রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০০৮

যুদ্ধের কী দরকার!

একটা সময় যখন কোথাও হত ভাতের কষ্ট,
তেড়ে গিয়ে অন্য দেশে করতো জীবন নষ্ট।
লুট করতো গরু বাছুর, ধন-সম্পদ যত,
মারতো মানুষ, পুড়তো বাড়ী, অনেক হতাহত।

লুট করেও অনেকের হয়না অভাব শেষ,
ধরে নিয়ে যেত, দিতো দাসের বেশ।
আমেরিকার কথাই ধরো, ওবামার ঐ দাদা,
আফ্রিকাতে বাড়ি তাঁদের, দাস ছিল একদা।

ভারতের পাশে আছে, দেখো সোনার দেশ,
ইংরেজরা ছুটে এল, করলো সবই শেষ।
নিজের দেশে নাই সম্পদ, নাই তো থাকার জায়গা,
কী করা তাই, করায় হেথায় নীল চাষ আর মংগা।

করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে, সম্পদ যা ছিলো,
সবই তখন জাহাজ চেপে, ঐদেশেতে গেলো।
এদেশেরই রক্ত চুষে, চকচকে হয় দেশ,
ধন-সম্পদ সবই গেল, মরে সবাই শেষ।

এখন দেখ আবার তাঁদের, অভাব তাড়া করে,
নিজ দেশেতে নাই সম্পদ, রক্ত চক্ষু ঘোরে।
মারবে নাকি লোক আবারো? করবে কি লুটপাট?
অভাব তাঁদের একার নাকি! অন্যেরা কি বাদ?

খুনাখুনি, নীলচাষী, দাসের দিন শেষ,
তাতে কি, সমস্যা নাই, চলো বাংলাদেশ।
মোবাইল ফোনের ব্যবসা, লাভ কত জানো!
বছর শেষে শত কোটি ডলার গুনে আনো।

আরো আছে কত শত, ঠকানোর উপায়,
পেপার-খেলায় পয়সা ঢালো, কে আর ঠেকায়!
ঘুষ দিলে সবই ভুলে দিবে কাপড় তুলে,
যতই মারো, প্রতিবাদ করবে নাতো ভুলে।

তাইতো বলি, অবস্থাটা বদলেনি একটুও,
একই ভাবে যাচ্ছে সবই, একটু ভাবিও।
লোক মেরে আর লাভ কি বল! কয় টাকা আর পাবে!
তার চে ভাল এইভাবেই, সবই তাঁদের হবে।

সম্পদ চাও? এই যুগে ভাই দরকার নাই যুদ্ধ,
ব্যবসা কর ইচ্ছামত, লোকগুলো সব বুদ্ধু।
মারামারি, কাটাকাটির দিনতো কবে শেষ,
সবাই এসে শোষন করে সোনার বাংলাদেশ।

=====

কেমন করে ঠেকাবো তা, সেটাই শুধু খুঁজি,
থাকবো ঝকমকে দেশে, চোখ না খুলেই বুঝি।
আপাতত মাথায় কিছুই খেলছে নারে ভাই,
সবে মিলে মানুষের সচেতনতা বাড়াই।

বেশির ভাগই যদি বুঝি ওদের চতুরতা,
জেগে জেগে ঘুমালে কেউ. পিন দিয়ে দেব গুতা।

তারপরেতেও ঘুমানোর ভান করে থাকলে,
শত মাথা কুটলেও কভু না জাগলে ...
ধরে দেব কষে মাইর ...
লাথি, চাটি দুই চাইর
গদি থেকে নামাবো
ঘুম সব ভাঙ্গাবো।

(প্রজন্ম ফোরামসচলায়তনে প্রকাশিত)

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০০৮

হাতুড়ের লিনাক্স দর্শন এবং একটি আমন্ত্রণ

স্মৃতিচারণ:

২০০৬ সালে আমার প্রাক্তন ল্যাবের পিসি আপগ্রেড করা হইলো। আগে একটা পিসিতে উইন্ডোজ ৯৮ ছিল। ওটার ব্রাউজারটাকে ইংরেজি করে নিয়েছিলাম .... বাকী সবগুলো, এমনকি আমার ব্যবহারের জন্য দেয়া ল্যাপটপ/ডেস্কটপ সবগুলোই জাপানিতে। নতুন ভার্সনগুলোতে জাপানি থেকে ইংরেজি করার কোন অপশনই ছিল না। ওঁয়া ওঁয়া

এতে ব্রাউজ করায় সমস্যা না হলেও অনেকরকম অপশন ব্যবহার করতে পারতাম না। অফিস এবং অন্য সফটওয়্যারগুলো হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ব্যবহারের কষ্ট স্বীকার করে নিয়েছিলাম কিন্তু জাপান থেকে বাইরের পৃথিবীর জানালা ব্রাউজারে এই রকম অত্যাচার মনটা বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছিল। তাই অনেক ভেবে মাথায় বুদ্ধি আসলো যে কোন একটা ইংরেজি ব্রাউজার ডাউনলোড করলে কেমন হয়! ফায়ারফক্সের নাম জানতাম ... ওটা ফ্রী দেয় জেনে ডাউনলোড করে ফেললাম। আহ্ কি শান্তি।

ধীরে ধীরে ওপেন সোর্স এবং পাইরেসি সম্পর্কে এবং এর থেকে সম্মানের সাথে বেরিয়ে আসার এক দারুন উপায় জানতে পারলাম। হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছা আর কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে ওয়েবের নির্দেশমতো ফ্রী লিনাক্সের একটা অপারেটিং সিস্টেম (উবুন্টু) ডাউনলোড করে সিডি রাইট করে (প্রথমবার ডেটা হিসেবে বার্ণ করে ভুল করেছিলাম) তারপর সেটা দিয়ে সেকেন্ড স্ট্রীট থেকে কেনা বাসার পুরানা ডেস্কটপটা চালিয়ে দেখলাম ... কোন কিছু ইনস্টল ছাড়াই সিডি থেকে বুট করিয়ে সেটা দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করেছি কোন কিছু সেটআপ ছাড়াই। বউ দেশে বেড়াতে এসেছিল, আর মাইক্রোসফট পাইরেসি ধরার জন্য একটা কিল সুইচ নামক উইজেট ছাড়ার ঘোষনা দিল। তাই কয়েকদিন ওয়েবের ইনস্ট্রাকশন ঘেটে সাহস করে বাসায় ওটা ইনস্টল করে ফেললাম।

বাসায় কম্পিউটারে সমস্ত কাজই আরামে এবং নিশ্চিন্তে (পাইরেসি এবং ভাইরাস ফ্রী) করতে পেরে, আমি এবং পরবর্তীতে বউ .... উইন্ডোজ কী তা-ই ভুলে গিয়েছিলাম প্রায় (ল্যাপটপে জাপানি সিস্টেম ছিল)।

সে এক বিরাট কাহিনী ... সেবার উবুন্টু ৬.১০ এর রিলিজ ক্যান্ডডেট (রিলিজ ক্যান্ডিডেটের অর্থও জানতাম না) নামিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রতিশ্রুতিমত প্রতি ছয়মাসে একবার করে উবুন্টু আপগ্রেডেড ভার্সান ছেড়েছে। সাল এবং মাস মিলিয়ে ভার্সানগুলোর নম্বর সহজেই মনে রাখা যায়; যেমন ৬.১০ = ২০০৬ সালের অক্টোবরে রিলিজ। ধারাবাহিকভাবে ৭.০৪, ৭.১০, ৮.০৪ এবং সবশেষে ৮.১০ রিলিজ হল সময় মতই।

৮.১০ বাদে সবগুলো ভার্সানই ব্যবহার করেছি। আমার বাসায় সেই অক্টোবর ২০০৬ থেকে উবুন্টু চলছে (জাপানে এবং দেশে)। এর মধ্যে ডেস্কটপগুলোর সুবিধা বেড়েছে অাশ্চর্যরকম। লিনাক্সকে টেকিদের জিনিষ বলে যারা ভয়ে সরে আছে ... তারা এটার সুবিধা, গ্রাফিক্স এবং ব্যবহার বান্ধবতা (কোন রকম কমান্ড ছাড়াই, ক্লিক করে সবকিছু) দেখে রীতিমত টাশকি খাবে বলেই আমি মনে করি।

আমন্ত্রণ

আগামী ২১শে নভেম্বর, শুক্রবার বিকাল ৪টা-৭টা সময়ে বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজারস্ এলায়েন্সের উদ্যোগে উবুন্টু ৮.১০ ইন্ট্রাপিড আইবেক্সের রিলিজ পার্টি অনুষ্ঠিত হবে।

কোথায়: প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, কনফারেন্স হল (রুম ৪০১), বাসা১১/এ, রোড-৯২, গুলশান-২, ঢাকা ...... গুলশান ২নং মোড় থেকে আমেরিকান এম্বেসির/ নতুনবাজারের রাস্তায় এগোলে অ্যারোমা/বি.এফ.সি/এইচ.এস.বি.সির পাশের রাস্তায় (গুগল ম্যাপ)।

ফ্রী ডিভিডির এবং অনুষ্ঠান বিষয়ে বিস্তারিত: এখানে

আগ্রহী সকলে আমন্ত্রিত।

সংযোজন: কিছু কপি-পেস্ট দিলাম

উদ্ধৃতি

গত ৩০শে অক্টোবর জনপ্রিয় উবুন্টু লিনাক্সের সর্বশেষ সংস্করণ ৮.১০ ইন্ট্রাপিড আইবেক্স রিলিজ হয়েছে। বাংলাদেশের লিনাক্স অনুরাগীদের সাথে এই নতুন ভার্সনের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এবং সেই সাথে ব্যবহার করতে ইচ্ছুকদের হাতে উবুন্টু লিনাক্স সরবরাহের জন্য আগামী ২১শে নভেম্বর উবুন্টু ইন্ট্রাপিড আইবেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজারস্ এলায়েন্স ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

আপনি যদি লিনাক্স ব্যবহারে আগ্রহী, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারেননি, অথবা কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না তবে এই অনুষ্ঠান আপনার জন্য। উক্ত অণুষ্ঠানে উবুন্টু লিনাক্স ইনস্টল, কনফিগারেশন, মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট, নেটওয়ার্কিংসহ বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হবে। সেই সাথে আপনি উবুন্টু আইবেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে আপনার কাঙ্খিত উবুন্টু/কুবুন্টু সিডি/ডিভিডি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন নিবন্ধনের জন্য এখানে যান।
নিবন্ধন আগে আসলে আগে ভিত্তিতে। (প্রথম ১০০ জন নিবন্ধনকারী বিনামূল্যে উবুন্টু ডিভিডি পাবেন)
(আপনি যদি আসলেই আসেন কেবল তখনই নিবন্ধন করুন অযথা অন্যকে সুবিধাবঞ্চিত করবেন না)

অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয়বস্তু:

১) বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষীতে ওপেনসোর্স ও লিনাক্স
ওপেনসোর্স ও লিনাক্স কি এবং কেনো। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষীতে ওপেনসোর্স ও লিনাক্সের ভূমিকা

২) উবুন্টু লিনাক্স ইনস্টল ও ডেস্কটপ পরিচিতি
উবুন্টু লিনাক্স ইনস্টলেশন (মূলত পার্টিশনিং অংশ) এবং ডিফল্ট ডেস্কটপ পরিচিতি

৩) প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার পরিচিতি
ওপেনঅফিস পরিচিতি, গিম্প

৪) ইন্টারনেট সংযোগ ও নেটওয়ার্কিং
মডেম, মোবাইল, ল্যান অথবা pppoe সংযোগ স্থাপন

৫) হার্ডওয়্যার ডিটেকশন ও ড্রাইভার ইনস্টলেশন
স্ক্যানার, প্রিন্টার, মোবাইল, ক্যামেরা প্রভৃতি হার্ডওয়্যার সংযোজন ও পরিচালনা

৬) মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট
কোডেক ইনস্টল থেকে প্লেয়ার পরিচিতি

