মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

কম্পিউটার গেম: সিমসিটির লিনাক্স ভার্সান

অত্যন্ত প্রিয় একটা গেম ছিল SimCity। লিনাক্সে একটা আছে নাম LinCity। বছর দেড়েক আগে আমার বাসার সেলেরন ডেস্কটপ/হার্ডিতে খেলেছিলাম। তখন তেমন একটা ভালো লাগেনি ... কারণ কিছুদুর পর আর ডেভেলপমেন্টের রাস্তা খুঁজে পেতাম না ... সেতু বানানো যেতো না .. ইত্যাদি (মূল সিমসিটি খেললে এটা একটু পানসে লাগবেই)।

আজ এই পোস্ট দেখে ভাবলাম সিমসিটির বিকল্প কিছু নাই নাকি ... .... তারপর লিনসিটির পেইজে গিয়ে দেখি নতুন ভার্সানটার স্ক্রিনশট। এটাতো জোস্ মনে হচ্ছে .. ... কিন্তু ডাউনলোড করে খেলার সময় কি আদৌ পাবো   :-(  

এই গেমটা সাইনাপ্টিক থেকেই ইনস্টল করা যায়। :)
উইন্ডোজের জন্যও ডাউনলোড করা যায়।



এছাড়া সিমসিটির কোডকে মূল কোম্পানি OLPC (ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড) প্রোজেক্টের জন্য ওপেনসোর্স করে দিয়েছিলো। নতুন এই ওপেনসোর্স গেমটার নাম হলো মাইক্রোপলিস। এটা খুব তাড়াতাড়িই জোস্ হয়ে উঠবে মনে হচ্ছে ... ... খেলতে মন চায় কিন্তু সময় পাই না  :-(  :-(
ডাউনলোড পেজ

সিমসিটি ৩০০০ আনলিমিটেড ভার্সানটা লিনাক্সের জন্যও ছেড়েছে বলে দেখলাম ওদের ওয়েবপেজে। ৫০ ডলারের মত দাম পড়বে। এইটা চাইলেও কি দেশ থেকে কেনার কোনো উপায় আছে?





(আমাদের প্রযুক্তি ফোরামে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০০৯

হলিউড ব্লকবাস্টার সিনেমা তৈরীতে লিনাক্স ব্যবহৃত হয়!

এটা একটা অনুবাদ। মূল রচনা এখানে: http://news.softpedia.com/news/Hollywoo … 5571.shtml

হলিউডের Disney/Pixar, DreamWorks Animation, Sony, ILM এবং অন্য সিনেমা তৈরীকারক স্টুডিও তাদের সিনেমা তৈরীর জন্য লিনাক্স ব্যবহার করছে।  বেশিরভাগ লোকই এই কথাটা না জানলেও বাস্তবে যেই ব্লকবাস্টার ছবিগুলো হলে চলছে সেগুলো সবই লিনাক্স ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে। হলিউডে উইন্ডোজ বা ম্যাকিনটোশের মত অন্য অপারেটিং সিস্টেমের বদলে লিনাক্স ব্যবহৃত হওয়ার কারণটা খুব সাধারণ: এটা ভালতর, দ্রুতগতির এবং সস্তা।

হলিউডে লিনাক্সকেই আধুনিকতম সিস্টেম ধরা হয়, এবং সোনি, ডিজনি/পিক্সারের মত বড় বাজেটের সিনেমা তৈরীকারক স্টুডিওগুলোর ৯৫%এর ডেস্কটপ এবং সার্ভারে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং এনিমেশন তৈরীর জন্য লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। হ্যাঁ .. হ্যাঁ .. আমি জানি যে আপনাদের অনেকেই বলে উঠবেন - "এটা সত্য নয়", "এটা ঠিক হতে পারে না" কিংবা, "আমি শুনেছিলাম যে ওরা ম্যাক ও.এস. এক্স ব্যবহার করে"; কিন্তু আসলে আমার কথাই সত্য এবং আপনি যেসব CGI-ব্লকবাস্টার সিনেমা দেখেন লিনাক্স দিয়েই ওগুলোর রেন্ডারিং করা হয়, কারণ এটা অন্য অপারেটিং সিস্টেমর চেয়ে তাড়াতাড়ি হয়। (CGI = Computer-Generated Imagery)

উদাহরণ হিসেবে Scooby Doo সিনেমার কথা বলা যায়; এটা Rhythm and Hues স্টুডিওতে তৈরী হয়েছে এবং পুরা সিনেমাটা রেন্ডার এবং উন্নত করা হয়েছে একটা বিশেষ কাস্টম-মেড সফটওয়্যার দ্বারা যা লিনাক্স সিস্টেমে চলে। এছাড়া The Matrix, Titanic, Gladiator, Superman Returns, What Dreams May Come, Cats and Dogs, Shrek, The Perfect Storm, Prince of Egypt, The Road to El Dorado, Antz, Chicken Run, Deep Blue Sea, Star Trek: Insurrection, Fantasia 2000, Men in Black, Hollow Man এবং আরো আরো অনেক সিনেমা লিনাক্স সফটওয়্যার (যেমন: RAYZ, Maya or Shake) ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে। আবার ভেবে বসবেন না যে, এই সিনেমাগুলো তৈরীতে ব্যবহৃত সবগুলো সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া গেছে; বরং সবগুলোর দামই ৮০০০ - ১৫০০০ ডলার বা এর চেয়ে বেশি; হলিউডে এটা ব্যাপার না।

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে খুবই জনপ্রিয় Shrek যেটা DreamWorks Studios-এ তৈরী হয়েছে; এটা রেন্ডার করতে ১০০০+ প্রসেসর, ৮০% লিনাক্স ও ২০% IRIX ব্যবহৃত হয়েছে। DreamWorks যেই যেই রেন্ডার টাওয়ার তৈরী করেছিলো তাতে ডুয়াল ১গিগাহার্জ পি৩ ২গিগা ড়্যাম যা বসানো হয়েছিলো একটা 1RU প্যাকেজে ৪১ ইউনিট উচ্চতায়, যা ৪০-৫০ ফুট লম্বা ডেটাসেন্টার ড়্যাক লাগে এমন কম্পিউটারের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন। DreamWorks তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব তৈরী সফটওয়্যার যেমন ব্যবহার করেছে, তেমনি বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত সফটওয়্যারও ব্যবহার করেছে। তাদের নিজস্ব তৈরী সফটওয়্যারগুলো SGI IRIX অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরী; আর এটা থেকে তৈরী অ্যাপ্লিকেশনগুলোর উইন্ডোজ বা ম্যাকের চেয়ে লিনাক্সের সাথে সাদৃশ্য বেশি।
http://news.softpedia.com/images/news2/Hollywood-Loves-Linux-3.png
উপরের ছবিতে DreamWorks স্টুডিওর লিনাক্স রেন্ডার টাওয়ার দেখা যাচ্ছে।

সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

হীনমন্যতার জুজুবুড়ি

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচ চলছে। মাত্র দুই/তিনদিন আগে একজন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বললেন যে বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট না খেলাই ভালো। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে দারুন লড়ছে ... বলা যায় না হয়তো হার এড়াতে লড়তে হবে অস্ট্রেলিয়াকেই ...। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড হল ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রফেশনাল এবং হারামি দল, সাথে সাউথ আফ্রিকাকেও যোগ করা যায়। কোনো দেশ ওদের সাথে খেলতে যাওয়ার আগেই মিডিয়াতে বিভিন্ন অকথা, কুকথা বলে আলোড়ন তোলা হয় ... অমুক প্লেয়ারকে ঠেকানোর কৌশল আবিষ্কার করেছি, ওরা তো খেলাই পারেনা ইত্যাদি। এছাড়া বোলিং এ্যাকশন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠতি ভালো বোলারদেরকে হেনস্থা করতে এদের জুড়ি মেলা ভার ... ...।

ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে নোংরা কথা বলা কিন্তু প্রফেশনালিজম। স্লেজিং-ও এরকম একটা টেকনিক। ওগুলো বলে তাদের নিজেদের সরাসরি কোনো লাভ না হলেও প্রতিপক্ষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ওদের উদ্দেশ্য থাকে প্রতিপক্ষের মনে একটা খুঁতখুঁত বা সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়ে মানসিকভাবে একটু দূর্বল করে দেয়া যেন খেলার সময় ওরা ওদের স্বাভাবিক নৈপূন্য দেখাতে না পারে। এই ধরণের মনের খেলা মোকাবেলা করার জন্য আবার প্রতি দলেই সাইকোথেরাপিস্ট রাখা হয়।

সোজা সাপ্টা কথায়, কাউকে কাবু করতে চাইলে সেটা মনকে কাবু করা দিয়ে শুরু করতে হয়। খেয়াল করে দেখুন: ধার্মীক লোকজনের সামনে আমরা মাথা নিচু করে কথা বলি, দ্বীনের দাওয়াত দিতে আসলে অনিচ্ছা থাকলেও তাদের মুখের উপর না বলতে পারি না ... মাথা নিচু করে পালানোর চেষ্টায় থাকি। কারণ ছোটবেলা থেকেই কৌশলে মনে মধ্যে গেঁথে দেয়া হয়েছে যে ধর্মের রীতিনীতিগুলো পালন করা ভালো, না করা খারাপ/পাপ ... কাজেই পাপবোধটা মনকে হীনমন্য করে তোলে। আর এই হীনমন্যতার সুযোগ নিয়ে কত অযোগ্য বদমাইশ লোক আমাদের উপর কর্তৃত্ব করে বা করার চেষ্টায় রত থাকে।

এই ব্যাপারটা শোষক শ্রেণীর লোকজন সবচেয়ে ভালো বুঝে এবং নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তাই শোষিতদেরকে ভালো শিক্ষা/সংস্কৃতি চর্চা থেকে বিরত রাখতে তাদের চেষ্টার ত্রুটি হয় না ... কারণ শিক্ষা আর সংস্কৃতির চর্চা মানুষের মনকে উৎফুল্ল করে, তাদেরকে একতাবদ্ধ করে, তাঁদের নিজেদের সম্পর্কে গর্ব করতে শেখায়। মানসিকভাবে উঁচু থাকলে তাঁর উপরে সহজে অন্যায় চাপিয়ে দেয়া যায় না, শোষন করা কষ্টকর হয়ে যায়। এজন্যই দেখা যায় সৎ অফিসার চোখ না নামিয়ে উঁচুপদের ঘুষখোর অফিসারের সাথে কথা বলতে পারেন, আর উপরের লেভেলে থাকা অসৎ বা হীনমন্যতায় ভোগা লোকটি সেটার মুখোমুখি হতে পারে না বলে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়ার চেষ্টায় রত থাকে। আবার আগের সময়ে দেখা যেত, শোষক জমিদার প্রজাদের লেখাপড়া শেখার সুযোগ তৈরী করতে বড়ই অনাগ্রহী, বরং তাঁদেরকে অশিক্ষিত এবং আত্মমর্যাদাহীন করতে খুবই আগ্রহী। কোনো সৎ লোককে কাবু করতে চাইলে তাঁর উপর বিভিন্ন রকম অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে তাকে হীনমন্যতায় ফেলার চেষ্টা করা হয়। একজনকে কাবু করার মত কোনো কিছু না পেলে তাঁর আশেপাশের আপনজনকে অপমান করার চেষ্টায় থাকে .... তোর ভাই তো আলকাতরার মত কালো, তোর অমুক তো আগে ডাকাত ছিলো ... ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে হীনমন্যতা ঢুকানোর প্রানান্ত চেষ্টা চলতে থাকে। আবার এ-ও দেখা যায় অভাব অনটনের অমানুষিক কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করলেও অপমান সহ্য করতে না পেরে অনেকে জীবন বিসর্জন দেয়।

হীনমন্য লোকগুলো শুভ্র সত্যবাহীদের সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারে না, তাই পেছন থেকে কামড়ানোর জন্য কুটচাল চালতে থাকে। একই গোত্রের হীনমন্য আরো কাউকে পেলে আঁকড়ে ধরে দলে ভারী হওয়ার চেষ্টায় থাকে; নিজেরা নিজেদেরকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে ... ঠিক যেন অন্ধকারে ভয় পেলে যেমন আমরা ভয় তাড়ানোর জন্য অদরকারী কথাবার্তাও খুব জোরে জোরে বলি; অথবা, নার্ভাস হলে অতিরিক্ত হাসি বা ফুর্তি দেখানোর চেষ্টা করি; কিংবা, কাকের মত খড়ের গাঁদায় মাথা ঢুকিয়ে ভাবি আমাকে কেউ দেখছে না ... ... ... কিন্তু ভয়ের জড়তা কি আর কাটে!

কাজেই হীনমন্যতার ব্যাপারটি মোটেও অগ্রাহ্য করার নয়। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় কারণ এটা মানুষকে ভীষনভাবে আক্রান্ত করে - তাই যেন কোনোভাবেই নিজের অজান্তে হীনমন্যতায় ভুগতে হয় এমন পরিস্থিতির শিকার না হই সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ের কারণে মনের গভীরে এই ক্ষতিকর হীনমন্যতা জটা পাকিয়ে আছে। চেষ্টা করি সেগুলোকে মূলসহ উপড়ে ফেলে সামনের দিকে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে। এইরকম একটা সুযোগ পেয়েছি ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের কল্যানে; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে মনের গভীরে একটা গ্লানি ও হীনমন্যতা কাজ করতো ... এইটা থেকে বের হওয়ার উপায় পাওয়া মাত্র তাই লুফে নেই ... হাসি মুখে সংশ্লিষ্ট কিছু অসুবিধা মেনে নিয়েও।

চমৎকার বিকল্প থাকা সত্বেও আমরা কি জেনেশুনে পাইরেসী করেই যাবো (এবং মাথা নিচু করে চলবো) নাকি মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করবো - এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা নিজেকেই নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০০৯

ফ্রী ক্যাড প্রোগ্রাম

কম্পিউটার ব্যবহার করছেন কিন্তু অটোক্যাডের নাম শোনেননি এমন পাঠক হয়তো পাওয়া যাবে না। অটোডেস্ক কোম্পানির এই সফটওয়্যারটি পুরকৌশলে ক্যাড (কম্পিউটার এইডেড ড্রইং) কাজের জন্য অলিখিত স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন কাজে অটোক্যাড প্রোগ্রামটি এদেশেও বহুল ব্যবহৃত হয়; এমনকি কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমেও এই সফটওয়্যার ব্যবহারের কোর্স আছে (অনেক আগে একবার সেই কোর্স পড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম!)।
অটোক্যাড শেখার জন্য বাজারে দারুন সব বই পাওয়া যায়। তবে প্রাথমিক কাজগুলো শিখে ফেললে ঐ মোটা বইগুলোর বদলে পকেট রেফারেন্স হ্যান্ডবুক বেশি কাজে লাগে। দেশে অটোডেস্ক সার্টিফায়েড ট্রেনিং সেন্টারগুলোও দারুন ব্যাবসা করছে। আমি অবশ্য সেই বই পড়ে এটা ব্যবহার করা শিখেছিলাম। তবে সত্যিকারের কাজ তেমন না থাকাতে উৎসাহটা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আমি মূলতঃ পুরকৌশলী (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার), তাই প্র্যাকটিসের জন্য যে বাসাগুলোতে থাকতাম সেগুলোর ক্যাড ড্রইং করে ফেলতাম। এছাড়া অবশ্য খুব ক্ষুদ্র পরিসরে দুই/তিনটা কাজ করেছিলাম।
সেই সময়ে বাসা বাড়ির ড্রইং করার জন্য আরো কিছু ক্যাড সফটওয়্যার ঢাকাতে পাওয়া যেত। এমন একটার নাম থ্রিডি হোম আর্কিটেক্ট। এটা খুব সহজ এবং মজার হলেও অটোক্যাডের মত স্বাধীনতা থাকতো না। তবে সুবিধা হল বিভিন্ন ক্যাড প্রোগ্রামগুলোকে একটা সাধারণ ফরম্যাটে সংরক্ষণ করে ফাইল আদান প্রদান করা যায়। তাই ঐটা দিয়ে দ্রুত একটা ড্রইং এর কাঠামো দাঁড় করিয়ে পরবর্তীতে অটোক্যাড দিয়ে সেটাকে মানুষ করা যেতে পারে।
কিন্তু পাইরেসি থেকে দুরে থাকার লক্ষ্যে বেশ কয়েকবছর যাবত আমি মোটেও অটোক্যাড ব্যবহার করিনা। বরং ঠিক অটোক্যাডের মত কিছু ফ্রীওয়্যার ব্যবহার করি। এই লেখায় আপনাদেরকে সেই ক্যাড সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে যৎসামান্য জানি তা বলার চেষ্টা করবো।

যখন ল্যাপটপে উইন্ডোজ ব্যবহার করতাম তখন ক্যাডের জন্য ব্যবহার করতাম progeCAD নামে একটা প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামটির নিজস্ব ইন্টারফেস ছাড়াও হুবহু অটোক্যাড ইন্টারফেস আছে যেটা ইনস্টলের সময়ই নির্ধারণ করে দেয়া যায়; এমনকি অটোক্যাডের সমস্ত কমান্ডও এখানে হুবহু একই কাজ করে। ProgeCAD-এর এই ফ্রীওয়্যারটির ক্ষমতা সীমিত -- যা 2D টু-ডাইমেনশনাল ড্রাইং পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। 3D, অ্যানিমেশন, রেন্ডারিং এটা দিয়ে করা যায় না .... বিদেশে উচ্চতর লেখাপড়া করার সময় আমার টুকটাক ড্রাইং-এর জন্য এটাই যথেষ্ট ভালো সাপোর্ট দিয়েছিল। কিছুদিন আগেই এটার নতুন ভার্সান বাজারে ছাড়লো। যথারীতি 2D ক্ষমতার ফ্রী ভার্সানটিও আছে। উচ্চতর কাজের জন্য এটার প্রোফেশনাল ভার্সানগুলো যথেষ্ট দাম দিয়েই কিনতে হবে, তবে সেগুলো অটোক্যাডের চেয়ে সস্তা। এটার কোনো লিনাক্স ভার্সান নাই, তাই লিনাক্সে এটা ব্যবহার করি না। এই সফটওয়্যার দিয়ে আঁকা আমার একটা ড্রইং-এর নমুনা দেখেন; লেখাগুলো পরবর্তীতে ডকুমেন্টে পেস্ট করার পর ওপেন অফিস থেকে করা হয়েছে।

