টরে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগীতায় সমীক্ষা পরিচালনা করা।

৯.৭ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

৯.৭.১ ঢাকা মহানগরীর জন্য একটি পূর্নাঙ্গ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন।
৯.৭.২ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন কারিগরি কৌশল প্রবর্তন।
৯.৭.৩ পদযাত্রীদের জন্য উন্নততর সুবিধাদি এবং একই গ্রেডে নিরাপদ ক্রসিং সুবিধার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচী প্রণয়ন।
৯.৭.৪ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাদি, বিশেষত: ঝুঁকিপ্রবণ সড়ক ব্যবহারকারীগণের (vulnerable road users) বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ।
৯.৭.৫ কোন নতুন উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে ট্রাফিকের প্রতিক্রিয়া নিরূপণের (traffic impact assessment, TIA) সমীক্ষা করা এবং সে মতে এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাদি সৃষ্টি করা।

৯.৮ প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি

৯.৮.১ সাধারণভাবে ডিটিসিবি'র ভূমিকা হবে সমন্বয়কারীর। তবে একে নিম্নবর্ণিত বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে শক্তিশালী করা হবে-
     ১. প্রকল্পের ভৌত (physical) বাস্তবায়ন
     ২. প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার নির্ণয়
     ৩. যৌথ দায়িত্ব সম্পন্ন প্রকল্পের সমন্বয় সাধন
৯.৮.২ ডিটিসিবি'র বিশেষ দায়িত্ব হবে যাত্রীর চাহিদা যথাযথভাবে পূরণের লক্ষ্যে একটি নিরাপদ, দক্ষ ও আধুনিক বাস রুট নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা। রুট ইজারা (route franchising) ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডিটিসিবি নিজস্ব কৌশল বা পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে।

শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০১০

নতুন রূপে(!) লিনাক্স ফোরাম আপনারই প্রতীক্ষায়!

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

(পোস্টের দৈর্ঘ্যের জন্য লেখক দায়ী নহে)
দেশে যে হারে এরা(?) বাড়তেছে যে এদের কথা চিন্তা করে পোস্টাইলাম। কিছু মনে নিয়েন না।
ধরেন আপনি নতুন লিনাক্স ব্যবহারকারী, কিন্তু এটা নিয়ে মনের মধ্যে আকুলি বিকুলি করা কথামালা সমমনাদের সাথে শেয়ার করতে পারছেন না। অথবা লিনাক্সে একটা ঝালেমা (ঝামেলা নহে) লাগছে কিন্তু সেই ঝালেমাটাকে ঝামেলা মনে হচ্ছে .... ... মনে মনে ভাবছেন "ভাইডি/বোনটি( চোখ টিপি ) একটু ঝামেলাটা ঠিক করনের রাস্তা দেহায় দাও"। অথচ সেই ভাইডি/আপাডি কোথায় সেটা বিছড়াইতে (খুঁজতে) আপনি সচলায়তন, প্রজন্ম ফোরাম, আমাদের প্রযুক্তি (এখন অসুস্থ!) ইত্যাদি বিস্তর জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতেছেন, SOS পোস্টাইতেছেন ... আপডেট খুঁজতেছেন। এর সমাধানযুক্ত ইংলাজি (ইংলিশ) ফোরামের ভাষা পছন্দ হয় না। তাহলে আপনার জন্য একখান ভাল সমাচার আছে: আহেন ভাই চইল্যা আহেন ... সম্পুর্ন বাংলায় শুধুমাত্র লিনাক্স বিষয়ক একখান ফোরাম পূণর্জন্ম লাভ করেছে ... আগে এখানেও ইংলাজি ভাষায় সবকিছু ছিলো, এখন সব বাংলায়। আরেকখান কথা হইলো আমাদের অভ্রনীল ভাইয়া কিন্তু ওখানে আরেকটু উন্মুক্ত পরিচয়ে মডুগিরি করছেন দেঁতো হাসি
কি? পছন্দ হইলো না? ... ... আচ্ছা আবার শুরু করি:
ধরেন আপনি পুরাতন লিনাক্স ব্যবহারকারী। আপনি ভালু লোক ... তাই অন্য নতুনদের সাহায্য করতে চান। কিন্তু এই নতুন লুকজন যে কোথায় কোন চিপায় গিয়ে সাহায্য চায় ... ... খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। আবার সব চিপাতে আপনার প্রবেশাধিকারও নাই। আপনার পরোপকার করতে না পারার এই দুষ্ক (দূঃখ) শেষ হইলো বলে: .... আহেন ভাই চইল্যা আহেন ... সম্পুর্ন বাংলায় শুধুমাত্র লিনাক্স বিষয়ক একখান ফোরাম পূণর্জন্ম লাভ করেছে ... আগে এখানেও ইংলাজি ভাষায় সবকিছু ছিলো, এখন সব বাংলায়। আরেকখান কথা হইলো আমাদের অভ্রনীল ভাইয়া কিন্তু ওখানে আরেকটু উন্মুক্ত পরিচয়ে মডুগিরি করছেন দেঁতো হাসি
তা-ও পছন্দ হইলো না?? ... ... ঠিক আছে, আবার শুরু করি (দান দান .. তিন দান):
ধরেন আপনি লিনাক্স ব্যবহার করেন না। ভবিষ্যতে করতেও পারেন, না-ও করতে পারেন। তবে, যারা এ্যাত সুন্দর জানালা ফেলে লিনাক্স ব্যবহার করে তাঁদের সম্পর্কে একটু কৌতুহল হচ্ছে ... ... ব্যাটারা এ্যাত বোকা কেন? ... ... কেন এ্যাত সুন্দর জানালা ছেড়ে খোলা মাঠে দৌড়াচ্ছে? ... কেনু কেনু কেনু? এরা আর কী-রকম বোকাসোকা কথাবার্তা বলে ... ... এইসব জেনে যদি মজা লুটতে চান তবে .... ... আহেন ভাই চইল্যা আহেন ... সম্পুর্ন বাংলায় শুধুমাত্র লিনাক্স বিষয়ক একখান ফোরাম পূণর্জন্ম লাভ করেছে ... আর এখানে শুধু লিনাক্স বিষয়ক আলতু-ফালতু কথাবার্তা হয়। আহেন ... এগো কাজ কারবার দেইখ্যা মজা লুটেন ... ...
এইটাও পছন্দ হইলো না??? ... ... তাইলে আমি খেলুম নাঃ - জন রাসেলের করা মূল পোস্টটাই দেখেন:

উদ্ধৃতি
আপনি লিনাক্স ব্যবহারকারী। কিন্তু আপনার মনে খুব দুঃখ যে শুধুমাত্র লিনাক্স নিয়ে আলোচনা করার জন্য বাংলায় কোনো ফোরাম নেই। সমস্যায় পড়লে বিভিন্ন বাংলা ফোরাম কিংবা ব্লগে গিয়ে সাহায্য চাইতে হয়। তাছাড়া অনলাইনে লিনাক্স নিয়ে বাংলায় আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফোরাম না থাকায় লিনাক্স ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বাংলা ব্লগ ও ফোরামে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন। কেমন হত যদি এই সব লিনাক্স ব্যবহারকারীদের একছাদের নীচে আনা যেত। যদি শুধু লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য একটা ফোরাম থাকতো! যেখানে সব লিনাক্স ব্যবহারকারীরা একসাথে আড্ডা মারবেন। মনের সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারবেন, একে অন্যকে সাহায্য করতে পারবেন, সেই সাথে নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা তামাশাও করতে পারবেন। শুধু চিন্তা করে দেখুন, সব লিনাক্স ব্যবহারকারী এক জায়গায়! আপনি উবুন্টু-মিন্ট-ফেডোরা যেটা নিয়েই সমস্যায় পড়েন না কেন, কেবল কোনো মতে হাঁচড়ে পাঁচড়ে সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছুতে পারলেই হয়, বাঘা বাঘা লিনাক্স ব্যবহারকারীরা আপনার সমস্যা সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে - তাইনা! ২০০২ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স বা বিএলইউএ বাংলাদেশে লিনাক্স ছড়িয়ে দেবার জন্য কাজ করে আসছে। বিএলইউএ এর শাখা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে উবুন্টু বাংলাদেশ এবং ফেডোরা বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশে ক্রিয়েটিভ কমন্স এর অ্যাফিলিয়েট হিসেবে কাজ করছে বিএলইউএ। পাশাপাশি বেশ কিছু সফটওয়্যারের বাংলা লোকালাইজেশনের উপরও কাজ হচ্ছে বিএলইউএ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে যে, সেই ২০০৫ সাল থেকেই কেবলমাত্র বাংলাদেশী লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য বিএলইউএ একটি ফোরাম রয়েছে। এর নাম লিনাক্স ফোরাম।
অবাক হচ্ছেন তাইনা! একটা পুরো ফোরাম লিনাক্সের জন্য, তাও আবার বাংলাদেশের লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য - অথচ এ ব্যাপারটাই আপনি জানতেননা। না জানার মূল কারণ হচ্ছে লিনাক্স ফোরাম যখন থেকে শুরু হয় (২০০৫ সালে) তখনও লিনাক্স বাংলাদেশে ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি, তাছাড়া সেসময় লোকজন এখনকার মত ব্যাপকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো না ফলে ব্লগে ও ফোরামগুলোতে এত লোকের আনাগোনা ছিলনা। তাই স্বল্পসংখ্যক ব্যবহারকারীর ব্যবহার করা ফোরামটি অনেকটা আড়ালেই ছিল। তাছাড়া ফোরামটি বাংলাদেশীদের জন্য তৈরি করা হলেও সেসময় বাংলা লোকালাইজেশনের সুবিধা সেরকম না থাকায় এর ভাষা ছিল ইংলিশ। ফলে মায়ের ভাষায় সেভাবে আলোচনা করতে না পারায় এবং তার কিছু পরেই অনলাইনে সম্পূর্ণ বাংলা কয়েকটি ফোরাম চলে আসায়, লিনাক্স ফোরাম কার্যত অদৃশ্য হয়ে পড়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশে লিনাক্স প্রসার ও প্রচারে এবং নবীন ব্যবহারকারীদের জন্য লিনাক্স সম্পর্কীত বিভিন্ন আলোচনার জন্য কয়েকটি বাংলা ফোরাম ও ব্লগের অবদান অনস্বীকার্য। সত্যি বলতে কি, ঐ সব ফোরামে মাধ্যমেই লোকজন লিনাক্স সম্পর্কে উৎসাহী হয়েছে এবং এখন লিনাক্স ব্যবহার করছে। কিন্তু এতে কিছু সমস্যায়ও পড়তে হয় নতুন ব্যবহারকারীদের। যেহেতু এরকম কোনো ফোরাম বা ব্লগ নেই যেখানে সকল লিনাক্স ব্যবহারকারী একসাথে রয়েছেন, সেহেতু দেখা যায় যে সর্বোচ্চ সাহায্য পাবার আশায় একজন ব্যবহারকারী একই প্রশ্ন বিভিন্ন ফোরাম ও ব্লগে পোস্ট করেন এবং উত্তর দেখার জন্য সবগুলো ফোরাম ও ব্লগে তাকে নিয়মিত যেতে হয়। ব্যাপারটা বেশ ঝামেলার। তাই শুধুমাত্র লিনাক্সের জন্য একটা বাংলা ফোরামের অভাব সবসময়ই অনুভূত হত। এমন একটা ফোরাম যেখানে নবীন থেকে প্রবীন কিংবা নাদান থেকে ঝানু - সব ধরনের লিনাক্স ব্যবহারকারীরা একত্রিত হবেন, যেখানে নতুন ব্যবহারকারীরা সব রকমের সাহায্য পাবেন, যেখানে পুরনো ব্যবহারকারীরা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ব্যবহারকারীদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবেন, যেখানে লিনাক্স ব্যবহার করতে গিয়ে মুখোমুখি হওয়া যে কোনো সমস্যা নিয়ে যে কেউ নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে পারবেন। সোজা কথায়, শুধু বাংলায় পুরোপুরি লিনাক্সময় একটা ফোরামের খুব অভাব ছিল।
বাংলা ভাষায় নির্মিত সম্পূর্ণ লিনাক্স ফোরামের এই অভাবটি এবার ঘুচতে যাচ্ছে। বিএলইউএ লিনাক্স ফোরামটিকে পুরোপুরি বাংলায় রূপান্তর করে ফেলা হয়েছে। সেই সাথে নতুন থিম ব্যবহার করে চেহারায়ও নতুনত্ব দেয়া হয়েছে লিনাক্স ফোরামকে। বলা যায় যে নতুন রূপে লিনাক্স ফোরামের পুণর্জন্ম হয়েছে। এবার লিনাক্সপ্রেমী ও লিনাক্স ব্যবহারকারীদের কলতানের অপেক্ষায় রয়েছে ফোরামটি। আপনি যদি লিনাক্স নিয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন কিংবা আপনি যদি লিনাক্সের দুনিয়ায় নতুন হয়ে থাকেন, যদি লিনাক্সের সাথে আরো ভালোভাবে পরিচিত হতে চান, যদি লিনাক্সের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে চান, যদি লিনাক্স নিয়ে যেকোন সমস্যায় অভিজ্ঞদের পরামর্শ পেতে চান - তবে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে লিনাক্স ফোরাম। আর আপনি যদি লিনাক্সের দুনিয়ায় পুরনো হয়ে থাকেন, আপনি যদি আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে নতুনদেরকে সাহায্য করতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন, আপনি যদি বাংলাদেশে লিনাক্স প্রচার ও প্রসারে যদি কিছু করতে চান - তাহলে আপনার জন্যও ফোরামটি অপেক্ষা করছে। আপনি যদি উপরের দু'ধরনের কোনটাই না হয়ে থাকেন, তারপরও আপনি লিনাক্স ফোরামে আমন্ত্রিত; লিনাক্স কি, এটা দিয়ে কি করা যায় না করা যায়, আপনার সব কাজ কিভাবে লিনাক্স দিয়ে করতে পারবেন ইত্যাদি নিয়ে কিছু ধারণা পাবেন। আর কিছু নাহোক, বাংলাদেশী লিনাক্স ব্যবহারকারীদের সাথে অন্তত আড্ডা তো মারতে পারবেন।
লিনাক্স ফোরাম আপনার জন্য প্রস্তুত। আপনি যোগ দিতে প্রস্তুত তো? আমরা কিন্তু আপনার নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছি...
http://forum.linux.org.bd/
প্রচারে:
বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স (বিএলইউএ)

মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০১০

বান্ধবীর চিঠি যেন বউয়ের কাছে না যায় - মুনীর হাসান

(সচলায়তনে প্রকাশিত)
গত ২৩শে জুলাই বন্টু মিন্টুর আড্ডায় গিয়েছিলাম। সচলায়তন এটার লাইভ ব্লগিং পার্টনার ছিল সেটা সকলেই জানেন আশা করছি (গৌতম দাদাকে আন্তরিক ধন্যবাদ)। সেই আড্ডা সম্পর্কে একটু ছোট রিভিউ লেখার খায়েশ জাগলো বলেই .... ....।
বেশ কিছুদিন যাবৎ (সাড়ে ৩ বছর +) নিয়মিত শুধুমাত্র লিনাক্স ব্যবহার করছি বলেই, বুঝি বা না বুঝি - এ বিষয়ে খুটিনাটি বিষয়গুলো অনলাইনে পড়ে রাখার চেষ্টা করি সবসময়। কারণ আমি জানি যে, কম্পু বিষয়ে বিপদে পড়লে নিজেকেই নিজের সাহায্য করতে হবে। এই একই কারণে প্রথম যখন কম্পিউটার কিনি ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে, তার প্রায় দুই বছর আগে থেকে নিয়মিতভাবে কম্পিউটার জগত নামক একটা পত্রিকার শুরুর মলাট থেকে শেষ মলাট পর্যন্ত পড়তাম এবং কপিগুলো সংগ্রহে রাখতাম। নিঃসন্দেহে সেই পড়াগুলো এই যন্ত্রটাকে ভালভাবে(?!?) বুঝতে অনেক সাহায্য করেছিলো - এবং কম্পুটারের সমস্যা হলে প্রায় সবসময় নিজে নিজেই হাতুড়ে চিকিৎসা দিতে পারতাম।
যা হোক, নিজের পড়ার উপরে একটু আত্মপ্রসাদ থাকলেও বন্টু মিন্টুর আড্ডাতে গিয়ে রেভুলুশন ও.এস. তথ্যচিত্র দেখে এমন কিছু নতুন তথ্য জানলাম যা লিনাক্স ও মুক্তসোর্স সম্পর্কে নিজের আগ্রহ ও শ্রদ্ধাটাকে আরও উপরে তুলে নিল। মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের জনক রিচার্ড স্টলম্যান সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে ব্লগে ফোরামে পড়েছি ... ... কিন্তু জানতামই না যে এই ব্যাটা MIT'র (= খ্যাতনামা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে গবেষণা দলের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। MIT বা স্ট্যানফোর্ড শুনলেই কেমন যেন শিরশিরে একটা অনুভুতি জাগে বেশ আগে থেকেই, আর এই ব্যাটা সেখানকারই একজন ... ...। বাকী যেসব লোকেরা এই লিনাক্স বা ওপেনসোর্স আন্দোলনের সাথে জড়িত এবং এই তথ্যচিত্রে দেখালো তারাও কিন্তু বাণের জলে ভেসে আসা কেউ না .... ... নামী সব ইউনিভার্সিটির পাগলাটে সব গবেষক। ওপেনসোর্সের জন্য কর্মরত বেশিরভাগ লোকজনই এমন সব ব্রিলিয়ান্ট লোকজন .... .... .... .... তা-ই-তো বলি, আমার কাছে জানালার তুলনায় লিনাক্স কেন এ্যাত বেশি নিঁখুত মনে হয়।
তথ্যচিত্রর শুরুর দিকে একটা হিট ডায়লগ না জানালে তো ব্লগটাই নিজের কাছে অসম্পুর্ন মনে হবে। ওপেনসোর্স পথিকৃতদের একজন বললেন যে একদিন লিফটে সুটেড বুটেড লোককে মাইক্রোসফটের লোগো বা আই.ডি. লাগানো দেখে বলেছিলেন: So .... ... you work in microsoft! ঐ লোক একটু হয়তো খুশি, জবাব দিলেন "হ ঠিকাছে, তয় তুমি কী কর চান্দু?" .... .... আমি তো একজন হ্যাকার, এ কথা ওরে বুঝাই কীভাবে ..... কিছু তো একটা বলা দরকার ... ... একটা কঠিন বিষদৃষ্টি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম: I am your worst nightmare.
যা হোক, তথ্যচিত্রের পর শুরু হওয়া আড্ডায় এক পর্যায়ে শ্রদ্ধেয় মুনির হাসান ভাই অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন। তিনি জানালেন যে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মহোদয়কে ওপেনসোর্সের বিষয়টা উপলব্ধি করাতে পেরেছেন, তাই সরকারী কাজকর্মগুলোতে ওপেনসোর্স চলে আসছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া, যেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যানদের প্রশিক্ষণ হয় সেই ল্যাবের কম্পিউটারগুলো উবুন্টুতে চলে। কিন্তু প্রশিক্ষণ অফিসের যেই কম্পুতে তিনি উবুন্টু রেখেছিলেন, পরবর্তী ব্যক্তি সেটা আবার জানালাতে নিয়ে গেছে, কিন্তু ল্যাবের গুলো পরিবর্তন করেনি ... ... কারণ জানালা বিশিষ্ট নেটওয়র্কের জানালা গলে অনেক ঝামেলা চলে আসে যা উবুন্টুতে হয় না। এরকম একবার উবুন্টু আবার জানালা দেখে মনখারাপের কিছু নাই, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, আর এভাবেই আগুপিছু করতে করতে একসময় ওপেনসোর্স চুরি করা জানালার স্থান নিয়ে নেবে।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন যেটা নিঃসন্দেহে আমাদের নীতিনির্ধারক মহলের মাথাতেও দিয়েছেন - সেটা হল "বান্ধবী বা গার্লফ্রেন্ডের কাছে লেখা চিঠির কপি যেন বউয়ের কাছে চলে না যায়" - নাইলে কিন্তু বিরাট ক্যাচালের মধ্যে পড়তে হবে! জানালাতে তথ্যচুরির কিছু ব্যাকডোর মাঝে মাঝে ইচ্ছাকৃতভাবেই দেয়া হয়, এবং NSA নামক উইজেটের কী কাজ, এই ব্যাপারে মাইক্রোসফট কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি; তবে এটা খুবই স্পষ্ট যে এন.এস.এ. আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির নামের অদ্যক্ষর ... কাজেই এই উইজেট কী করছে সেটা সহজে অনুমেয়।
মুনির হাসান ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে আমার একটা পঠিত ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। জার্মানীর পার্লামেন্ট জানালা বাদ দিয়ে লিনাক্সের দিখে ঝুকেছে এমন খবরটা ২০০১ সালের; কারণ হল জানালার খরচ বেশী ছাড়াও এর ফাঁক গলে সমস্ত গোপনীয়(!) তথ্য আমেরিকায় চলে যাচ্ছে বলে একটা থলের বেড়াল বের হয়ে পড়েছিলো। ব্লগটি লেখার জন্য এই খবরের রেফারেন্সের জন্য গুগল করলাম একটু ... ...সামান্য কিছু অবশিষ্ট খবর পেলাম এখানে এবং এখানে
আড্ডার এমন পর্যায়ে চা বিরতি দিয়েছিলো, আর আমিও এর পরে থাকতে পারিনি (শুক্কুরবারেও ক্লাস নিতে হয় মন খারাপ ) ... ... তাই বাকীটুকুর জন্য হয় গৌতম দাদা অথবা রণদীপম দাদার পোস্টের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নাই ... .... থুক্কু ...সকাল সকাল ব্লগ লিখে সচলে পোস্টাইতে এসে দেখি রণদীপম দাদা দারুন একখান পোস্ট দিয়ে ফেলেছেন গতরাতেই