৭) ওয়াইন ও ক্রসওভার
ওয়াইনের মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত কিছু এ্যাপ্লিকেশন কনফিগার ও চালানো

৮) ডেস্কটপ কাস্টোমাইজেশন
বাংলা লোকালাইশেসন, থিম, কম্পিজ ফিউশন,

৯) সিস্টেম/এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সফটওয়্যার
স্যাইন্যাপটিক, টার্মিন্যালসহ কিছু এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা

১০) ভার্চুয়ালাইজেশন (ভার্চুয়াল বক্স/ভিএমওয়্যার)
ভার্চুয়াল মেশিনে উইন্ডোজ অথবা অন্য কোন ডিস্ট্রো পরিবেশন

১১) গেমস্
লিনাক্স গেমস্, ওয়াইন, ক্রসওভার লিনাক্স গেমস্

১২) স্বেচ্ছাসেবক কর্মকান্ড
কিভাবে লিনাক্স ও ওপেনসোর্সের প্রচার সম্ভব। অনুবাদ, প্রচার, লেখালেখী প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা।

শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৮

আইজাক আসিমভের ফাউন্ডেশন

আইজাক আসিমভ (১৯২০-১৯৯২) নামে আমেরিকান-ইহুদী একজন বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর ফাউন্ডেশন নামক একটা বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লিখেন। উইকিপিডিয়ায় Issac Asimov শিরোনামে খুঁজলেই এই প্রতিভাবান বিজ্ঞান লেখকের কীর্তি জানতে পারবেন। অধুনা আই.রোবট সিনেমাটাও ওনার গল্প।

ফাউন্ডেশন এত জনপ্রিয় হয় যে, এটার অনেকগুলো সিকুয়েল বেরিয়েছে। একটা সায়েন্স ফিকশন হওয়া সত্ত্বেও এটার কাহিনী (বাংলা অনুবাদ) আমার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল ভিন্ন কারণে। প্রতিটি লেখকের মনেই একটি বক্তব্য থাকে যেটা প্রকাশ করার জন্য উনি বেছে নেন একটি কাহিনী, যেখানে কাহিনীর পরতে পরতে তাঁর দর্শনটা বিকাশ লাভ করে। সায়েন্স ফিকশনের লেখক এ জন্য বেছে নেন কাল্পনিক একটা জগত, অনেকটা রূপকথার মতই। আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যেও অনেক দর্শন রূপক গল্পের আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যেটা না বুঝে অনেকেই সারফেসের অর্থ নিয়ে লম্ফঝম্ফ করেন দেখা যায়।

ফাউন্ডেশনের প্রায় ৪০০ বছর বিস্তৃত এই কাহিনীতে একদল অত্যন্ত প্রতিভাবান বিজ্ঞানীকে প্রচলিত শাসকদের বিরোধীতা করায় গ্যালাক্সীর প্রান্তে একটি বিবর্ন গ্রহে নির্বাসন দেয়া হয়। গ্রহটিতে খনিজ পদার্থের আকাল ... ফলে বিজ্ঞানীরা বাধ্য হয়েই এমন সব জিনিষপাতি আবিষ্কার করেন যেগুলো কম রিসোর্স ব্যবহার করে তৈরী হয়। যেমন- প্রচলিত দুই তলা ভবনের সমান নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের ক্ষমতা ওরা হাতের তালুতে এঁটে যায় - এমন আকারের যন্ত্রে নিয়ে আসেন।

এই গ্রহের প্রতিবেশি ৩টি গ্রহগুলোও গ্যালাক্সীর কেন্দ্র থেকে বহুদুরে হওয়াতে অনুন্নত (অজ পাড়া গাঁ)। চমৎকার কাহিনীর মধ্যে দেখা যায় যে বিজ্ঞানীদের গ্রহ থেকে অন্য গ্রহগুলোতে প্রযুক্তির পণ্য সরবরাহ করা হয় - কিন্তু বলা হয় যে ওগুলো দেবতাদের গ্রহ থেকে এসেছে ঐশ্বরিক শক্তি নিয়ে। লোকজনও সেগুলো বিশ্বাস করে, এদের নিযুক্ত ধর্মনেতারা সেই ধর্মের বাণী ছড়ায়, শাসকরা প্রযুক্তির সুবিধা একটু বেশি পায়। মাঝে মাঝে ধর্ম নেতাদের সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর জন্য দেবতাদের গ্রহে এনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একবার তাঁদের গ্রহ দখল করতে পাঠানো যুদ্ধজাহাজ (স্পেস-শাটল)ও সেটার চালক ফিরিয়ে নিয়ে উল্টা নিজেদের উপর আক্রমন করে .... কারণ সেটার চালকও ছিল দেবতাদের গ্রহে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, আর সেই স্পেসশাটলটাও দেবতাদের গ্রহেই মেরামত করে দেয়া হয়েছিল। আক্রমণের নির্দেশ পেয়ে শাটলের ক্যাপ্টেন অবাক হয়ে যায়, বিদ্রোহ করে .... যেই দেবতারা তাঁকে এ্যাত সম্মান খ্যাতি দিয়েছে, রাজা কিনা তাদেরই আক্রমণ করতে বলে! কাহিনী এগোতে থাকে। এভাবে সফলভাবে অন্য গ্রহগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে রেখে চলেছিল প্রায় একশতক।

এরপর, উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরী দূর্দান্ত দ্রব্যগুলো বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন দুরবর্তী গ্রহে এবং কেন্দ্রে অবস্থিত শাসকগোষ্ঠির কাছাকাছি জায়গাতেও বিভিন্ন রিসোর্সের বিনিময়ে বিক্রি শুরু করে। যেমন, জ্বলজ্বল করে তিনমাস জ্বলবে এমন পুতির মালার বা আংটির বিনিময়ে সোনা বা অন্য দামী খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি নিয়ে আসা শুরু হয়। এই ব্যবসায়ীরা এতই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে এক পর্যায়ে বিজ্ঞানী গ্রহের শাসনক্ষমতাও এদের হাতে চলে আসে। বিভিন্ন কুট কৌশলে এরা অন্য গ্রহ থেকে সম্পদ নিজেদের গ্রহে আনা শুরু করে। কাহিনী এমন পর্যায়েই শেষ হয়ে যায়।

এই কাহিনীতে রূপকের মাধ্যমে একটা দারুন দর্শন তুলে ধরেছেন লেখক। সেটা হল এই দুনিয়ার রাজনীতি কীভাবে চলে তার সরলীকৃত চিত্র বা মূলনীতি। পেশিশক্তি দিয়ে দখলের যুগ শেষ হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের অস্ত্র বা উপায় ছিল ধর্ম। ধর্ম আনুগত্য আনে .. ফলে অনেক বেশি অনায্য সুবিধা আদায় করা সহজ হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এটার বদলে শোষনের মূল শক্তি হয়ে যায় বাণিজ্য। কাহিনীটার দর্শনটা বুঝলে অনেকগুলো জিনিষ মনের মধ্যে ফকফকা হয়ে যায়।

আমরাও দেখে আসছি যে ধর্মকে শোষণের বা নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসতে .... ইউরোপে চার্চের ক্ষমতা ছিল অসাধারণ, যে কোন ফতোয়া চার্চ থেকে বের হলে সেটা সকলে অন্ধ বিশ্বাসে পালন করতো। শাসকরা চার্চ নিয়ন্ত্রণ করতো /করে। দ্যভিঞ্চিকোড সিনেমায় চার্চের একজন ধর্মোন্মাদ খুনি ছিল (সাদা চুল) ... ওর ভয়ংকর পতিত অবস্থা দেখলে মনে হয় বাংলাদেশর এরকম ধর্মোন্মাদ কর্মীরাও এর ব্যতিক্রম নয়।

ধর্ম মানুষকে উন্নত সত্ত্বার কাছে সারেন্ডার করতে শিখায়, বিনা প্রশ্নে কমান্ড পালন করতে শিখায়। নিয়ন্ত্রন করার জন্য এটা খুবই জরুরী। তাই বিনাবাক্য ব্যয়ে বা যৌক্তিকতার প্রশ্ন করাকে ইদানিং ধর্মে নিরূৎসাহিত করা হয়। নিরূৎসাহিত হয় জ্ঞান চর্চা। ইবনে সিনার যুগে সম্ভবত ধর্মকে নিয়ন্ত্রনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়নি। তাই তখন ছিল জ্ঞানচর্চা ... আর এখন যে কোন আবিষ্কারের পরে - ওটা ১৪০০ বছর আগেই কোরআনে বলা আছে বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা দেখা যায়; তারপর ঐ তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হলে হুজুরদের টিকিটিও দেখা যায় না। জ্ঞানচর্চা করলে যে মানুষ নত হবে না ... তাই জ্ঞান চর্চা এখন নিষিদ্ধ। কোন প্রশ্ন করা যাবে না - এটাই এখন ধর্মের চর্চা।

বিনাবাক্য ব্যয়ে নির্দেশ পালন শিখায় আর কোথায়? সেটা সেনাবাহিনীতে। তাই নিয়ন্ত্রন করতে চাইলে ধর্ম আর সেনাবাহিনীর উপর সওয়ার হওয়াই সবচেয়ে সুবিধাজনক। জানেন তো, দেশের রাজনীতিতে বেসিক এই কৌশলগুলোই সফলভাবে প্রয়োগ করে জামাত। অন্য দলগুলো যখন পেশীশক্তি আর আদর্শের কথা বলে, জামাত তখন পেশীশক্তির পাশাপাশি ধর্মের আনুগত্যও দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে অনেকদুর। তাইতো মুক্তচিন্তা নিরূৎসাহিত হয়, মওদুদী হাদিস নিয়ে প্রশ্ন করা নাজায়েজ হয়।

উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠিগুলোর মত শুধু প্রাথমিক দুটো উপায়েই খেলছে না সকলে। শেষ এবং সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো - অসম বাণিজ্য করে, IMF, WTO ইত্যাদি বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন করে কীভাবে শোষন করছে সেটা অন্য কিছু বিশ্লেষনে দেখেছেন, বিশেষ করে দিনমজুর ভাইয়ের বিশ্লেষনটা খুবই চমৎকার মনে হয়েছে।

তাই দেশের অবস্থায় ঘুরে ফিরে ফাউন্ডেশনের কাহিনীরই সফল মঞ্চায়ন বলে মনে হয়। শুধু সেখানে কামিয়াবীরা ছিল নায়ক, আর এখানে ভিলেন।

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০০৮

গুড়াদুধ রাখার জরিমানা - উদোর পিন্ডি কার ঘাড়ে?

খবরে দেখলাম/শুনলাম মেলামাইন পাওয়া গেছে এমন গুড়াদুধ রাখার দায়ে কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করেছে RAB এর ম্যাজিস্ট্রেট। প্রশ্নটা তখনই জাগে কেন?

সরকার ক্ষতিকারক দুধ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বাস্তবেও কার্যকর করতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর(নাকি বুদোর চিন্তিত ) ঘাড়ে চাপানোর মত করে ফেলছেন বলেই মনে হচ্ছে।

এর আগেও খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য জরিমানা হয়েছিল ... সেখানে আপত্তি করি নাই বরং মানসিক সমর্থন ছিল, কারণ, ক্রেতার জন্য ক্ষতিকারক জিনিষগুলো ঐ ব্যবসায়ীরাই স্বেচ্ছায় বানিয়েছিল। কাজেই ওরাই শাস্তিযোগ্য।

কিন্তু গুড়াদুধের মেলামাইনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। আমি মনে করি না যে ব্যবসায়ীরা এরকম একটা ক্ষতিকর জিনিষ জেনেশুনে তাঁদের দোকানে এনেছেন/রেখেছেন। বরং আমদানীকারক ব্যবসায়ী হয়তো জেনেশুনে কাজটি করেছে (তেজষ্ক্রিয় গুড়াদুধের পর্বটা মনে পড়ে যায়)।

বার্ড ফ্লু-র সময় আক্রান্ত মুরগী মেরে ফেলায় সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। এরকম ভাবে ব্যবসার জন্য দুধ এনে যখন দেখা গেল ঠকিয়েছে এবং ক্ষতিকারক জিনিষ গছিয়ে দিয়েছে, তখন সেটা ফেলে দিয়ে সরকারের কি উচিত না আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদেরকে যুক্তিসংগত ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং জেনেশুনে ক্ষতিকারক পদার্থ সরবরাহকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা?