এই মাত্র দুবছর আগেও লিনাক্সে (উবুন্টুতে) ক্যাডের জন্য ভালো কিছু ছিল না। তাই ইউজার ফোরামগুলোতে এই নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হত, এমনকি ওয়াইন নামক সফটওয়্যার দিয়ে অটোক্যাড চালানোর জন্যও সাহায্য চেয়ে পোস্ট থাকতো। তখন বেশ কিছু ক্যাড সফটওয়্যারের নাম জানতে পারি। ব্রিক্সক্যাড নামক একটা সফটওয়্যারের স্ক্রীনশট দেখে বেশ পছন্দ হয়েছিল। এটার উইন্ডোজ এবং লিনাক্স ভার্সান ছিল, কিন্তু কোনটাই ফ্রী ছিল না; তাই শুধু ক্রীনশট দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো। এছাড়া আরো ডজনখানেক ক্যাড সফটওয়্যারের মধ্যে স্যাগক্যাড(SagCAD) এবং কিউক্যাডকে (QCAD) একটু জাতের মনে হয়েছিলো। স্যাগ ক্যাড দিয়ে কিছু আঁকা গেলেও কিউ ক্যাডের কিছুই বুঝতে পারি নাই সেই সময়ে।
কিন্তু দিন বদলেছে; উবুন্টু ৮.০৪ বা ৮.১০ থেকে QCAD প্রোগ্রামটা দিয়ে কাজ করার পদ্ধতি জেনে গেলাম (অথবা প্রোগ্রামটা উন্নত হওয়াতে সেটা করতে পারলাম)। এখন অনায়েসে অতি সহজে এটা দিয়ে প্রয়োজনীয় আঁকাআঁকির কাজ করছি। রিবনসফট কোম্পানির এই সফটওয়্যারটির লিনাক্স ভার্সান ফ্রী, উইন্ডোজেও কমিউনিটি ডেভেলপড একটা ওপেনসোর্স এবং ফ্রী ভার্সান আছে বলে ওদের ওয়েবসাইটে দেখলাম। উবুন্টু লিনাক্স থেকে এটা দিয়ে খুব তাড়াহুড়া করে আঁকা একটি নমুনা দেখুন।


এইটা এবং আরো কিছু ছবিসহ একটা পোস্ট এর আগে সচলায়তনে করতে গিয়ে কোনো কারণে হচ্ছিলোনা। প্রসববেদনা সইতে না পেরে তাই সেই পোস্টটাকে বিজ্ঞানী.কম-এ ছেড়ে দিয়েছি। ইচ্ছা করলে সেখান থেকে একটু ঘুরে আসতে পারেন। লিংক: ইটভাটার বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে
==============

পুরকৌশলে ব্যবহৃত কয়েকটি ক্যাড সফটওয়্যারের ওয়েবপেজের লিংক এবং দামের তালিকা:
অটোক্যাড - ৪৯৯৫ ডলার, রিসেলারদের কাছ থেকে কমেও (৮৫০ ডলার)পাওয়া যায়
প্রোজক্যাড (ডাউনলোড ফ্রী ভার্সান) প্রফেশনাল ৪০০ ডলার থেকে

ব্রিক্সক্যাড - ৩৮০ ডলার থেকে দাম শুরু
ZWCAD - ৪৯৫ ডলার; ১ মাসের ট্রায়াল ডাউনলোড; ফ্রী ডাউনলোড!
কিউক্যাড - লিনাক্সে ফ্রী, উইন্ডোজে ৩৭.৫ ডলার থেকে

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

নেশা জাগানিয়া সাইট: ধাঁধাঁরু

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

এক পেগ টানলেই কারো টাল অবস্থা ... আর ৫ বোতলের পরও কেউ কেউ টনটনা থাকে। আমার এক কলিগতো বাসে করে ঢাকা আসার সময় সিগারেট না খাওয়ার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সিগারেট খাওয়াতে গন্ধে টাল হয়ে সেই লোকের পাশে গিয়ে ওয়াক্ করে দিয়ে এসেছিলো। তবে, তরল বা বায়বীয় যাই হউক, যে যাই বলুক, নেশা জিনিষটা খারাপ বলেই মনে করি।

ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে নেই আরেকটু। আমি নাকি মিচকা শয়তান ... ... হাইস্কুলে পড়ার সময় আমার কাছে সেবা প্রকাশনীর কিশোর ক্লাসিক সিরিজের বেশ ভাল একটা বইয়ের সংগ্রহ ছিল। কিন্তু ঐ বইগুলো আমি কাউকে দেখাতাম না। শুধুমাত্র পরীক্ষার আগে ওগুলো বাসার ডিসপ্লেতে রাখতাম। কোনো বন্ধুবান্ধব চাইলে উদার হাতে ধার দিতাম ... ওরা সময় নষ্ট করুক, আমি পরীক্ষার পড়া করি। যেই সাইটের কথা বলতে এই ব্লগ, নিশ্চিত ভাবেই সেটা আমার ভালই ক্ষতি করছে ... নেশা জাগিয়েছে, কাজ কাম মাথায় তুলে ফেলেছে। তবে আমিও লেজকাটা শেয়াল ... আমার লেজ কেটেছে তো কী হয়েছে ... অন্যদের লেজও কাটা পড়তে হবে .... মু হা হা হা ... আর সেজন্যই সকলের নজরে আনার জন্য রিভিউ লিখবো ঠিক করলাম। এই খবর পাইলে নিশ্চিত ভাবেই অনেকের ক্ষতি করবে, বিশেষ করে জ্বীনের বাদশা ভাইয়ের ক্ষতি করবে (আমাকে ওনার ক্ষমা না করে উপায় নাই ... কারণ ওনার হাতের নাগালের বাইরে আছি দেঁতো হাসি )। আর আমার সফল হওয়ার সম্ভাবনা ভালই ... ... কারণ নেশা জাগানিয়া হলেও ঐ সাইটটা অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য নিষিদ্ধ টাইপের নয়।

জ্বীনের বাদশা ভাইয়ের প্রসঙ্গটা কেন আসলো সেটা বলি .... .... উনার গেসবল সিরিজটা আমার খুব প্রিয় ছিল। ওখানে মজার মজার সব ধাঁধাঁ টাইপের বিষয় থাকতো। তবে সাধারণ ফোরাম/ব্লগের এইরকম ধাঁধাঁগুলোর সমস্যা হল ... একজন আগে উত্তর দিয়ে ফেললে পরের পাঠকদের মজাটা নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা দুর করা হয়েছে ধাঁধাঁরু সাইটে: এখানে উত্তর লেখার আর মন্তব্য করার জন্য দুইটা আলাদা প্যানেল আছে (লগ-ইন আবশ্যক)। মন্তব্যগুলো সাধারণ ব্লগ সাইটের মন্তব্যের মত যে কেহই দেখতে পারে, কিন্তু অন্যের উত্তর পারে না। কোন ধাঁধাঁর একবার মাত্র উত্তর দেয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। উত্তর দেয়ার পরই (ভুল হোক/শুদ্ধ হোক)................ খুল্ যা সিমসিম .. অর্থাৎ ধাঁধাঁ প্রদায়কের দেয়া সঠিক উত্তর দেখতে পারবেন, অন্যরা কে কী উত্তর দিয়েছে দেখতে পারবেন; এই সংক্রান্ত আলোচনা দেখতে/করতে পারবেন। কারো উত্তর পছন্দ না হলে, অথবা অন্য কোনো কারণে ধাঁধাঁ অপছন্দ হলে অভিযোগ করার জন্যও একটা লিংক আছে। তবে সাধু সাবধান! .... মন্তব্য প্যানেলে উত্তর সংক্রান্ত কোনো কথাবার্তা/হিন্ট লিখলেই খবর আছে ... ... পেনাল্টি .... মডুরা এসেই ঘ্যাচাং করে আপনার ১০ পয়েন্ট কেটে দেবে।

পয়েন্টের কথা যখন আসলোই তখন একটু ঝেড়ে কাশি ... ... এখানে ধাঁধাঁর জন্য পয়েন্টের সিস্টেম আছে ... যেটা বিষয়টাকে করে তুলেছে আরও মজার (এবং মারামারির)। প্রতিটা ধাঁধাঁর উত্তর দিলেই ২ পয়েন্ট যোগ হবে। তারপর সেটা যদি ঠিক হয় তবে আরো ৩ পয়েন্ট, আর ভুল হলে -১ পয়েন্ট (প্রশ্নকর্তা যাচাই করার পর)। অর্থাৎ সঠিক উত্তর দিলে মোট ৫ পয়েন্ট আর ভুল উত্তর দিলে ১ পয়েন্ট। আর, বাকি রইল, ধাঁধাঁ প্রদায়ক ... ... প্রতিটি ধাঁধাঁর জন্য প্রদায়ক পাবে মোট ৩ পয়েন্ট (মনে হয় শুদ্ধ আর ভুল উত্তরের পয়েন্টের অ্যাভারেজ করা হয়েছে), কারণ এই বেচারা(!) তো আর এটার উত্তর দিয়ে পয়েন্ট নিতে পারবে না।

ধাঁধাঁগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রাখা হয়েছে (ট্যাগিং)। সবচেয়ে ভেজাইল্যা হল ... মজারু বিভাগটা। - কেমন ভেজাইল্যা? এটা জানতে হলে ঐখানে দুই একবার ধরা খাইতে হবে! গাণিতিক বিভাগে বিভিন্ন রকম আঁতেল মার্কা হিসাব কিতাবের ধাঁধাঁ থাকে। কুহক বিভাগে রহস্য টাইপের বা লজিকাল টাইপের ধাঁধাঁ থাকে। এছাড়াও যেই বিভাগগুলো আছে তা হল: শব্দ, ছবি, কুইজ, কোডিং, বিজ্ঞান।

এখানে নিবন্ধন করার সময় ইংরেজিতে নাম দিতে হয়। লগ-ইন করার সময়ও তাই। তবে ডিসপ্লে নামটা পরবর্তীতে নিজের পৃষ্ঠা থেকে বাংলায় করে নিতে পারবেন (উদাহরণ: আমার পৃষ্ঠা)। গুগল মামার রাজত্বে বাংলায় ধাঁধাঁর এই সাইটটা বানিয়েছেন আমার প্রিয় ভিলেন নাসিমুল হক ভাই ... বাংলা ফোরামগুলোতে উনি স্বপ্নচারী নামে লিখে থাকেন। সাইটটি এখনও বেটা পর্যায়ে রয়েছে ... আপনারা পরামর্শ দিয়ে এটাকে বেটা থেকে পিতাতে(!) উন্নয়নে সাহায্য করতে পারেন।

আইচ্ছা ... আর বেশি প্যাচালের কাম নাই। আরো বেশ কিছু বিষয় আছে (টুইটার/RSS ইত্যাদি) .... জানতে চাইলে নিজেরা গিয়েই দেখেন। লিংক: http://dhadharu.appspot.com/quiz/ .... অবশ্য এইখানে গিয়ে একটু বেদিশা (বিদিশা নহে!) লাগতে পারে। তাই একটু নিচে ডানদিকের সাম্প্রতিক লিংকটা ক্লিক করেন। কিংবা আমার দেয়া একটা সহজ (মজারু কিন্তু!) ধাঁধাঁ দিয়ে শুরু করতে পারেন (লিংক)।

  1. এছাড়া সাইটের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ ভালোচনা।
  2. অফিসিয়াল সাইট পরিচিতি

চিপা দিয়ে আরেকটা কথা বলে রাখি:
সাম্প্রতিক লিংকে গিয়ে দেখবেন বামদিকে প্যানেলে সাধারণ ক্যাটাগরি ছাড়াও আরও কয়েক উপায়ে সাজিয়ে ধাঁধাঁ দেখা যায় (ধাঁধাঁ সাজানোর ক্রম)। ঐখানে "সঠিক উত্তর" অপশনটা নিলে সবচেয়ে বেশি সঠিক উত্তর দেয়া ধাঁধাঁগুলো আগে দেখাবে .... এইগুলা মনে হয় একটু সহজ। কাজেই আপনারও সফলভাবে পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

এত খারাপ খারাপ কথা লিখলাম ... সম্ভাব্য উপকারের কথাও লেখা দরকার ... নাইলে কেউ আবার মাইন্ড খাইতে পারে ... উপকারসমূহ:

  1. সময়ের বারোটা বাজবে .... যাদের সময় পার হইতে চাচ্ছে না ... বিশেষত রোজা রমজানের দিনে ... কোনদিক দিয়ে সময় যাবে টেরও পাবেন না।
  2. ভবিষ্যতে(!) GRE টাইপের পরীক্ষায় লজিক্যাল বিভাগে ভালো করার সম্ভাবনা হয়তো বেড়ে যাবে।

সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০০৯

অনলাইন ব্লাড ব্যাংক

রক্ত চাই? রক্ত?
শিরোনাম দেখে ঘাবড়াবেন না। কোনো মারামারি কাটাকাটি, এক লাশের বদলে দশ লাশ মার্কা ব্যাপার নাই এতে; নিতান্তই নিরাপরাধ এবং উপকারী বিষয়ে পোস্ট এটি।

সচলায়তনে ইতিমধ্যেই জরুরী রক্তের সন্ধান করার জন্য সচল ব্লাড ব্যাংক (রক্তদাতার তালিকা) করা হয়েছে। এই সুত্রে গত ৪ মাসে দুইবার রক্ত দিয়ে সেবা করার সুযোগও হয়েছে। অনলাইনে সহজে রক্তদাতা সন্ধান করার এই প্রয়াসটাকেই আরো একটু পরিপূর্ণতা দেয়ার জন্য নতুন একটা ওয়েবসাইট তৈরী করেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.টি. অফিসের রায়হান (মূলত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলেও আমাদের এলামনাই ছাত্রটি এখানকার ইনফরমেশন সিস্টেমের ডিজাইনার এবং ডেটাবেস ম্যানেজার)।

মূলত: অনিয়মিত রক্তদাতাদেরকে সামাজিক নেটওয়র্কিং এর মাধ্যেমে পরষ্পরের কাছাকাছি রাখার জন্য প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৪ বছর আগে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের প্রয়োজনে এই সাইটটার মূল কাজগুলো পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তারপরে সহপাঠীদের উৎসাহে আরো সংগঠিত হয়ে আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও এর কর্মপরিধি বাড়াতে থাকে। এই ওয়েবসাইটে জরুরী কিছু সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে এবং আরও সুবিধার জন্য ফীডব্যাক ফর্মে পরামর্শ /মন্তব্য দেয়া যাবে।

বৈশিষ্ট সমূহ:
১. ঠিকানা: http://beta.i-blood.com তবে কিছুদিনের মধ্যেই বেটা থেকে আব্বাজান .. অর্থাৎ মূল সাইটে নেয়া হবে।

২. সাইটের নীড়পাতাতেই বিভিন্ন গ্রুপের কতজন রক্তদাতা আছে সেটা দেখা যায়। সেখানে ক্লিক করলে সেই গ্রুপের রক্তদাতাদের তালিকা দেখাবে।

৩. এলাকাভিত্তিক তালিকাও এক ক্লিকে দেখা যাবে। এলাকাগুলো ট্যাগ হিসেবে আছে, কাজেই নতুন এলাকার রক্তদাতা পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে সহজেই নিজের এলাকা তালিকাভুক্ত করতে পারেন।

৪. খোঁজার/সার্চ অপশনে রক্তের গ্রুপ এবং এলাকা দিয়ে দ্রুত কাঙ্খিত রক্তদাতাকে খুঁজে পেতে পারেন। একাধিক এলাকা কমা দিয়ে লিখে (টাইপ করে) দেয়া যেতে পারে।

৫. এছাড়া সদস্য হিসেবে বা অতিথি হিসেবে রক্তদাতা খোঁজা যায়। অতিথি হলে ফোন নং বা অন্য কিছু তথ্য সদস্যের চাহিদা অনুযায়ী লুকানো থাকে; অনেকটা সচল ব্লাডব্যাংকের রেসট্রিক্ট করা তথ্যের মত। তবে অতিথি হিসেবে ঐ রক্তদাতাকে অনুরোধ পাঠানো যাবে।

৬. একজন লিপিবদ্ধ সদস্য কবে কোথায় রক্ত দিয়েছেন তার তালিকা রাখতে পারেন। শেষ কতদিন আগে রক্ত দিয়েছেন সেটা হিসেব করে দেখানো হয়, ফলে রক্তদাতা রক্ত দেয়ার জন্য উন্মুক্ত কি না সেটাও যাচাই করে নেয়া যাবে।

৭. উদাহরণ হিসেবে আমার প্রোফাইলটা দেখুন নিচের ছবিতে ক্লিক করে।


View Miah M. Hussainuzzaman's donor profile on I-Blood

আপনারাও এখানে যোগ দিতে পারেন এবং নিজের ও প্রিয় মানুষদের প্রয়োজনে এই সাইটটি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পরামর্শ দিয়ে সাইটটির উন্নয়নে সাহায্য করতে পারেন।

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ১২ জুন, ২০০৯

একটা দাপ্তরিক চিঠি (প্রেমপত্র নয়)

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

বেশ কিছুদিন আগে একটা বিষয় পড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে বিভিন্ন স্তরের পেশাদারগণের সাথে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যম ভিন্ন (…. নিজে ঐ বিষয় পড়ার সময় বই খুলে দেখিনাই … আর পড়াইতে গিয়ে আবিষ্কার!)। সেখানে দেখলাম যে টপ লেভেলের প্রফেশনালগণের জন্য নিউজলেটার টাইপের জিনিষগুলো বেশি কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যম। এটা পড়ে মাথায় পোকাটা নড়েচড়ে বসলো ….. আচ্ছা ... এই কথা, ঠিক আছে প্রয়োগ করে দেখি। আমাদের ভিসি স্যার এবং অন্য বিভাগগুলোর প্রধানকে একটা বিরাট পত্রাঘাত (ইমেইল) করে বসলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে চিঠিটাকে সফল বলতে হচ্ছে …. মূল মেইলটা ইংরেজিতে (গুছিয়ে লিখতে আমার ৬ ঘন্টার মত লেগেছিলো!!), এখানে চিঠিটার অনুবাদ প্রকাশ করলাম – বলা যায় না, কারো কাজে লাগতে পারে; আবার এখানেই ঐ লেভেলের পাঠক থাকলে প্রভাবিত হয়ে যেতে পারে ;) ।
-------

তারিখ: ১০-জানুয়ারী-২০০৯

বিষয়: Some notes on present computing practices in this university

প্রিয় মহোদয়,

আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমার এই পত্রটি পড়ার জন্য সামান্য কিছু সময় প্রার্থনা করছি।

বিবর্ণ অতীত (Gloomy background)

অন্য প্রায় সবগুলি প্রতিষ্ঠানের মত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম এবং শিক্ষাদানের জন্য অবৈধ (pirated) সফটওয়্যার ব্যবহার করে। জরূরী সফটওয়্যারগুলোর অতি উচ্চ মূল্য (উইন্ডোজ = ৫০ ইউ.এস.ডলার/পিসি; এম.এস.অফিস = ২৫০ ইউ.এস.ডি; অটোক্যাড = ৬০০ ইউ.এস.ডি. ইত্যাদি) বিবেচনা করলে, অতি প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং চাহিদা মেটাতে এটাই একমাত্র বাস্তবসম্মত উপায় বলে মনে হয়। এইসকল সফটওয়্যারের স্বত্বাধীকারী প্রতিষ্ঠানগুলি এই মুহুর্তে আমাদের বিরূদ্ধে কোনরকম আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, কিন্তু এরকম অবস্থা চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদেরকে অর্থনৈতীক জরিমানার ঝড়ো হাওয়া এবং দূর্নামের সম্মুখীন হতে পারে।

