সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮

গণপরিবহণ নিয়ে ...

কোনটা চাই:

ধরুন একজন ব্যক্তি টঙ্গি থেকে মতিঝিল নিয়মিত অফিস করেন; আরও ধরুন গাড়িতে/বাসে যাওয়া আর আসাতে ৪৫ মিনিটও লাগতে পারে, আবার কপাল খারাপ থাকলে আড়াই ঘন্টাও লাগতে পারে, তাহলে তিনি ৯টার অফিস ধরার জন্য কখন রওনা দিবেন? কিংবা আগামী পরশুদিন একজনের সাথে সকাল ১০টায় মিটিং করার সময় ঠিক করে নিশ্চিন্ত মনে রওয়ানা দিতে পারবেন কি না?

এবার ধরা যাক সেই ব্যক্তির কাছে আরেকটি বিকল্প আছে, যেটাতে উনি জানেন যে এই পথটা ট্রেনে যাওয়া যায়, আর এভাবে গেলে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা, একটু হাঁটা সব মিলিয়ে ঠিক এক ঘন্টা ১৫ মিনিট লাগবে যেটাতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট কম বেশি হতে পারে। তাহলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াবে? উনি কি ৪৫ মিনিটে পৌঁছানোর চান্স নেয়ার জন্য গাড়িতে আসতে বেশি পছন্দ করবেন (ধরা খেলে আড়াই ঘন্টা লাগবে ৫০-৫০ চান্স) নাকি নিশ্চিত ভাবে সোয়া এক ঘন্টার ট্রেনযাত্রা বেছে নিবেন?
.
.
.
.
এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হলে মানুষ যেটা চায় সেটা হল সময়ের নিশ্চয়তা। বিশেষ করে সেই যাত্রাটা যদি অফিস/স্কুল /কলেজ ইত্যাদিতে যাওয়া আসার মত নিয়মিত যাত্রার অংশ হয় তাহলে এই নিশ্চয়তার বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। একই রাস্তা যেতে কোনদিন ৩০ মিনিট আর কোনদিন ৩ ঘন্টা লাগলে সেই আয়োজনের উপর নির্ভর করে কোন কাজের পরিকল্পনা করা যায় না। প্রতিদিনই যদি সেই একই রাস্তায় ঠিক দেড় ঘন্টা লাগে, তাও সেটা অনিশ্চয়তার চেয়ে ভাল। অন্ততপক্ষে সেই দেড় ঘন্টার জন্যও পরিকল্পনা করা যায় (যেমন: গাড়িতে/ট্রেনে/ট্রামে/বাসে ঘুমিয়ে নেয়া, জরুরী ফোনালাপ সেরে নেয়া, গান শোনা, নিউজপেপার পড়া, গল্পের বই পড়া, পডকাস্ট শোনা ইত্যাদি)। কাজেই সময়ের সাপেক্ষে নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা মানুষকে অনিশ্চয়তার হাত থেকে স্বস্তি দিতে পারে।

এ তো গেল যাত্রীর পক্ষের কথা। এবার আসা যাক সার্ভিস প্রোভাইডার বা সেবাদানকারীর কথায় …

সমস্যা কোথায়:

ব্যক্তি মালিকানায় যখন যাতায়াত সিস্টেম থাকে তখন তাঁদের লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ লাভ করা। কাজেই লিজ সিস্টেমে ড্রাইভার নিজ উদ্যোগে আর বেতনভোগী সিস্টেমে মালিকের নির্দেশেই সব সিট না ভরলে গাড়ি ছাড়বে না। আবার অন্যকেও আগে যেতে দেবে না, কারণ তাহলে যাত্রী হারাবে। ফলাফল রাস্তায় গাড়ি বাঁকা করে থামাবে, অন্য গাড়িকে ব্লক করবে, তৈরী হবে ঘন্টার পর ঘন্টা স্থায়ী ইতর যানজট। তৈরী হবে সেই অনিশ্চিত, সময়-অনির্ভরযোগ্য যাতায়াত সিস্টেম। এই ফল অবধারিত; বাস মালিক পক্ষকে লাভ করতে চাওয়ার জন্য দোষারোপ করে এটার সমাধান করা যাবে না। যদি জোর করে তাদের সময় মত বাস ছাড়তে বাধ্য করা হয়, তাহলে অনেক সময় খালি গাড়ি নিয়ে তাঁদের বেশ কিছু পথ যেতে হতে পারে, ফলে হয়তো লাভ তো দুরের কথা, চলাচলের খরচই উঠবে না।

তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা যেই সিস্টেম চাই সেটা অর্থনৈতীকভাবে টেকসই নয়। আবার অর্থনৈতীক ভাবে টেকসই করতে চাইলে সেই নির্ভরযোগ্য সিস্টেম সম্ভব নয়। আসলেই কি তাই?