দুষ্ট কিছু ব্যবসায়ী হয়তো এখান থেকেও অন্যায় সুবিধা আদায় করতে চাবেন .... গুড়োদুধ বলে চুন ফেলে দিয়ে ক্ষতিপুরণ নেবেন। কিন্তু তাই বলে যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে কি অন্য সব ব্যবসায়ী তাঁদের আর্থিক ক্ষতি বাঁচাতে অন্যের বাচ্চা মারতে দ্বিধা করবে? দেশের ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে এই পথে ঠেলে দেয়ার জন্য আসল দায়ী কে হবে?

কারো পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য পোস্ট করছি না। আবার এটা ভাবারও কোন কারণ নাই যে আমার সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ ব্যবসায়ী। একই ভাবে ঐ দুধও আমি বাজারে চাই না।

(হুট করে লেখা অগোছালো পোস্ট - এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী)

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০০৮

সহকর্মী কি সবসময় নিরপেক্ষ বিচারক?

কয়েকদিন আগে, আমি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করি সেখানের এক জুনিয়র শিক্ষক (বিবিএ) এখানেই এম.বি.এ.তে ভর্তি হতে চাইলে একাডেমিক এডভাইজার কড়া করে না করে দিয়েছেন এবং বলেছেন এটা অনৈতীক। কারণ তাঁর সহকর্মীই যখন সরাসরি শিক্ষকতা করবেন তখন পক্ষপাতিত্বের অবকাশ রয়ে যেতে পারে। ঘটনাটা বিরাট একটা নাড়া দিয়েছে মনে। ..... তাইতো ! ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি ঘটনা মনে পড়ে গেল।

বুয়েটের ভিসি ড. রশিদ সম্পর্কে একটা গল্প প্রচলিত আছে। শিক্ষকদের সভায় প্রস্তাব করা হল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এখানেও শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য ভর্তির কোটা রাখা হউক। ড. রশিদ স্যার সায় দিয়ে বলেছিলেন যে খুবই ভাল প্রস্তাব। বুয়েটের শিক্ষকদের সন্তানেরা যেহেতু বুয়েটের পড়ালেখা সম্পর্কে বাইরের অন্য যে কোন ছাত্র থেকে বেশি ওযাকিবহাল এবং ক্যাম্পাসেই থাকেন তাই তাঁদের জন্য আলাদা কোটা দরকার। এঁরা যেহেতু অন্যদের চেয়ে একটু বেশি সুবিধা পাচ্ছে তাই এদের জন্য ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আলাদা ভাবে আরো একটু কঠিন হলে সকলের জন্য ন্যায়বিচার হবে। আপনারা প্রস্তাবটা অফিসিয়ালি পেশ করুন, অবশ্যই কোটার ব্যবস্থা নেয়া হবে। .... বলাই বাহুল্য, এর পরে আর এ বিষয়ে আলোচনা এগোয়নি।

বর্তমানে যদি কোন শিক্ষকের সন্তান বা নিকট আত্মীয় ভর্তি পরীক্ষা দেয় তবে সেই শিক্ষক ঐ পরীক্ষার্থীর সিট যেখানে তার আশে পাশে অবস্থান করতে পারেন না। যদি ভুলক্রমেও সেই হলে প্রবেশ করেন তবে পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। কথিত আছে একজন সিনিয়র শিক্ষকের সন্তান বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সময়ে উনি কেবল ঐ রূমে গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন প্রশ্ন কেমন হয়েছে ..... বেচারার পরীক্ষাই বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু, সেই বুয়েটেই নিয়ম আছে যে কেউ লেকচারার হিসেবে যোগ দিলে বুয়েটেই মাস্টার্স করতে হবে। তারপর শিক্ষাছুটি নিয়ে পি.এইচ.ডি করতে যেতে পারে। অনেক ভাল শিক্ষক এটা না মেনে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে গিয়েছেন। তারপর নিরপেক্ষ জায়গায় নিজেদের প্রমাণ করে সব পড়া সফলভাবে শেষ করে এসে আবার ইন্টারভিউ দিয়ে জুনিয়রদের সাথে যোগ দিয়েছেন। বলাই বাহুল্য যে, তাঁদের পরে যোগ দিয়েও অনেকে বুয়েটেই মাস্টার্স করে তারপর শিক্ষাছুটিতে পি.এইচ.ডি করে চাকুরীতে সিনিয়র হয়ে গিয়েছেন। সমস্ত পদন্নোতি কয়েক বছর আগেই পেয়েছেন! বুদ্ধিমান কেউ কেউ অবশ্য বুয়েটে মাস্টার্স করার পরেও আবার বাইরে মাস্টার্স লিডিং টু পি.এইচ.ডি করেছেন।

আমরা কি ঠিক পথেই যাচ্ছি? আন্ডারগ্রাজুয়েটের গ্রেডিং কি ফুলপ্রুফ? যেই ছাত্র সেখানে ভাল করেছে, মাস্টার্সের ভিন্ন আঙ্গিকের মেধা যাচাইয়েও যে সে শ্রেষ্ঠ হবে সেটা কি নিশ্চিত? আসলেই কি এখানে অন্য কেউ আরও ভাল করতে পারে না? .... যিনি শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেয়েছেন তার জি.পি.এ কিন্তু যে শিক্ষকতার চাকুরী পায়নি তার চেয়ে মাত্র ০.০১ বেশি হতে পারে। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন বছরে পাশকৃত সমমানের ছাত্রদের জি.পি.এ. বিভিন্ন কারণে (!) বেশ আলাদা হতে পারে।

সহকর্মী সিনিয়র শিক্ষকগণ কি আত্মীয়ের চেয়ে অনেক বেশি নিরপেক্ষ?.... নাহ্ বুঝি না; ব্যক্তিগত কারণে অসম্ভব খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে বলে স্বীকার করেও যখন একজন লেকচারার ঐ বিষয়ে একমাত্র এ প্লাস পাওয়া ছাত্র হয় (বুয়েটের আন্ডারগ্রাজুয়েটের A+ = ৮০% কিন্তু মাস্টার্সে সেটা ৯০%) ..... তখন মনে হয় যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এডভাইজার ঠিকই বলেছিলেন।

সচলায়তনে প্রকাশিত। মন্তব্যগুলো দেখতে পারেন।

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০০৮

আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস রহস্য

Loose Change নামে আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের উপরে একটি প্রামান্য চিত্র দেখেছিলাম জাপানে থাকতে। এটা গুগল ভিডিওতে আছে; শেষ সংকলনটা প্রায় ১২৯ মিনিট লম্বা। এই প্রামান্য চিত্রতে ৯/১১ তে আমেরিকায় তথাকথিত সন্ত্রাসী হামলার তাৎক্ষনিক টেলিভিশন রিপোর্টগুলোর সাথে আছে কিছু যৌক্তিক বিশ্লেষণ। এতে বেরিয়ে আসছে যে বুশ প্রশাসনের দেয়া ব্যাখ্যা মনগড়া। দুই টাওয়ার ধ্বসে পড়ায় জেট ফুয়েলের কোন ভূমিকা নেই। ওগুলো আগে থেকে পেতে রাখা বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রশাসনের লোকজনের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। ইন্টারনেটের মত একটা মাধ্যম না থাকলে এই ঘটনাটা অতি সহজেই ধামাচাপা দিয়ে ফেলতো সংশ্লিষ্টরা।

এটাকে কনস্পিরেসি থিওরীও বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এটা বানানোর সাথে জড়িতদেরকে বিভিন্ন ভাবে নাকাল করা হচ্ছে। মুক্তচিন্তার দেশ আমেরিকার (!) প্রচারমাধ্যমে এটা কখনও প্রচার হয়নি। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি টিভি চ্যানেল এই রকম আরেকটি ভিডিও প্রচার করে যেটার নাম: 911 in plane site। এই ডিভিডিটি ঢাকার বাজারে পাওয়া যায়। এটা প্রচার করে ঐ চ্যানেলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা রাজনৈতীক রোষের মুখামুখি হন, অপরপক্ষে প্রচুর দর্শক এটা প্রচারের সাহস দেখানোর জন্য ধন্যবাদ দেয়। ( রিপোর্ট)

সংক্ষেপে ঐ বিশ্লেষণমূলক প্রামান্যগুলোর চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরি।