এখন মনে হচ্ছে যে সফটওয়্যার লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই; অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে হ্রাসকৃত/ভর্তূকী মূল্যে এগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা আছে (কারণঃ নিসন্দেহে আমরা ঐ সফটওয়্যারগুলোর আরো ভবিষ্যত ক্রেতা তৈরী করছি)। কিন্তু গত কয়েকবছরে খুব দ্রুতই অনেক ঘটনা ঘটে গেছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে এখন বিনামূল্যেই এ অবস্থার বিকল্প ব্যবস্থা আছে। প্রায় সবগুলি প্রোপাইটারি সফটওয়্যারেরই একটা বিনামূল্যের বিকল্প (free alternative) আছে। কোনো কোনো লোক ভাবেন যে বিনামূল্যের সফটওয়্যারগুলি মোটেও ব্যবহারযোগ্য নয় এবং খুব কম বৈশিষ্ট্য (feature) সম্পন্ন – কিন্তু বাস্তবতা সম্পুর্ন উল্টা, কিছু ফ্রী-সফটওয়্যারগুলো আমাদের অভ্যস্থ্ সফটওয়্যারগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আমি বিখ্যাত সান মাইক্রোসিস্টেম কর্তৃক তৈরী মাইক্রোসফট অফিসের বিনামূল্যের বিকল্প ওপেনঅফিস.অর্গ ব্যবহার করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যারটিকে আমার বেশি ভালো মনে হয়েছে; যেমন: বিবলিওগ্রাফী বা রেফারেন্স তৈরীর ক্ষেত্রে এবং পি.ডি.এফ. ফাইল বানানোর নিজস্ব ক্ষমতার ক্ষেত্রে। আমি অফিসের সমস্ত কাজেই (মেমো, প্রশ্নপত্র, ক্লাস লেকচার, টেবুলেশন) এই সফটওয়্যারটা ব্যবহার করছি। GIMP হলো আরেকটি দারুন সফটওয়্যার যেটা দিয়ে দামী ফটোশপে করা আমাদের কাজগুলোর সবই করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ দামী ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের বদলে বিনামূল্যের ফায়ারফক্স বা অপেরা ব্যবহার করে অধিকতর গতি এবং নিরাপত্তা পাচ্ছেন। এই তালিকাটা অনেক লম্বা এবং ক্রমবর্ধমান।

এগুলো চালানোর জন্যও আমাদের উইন্ডোজ ব্যবহার করতে হবে, এবং যদি সফটওয়্যার পাইরেসী/চুরি এড়াতে চাই তাহলে প্রতি কম্পিউটারে এজন্য ৫০ ডলার খরচ বাড়বে। অবশ্য ভর্তূকী মূল্য পেলে আরও কমে পেতে পারি। এছাড়া এই অপারেটিং সিস্টেমের ভাইরাস এবং সিকিউরিটি জনিত সমস্যা দুর করার জন্য আমাদের ঝামেলা/খরচ এড়ানোর কোন উপায় নাই।

আছে আশার প্রদীপ (There is hope)

বেশিরভাগ লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো বিনামূল্য পাওয়া যায় এবং এগুলোতে প্রয়োজনীয় সবগুলি সফটওয়্যার অপারিটিং সিস্টমের সাথেই একসাথে দেয়া থাকে। এছাড়া লিনাক্স সিস্টেমগুলির নিরাপত্তা অত্যন্ত উচ্চমানের আর সিস্টেমগুলো খুবই আস্থাজনক/স্টেবল; এগুলোর ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব। গত কয়েকবছর ধরে লিনাক্সের উন্নয়নকারীগণ উইন্ডোজ এক্স.পি/ভিস্তার মত পুরাপুরি গ্রাফিকাল এবং ব্যবহারবান্ধব অপারিটিং সিস্টেম বানাচ্ছেন। কাজেই এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো পাইরেসী জনিত কারণে যে মহাবিপদ ঘটতে পারে তার সবগুলো ক্ষেত্রেই (খরচ, নিরাপত্তা, নির্ভরতা এবং ব্যবহারযোগ্যতা) আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে।

তাছাড়া, লিনাক্সের সমস্ত সফটওয়্যারগুলোই মুক্তসোর্স – এর অর্থ হল, যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি এগুলোর প্রোগ্রামের সোর্সকোডগুলো ডাউনলোড করতে এবং দেখতে পারবেন। প্রোপাইটারী সফটওয়্যারগুলো এই সুবিধা দেয় না ফলে আগ্রহী শিক্ষার্থীগণ এগুলোর কোড দেখে কোনো কিছু শিখতে পারে না।

মজার ব্যাপার হল, আমাদের বেশিরভাগ লোকই না জেনে প্রতিদিন লিনাক্স ব্যবহার করছি। কারণ প্রায় সবগুলো গ্যাজেট যথা: পি.ডি.এ., মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ডিকশনারি ইত্যাদি লিনাক্সে চলে। তাছাড়া, পৃথিবীর বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভার এবং সুপার কম্পিউটার লিনাক্সে বা ইউনিক্সে (লিনাক্সের বাবা) চলে।

ইউরোপ এবং আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ের জন্য লিনাক্স ব্যবহার করে (তথ্যসূত্র: http://www.linux.org/info/linux_govt.html)। ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও লিনাক্স একটি অতি পরিচিত নাম। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লিনাক্স ব্যবহার করে। আর, আমি যতদুর জানি, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও লিনাক্সের পরিবর্তিত হওয়ার পথে আছে।

সমস্যাসমূহ (The obstacles)

ইদানিং তরুণ সম্প্রদায় ধীরে ধীরে লিনাক্সের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠানে এটা চালু করার ক্ষমতা/অধিকার তাঁদের নেই। কম্পিউটার সায়েন্স বা ইলেক্ট্রিকাল/ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের অপেক্ষাকৃত বয়োজেষ্ঠ শিক্ষকগণও লিনাক্সের নিরাপত্তা এবং নির্ভারতা (security and stability) সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। কিন্তু তাঁরা বর্তমানে লিনাক্সের অগ্রগতি সম্পর্কে এবং আধুনিক লিনাক্স ডেস্কটপ সিস্টেমগুলোর ব্যবহার বান্ধবতা সম্পর্কে মোটেও জানেন না। এছাড়া নেটওয়র্ক এডমিনিস্ট্রেটরগণও তাদের সার্ভারে ঐসকল লিনাক্স সিস্টেমের সার্ভার ভার্সান নিয়ে কাজ করেন - তাই তাঁরাও এগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য কতটুকু ব্যবহারবান্ধব তা জানেন না।

কাজেই শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের মনে লিনাক্স সম্পর্কে একটা পুরাতন ধ্যাণ ধারণা রয়ে গেছে (লিনাক্স হলো প্রস্তরযুগের কালো স্ক্রীনে কমান্ড লাইনে কাজ করতে হয় - এমন একটা সিস্টেম)। তাই তাঁরা এটার নিরাপত্তা, নির্ভারতা এবং সাশ্রয়ী বৈশিষ্ট জানার পরেও সাধারণ ব্যবহারকারীদেরকে লিনাক্স দিতে দ্বিধা বোধ করেন এবং আধুনিক লিনাক্সের সুবিধা থেকে সকলকে বঞ্চিত করেন।

পরিকল্পনা (The Plan)

কর্তৃপক্ষের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাগণকে লিনাক্সের সর্বশেষ বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানানো হোক (যে জন্য আমি বিজ্ঞাপন দিচ্ছি!) এবং তারপর তাঁরা সাধারণের জন্য লিনাক্স দেয়া যাবে কি না সেটা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিক (whether or not to give it a try)। কর্তৃপক্ষের জন্য এজন্য এক বা একাধিক প্রেজেন্টেশনের আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে আমার চেনা লিনাক্সে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকগণ শুধুমাত্র বিস্তারিত টেকনিকাল বিষয়াদি উপস্থাপন করবেন। স্বেচ্ছাসেবক লিনাক্স গুরুগণ কোনরকম টাকাপয়সা না নিয়েই এই কাজটা করে দেবেন (এবং দেশের জন্য কিছু করছেন জেনে সন্তুষ্ট থাকবেন।)।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভাল যে, জনাব রায়হান চৌধুরী (আমাদের ডেটাবেসের যাদুকর) লিনাক্স ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ইতিমধ্যেই বেশ ভাল জানেন। গত ২১শে নভেম্বর ২০০৮ তারিখে সাধারণ ছাত্র এবং আগ্রহীদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়েই একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল (অনুমতি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ)। অনুষ্ঠানের উপরে একটা প্রতিবেদন এখানে পাওয়া যাবে (http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?t=2569&f=42)

ছাত্রদের জন্য যেসকল কম্পিউটার আছে সেগুলোর কয়েকটিতে লিনাক্স দেয়া উচিত, যাতে করে এ বিষয়ে তাঁদের জানার একটা সুযোগ ঘটে।

প্রধান ল্যাবে আমাদের এখনও উইন্ডোজের দরকার আছে, কারণ আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছু সফটওয়্যারের ব্যবহার শেখানো হয় যেগুলো উইন্ডোজে চলে (আমরা সবই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করি!!)। এই কম্পিউটারগুলোতে আমরা অন্য কাজকর্মের জন্য মুক্তসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারি।

নতুন ছোট কম্পিউটার ল্যাবরেটরিটাতে কম্পিউটারগুলোতে ডুয়্যাল বুটিং করতে পারি। কাজেই ছাত্ররা একটা অজানা অপারেটিং সিস্টেম দেখতে পারবে।

লাইব্রেরীর সমস্ত কম্পিউটারগুলোই লিনাক্সে নেয়া সম্ভব। ঐ কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাই লিনাক্সই সবচেয়ে উপযুক্ত। আমাদের সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের সাথে আমি এই বিষয়ে আলাপ করেচিলাম - তাঁরাও এই ব্যাপারে একমত। সম্ভবত, এই কাজ করার জন্য তাদের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবুজ সংকেত দরকার। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপও এই কাজে বিনামূল্যে সাহায্য করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে - কারণ এতে তাঁরা বলতে পারবে যে "আমরা প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিকে পাইরেসীমুক্ত হতে সাহায্য করেছি"।

ছাত্রদেরকে এই নতুন কিন্তু অধিকতর ভালো কম্পিউটিং সম্পর্কে সাহায্য করার জন্য কম্পিউটার ক্লাবের মত একটা ছাত্র সংগঠন দরকার। বিভিন্ন সময়ে আমি আমাদের সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর এবং আমাদের ডীন স্যারের (প্রফেসর তপন কুমার চক্রবর্তী) সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছি। ওনারা উভয়েই একটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন - এই ধরণের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা। একটা সম্ভাব্য সমাধান হল ছাত্রদের ভর্তি ফী থেকে ২০/- টাকা করে এই খাতে নিয়ে আসা -- আমার ধারণা এইটুকুই এর কার্যক্রম চালানোর জন্য যথেষ্ট হবে। ECE বিভাগের কোন একজন শিক্ষক এই ক্লাবের মডারেটর হলে ভাল হয়। আমি ওনাদের সকলকে ভালভাবে চিনি না কিন্তু গাজী (প্রভাষক, ECE) এই মুক্তসোর্স/লিনাক্স বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী মনে হল (আমরা রাতে একসাথে অফিসের গাড়িতে বাসায় ফিরি)।

সম্ভাব্য ফলাফল (Probable outcomes)

সর্বাগ্রে, পাইরেসী এড়ানোর পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে জরিমানা, দূর্নাম এবং ঐ সংক্রান্ত ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বা থাকবে না।

লিনাক্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমাদের গ্রাজুয়েটদের চাকুরীর ক্ষেত্রকে প্রসারিত করবে।

এরকম পদক্ষেপের ফলে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির নাম কিছু বিশেষ মহলে ছড়িয়ে পড়বে। আমার ধারণা এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বাড়িয়ে দেবে। গত লিনাক্স বিষয়ক অনুষ্ঠানে (২১-নভেম্বর) প্রায় ১৩০ জন অংশগ্রহণ করেছিলো (ছবি: http://gallery.linux.org.bd/thumbnails.php?album=36)।

এসবের মধ্যে আমি কেন! (Why I am involved! )

একজন ব্যবহারকারী হিসেবে আমি পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে সবসময়ই লজ্জিত থাকতাম। একমাত্র যে উপায় আমার জানা ছিল সেটা হল এই সফটওয়্যারগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে হবে - আমি ঠিক করেছিলাম যে যখনই আমার সামর্থ হবে আমি এগুলো কিনে ব্যবহার করবো। কিন্তু পরবর্তীতে যখন আমি জাপানে, আমার ল্যাবরেটরিতে জাপানি কম্পিউটার নিয়ে হয়রান হয়ে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের সন্ধান পাই এবং খুব দ্রুতই উচ্ছসিত হয়ে পড়ি। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি আমার বাসায় কম্পিটারের সমস্ত কাজ লিনাক্সে করছি।

পাইরেসি এড়িয়ে চলার ফলে নৈতীক ভাবে শক্তিশালী হয়েছি এবং অন্যদেরকেও এই রাস্তা দেখাতে ইচ্ছুক। এছাড়া অন্যরাও ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা লাভ করুক এটাও কাম্য। এমনকি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতেও আমি লিনাক্স ব্যবহার করছি। আমার কিছু সহকর্মী এটার ব্যবহারবান্ধবতা দেখে এবং ভাইরাসমুক্ততা দেখে নিজেদের জন্য্ সংগ্রহ করেছেন।

আমি এই বিষয়ে ECE এবং IT service এর শিক্ষক ও অন্যদের সাথে কথা বলেছি। তাঁদেরকে আগ্রহী মনে হলেও এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কেউ নেই। এর ফলে আপনাকে এই প্রসঙ্গে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার বিষয় জানানোর দায়িত্বটা আমার ঘাড়েই এসে পড়লো।

আমার এই দীর্ঘ মেইল পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, যে কোন রকমের অসুবিধা সৃষ্টি করে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদান্তে .....
----------

এই উত্তরে ভিসি স্যার একলাইন লিখেছিলেন: we will look into this matter.

চিঠিটাকে সফল এজন্য বলছি যে ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীর সমস্ত কম্পিউটার উবুন্টু লিনাক্সে চলছে। বেশ লম্বা প্রস্তুতি শেষে এডমিন সেকশন এই মাসেই লিনাক্সে কনভার্ট হবে বলে শুনেছি। আমি ছাড়াও এই ইউনিভার্সিটির আরো কয়েকজন (ভিসি স্যার সহ) কোনো না কোনো কম্পিউটারে নিয়মিত লিনাক্স ব্যবহার করেন।

মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০০৯

বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার

ঘটনা-১
পথ চলতে চলতে সন্ধ্যা নেমেছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই পথ চলতি গেরুয়া বসনের, দাড়ি চুলের জটাধারী লোকটি একটা অবস্থাপন্ন গৃহস্থের বাসায় আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। সদাশয় গৃহস্থ মুসাফিরকে ভেতরে ডাকলেন। রাতের খাওয়া দাওয়ার সময় কথাবার্তা থেকে বুঝতে পারলেন যে, অতিথি বিরাট বুজুর্গ লোক। তাই, বাড়ির সবচেয়ে ভাল ঘরটাতে ওনাকে থাকতে দিলেন।

পরদিন সকালে আতিথিয়েতার প্রশংসা করে বুজুর্গ বিদায় নিলেন; বাড়ির সকলেই রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ওনার যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছুদুর গিয়েই হঠাৎ ঐ জটাধারী ফিরে আসলেন .... কোনো সমস্যা হল কি না ভেবে গৃহকর্তা একটু এগিয়ে গেলেন। জটাধারী গৃহকর্তার হাতে একটা খড়ের টুকরা দিয়ে বললেন .. ভুলক্রমে ওনার বাড়ির খড়-কুটা তাঁর দাড়ির সাথে চলে গিয়েছিল তাই ফেরত দিতে এসেছিলেন। হতভম্ব মুগ্ধ গৃহকর্তাকে ঐ অবস্থায় রেখেই লোকটি বিদায় নিলেন। আশেপাশে জড়ো হওয়া প্রতিবেশীরাও অতিথির এহেন বোকামীমার্কা সততায় অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

দুপুরে গৃহকর্তার বাড়িতে আবার গোলমাল শোনা গেল। ব্যাপার কিছুই না। অতিথি যে ঘরে ছিলেন সেই ঘর গোছাতে গিয়ে আবিষ্কার হল যে ঐ ঘরে সিন্দুক থেকে সমস্ত টাকাপয়সা হাওয়া হয়ে গিয়েছে। ............ জটার সাথে ভুলক্রমে চলে যাওয়া খড়কুটো ফেরত দেয়াটা একটা ইম্প্রেসিভ স্টান্টবাজি ছিল।

ঘটনা-২
আমার এক পরিচিত ব্যক্তির কাছে এক নেশাখোর একটা নোকিয়া ৩১১০ ক্লাসিক ফোনসেট ২০০ টাকায় বিক্রয় করতে চাইলো কিন্তু উনি সেটা নেননি। আমি খুব অবাক হলাম ..... প্রায় ৬ হাজার টাকার একটা সেট এ্যাত কমদামে পাচ্ছেন নেবেন না কেন? না হয় একটা চার্জার কিনে নিতে হবে, সেটার কতই বা আর দাম। তাছাড়া ঐ সেটটাতে কত সুবিধা একসাথে আছে .... দারুন রঙিন স্ক্রিন, ১.৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ব্লুটুথ, ক্লাস ১০ এজ মডেম ইত্যাদি। প্রতিটিই দরকারী ফীচার - কোথাও বেড়াতে গেলেন, দারুন কিছু দেখলেন; সেটা পরিচিতদের সাথে পরে শেয়ার করার জন্য ক্যামেরাটা কত কাজে দিত। এছাড়া এজ মডেম দিয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট কত সহজে পাওয়া যায়, শুধু এজ মডেমের দামই কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা। ব্লু-টুথ দিয়ে তারের ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই অন্য মোবাইল বা কম্পিউটারের সাথে ডেটা/ফাইল/ছবি আদান প্রদান করা যায় .... কত সুবিধা -- এই সুবিধাগুলোর কোনটাই ওনার কমদামী সেটে নাই; যেটাতে শুধু কল করা আর রিসিভ করা যায়। একবার আমার ঐ মডেলের ফোন ছিনতাই হয়েছিল, তাতে যত টাকার ক্ষতি হয়েছিল (তৎকালীন ক্রয়মূল্য ছিল ৮৮০০ টাকা) আপনার তার কিছুই হবে না, ছিনতাই/চুরি যদি হয়েও যায় তবুও ২০০ টাকায় এর চেয়ে অনেক বেশি ভোগ করে নিতে পারবেন। এ্যাত সুবিধার কথা বোঝানোর পরও ওনার এক কথা: নির্ঘাত ওটা চুরির/ছিনতাইয়ের মাল, তাই যত কমদামেই দিক, যত সুবিধাই থাক নেবেন না। এখন ছবি তোলার দরকার হলেও ওটা ছাড়াই চলা যাবে অতি দরকার হলে খেয়ে না-খেয়ে টাকা জমিয়ে তবেই কিনবো আর ঐসব সুবিধা ভোগ করবো।

বাঃ, ওনার বিবেক আর বিবেচনাবোধ দেখে আমি চমৎকৃত হলাম। সত্যই তো চুরির মাল যত লোভনীয় হউক না কেন সেটা পরিত্যাজ্য। আমার ধারণা এই লেখার পাঠকগণের বেশিরভাগই একই রকম মনোভাব পোষন করেন।

কিন্তু কয়েকদিন পরেই অন্য কিছু ঘটনায় আমার মনে হতে লাগলো যে আগের যেই আদর্শবাদীতা দেখেছিলাম ওটা মেকী ছিল ... শুধুই লোক দেখানো ছিল। কিংবা হতে পারে যেই আদর্শের কথা তখন আমাকে বলেছিল সেটার অর্থ ওনার উপলব্ধিতেই নাই ... শুধুই তোতাপাখির মত কপচানো বুলি। নাকি আগের গল্পের জটাধারী অতিথির মত সততা!