সোমবার, ২১ জুন, ২০১০

শখের কাজ ফেলনা নয়

(সচলায়তনে প্রকাশিত)
এই সেমিস্টারে রবিবার আমার সাপ্তাহিক বন্ধ। আর এমন ছুটির দিনের অলস সন্ধ্যায় বিদ্যূৎ চলে গেলে নেটবুকের ব্যাটারী ক্ষয় করে মাথায় ঘুরতে থাকা বিষয়ে ব্লগ লেখা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে কিচ্ছু লিখছি না, কারণ বাবাকে নিয়ে যেই স্মৃতি আর অনুভুতি সেটা ফিকে হওয়ার নয়, তাছাড়া তরল পদার্থ কীবোর্ডের ক্ষতি করতে পারে। তাই অন্য যেই বিষয়টা মাথা থেকে মুছে যাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা আছে সেটা নিয়েই আপাতত তেনা প্যাচাই একটু।

খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমার বাছ বিচার একটু কম এবং লবনের কমবেশিতে খেতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। আমার ৩০+ বি.এম.আই. (Body Mass Index, BMI= weight in kg / sqare of height in meter) এই খাদ্যরসিকতার বিষয়টাকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে। আমাকে খাওয়াতেও লোকজন (চাচী/ফুফু ইত্যাদি) পছন্দ করে ... ... কারণ তাঁদের সমস্ত রান্নাই আমার অসাধারণ ভাল লাগে সেটা আমার খাওয়া দেখেই উনারা বুঝে নিতে পারেন। শুধুমাত্র নিজ বাসায় আমাকে খাওয়া দাওয়াতে নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ এতে আমার স্বাস্থ্যহানী হওয়ার আশংকায় ওনারা যথেষ্ট আন্তরিক। হাসাহাসি করার কিছু নাই ... ... আগের আমলে স্বাস্থ্যহানী বলতে শুধু টিংটিঙে পাতলা স্বাস্থ্য বুঝানো হত ... ...কিন্তু আধুনিক মা/শাশুড়ি/বউরা বি.এম.আই.-এর রেঞ্জ (18 - 22 kg/m2) জানে ও বোঝে। আদর্শ রেঞ্জের সর্বোচ্চ মান থেকে আমার ওজন প্রায় আধমন বেশি (!) ... কাজেই আন্ডারওয়েটের মত ওভারওয়েটও সুস্বাস্থ্য নয় অর্থাৎ এটা স্বাস্থ্যহানী।

একটু চা খেয়ে আসি ... ...

আধাঘন্টা পর, আমি কিন্তু চা খেয়ে ফিরে এসেছি .... যা হোক, যেটা বলছিলাম:
খাওয়া দাওয়াতে খুব আগ্রহী হলেও রান্না করার ব্যাপারে আমাকে আনাড়ি বলা যায়। তবে অনেক রেস্টুরেন্টে যে দারুন খাবার রান্না করে সেটা আমরা সবাই জানি ... আর জেনে জেনে সেসব জায়গায় খেতে চলে যাই। আবার অনেক বাসাতেই এমন সুন্দর কিছু আইটেম মাঝে মাঝে শখ করে রান্না করা হয়, যার কোনো তুলনা কোনো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবে না। অনেক সময়ে আমি বা আরও গুণমুগ্ধ খাদক এই সব মা/চাচী/খালা/ফুফু/ভাবীদেরকে বলি যে আপনার এই আইটেম যদি বিক্রি করা যায় তবে সেটা অমুক হোটেলের ব্যবসাকে লাটে উঠিয়ে দেবে। কিন্তু সেই সব গুণী মহিলারা শুধুই হাসেন, তাঁদের রান্না করা খাবার বা তৈরী করা আচার বিক্রয় করেন না, শুধু আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করতেই বিনামূল্যে (কৃতজ্ঞতাটুকু অমূল্য) এসব অকাতরে হাসিমুখে দিয়ে দেন।

বিনামূল্যে দেন অর্থাৎ এগুলো পেতে কোনো টাকা দেয়া লাগেনা, এটা সত্য হলেও দানের ব্যাপারটা যে পুরাপুরি একপেশে হয় সেই কথাটা পুরাপুরি ঠিক নয়। কারণ, আমাদের মনে ওনারা যেই স্থান করে নেন এবং রান্নাবান্নার ক্ষেত্রে প্রথম পরামর্শের উৎস হন -- এই ধরণের স্থান টাকা খরচ করলেও সহজে পাওয়া যায় না।

.... .... আচ্ছা কী যেন বলছিলাম ... ... ও হ্যাঁ মনে পড়েছে; শখের কাজ যে পেশাদার কাজের চেয়ে উন্নত মানের হতে পারে তার একটা উদাহরণ দিচ্ছিলাম (বাবুর্চির চেয়ে ভাল রান্না)। ইচ্ছা করলে এটা নিয়ে আরও ত্যানা প্যাচানো যায় ... ... যেমন, কোনো কোনো লোকের সংগ্রহ করা তৈলচিত্র কোনো যাদুঘরের সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। একজন শখের শিল্পীর গান পেশাদারদের ছাড়িয়ে যেতে পারে; শখ করে করা হাতের কাজ (কাঁদামাটির কাজ/ কাঠ খোদাই করা / পেইন্টিং ইত্যাদি), পেশাদার কাজের চেয়ে হাজারগুণ ভাল হতে পারে ... ... কারণ পেশাদার কাজে গ্রাহকের চাহিদার বাইরে কিছু করার দরকার হয় না, আবার অতিরিক্ত কিছু করলেও উল্টা ফল হতে পারে, কিন্তু শখে মানুষ যা করে সেটার মধ্যে নিজের সমস্ত কল্পনা, আবেগ এবং মননশীলতা স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারে; নিজের কল্পনার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে পারে।

আক্কেলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি ... কাজেই ওপেনসোর্স সফটওয়্যার মাত্রই নামকরা প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটারি সফটওয়্যারের চেয়ে নিম্নমানের/পচা হতে হবে বলে সস্তার তিন অবস্থা মার্কা তালগাছের মালিকগণনিশ্চয়ই এখনও আগের মত করেই ভাববেন ... ... আক্কেলমান্দদের জন্য শুধু শুধু বিনামূল্যের সচলায়তন, অভ্র, উইকিপিডিয়া, ফায়ারফক্স বা লিনাক্স নিয়ে কথা বলার দরকার নাই .... শুভরাত্রি।

সোমবার, ৭ জুন, ২০১০

গ্রেডিং পদ্ধতি এবং কিছু অগোছালো চিন্তাভাবনা

সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত

এটি একটি গবেষণাবিহীন লেখা; সম্ভবত একটু বেশি লম্বা হয়ে গেছে অনিচ্ছাকৃতভাবে। অনেকের কাছেই পুরান প্যাচাল মনে হতে পারে।

পরীক্ষার ফলাফল কী কাজে লাগে?

যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে এটার প্রয়োজনীয়তা বা objective জানা থাকলে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় সুবিধা হয়। তাই প্রথমেই পরীক্ষার ফলাফল কী কাজে লাগে সে বিষয়ে আমার সামান্য ধারণাটুকু তুলে ধরি। জ্ঞানার্জনের জন্য লেখাপড়া, তাই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হল সেই জ্ঞান কতটুকু অর্জিত হল সেটা যাচাই করে নেয়া। তবে প্রায়োগিক দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমরা নির্দিষ্ট বিষয় বা বিষয়সমূহে একজন শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের পাশাপাশি তার মেধাশক্তি পরিমাপ করার চেষ্টা করি। সেই মেধার ভিত্তিতে তাঁর উচ্চতর শিক্ষার উপযুক্ততা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এই ফলাফলের ভিত্তিতেই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মী বাছাই করা হয়।

তাই পরীক্ষার ফলাফলকে বলা যায়, উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত শিক্ষার্থী এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মী বাছাইয়ের একটা হাতিয়ার। নিয়োগকর্তা যদি পরীক্ষার ফলাফল দেখে কর্মীর যোগ্যতা বুঝতে না পারেন, তবে সেই ফলাফল এর মূল একটা উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ এবং নিয়োগকর্তার কাছে এটা একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু মনে হতে পারে না।

এজন্য শিক্ষকদের দুই ধরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। একদিকে শিক্ষক হলো কোচ ... অর্থাৎ, তিনি শিক্ষার্থীকে উপযুক্তি কোচিং বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞের জন্য প্রস্তুত করেন। অপরদিকে শিক্ষক হলো গেট-কিপার বা দাড়োয়ান, অথবা বলা যেতে পারে "কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার"। অর্থাৎ, তার প্রদত্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ইন্ডাস্ট্রি উপযুক্ত কর্মী বেছে নিতে পারবে। এটা সমাজ তথা কর্মক্ষেত্রের কাছে শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা।

আমরা শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা বলতে শুধুমাত্র পাঠদানে অবহেলা করার বিষয়টা বুঝে থাকি। কিন্তু যদি শিক্ষক কোয়ালিটি কন্ট্রোল ঠিকমত না করেন, এবং সমাজ এবং নিয়োগকারী/উচ্চতরা শিক্ষাব্যবস্থাকে উপযুক্ত কর্মী/শিক্ষার্থী বেছে নিতে সাহায্য করার মত ফলাফল না দেন, তবে সেটাও সমাজের প্রতি চরম দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করি। এই প্রসঙ্গে গণহারে এস.এস.সি.তে A গ্রেড পাওয়ার ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্য মাত্রার দৃষ্টিকটু লাগে ... মনে হয় কোনো কারখানায় প্রোডাক্ট উৎপন্ন হওয়া মাত্র সর্বোচ্চ মানের বলে নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে।

প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতি

গ্রেডিং নিয়ে মোটাদাগে কিছু বলার আগে এই সিস্টেমে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করি। এই সিস্টেমের সাথে প্রথম পরিচয় হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে। গ্রেডিং সিস্টেমের সাথে পরিচয় আরেকটু গাঢ় হয় পরবর্তীতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স করতে গিয়ে। আর এখন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুবাদে প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে ছাত্র/শিক্ষকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে আরো কিছু বলার আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কিছু প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই পদ্ধতিতে গ্রেড দেয়া হয় সেটা দেখি:

তালিকা-১

  প্রাপ্ত নম্বর     লেটার গ্রেড     গ্রেড পয়েন্ট  
৮০+   A + ৪.০০
৭৫+   A ৩.৭৫
৭০+   A - ৩.৫০
৬৫+   B + ৩.২৫
৬০+   B ৩.০০
৫৫+   B - ২.৭৫
৫০+   C + ২.৫০
৪৫+   C ২.২৫
৪০+   D ২.০০
০-৩৯   F ০.০০