সমাধান আছে:

যদি ব্যক্তির লাভের বদলে সামগ্রীক লাভের দিকে তাকাই তাহলে হয়তো সমাধানের জায়গাটা চোখে পড়বে। যেই জায়গায় কোনো পাবলিক যাতায়াত সিস্টেম নাই আর যে জায়গায় আছে তাদের তুলনা করলে এলাকা দু'টির অর্থনৈতীক সমৃদ্ধির মধ্যে চোখে পড়ার মত পার্থক্য থাকবে। একটা এলাকার সাথে যদি অন্য এলাকাগুলোর চমৎকার নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেই এলাকাটি সকলের জন্য আকর্ষনীয় হয়ে উঠে। খুচরা বিক্রেয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন সেখানে আসতে চাইবে, তেমন মানুষজনও বসবাস করার জন্য সেখানে থাকতে চাইবে। ফলে সেই এলাকার জমির দাম বাড়বে, বাসা ভাড়া বাড়বে। চাহিদার উপর ভিত্তি করে সেখানে চমৎকার সব অবকাঠামো গড়ে উঠবে। এই সব মিলিয়ে সেখান থেকে স্থানীয় প্রশাসন তথা সরকারের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। কাজেই সামগ্রীক ভাবে যে উন্নয়ন সেটার ফলে কোনো বাস/টেম্পু/ট্যাক্সি মালিকের সরাসরি তেমন লাভ হয় না, কিন্তু প্রশাসনের আয় বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্য পরিমানে।

সংক্ষেপে: উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে চমৎকার নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা - যেটাতে যাত্রী আসুক বা না-আসুক, সময় মত বাস/টেম্পু/ট্যাক্সি চলতে হবে। কিন্তু এটাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস/টেম্পু/ট্যাক্সি মালিকের লাভ নাই, বরং ক্ষতি। কিন্তু এই সিস্টেমে লাভ তো হচ্ছে … কার? প্রশাসনের/সিটি কর্পোরেশনের ….

আর এজন্যই দেখা যায় পৃথিবীর সকল উন্নত শহরে সরাসরি বাসের/ট্রেনের খরচ না উঠলেও ভর্তূকী দিয়ে সময়-নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে প্রশাসন। কারণ প্রশাসনই এখানে অর্থনৈতীকভাবে লাভবান হয়, ব্যক্তি মালিকানার বাস/টেম্পু মালিক নয়।

ছোট স্কেলের উদাহরণ:

ধরুন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস শহর থেকে একটু দুরে, আর সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থাও খুব খারাপ। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাবলো, নিজেরাই বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করবেন। এজন্য বেশ কিছু বাসও কিনলেন। বাসে যাতায়াতের টিকেটের খরচটাও সহনীয় রাখলেন। কিন্তু এখন যদি উনারা চিন্তা করেন, বাসের সব সিট না ভরলে ছাড়বেন না তাহলে সেটা সময়-নির্ভরযোগ্য হবে না। তখন কেউই ঐ ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে চাইবে না – করতে বাধ্য হলেও সেই দিন অন্য কোনো কাজের জন্য পরিকল্পনা করতে পারবেন না। কিন্তু টিকেটের টাকা থেকে খরচ তোলার চিন্তা বাদ দিয়ে যদি ভর্তূকি দিয়ে এটাকে সময়-নির্ভরযোগ্য সিস্টেমে পরিণত করা হয়, তাহলে ঐ ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা অনেক বেশি আকর্ষিত হবেন। আর ওখানে সকলেই এভাবে আসা-যাওয়া করলে কাজে-কর্মে আরও গতিশীলতা আসবে, ফলে ছাত্র ভর্তিও বৃদ্ধি পাবে – আর সামগ্রীকভাবে এটার লাভ, ভর্তূকীকে ছাড়িয়ে যাবে বহুগুনে।

শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮

গোয়াইনঘাট ভ্রমণ


নাহ! বিছনাকান্দি, জাফলং কিংবা রাতারগুল কোন জায়গায়ই যাই নি। শুধুমাত্র গোয়াইনঘাট উপজেলায় একটা পানি শোধনাগার আর ছোট পাইপলাইন হবে বলে সেটার সাইটটি দেখতে গিয়েছিলাম। এটার ডিজাইনটা আমাকে পরীক্ষা করে সায় দিতে হবে, তাই। এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়র্ক এই কাজটি করবে, ফান্ড ইউনেস্কো থেকে আর কাজটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের।

পদ্মা পারাপারের ভ্রমণ

হঠাৎ করে জাজিরা ক্যান্টনমেন্টের ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটা কাজ করে দেয়ার জন্য ডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং মিটিং করার ডাক পেল। সাথে করে আমাকেও নিয়ে গেল। সেই সাত সকালে মানে সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে ৯টার আগেই মাওয়া ঘাটে পৌঁছে গেলাম। ১১টায় মিটিং - সময় ঠিক রাখার ব্যাপারে খুব করে বলেছে। তাই নাস্তা টাস্তা না করেই একটা স্পিডবোট ভাড়া করে ওপারে। সময়ের প্রায় ১ঘন্টা আগেই জায়গামত পৌঁছুলাম।

ওখানে অবশ্য চমৎকার নাস্তা করিয়েছিল। আসার সময়ে, একটু অপেক্ষা করিয়ে ওনাদের চমৎকার বোটে আমাদের এপারে পার করে দিয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার আরিফ ভাইয়ের গাড়িটা ব্যবহার হয়েছিল সেদিন। বহুদিন পর পদ্মা সেতুর কাজ কাছাকাছি থেকে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পেলাম। এসব নিয়েই এই ভ্লগ।


রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

বালি ভ্রমণ - ০১

মানুষজনের বালি ভ্রমণের পোস্ট আর ভিডিও ব্লগ (ভ্লগ) দেখে দেখে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল বটে - তবে সেটা কোনদিন বাস্তব হবে ভাবিনি। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ না করলে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি ব্যহত হবে ভেবে আমার গিন্নি সেখানে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলো। যথারীতি আমি কিস্যূ বলিনা -- কারণ ওসব ঝামেলায় কে যায়। কাজেই সব দৌড়াদৌড়ি করে প্লেনের টিকিট কাটা, হোটেল বুকিং দেয়া -- ইত্যাদি উনি করে ফেললেন। অন অ্যারাইভাল ভিসার ব্যাপারটা খুবই সুবিধাজনক। আর পুরা ভ্রমণের স্পন্সরও গিন্নি -- কাজেই আমিতো মহা ফূর্তিতে অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করলাম। ঈদের (ইদের) ছুটির সাথে বলে এটাতেও তেমন ঝামেলা হল না।

কাজেই ঈদের আগের দিন রাতে (টেকনিক্যালি ঈদের দিন) আমরাও রওয়ানা দিলাম। ফেসবুকে ছবিটবি পোস্ট দিয়েছি এর আগে। রওয়ানা দেয়ার আগেই কুয়ালালামপুরের এয়ারপোর্টে আট ঘন্টার ট্রানজিট কাটানোর প্লান করলাম। ওখানকার এয়ারপোর্টের ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানলাম, সেখানে কী কী দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট আছে। কাজেই ঐ এয়ারপোর্টে নেমে সকালে একটু বেলা হলেই (পড়ুন দোকান খুলতেই) পছন্দের নির্ধারিত দোকানে খাওয়া দাওয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম।




এয়ারপোর্টের মাঝে একটা চমৎকার বাগানও খুঁজে পেয়েছিলাম।




যা হোক ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে পৌছুলাম সুন্দরভাবেই। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় ল্যান্ড করলাম।