কারণটা আর কিছুই না। উনার বাসায় এবং অফিসে অনেক চোরাই মাল অবিশ্বাস্য কমদামে কিনে ব্যবহার করতে দেখলাম। ঐ মালগুলোর দাম ঐ চোরাই মোবাইলের চেয়ে অন্ততপক্ষে ২০গুণ বেশি। ওনাকে যখন বললাম কেন এই কাজ করছেন? অনেক কমদামে অন্য ব্রান্ডের আসল জিনিষ ব্যবহার করা যায় তখন তিনি পুরা ১৮০ ডিগ্রীর ঘুরে উল্টা যুক্তি দিতে থাকলেন ... যে ঐ ব্রান্ডে এই সুবিধা নাই সেইটা সহজে করা যায় না -- কথা বলছে যেন আগের ঘটনার খলনায়ক (আমি)।

ঘটনা ২.১
কি .... এখনও বুঝতে পারেন নাই? ঠিক আছে ..... সহজ হিসাব দিচ্ছি:

  1. উইন্ডোজ: কমপক্ষে ৫০ ডলার
  2. মাইক্রোসফট অফিস: কমপক্ষে ৪০০ ডলার
  3. এন্টি ভাইরাস: বছরে কমপক্ষে ১০ ডলার
  4. ফটোশপ: কমপক্ষে ২০০ ডলার
  5. অটোক্যাড: কমপক্ষে ৯০০ ডলার
  6. বাসার কম্পিউটারে থাকা গেমগুলোর দাম আপাতত বাদ দিলাম।

প্রতিটি কম্পিউটারে কমপক্ষে: ১৫৬০ ডলার। তাহলে অফিস ও বাসা মিলিয়ে ৩০০০ ডলারের বেশি (= প্রায় ২,১০,০০০ টাকার বেশি) দামের সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন। বলাই বাহুল্য যে ওগুলো সবই চোরাই মাল। সবগুলো সিডি মিলিয়ে ২শ টাকার বেশি খরচ হয়নি। আগের আদর্শ গুলে খেয়ে সেগুলো কিন্তু ঠিকই ব্যবহার করছেন।

তাই ইদানিং যখনই কেউ বড় বড় আদর্শের বুলি কপচায় আর নিজেই লাখ লাখ টাকার চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করে .... তখন মনের ভেতর থেকে কোনো মুগ্ধতা বের হয়ে আসে না - বরং হিপোক্রেসি দেখলে যেমন অনুভুতি হওয়ার কথা সেরকম মনে হয় (হে জটাধারী ভন্ড!)।

ঘটনা-২.২
একটু হিসাব করুন দেখি প্রতিটি কম্পিউটারে কত টাকার দূর্নীতি হচ্ছে? তাহলে একটা বাসায় কত টাকার দূর্নীতি হচ্ছে, একটা প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র এই সফটওয়্যার/কম্পিউটার খাতে কত টাকার দূর্নীতি হচ্ছে? পরপর ৫ বার দেশ হিসেবে দূর্নীতিতে যখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম তখন কি এই খাত সহ হিসাব হয়েছিল? না হয়ে থাকলে এগুলো সহ হিসাব হউক -- দূর্নীতিতে আমাদের চ্যাম্পিয়নশীপ কোনদিন হুমকীর সম্মুখীন হবে না!

দেশের জন্য ক্রিকেটাররা কোন জয় আনতে না পারুক ... আমরা ঠিকই শুধু জয় না, চ্যাম্পিয়নশীপ ছিনিয়ে আনবোই আনবো!

ঘটনা-২.৩
নিজেকে বদলানোর কী দরকার?! বরং চ্যাম্পিয়নশীপ উপলক্ষে একটা থীম সং দরকার।

ঘটনা-৩
অল্টারনেটিভ অপশনটা কি জানেন? লিনাক্স .... ঐ সবগুলো সফটওয়্যারের কাছাকাছি বিকল্প সফটওয়্যার সহ বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন সিকিউরিটি, কারণ লিনাক্সে ভাইরাসের বেইল নাই।

ঘটনা-৪
এসব বুঝাইতে গেলে বেশিরভাগ লোকই যুক্তি মেনে নেয়। আমাকে প্রচন্ড মাত্রায় সমর্থন ও উৎসাহ দেয় কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত এই পোস্টের শিরোনাম বাস্তবায়িত করে।

অবশ্য, আমার প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিচার মেনে তালগাছ ছেড়ে দিয়েছেন । সেই পত্রাঘাতের গল্প চাইলে আরেকদিন (... ... না চাইলেও জোর করে করবো .. হে হে ;) ) । আপাতত অফ যাই।

ঘটনা-৫
যাওয়ার আগে কিছু সালিসের কথাবার্তা ....

তালগাছ বক্তাঃ আরে ... বিদেশি ওরা শত বছর ধরে আমাদের শোষন করেছে, এখন ওদের জিনিষ আমরা পয়সা না দিয়ে ব্যবহার করলে ঠিকই আছে।
বস্তিবাসীঃ বিল্ডিংএ থাকা সাহেবরা আমাদের পাওনা মেরে দিয়ে বড়লোক হৈছে ... তেনাগো বাসার জিনিষ চুরি করলে ঠিকই আছে।

তালগাছ বক্তাঃ ওদের জিনিষ ছিনিয়ে নেয়াই ঠিক পন্থা ... শালারা এই দেশটাকে চুষে খাচ্ছে।
ছিনতাইকারীঃ এই শালার বেটা তোর মোবাইল দে ...

তালগাছ বক্তাঃ আরে ভাই দেশে যেই ইনকাম তাতে তো কিনে সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না। পাইরেসী ছাড়া কোনো উপায় নাই ...
ছিচকে চোরঃ চারদিকে কাজ নাই। যেগুলো আছে সেগুলোতে আর কয়টাকা দেয়। তারচেয়ে সিগনালে দাঁড়ানো গাড়ির যাত্রীর ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে দৌড় দিয়ে রেলগাড়ীর সামনে দিয়ে লাইন পার হওয়া ছাড়া উপায় নাই।

তালগাছ বক্তাঃ ফ্রী সফটওয়্যারগুলো ভাল না। হ্যান করা যায় না ত্যান করা যায় না .... কমার্শিয়াল সফটওয়্যারের সুবিধা পেতে অনেক দুর যেতে হবে। তার চেয়ে পাইরেটেড সফটওয়্যার ভাল।
ঘুষখোর আমলার ছেলেঃ এই তোর বাবাটা যে কী ..... .... এ্যাত সততা দেখায় কী হবে... বাসায় একটা এসি লাগাতে পারে না ... এই গরমে এসি ছাড়া থাকা যায় ... ছিঃ ছিঃ

.... .... ....
... ... ...


(সচলায়তনে প্রকাশিত)

বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০০৯

লিনাক্স পুরা ফালতু - ব্যবহার করে দিনকে দিন হতাশ হচ্ছি

উইন্ডোজে খেলার জন্য নিড ফর স্পীড বলে একটা গেম আছে। কঠিন লড়াই করে গাড়ীর দৌড় প্রতিযোগীতায় জিততে হয়। ওটা খেলতে কঠিন মজা পেতাম। প্রতিটা চ্যালেঞ্জ জিততে দারুন মজা। কয়েকদিন পরেই কম্পিউটারের প্রতিযোগীগুলো কোনক্রমেই পেরে উঠতো না। বন্ধু বান্ধবের যারা খেলতো তারা তো কম্পিউটারের সাথেই পারে না। আমার সাথে পেরে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না ... ... তাই ওদের সাথে খেললে মজা নষ্ট হয়ে যায়। আমার ছোট দুই ভাইও কঠিন গেমার ছিল ... ওদের সাথে তাই জমতো। এছাড়া কল অব ডিউটি বা সিমসিটি টাইপের স্ট্রাটেজি গেমগুলোও চরম আকর্ষনীয় ছিল। সবসময়ই টানটান উত্তেজনা আর চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ না থাকলে যে কোনো গেমই ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়।

লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে ভেবেছিলাম কঠিন একটা বিষয় আয়ত্তে আনছি ... চ্যালেঞ্জ জয় করছি .... কঠিন ভাব নেয়া যাবে। লোকজন ইমপ্রেস হবে। আজ এটা সমস্যা, কাল ওটা সমস্যা .... রাতে চিন্তায় ঘুম হবে না, চোখের নিচে কালি পড়বে। এই করতে হবে, সেই করতে হবে .. ... দুশ্চিন্তায় ডায়বেটিস হয়ে যাবে, হার্টের সমস্যা দেখা দিবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে ..... .... লোকজন জিজ্ঞেস করলে মুখ ঝামটা দিয়ে বলা যাবে ... "ধুর মিয়া অফ যান - জানেন নাতো কী রকম দৌড়ানীর উপরে আছি"। আহ .... কী চরম চ্যালেঞ্জ আর উত্তেজনা।

আমার সে আশায় গুড়ে বালি। লিনাক্সে কোন চ্যালেঞ্জই নাই। একেই তো বিনামূল্যে দেয় সেজন্য জুয়া খেলে টাকা হারাবার মত উত্তেজনা নাই, তার উপর চৌর্যবৃত্তির দারুন থ্রীল পুরাটাই মিস ....... অথচ পাইরেটেড উইন্ডোজে কত্ত উত্তেজনা; আজকে জেনুইনিটি টেস্ট কালকে ম্যালওয়্যার, পরশু ভাইরাস .... চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ ... কখনই ম্যাড়মেড়ে ভাব নাই।

জেনুইনিটি টেস্টের সেই উইজেটটা নিউট্রাল করা দারুন উত্তেজনাকর .... বিল কাকুর মাইক্রোসফটকে টেক্কা দেয়া বলে কথা! ইন্টারনেট ঘেটে পদ্ধতি বের করে তারপর প্রসেস বন্ধ করতে হয়, ফাইল মুছতে হয়, রেজিস্ট্রি এন্ট্রি মুছতে হয় .... এজন্য ব্যাকআপ নিতে হয় কারণ ভুল ভাল হয়ে গেলে মেশিন বসে যাবে ---- ওয়াও!! এরকম টান টান উত্তেজনা না থাকলে জীবন চলে! অবশ্য, অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহার করলে এইসব করা লাগবে না - অন্তত তাই হওয়ার কথা। অবশ্য চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহারকারীগণ হতাশ হবেন না ... ... বিল কাকুর এই উইজেট আপনাদের জীবনেও উত্তেজনার আনন্দ দিতে পারে ... অনেক অরিজিনাল / জেনুইন ব্যবহারকারীকেও এই উইজেট পাইরেটেড বলেছে বলে শোনা যায় --- অবশ্য এতে উত্তেজিত হয়ে কারো হার্ট এ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি।

তারপর ধরুন নতুন নতুন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমগুলো হাইফাই হার্ডওয়্যার ছাড়া চলে না। অনেক ড়্যাম, অনেক বড় হার্ডডিস্ক, উচ্চমার্গীয় প্রসেসর এই সব লাগেই। এ্যাতসব হাইফাই হার্ডওয়্যার কিনলে কত ভাব নেয়া যায়, বলা যায় যে ঐসব বড় বড় হার্ডওয়্যার কম্পানিকে আমরা বাঁচিয়ে রেখেছি -- অথচ ব্যাটা ফাউল লিনাক্স, কম শক্তির পিসিতেও নাকি অনায়েসে চলে। শালার ... টাকা খরচের উপায়ই নাই।

তারপর ধরেন, ভাইরাস ভাইদের কথা। সবসময় কত উত্তেজনার মধ্যে রাখে - এই মারলো রে তো সেই মারলো করে সবসময় হৈ হুল্লোরের মধ্যে থাকা যায়। একবার দেখা গেল সকলের স্ক্রীনে ছোট ব্যানারে কী জানি হ্যাক ডে লেখা দুইটা আস্তে আস্তে ইতস্তত ঘুরাঘুরি করছে। যত ক্লিক করা হয় তত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। ইন্টারনেট ঘেটে ঐটা দুর করার পদ্ধতি দেখে খুঁজে খুঁজে ওগুলো মোছা হল .... .... বলেন তো, একঘেয়ে জীবনের মধ্যে এমন ব্যতিক্রম না থাকলে ভাল লাগে! অথচ আমার কম্পিউটারে এমন কিছুই নাই। ভাইরাস নাকি বানানোরও কোন রাস্তা খোলা রাখে নাই।

আগে লিনাক্সে ভাল কোনো গেম ছিল না। তাই বড় হয়ে গিয়েছি এমন একটা ভাব আসতো। কিন্তু দেখেন কারবার, এখন দূর্দান্ত থ্রী-ডি গেমও চলে এসেছে। বড় বড় ভাব নেয়ার উপায় নাই।

আগে দেখতাম বড় ভাইরা কালো স্ক্রিনে কাজ করে ভাব নিত... ডসের মত কালো স্ক্রীনে কী কী হিজিবিজি লেখা উঠতো সেগুলো দেখে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়াতো। ভাবলাম লিনাক্স ব্যবহার করলে তেমন ভাব নেয়ার সুযোগ হবে। কিন্তু সেই আশাও পুরা হওয়ার কোনো উপায় নাই। লিনাক্সে গ্রাফিকালি ক্লিক করেই সব করা যায় - ধ্যা-এ্যা-ত্ ।

অনেক আগে ১০ গ্রাম ঘুরে একজন মেট্রিক পাশ লোক পাওয়া যেত। একনামে সকলেই তাদেরকে চিনতো। কিন্তু এখন সেইরকম অবস্থা নাই। আমার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বলেছিল তাঁদের সমস্ত গ্রাহকদের মধ্যে আমি আর একজন - এই দুইজনই শুধু লিনাক্স ব্যবহার করে। তাই আলাদা ভাবে আমাদের কথা মনে থাকে। কিন্তু ইদানিং যে দ্রুত হারে ব্যবহারকারী বাড়ছে ... তাতে সেই রেয়ার স্পিশিজ বলে ভাব নেয়ারও উপায় দুর হয়ে যাচ্ছে --- নাহ্ লিনাক্সটা আসলেই যাচ্ছেতাই হয়ে গেল।

"জানিস আমার পিসি না হ্যাক হয়ে গিয়েছিলো ... যখন বুঝতে পারলাম তখন তো সাথে সাথে ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট করলাম। তারপর সব রিইনস্টল দিয়ে ফায়ারওয়াল দিয়ে কত কি করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসলাম।" ইত্যাদি ইত্যাদি কত গল্প করার বিষয় তৈরী হয় যেগুলো লিনাক্সে হওয়ার সুযোগই নাই --- হতচ্ছাড়া লিনাক্সের কারণে বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ করার বিষয়বস্তু কমে যাচ্ছে।

সুতরাং হে রক্ত গরম যুবা, চ্যালেঞ্জিং জীবন চাইলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিন, সেটা সম্ভব না হলে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করুন; ভুলেও লিনাক্স চালানোর কথা ভাববেন না।

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

রবিবার, ২৪ মে, ২০০৯

উবুন্টু ব্যবহার করতে আগ্রহী? ঘুরে যান উবুন্টু ৯.০৪ লাইভ থেকে

উবুন্টু লিনাক্স বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন। সেই জনপ্রিয়তার ঢেউ কিছুদিন ধরে এসে লেগেছে বাংলাদেশেও, এখন অনেককেই উবুন্টু লিনাক্স ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই জনপ্রিয়তার পিছনে পরোক্ষভাবে সামান্য হলেও অবদান রেখে এসেছে উবুন্টু বাংলাদেশ , আমাদের প্রযুক্তি ফোরাম এবং মুক্ত.অর্গ, এবং সবগুলোর পিছনেই ছায়ার মতো থেকেছে বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজারস্ এলায়েন্সের স্বেচ্ছাসেবকেরা।

গত তিন সংস্করণ প্রকাশের পর পরই বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজারস্ এলায়েন্স ও মুক্ত.অর্গের সহায়তায় উবুন্টু বাংলাদেশ ও আমাদের প্রযুক্তি ফোরাম যৌথভাবে রিলিজ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। এবারও কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত ২৩শে এপ্রিল উবুন্টু লিনাক্স ৯.০৪ জন্টি জ্যাকালোপ রিলিজ হয়েছে এবং সে উপলক্ষ্যে উবুন্টু লিনাক্স ৯.০৪ লাইভ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে আগামী ২৯শে মে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি অডিটরিয়ামে।

অনেকেই উবুন্টু লিনাক্স ৯.০৪ জন্টি জ্যাকালোপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করেছেন আবার অনেকেই অন্যদের ব্যবহার করতে দেখে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আপনি যদি উবুন্টু লিনাক্স ব্যবহারকারী হন, অথবা উবুন্টু লিনাক্স ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হন তাহলে আপনি উবুন্টু ৯.০৪ লাইভ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত।

অনুষ্ঠান: উবুন্টু লিনাক্স ৯.০৪ লাইভ

সময়: ২৯শে মে, শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০।

স্থান: প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি
হাউস # ১১এ, রোড# ৯২, গুলশান-২,
ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ

গুগল ম্যাপে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি

অনুষ্ঠানে যে সব বিষয়ে উপস্থাপনা থাকবে তার বিবরণ:

  1. লিনাক্স এবং উবুন্টু কেন?
  2. উবুন্টু ইনস্টল করার উপস্থাপনা (একটি সাধারণ কম্পিউটারে উবুন্টু ইনস্টল করে দেখানো হবে)
  3. উবুন্টুতে ইন্টারনেট সেটআপ (IP, DSL, Mobile দিয়ে)
  4. উবুন্টুতে বিভিন্ন সফটওয়্যার ইনস্টল করার উপস্থাপনা (যদিও ইনস্টলের সময়ই অনেকগুলো জরুরী সফটওয়্যার ইনস্টল হয়েই থাকে)
  5. ডেস্কটপ কাস্টমাইজেশন (থিম, গ্রাফিকাল ইফেক্ট, ডেস্কলেট ইত্যাদি)
  6. উবুন্টু বিষয়ে সাহায্য দরকার হলে কোথায় পাবেন।
  7. উবুন্টু সফটওয়্যার সংগ্রহের ব্যবস্থা (সিডি চাইলে ২০/- দিয়ে নিতে পারবেন; এছাড়া মেমরি ড্রাইভে সফটকপি/ বুটেবল করে নিতে পারেন)
  8. প্রতিটি আলোচনার শেষে অংশগ্রহনকারীদের জিজ্ঞাস্য বিষয়ের সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

অনুষ্ঠানের পোস্টার:

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য কোনরকম চাঁদা/ফী দেয়া লাগবে না। তবুও অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য অনুগ্রহ করে নিবন্ধন করুন

উবুন্টু বাংলাদেশ ইভেন্ট রেজিস্ট্রেশন পেজ
.
.
.
.

আয়োজনে:


.
.

সহায়তায়:

.
.
.
.
.

কৃতজ্ঞতা:
অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করছেন: প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ
তত্ত্বাবধায়ক: উন্মাতাল তারুণ্য (আমাদের প্রযুক্তি ফোরাম)
উবুন্টু বাংলাদেশ লোগো: উচ্ছ্বাস, বিএলইউএ লোগো ও পোস্টার ডিজাইন: ডার্কলর্ড (মুক্ত.অর্গ)।

===========
আশাবাদী'র পোস্ট হইতে পূণর্লিখিত (কৃতজ্ঞতা)

এর সাথে সংশ্লিষ্ট আমার পোস্ট: হঠাৎ লিনাক্স নিয়ে পড়লাম কেন?

সোমবার, ১১ মে, ২০০৯

কত কপি করে রে!