ভাবছেন এগুলোতো জানা কথা, এ আর এমন কি ... ... । তবে দেখুন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স লেভেলে যেভাবে গ্রেড দেয়া হয় সেটার পদ্ধতি:

তালিকা-২

  প্রাপ্ত নম্বর     লেটার গ্রেড     গ্রেড পয়েন্ট  
৯০+   A + ৪.০
৮০+   A ৩.৫
৭০+   B + ৩.০
৬০+   B ২.৫
৫০+   C ২.০
০-৪৯   F ০.০

গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে যাঁরা খুব বেশি নাড়াচাড়া করেননি, তাঁরা নিশ্চয়ই একটু ধাক্কা খেয়েছেন এই পর্যায়ে এসে। আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে যেখানে ১০ রকম গ্রেড (ফেল সহ) সেখানে মাস্টার্সে ৬ রকম গ্রেড হতে পারে। আর প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্যটাও চোখে পড়ার মত: আন্ডারগ্র্যাডে প্রতি ৫ নম্বরের জন্য গ্রেড পয়েন্ট পরিবর্তন হয় যেখানে মাস্টার্সে এই পার্থক্য ১০। সাথে সাথে পর্যায়ক্রমিক গ্রেড পয়েন্টের পার্থক্যগুলোও দেখা যেতে পারে: আন্ডারগ্র্যাডে ধারাবাহিকভাবে ০.২৫ পার্থক্যতে গ্রেডগুলো অবস্থিত, যেখানে মাস্টার্সে এটা ০.৫০। পাস্‌মার্কও আলাদা: মাস্টার্সে ৫০, আন্ডারগ্র্যাডে ৪০।

একটা বিষয় নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে, দুই লেভেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দক্ষতাকে আলাদা পাল্লায় মাপা হয়। আর, একজন ছাত্র বুয়েটে যত সহজে আন্ডারগ্রাজুয়েটের গ্রেড তুলতে পারবে, মাস্টার্সে ব্যাপারটা ততটা সহজ হবে না। এমনকি যেই ছাত্র প্রতিটা বিষয়ে আগে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে এসেছে, মাস্টার্সে সেই মানের পরীক্ষা দিয়ে একই গ্রেড পাবে না: আগে ৮০ পেলেই যেখানে A+ = ৪.০ পাওয়া যেত, সেখানে মাস্টার্সে ৮০ = A = ৩.৫। আর পাশের ব্যাপারটাও খেয়াল করুন: আন্ডারগ্রাডে ৪৬ = C = ২.২৫, কিন্তু মাস্টার্সে সেটাই ফেল।

কাজেই এ থেকে অনুমান করা সহজ হয় যে সর্বক্ষেত্রে একই প্রাপ্ত নম্বরের জন্য একই গ্রেড পেতে হবে -- এমন কোন নিয়ম নেই। আর গ্রেডিং পদ্ধতি যে সব জায়গায় একই হতে হবে, বা হবে এমনটি আশা করাও উচিত নয়।

আমি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করি। এটাতে যে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তা দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা ভিন্ন। এই ভিন্নতার পেছনের কারণগুলো প্রবন্ধের শেষে জানানোর চেষ্টা করবো। নিচে এখানকার গ্রেডিং পদ্ধতি দেয়া হল:

তালিকা-৩

  প্রাপ্ত নম্বর     লেটার গ্রেড     গ্রেড পয়েন্ট  
৯০+   A ৪.০
৮৫+   A - ৩.৭
৮০+   B + ৩.৩
৭৫+   B ৩.০
৭০+   B - ২.৭
৬৫+   C + ২.৩
৬০+   C ২.০
৫৫+   C - ১.৭
৫২+   D + ১.৩
৫০+   D ১.০
০-৪৯   F ০.০


গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে একটু ত্যানা প্যাচানি: (কী, কেন)

বাস্তব জীবন থেকে একটা সহজ উদাহরণ দেই। ধরুন চারজন পরীক্ষার্থী একটি পরীক্ষায় যা লিখেছে তা মূল্যায়ন করার পরে নিচের মত করে নম্বর দেয়া হল। আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করেই তাদের মেধাক্রম দেয়া হত। এখনকার পদ্ধতিতে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করে গ্রেড দেয়া হয়।

তালিকা-৪

  ছাত্রের নাম     প্রাপ্ত নম্বর     মেধাক্রম     গ্রেড  
ছাত্র-১ ৯৩ A অথবা ৪.০
ছাত্র-২ ৭৭ B অথবা ৩.০
ছাত্র-৩ ৭৭ B অথবা ৩.০
ছাত্র-৪ ৭৬৩ বা ৪ B অথবা ৩.০

একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে সাধারণ মেধাক্রম পদ্ধতিতে একটা বড় দূর্বলতা রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে শুধু ১ম, ২য়, ৩য় অবস্থান দেখে তাদেরকে সম-ব্যবধানে অবস্থিত মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে ১ম স্থান অধিকারী ২য় বা ৩য়'র চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অন্য কোন ক্ষেত্রে (ধরুন যথাক্রমে ৯১, ৯০, ৬৬ নম্বর) ১ম ও ২য় হয়তো প্রায় একই নম্বর পেয়েছে কিন্তু ৩য় বা এর পরের ক্রমগুলোতে থাকা পরীক্ষার্থী এই দুইজনের চেয়ে অনেক পেছনে, যা শুধুমাত্র এই মেধাক্রম পদ্ধতিতে বোঝা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আগের এই পদ্ধতিতে মেধার তূলনা করা যাচ্ছে না।

শোনা যায় একটি বাংলা উত্তরপত্র ফটোকপি করে অনেকজন শিক্ষকে দেয়াতে তাঁদের মূল্যায়নে বিরাট ব্যবধান দেখা গিয়েছিলো। এছাড়া একই লেখা সম্পন্ন খাতা পর পর দুইবার দেখলেও একই শিক্ষকের প্রদেয় নম্বরের সামান্য হেরফের হতে পারে। তাই এই সামান্য নম্বরের হেরফেরের কারণে দুইজন ছাত্রর মেধা আলাদা সেটা জোর গলায় দাবী করা যায় না (উপরের উদাহরণে ছাত্র-২, ছাত্র-৩ এবং ছাত্র-৪ একই মেধাসম্পন্ন)। এমনকি MCQ পদ্ধতিতেও কোনো কোনো ছাত্র আন্দাজে টিক দিয়ে সম মেধার আরেকজনের চেয়ে ২/১ নম্বর বেশি পেয়ে যেতে পারে। তাই সম মেধার ছাত্রদেরকে একই কাতারে রাখার জন্য গ্রেড পদ্ধতির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো।

বাস্তব জীবনেও কিন্তু আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রেডিং তূল্য পদ্ধতি ব্যবহার করি। ১নম্বর মাল, দুই নম্বর কোয়ালিটি, ইত্যাদি কথাগুলো এজন্যই বহুল প্রচলিত। বিলাসবহুল বাসের টিকিট সবগুলোর একই মূল্য হলেও সবগুলো বাসে/সিটে কিন্তু আরাম/সুবিধা সমান নয়। আবার ইটের ভারবহন ক্ষমতা ৫০৪০ পাউন্ড/বর্গইঞ্চি (psi) হউক আর ৫১০০ psi হউক সেটাকে আমরা ১ নং মানের ইট বলি। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও সবসময় নম্বর প্রদানের মত নিঁখুত (!) পরিমাপ দেয়া সম্ভব নয় - সেসব ক্ষেত্রে আগে থেকে নির্ধারিত একটা মাত্রা/তালিকা অনুযায়ী গ্রেডিং এর মত করে শ্রেণীবিভাগ করা হয় (যেমন ধরুন: ৫ তারকা হোটেল, ৩ তারকা হোটেল; বৈদ্যূতিক যন্ত্রের শক্তি সাশ্রয়ী রেটিং; ২নং বিপদ সংকেত, ৭নং বিপদ সংকেত; প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণীর ঠিকাদার ইত্যাদি)।

প্রায় একই ভাবে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রতিটা গ্রেডের একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। যেমন:

A গ্রেড (A+, A, A-)= Excellent বা অসাধারণ
B গ্রেড (B+, B, B-)= Very good বা খুব ভাল
C গ্রেড (C+, C, C-)= Average বা গড়পড়তা
D গ্রেড (D+, D, D-)= Passable বা পাশযোগ্য
কাজেই একটা নির্দিষ্ট উত্তরপত্রে ঠিক কত নম্বর পেলে সেটা অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রাখবে সেটা আপেক্ষিক এবং প্রশ্নপত্রের ধরণের উপর নির্ভর করে। অসাধারণ মেধার অধিকারীকে আলাদা করে চেনার মত প্রশ্নই যদি না থাকে এবং সবগুলো প্রশ্নই যদি গড়পড়তা মেধার ছাত্র সঠিক উত্তর দিতে পারে, তবে সেই পরীক্ষা পদ্ধতি ছেঁকে ছেঁকে মেধাবীদের আলাদা করতে সম্পুর্নরূপে ব্যর্থ হবে। ইদানিংকার SSC'র ফলাফল দেখে এই ব্যর্থতার কথাটাই বার বার মনে পড়ে যায়।

লক্ষনীয় হল যে এখনও গ্রেড প্রদানের আগে ছাত্রকে নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। কারণ একাধিক উত্তর থেকে সবগুলোতে প্রদত্ত উত্তরের সমষ্টিগত ফলাফল পেতে নম্বরের বিকল্প নাই। এই একই কারণে লেটার গ্রেডের সমতূল্য গ্রেড পয়েন্টও দেয়া হয়ে থাকে যা সিজিপিএ (কম্বাইন্ড গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) নির্ণয়ে কাজে লাগে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষার উত্তরপত্রে নম্বরপ্রদান পদ্ধতির বিকল্প এখনও বের হয়নি।

রিলেটিভ গ্রেডিং; অ্যাবসলিউট গ্রেডিং

নম্বর পদ্ধতি খুব সুবিধাজনক হলেও এটার একটা বড় দূর্বলতা আছে, যা শিক্ষার্থীদেরকে ভোগাচ্ছে বহুভাবে; এই সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হয়েছে গ্রেডিং পদ্ধতিতে। প্রথমে সমস্যাটা উল্লেখ করি: ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিন্ন প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রে কোনো বছরে সহজ এবং কখনো অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই কঠিন প্রশ্নের সময়ে একই রকম মেধা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীও বেশি নম্বর উঠাতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে অন্য ব্যাচের ছাত্রদের সাথে তার মেধার তূলনীয় মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।