ইমিগ্রেশন:
আমরা জানতাম যে পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকিট আর হোটেল বুকিং স্লিপ দেখালেই অন এরাইভেল ভিসা দেয়। যথারীতি ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। লাইনের মাথায় যখন পৌঁছে গেছি, তখন এক মহিলা পুলিশ এগিয়ে এসে বললো,
- ' হ্যাভ ভিসা? নো ভিসা?'।
আমরা মাথা নাড়লাম। বললাম আমাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা। আমাদের পাসপোর্ট চেয়ে নিয়ে বললো
- 'ফলো মি'।
তারপর ইংরেজিতেই বললো - আরো কেউ আছে নাকি এরকম তাহলে আসো।
কেউই আর নাই। কাজেই আমরা ওনাকে ফলো করতে থাকলাম; সবগুলো বক্স পার হয়ে (ঢাকা এয়ারপোর্টের মতই) আরেক লোকের কাছে পাসপোর্ট দিয়ে বললো
- 'গো উইথ হিম'।
আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে পাশের ঘরের ভেতরে চলে গেল। তখন আশেপাশে তাকিয়ে দেখি পেছনে একটা টেবল ছিল - অন অ্যারাইভাল ভিসা লেখা। সেখানে দুই একজন দাঁড়িয়ে কি জানি লিখছে। ভাবলাম -- ধুর্, লোকজনকে ফলো করে এদিকে আসতে গিয়ে এটাই তো চোখে পড়েনি। এই সময়ে ঐ লোক বের হয়ে এসে বললো
- 'ইয়োর টিকেট প্লিজ'
টিকিটগুলো দিলাম। তারপর বিড়বিড় করে গিন্নিকে বললাম 'এরপর হোটেল বুকিঙের কাগজ নিতে আরেকবার আসবে'। ঠিকই একমিনিট পর লোকটা বের হয়ে আসলো। এসে আমাদের হাতে পাসপোর্ট দিয়ে দিল!! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
- 'এভরিথিং ওকে? ক্যান উই গো'।
লোক হেসে বললো - ইয়েস।

এয়ারপোর্টের বাইরে:
বের হয়ে প্রথম কাজ হলো ট্যাক্সি ঠিক করা। হোটেল থেকে পিক-আপ সার্ভিস বুক দিতে চাইলে ঢাকায় ট্রাভেল এজেন্ট বলেছিলো এতে ৮হাজার টাকা লাগবে, আপনারা বরং এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে নেন। আর বিভিন্ন ব্লগ, ভ্লগ ইত্যাদিতে আরো পরামর্শ শুনে এসেছি। কাজেই বের হয়ে প্রথমে ডলার চেঞ্জ করলাম কিছু। তারপর গিন্নির জন্য পানি কিনলাম - হাফ লিটার মনে হয় প্রায় ৯০ টাকা (বাংলাদেশি টাকায়) দাম নিল!! তারপর মোবাইলের সিম কার্ড কিনতে পাশেই গেলাম। কোন ক্যারিয়ার কিনবো সেটাও আগে স্টাডি করে ঠিক করে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে তারা ৪গিগার প্যাকেজই নাই, আছে সব ১৬ গিগার প্যাকেজ -- দামও একটু বেশি। তাই আর সিম কার্ড নিলাম না -- ভাবলাম রিসর্টে তো ফ্রী ওয়াইফাই পাবই।

এরপর গেলাম ট্যাক্সি ঠিক করতে। এটা এয়ারপোর্ট ভবনেই বের হওয়ার পথের পাশে। আমি জানি, স্ট্যান্ডার্ড ভাড়া হচ্ছে ৩০০ হাজার রুপিয়া - গুগল স্ট্রিট ভিউয়ে সাইনবোর্ডে ভাড়া লেখা দেখেছি, ব্লগ, ওয়েবসাইটেও দেখেছি ঐটাই ভাড়া। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর সেটা বেড়ে যায়। ভাল হয় যদি ঐ এলাকার ট্যাক্সি ঠিক করা যায়। ঐরকম বিশাল ঘাটাঘাটির ধৈর্য্য নাই, তাই যা আছে কপালে মনে করে গিয়েছি। উবুদ জায়গাটা বেশ দুরে। সেই উবুদের সেন্টারের খুব কাছেই আমাদের রিসর্ট - পুজি বাংলো। গুগল ম্যাপ বলেছে - এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র(!) ৩৭ কিমি। ট্যাক্সিওয়ালাদের সংগঠনের কাউন্টার থেকে ট্যাক্সি ঠিক করলাম -- একজনকে ডেকে দিল, সে বললো ৫০০ হাজার রুপিয়া লাগবে (=৩০০০ টাকা)। আমি বললাম এ্যতো বেশি? ও বললো, এই রাতে অত দুর থেকে খালি আসতে হবে। তাই রাজি হয়ে গেলাম।