  • প্রথম প্রশ্ন আসে যে ঐ সময়ে বিল্ডিং-৭ কেন একই ভঙ্গিতে ভেঙ্গে পড়লো। টুইন টাওয়ার কম্পাউন্ডে মোট ৭টি বিল্ডিং ছিল। এর মধ্যে টুইন টাওয়ার দুটি এবং বিল্ডিং-৭ মোট ৩টি বিল্ডিং একই ভঙ্গিতে ভেঙ্গে পড়ে। বিল্ডিং-৭ ভেঙ্গে পড়ে আরও ৫/৬ ঘন্টা পরে। এটাতে কোন বিমান আঘাত করেনি, তাই জেট ফুয়েল বা অন্য অযুহাত খাটে না। তবে এই বিল্ডিং-এ গোয়েন্দা সংস্থার অনেকগুলো অফিস (এবং ওয়াল স্ট্রীটের বিভিন্ন কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট রক্ষিত) ছিল।
  • বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার মেকানিজমে বলা হয়েছে - অত্যন্ত তাপে স্টীল স্ট্রাকচার ফেইল করে। একটা ফ্লোর আরেকটার উপরে ভেঙ্গে পড়ে আর এভাবে ধারাবাহিকভাবে পুরা দালান ভেঙ্গে পড়ে।
    • এটার বিরূদ্ধে প্রথম যুক্তি হচ্ছে: পুরা বিল্ডিং দুইটা মোট ১১ ও ৯ সেকেন্ডে ভেঙ্গে পড়েছে। টুইন টাওয়ারের ছাদ থেকে অভিকর্ষের প্রভাবে কোন বস্তু পড়লেও সেটা মাটিতে পৌছাতে একই সময় লাগবে। অর্থাৎ পুরা ভবনটি মোটামুটি ফ্রী-ফল বা মুক্ত ভাবে পড়ার গতিতে নেমে এসেছে। এক ফ্লোর ভেঙ্গে আরেক ফ্লোরের উপরে পড়লে এবং তার প্রভাবে ভাঙ্গলে সময় আরেকটু বেশি লাগার কথা।
    • বিরূদ্ধে দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে - জেট ফুয়েলে সৃষ্ট আগুনে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে, আর স্টীল স্ট্রাকচার ভেঙ্গে পড়তে হলে কমপক্ষে ৩০০০ ডিগ্রী তাপমাত্রা দরকার (- এই ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত আছে)। এছাড়া ভেঙ্গে পড়ার সময়ও আগুন লাগা ঐ তলাগুলোর জানালাতে মানুষ সাহায্যের জন্য হাত নাড়ছিল। এত তাপমাত্রায় মানুষের বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার কথা।
    • এছাড়া ভবন দুইটা থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল, অর্থাৎ আগুনের তেজ ছিল না কারণ সঠিকভাবে জ্বলা আগুনে ধোঁয়ার রং অন্যরকম হয়।
  • ঐ তিনটি ভবন ছাড়া আগুন লেগে পৃথিবীতে কোন ভবন সম্পুর্ন ভেঙ্গে পড়েনি। (ভাল কথা ভবন-৭ কেন ভেঙ্গে পড়লো ... ওখানে তো জেট ফুয়েলের ছিটেফোটাও পড়েনি)
  • ৯/১১ এর সকাল বেলা পর্যন্ত ঐ তিন ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব যে কম্পানির হাতে ছিল, ঐ নিরাপত্তা কম্পানির মালিক কে জানেন কি? জেব বুশ - জর্জ বুশের ছোট ভাই।
  • মোট ৭টি বিল্ডিং-এর মধ্যে শুধুমাত্র ঐ তিনটিই একজন মালিকের লিজ নেয়া ছিল। এবং মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই ঐ তিনটি বিল্ডিং-এর নিরাপত্তার জন্য প্রায় সাড়ে তিন বিলিওন ডলারের ইন্সুরেন্স করা হয়েছিল যার মধ্যে সন্ত্রাসী হামলার একটা বিশেষ ধারা/অনুচ্ছেদ ছিল। বিল্ডিং ধ্বংসের পরে দুটি বিল্ডিং দুটি আলাদা সন্ত্রাসী হামলা এই দাবী দেখিয়ে আদালতের রায় পেয়ে উনি ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন।
  • ফায়ার সার্ভিসের কথোপকথনের টেপ থেকে জানা যায়, ঐ ভবনগুলোর আগুনের অংশগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী পৌঁছে গিয়েছিল এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে বলে রিপোর্ট করছিল। (- এই টেপ অনেকদিন পর আদালতের নির্দেশে অবমুক্ত করা হয়)
  • ভবন ভেঙ্গে পড়ার ভিডিওগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখলে দেখা যায় যে যেই তলা ভাঙ্গছে সেই তলা থেকে বেশ কয়েক তলা নিচের জানালাগুলো থেকে বিষ্ফোরণের ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। (ধারাবাহিক ভাবে)। এছাড়া তাৎক্ষনিক টিভি রিপোর্ট এবং অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের রিপোর্টেও ভবনের ভেতরে প্রচুর বিষ্ফোরণের কথা এবং ক্লিপ আছে - যেগুলো ঐ একবার ছাড়া আর প্রচার হয়নি!
  • এক তলার উপরে আরেক তলা ভেঙ্গে পড়লে খুব জোরে ছিটকে কিছু বাইরে আসার কথা না। কিন্তু আশে পাশের ভবনে অনেক ভারী বস্তুকে গেথে থাকতে দেখা গিয়েছে যেটা বিষ্ফোরণের শক্তি ছাড়া সম্ভব না। (ছড়িয়ে পড়ার জন্য আনুভুমিক বল আসলো কোথা থেকে)
  • ভবন ভেঙ্গে পড়ার মোট সময়, নিচের ফ্লোরগুলো থেকে ধারাবাহিক বিষ্ফোরণের ধোঁয়া এবং কেন্দ্রে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে ভেঙ্গে পড়া দেখে বোঝা যায় যে টুইন টাওয়ার এবং ভবন ৭ আগে থেকে পরিকল্পিত ভাবে পুতে রাখা বিষ্ফোরকের সাহায্যে কন্ট্রোল্ড ডিমোলিশনের মাধ্যমে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। (রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট-এ এ ধরণের ভবন ধ্বংস দেখায় মাঝে মাঝেই - শতকরা ১০০ ভাগ সাদৃশ্য)
  • এই ঘটনার ফলে লাভবান হয়েছে কারা (মোটিভ?)। এটাকে অযুহাত বানিয়ে দ্রুত জনগণের সমর্থন নিয়ে ইরাক আক্রমণ করা হয়েছে। আর যুদ্ধ মানেই যুদ্ধাস্ত্র ... আর সেগুলো কেনা হয় সমরাস্ত্র কারখানা থেকে --- ওগুলোর মালিক কে? সরকারী কোষাগারের টাকা সহজেই তাদের পকেটস্থ।
  • ক্রাইসিস সৃষ্টি করে জনগণের সমর্থন আদায়ের কৌশল অনেক পুরানা রাজনৈতীক কৌশল।
  • যেই বিমানগুলো টাওয়ারে আঘাত করেছিল তাৎক্ষনিক রিপোর্টে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে যে ওগুলোতে কোন জানালা ছিল না। প্রথম আঘাতের মাত্র একটি ভিডিও ফুটেজ আছে তাই পরিষ্কার ছবি দিয়ে সত্যতা যাচাই করা যাচ্ছে না, কিন্তু ২য় আঘাতের বিভিন্ন ক্যামেরার ভিডিও ফ্রেম বাই ফ্রেম দেখলে দেখা যায় যে ঐ বিমানটি স্বাভাবিক কোন বিমান নয়। বিমানের নিচে পেটের মধ্যে বিশাল কিছু একটা লাগানো। এই ধরণের বিমান সেনাবাহিনী রিমোটকন্ট্রোল বিমান হিসেবে ব্যবহার করে ... যার কিছু ছবি দেখলে এই দুইয়ের সাদৃশ্য বোঝা যায়।
  • দুইটি বিমান ভবনে আঘাত করার ঠিক আগ মূহুর্তে (সেকেন্ডের ভগ্নাংশ) আঘাত স্থলের ভেতরে বিষ্ফোরণের আলো দেখা যায়। সম্ভবত জেট ফুয়েল প্রজ্জ্বলন নিশ্চিত করার জন্য ওগুলো করা হয়েছে। (911 in plane site)
  • পেন্টাগণে আসলেই কোন বিমান আঘাত করেছে বলে মনে হয় না। বিস্তারিত বিশ্লেষন 911 in plane site এবং loose change এ বলা আছে।
  • সাজানো ঘটনার মনগড়া রিপোর্ট আগেই ওদের নিয়ন্ত্রনাধীন সমস্ত চ্যানেলে চলে গিয়েছিল। বিবিসির একটা রিপোর্টে রিপোর্টার বলছে ভবন-৭ ও ধ্বসে পড়েছে, কিন্তু তখনও তাঁর পেছনে ভবন-৭ দাঁড়িয়ে ছিল এবং আরও ২০ মিনিট পরে ওটা ধ্বংস হয় wink।
ডকুমেন্টারিটা দেখলে আরো অনেক কিছুই জানতে পারবেন। বিষ্ফোরণের শব্দ বিশ্লেষন দেখানো আছে -- সেটাতেও বিষ্ফোরণ করানো হয়েছে বোঝা যায়।

আমার কাছে 911 in plane site এর ডিভিডি আছে, দোকানেও পাবেন। আর loose change এবং 911 misteries -part 1 নামে দুইটা ভিডিও ডাউনলোড করেছি (প্রায় ৩০০মেগা)। কেউ চাইলে সিডি বা পেন ড্রাইভে নিতে পারেন। কিংবা ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে।

যাদের ইন্টারনেট স্পীড বেশি তাঁরা লুজ চেঞ্জ - গুগল ভিডিও থেকে দেখতে পারেন। এটা ইন্টারনেটে সর্বাধিক দেখা ভিডিওগুলোর একটি।
http://video.google.com/videoplay?docid … 8768610598

কিছু দারুন লিংক: (ফারুক ওয়াসিফ ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা)
১. http://www.garlicandgrass.org/issue6/Dave_Heller.cfm
২. http://911review.com/articles/index.html
৩. http://www.911truth.org/article.php?sto … 7011535140

এই বিষয়ে সচলায়তনে আমার পোস্টের লিংক। মন্তব্যগুলো দেখতে পারেন।

সোমবার, ১৯ মে, ২০০৮

সামান্য দূর্ঘটনা

১৯-মে-২০০৮
অন্যান্য দিনের মতই গতকাল রাত প্রায় সাড়ে ৯টায় অফিস থেকে বের হলাম। সাথে যথারীতি জুনিয়র কলিগ রনি। আমাদের বাসা একই পথে হওয়ায় সাধারণত একসাথে বাসায় ফিরি। গুলশান-২ এ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ইভনিং শিফটের ক্লাস নেয়া শেষ করে বাস পাওয়া হয় না এখন। কারণ মধুমতি নামক বাসটি ৯টার পর চলে না ... তাছাড়া কিছুদিন হল ওটার শাহবাগের রুটটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই নিয়মিত সি.এন.জি. বা ট্যাক্সি ক্যাবে আসি। অফিস থেকে ৯টায় একটা গাড়ী বের হয় ... কিন্তু এই সেমিস্টারে একদিনও ওটা পাইনি: কোন দিন ভি.সি. স্যার মিটিং-এ গেছেন, কোন দিন অন্য কোন কারণে গাড়ী যাবে না -- এই ধরণের অনিশ্চয়তা ভাল লাগে না ... তাই ফ্রী রাইডের আশা বাদ দিয়ে দিয়েছি। সপ্তাহে দুই দিন অবশ্য রূপার গাড়ীতে লিফট দেয়... কারণ ওরও একই সময়ে ক্লাস নিতে হয়।

রনি চমৎকার একজন ছেলে। আমি বুয়েটের যেই স্যারের তদারকীতে মাস্টার্স করেছিলাম (শ্রদ্ধেয় ড. আশরাফ আলী), ও সেই স্যারেরই অধীনে বি.এস.সি. থিসিস করেছে। ঈর্ষনীয় জিপিএ পেয়ে ৩য় স্থান পেয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই হয়তো বৃত্তি নিয়ে কানাডা যাবে পড়তে। গত ১লা মে বিয়ে করেছে ও।

অফিস থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তা বেশ ভাল রকম ভেজা। রনি জানালো যে বেশ জোড়ালো বৃষ্টি হয়েছে একটু আগে (আমি টেরও পাইনি!)। একটা সি.এন.জি. পেলাম ... গন্তব্য গ্রীন রোড - আমার শ্বশুড়বাড়ী; কারণ বউ ওখানে গিয়েছে এখন ওখান থেকে একসাথে বাসায় ফিরবে। রনির বাসা আজিমপুর, তাই গ্রীনরোড আর পান্থপথের মোড়ে নেমে রিকশা নিয়ে নিবে। গত কয়েকদিনের মতই আসার সময় আলাপ হচ্ছিল যে, শেষ পর্যন্ত পছন্দ করা দারুন ২টা অফার থেকে কোনটা নিলে ওর জন্য ভাল হবে। কোনটা নিলে কী কী সমস্যা হতে পারে ইত্যাদি।

বৃষ্টি হওয়ার কারণেই হয়তো রাস্তা বেশ ফাঁকা ছিল। বেশ তাড়াতাড়িই চলে এলাম। এফ.ডি.সির দিকে থেকে এসে হোটেল সোনারগাঁও-এর সামনে দিয়ে সার্ক ফোয়ারার সিগনাল পার হচ্ছি। এমন সময় পেছনে বিকট ধাক্কা ও শব্দ - মুহূর্তেই বুঝে গেলাম দূর্ঘটনায় পড়েছি। কিন্তু এর পরের ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না - আড়াইটা পল্টি খেয়ে রাস্তার মাঝখানে কাঁত হয়ে পড়ল আমাদের বাহন - সম্ভবত শাহবাগের দিক থেকে আসা কোন গাড়ী ধাক্কা দিয়েছে। রনি নিচ থেকে বলছে শামীম ভাই পা পা ... শামীম ভাই পা পা। মাথা কাজ করছিল না ... শরীরে শক্তি পাচ্ছি না, সতর্কভাবে দাঁড়ালাম যেন রনির গায়ে পাড়া না পড়ে। তারপর টেনে ভারি সি.এন.জিটা একটু তোলার চেষ্টা করলাম। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় উঠল ... ততক্ষণে রাস্তার পাশ থেকে লোকজন দৌড়ে এসে হাত লাগিয়েছে ।