এই সমস্যা সমাধানকল্পে উপরের তালিকাগুলোতে দেয়া অ্যাবসলিউট গ্রেডিং (=নির্দিষ্ট নম্বর পেলে নির্দিষ্ট গ্রেড) পদ্ধতির পরিবর্তে রিলেটিভ গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। কয়েকভাবেই এই রিলেটিভ গ্রেডিং প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম পদ্ধতিতে ক্লাসের সমস্ত ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ৫ জনকে বা ৫%কে সর্বোচ্চ গ্রেড দেয়া হবে, তারপর সেই নম্বর অনুযায়ী বাকীদেরকে একটা নির্দিষ্ট নম্বর পরপর পরবর্তী গ্রেড দেয়া হবে। কাজেই নম্বরের উপর নির্ভরশীল থাকলেও সহজ বা কঠিন প্রশ্নের সীমাবদ্ধতা এখানে কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে এই পদ্ধতিটা আমার খুব বেশি পছন্দ নয়, কারণ প্রতি ব্যাচেই যে সম-মেধার ছাত্র ভর্তি হবে এটা সদাসত্য নয়। এমনও হতে পারে সঠিকভাবে পড়ানো এবং প্রশ্ন সহজ হওয়া সত্বেও বেশিরভাগ ছাত্র খারাপ করলো, কারণ তাঁরা আসলে তেমন মেধাবী নয় - তাই তাদের সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া উচিত নয়। আবার অন্য আরেক পরীক্ষায় স্ট্যান্ডার্ড কঠিন প্রশ্ন হওয়া সত্বেও ৫%-এর বেশি ছাত্র খুব ভালো নম্বর পেল ... অর্থাৎ নির্দিষ্ট ৫% এর চেয়ে বেশি ছাত্র সমান মাত্রার মেধার অধিকারী হওয়া সত্বেও কেউ কেউ সামান্য ১ নম্বরের জন্য সর্বোচ্চ গ্রেড পাবে না ... যেটা সঠিক মেধার মূল্যায়নের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করি।

আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে গ্রেস নম্বর প্রদান। গণহারে সকলকে গ্রেস প্রদান নয়, বরং এই পদ্ধতিতে শিক্ষক ছাত্রদের সাথে তার মিথষ্ক্রিয়া বা পড়ানোর অভিজ্ঞতায় ঠিক করবেন যে এই ক্লাসের ছাত্রদের গড় মেধা আসলে কোন গ্রেডের অধিকারী। সেই গ্রেডের জন্য গড়ে যত নম্বর পাওয়া দরকার, সেটার সাথে ছাত্রদের প্রাপ্ত নম্বরের গড় তুলনা করে গড় গ্রেস নম্বরের পরিমান নির্ণয় করবেন। তারপর একটা অনুপাতের সূত্র ব্যবহার করে প্রতিটি ছাত্রের জন্য গ্রেস নম্বরের পরিমাণ বের করবেন। এতে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র যত নম্বর গ্রেস পাবে, সবচেয়ে কম নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র গ্রেস পাবে তার চেয়ে অনেক বেশি।

উল্লেখিত এই দুইটি পদ্ধতিই কাজ করবে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে, কারণ এখানে সরাসরি শিক্ষকগণই ছাত্রদেরকে মূল্যায়ন করে থাকেন। কিন্তু SSC/HSC অথবা নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে যেই পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে সেখানে যেহেতু মূল্যায়নকারী শিক্ষক সরাসরি সেই ছাত্রকে চিনবেন না, তাই রিলেটিভ গ্রেডিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতাটুকু ওনার থাকবে না। এজন্য ফিক্সড গ্রেডিং পদ্ধতির উপযোগী এমন প্রশ্ন প্রণয়ন করতে হবে যেন অসাধারণ মেধার ছাত্রকে সাধারণ মেধার ছাত্র থেকে আলাদা করার জন্য নির্দিষ্ট নম্বরের প্রশ্ন থাকে। সাধারণ মেধার ছাত্র ঐ প্রশ্নের গভীরে গিয়ে বিশ্লেষন বা উত্তর দিতে পারবে না, তাই অসাধারণ গ্রেডের উপযুক্ত নম্বরও পাবে না। যে কোন পরীক্ষাতেই এই রকম চিন্তাধারা থেকেই সঠিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।

গ্রেডিং পদ্ধতির ভিন্নতা কেন

পাঠক যদি এতদুর পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তবে ইতিমধ্যেই এই ভিন্নতার বিষয়ে কিছুটা পরিস্কার ধারণা হয়েছে। এককথায় যদি এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হয় তবে বলা যায়: বিভিন্ন স্তরের মেধার ছাত্রদেরকে আলাদা ভাবে চেনানোর জন্য যতটুকু নম্বর নির্ধারণ করা দরকার, পরিস্থিতির ভিন্নতা অনুযায়ী ততটুকুই নির্ধারণ করা হয়। আমার সীমিত অভিজ্ঞতা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়া এবং পড়ানো সংক্রান্ত, তাই উদাহরণে ওগুলোই চলে এসেছে। আশা করছি, এগুলো অন্য বিষয়গুলোর (বাণিজ্য বা অন্যান্য বিভাগের) গ্রেডিং পদ্ধতির সাথে খুব একটা আলাদা হবে না। উপরের তালিকা-১ এবং তালিকা-৩ এ ভিন্নতার কারণ এভাবেই ব্যাখ্যা করা যাবে।

বুয়েটের আন্ডারগ্রাজুয়েটে যেই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হয়, সেখানে অসাধারণ মেধা না হলে ৮০%+ নম্বর পাবে না। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে একই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হলেও অসাধারণ মেধা প্রমাণের জন্য ৯০%+ নম্বর পেতে হবে; কারণ পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির ভিন্নতা। বুয়েটে পুরা পাঠ্যক্রম/সিলেবাসের উপরে ৩ ঘন্টার একটা ফাইনাল পরীক্ষা হয়, যাতে মোট নম্বরের ৭০% ওজন বরাদ্দ থাকে (বাকী ৩০% ক্লাস পার্ফর্মেন্স + কুইজ থেকে আসে)। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে ২ ঘন্টার ফাইনাল পরীক্ষাতে এক তৃতীয়াংশ পাঠ্যক্রম/সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত থাকে। বাকী দুই তৃতীয়াংশ দুইটি ১ ঘন্টার মিড টার্ম পরীক্ষাতে সম্পন্ন করা হয়। (ফাইনাল = ৩৫%; মিডটার্মদ্বয় = ২০%+২০%; কুইজ+এসাইনমেন্ট+ক্লাস পার্ফর্মেন্স=২৫%)। ছোট ছোট সিলেবাসে পরীক্ষার কারণে এখানে বেশি নম্বর তোলা অপেক্ষাকৃত সহজ। এই প্রতিষ্ঠানে যদি বুয়েটের মতই ৮০% এ অসাধারণ মেধার গ্রেড দিতে হয়, তবে পরীক্ষার সময়ের স্ট্রেস/চাপ-ও একই পর্যায়ের করতে হবে, অর্থাৎ মিড টার্ম বাদ দিয়ে সম্পুর্ন সিলেবাসের উপরে ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে। মজার ব্যাপার হল, ৯০%-এ সর্বোচ্চ গ্রেড অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও এখান থেকেও প্রায় ব্যাচেই দুই/একজন এই গ্রেড তুলতে সক্ষম হয় -- সেটা পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে বুয়েট/ডুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের কোর্সেও ঘটে।

সমস্যা

কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও বুয়েটের মত গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে (ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনও এমনই গাইডলাইন দিয়েছেন); অথচ সেসব জায়গায় ফাইনাল পরীক্ষায় কিন্তু বুয়েট/ডুয়েট/চুয়েট/কুয়েট-এর মত সম্পুর্ন সিলেবাসের চাপ নিতে হয় না, কারণ মিড টার্ম পরীক্ষায় কিছু সিলেবাস সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, কম মেধার ছাত্র হওয়া সত্বেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রর গ্রেড পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের গ্রেডের চেয়ে বেশি হয় (অনেকটা SSC পরীক্ষার ফলাফলের মত)।

আর একই কারণে আমার প্রতিষ্ঠানে কম গ্রেড পাওয়া ছাত্রও ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে গ্রেডের বন্যায় ভাসতে থাকে। আর এই রকম কোয়ালিটি কন্ট্রোলজনিত সমস্যার কারণে কিছু চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানও একটা নির্দিষ্ট গ্রেডের চেয়ে কম পেলে আবেদন করার দরকার নাই বলে দেয় -- অর্থাৎ এর চেয়ে কম গ্রেড পাওয়া যাকে আমরা উপযুক্ত প্রকৌশলী হিসেবে সার্টিফিকেট দিচ্ছি সেটা তার প্রাপ্ত সম্মান পায় না। মজার ব্যাপার হল, আমাদের এখান থেকে সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্যতার (CGPA>2.25) চেয়ে কম গড় গ্রেডের ছাত্র অন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে চলে গেলে শুধু যে বেশি গ্রেড পাচ্ছে (খুব ভালো B থেকে অসাধারণ A) তা-ই নয়, ওখানে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে নিয়ে যাওয়া আমাদের দেয়া গ্রেডকে ওদের নম্বর পদ্ধতিতে ফেলে নতুন গ্রেডও দেয়া হচ্ছে!!

শিক্ষকতার আদর্শ থেকে সরে গিয়ে শুধুমাত্র শিক্ষা-বাণিজ্য কেন্দ্রিক এই কোয়ালিটি কন্ট্রোল দীর্ঘমেয়াদে দেশকে কী পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে ভাবতেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া, কোনোরকম ল্যাবরেটরি ছাড়া (কোচিং-এ খারাপ মান + কোয়ালিটি কন্ট্রোলেও খারাপ মান) শুধুমাত্র সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে যাদের ডিগ্রী দেয়া হবে, সেই তথাকথিত ইঞ্জিনিয়ারের নকশা করা ভবন ফেটে যাবে, হেলে যাবে, ভেঙ্গে পড়বে; তথাকথিত ডাক্তারের রোগী আর সুস্থ হবে না। এখনই এই দেশে গুণীর কদর নাই ... ... ... আর এ অবস্থা চলতে দিলে শিক্ষিত লোকের শিক্ষাকে সমাজ আর মূল্য দেবে না। উল্লেখ্য যে বিদেশের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এরকম অবস্থা বিরাজ করে।

চাকুরীর বাজারে, নিয়োগকর্তার গ্রেডিং পদ্ধতির মূলনীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকাটাও একটা বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করছে। সকলেই লেটার গ্রেডের বদলে নিউমেরিকাল গ্রেড দেখতে চায় এবং একটির সাথে অপরটির তুলনা করে। অথচ এই গ্রেডিং পদ্ধতি সব জায়গায় এক নয়, এক হতে পারে না। বরং লেটার গ্রেডটিই ছাত্রটির আসল মেধা সম্পর্কে বলে দেয় -- সে কি অসাধারণ, নাকি খুব ভালো, নাকি গড়পড়তা ইত্যাদি। কিন্তু যখন সিজিপিএ ৩.০ এর নিচে আবেদন করতে নিষেধ করা হয়, তখন বাণিজ্য-মূখী কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম মেধার অথচ বেশি গ্রেডের ছাত্র সেখানে আবেদন করতে পারে, অথচ বুয়েটের অপেক্ষাকৃত মেধাবী ছাত্র আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হয় না! সেলুকাস!