কয়েকদিন আগেই আগের সেমিস্টার (ট্রাইমিস্টার) শেষ হলো। ঠিক সময়ে খাতা দেখে জমা দেয়া অসম্ভব বলে মনে হয়েছে এ পর্যন্ত। শেষ যেই খাতার বান্ডিলটা ছিল, সেটা দেখে মনে হল - বেশ কয়েকজন ভরপুর নকল করেছে। ঐ পরীক্ষায় ইনভিজিলেটর কে ছিল সেটা খেয়াল নাই (আমি ছিলাম না); তবে সে সম্ভবত পরীক্ষার গার্ড দেয়ার বদলে নিজের ভাগের খাতা দেখেছে বসে বসে।

এই গ্রুপটার খাতা আগেও দেখেছি দুটো মিডটার্ম পরীক্ষায়। আহামরি কিছু নাই ... কিন্তু ফাইনালের খাতায় নিখুত ইংরেজি দেখেই সন্দেহ হচ্ছে ... ... এমনকি আমার দেয়া ক্লাসনোটে দুই জায়গায় টাচপ্যাডের কল্যানে / টাইপিং এর ভুলে কোনো কোনো শব্দের মাঝখানে সংখ্যা পড়ে গিয়েছিল (যেমন diffic3ult); সেগুলোও ঐ ভুল সহ খাতায় নিখুত ভাবে লেখা!! যাঁরা সত্যই পড়েছে আর যারা না পড়েই লিখছে তাদের আলাদা করতে না পেরে মেজাজ একটু খারাপ।

একই ব্যাপার দেখা যায়, হোম এসাইমেন্টের ক্ষেত্রে; একই ভুল অনেক খাতায় পেলে সবগুলোতেই শূণ্য দিতে হয়। আবার পরীক্ষার খাতায় দেখা যায় এক প্রশ্নসেটের উত্তরে আরেক সেটের ডেটা দিয়ে সমাধান করা ... ... সাথে সাথে শূণ্য। ওপেন বুক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ডেটার বদলে বইয়ের ডেটার সমাধান কপি করা!!

ছাত্রাবস্থায় ঐতিহাসিক কপি করার কাহিনীগুলো মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তো। যেমন কোনো এক বড়ভাই সেশনালের খাতা কপি করার সময় ভুলে আরেকজনের নাম রোল নং শুদ্ধ লিখে দিয়েছিল!! কোনো স্কুলে নাকি কপি করতে গিয়ে বাবার নামে আরেকজনের বাবার নাম বসিয়ে দিয়েছিল।

তবে, লেটেস্ট যেটা শুনলাম (পুরাতন কাহিনী হয়তো) সেটা হল: কোনো এক ছাত্র একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে - "প্রমথ চৌধুরী"। পাশের জন দেখে কপি করেছে - "প্রথম চৌধুরী"! তারও পাশের জন ওটা দেখে লিখেছে "১ম চৌধুরী"!!

এরা পাশ করে কর্মক্ষেত্রে কী করবে .. ... .... :(

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০০৯

জরীপ: কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন?

আমাদের প্রযুক্তি ফোরামের পক্ষ থেকে সম্প্রতি শুরু হয়েছে নতুন একটি জরিপ, যেখানে আপনি বলতে পারবেন আপনার কম্পিউটিং অভিজ্ঞতার কথা। কি দিয়ে শুরু করেছিলেন কম্পিউটিং? বন্ধুর বাড়িতে কিংবা কলেজের ল্যাবে সেই প্রথম কম্পিউটার ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা। জানাতে পারেন গেম খেলা কিংবা মুভি দেখার কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করতেন কিনা সে কথাও। ছোট্ট এই জরিপটির ফর্ম পূরণ করতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকছে প্রযুক্তি বিষয়ক ই-ম্যাগাজিন "প্রযুক্তি কথন"-এর পরবর্তী সংখ্যা সরাসরি ইমেইলে পাবার সুযোগ। তো ঝটপট নিজে পূরণ করে দিন ফর্ম আর বন্ধুকের পাঠিয়ে দিন জরিপের লিংক।


কৃতজ্ঞতা/তথ্যসূত্র: উন্মাতাল তারুণ্য

শনিবার, ৭ মার্চ, ২০০৯

অসহায় বাচ্চা, ভয়ংকর ডাক্তার

(বাঁচতে হলে জানতে হবে টাইপ কথাবার্তা আছে ... খোকা খুকিদের না পড়াই ভাল)

আমার ছোটভাই শাহেদের বাচ্চার বয়স প্রায় ৬ মাস। হাসিখুশি আমার এই ভাস্তিটার জন্মের সময়টার কথা মনে পড়লে এখনও ঐ ডাক্তারের উপর রাগে মাথায় রক্ত চড়ে যায়। শাহেদের বউ আমাদের কাজিন ছিল (আছে)। গর্ভের কয়েক মাসের সময় বাইরে বেশি ঘুরাঘুরি করার জন্য সম্ভবত হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লো। ডাক্তার পরামর্শ দিল বেড-রেস্টে থাকার জন্য। এই সময়টাতে গর্ভবতী মেয়েরা সাধারণত তাঁদের মায়ের কাছে চলে যায় --- এই রেওয়াজ জাপানেও দেখে এসেছি। সুতরাং ও সাভারে ওদের বাসায় চলে গেল।

সাভারেই একটা ক্লিনিকের ডাক্তারকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হল। ঐ লেডি-ডাক্তারের দেশের বাইরের বড় ডিগ্রী আছে, উপরন্তু শাহেদের সম্বন্ধীর (আমাদের ..তুতো ভাই) খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মা উনি। ক্লিনিকটা ঢাকা থেকে গেলে সাভার বাজার পার হয়ে কিছুদুর পরে প্রধান রাস্তার বামপাশে অবস্থিত (ভেলরি টেইলরের সি.আর.পি. ওটার উল্টা দিকে কিছুটা ভেতরে)। ডাক্তার সাহেবের আলিশান বাড়িটাও ক্লিনিকের সাথেই লাগোয়া। কাজেই বেশ নির্ভরতার সাথেই ওনার পরামর্শ মেনে চলতে থাকলো ওরা। বাইরের দেশগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ... সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়াই স্বাভাবিক প্রসবের জন্য তাঁদের নিয়মিত বিভিন্ন ব্যায়াম করানো হয়। জাপানে থাকার সময় এই ব্যাপারটা দেখেছি .... কেউ আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের জুনিয়র সিনেমাটা দেখে থাকলেও এই ধরনের সিন দেখে থাকবেন। অথচ, আমাদের ডাক্তার এ ধরণের কোন পরামর্শই দিয়েছে বলে কখনো শুনিনি। বরং সবসময়ই এমন কথা বলেন যে সব ঠিক আছে ইত্যাদি।

ফলে শুয়ে থাকতে থাকতে গর্ভবতীর ওজন বেড়ে গেল অস্বাভাবিক। ডেলিভারির সময়ে ঐ ক্লিনিকে ভর্তি করানো হল এবং বাচ্চার পজিশন ঠিক নাই এমন আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখিয়ে সিজার করা হল। আমার ছোটচাচা হোমিওপ্যাথির ডাক্তার, থাকেন সেই কুড়িগ্রামে। উনি পরে বলেছিলেন যে, আসলে বাচ্চার পজিশনের যেই ব্যাপার দেখিয়ে সিজারিয়ান করানো হয় তার বেশিরভাগই ঠিক না। বাচ্চা শুরুতে উল্টা পজিশনেই থাকে। তারপর যতই প্রসবের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই বাচ্চা ঘুরে পজিশনে আসতে থাকে; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লিনিকওয়ালাগণ সিজারিয়ান অপারেশন করে টাকা কামানোর জন্য এই পজিশনে আসার আগেই আল্ট্রাসনোগ্রাম করে উল্টা পজিশনের ছবি নেয়। পাশাপাশি ডেট পার হয়ে যাচ্ছে, ঠিক সময়ে প্রসব না হলে বাচ্চার ক্ষতি হবে -- এসব কানপড়া দিতে থাকে। পানি ভেঙ্গে গেলে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার কথাটা পুরাপুরি সত্য, কিন্তু সময় পার হয়ে যাচ্ছে ... এই কথাটা আতঙ্কিত করানোর জন্য বলা হয়; কারণ তা না হলে কয়েকদিন পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রসব হবে ... ওদের সিজারিয়ানের দাও মারা হবে না। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভাল - আমার ছোটচাচীর ৫জন সন্তান (+১ জন জন্মের পর মারা গিয়েছিল) সকলেই স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।

যেদিন সন্ধ্যায় বাচ্চা হল, তার পরদিন দেখতে গেলাম। বাচ্চা কোলে নিয়েই মনে হল ওর গায়ে জ্বর। আঙ্গুল দিয়ে বাচ্চার ভ্রুর উপরে এবং কপালে একটু ঘষে ম্যাসেজ করে দিলে বাচ্চা আরামে চোখ বন্ধ করে ফেলে। বাচ্চার মা-বাবা, খালারা সকলের কাছেও তাই মনে হল। তখন বাচ্চার মা বলছিল যে গতরাত্রে যখন সিজারিয়ান করতে নিয়ে যাওয়া হল তখন ঐ কক্ষের তাপমাত্রা এত কমানো ছিল যে ও ঠান্ডায় কাঁপছিলো। এই ঠান্ডার মধ্যে বাচ্চা বের করে ওরা বলাবলি করছিলো যে দূর্বল বাচ্চা ... অবস্থা সুবিধার দেখছি না। তারপর ওর রূমে আসার পর জোর করে বাচ্চাকে একটা ইঞ্জেকশন দিয়েছে।

কাহিনী এখানে শেষ হলেও খুশি হতাম। কিন্তু তারপর আমি চলে আসার পর বাচ্চার নানী যখন বাচ্চার কাপড় পাল্টাতে গেল তখন ভক করে নাকে দূর্গন্ধ এসে লাগলো। বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর ওকে গরম পানি দিয়ে গোসল দেয়ানোর কথা ... কিন্তু এখানে তা-ও করা হয়নি। একেই তো এয়ার কন্ডিশনারের ঠান্ডায় বাচ্চা কুঁকড়ে ছিলো তার উপর গোসল না দিয়ে কোনো রকমে তুলা দিয়ে মুছিয়ে তোয়ালে জড়িয়ে দিয়েছে। স্তম্ভিত নানী তারপর তাড়াতাড়ি করে গরম পানিতে বাচ্চাকে ধুইয়েছে। শুরুতেই বাচ্চাকে এরকম অসুস্থ করানোর জন্য ক্লিনিকওয়ালারা চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি বলে মনে হল (প্রসুতিকে ঠিকভাবে গাইড করেনি, স্বাভাবিকের বদলে সিজারিয়ান, কনকনে ঠান্ডা রূমে প্রসব করিয়ে বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগানো, গোসল না দিয়ে জীবানুদের সুযোগ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন?)। ফলে বাচ্চা এর পর বেশ কিছুদিন জ্বর, নাড়ি কাঁচা থাকা এবং জন্ডিসে ভুগেছে।

যা হোক অপারেশনের ক্ষত শুকানো মাত্র ঐ ক্লিনিক থেকে ওদেরকে রিলিজ করিয়ে আনা হয়েছে। ঐ কসাইখানা থেকে জীবিত বাচ্চা এবং মা-কে নিয়ে বের হয়ে আসতে পেরে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। নানীবাড়ি থেকে ঢাকায় আনার পর ঐ কয়েকদিনের বাচ্চাকে নিয়ে ঢাকায় রক্ত পরীক্ষা করানো হল ... বাচ্চা আমার কোলে, শাহেদ ক্লিনিকের কাউন্টারে কথা বলছে। যখন রক্ত নিল তখন বাচ্চা আমার কোলে --- সুঁইয়ের সাইজ ওর পায়ের পাতার চেয়ে বড়। পায়ের পাতা থেকে রক্ত নিল। রক্ত/সুঁই এই জিনিষগুলো আমি খুব ভয় পাই - দেখতে পারি না (যদিও নিজে আবার এদিক দিয়ে বেশ ভাল ছিলাম ... মাথা কামাইলে এখনও শুধু ঐটুকুতেই দুই ডজন দাগ দেখা যাবে, বাকী দেহের কথা না হয় বাদই দিলাম)। রক্ত নেয়ার সময় আমি বাচ্চাকে ধরে রেখেছিলাম .. .. যে লোক রক্ত নিল সে, শাহেদ সবাই আমাকে অভয় দিচ্ছে ... দৃশ্যটা বেশ মজার এবং করুণ। জন্মের সময় থেকেই বেচারীকে ভীষন প্রতিকূলতার বিরূদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছে - দূঃখ লাগে এজন্য যে সেই প্রতিকূলতাগুলো কৃত্রিমভাবে কিছু মানুষই(?!) সৃষ্টি করেছিলো।

মাঝে মাঝে ভাবি, বিদেশে যেখানে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এ্যাত চেষ্টা করা হয় সেখানে আমাদের কিছু ডাক্তার/ক্লিনিকগুলো এ্যাত কসাইগিরি করতে চায় কেন? টাকা কি মানুষকে এ্যাতই খারাপ বানিয়ে দেয়? যাদের উপর জীবনের জন্য নির্ভর করে মানুষ, তারাই কিনা এটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে! .... .... আরেকটু চিন্তা করলে বুঝি যে এটা আমাদের সিস্টেমের জন্যই হয়েছে। এদেশের বাস্তবতায়, এই সিস্টেম ভুল না শুদ্ধ সেই তর্ক তোলা থাক আপাতত। অন্য দেশের ডাক্তারগণের স্বাভাবিক প্রসবপ্রীতির পেছনেও টাকার ক্ষুধা কাজ করে - সেটা কেন তা ব্যাখ্যা করি একটু। জাপান বা অন্য উন্নত দেশে সকলের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা থাকে। চিকিৎসা খরচ দেয় সরকার, কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে খরচের সামান্য অংশ বহন করতে হয়। অন্য দেশের কথা জানিনা, জাপানে প্রতি সন্তান প্রসবের জন্য ঐ ক্লিনিক/হাসপাতাল/ডাক্তার বেশ ভাল একটা টাকা পায় সরকার থেকে। এই টাকার পরিমান নির্দিষ্ট। কাজেই স্বাভাবিক প্রসবের বদলে যদি সিজারিয়ান করানো লাগে তাহলে ঐ ডাক্তার/ক্লিনিকের খরচ বেড়ে যাবে - ভাগের টাকা কম পড়ে যাবে। তাই ওরা প্রানান্ত চেষ্টা করে যে স্বাভাবিক ডেলিভারি হউক। অনেকক্ষেত্রেই সিজারিয়ান দরকার এমন রোগীকেও স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা থাকে। যেটা আমাদের দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্যাসেকটমি করানোর সেই প্রজেক্টের কথা মনে করিয়ে দেয়।

অসুখ বিসুখ হলে তাই পারতপক্ষে ডাক্তারের কাছে যাই না। ওমুখো না হওয়ার জন্য নিয়ম কানুন মেনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। আর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা নেয়াটা হল আমার সর্বশেষ অপশন। দরকার হলে হোমিও ঔষধ খাই। অপেক্ষাকৃত কম প্রচারওয়ালা এই চিকিৎসা পদ্ধতিটা সম্পর্কে আজেবাজে কথা প্রচলিত থাকলেও জার্মানিতে আবিষ্কৃত এবং জার্মানি /আমেরিকা /পাকিস্থান /ভারত /বাংলাদেশে তৈরী ঔষধওয়ালা এপদ্ধতিতেই বেশি আস্থা রাখি (এক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ এবং সুঁই-এর অনুপস্থিতি আমার জন্য একটা বিরাট ইস্যূ)।

দেশে ভাল অনেক ডাক্তার আছেন ... যাঁরা সত্যিকারের চিকিৎসার উদ্দেশ্য নিয়েই চিকিৎসা করেন (এই মুহুর্তে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাগ্রহণরত স্ত্রীর পাশে বসে লিখছি)। তাঁদের অসম্মান করা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। নীতিগত ভাবে আমি হোমিও চিকিৎসা নেয়ার পক্ষপাতি হলেও বেশ কিছু ডাক্তার (এলোপ্যাথি) চিরজীবনই আমার কৃতজ্ঞতা পাবেন। আমার খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা; এতে, ডাক্তার বা চিকিৎসাপদ্ধতি খারাপ - এমন কোনো জেনেরালাইজেশনে না যাওয়াই ভাল।

(৭-মার্চ-২০০৯, বিকাল ৩:৩০)

সচলায়তনে প্রকাশিত

শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০০৯

বাচ্চা ভয়ংকর ডাক্তার ভয়ংকর!

(বাঁচতে হলে জানতে হবে টাইপ কথাবার্তা আছে ভেতরে ... বেশি ছোটরা না পড়াই ভাল)

আমার বিবাহিত জীবন প্রায় ছয় বছর ছুঁই ছুঁই করছে। বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার কোন রকম অবকাশ পাই নাই এর মধ্যে। যখন বিয়ে করি তখন বউয়ের বুয়েট লাইফের ৩য় বর্ষ ... ২১তম বিসিএস-এর কল্যানে আমি কেবল গণপূর্ততে যোগদান করেছি আর ওদিকে পি.এইচ.ডি করার জন্য জাপান সরকারের বৃত্তি হবে হবে করছে। মাত্র চার মাস চাকুরী করেই একা জাপান চলে গেলাম। জাপান থাকাকালীন সময়েও গবেষণার নমুনা সংগ্রহের জন্য গড়ে প্রতি ৩ মাসে একবার করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে আমার প্রফেসর .... কাজেই দৌড়ের উপরেই ছিলাম। বাংলাদেশে ঘন ঘন আসার ফলে হোম সিকনেস কেটে যেত - এই সুবিধা থাকলেও ঘন ঘন আসার ফলে জাপানে জীবন ধারণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতা দেখা দিত -- একবার তো লম্বা ভ্রমনের কারণে ঠিক সময়মত স্বাক্ষর করতে পারিনি বলে এক মাসের বৃত্তিই পাইনি।

যা হোক, জাপানে আমার বয়স দেড় বছরের মাথায় আমার স্ত্রী তাঁর বুয়েটের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েই চলে এল ... এর আগেও দুই সেমিস্টারের মাঝের বন্ধগুলোতে ৪৫ দিন করে দুইবার বেড়িয়ে গিয়েছিলো। বাকী আড়াই বছরেও বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার চিন্তা করি নাই, কারণ আমার পি.এইচ.ডি.'র ঐ ক্রিটিকাল সময়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সাপোর্ট দিতে তো পারতামই না বরং আমারই অতিরিক্ত সাপোর্ট দরকার ছিল।

দেশে ফেরার পর স্ত্রী আড়াই বছর পড়ালেখাবিহীন কাটানোর পর এখানে বুয়েটেই মাস্টার্স করতে ভর্তি হল। সমস্ত থিওরী কোর্স শেষ .... থিসিসও শেষ হওয়ার পথে। জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি খেলে বা অন্য কোন ব্যবস্থা নিলে সেটার রাসায়নিক প্রভাব স্ত্রীর দেহে পড়ে তাই, উভয়ের সম্মতিতেই আমার বউ কোনরকম জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি নেয়নি .... ইন্টারনেটের কল্যানে স্বাভাবিক নিয়ম আর আমার দিক থেকে প্রোটেকশন নেয়া হয়েছে। এদিকে পরিচিত আত্মীয় স্বজন সবাই কথা বার্তায় ডাক্তার দেখানো, বিভিন্ন জটিলতার কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। আড়ালে হয়তো, আমাদের দুইজনের মধ্যে কে সন্তান নিতে অক্ষম সেই বিষয়েও ফিসফাস আলোচনা চলে!