সি.এন.জিটা সোজা হতেই আরেক দফা পল্টি খেলাম। কারণ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম ওটার মাঝ বরাবর। কোন এক অজানা কারণে সিটটা জায়গামতই সেট হয়েছে আবার। এক পায়ের স্যান্ডেল পাচ্ছি না ... তবে বই দুটো সিটের উপরেই পেলাম। রনি রনি করে ডাকতেই সাড়া পেলাম ... ও বাইরে দাঁড়িয়েছে ... সম্ভবত ড্রাইভার একজন আমার স্যান্ডেল পেয়ে দিয়ে গেল। তারপর দুজনেই রাস্তার পাশে ফুটপাথে গেলাম। ড্রাইভার গাড়িটাকে টেনে রাস্তার পাশে নিয়ে আসলো। ওটার পেছনে চ্যাপ্টা হয়েছে আর সামনের উইন্ডশিল্ড খুলে পড়েছে। ভাগ্য ভাল যে গ্যাসের সিলিন্ডার অক্ষত আছে।

জড়ো হওয়া লোকজনের কাছে জানলাম যে একটা মাইক্রোবাস ধাক্কা দিয়ে পালিয়েছে। ওটার নম্বরও কেউ দেখেনি। রনির বাম পায়ের গোড়ালির উপরের জোড়াটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ... সম্ভবত ওটার উপরেই সি.এন.জি'র মাঝখানের খাঁচাটা পড়েছিল। জুতা খুলে পা স্ট্রেচ করালাম (যেভাবে ক্রিকেট মাঠে খেলোয়ারদের করতে দেখি) ... রনির পায়ের ঐ জোড়াটা ফুলেছে একটু, তিনদিকে ছড়ে গেছে .. একটু রক্ত বের হয়েছে। একটা খালি মিশুক পেয়ে সেটাকে বললাম যে বাসায় পৌছে দিতে (ওখান থেকে শ্বশুড় বাড়ি ১ কি.মি. এরও কম)। রনি পা ফেলতে পারছে না ... ওকে ধরে মিশুকে তোলার সময় একলোক বলল যে গ্রীনরোড-পান্থপথের সিগনালে মাইক্রোবাসটাকে আটকিয়েছে ট্রাফিক সার্জন। আমরা মিশুকে প্রথমে ওখানে গেলাম। এক মিনিট পর আমাদের সি.এন.জি.ও চালিয়ে নিয়ে আসলো ড্রাইভার (!)। সার্জন বললো মাইক্রোবাসটা থানায় নিয়ে যাওয়া হবে ... আপনাদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটা মিউচুয়ালি মিটমাট করলে ভাল হয়। আমি শুধু ওনাকে আমার ভিজিটিং কার্ডটা দিয়ে বললাম ... আপাতত অত সময় নাই; আমার সঙ্গির মেডিকেল এসিস্টেন্স দরকার - যদি কোনরকম স্টেটমেন্টের দরকার হয় ফোন দিবেন দয়া করে। তারপর আমার শ্বশুড় বাড়ি আসলাম। রনি আসার পথে মোটামুটি এলিয়ে পড়েছিল। ওর ব্যাগ, এক-পাটি জুতা ওখানে রেখে ও আর আমি একটা রিকশায় গেলাম কমফোর্ট হাসপাতালে। সাথে আরেক রিকশায় আমার শ্বশুড়সাহেব আসলেন।

ডক্টর অন ডিউটি ৬ষ্ঠ তলাতে ... ওখানে উনি রনির পা নিজের হাটুর উপরে রেখে টিপেটুপে পরীক্ষা করে বললেন কোন হাড় ভাঙ্গেনি। কথাবার্তায় জানলাম উনি আবার আমাদের আরেক সহকর্মীর মামাতো ভাই, সেই সহকর্মী আর রনি একই কক্ষে বসে। ঔষধ লিখে দিলেন কিছু এন্টিবায়োটিক, পেইনকিলার আর ওটা সহ্য করার জন্য গ্যাস্ট্রিকের কোন একটা ট্যাবলেট। পাশাপাশি যে কোন জায়গা থেকে একটা এক্সরে করতে বললেন নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে এল প্রচন্ড ঝড়। ঔষধগুলো ওখানকার ফার্মেসি থেকে কিনে অতিকষ্টে আরেকটা মিশুক জোগাড় করা গেল .. ওটাতে আমার শ্বশুড়সাহেব রনিকে বাসায় রেখে আসলো। আমি একটা রিকশা জোগাড় করে ভিজতে ভিজতে শ্বশুড়বাড়ি। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা, তাই নিজের বাসায় আর যাওয়া হল না।

পরদিন সকালে উঠে টের পেলাম আমি কোথায় কোথায় ব্যাথা পেয়েছি। ডান হাতের কনুইয়ে একটু ছড়ে গেছে, হাতের চেটোয় পুরাতন একটা ব্যাথা মাথা চাড়া দিয়েছে - কড়ে আঙ্গুল আর অনামিকা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বাম কাঁধে আর বাম হাটুর নিচে দুইটা ঘনীভূত ব্যাথার স্পট পেলাম। ফোনে খবর পেয়েছি ওর গায়ে সামান্য জ্বর এসেছে আর সন্ধ্যায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এক্স-রে করিয়েছে -- একটা হাড়ে মৃদূ ফাটল (ফ্র্যাকচার) পেয়েছে। আজ ওর ব্যাগ, একপাটি জুতা নিয়ে অফিসে এসেছি ... হয়তো ফেরার সময় ওর বাসায় দিয়ে আসবো।

দূর্ঘটনাটা প্রতিদিন ঘটে যাওয়া অসংখ্য দূর্ঘটনার তুলনায় খুবই সামান্য হলেও অনেকদিন স্মৃতিতে তাড়া করে বেড়াবে।


(সচলায়তনে প্রকাশিত)

রবিবার, ১৮ মে, ২০০৮

ছন্দ লেখে কীভাবে?

ছোটবেলাতে ছন্দময় ছড়াগুলো পড়তে দারুন লাগতো। কবিতাগুলোতেও থাকতো ছন্দের ছড়াছড়ি। কিন্তু ইদানিং কঠিন ভাবওয়ালা কবিতাগুলো আর কাছে টানে না। আমর মনে হয়, এরকম সিরিয়াস বিষয়ে মন টানাতে হলে তো কিছু চটুল বিজ্ঞাপনের মত ছন্দের আকর্ষণ থাকতে হবে। না হলে কবিতা হারাবে বেশ কিছু পাঠক।

যা হোক, মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জায়গায় ছড়াকারদের যে কোন বিষয়ে মজার মজার ছন্দের উপস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হই ... আর ভাবি, এই রকম একটা বিষয়ে এমন ছন্দ আসলো কীভাবে। ইদানিং দেখি প্রজন্ম ফোরাম বা সচলায়তন ব্লগেও ছান্দসিক ছড়াকারের ছড়াছড়ি। দেখে মনে কোনে একটু ইচ্ছা জাগে ... ইশ্ আমিও যদি পারতাম অমন ছন্দ মিলাতে। তারপর হঠাৎ ....দেখি আমার কীবোর্ড থেকেও ছন্দময় লেখা বের হচ্ছে। আমি নিজেই তাজ্জব! যা হোক, ওগুলো কী ছাইপাশ বের হয় তা জানিনা, তবে একদিন প্রজন্ম ফোরামের এডমিন ঘোষনা করল যে ছড়িয়াল ভাইরাসে লোকজন আশংকাজনকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। বুঝলাম ... তাহলে আমার সেই লেখাগুলোও ওনার কাছে ছড়ার মত মনে হয়।

একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে, ছন্দ লিখতে বসেই কিছু কথা/শব্দ উল্টাপাল্টা করতে হয়, কিছু প্রতিশব্দ ব্যবহার করতে হয়। তাই ভাবলাম ফর্মূলাটা লিখে ফেলি, ভবিষ্যতে কখনো যদি আবার ছন্দাঘাত করতে ইচ্ছা হয় আর, সে সময় বেরসিকের মত ছন্দের কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটে তবে এই ফর্মূলার জোলাপটা খেয়ে নেব। কীভাবে ছন্দ লিখি সেটাই এই লেখায় খুঁজে পেতে চেষ্টা করবো বলে ভাবছি।

অন্ত্যমিল

প্রথম যে জিনিষটা জরুরী সেটা হল অন্ত্যমিল। এবং অন্ত্যমিলগুলোর পার্থক্য সমান হতে হলে ভাল হয়। অর্থাৎ প্রতি লাইনে বা প্রতি দুই/তিন/চার লাইনে। যেমন:

সবাই শুধু মিল খোঁজে ছড়ার এই ভবে
মিল করতেই হবে যে তা কে বলেছে কবে?

মিলের কথা যদি বলো মনে পড়ে যায়,
Meal charge ছিল বেশি Hall-এ থাকার সময়।

প্রথম দিকে শুধু এই ব্যাপারটাই লক্ষ্য রেখে ছড়া লিখতাম (লেখার মকশো করতাম)। কিন্তু ওতে কেমন জানি অপূর্ণতা রয়ে যেত ছন্দের মধ্যে।

ধ্বনিমাত্রা

দারুন ছন্দ হবে যদি প্রতিটা অন্ত্যমিলের মাঝের মোট শব্দাংশের সংখ্যা সমান হয়। ভাষাতত্ত্বে আমি বিশেষ দক্ষ নই। তাই একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা সহজে বোঝার চেষ্টা করি:

ধ্বনির কথা যদি তুমি একটু বুঝতে চাও,
ধ্বনিতত্ত্বের জোলাপটা মাথায় পুরে নাও।

প্রথম লাইনে: ধ্ব-নির্ ক-থা য-দি তু-মি এক্-টু বুঝ্-তে চাও = মোট ১৩টা ভিন্নরকম শব্দাংশ রয়েছে।
দ্বিতীয় লাইনে: ধ্ব-নি-তত্-ত্বের জো-লাপ্-টা মা-থায়্ পু-রে নাও = মোট ১২টা ভিন্নরকম শব্দাংশ রয়েছে।

এখানে শব্দাংশের সংখ্যা বাড়িয়ে ছন্দ ভাল মেলার জন্য আমি দ্বিতীয় লাইনে একটা শব্দ পাল্টিয়ে দেব। জোলাপ এর বদলে ফর্মুলা লিখব। জো-লাপ্ = ২টি শব্দাংশ; আর, ফর্-মু-লা = ৩টি শব্দাংশ। দেখি কেমন শোনায় ...

ধ্বনির কথা যদি তুমি একটু বুঝতে চাও,
ধ্বনিতত্ত্বের ফর্মুলাটা মাথায় পুরে নাও।

উপরের হিসাবটা সম্ভবত পুরাপুরি ঠিক নয়। কারণ শব্দাংশ কোনটা একটু বড় কোনটা একটু ছোট আছে। কাজেই আরও ভাল হয় যদি শব্দাংশকে উচ্চারণে প্রয়োজনীয় সময় অনুযায়ী একটা মাণ দেয়া যায়।

সুতরাং অন্ত্যমিল মেলানোয় লাইন সংখ্যার চেয়ে শব্দাংশের সংখ্যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিক ভাব ফুটানোর জন্য লাইনের মাঝে বা শেষে যতিচিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। ওগুলোতে দেয়া বিরতিটুকুও এভাবে হিসাবের মধ্যে ঢুকিয়ে তারপর সেই অনুযায়ী লিখলে ছড়াটা পড়ার সময় দারুন ছান্দসিক মনে হবে।

উচ্চারণের মাত্রা

অন্ততপক্ষে অন্ত্যমিলের শব্দটির ক্ষেত্রে উচ্চারণের মাত্রা একরকম হলে ভাল শোনায়।বল = খেলার বল হলে উচ্চারণটা হল বল্ এর মত .. অর্থাৎ ল-টার উপরে জোর কম, ব-টাই বেশি শোনা যায়। কিন্তু যদি, বল = কথা বলো এর মত হলে উচ্চারণে ল-টা বেশি প্রাধান্য পায় এবং কানে বাজে।

অন্ত্যমিল দেয়ার সময় শ্রুতিমাধুর্যের জন্য এই উচ্চারণের মিল/অমিলের ব্যাপারটাই খেয়াল করা জরুরী বলে মনে হয়। ঝড়-এর সাথে বড় অন্ত্যমিল করতে চাইলে এই ধরণের গ্যাঞ্জাম লাগবে ... যেমন:

ইদানিং মাঝে মাঝে রাতে আসে ঝড়
ভিজতে নাই মানা হয়েছি যে বড়।

কারণ ঝড়-এ 'ঝ'-টা উচ্চারণের কেন্দ্রে, 'ড়' টা কম উচ্চারিত। অপরদিকে 'বড়' তে 'ড়'-টাই উচ্চারণে প্রাধান্য পায়। তাই অন্ত্যমিলটা ভাল হয় না। কিন্তু যদি এমন হয়,

ইদানিং মাঝে মাঝে রাতে আসে ঝড়
ভিজতে করে মানা বিয়ে করার পর।

যা বলতে চাচ্ছি বুঝাতে পারলাম কি? নিজের জোলাপ হিসেবে কাজ চলবে মনে হয় .... ...