কিছুটা অফটপিক, কিছুটা ভিন্নমত


প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কি সত্যই মেধা যাচাই করতে পারছি? আমার সহপাঠিগণ বিদেশী নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গ্রেড পেয়েছে, বুয়েটে তার চেয়ে অনেক কম গ্রেড পেয়েছিলো। এছাড়া কিছু কিছু বিষয়ের পরীক্ষায় ঠিক কোন ধরণের মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় সেটাই ভেবে পাই না। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষাগুলোতে দেখেছি, মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া ভাল গ্রেড পাওয়া অসম্ভব। মুখস্থ করার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে এক প্রকার মেধা, এবং কর্মক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু তাই বলে ম্যাথ পরীক্ষায় মুখস্থ! ম্যাথের উদ্দেশ্য কি মুখস্থ? সেখানে সমাধানের দাড়ি, কমার জন্য নম্বর কাটতো!

শুধুমাত্র ভাল অংক করতে পারলেই মেধাবী -- এমন একটা ভুল ধারণার প্রচলন আছে এদেশে। ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা ও মেধার প্রয়োজন হয়। ভাল ডিজাইনার হওয়ার জন্য মার্কেটিং করার মত মেধা না থাকলেও চলবে, আবার যে ম্যানেজমেন্টে দক্ষ তার মেকানিকসে জ্ঞান/মেধার প্রয়োজন নাই। পরীক্ষার খাতায় লেখে ফাটিয়ে ফেললো, গ্রেডের বন্যায় ভেসে গেল অথচ কর্মক্ষেত্রে একটা সিদ্ধান্ত নিতে কাঁপাকাঁপি লেগে যায় ... এ ধরণের মেধার আদৌ কি খুব প্রয়োজন আছে?

আমার ধারণা, মেধা হল ক্ষমতার পরিমাপ; আর জ্ঞান হল সেই ক্ষমতা কতটুকু ব্যবহার করা হল তার একটা পরিমাপ। পরীক্ষার গ্রেডকে মেধার পরিচায়ক রূপে ব্যবহার করলেও আসলে এটা তার জ্ঞানের প্রতিফলন, মেধার প্রতিফলন নয়। অন্যভাবে বললে, একটা নির্দিষ্ট রাস্তায়, রাস্তার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দুইটি গাড়ি যদি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলে ... তা থেকে দুইটি গাড়িই সমান ক্ষমতার বলে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না, কারণ একটি গাড়ি হয়তো এর ইঞ্জিনের সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, অন্যটি এর অর্ধেক ক্ষমতা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র যদি পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে থাকে কিংবা তার কোন বিপদ ঘটে থাকে তবে বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফলে তাকে নিম্ন মেধার মনে হবে। আবার দেখুন স্কুলে কিছু সহপাঠি সবসময় পেছনের সারির ফলাফল করলেও কর্মক্ষেত্রে তাদের অধীনে তথাকথিত মেধাবী ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদিরা চাকুরী করছে। মেধা না থাকলে শুধুমাত্র চাচা/মামার জোরে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। বিদ্যালয়ের গৎ বাধা লেখাপড়া তাকে ঐ বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারেনি, তাই তার মেধা সে সেখানে প্রয়োগ করেনি। আবার, লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র কর্মক্ষেত্রে লবডংকা -- এমন উল্টা ঘটনাও দেখা যায় অহরহ!

এরকম হওয়ার কারণ হতে পারে - আমাদের লেখাপড়া পুরোপুরিভাবে কর্মমূখী শিক্ষা নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী, আইন ইত্যাদি পেশাদার লেখাপড়া থাকা সত্বেও এই ধরণের (কর্মমূখী নয় অথবা কার্যক্ষেত্রের চাহিদা পূরণ করে না) অভিযোগ আসতে থাকলে, লেখাপড়া এবং এই মেধা যাচাই পদ্ধতির সার্থকতা সম্পর্কে আরেকটু চিন্তাভাবনা করার ইন্ধন যোগায়।

মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০১০

প্রতিক্রিয়া পোস্ট: তবুও সম্পাদকদের সম্মানিত ভাববো

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
(ধারণাপ্রসূত পোস্ট, বাস্তবতার সাথে না মিললে সেটার দায় লেখকের)
কোনো ব্যক্তি পত্রিকার সম্পাদক শুনলেই তাঁর সম্পর্কে একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব চলে আসে। এই শ্রদ্ধা কেন আসে সেটার কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে হল যে আমাদের অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। .... বলে ফেলেই তো বিপদে পড়লাম; পাঠক উদাহরণ জানতে চাইবেন ... ... আমি আবার রেফারেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিকালি কাঁচা। আচ্ছা ঠিক আছে .... একেবারেই নিরাশ করবো না, কয়েকটা নাম মনে পড়েছে; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধূমকেতু পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, নবযুগ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিক মিয়ার নামও মনে পড়ছে।
তাছাড়া সম্পাদকগণ সম্পাদকীয় লেখেন, যেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখা হয়ে থাকে। এরকম ভারী কাজ যাঁরা করেন তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা সম্ভবত খারাপ কিছু নয়। সম্পাদকের কাজ কি শুধু সম্পাদকীয় লেখা? আমার তা মনে হয় না। বরং সম্পাদকীয় লেখাটা একটা অতিরিক্ত গুরুদায়িত্ব। গুরুদায়িত্ব তো গুরুজনদের উপরেই পড়ে। সম্পাদক নামটাই বলে দেয় যে এই পদবীধারী ব্যক্তির মূল কাজ হল সম্পাদনা করা। পত্রিকার লেখাগুলোকে ঘষামাজা করে প্রকাশযোগ্য করা, প্রয়োজনে লেখা বাছাই করা .... ইত্যাদি। জীবনে কখনো পত্রিকা সম্পাদনা তো দুরের কথা, পত্রিকাতে লেখা প্রকাশের চেষ্টা করিনি ... ... তাই আমার সব কথাই বিভিন্ন সাহিত্য/নাটক/সিনেমা/ব্লগ ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত ধারণার যোগফল।
তবে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশের সাথে জড়িত ছিলাম (কামলা খাটা)। এডিটেড বাই ... এর পরে যাদের নাম লেখা থাকতো/থাকে সেটা দেখেই বোঝা যায় সম্পাদনা করাটা কী ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রেও সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। তবে, সম্পাদক নিজে সমস্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় বলে সেই প্রবন্ধগুলোকে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের কাছে নিরীক্ষার জন্য পাঠায় (রিভিউয়ার)। রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় যে, রিভিউয়ারগণ সম্পাদকেরই বর্ধিত অংশ হিসেবে কাজ করেন।
পত্রিকার বিষয়ে ফেরৎ আসি। যে বিষয়ে সম্পাদক সাহেব ভাল জানেন না, পত্রিকাতে যদি এমন কোনো প্রবন্ধ/লেখা ছাপানোর জন্য জমা দেয়া হয় তবে সেটা কি উপযুক্ত লোককে দিয়ে সঠিকতা যাচাই করানো হয়? আমার মনে হয়, করানো হয়। এই জায়গাটাতেই সম্ভবত ধরা খেয়ে গেছেন সম্মানিত কিছু সম্পাদক সাহেব। উপযুক্ত লোকের জায়গায় ভুলে হয়তো কোনো শাখামৃগকে নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন; কিংবা জমা দেয়া লেখার লেখককেই সম্পুর্ন ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে বিশেষজ্ঞ ভেবে বসে আছেন। এরকম ভুল লোক নির্বাচন করে থাকলে সেটা শুদ্ধ করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় না, বরং ভুল থেকে শিক্ষা নেয়াটাই সঠিক পথ। কিন্তু সেটা না করলে এরকম আজেবাজে এবং ভুল তথ্যসমৃদ্ধ লেখা পত্রিকায় প্রকাশের পেছনে সম্পাদক সাহেব দায় অস্বীকার করতে পারবেন না। পত্রিকার কাছে পাঠকের দাবী অনেক, তাই পাঠককে ভুলপথে পরিচালিত করলে সম্পাদক সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাটা রাখতে কষ্ট হয়।
শিরোনামে প্রতিক্রিয়া পোস্ট দেখে ভাবছেন, এটা আবার কিসের প্রতিক্রিয়া? ... আরে ভাই, আই.টি. সেক্টর নিয়ে যখন বালছাল লেখা পত্রিকায় প্রকাশ পায় তখন মনে দূঃখে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হয়।
এমনই লেখা যে, সেটার মধ্যে কিছু ভুল থাকলে শুদ্ধ করার সাজেশন দেয়া যেত ... .... এটাতে শুদ্ধ কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়াই কঠিন। লিখেছেন যে, সেই তথাকথিত বিশেষজ্ঞকে ডাক্তার তু-ষাড় লিখতে পছন্দ করেন অনেকে; আর আছে বিশেষ-অজ্ঞ কাগু।
এ প্রসঙ্গে এস.এম.মাহবুব মুর্শেদের পোস্ট
এ প্রসঙ্গে লেনিনের পোস্ট

রবিবার, ২ মে, ২০১০

একটা অভিনব প্রতারণার ব্যর্থ প্রয়াস - সতর্ক থাকুন

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
অনেকগুলো লেখা মাথায় ঘুরছে। লেখার জন্য ফাইল খুলে সেভ করে রেখেছি কিন্তু নানা ব্যস্ততায় লেখা হয় না। কিন্তু এই ঘটনাটা চেপে রেখে দেরি করা ঠিক হবে না মনে হলো।

গতপরশু (৩০শে এপ্রিল ২০১০, শুক্রবার) দুপুরে আমার শাশুড়ির মোবাইল ফোনে (গ্রামীন) অপরিচিত নম্বর (01749 872178) থেকে একটা কল আসে। ফোনকারী বলেন যে আপনি খুব লাকি, গ্রামীন ফোন একটা প্রমোশনের জন্য তাঁদের সমস্ত সাবস্ক্রাইবারদের মধ্য থেকে লটারি করেছে, এতে আপনি ৩য় হয়েছেন। আপনি পুরস্কার হিসেবে ১৬৯০০ টাকার টকটাইম পাচ্ছেন। আপনার মোবাইল থেকে ব্যালেন্স চেক করে দেখুন যে টাকাটি পেয়েছেন কি না। পেয়ে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে জানান। যদি ১ম ২য় যারা হয়েছেন তাঁদের আগে আপনার কাছে থেকে কল পাই, তবে আরও পুরস্কার আছে।