বউয়ের মাস্টার্স শেষের পথে, চাকুরী করে না .... তাই অনেকটা সামাজিক চাপে বাধ্য হয়েই বাচ্চা নেব বলে ঠিক করলাম কিছুদিন আগে। পরের মাসেই বউএর স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হল। স্টিক টেস্টে গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বমি ইত্যাদি হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লো। কাজেই নিজের বাসা ছেড়ে মাসাধিককাল যাবৎ শ্বশুর মহাশয়ের অন্ন ধ্বংস করে চলেছি চোখ টিপি । অবস্থা এ্যাত বেশি খারাপ হল যে, পানি খেলেও এক মিনিটের মধ্যে বমি হয়ে বেরিয়ে আসছিলো। শরীরে পানির অভাবে প্রশ্রাব লালচে হয়ে গেল। ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেলাম। এদিকে নিজ বাসার বাইরে থাকার কারণে আমার ঘুম এবং টয়লেট ব্যহত হচ্ছে .... অনুভুতিটা সুখকর নয় .... কিন্তু বাচ্চার জন্য তো সারা জীবনেই কত কিছু ত্যাগ করতে হবে - এই চিন্তায় ওসব পাত্তা দেই না, শ্বশুর বাড়িতে আছি - এই আনন্দে মনটাকে ভরানোর চেষ্টা করি।

সারারাত আর দিন আমি বউয়ের দেখাশোনা করি, সন্ধ্যায় অফিসে যাই (বিকাল ৬টা থেকে ১০টা আমার ক্লাস নিতে হয়) ... ঐ সময় শুধু শাশুড়ি দেখাশোনা করেন। চোখের সামনে বউয়ের অমানুষিক কষ্ট দেখতেও খারাপ লাগে।

খালা শাশুড়ি ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার, নিজের ক্লিনিকও আছে .... উনি পরামর্শ দিলেন যে গ্রীনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রফেসর (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) ফারহানা দেওয়ানকে দেখাতে। দেখালাম ... রক্ত পরীক্ষা এবং আলট্রাসনোগ্রাম করালেন। তারপর অতিরিক্ত বমির জন্য একটা ট্যাবলেট আর স্বাভাবিক ফলিক এসিডের জন্য আরেকটা ট্যাবলেটের ব্যবস্থাপত্র দিলেন। ১৪ মি.মি. বাচ্চার ছবি দেখে আমরা খুশি হই ... রিপোর্ট বলে ৬-৮ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা, বাচ্চার হার্টবিট নাই; আমাদের হিসেবে যখন টেস্ট করা হয়েছে তখন বাচ্চার ভ্রুণের বয়স সর্বোচ্চ ৪ সপ্তাহ (স্বাভাবিক জন্ম নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম বলে ফার্টাইল পিরিওড সম্পর্কে ঠিক ঠাকভাবেই জানি)। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সব করলেও অবস্থা একটু ভাল হয়ে আবার খারাপ হতে থাকলো। বউ বারবার বলছে যে তাঁরটা স্পেশাল কেস যেখানে অবস্থা বেশি খারাপ থাকে এবং স্যালাইন নিতে হয়। আমরা (আমি, শাশুড়ি, শ্বশুর ইত্যাদি) এসবে পাত্তা দেই না ... কারণ এ্যাত বড় একজন প্রফেসরকে দেখিয়ে এনেছি ... পরবর্তীতে আরো দুইবার রিপোর্ট করেছি -- এরপরে কথা থাকা উচিত না ... যে ভোগে সে তো সহানুভুতি পাওয়ার জন্য অনেক কথাই বলে।

একমাসে অবস্থা আরো খারাপ হল ... প্রফেসর বললেন যে আরেকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে, বাচ্চার হার্টবিট এসেছে কি না সেটা নিশ্চিত হতে হবে -- এটাই বড় চিন্তার বিষয়। ওর খালা মেডিসিন থেকে পাশ করলেও স্পেশালাইজেশন হল মানসিক/মাদকাসক্ত চিকিৎসায় -- তাই নিজে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করেন না; কিন্তু ভাগ্নির অবস্থা এবং রিপোর্ট দেখে একটু ভ্রু কুঞ্চিত করলেন। তারপর বললেন যে তুমি একটু গ্লুকোজ খাও ... আর তোমাকে আমার ক্লিনিকের পাশেই আরেকটা ক্লিনিকে গাইনোকোলজিস্ট আছেন তাঁর সাথে পরামর্শ করি, তোমাকে একটু সেখানেও দেখাই। ইস্কাটনের সেই ক্লিনিকে দেখাতে নিয়ে গেল আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং খালা শাশুড়ি .... উনি (ডাক্তার) দেখেই হলি ফ্যামিলিতে ভর্তি করাতে বললেন। কারণ উনি মূলত হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ/হাসপাতালের ডাক্তার এবং ঐ ক্লিনিকটা রাস্তার উপরে হওয়াতে শব্দ বেশি।

ক্লাস নেয়া শেষ করে আমি সোজা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে এসে দেখি হাতে স্যালাইন লাগিয়ে ওকে শুইয়ে রেখেছে, কয়েকটা ইঞ্জেকশনও দিয়েছে স্যালাইনের ঐ পথে (ক্যানোলা)। অবাক হয়ে দেখলাম, ওর সেই অস্বস্তিগুলো নেই। গত কয়েকদিনে রক্ত, প্রস্রাব ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা গেল যে, ওর শরীরে গ্লুকোজ, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি মারাত্নক রকম কমে গেছে। বাচ্চা ঠিক আছে ... সাইজে আরেকটু বড় হয়েছে (১৭ মি.মি.) আর হার্টবিট এসেছে।

এখানে যেই জিনিষটি অবাক লাগলো যে, প্রথমবার টেস্টেই কিন্তু ওর রক্তে গ্লুকোজ কম ধরা পড়েছিল। ওটার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় আস্তে আস্তে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। আমার বউয়ের ঐ কথাটাই ঠিক ছিল .... আসলেই ওর স্পেশাল কেস ... এই অবস্থাটার নাম হাইপারেমেসিস(সম্ভবত এরকমই কিছু খটমটে নাম) আর কারণ সম্ভবত:হাইপোগ্লাইসিমিয়া, পরিসংখ্যানগত ভাবে যেটা হাজারে ৫ জন গর্ভবতীর হয়ে থাকে। এই ব্যাপারটা কেন এ্যাত বড় প্রফেসরের চোখ এড়িয়ে গেল সেটাই খালাশাশুড়িকে চিন্তিত করে তুলেছে। মামা শ্বশুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক - মামী শাশুড়ির সূত্রে ওনার ঐ অধ্যাপকের বাসায় পরিচিতি আছে, উনি বললেন সম্ভবত প্রফেসরের বাসায় কিছু ঝামেলা চলছে, তাই একটু অমনোযোগী। আমি খারাপ মানুষ তাই খারাপ চিন্তাটাই আগে মাথায় আসে .... প্রফেসর সাহেব হয়তো চেয়েছিল যে আমার বউয়ের অবস্থা খারাপ হউক... তারপর নিজেরাই সুড়সুড় করে গিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হব। কে জানে আসলে কী জন্য এমন করলো‍! এদিকে হলি ফ্যামিলিতে বেশ ভাল যত্ন নিচ্ছে .... এটা কী খালা শাশুড়ির পরিচয়ের সুবাদে, নাকি কেবিনে থাকি বলে ... নাকি হাসপাতালের গুনে সেটা বুঝতে পারি না।

সেন্ট্রাল হাসপাতালে খালা শাশুড়ির পরিচয়ের সূত্র ব্যবহার করি নাই। আর এখানকার সম্পর্কে ধারণাটা এমনিতেই ভাল না -- ব্যস্ত সড়কের উপরে অবস্থিত বলে আর সন্ধ্যায় কনসালটেন্সি রোগী/মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের ভীড়ে এটার যতদুর দেখেছি সেটা বাজারের মত সরগরম মনে হয়েছে। এছাড়া শাশুড়ির কলিগের আত্মীয়ের কাহিনীটাও সুখকর নয়। ঐ কলিগ (যার ছেলে বুয়েটে আমার রুমমেট/ক্লাসমেট ছিল ... ওর সূত্রেই শ্বশুরপক্ষের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল) এর আত্মীয়ের ছেলের একটা ফোঁড়া হয়েছিল। হাউ কাউ করে ছেলেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো। ওখানে ফোঁড়া গালিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে .. তারপর ঐ হাতটাকে গলার সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছে (হাঁড় ভাঙ্গা রোগীদের যেমন দেয়) ---- এই পর্যন্ত কাহিনীতে কোন সমস্যা ছিল না .... কিন্তু এই কাজের জন্য ১২০০০ টাকা বিলটাই সব কেমন জানি করে দিল (হ্যাঁ ভাই, I repeat: বার হাজার টাকা!!)।

বর্তমানে গত রাত বাদ দিলে (আজ শুক্রবার বলে রাতে শাশুড়ি ছিলেন) চার রাত ধরে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালটাই আমার বাড়ি ঘর। এখানেই থাকি, খাই, ঘুমাই, গোছল করি ... এখান থেকেই সন্ধ্যায় অফিসে যাই (তখন শ্বশুর/শাশুড়ি পাহারা দেয়), অফিস শেষে এখানেই ফেরৎ আসি। বউ-এর রক্তের সমস্ত প্যারামিটারগুলো স্বাভাবিক হয়ে এসেছে .... তারপরেও কিছুটা অসুস্থ আছে। আগামী আরো দুই/এক মাস এমন যাবে, তারপর স্বাভাবিকভাবেই শরীরের হরমোন লেভেল এডজাস্ট হয়ে ঠিক হয়ে যাবে। এখন শরীরের অভাবগুলো স্যালাইন দিয়ে মিটিয়ে দিচ্ছে .... এ অবস্থায় বাসায় গেলে সমস্ত যত্নের মধ্যেও আবার এরকম হবে ... ১০/১২ দিন পর আবার এসে স্যালাইন নিতে হবে --- পরিচিতের মধ্যে দেশে/বিদেশে যারা এইরকম লক্ষণের মধ্য দিয়ে গেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা তাই বলে। ব্যাপারটা অনেকটা ব্যাটারি চার্জ করার মত। একবার রক্তে পুষ্টির চার্জ দিলে এতে ১০/১২ দিন যায়।

বাবা হওয়ার পথটা মোটেও সুখকর নয় .... না জানি সামনে আরো কী কী সইতে হবে। মন খারাপ

(এই লেখাটা গতকাল কেনা HP mini 1001TU নেটবুক কম্পিউটার ব্যবহার করে হাসপাতালে বসে লেখা। ৬ই-মার্চ-২০০৯, শুক্রবার দুপুর আড়াইটা)

সচলায়তনে প্রকাশিত

রবিবার, ১ মার্চ, ২০০৯

পরাজয়ের তেতো স্বাদ মুখে

সম্প্রতি বিডিআর বিদ্রোহের নামে যা ঘটলো তাতে পরাজিত হওয়ার একটা বাজে অনুভুতি হচ্ছে।

এই ধরণের পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানোর সময় প্রথমেই একটা গ্রুপ সেন্টিমেন্টাল ইস্যূ খুঁজে বের করে, যেটা ঐ মূহুর্তে সৈন্যদের খেপিয়ে তুলতে পারে। জানা কথা গুলি চালানো শিক্ষা পাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বেশিরভাগেরই মগজ হাটুতে চলে আসে -- সুতরাং সহজেই তাঁদেরকে বিভ্রান্ত করে ভুল করানো সম্ভব হয়।

এই গ্রুপের কাজ হল তাতিয়ে তোলা, তারপর শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। আগের গ্রুপ উন্মাদনা ছড়িয়ে দিলেও পাইকারী খুন করানোর মত অবস্থা করতে পারে না। বিভ্রান্তি ছড়ায় এই বলে যে ওরা তাদের অফিসারদের মেরেছে .... আবার ওদের কাছে গিয়ে বলে এরা মেরে ফেলেছে ... সবাইকে বলে তোমাদের একজন জওয়ানকে অফিসার গুলি করেছে। আর এদিকে কিন্তু কিলার গ্রুপ ঘুরে ঘুরে খুন করতে থাকে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত। দলীয় বা মিছিলে মানুষের ব্যবহার পাল্টে যায় (মব বিহেভিয়ার বলে আলাদা শব্দই আছে) ... রক্তের বন্যায় কিছু দূর্বল চরিত্রের জওয়ানও খুনিদের মত আচরণ করতে থাকে।

আরেকটি গ্রুপ বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। চিল্লিয়ে মিডিয়াকে জানায় মনগড়া কিন্তু বেশ মর্মস্পর্শী কিছু কাহিনী। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেটা সময় পাইয়ে দেয় কসাইদের, অগোচরে নিরাপদে বের হয়ে চলে যাওয়ার জন্য। এদের আসা যাওয়া সহজ করার জন্য বাইরের দিকে এলোপাথারি গুলিও চলতে থাকে। খবর ছড়ানো হয় যে, সেনাবাহিনীর অগ্রসর ঠেকানোর উদ্দেশ্যে এই গুলি। আর্মার্ড কার বলে এক ধরণের বাহন আছে যেটা দিয়ে এই গুলির মধ্যেও চাইলে সেনারা এগোতে পারতো।

বাইরের এজেন্টরা মিছিল করায়, মিছিলের সাথে মিশে বেরিয়ে যায় আরো কিছু ঘাতক; অগ্রসরমান ট্যাঙ্ক বহরকে আটাকানোর চেষ্টা করে পাবলিক সেন্টিমেন্ট দিয়ে। বেশিরভাগের চোখকে ধুলা দিয়ে কী রকম সাবলিল ভাবে এ্যাত বড় একটা নিখুত ক্ষতি করে দিয়ে গেল দেশের সেনাবাহিনীর!

---
বুলডগকে শক্রুকে কামড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিলে সেটা মালিককের গাল চাটবে না .. তাদের দিকেও দাঁত খিচাবে .... এই বৈশিষ্টের বুলডগই দরকার। তাই বুটের লাত্থি খাওয়া ব্লাডি সিভিলিয়ান হলেও সেনাবাহিনীর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নাই। তাঁদের এ্যাতজন উন্নত স্ট্র্যাটেজিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চৌকস শীর্ষ কর্মকর্তা হারানো সেনা কর্মকান্ডে একটা বিরাট শূণ্যতার সৃষ্টি করবে নিঃসন্দেহে।

---
সেনাবাহিনী মাথাশূণ্য হলে কার লাভ? যাদের লাভ তারাই করিয়েছে ... এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নাই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে চৌকস এবং ঈর্ষনীয় একটা সেনাবাহিনীতে পরিণত হচ্ছিলো ... জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তাঁদের দক্ষ অংশগ্রহণে এটা পুরা পৃথিবীর কাছেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই সেনাবাহিনী অস্থিরতায় টালমাটাল দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনলো; ক্ষমতা দখলের বদলে, দেশকে উপহার দিলো জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ডেটাবেস। ... সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটা দেশের এ্যাতসব সফলতা কাদের চক্ষুশূল হতে পারে?

তাই এমন আক্রমণ অস্বাভাবিক বা অনাকাঙ্খিত ছিল না। কিন্তু সেটা ঠেকাতে না পেরে নিজেরা বিভ্রান্ত হয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত ছিলাম ... প্রতিপক্ষের ফাঁদে পা দিয়েছিলাম সবাই .... পারলাম না ক্ষতিটা ঠেকাতে।

---
৭১'এর ১৪ই ডিসেম্বরে দেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা না করা হলে এ্যাতদিনে হয়তো তাঁদের কাছ থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়ে দেশ হিসেবে আমরা মালয়েশিয়া/সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যেতাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ কার্যকর ক্ষতির জন্য সঠিক নীলনকশা বাস্তবায়ন করে আমাদের চরম ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছিল। ঐটি ছিল যুদ্ধে এদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

আবার, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হারিয়ে একই রকম একটা বড় ক্ষতির সম্মূখীন হল দেশ। ভবিষ্যতে এই চৌকস কর্মকর্তাদের অভাবে না জানি কতদিন বিভিন্ন ভুলের পূনঃপৌনিক বৃত্তে ঘুরপাক খেতে হবে। কত ক্ষেত্রেই না জানি অন্য দেশগুলোর চাইতে পিছিয়ে পড়বো।

আসলেই আন্তর্জাতিক কুটকৌশলের কাছে আমরা আবার পরাজিত হলাম খারাপভাবে। মুখতা তিতা হয়ে গেছে ... সাথে রক্তের লোনা স্বাদটাও রয়ে গেছে।

(একই সাথে প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

হিন্দির আগ্রাসন ও ভারতের ভাষা শহীদগণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারীকে নিয়ে কয়েকদিন আগেই একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখলাম। এ ব্যাপারে আমরা যেমন জানি, পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেনারেশনের ছেলেপেলেরা তেমন জানে না। এরকম একটা প্রতিবেদন দেখালো যেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রবীন লোকজন বললেন, তাঁদের জীবদ্দশায় এটা ঘটেছে - ভোলার প্রশ্নই উঠেনা; অপরদিকে একজন তরুণ/তরুণী বললেন যে ২১ জন মারা গিয়েছিলো (!), আরেকজন বললো যে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে মাতৃভাষার দাবীতে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলো কিন্তু এটা তাঁদের কোন পাঠ্যবইয়ে নাই। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আজ রাতে আমার শ্বশুরবাবার কাছেএকটা ব্যাপার জেনে অবাক হলাম যে বাংলা ভাষার জন্য শুধু বাংলাদেশেই পাকিস্থানী শাসকের গুলিতে বাঙালীরা প্রাণ দেয়নি। ভাষার দাবীতে ৫২'র পরেও শাসকের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে মানুষের - সেটা ভারতে। সুতরাং শুধু পাকিস্থানীরাই নয় ভারতীয় শাসকগণও একই ভাবে ভাষাকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। ইন্টারনেট ঘাটলে অনেক তথ্যই বের হয়ে আসবে। পাকিস্থানীদের দমণনীতির পাশাপাশি ভারতীয়দের দমণনীতিও সর্বসম্মুখে প্রকাশিত থাকা উচিত। উইকিপিডিয়াতে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পেলাম না।

১৯৫২ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের পট্টি শ্রীরামালু, রাজ্যের নিজের ভাষার দাবীতে অনশন করে মৃত্যূবরণ করেন।

১৯৬১ সালের ১৯শে মে আসামের কাছারহাটের শিলচরে শুধুমাত্র অসমীয়াকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে এবং বাংলাকে স্বীকৃতির দাবীতে ১১ জন পুলিশের গুলিতে মারা যান। তাঁরা হলেন: (নামগুলোর বানান ভুল হতে পারে - সেজন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী)
১. শহীদ কমলা ভট্ট্যাচার্য (বাংলা ভাষার জন্য প্রথম মহিলা শহীদ)
২. শহীদ শচীন্দ্র পাল
৩. শহীদ বীরেন্দ্র সূত্রধর
৪. শহীদ কানাই লাল নিয়োগী
৫. শহীদ চাঁদিচরণ সূত্রধর
৬. শহীদ সত্যেন্দ্র দেব
৭. শহীদ হিতেশ বিশ্বাস
৮. শহীদ কুমুদ রঞ্জন দাস
৯. শহীদ তারানি দেবনাথ
১০. শহীদ সুনীল সরকার
১১. শহীদ সুকুমার পুরকায়স্থ
এর ফলে আসাম সরকার বাংলাকে আসামের ৩টি জেলায় স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৬৫ সালে তামিলনাড়ু প্রদেশে ভাষার দাবীতে আন্দোলন হয়। সেখানে ভাষার দাবীতে দুইব্যক্তি নিজ শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন। এরপর দুইমাসব্যাপী আন্দোলনে ৬০ জনের বেশী আন্দোলনকারী পুলিশের গুলিতে মারা যান। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে দুইজন পুলিশও নিহত হন।