(প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ৯ মে, ২০০৮

দূঃস্বপ্ন

ছোটবেলায় নিজের দেখা
সবচে খারাপ স্বপ্ন,
ছড়ায় ছড়ায় যাই বলিয়া
নিয়ে অনেক যত্ন।

রাতের বেলা করতো ধাওয়া
বি.আর.টি.সি বাস,
লাল রঙের ঐ একতলা বাস
হতাম রে হাঁসফাঁস।

যতই ছুটি বাসটা যে আর
ছাড়েনাতো পিছু,
দৌড়ে উঠি দোতলাতে
change হয়না কিছু।

লাফায় নামি নিচতলায়
বাসও লাফায় নিচে,
আমি কোঁকাই, ওরে বাস তুই
পড়িস কেন পিছে?

দৌড়ে দৌড়ে হই একাকার
শরীর ভিজে ঘামে,
ক্লান্ত ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়
স্বপ্নটাতো থামে।

ঘুম ভাঙ্গলে স্বপ্ন ভেবে
আসে ভীষণ হাসি,
বাস ওঠে দোতলাতে
যুক্তিরে দেও ফাঁসি।

স্বপ্ন মাঝে ভাবিনি কেন
দৌড়টা থামায়,
এসব ভেবে এখনও
মাথাটা চুলকায়।

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০০৮

কেন লিখি?

ফোঁড়া কাটা সেই নাপিতের গল্পটা জানেন তো? ঐ যে, ডাক্তারদের ভাত মারতে বসেছিল ফসা ফস্ ফোঁড়া কেটে কেটে। তারপর শলাপরামর্শ করে নাপিতকে ডাক্তারিবিদ্যা শিখিয়ে দিল। কোথায় কোন শিরা, ধমনী; ভুলে কেটে গেলে বা ইনফেকশন হলে কী বিপদ হতে পারে জেনে এরপর তো নাপিত আর ক্ষুর দিয়ে ফোঁড়া কাটতে পারে না। এতে ডাক্তারদের আয় আবার স্থিতিশীল হওয়া ছাড়াও অনেকগুলি নিরাপরাধ ফোঁড়ার রোগী যে বিপদের আশংকা থেকে রক্ষা পেয়েছিল এটা নিশ্চয়ই বলার অবকাশ রাখে না।

দুইদিনের সন্যাসী ভাতকে অন্ন বললে সেটা মানুষ বাঁকা চোখে দেখবেই। কিন্তু কী করবো বলেন, ৪ বছর জাপানে থেকে আর সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, য্যুরিখ ইত্যাদি কিছুটা বেড়িয়ে এসে অনেক কিছুতেই গায়ে আগুন ধরানো জ্বালা হয়।

আমার হাতের ময়লা পকেটে ঢুকে যায় ডাস্টবিনের অপেক্ষায় আর পাশের এসি গাড়ির কাঁচ একটু নামিয়ে রাস্তাতে আইসক্রিমের কাগজ ফেলে -- কাঁহাতক ভাল লাগে?

রাস্তায় জ্যাম, ৪-ফেজের ট্রাফিক সিগনালেও ডানে মোড় নিতে পারে না রাস্তায় মানুষের জন্য। একদিন দাঁড়িয়ে দেখলাম ... ...... পথচারী পারাপারের জন্য একটা সময় সবুজ বাতিও আছে জেব্রাক্রসিং বরাবর। কিন্তু সবাই ব্যস্ত ... অত বাতি দেখার দরকার কী! ইচ্ছামত পার হবে। তাই যদি হয়, তাহলে শুধু শুধুই পথচারীদের জন্য বাতি লাগিয়েছে।

ইতর জ্যাম লাগে সবাই আগে যেতে চায় বলে, আর কেউই যেতে পারে না। তিন বা চারদিক থেকে সবাই একসাথে এগিয়ে এসে পেজগী লাগিয়ে দেয় .. ফলে কেউই যেতে পারে না। অথচ .. ধারাবাহিকভাবে সুশৃঙ্খল ভাবে গেলে হয়তো ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁর যাওয়ার সুযোগ আসতো ... এখন ১ ঘন্টা বসে থাকো।

ট্রাফিক নিয়মগুলোতো শুধু বই ছাপানো আর লাইসেন্স পরীক্ষা নেয়ার জন্য বানানো হয়নি। ওগুলো মেনে চললেই অনেক চমৎকার চলা যায়। বিশ্বাস করেন না .... তবে শুনুন, মাঝে মাঝেই ঈদের আগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের জন্য বি.ডি.আর নামে রাস্তায় ... তখন একই রাস্তা দিয়ে একই সংখ্যক গাড়ী, জ্যাম ছাড়াই কি সুন্দর চলে; ফলে বোঝা যায় যে রাস্তা কম বা ইত্যাদি অভিযোগ ধোপে টেকে না।

আরো বলবো .... নাহ্ থাক .... ..... দেখছেনই তো সব চারিদিকে।

যা হোক, দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে ভাল লাগে না। আবার, ওসব দেশের পরিবেশ প্রচন্ড ভাবে আকর্ষন করে। তাই সবাই যখন ভাবে - "আহা .. কবে ঐ দেশে যেতে পারবো, ঐ দেশের পাসপোর্ট হাতে পাবো", তখন আমার মাথায় ঘোরে - "আহা কবে ঐ দেশের মত সুন্দর দেশে পরিবর্তীত করতে পারবো, কবে অমন সুন্দর সভ্য হব।"

উপায় কী? ------ একটাই উপায় .... ... নাপিতকে ডাক্তারী শিখাতে হবে। সুতরাং যা জানি, ঝেড়ে ফেলি, লিখে ফেলি। দেখি নিরপরাধ দেশটাকে ইনফেকশন থেকে বাঁচানো যায় কি না।

এজন্য কলম দিয়ে (পড়ুন কীবোর্ড থেকে) সাহিত্য বের হয় না (ঐ পদের এন্টেনা বিল্ট-ইন নাই, ইনস্টলও করা হয় নাই) ... বের হয় নিরস সব পোস্ট। তবুও নাপিতে একটু ডাক্তারি শিখুক।


(সচলায়তনে প্রকাশিত)

শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০০৮

CNG ভাড়া কতটা বাড়বে

সি.এন.জি. গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু নতুন ভাড়ার তালিকা আসে নি। কাজেই এই সুযোগে ট্যাক্সিচালকগণ ভাড়া নিয়ে হাইকোর্ট দেখাতে পারে। তাই একটু ছোট্ট হিসাব করে দেখি, এই অবস্থায় ভাড়া কতটুকু বেশি দেয়া/চাওয়া যুক্তিসম্মত।

----
একজন সি.এন.জি. চালকের দিনের মোট আয় কত হতে পারে?
আমার ধারণা সেটা ১২০০ টাকার বেশি না।

আর খরচ:

  • সি.এন.জি. মালিক = ৭৫০ টাকা।
  • নিজের লাভ = ২০০ টাকা
  • খাওয়া ও ট্রাফিকপুলিশ = ১৫০টাকা
  • গ্যাস খরচ = ১০০ টাকা (সম্ভবত এটা ওভার এস্টিমেট)

কাজেই এখন শুধু খরচ বাড়ছে গ্যাসের ১০০ --> ২০০টাকা।

সুতরাং বাকী সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে তার আয় করতে হবে ১৩০০টাকা।

এখন এই অতিরিক্ত ১০০ টাকা উপার্জনের জন্য প্রতি কি.মি-এ ভাড়া কত বাড়বে জানতে হলে, প্রতিদিন সে কত কি.মি. চলে সেটা বের করতে হবে।

(ঐকিক নিয়ম জিন্দাবাদ)
আগে ৫.৫০ টাকায় আয় করতে চলতো ১ কি.মি.
সুতরাং ১২০০ টাকা আয় করতে চলতো = ১২০০/৫.৫ = ২১৮.২ কি.মি।

ফালতু ড্রাইভিং সহ সেটা হয়তো ২৫০ কি.মি.।

যা হোক এখন যাত্রী নিয়ে সেই ২১৮ কি.মি চালিয়ে অতিরিক্ত ১০০ টাকা উঠাতে হলে, প্রতি কি.মি.-এ ৫০ পয়সা করে বেশি নিলেই সেটা যথেষ্ট (১০৯ টাকা)।

সুতরাং, ভাড়া বাড়লে কি.মি. প্রতি ৫.৫০টাকা থেকে বেড়ে ৬.০০টাকা হলেই যথেষ্ট।

হিসাব তো বুঝলাম। ... কিন্তু তারপর .... .... ?

========================

সিরিয়াসলি ভাবছিলাম যে নিজের ব্যবহারের জন্য সি.এন.জি. ত্রিচক্রযান কিনবো কি না। ততোধিক সিরিয়াসলি ভাবে পরিচিত সকলেই উড়িয়ে দিল আইডিয়াটা।

অথচ, এটা মাইলেজের হিসেবে বেশ সাশ্রয়ী, মোটরসাইকেলের মত দুষ্ট না, চুরি যাওয়ার মত তেমন কোন অংশ নাই (যেই ভয়ে অন্য গাড়ি নিজে চালানোর জন্য কেনার কথা মাথা থেকে আউট করে দিয়েছি)। সামান্য একটু কেরামতি করলেই বডির ওজনটা হালকা রেখেই ঝড় বৃষ্টির ছাট থেকে রক্ষা পাওয়ার মত করা যাবে। গরীবের আবার এসি'র কি দরকার।

আইডিয়াটা ছিল অনেকটা Twike কিংবা CityEI এর মত। কিন্তু সকলে আমার চেয়ে তথা ইউরোপীয়দের চেয়ে বেশি বোঝে ... ... কী আর করা।

ইদানিং দেখি রাস্তায় ইলেক্ট্রিক রিকশা চলছে ... ...

শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০০৮

সি.এন.জি.র মূল্যবৃদ্ধি, সাবওয়ের পরিকল্পনা ... ধোঁয়া ওড়া মাথার চান্দি

সরকার সি.এন.জি.'র দাম বাড়িয়েছে আজ থেকে। কারো জানা না থাকলে আজকের কোন দৈনিকে চোখ বুলালেই বিস্তারিত জানবেন। আমার তো সরকারী বাহন নাই, তাই ভাড়া গাড়িতেই যাতায়ত করি ..