শাশুড়ি *৫৬৬# চেপে ব্যালেন্স চেক করে দেখেন যে আসলেই ব্যালেন্সে ১৬৯০০ টাকা যুক্ত হয়েছে। ফোন করে জানালেন। তখন ওপাশ থেকে বলে আপনি আসলেই খুব লাকি কারণ আপনি সবার আগে এটা জানিয়েছেন, এতে পুরস্কার হিসেবে একটা মোটরসাইকেল পেয়েছেন। শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন এই ১৬৯০০ টাকা কি ক্যাশ করা যাবে ... উত্তরে জানালো - না করা যাবে না, তবে দুই বছর পর্যন্ত এই ব্যালেন্স ব্যবহার করা যাবে। এরপর বললেন যে বুঝতেই পারছেন যে আমি একজন বয়স্ক মহিলা ... আমি মোটরসাইকেল দিয়ে কী করবো? উত্তরে জানালেন যে আপনি এর বদলে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্যাশও নিতে পারেন। তবে এর আগে একটা কাজ করতে হবে।

শাশুড়ি আম্মার মনে একটু সন্দেহ দোলা দিচ্ছিলো, কিন্তু ব্যালেন্স চেক করাতে গ্রামীন ফোনেরই অফিসিয়াল কিছু বলে হালকা বিশ্বাস করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেই আরেকটা কাজ করতে হবে শুনলেন তখনই আবার সন্দেহটা গাঢ় হলো যে: নাহ্ এটা ফ্রড কেস মনে হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে বললো যে আপনাকে ৯ হাজার টাকা জমা দিতে হবে এখুনি। শাশুড়ি আম্মা জিজ্ঞেস করলেন যে, টাকা কেন? ....
গ্রা.ফো.: ... আরে বুঝলেন না, এসব কাজে সরকারি ভ্যাট আছে না। ওসব খরচ তো আপনাকেই দিতে হবে।

শা.আ.: আমি আগে হাতে টাকা পাই, তারপর না ভ্যাট দিবো। হাতে টাকা না আসলে ভ্যাট কোত্থেকে দিবো?
গ্রা.ফো.: ... এইতো বেশি বুঝতে শুরু করেছেন। টাকাটা যতদ্রুত সম্ভব জমা দিতে হবে।

শা.আ.: আমি এখন টাকা দিবো কোত্থেকে। আজ শুক্রবার, আগামীকাল ১লা মে বাদ দিয়ে আগামী রবিবারে ব্যাংক খুললে পরে টাকা তোলা যাবো, তার আগে টাকা দেয়া অসম্ভব।
গ্রা.ফো.: বাসায় টাকা আছে কত?

শা.আ.: এই ধরেন হাজার দেড়েক আছে বাজার খরচের জন্য।
গ্রা.ফো.: ঐটাই জমা দেন। এখুনি ফ্লেক্সি করে পাঠিয়ে দেন ... আমরা যেন প্রসেসিং শুরু করতে পারি।

শা.আ.: কিন্তু ... .
গ্রা.ফো.: এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে ১২১এ ফোন করেন। ওখানেই বিস্তারিত ভাবে মেসেজ শুনতে পারবেন।

তখন কল দিলেন ঐ নম্বরে। যথারীতি একটা অটোমেটেড কন্ঠ বিভিন্ন অপশন দেয়া শুরু করলো ... অমুক জানতে চাইলে ১ চাপুন; মটরসাইকেল সম্পর্কে জানতে চাইলে ... ...
বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিলেন। সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন করে ঝাড়ি

: ফোন কেটে দিলেন ক্যান? এজন্য মানুষের উপকার করতে হয় না।
শা.আ.: আচ্ছা কিভাবে কী করতে হবে এটা আমার হাজবেন্ডকে বলেন।

এরপর ওরা আমার শ্বশুর সাহেবকে অনেককিছু বুঝালেন। শ্বশুর সাহেবও ফ্লেক্সি করতে বেরিয়েছেন এমন ভাব নিয়ে রাস্তায় গেলেন যেন ঐপাশের লোক রাস্তার গাড়ির শব্দ শুনতে পায়। ফোনে বললেন, ফ্লেক্সি করার লোক ভেতরে গেছে কী একটা আনতে, আপনি বরং কোন নাম্বারে পাঠাতে হবে সেটা বলেন।
অপর দিক থেকে নম্বর দিল (01928 908707)। শ্বশুর সাহেব ফোন কেটে দিলেন।

কিছুক্ষণ পর ঐদিক থেকে আবার ফোন করে শাশুড়িআম্মাকে ঝাড়ি ... ... আপনার হাজবেন্ড একটা ফাউল লোক ... (গালিগালাজ)। ফোন কেটে দেয়া হলো।

অবাক ব্যাপার হলো, কিছুক্ষণ পর একাউন্ট চেক করে দেখা গেল সেই ১৬৯০০ টাকা নাই। শুধু শুধু এই ফোন টোন বাবদ ৩০ টাকার টকটাইম গচ্চা।

ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু শুধু শুধু বানিয়ে মিথ্যা বলার এবং হোক্স ছড়ানোরও কোনো প্রয়োজন নাই। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিলো আর যেখানে ফ্লেক্সি পাঠাতে বলা হয়েছিলো, সেই নাম্বারগুলো লেখা আছে শ্বশুর আব্বার কাছে। রাতে উনি (এবং আমি) বাসায় ফিরলে সেগুলো এই পোস্টে যুক্ত করে দেবো।

আমার কাছে অবাক লাগলো যে এটা কীভাবে সম্ভব! গ্রামীন ফোনের কিছু কি হ্যাক করে এমন ফ্রড করা সম্ভব ... নাকি ... কর্তৃপক্ষের অগোচরে ভেতরের কিছু লোক এমন কারবারের সাথে জড়িত?

==
ব্যাপারটায় সচেতন থাকা দরকার। আর এইরকম ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। আমার আগের মাঝরাতে ব্যাপক বিনোদন নামক পোস্টেও মুঠোফোন দিয়ে একই রকম সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। টেকনিক্যাল কারণে (ব্যালেন্স পরিবর্তন, কল সেন্টার) এই ঘটনাটা আগের ঘটনাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

==
এর আগে (বছরখানেক হতে পারে) এক চ্যাংড়া মিস কল দিয়ে দিয়ে শাশুড়ি আম্মাকে জ্বালাতো। একবার কল ব্যাক করে ঝাড়িও দিয়েছেন। বাসায় এসে আমাকে বললো দেখতো বাবা ... এটার একটা বিহিত করা যায় কি না। আমি তখন দেখি যে ওটা মধ্যপ্রাচ্যের একটা নাম্বার। আম্মাতো নাম্বার খেয়াল না করেই কলব্যাক করেছেন! ..... .... শুনে আম্মার রিয়্যাকশন: তাইতো বলি আমার ২০০ টাকা এ্যাত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল কীভাবে!

==
আরেকবার (কয়েক বছর আগে) শ্বশুরের বাসার ল্যান্ডফোনে এরকম মিষ্টি কণ্ঠের নীহারিকা নামক মেয়ে ফোন করে পুরস্কার জেতার কথা জানিয়েছিলো (আমিই সেই ফোন রিসিভ করেছিলাম!)। পরদিন যাওয়ার জন্য একটা ঠিকানাও দিয়েছিলো। কিন্তু কে আর সেধে সেধে অপহৃত (মুক্তিপণ দাবির শিকার) হতে যায়!

==
২০০৩ সালে আমার তৎকালীন অফিসে (গণপূর্ত) ফোন করে এক সন্ত্রাসীর (কালা জাহাঙ্গীর) নামে চাঁদা চেয়েছিলো। অনুনয়ের সুর শুনে আমি ঠিক সন্দেহ করেছিলাম। আমি উল্টা ওনার কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলাম। এর সপ্তাহখানেক পরেই পেপারে এরকম দুই ফ্রড গ্রেফতারের ঘটনাও বের হয়েছিলো।

বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০১০

আবর্জনা থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এখনই

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
পেশায় পরিবেশ প্রকৌশলী বলে আবর্জনার প্রতি আমার একটা আত্মার টান দেখা যায়। না ... ইয়ে .. মানে .... আবর্জনা দেখলেই পরিষ্কার করার বিষয়ে বলতে চেয়েছিলাম। আম্মার কাছে শুনেছি যে যখন একরত্তি বাচ্চা ছিলাম, তখনও হাতের কাছে ঝাড়ু পাইলেই ঝাড়ু দেয়া শুরু হয়ে যেত। এখনও হাতের কাছে ন্যাকড়া পেলেই জব্বর (জব্বার কাগু নয়) মোছামুছি শুরু করে দেই। ক্লাসরূম, সিড়ি ইত্যাদিতে কাগজ পড়ে থাকতে দেখলেও কুড়িয়ে পাশের "আমাকে ব্যবহার করুন" এ স্থাপন করি। অবশ্য শেষোক্ত এই অভ্যাসটা শুরু হয়েছে জাপান থেকে ... দেখতাম বুড়াগুলো ইভনিং ওয়াক করার সময়ে হাতে একটা পলিথিন ব্যাগ আর আরেক হাতে বিরাট চিমটা নিয়ে হাটে। হাঁটতে হাঁটতে কোনো ময়লা যেমন কাগজের টুকরা, বাচ্চাদের ফেলে যাওয়া চকোলেটের খোসা ইত্যাদি পেলেই চিমটা দিয়ে টুক করে ধরে পলিথিনে ঢুকিয়ে ফেলে, তারপর ফেরার পথে সেই পলিথিন ব্যাগটা ডাস্টবিনে ফেলে দেন ... ... পরিবেশের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাতে সাহায্য করে আসলে নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার আরেকটি দিকও (হাটার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ) ঠিক রাখলো। যাক ধান ভানতে শীবের গীত হয়ে গেল অনেক ... ... আসল কথায় আসি ... ...