১৯৮০ সালে কর্ণাটকের রাষ্ট্রীয় ভাষা কান্নাড়া করার জন্য কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ভি.কে. গোকাকের নেতৃত্বাধীন কমিটি সুপারিশ করে। রাজ্যের ভেতরে এটার বিরোধীতাও হয়। তারপর সিনেমা ব্যক্তিত্ব ড. রাজকুমারের নেতৃত্বে কান্নাড়া ভাষার জন্য আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত প্রাদেশিক সরকার কান্নাড়াকে কর্ণাটকের সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৮৬ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় অসমীয়াকে একমাত্র শিক্ষাদান মাধ্যম করতে চাইলে আবার আন্দোলন হয়। করিমগঞ্জের আরোও দুই জন এর প্রতিবাদে ২১শে জুলাই, ১৯৮৬ পুলিশের হাতে শহীদ হন। এছাড়া আহত এবং পঙ্গু হয়ে যান বেশ কিছু লোক। আসামের কাছাড়, শিলচর ও হাইলাকান্দি জেলায় অসমীয়ার পাশাপাশি বাংলাও (মূলতঃ সিলেটি) স্বীকৃত ভাষা।

এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৬ই মার্চ, আসামের করিমগঞ্জে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীদের ভাষা স্বীকৃতির দাবীতে আরোও একজন শহীদ হন। উনি হলেন সুদেষ্ণা সিংহ (বুলু) - মাতৃভাষার জন্য ২য় মহিলা শহীদ।

যতদুর জানি, আসামের বর্ণমালা এবং বাংলা বর্ণমালার অক্ষরগুলো একটি অক্ষর বাদে অভিন্ন - অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ একটু আলাদা। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা মিশনের সম্মানে সিয়েরা লিওনে বাংলা সহকারী রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা।

সূত্রসমূহ:
http://www.freewebs.com/may19/

আরো সূত্র: বাংলানামা ব্লগ

উইকিপিডিয়াতে তামিল ভাষা আন্দোলন (কৃতজ্ঞতা: রাগিব হাসান)

উইকিপিডিয়াতে কর্ণাটকের ভাষা আন্দোলন (কৃতজ্ঞতা: রাগিব হাসান)

উইকিপিডিয়াতে অন্ধ্র প্রদেশের পট্টি শ্রীরামালার আন্দোলন (কৃতজ্ঞতা: দিগন্ত)

(লেখাটি ইতিপূর্বে একটু পরিবর্তিত আকারে সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিল। ওখানকার আলোচনার ভিত্তিতে আরোও তথ্য যোগ করে এখানে প্রকাশ করা হল।)

শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০০৯

ভুল চর্চার দেশ

বাংলাদেশের আয়তন আসলে কত? --- ১ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার ... আরে না না ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আয়তন আরো বাড়ছে কারণ বঙ্গোপসাগরে নাকি বিরাট চর জেগে উঠছে। আবার কেউ কেউ ভাবেন যে, চর/ভূমি জাগবে না কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমূদ্রের পানির গভীরতাও বাড়ছে।

এরকম নানা রকম তথ্যে চারপাশ ভরপুর। আমরা দিনকে দিন এতে অভ্যস্থ হয়ে উঠছি। কিন্তু কেউ কি ভাবে না যে বর্গকিলোমিটার হল ক্ষেত্রফলের একক - এটাকে আয়তন বলা হচ্ছে কেন? যত্রতত্র এরকম ভুল প্রয়োগ দেখি -- এই রিকশা যাবে নাকি? - এর একটা উদাহরণ। আর পথে প্রান্তরে ভুল বানানের ছড়াছড়িতো আছেই .... জাতিকে জাতী লিখে এর যে জাত মেরে দেয়া হচ্ছে সেদিকে কারও কি নজর আছে! কিংবা ফটোস্ট্যাট, পোস্ট, মাস্টার ইত্যাদিতে ষ-ত্ব বিধানের তোয়াক্কা না করে ষ ব্যবহারও আছে। সবচেয়ে খারাপ লাগে যে এ্যাত এ্যাত ভুল বিষয়ে মিডিয়াতে কোনরকম উচ্চবাচ্য নাই দেখে। সবাই কি ভুলের বিজ্ঞাপনমূল্যের কথা ভেবে এসব মেনে নিচ্ছে?

ভুলের বিজ্ঞাপনমূল্য: একটি মুদি দোকানের বাইরে ভুল বানান আর ব্যাকরণে দোকানের পণ্যের প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখে একজন সদাশয় ব্যক্তি দোকানদারকে বিষয়টি অবহিত করলেন এবং সঠিক বানান ও ব্যাকরণগুলোও জানিয়ে দিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেও বাইরের ওগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি দেখে ভেতরে গিয়ে রাগান্বিত ভাবে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে দোকানি জানালেন যে, এই ভুলগুলো ইচ্ছাকৃত। কারণ এই ভুল বানান-টানান দেখে ক্রেতারা ভাবে যে ভেতরের লোকটা বোকাসোকা ...কাজেই এখান থেকে সুবিধা আদায় করা যাবে। ভুল বানানে বিজ্ঞাপন দেয়ার পর থেকে তাই বিক্রি বাট্টাও বেড়ে গিয়েছে। B-)

এছাড়াও ভুলগুলোর সপক্ষে রয়েছে নানা রকম যুক্তি (!) -- ভাষা পরিবর্তনশীল, এর সাথে এ সংক্রান্ত রীতিনীতিও পরিবর্তনশীল। সুতরাং "দেশের আয়তন" বলা ঠিকই আছে। একই ভাবে, রিকশা এবং এর চালকও সমার্থক। আবার কেউ কেউ বলতে পারেন - মিয়া তোমার সমস্যা কী? হুদাই তেনা প্যাঁচাও ক্যা? পছন্দ নাইলে ফুট - এ্যাত প্যাচালের দর্কার কী?

কিছুদিন জাপানে থাকার ভাগ্য হয়েছিল (সেটা সৌভাগ্য না দূর্ভাগ্য সেই তর্কে না যাই ...)। যেখানেই গিয়েছি বিষ্মিত হয়েছিলাম ওদের সাফল্যে। আমাদের মত একই রকম হাত-পা ওয়ালা মানুষ হওয়া সত্বেও ২য় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত বিধ্বস্ত একটা জাতি কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেটা কল্পনা করতেও কষ্ট হত। জাপানে প্রবাসী কোন বাঙালি ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়া - কোথাও গিয়েই শান্তি পায় না। পৃথিবীর কোথাও জাপানের মত এ্যাত পরিচ্ছন্ন, এফিসিয়েন্ট এবং সাহায্যপ্রবণ সিস্টেম নাই বলেই শুনেছি। জাপানের এই ঈর্ষনীয় দক্ষতা বইয়ের মলাটের মত বাইরের আবরণ হতে পারে - সে ব্যাপারে অন্য কোথাও অন্য সময়ে তর্ক হতে পারে। আমার অবাক লাগতো যে ওরা পারলে আমরা পারি না কেন?

যতই দিন যায় ততই বুঝতে পারি যে জাপানিদের সাথে আমাদের এটিচ্যুডগত বিরাট তফাত রয়েছে। যারা "দ্যা লাস্ট সামুরাই" সিনেমাটা দেখেছেন তাঁরা খেয়াল করবেন যে টম ক্রুজের একটা ডায়লগ ছিল - এরা খুবই পারফেকশনিস্ট। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় সেই কথার সত্যতা খুঁজে পাই - জাপানিদের মুখে তুলে খাওয়ানো রীতির সমস্যা নিয়ে একটা ব্লগও লিখেছিলাম একসময়। ছোটবেলা থেকেই একজন জাপানী শিশুকে কষ্টসহিষ্ণু এবং পরিশ্রমী করে গড়ে তোলা হয়। তাদের মানসিকতাটাও খুব চমৎকার - এর পেছনে চারিদিকের পরিবেশেরও ভূমিকা রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ অন্য অসভ্য দেশ থেকে আগত লোকজনও ওখানে সভ্য হয়ে চলার চেষ্টা করে ... আবার সভ্য জাপানীরাও বাংলাদেশে এলে অনেকক্ষেত্রেই অসভ্যতা করে।

ওরা যেখানে একটা জিনিষ সঠিকভাবে করার জন্য বার বার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে সেখানে আমরা কোনরকমে দায়সারা গোছের কাজ করেই ক্ষান্ত দেই। একজন বাড়ির মালিক যদি ঘরের কোনো কাজ করে তাহলে অনেক যত্ন নিয়ে করে, কিন্তু একজন চাকর দায়সারা গোছের করে ... কারণ এটা তাঁর নিজের সম্পত্তি না। প্রায় দুইশ বছর ইংরেজদের গোলামী করে আমাদের এটিচ্যূডে সেই চাকরের মানসিকতা গেঁথে গেছে বলেই মনে হয়। সেজন্যই দায়সারা গোছের কথা বলি। ভুল জানা সত্বেও ঠিকটা বলার গরজ দেখাই না .... .... । এই চর্চা শুধু ভাষাতেই সীমাবদ্ধ না - এটা জাতীয় চরিত্র হয়ে গেছে। রাজনীতি বলুন, নির্মান শিল্প বলুন, ব্যাবসা বলুন ... সব জায়গাতেই এই চর্চা।

কোন পত্রিকাকেও দেখলাম না দেশের ক্ষেত্রফল লিখতে .... ইংরেজি area শব্দের বাংলা ক্ষেত্রফল কিংবা এলাকা হলেই শোভন হয়। কিন্তু আয়তন কথাটার ইংরেজি হল volume - যেটা দৈর্ঘ্য * প্রস্থ * উচ্চতা নির্দেশ করে। প্রতিনিয়ত তাই দেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৪/৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার শুনলে এটাকে দৈর্ঘ্য * প্রস্থ * ভুলের চর্চা করার মাথা নীচু আত্মমর্যাদাহীন গোলাম জাতির অভ্যাস - বলেই মনে হয়।

এই দেশটির জন্মই হয়েছিল ভাষাকে কেন্দ্র করে - দেশের নামটা দেখলে তা-ই মনে হয়। সামনেই (আগামীকাল থেকেই) ফেব্রুযারী মাস। লোক দেখানো বাংলা ভাষা প্রেম চর্চা শুরু হয়ে যাবে কাল থেকেই। কিন্তু তারপরেও কি কেউ দায়সারা ভাব বাদ দিয়ে দায়িত্ব নিয়ে সঠিক কাজ করবে?

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

Puppy linux এ বাংলা লেখা

From Computer

----------
ডিসক্লেইমার:
----------
হাতুড়ে লোকের হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে পাওয়া উপায়। এর চেয়ে সহজ/কার্যকর উপায় থাকলেও থাকতে পারে। এরকম হলে এই অধমকে দয়া করে জানাবেন।

----------
ভূমিকা
----------
scim ব্যবহার করে ৪১টি ভাষায় পাপি ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে বাংলাও আছে। তাই পাপি দিয়ে বাংলা লেখার জন্য scim ইনস্টল করতে হবে। পাশাপাশি বাংলা ফন্টও ইনস্টল (কপি-পেস্ট) করতে হবে। scim-এ ইউনিজয়, প্রভাত এবং itrans কী-বোর্ড সাপোর্ট আছে। ইউনিজয় বিজয়ের মত, itrans কেমন তা জানিনা :( । তবে পাপিতে নিজের মত কী-বোর্ড ম্যাপিং করার অপশন আছে। কেউ একজন সময় দিলেই ফোনেটিক করা সম্ভব বলে মনে হয়।

scim ইনস্টলের সময়ে ডাউনলোড করতে সময় লাগে। তাই এটা আগে শুরু করুন। ডাউনলোড হওয়ার অলস সময়ে বাংলা ফন্ট সেট করে ফেলুন।

----------
বাংলা ফন্ট কপি পেস্ট:
----------
ইতিমধ্যেই কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহার করছেন যাঁরা তাদের কাছে অবশ্যই ইউনিকোড ফন্ট আছে। তাই নতুন করে ডাউনলোড করার দরকার দেখি না। পছন্দের ফন্টগুলো (সোলাইমানিলিপি, মুক্তি, রূপালী, আদর্শলিপি, BNG ইত্যাদি) কপি করে usr\share\fonts ফোল্ডারে পেস্ট করুন। এজন্য সোর্স এবং টার্গেট দুইটাকেই দুটি ব্রাউজার উইন্ডোতে খুলুন। ctrl কী চেপে ক্লিক করে করে ফন্টগুলো নির্বাচিত করুন। তারপর ক্লিক করে ধরে টেনে এনে টার্গেট ফোল্ডারে ছেড়ে দিন। এতে একটা ছোট পপ-আপ মেনু খুলবে; কপি/মুভ ইত্যাদি অপশন সহ। কপি নির্বাচন করুন। ব্যাস্ ফন্ট আনা হয়ে গেল।

----------
scim ইনস্টল করা:
----------
নিচের যে কোন একটি ঠিকানা থেকে মোট ৫টি ফাইল ডাউনলোড করতে হবে। পাপির ডিফল্ট ডাউনলোড ম্যানেজার দিয়ে এগুলো ডাউনলোড হবে এবং ডাউনলোড ম্যানেজারের ডিফল্ট অপশন অনুযায়ী ইনস্টল হয়ে যাবে। সবগুলো ফাইলের লিংকে একবার করে ক্লিক করলেই সেগুলো ডাউনলোড ম্যানেজারে চলে আসবে। ক্লিক করার পর জিজ্ঞেস করবে এগুলো প্যাকেজ ম্যানেজার দিয়ে খুলবে কি না ... ডিফল্টটাই ঠিক আছে। প্রথম বার ঐ জিজ্ঞাসা উইন্ডোর নিচের চেকবক্সটা মার্ক করে দিন ...বাকী ৪ বার আর জিজ্ঞেস করবে না।
http://www.puppylinux.ca/members/Irihapeti
http://www/puppylinux.asia/members/Irihapeti

যে ফাইলগুলো লাগবে (ইউনিজয় কীবোর্ডের জন্য):
scim-1.4.7-i486.pet (4.7MB)
scim-bridge-0.4.15-i486.pet (352KB)
m17n-db-1.5.1-i486.pet (1.6MB)
m17n-lib-1.5.1-i486.pet (826KB)
scim-m17n-0.2.2-i486.pet (131KB)

বাংলাতে প্রভাত কীবোর্ড চাইলে সম্ভবত শুধু এই দুইটাতেই চলবে।
scim-1.4.7-i486.pet (4.7MB)
scim-tables-0.5.8-i486.pet (7.2 MB)

----------
ইনস্টলের পর বাংলাতে কাজ করানো:
----------
ইনস্টলের পরে বাংলাতে কাজ করাতে হলে X-উইন্ডো ম্যানেজারটা রিস্টার্ট করতে হবে। এজন্য Menu-->Shutdown-->Restart X server দিলেই হবে। স্টার্ট হওয়ার পরও কিন্তু কোন লক্ষণ দেখা যাবে না। লক্ষণ দেখার জন্য scim কাজ করে এমন কোন একটা প্রোগ্রাম খুলুন (যেমন abiword বা Geany)। নিচের স্ট্যাটাস বারের ডান কোনার দিকে সাউন্ড আইকনটার বাম পাশে একটা আইকন দেখতে পারবেন। এখন Ctrl+Spacebar চাপুন। দেখবেন ঐ এলাকায় SCIM এর ছোট টুলবারটা দেখা যাচ্ছে। ওটাতে ডান-ক্লিক করে Scim Setup চালিয়ে বাংলা আর ইংরেজি কীবোর্ড দুইটা বাদে বাকী সব ডিসেবল করে দিলেই ভাল।

ব্যাস বাংলা কীবোর্ড নির্বাচন করে লেখা শুরু করে দিন। স্ক্রীনশটের জন্য ৪ নং তথ্যসূত্র দেখুন।

----------
সেট আপ পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা:
----------
পাপি থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সেটা save করতে হবে। এর জন্য পেন ড্রাইভই ভাল। একটা খালি পেনড্রাইভ হলে ভাল হয়। সেখানে ডিফল্ট ভাবে ৫১২ মে.বা. আকারের ফাইল রাখার অপশন দেবে। অন্য আকারও (ছোট বা বড়) নির্বাচন করা যাবে। এই পেনড্রাইভ পরবর্তীতে লাগানো অবস্থায় পাপি বুট করলে এই সেটআপ সহ সব লোড হবে।

----------
তথ্যসূত্র:
----------
মূল সাহায্য পাতা:
১. http://www.puppylinux.org/wiki/multi-lingual-puppy/technical-how-tos

এই লেখার তথ্যসূত্র:
২. http://www.puppylinux.org/wiki/multi-lingual-puppy/technical-how-tos/setting-puppy-multi-lingual-operation-beginner-friendly-m
৩. http://www.puppylinux.org/wiki/multi-lingual-puppy/technical-how-tos/installing-fonts
৪. http://www.puppylinux.org/wiki/multi-lingual-puppy/technical-how-tos/getting-scim-working-after-its-installed

----------
উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে বাংলা লেখা যায় কিন্তু ব্রাউজারে ঠিকমত বাংলা দেখায় না। কারণটা কী - সে বিষয়ে গবেষণা করার সময় আপাতত আমার হবে না। টেকি ব্যক্তি কেউ এ বিষয়ে দৃষ্টি দিলে বাধিত হব।

ফলো আপ:
জানা গেল যে ফায়ারফক্স ৩ থেকে বাংলা ফন্ট রেন্ডারিং ঠিক থাকে। কাজেই সিমাংকি পাল্টিয়ে ফায়ারফক্স ৩ ব্রাউজার লাগাতে হবে। (তথ্যের জন্য উন্মাতাল_তারুণ্য/শাবাব কে ধন্যবাদ)
ফায়ারফক্স ৩ ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে: http://puppylinux.ca/tpp/kirk/firefox-3.0.pet

(আমাদের প্রযুক্তি ফোরামে প্রকাশিত)

শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০০৯

Puppy linux দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ

অনেক দিন ধরে পুরাতন দূর্বল মেশিনের জন্য একটা ননটেকিদের ব্যবহারযোগ্য সহজ একটা লিনাক্স খুঁজছিলাম। DSL (Damn Small Linux) আর Puppy-র নাম জানি সেই সূত্রেই। কিন্তু কিছু ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না জন্য DSL দুই/একবার ছাড়া ব্যবহার করা হয়নি তেমন ভাবে। আর বছর দেড় আগে এ্যাত ফীচার ছিল না, ওদের অনলাইন FAQ পড়ে মনে হত যে হার্ড ডিস্ক মাউন্ট করানোটা ঝামেলাজনক।

কিন্তু কয়েকদিন আগে ফেডোরা ইনফিনিটি ডে আয়োজনের আগে কোন এক ফাঁকে খুব সম্ভবত জন রাসেল বললো যে পাপি লিনাক্সে হার্ডডিক্স অটোমাউন্ট হয়। রাতেই নামিয়ে ফেললাম। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকঘন্টা এটা ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় আমি মুগ্ধ।