রাস্তা খালিই ছিল  --- খালি ছিল, এই কথাটা অবশ্য বাকী কয়দিন ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতার আলোকে বললাম। তারপরেও পুরা সোয়া এক ঘন্টা লাগলো।

পুজি বাংলো চেক ইন
একটা বারান্দায় টেবিল চেয়ার পাতা অফিস। খুবই ফ্রেন্ডলি স্টাফ। ভেতরটা ফাঁকা - একপাশে ধানক্ষেত। আমাদের রুমটা দোতালায়, সামনে ব্যালকনি। ট্রাভেল এজেন্ট ফোর স্টার বলেছিলো -- তবে ভ্লগে বলেছে এটা এলাকাভেদে কালচার আলাদা।

দারুন রুম। এসিও আছে -- আসার আগে এই বিষয়ে আমাদের কনফিউশন ছিল। স্ট্যান্ডার্ড ওয়াশরুম, বাথটাব সহ। অদ্ভুদ পাথুরে বেসিন। ফ্রী ওয়াইফাই আছে। একটা কমন সুইমিং পুলও আছে।

ডে-ওয়ান ডিনার
একটু ফ্রেস হয়েই খাওয়ার খোঁজে বের হলাম। বাইরে গ্রামের মত আলো আঁধারি। জায়গাটা আসলে পাহাড়ি গ্রামই। রাত দশটার পর, তাই দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একটু এগোতেই একটা ২৪ ঘন্টা খোলা কনভেনিয়েন্ট স্টোর চোখে পড়লো। কিন্তু সেখানে গরম পানির ব্যবস্থা চোখে পড়লো না (পরের দিনগুলোতে দেখেছি, আসলে গরম পানির ব্যবস্থা ছিল), তাই আরো এগিয়ে সিটি সেন্টারের দিকে গেলাম -- ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। সেখানেও সব বন্ধ, তবে আরেকটা কনভেনিয়েন্ট শপ পেয়ে সেটাতে গরম পানির মেশিনও দেখলাম।

দ্রুত খাবার দাবার কিনলাম। কাপ নুডুলস কিনলাম। গিন্নি সুন্দর করে সব মশলা দিয়ে টিয়ে কাপ নুডুলস বানালো। আমরা দোকানের বাইরে বাধানো গাছের গ‌োড়ায় বসে সেগুলো খাওয়া শুরু করলাম .... কিন্তু ... কে জনতো, অত যত্ন করে সব পেস্টের মত মসল্লাগুলো সবই চিলি-পেস্ট ছিল। মুখে দিয়েই আমাদের অবস্থা শেষ! সুপ বাদ দিয়ে শুধু নুডুলস তুলে তুলে অতি কষ্টে খেলাম। মুখ হাত সব লাল হয়ে গেল। এর মাঝে দুইবার এক মাতাল এসে কি এক ঠিকানা জিজ্ঞেস করে গেসে -- বেচারা টাল হয়ে নিজের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলো না মনে হয়। কেক, চিপস ইত্যাদি মিলিয়ে খাওয়া খারাপ হয় নাই। খাওয়ার পানিও নিলাম। এখানে দেড় লিটারের দাম ৬৬ টাকা (এয়ারপোর্টে আধা লিটার ৯০ নিয়েছিলো)।

মোবাইলের ছবি আর ভিডিও ক্লিপ:
কন্যার চাপাচাপিতে স্মৃতিগুলো নিয়ে কিছু সিলেক্টেড ছবি আর ভিডিওক্লিপ জোড়াতালি দিয়ে বানাতে শুরু করলাম ভ্লগ - আদৌ সেটা ভ্লগের ক্যাটাগরীতে পরে কিনা কে জানে। এই হল প্রথম তিন পর্ব।
একটু বোরিং বর্ণনা আছে - কারণ আমার আম্মাজান এসব পছন্দ করেন বলে আমার ধারণা। প্রথম তিন রাত ছিলাম উবুদ নামক জায়গায়:


পর্ব-২। কুতা এলাকায় থাকা শুরু। এখানকার থাকার জায়গার আশেপাশে ঘুরাঘুরি ---


পর্ব-৩। ৬ নং দিন - বালির দক্ষিণ দিকের অংশটুকু ভ্রমণ করেছি সেদিন।

শেষাংশের ভিডিওগুলো এখনও জোড়াতালি দিয়ে ভ্লগ তৈরী হয়নি। ভাল লাগলে ওটাও পোস্ট করবো।