স্কুলের পাঠ্য বইয়ে আমাদের সময়ে কম্পিউটার শিক্ষা বলে কোনো কিছু ছিলো বলে মনে পড়ে না (আমার SSC =১৯৯০)। ইদানিং বিভিন্ন জায়গায় পড়ছি যে আমাদের নীরবতার সুযোগে এই জায়গায় কিছু আবর্জনা পুশ-ইন করা হয়েছে। কিন্তু এই আবর্জনা পঁচে বায়োগ্যাস বা সার কিছুই হওয়ার উপায় নাই, তাই উদ্দিষ্ট ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এটা সহায়তার বদলে পেছনে টেনে লক্ষ্য থেকে দুরে সরিয়ে রাখবে বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নামক একটা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষেও ইদানিংকার পঁচা দূর্গন্ধ দেখে আবর্জনা দিয়ে ভর্তি বলে প্রতীয়মান হল। তাই এই উৎস থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রেরণা নিলে 'ডিজি' বাদ চলে গিয়ে শুধুই 'টাল' অবশিষ্ট থাকবে বলে আমার দৃঢ় ধারণা।

এদিকে ২০১৩ সালেরও বেশি দেরী নাই। কিন্তু পাঠ্যক্রমের ঐ বইগুলোতে প্রোপাইটারী দামী সফটওয়্যার চালানো শেখানোর চেষ্টা করা হযেছে বলে জানতে পারলাম। যদি পুরা তরুন সমাজকে ঐ পথে এগিয়ে নেয়া হয় তাহলে প্রজন্মশুদ্ধ শিক্ষিত লোকজন গুটিকয়েক সফটওয়্যার কম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে ... ... আর একপেশে দক্ষতার সেই প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হলে দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মূদ্রার বেশিরভাগ অংশই ঐ বিদেশী কোম্পানিগুলোর পকেটে চলে যাবে কারণ TRIPS চুক্তির অধীনে সরকার পাইরেসী ঠেকাতে বাধ্য।

কাজেই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এখনই সময়। শিক্ষাসূচীকে যুগোপযোগী করতে হলে মুক্ত সফটওয়্যার বিষয়ক বিষয়গুলোকে বেশি বেশি করে শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসতে হবে। এতে বিকশমান প্রজন্ম নির্ভরশীলতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং সত্যিকাল লক্ষ্য তথা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই আসুন শিক্ষাক্রম থেকে নির্ভরশীলতার আবর্জনা সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে জনমত গড়ে তুলি। যাদের মনে মুক্ত সফটওয়্যারের সামর্থ নিয়ে সন্দেহ দোলা দেয়, তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি মোজিলা ফায়ারফক্স, উইকিপিডিয়া, অভ্র-কীবোর্ড, ওপেনঅফিস, গিম্প, লিনাক্স ইত্যাদি মুক্ত সফটওয়্যার ও মুক্ত সংস্কৃতির সাফল্যের উদাহরণ। এছাড়া এই লেখা যেই ব্লগ বা ফোরাম থেকে এই লেখাটি পড়ছেন সেটাও মুক্ত সফটওয়্যারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

ভবিষ্যত প্রজন্মকে সফটওয়্যার-গোলামী থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া জরুরী। সফটওয়্যারের বিষয়টা পাত্তা পাওয়ার যোগ্য কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিগণই সফটওয়্যার ব্যবসা করে অর্থ কামাচ্ছেন। আমাদের বয়স বেড়ে চলেছে। এই আধবুড়াদের পক্ষে নতুন বিষয়গুলো আয়ত্ব করা সম্ভব না হলেও নতুন প্রজন্মের পক্ষে মুক্তির পথ আয়ত্ব করা সহজ হবে। তাই শিক্ষাক্রম থেকে আবর্জনাপ্রসুত আবর্জনাগুলো সরিয়ে ফেলা অতি জরুরী।

তাই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যে যার অবস্থান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের কানে কার্যকরভাবে এই কথাগুলো পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের অনেকেরই ভাই, দুলাভাই, চাচা, মামা, বন্ধু, বন্ধুর বাবা, আঙ্কেল, শিক্ষক ইত্যাদি পরিচিত ব্যক্তির মধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি/শিক্ষক/সাংবাদিক/কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রথমে তাদেরকে TRIPS, পাইরেসি, ওপেনসোর্সের শক্তি-সফলতার কথাগুলো সহজ ভাবে বলতে হবে। এছাড়া এ-ও জানাতে হবে যে বিভিন্ন দেশেই সরকারী পর্যায়ে ওপেনসোর্সকে প্রমোট করে অযথা খরচ বাঁচিয়েছে; অনেক বড় বড় কোম্পানিই ওপেনসোর্স ভিত্তিক সমাধান বেছে নিচ্ছে। এনারা জানলে এবং দেশপ্রেমিক হলে সামনে পুশ করতে থাকবেন বলেই আশা করি। এটা হবে অনেকটা জমিতে বীজ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করার মত একটা পদক্ষেপ।

শুধু সচেতনতা বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। যদি নতুন শিক্ষাক্রমকে সমর্থন দেয়ার মত যথেষ্ট বিকল্প শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুত না থাকে তবে সরকারের সদিচ্ছা হলেও আগের আবর্জনা ফেলতে পারবেনা। তাই ওপেনসোর্স ভিত্তিক শিক্ষাক্রম এবং এর উপযোগী শিক্ষা উপকরণ তৈরী করা জরুরী। সরকার শুরু করুক বা না করুক আমরা কিন্তু এই কাজটা এগিয়ে রাখতে পারি। এজন্য বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এবং ইন্টারনেটে অ্যাকটিভ দেশপ্রেমিক তথ্য-প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষাবিদদেরকে একটা ফোরামের মাধ্যমে একত্রে করে তাঁদের দিয়ে একটা উন্মুক্ত সুপারিশমালা তৈরী করাতে পারি। এতে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের সুক্ষ্ণ বিষয়াদি উঠে আসবে এবং সরকারের কাছে পেশযোগ্য একটা সুন্দর প্রস্তাব তৈরী হয়ে থাকবে বলে আশা করা যায়। এই প্রস্তাব হয়তো সরকার আবার দেশের শিক্ষা-সংক্রান্ত কমিটিতে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠাবে (আশা করি এই প্রক্রিয়া আবর্জনামুক্ত থাকবে)।

পাশাপাশি সেই সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণের তৈরীর কাজ এগিয়ে নিতে পারি, যেন সরকারকে সেই সব স্যাম্পল উপকরণও সরবরাহ করা যায়। উইকি এবং বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ইবুকের সফলতা দেখে এই স্বপ্নটাকে অবাস্তব মনে হয় না।

এই আবর্জনা দূরীকরণের পাশাপাশি আরেকটা বিষয়ে লক্ষ্য দেয়া দরকার। সেটা হল বর্তমান সরকারী কর্মীবাহিনীকে ২০১৩ পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত করা। ইতিমধ্যেই কিছু জায়গায় অভ্র ব্যবহার করতে না জানাকে অযোগ্যতা বলে ধরা হবে - এরকম ঘোষনার কথা শুনেছিলাম। একই ভাবে যদি ওপেন-অফিস এবং লিনাক্সকে প্রমোট করার উপায় বের করা যায় তাহলে কিন্তু আমরা শক্তভাবে প্রস্ততি নিতে পারি।
আসুন আমরা একটা ইবুক খুলি যেটাতে ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ে যুগোপযোগী কম্পিউটার শিক্ষাক্রম বিষয়ক পোস্ট এবং আলোচনাগুলো ধরে রাখি -- এবং ডেডলাইন ফিক্স করে একটা প্রাথমিক খসড়া দাঁড় করিয়ে ফেলি। পাশাপাশি চেনাজানা প্রাসঙ্গিক ফোরামগুলোতে প্রয়োজনে ইংরেজিতে এই প্রক্রিয়াতে যুক্ত হওয়া আহ্বান ছড়িয়ে দেই। শুরুর দিকের বিষয়গুলো এমন হতে পারে:
-- আমাদের দেশে বনাম অন্য দেশে কেমন সিলেবাস
-- কোন শ্রেণীতে কী সিলেবাস হওয়া উচিত

====ডিসক্লেইমার====
তাওয়া গরম থাকতে থাকতেই পরটা ভাজার নিয়ম, তাই তাড়াহুড়া করে এই পোস্ট করলাম... তাই নিঃসন্দেহে লেখা সুগঠিত হয়নি, এবং অনেক জরুরী বিষয়ও বাদ পড়ে গেছে - এটা ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ থাকলো।

তাওয়া গরম থাকার ব্যাপারটা কারো মাথার উপর দিয়ে গেলে জেনে রাখুন যে পাঠ্যক্রমের বইগুলো স্বঘোষিত আই.টি. বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রণেতা মোস্তফা জব্বার সাহেবের লেখা।

শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০১০

মাঝরাতে ব্যাপক বিনোদন

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
রাত ১২:৩০ প্রায়। বাচ্চা তখনো ঘুমায়নি ... আমার স্টাডি কাম বেডরুমটি অন্ধকার করে দেয়া হয়েছে ঘুমের পরিবেশ আনার জন্য। এর মধ্যেই ওর সাথে খেলাধুলা চলছে। এমন সময় মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। বুকের ভেতরটা একটু ছ্যাৎ করে উঠলো ... এ্যাত রাতে সাধারণত কোনো ভালো খবর আসে না।


ফোনটাকে খুঁজে পেলাম স্টাডি টেবিলে। ব্যাটার ব্যাটারির আয়ু প্রায় শেষ ... তাই স্ক্রিনের আলো জ্বলেনি.... নির্ঘাৎ নাম্বারের বদলে "চার্জ শেষ" ম্যাসেজ দেখাচ্ছে ... খুঁজে পেতেও একটু বেশি সময় লেগেছে। স্ক্রিনে আলো নাই জন্য কে ফোন করলো সেটাও অন্ধকার ঘরে দেখতে পারছি না। তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে ডাইনিং স্পেস থেকে আসা আলোতে মনে হল অপরিচিত নাম্বার ... ... আচ্ছা তাহলে সম্ভবত রং নাম্বার হবে। ফোন ধরলাম।

স্লামালেকুম, কে বলছেন প্লিজ ... ...একটা খড়খড়ে কন্ঠ বলছে "তোমাকে মাজার শরীফ থেকে স্মরণ করা হচ্ছে ".. ইত্যাদি। কথার কোনো আগা মাথা নাই .. ভাঙ্গা রেকর্ডের মত। ব্যাপারটাকে একটু ভৌতিক করার চেষ্টা আছে বলে মনে হল। আমি বললাম, একটু জোরে বলেন, পরিষ্কার ভাবে শোনা যাচ্ছে না ... আপনি কাকে চাচ্ছিলেন? ... ওপাশের কন্ঠস্বর একঘেয়ে খড়খড়ে কন্ঠে একই কথা বলে যাচ্ছে। ফোন কেটে দিলাম।

এদিকে মাস্টার বেডরুম থেকে বউ এদিকে চলে এসে জিজ্ঞেস করছে কার ফোন (রাতে সাধারণত ভালো খবর আসে না / কোনো গোপন অভিসার ধরে ফেললাম নাকি!) ... বললাম চিনিনা তবে বাঁদরামি করছে। বলতে বলতেই আবার ঐ নাম্বার থেকে ফোন .. কানে ধরতেই একই কথা ... বউ বলছে: কী বলে? আমি তো হাসতেছি ... শুনবা? ঠিক আছে বলে ফোনের স্পিকারে দিলাম। দুইজনই খিক্ খিক্ করে হাসতেছি .... ওদিক থেকে বলতেছে ... "বান্দা তুমি কি শুনতেছো ... তোমাকে মাজার থেকে স্মরণ করা হচ্ছে ... ... ..." আমি বললাম, মাঝরাতে ব্যাপক বিনোদন ... বলতে থাকেন, শুনতেছি, জিরো ওয়ান সেভেন থ্রি নাইন এইট টু ... ..... নাম্বারটা পড়ছিলাম স্ক্রিন থেকে .... বেরসিকের মত ফোনটা কেটে দিলো।

এখন অবশ্য ফোনকারীর মজাতে (!) পানি ঢেলে দেয়ার জন্য একটু খারাপ লাগছে।