কী হবে:

আমার বাসা (ধানমন্ডি ল্যাব এইডের পেছনে সেন্ট্রাল রোড) থেকে অফিস (গুলশান ২, অ্যারোমা'র পাশে) যেতে সবুজ সি.এন.জি.তে মিটারে সাধারণত ৬০-৭০ টাকা উঠতো। বেশি ভীড় থাকলে ৯০ টাকা পর্যন্তও উঠেছে। মিশুকওয়ালারা সবসময়ই ৮০-১০০ টাকা ভাড়া চাইতো ... মিটার -- আবার জিগায়। তাই সাশ্রয় এবং আরামের জন্য সবুজ সি.এন.জি কিংবা কালো/নীল ক্যাবে যাতায়ত করতাম।

এখন মনে হচ্ছে আবার মিশুকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তা' নাহলে বাস। একান্তই নিরূপায় হলে শয়তানের দ্বিচক্রযান। চোর-ছ্যাচ্চোড়ের স্বর্গভূমি ঢাকাতে চার চাকার জিনিষ কেনার এবং চালানোর যোগ্যতা এখনও হয় নাই।

সাবওয়ে .. হেঃ হেঃ

পৃথিবীতে আধুনিক কোন শহর ট্রেন/ট্রাম, সাবওয়ে বা স্কাইট্রেন ছাড়া আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো কেউ শখ করে বানায়নি। যানজট কমাতে এবং খরচের দিক দিয়ে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা বলেই প্রারম্ভিক বিশাল খরচ বহন করে এগুলো বানানো হয়। আমাদেরও যানজটক্লিষ্ট ঢাকা শহরেও mass public transport অর্থাৎ ট্রেন দরকার। আমাদের সরকার এদিকে এ্যাতদিন নজর দেয়নি মূলত দুটো কারণে।

  • শর্ষেতে ভুত আছে। সরকারি অনেক আমলা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাস/ট্রাক/সি.এন.জি/টেম্পু/লেগুনা ইত্যাদির ব্যাবসা রমরমা থাকবে না। কাজেই জনগন জাহান্নামে যাউক অসুবিধা নাই ... ব্যাবসা বলে কথা। (রেলওয়েতে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছে এই কথা ... অবশ্য সেটা আন্তনগর লাইনে মালগাড়ি চালানোর প্রসঙ্গে: প্রতিটি কার্গো ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসলে নেট লাভ হয় আড়াই লক্ষ টাকা। তাই সেটা বন্ধ করে শুধুমাত্র লাভহীন যাত্রীসেবা দিচ্ছে ... ট্রাক ব্যাবসাতো আর লাটে উঠতে দেয়া যায় না)
  • মাথামোটা এবং নির্বোধ কিছু গর্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় শিকড় গেড়ে বসেছে। বিশেষজ্ঞরা হাজার মাথা কুটলেও সহজ সমাধান ওদের মাথায় ঢুকবে না। আর ঢুকলেও পরবর্তী কার্যক্রম চালানোর দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস নাই ... শুধু শুধু আবার মানুষের হাস্যষ্পদ হওয়ার চেয়ে যা আছে তাই ভাল।
ইদানিং পত্রিকায় দেখলাম সরকার বলেছে যে, ঢাকা শহরে যানজট কমানোর জন্য পরিকল্পনা আছে ট্রেনের তবে সেটা মাটির তলা দিয়ে হবে। খবরটা পড়ে আমার ক্ষুদ্র অনভিজ্ঞ মস্তিষ্কে খটাশ করে একটা পোকা কামড় দিল ... সরকারের কি উচ্চতাভীতি আছে যে স্কাইট্রেন না করে মাটির তলার সাবওয়ে পছন্দ?!

স্কাইট্রেন না হয়ে সাবওয়ে হলে কী হবে ...
  • যতদুর জানি টানেল-কাটার বলে যন্ত্র দেশের নির্মান শিল্পের ঠিকাদারদের কাছে অজানা বস্তু। সুতরাং আবার চলবে খুড়াখুড়ি। আগামী ১০ বছরের জন্য খানাখন্দকের কাঁদা-ধুলোয় চলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে জনগণকে।
  • বন্যাপ্রবণ এলাকায় মাঝে মাঝেই লঞ্চডুবির মত বানের পানিতে ডুবে ট্রেনযাত্রীদের প্রাণ যাবে .... এটা অসম্ভব কিছু না।
  • যেহেতু স্কাইট্রেনের চেয়ে সাবওয়েতে খরচ বেশি কাজেই কর্তাব্যক্তিদের পকেটে লাভের ভাগ বাড়বে।
  • বিদ্যূৎ সংকটের কারণে মাঝে মাঝেই কবরে থাকার অনুভুতি হবে। ভুয়া মোল্লাদের দাপট বাড়ার একটা সম্ভাবনা আছে।
স্কাইট্রেনকে কেন সাবওয়ের চেয়ে পছন্দনীয় মনে হয়:
  • আগেই বলেছি, স্কাইট্রেনের অবকাঠামোগত খরচ সাবওয়ের চেয়ে যথেষ্ট কম।
  • স্কাইট্রেনের কাঠামোতে কিছুটা বিদ্যূৎ কম খরচ হবে। কারণ দিনের বেলায় বাইরের আলো স্টেশনগুলোকে আলোকিত করে রাখবে অনেকাংশে।
  • স্কাইট্রেন করার জন্য অবকাঠামো প্রযুক্তি দেশের নির্মাণশিল্পের আয়ত্বে। যেখানে নদীর পানির মধ্যে ব্রীজ করে, সেখানে শুকনার উপরে উচু অবকাঠামো করা কি অদেখা টানেল-প্রযুক্তির চেয়ে অধিকতর কঠিন মনে হয়?
আসল কারণ সম্ভবত, অবাস্তব ও বেকুবি সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে প্যাঁচে ফেলা যেন, সেই জনদরদী দেশনেতা ও আমলা মালিকানাধীন পরিবহন বাণিজ্য বাঁধাগ্রস্থ না হয়।

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০০৮

নববর্ষে নন্দন পার্কে ধরা খাওয়া

আজ ২রা বৈশাখ ১৪১৫। (১৫ই এপ্রিল ২০০৮) .... শুভ নববর্ষে আমি আর আমার স্ত্রী পরিকল্পনা করেছিলাম যে ঢাকার অদুরে অবস্থিত নন্দন পার্কে বেড়াতে যাব। গত সপ্তাহের বৃহষ্পতিবারের পত্রিকায় নন্দন পার্কে নববর্ষ উপলক্ষে কী কী জানি সঙ্গিতানুষ্ঠান হবে তার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। বাস কোত্থেকে ছাড়ে সেটাও দেয়া ছিল। ৩১শে চৈত্রের দিন বিজ্ঞাপনের ফোন নম্বরে ফোন করে জানলাম যে নন্দন পার্ক খুলবে সকাল ১০টায়; অনুষ্ঠান শুরু হবে ১২:৩০শে; চলবে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত; প্রতি ১০ মিনিট পর পর নন্দন পার্কগামী বাস পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে নন্দন পার্কের কোন ওয়েবসাইট খুঁজে পেলাম না, কিন্তু একজনের একটা ব্লগে এটার উপরে সচিত্র বর্ণনাও পেয়ে গেলাম।

যা হোক, বিজ্ঞাপনে দেয়া বাস ছাড়ার ঠিকানাগুলো থেকে বাসার কাছে কলাবাগানটাকেই সবচেয়ে সুবিধাজনক মনে হল। তাই নববর্ষের সকাল ১০টার দিকে রিক্সায় চড়ে বসলাম কলাবাগান যাওয়ার জন্য। ধানমন্ডি ১০নং এর মাথায় নামলেই কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড, কিন্তু ভুল করে ধানমন্ডি ৩২ (নতুন ১১) নং-এ চলে গিয়েছিলাম। আজকে সরকারী ছুটি; রাস্তায়, বিশেষ করে ধানমন্ডি লেকের আশে পাশে উৎসবমুখর পরিবেশে, গরমে ক্লান্ত সুবেশী মানুষ গিজগিজ করছে। মিরপুর রোডে আজকে দেখি রিক্সা চলতে দিচ্ছে, তাই মেইন রাস্তা ধরেই আবার কলাবাগান ফেরত আসলাম। বউ তার শাড়ী সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে, তারপরও ওভারব্রীজ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে বাস কাউন্টারগুলোর দিকে গেলাম। ওখানে একটু জিজ্ঞেস করতেই জানলাম, নন্দনের বাস এখান থেকে ছাড়ে না, আসাদ গেট থেকে ছাড়ে! নন্দনের ফোন নম্বরে ফোন করে সেটা নিশ্চিত হলাম এবং একটা রিক্সা দিয়ে প্রধান সড়ক দিয়েই আসাদ গেট আসলাম।

ভেবেছিলাম হানিফ নামক বাসে যাব। কিন্তু সুপার সার্ভিস নামক বাস আগে আসাতে ওটারই টিকিট কেটে উঠলাম (৩০টাকা/প্রতিজন)। বাসে ভীষন ভীড় ছিল; ভীড়ে কোনমতে বউ দাড়ালো, আমি ওর পাশেই বাসের সিড়িতে। সম্ভবত শ্যামলী পর্যন্ত আসার পর পাশে বসা একজন যাত্রী নামাতে ওখানে ও বসল, আমি পাশে দাঁড়িয়ে সাভার পর্যন্ত। সাভার থেকে ওর পাশেই বসার জায়গা পেলাম, কিন্তু ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় যানজটের কারণে আটকে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। এর পর সামনের সিটে বসা মহিলা যাত্রী জানালা দিয়ে বমি করলেন, কিছু অংশ হয়ত উড়ে এসে আমাদের গায়েও পড়ল নাকি! পেছনের বাচ্চা তার আগে বাসের ভেতরে হাটার জায়গাতেই বমি করেছে। যা হোক, অবশেষে দুপুর ১২টার দিকে নন্দন পার্কে পৌঁছালাম।

পার্কিংএর জায়গাটা ধুলি ধুসরিত ... বিভিন্ন প্রকার গাড়ি প্রবেশ করাতে আমাদের ধুলার গোসল (মুরগী যেভাবে বালু ছিটিয়ে করে) হয়ে গেল একদফা। টিকেট কাউন্টারে দারুন ভীড়। সারিবদ্ধভাবে টিকিট কিনতে দাঁড়িয়ে পরলাম। কিছু ভদ্রবেশী লোক লাইন ছাড়াই পাশ থেকে টিকিট কেনার জন্য কাউন্টারের দিকে বিরক্তিকর ভাবে হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যা হোক কোন রকম গুতাগুতি ছাড়াই প্রায় কাউন্টারের কাছে পৌছে গেলাম ... আমার সামনে মাত্র একজন লোক, পেছনে অনেক - এমন সময়ে টিকিট বিক্রয়কারী কর্মী সবগুটিয়ে চলে গেলেন - কাস্টমার কেয়ারের প্রথম নমুনা পেলাম। যা হোক পাশের লাইনের কাউন্টারে তখন আমরাও অভদ্রের মত হাত বাড়িয়ে ঐ লাইনের অন্যদেরকে দূঃখপ্রকাশ করে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে টিকেট নিলাম।

টিকেটের তিন রকম (সম্ভবত) অপশন ছিল। ২৫০ টাকায় ওয়াটার ওয়র্ল্ড ও ড্রাই পার্কসহ সব রাইড সহ প্রবেশ। ১৫০ টাকায় ড্রাই পার্কের সব রাইড সহ প্রবেশ। ৯০ টাকায় শুধু প্রবেশ। আমাদের মধ্যে পানিতে নামার কোন ইচ্ছা ছিল না; ইচ্ছা একটু ঘোরাঘুরি করা আর গানের প্রোগ্রাম দেখা, তাছাড়া রাইডগুলোর টিকিট যেহেতু ভেতরেও পাওয়া যায় তাই শুধু প্রবেশ নিলাম।

ঢুকেই আশা করেছিলাম যে একটা ম্যাপ পাব যেখানে বিভিন্ন রাইডের অবস্থান দেখানো থাকবে। মীরপুরের চিড়িয়াখানায় ওরকম আছে; জাপানে ডিজনিল্যান্ড, ডিজনিসী, ইউনিভার্সাল স্টুডিও - এসব জায়গাতেও ছিল। এমনকি ছোটখাট পর্যটনের জায়গাতেও টিকিটের সাথে মানচিত্র ও তথ্যবহুল কাগজ দেয়। সামনে বামদিকে চমৎকার ফোয়ারা দেখা যাচ্ছে, ডানদিকে প্যাডেল নৌকা আর রোপওয়ে দেখা যাচ্ছে ... আমরা ভাবলাম, প্রথমে খেয়ে নেই তারপর ভরাপেটে ঘোরাঘুরি করতে ভাল লাগবে, গানের অনুষ্ঠান দেখতেও ভাল লাগবে।