ভাল দিক (আমার সীমিত অভিজ্ঞতায়):
১.
মাত্র ৬৪ মে. বা. ড়্যাম-এ চলে (JWM উইন্ডো ম্যানেজার ব্যবহৃত হয়েছে)। অবশ্য বড় কোনো প্রোগ্রাম (ব্রাউজার ইত্যাদি) চালালে একটু বেশি ড়্যাম ব্যবহার করে। আমার মেশিন এ্যাত দ্রুত চলতে দেখিনি আগে।
২.
৪.১.২ ভার্সানটার আকার মাত্র ৯৪ মে.বা.!!! যদিও এটার আরো কয়েকটা ভার্সান আছে ভারি প্রোগ্রাম (পাপলেট) সহ -- একটাও ডাউনলোড করে দেখিনি। ওগুলোর আকার ৩০০-৪০০ মে.বা.।
৩.
সমস্ত ড্রাইভগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই স্ক্রীনের নিচে চলে আসে। এক ক্লিকেই মাউন্ট হয় এবং ব্রাউজারে খোলে।
৪.
প্রচলিত সমস্ত মিডিয়া ফাইল অনায়েসে চলে। আমি নিজে mp3, wma, rm, ogg ফরম্যাটের গান চালিয়ে দেখেছি। এছাড়া বেশিরভাগ ভিডিও ফাইল চালাতে পেরেছি। অর্থাৎ জরুরী মিডিয়া কোডেক এইটুকু আকারের মধ্যেই দেয়া আছে।
৫.
মাইক্রোসফট ওয়র্ড এবং এক্সেল ফাইল চলে -- যথাক্রমে abiword এবং gnumeric দিয়ে। ঐ ফাইল ফরম্যাটে সেভ করা যায়। মেনুগুলো প্রায় একই রকম। সরাসরি pdf ফরম্যাটে সেভ করতে পারে। ওপেন অফিস ফরম্যাটে সহ আরোও অনেকগুলো ফরম্যাটে সেভ করে।
৬.
ডেস্কটপের জন্য কয়েকটা ওয়ালপেপার আছে। গেমও আছে ৪টা।
৭.
ছবি ক্লিক করলেই পেইন্টের মত একটা প্রোগ্রামে খোলে। ওতে ছবি এডিট করা যায়, অনেকগুলো ইফেক্ট দেয়া যায় -- সুবিধাগুলো gthumb এর মতই মনে হল। তবে এতে একটার বেশি ছবি একবারে খোলে না। ছবি ব্রাউজ করার জন্য আরেকটা প্রোগ্রাম আছে, সেটা ছবিতে ক্লিক করলে খোলে না কিন্তু মেনু থেকে চালু করলে চমৎকার কাজ করে। পাশাপাশি ফাইল ব্রাউজারেও ছোট ও বড় - দুইটা সাইজে থাম্বনেইল ভিউ দেখা যায়।
৮.
এডবি ইলাসট্রেটর বা কোরেল ড্র'র মত একটা ভেক্টর গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম আছে inkscape lite। দারুন লাগলো।
৯.
নেট সেটআপ করা খুবই সহজ মনে হল। এক মিনিটেই নেট কানেক্ট করেছি (ফিক্সড আই.পি. - ল্যান টাইপ)। মোজিলার সিমাংকি ব্রাউজার, একটা মেইল ক্লায়েন্ট, চ্যাট ক্লায়েন্ট সহ ইন্টারনেট ব্যবহার করা বেশ সহজই মনে হল। অনেকগুলো ভাষার সাপোর্ট আছে কিন্তু বাংলা ভাষার সাপোর্ট নাই।
১০.
হার্ডওয়্যার সাপোর্ট দারুন। আমার ছোট ভাইয়ের পিসিতে স্যামসং-এর ১৯" LCD মনিটর এখন পর্যন্ত কোন লাইভ সিডি চিনতে পারে নাই, বুটও করে নাই (কালো স্ক্রীন) -- উবুন্টু/কুবুন্টু/যুবুন্টু ৮.১০, ড্রিম লিনাক্স ৩.০, লিনাক্স মিন্ট ৫.১ এবং ফেডোরা ১০ -- সব ফেইল কিন্তু পাপি এটাতে সুন্দর চলেছে। আমি পুরা টাশকি।
১১.
আরেকটা টাশকি হল: বুট করার পর সিডি বের করে সেই ড্রাইভেই অনায়াসে অন্য সিডি রাইট করলাম (ফেডোরার আই.এস.ও আর পাপির আই.এস.ও. লাইভ)। যতদুর মনে পড়ে লাইভ সিডি দিয়ে বুট করলে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত উবুন্টু আর সিডি বের করতে দেয় না।
১২.
এখন থেকে রিকভারি ডিস্ক হিসেবে ড্রিম লিনাক্স লাইভের বদলে এটা ব্যবহার করবো বলে ঠিক করেছি। (বিপদ তাড়ন পাচন)


অসুবিধা:
১.
mp4 ফরম্যাটের ভিডিও চেনেনি। ব্যাপার না ..
২.
বাংলা নাই --(
৩.
ইনস্টলের দরকার নাই বলে লিখেছে। সিডি থেকেই বুট করে, কিন্তু বের হওয়ার সময় আপনি চাইলে হার্ডডিস্কে একটা ফাইল রাখবে। (ওটাতে আপনার সেটিংস ইত্যাদি জমা হবে। কোন ড্রাইভে ফাইল রাখবেন সেটা আপনি দেখিয়ে দিতে পারবেন - ফ্যাট৩২ হলেও সমস্যা নাই। পরেরবার বুট করার সময় নিজেই ঐ ফাইল খুঁজে আপনার সেটিংস লোড করবে।)

পাপি পেজ: http://www.puppylinux.org/
ইংরেজি ম্যানুয়াল: http://www.puppylinux.org/manuals/puppy-40/english

শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০০৯

হঠাৎ লিনাক্স নিয়ে পড়লাম কেন!

কেউ কেউ আমার ইদানিং লিনাক্সে মাখামাখি দেখে বিরক্ত হতে পারেন। তাই একটু নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য এই ব্লগর ব্লগর। তবে বলে রাখা ভাল যে একজন নন-টেকি সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে এইটা একটা অন্ধের হাতি দর্শন টাইপ লেখা।

১.
২১তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে গণপূর্ততে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ওটা ছেড়ে মাস্টারি করি। প্রধাণ কারণ - অর্থ উপার্জনের জন্য ন্যায়সঙ্গত ভাবে এবং নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার রাস্তা যেখানে খোলা আছে সেখানে অন্যায় পথে আত্মা বিক্রি করার কোনো কারণ দেখি না। ন্যায়সঙ্গত ভাবেই সরকারী বেতনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেতন পাই এখানে। একমাত্র কারণ না হলেও প্রায় একই রকম কারণে লিনাক্স ব্যবহার করি: যেখানে ন্যায়সঙ্গত পথে সমস্ত সুবিধাসহ কম্পিউটিং করা যায় সেখানে পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহারের কোনো কারণ দেখি না। পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে নিজের অজান্তেই মনের গভীরে চৌর্যবৃত্তির গ্লানি প্রবেশ করে মাথা উঁচু করে কথা বলার ক্ষমতা কমে যায়।

২.
কেউ যদি আপনাকে কিছু অন্যায় সুবিধা দেয় তাহলে তাঁদের অন্যায় আব্দারও রাখতে হয়। সুবিধাদাতার অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কন্ঠ মিইয়ে আসে। একই ব্যাপার ঘটে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে। আর এই ধরণের মাথা নীচু করা মানসিকতার কারণেই বাইরের শোষক দেশগুলো আমাদের কাছে থেকে অন্যায়ভাবে সম্পদ শোষণ করার সুযোগ পাচ্ছে।

ব্যাপারটা নতুন কিছু না - কোন দলকে কব্জা করতে হলে তাঁদের মধ্যে হীনমন্যতা ঢুকিয়ে দিতে হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে (ক্রিকেট ইত্যাদি) আসা সাংবাদিকগণ যখন মজা করে বলে যে এখানে সমস্ত সফটওয়্যার সিডি এক ডলারের কম দামে পাওয়া যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে। সুন্দরভাবে হীনমন্যতা চলে আসে -- ফলে অনেকের অনেক অন্যায় আব্দারের প্রতিবাদ করা যায় না।

ব্যক্তিগত ভাবে পাইরেসী ত্যাগ করার পর থেকে মানসিকভাবে শান্তিতে আছি। হীনমন্যতাগুলো খোঁচায় না।

৩.
মানসিক ঐ শান্তি ছাড়াও অপর শান্তি হল কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত থাকার আনন্দ। অন্যেরা চারপাশে ভাইরাসে নাকানি চুবানি খাচ্ছে, আর আমি নিশ্চিন্তে আছি - ব্যাপারটা খুব এনজয় করা যায় (নিষ্ঠুরতার জিনিষটায় মানুষ কেন জানি আনন্দ পায়!)। এমন সময়গুলোতে লিনাক্সের বুট সিডি দিয়ে কলিগদের পিসিগুলো বুট করে ভাইরাসগুলোকে মুছে দেই। এতে কিছুটা উপকার হয়। আর, জরুরী ফাইলগুলো পেনড্রাইভে নিয়ে নেয়। কারণ, আই.টি. সেকশনে অভিযোগ করলে ওদের সহজ সমাধান - ফরম্যাট করে ফ্রেশ ইনস্টল!!

এখানে কয়েকজন আই.টি. নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সচল আছেন। লিনাক্সে ভাইরাসের বেইল নাই কেন - এই ব্যাপারে ওনারা ভাল বলতে পারবেন। (ভুট্টাক্ষেতের পাহারাদার মিস্তরি কোথায়?)

৪.
কেউ বলতে পারেন: মিয়া টেকি ব্যক্তি না হয়েও নিজে করো ভাল কথা, আমাদের কানের কাছে ভ্যাজর ভ্যাজর কর কেনো? এটার উত্তরের কয়েকটা দিক/ডাইমেনশন আছে:

  1. ৪.১
    একটা হল মহাপুরুষদের অনুসরন করার চেষ্টা। ওনারাও সারা জীবন অকাতরে উপদেশ বিতরণ করে গেছেন! তাছাড়া অন্যের বিরক্তি উৎপাদন করতেও উপদেশ দিতে মন্দ লাগে না চোখ টিপি । (১৯৯০ সালে আমাদের স্কুল থেকে শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে জনৈক প্রধানশিক্ষকের লেখা "উপদেশ কনিকা" বইখানি হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে আর ঐ স্কুলে যাই না শয়তানী হাসি )।
  2. ৪.২
    সেবা। হাতেম তাঈ বিলানোর জন্য টাকা পেয়েছিলো - বিলিয়েছে (পরের ধনে পোদ্দারি)। আমার বিলানোর মত অত টাকা নাই। কিন্তু অন্য একটা সম্পদ আছে - সেটা হল জ্ঞান/শিক্ষা (দয়া করে, ভাব নিচ্ছি বলে ভাববেন না)। কাজেই অন্যের উপকারের জন্য বিতরণ করতে হলে এইটাই করা যেতে পারে।
  3. ৪.৩
    প্রতিবেশি যদি চরম গরীব হয় তবে বাধ্য হয়ে সে আমার জিনিষ চুরি/ডাকাতি করতে পারে (অভাবে স্বভাব নষ্ট)। কিংবা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে। তাই নিজের স্বার্থেই এমন কাজ করা উচিত যাতে নিজের আখের গোছানোর সাথে সাথে আশেপাশের লোকজনেরও উন্নয়ন ঘটে। (আফসোসের কথা হইলো আমাদের নেতারা সেইটা বোঝে না - শুধু নিজেদের আখের গোছানোতে ব্যস্ত থাকে -- জনগণও সময়মত **মারা দিয়ে দেয়। )
    তাই শুধু নিজে পাইরেসী এবং ভাইরাস মুক্ত হলেই যে শান্তি পাব এটা ভাবি না। আশেপাশের লোকজন/বন্ধু/সহকর্মীদেরকেও এই পথে আনার চেষ্টা করি।
  4. ৪.৪
    গরুর দুধ পাইতে হলে, গরুর যত্ন করতে হয়। গরুর ফার্মে দেখবেন গরুকে কত যত্ন করে গোসল দেয়, মশারি টাঙ্গায় ঘুম পাড়ায়। আবার এইদিকে দেখবেন, বাংলাদেশের লোকদের গরিবী দুর করার জন্য অন্য দেশগুলো কত রকম ভাবে সাহায্য করে -- ঘটনা গরুর যত্ন নেয়ার মতই; ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে বাজার বজায় রাখবে কীভাবে!
    প্রায় একই রকম স্বার্থে অন্যদেরকে লিনাক্সে আসতে বলি। কারণ ব্যবহারকারী বাড়লে বিপদে সাহায্য করার লোক বাড়বে। এখন যেমন উইন্ডোজে কোন সমস্যায় পড়লে আশেপাশের কেউ না কেউ সমাধান দিতে পারে, তেমনি, লিনাক্স ব্যবহারকারী বাড়লে সমস্যা সমাধিত করার জন্য বেশি লোক পাওয়া যাবে।

সুতরাং মোটেও নিঃস্বার্থ ভাবে ভ্যাজর ভ্যাজর করি না। হাসি

৫.
বর্তমানে লিনাক্স কঠিন কোন বিষয় না। গত ৪/৫ বছর থেকে লিনাক্সের ডেভেলপারগণ সহজিয়া ডেস্কটপ বানানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। বর্তমানে লিনাক্সের যেই ডিস্ট্রিবিউশনগুলো বাজারে এসেছে সেগুলো খুবই ব্যবহার বান্ধব ।(অপারেটিং সিস্টেমের সাথে অন্য সব জরুরী সফটওয়্যার দিয়ে দেয় বলে এগুলোকে ও.এস. না বলে ডিস্ট্রিবিউশন বা সংক্ষেপে ডিস্ট্রো বলে)। প্রায় সব কাজই উইন্ডোজ বা ম্যাকের মত ক্লিক করে করা যায়। গেম খেলার দিক বাদ দিলে সব দিক দিয়েই এটা ভিস্তা/এক্স.পি.র সমতূল্য। আর ডেভেলপারগণ ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন যে, এই বছরেই এমন নতুন ভার্সন ছাড়বে যেটা ভিস্তা বা ম্যাককে ছাড়িয়ে যাবে অনেকখানি।

আরেকটা কথা জানা দরকার। আমরা না জেনেই কিন্তু লিনাক্স ব্যবহার করছি প্রতিদিন। মোবাইল ফোনগুলোর প্রায় সবগুলোই লিনাক্সে চলে - ওগুলোতে তো আমরা অসুবিধা অনুভব করি না। এছাড়া ছোট ছোট ডিজিটাল যন্ত্রপাতিগুলো সব লিনাক্সে চলে। বেশিরভাগ সুপার কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সার্ভার লিনাক্সে চলে। সুতরাং লিনাক্স উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো জিনিষ নয়। শুধুমাত্র ডেস্কটপ পিসির ক্ষেত্রটা বাকি ছিল সেই অঙ্গনে নতুন করে এসেছে।

অফিসে আমার পিসিতে লিনাক্স চলে। এখানে অনায়েসে কাজ করে কয়েকজন কলিগ নিজেদের জন্য লিনাক্স নিয়ে গেছে। আর বাসাতে দুই বছরের বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র লিনাক্স ব্যবহার করছি। কম্পিউটারে আমাদের দৈনন্দিন সমস্ত কাজই এটাতে অনায়েসে হয়ে যাচ্ছে (মেইল/ইন্টারনেট, গানশোনা, মুভি/ডিভিডি দেখা, লেখালেখি, হিসাবকিতাব সবই)। যারা প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করে তারাও লিনাক্সে বেশি শিখতে পারে, কারণ সমস্ত সোর্স কোড উন্মুক্ত।

আর -- লিনাক্স ডেস্কটপ এবং সফটওয়্যারগুলো যে আইনসঙ্গতভাবেই বিনামূল্যে - এটা আপনাদের আগে বলিনি নাকি!

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০০৯

ফেডোরা ইনফিনিটি ডে-তে আমন্ত্রণ

আবার একই রকম একটা আমন্ত্রণ দিয়ে গেলাম। ব্যক্তিগত ভাবে আমি লিনাক্স ব্যবহার করলেও এ বিষয়ে তেমন বেশি দক্ষ না। তাই দলে ভারী হইলে সুবিধা হয়, কারণ সাহায্য করার মত লোকজন পাওয়া সহজ হয়। ফালতু কথা বাদ দেই .... নিমন্ত্রণ পত্রটি দেখেন: (ফ্রী সিডি/ডিভিডি এবং বুটেবল ইউ.এস.বি. অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাপার আছে)
------------------

বাংলাদেশে ফেডোরার প্রদায়ক, আগ্রহী এবং লিনাক্স ও ওপেনসোর্সপ্রেমীদের জন্য ফেডোরা ১০ রিলিজ মোলাকাত আয়োজন করা হয়েছে।

আয়োজক: ফেডোরা বাংলাদেশ
সময়: রবিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০০৯; ১২:০০টা - বিকাল ৫:০০টা
স্থান: প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি
১১-এ, রোড-৯২, গুলশান-২, ঢাকা। (BFC / HSBC এর পাশে)
লোকেশন ম্যাপ

যোগাযোগের তথ্য
ফোন: 01613271737
ইমেইল: fedora@linux.org.bd

নিবন্ধন:
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এখানে রেজিস্ট্রেশন/নিবন্ধন করুন:
http://fedora.linux.org.bd

নিবন্ধনকৃত প্রথম ১০০ জন অংশগ্রহণকারীকে বিনামূল্যে ফেডোরা লাইভ সিডি/ডিভিডি দেয়া হবে।

এই অনুষ্ঠানটি আমাদের সফটওয়্যারের মতই বিনামূল্যে, অর্থাৎ নিবন্ধন/অংশগ্রহন করতে কোন ফী দিতে হবে না। সুতরাং, আপনার বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে নিয়ে ফেডোরা লিনাক্স সম্পর্কে জানতে চলে আসুন।

অনুষ্ঠানসূচী:
১. ফেডোরা ১০ ফীচার ট্যুর।
২. ফেডোরা ডেমন্সট্রেশন।
৩. লাইভ ইউ.এস.বি. তৈরী করা: এখানে একটা কম্পিউটারে আগ্রহীদের বুট/লাইভ ইউ.এস.বি. তৈরী করে দেয়া হবে। এজন্য আপনার পেন-ড্রাইভটি আনতে হবে (কমপক্ষে ১ গিগাবাইট আকারের)।
৪. ফেডোরা ১০ লাইভ সিডি/ডিভিডি বিতরণ।
৫. প্রশ্নোত্তর পর্ব।

বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এসোসিয়েশনের (BLUA) সহায়তায় ফেডোরা বাংলাদেশ এই ফেডোরা ইনফিনিটি ডে'র আয়োজন করেছে। অনলাইন মিডিয়া পার্টনার: মুক্ত। সহায়তায় (লজিস্টিক্স/সাপোর্ট): আমাদের প্রযুক্তি
--
সহজ (!) লোকেশন ম্যাপ যুক্ত করলাম। A অক্ষর চিহ্নিত স্থানে একটি লাল বিন্দু বসিয়ে জায়গাটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।