ডানদিকে একটা খাবারের স্টল দেখে এগিয়ে গেলাম। বাইরের খাবার/পানীয় আনা নিষেধ, কাজেই খেতে চাইলে দর্শনার্থীরা এখানে খাবার কিনতে বাধ্য। যা হোক, খাবার আনতে দিলে আমরা আবার সভ্যতার ধার না ধেরে এখানে পিকনিক করতে বসে যেতে পারি ... কাজেই নিয়ম ঠিকই আছে। খাবারের স্টল থেকেও লাইন ধরে কিনতে হচ্ছে, সবাইকে মূল্য পরিশোধের রিসিট দিচ্ছে। কিন্তু মেনুতে লেখা পছন্দের খাবারটা এখানে নাই, তাই ভাবলাম অন্যদিকের খাদ্যের দোকানে দেখি। অনিশ্চিতভাবে একদিকে হাঁটা শুরু করলাম।

মাথার উপরে বৈশাখের প্রথম সূর্য অকৃপনভাবে নিজের শক্তিমত্তা প্রকাশ করছে। গাছপালার আড়ালে দাড়ানো একজন নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞেস করে জানলাম অন্যদিকে আরও খাবারের স্টল আছে। পানির পাশ দিয়ে হেঁটে অন্যপাশে আসতেই গরমে হাসফাস অবস্থা ... ওদিকে স্টেজে কারা যেন গান করছে ... ঘোষনা দিল যে জনপ্রিয় বাউল শিল্পী অমুক, কিন্তু আমি নিশ্চিত জীবনে এঁর নাম শুনিনি। এইপাশে ওয়াটার ওয়র্ল্ডের জন্য দেখি আলাদা বাউন্ডারী, আমাদের ঢুকতে হলে আবার ১৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনতে হবে। ৯০ টাকার প্রবেশ অর্থ যে রাইডে চড়া ছাড়া সেটা জানতাম, কিন্তু ওয়াটার ওয়র্ল্ডে তো প্রবেশ করা যায় না - রাইড পরের ব্যাপার। যা হোক, সম্ভবত ঐ টিকিট কেনার পর ভেতরের সব রাইড ফ্রী এবং কোন টিকিট চেক হয় না .. .. তাই এই অবস্থা। গরমে, ঐদিকের পানির আশেপাশে যেতে খুব ইচ্ছা করছিল ... কিন্তু ওখানে সবাই সাঁতার/পানিতে দাপাদাপির মুডে .... .... তাই আর গেলাম না।

এটার প্রবেশপথের পাশেই একটা খাবারের দোকান, পছন্দের ডিশও পেলাম (খাসী-খিচুড়ী ১১৮ টাকা/প্যাকেট)। ড্রিংকস সহ দুইজন দুটা নিলাম। আশেপাশে তিনটা ছোট টেবল সব দর্শনার্থীরা দখল করে রেখেছে ... ... তাদের কাছে খাবার নাই, শুধুই বসে আছে। এদেরকে সরার কথা বলে লাভ নাই ... ... অত বোধশক্তি থাকলে এখানে বসতই না - জাপানিদের মত ভব্যতাজ্ঞান এখানে আশা করা বোকামী, সেটা পরস্পরকে মনে করিয়ে দিলাম ... ... তারপর বিরক্ত মনে স্টেজের পাশে একটা গাছের তলায় ঘাস-মাটির উপরে বসলাম।

সাউন্ড সিস্টেমে সেই বাউল চায়ের স্টল মার্কা গান করে যাচ্ছে। কিছু দর্শকও সামনে বসে শুনছে। এর মধ্যে ঘামতে ঘামতে আমি খেলাম, বউ খেতে পারল না ... ... বাসের সামনের মহিলার করা বমির কণা নাকি ওর শাড়িতে পড়েছে .. ওটা মনে করে গা ঘিনঘিন করছে, তাই।

আমার খাওয়া শেষ হওয়ার পর বাউল মশায়ও গান শেষ করলেন। চারিদিকে শুধু দলবেধে গিজগিজ করে আসা মানুষের কোলাহল .. .. গান থামাতে বেশ ভাল লাগতে শুরু করল, গরমও একটু কম কম মনে হল। ভাবলাম অন্য দিকটা একটু ঘুরে দেখি। মাঠে ঘাস ছিল কিন্তু পায়েচলা পথটার যেই অংশ পাকা না, সেগুলো লাল ধুলা (ইটের গুড়া) দিয়ে ভরা - হাটলে ধুলা উড়বেই।

একটা রোলার কোস্টারের মত দেখতে তবে কম উঁচা রাইডের পাশ দিয়ে গেটের দিকে আসলাম। ওখানে (গেট দিয়ে ঢুকলে বাম দিকে পড়বে) একটা ঘুরন্ত রাইড আছে .... বড় একটা প্লেটের উপর ৩/৪ সিটের গোল গোল বসার জায়গা ... বড় প্লেটটাও ঘোরে, ওর উপরে বসার জায়গাগুলোও ঘোরে .... কী ভয়ংকর! এর পর আরেকটা গোল রাইড। ছোট একটা ট্রেন/গাড়ি যেটা কেন্দ্রের সাথে দুইটা ধাতব বাহু দিয়ে যুক্ত, আনুমানিক ১০ ফুট ব্যাসার্ধের গোলাকার পথে কয়েক চক্কর দেয়। গাড়ীটায় জোড়া জোড়া করে ৬ জোড়া মানুষ বসতে পারেন .. আর চলার সময় ঘোড়ার মত লাফাতে থাকে। এই রাইডটায় লোকজন দারুন মজা পাচ্ছে মনে হল।

এর পর একটা জায়গায় স্বাভাবিক উঁচুতে তিনটা বাস্কেটবলের রিং লাগনো, নির্দিষ্ট দুর থেকে বাস্কেট করতে হবে - সুযোগ ৩ বার ..... ... লাইন ধরে কমবয়সী ছেলেরা ওটাতে বল ছুড়ছে। ওটা পার হলে ডানদিকে বাচ্চাদের গাড়ী, একটা পাকা জায়গায় কিছুক্ষণ সচল থাকে। আর বামদিকে স্লাইডার। অনেক উঁচু (৫০/৬০ ফুটের বেশিই হবে বোধহয়) থেকে একটা টিউবের ভেলার মত নিয়ে পানিওয়ালা স্লিপার দিয়ে নিচে স্লাইড করে নামে। দুইটা পথ আছে, একটা সোজা আরেকটা একটু প্যাচানো। পুরুষ, মহিলা, বাচ্চারা ওটাতে চড়ছে ... ...

ভাবলাম, উল্টাদিকে অবস্থিত প্যাডেল নৌকা এবং রোপওয়েতে চড়ি গিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে এদিকে আসলাম, দুইটাতেই বেশ বড় লাইন। বউএর পা ছড়ে গেছে স্যান্ডেল দিয়ে। তাই ফেরৎ চলে যাবে বলল। গেট দিয়ে বের হয়ে আসলাম .. .. এ্যাত দুরে এখানে সম্ভবত আর আসবো না কখনই।

অনেক লোক এসেছিল। কাজেই বাস/ক্যাব/ত্রিচক্রযানের (সি.এন.জি.র) অভাব নাই। গাড়ী পার্কিং পেরিয়ে মেইন রাস্তা পর্যন্ত হেঁটে কালো ক্যাব ঠিক করলাম। দুপুর ২টার সময় ওখান থেকে রাস্তা বেশ ফাকাই পেয়েছিলাম ... গাবতলী ব্রীজ পর্যন্ত মিটারে ২৫৫ টাকা উঠেছিল - সিটি-লিমিটের বাইরের ঐ অংশের ভাড়াটুকু দ্বিগুণ দিয়েছিলাম।

সেন্ট্রাল রোডের বাসায় নামার সময় দুইজনের শরীরই ধুলাবালিতে কিচকিচ করছে বলে আবিষ্কার করলাম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরা ভ্রমনটাতেই ধরা খাইছি বলে মনে হল।

রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০০৮

বিষ্মিত, অভিভূত!

আজ অফিস থেকে ফেরার পথে বাসার কাছের দোকান থেকে চাল এবং চকলেট কিনে বাসায় ফিরলাম। ফেরার কথা ছিল ৬টায়, কিন্তু মিটিং থাকাতে ফিরতে ফিরতে ৮টা বেজেছে। মাথা এবং ঘাড় একটু ব্যাথা করছিল। সম্ভবত বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হওয়ার পথে কোন চেক পয়েন্ট পার হয়েছি। গতকালও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ফলে নির্ধারিত ক্লাস বাতিল করেছিলাম। আজও মনে হয় সেই রকমই কোন অসুস্থতা আঘাত করবে .... ...।

বাসায় এসেই কাপড় পাল্টে গোসল করে শুয়েছি। বউ বলছে রাতের খাবার খেয়ে এই ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে। এমন সময় কেউ একজন কড়া নাড়ল। দেখি দোকানের কর্মচারী ... বলছে আপনি দোকানে সম্ভবত মানিব্যাগ ফেলে এসেছেন। আমিতো অবাক!! ... ... কাপড় পাল্টানোর সময় বের করে রাখা জিনিষপত্র ঘেটে দেখলাম আসলেই তাই ... মানিব্যাগ নাই।

ইতিমধ্যে একটা ফোন আসল। দোকান থেকে এর মালিক সোহাগ ফোন করেছেন (বয়স ৩০এর কমই হবে) ... সম্ভবত মানিব্যাগের ভেতরে আমার ভিজিটিং কার্ড থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করেছে। জানালাম যে, ঠিক .... আপনার কর্মচারীও এসেছেন। এরপর, দোকানে গিয়ে মানিব্যাগ নিয়ে আসলাম। মানিব্যাগে প্রায় আড়াই হাজার টাকা ছিল .... সবই অক্ষত।

আমি সত্যই বিষ্মিত, অভিভূত!!


সচলায়তনে প্রকাশিত

ডাক্তারদের থেকে শেখা


আব্বা একবার হার্টের কেরাবেরা অবস্থায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ-এর সি.সি.ইউতে ভর্তি হলেন (এই যায় যায় অবস্থা)। তখন বিভিন্ন বড়, ছোট, পাতি ... ডাক্তার রাউন্ডে দেখতে আসতো আর বিভিন্ন মন্তব্য করতো। এই সব গুজুর গুজুর শুনে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে সুস্থতার জন্য আব্বাকে অবশ্যই হৃদপিন্ডে পেসমেকার লাগাতে হবে। খোঁজখবর নেয়াও শুরু করেছিলাম কোথায়, কিভাবে, কত খরচ, কতদিন টেকে ইত্যাদি বিষয়। খুবই সীমিত আয় ও সঞ্চয়ের লোক বিধায় আমাদের দুশ্চিন্তাও কম ছিল না। সেই সময়েই (২০০০ সালের দিকে সম্ভবত) পেসমেকারের দাম লাখ টাকায় (২ লক্ষ/ ৫ লক্ষ ...)হিসেব করতে হত যেটা যোগাড় করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব না হলেও খুবই কঠিন ছিল।

পরবর্তীতে যেই ডাক্তার সাহেবের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন, ওনার পরামর্শমত পরীক্ষা করালাম ঐখানেই (হল্টার মনিটরিং), তারপর সেই ফলাফল ওনার ক্লিনিকে দেখালাম। হাসপাতালেও ডাক্তার স্যারদের দেখা পাওয়া যায় কিন্তু ঐ সময় রোগীর দিকে কতটুকু মনযোগ দিতে পারেন সেই ব্যাপারে সন্দেহ রয়েই যায় মনে। কারণ অনেক রোগী, তার উপর ছাত্রদের গ্যাঞ্জাম সামলে ... রোগীর দিকে মনযোগ দিতে হয়। সরকারী হাসপাতালে রোগী স্থির, ডাক্তারগণ ছোটাছুটির মধ্যে থাকেন ... তাই দেখা পাওয়ার জন্য দৌড়ে খুবই দক্ষতার প্রয়োজন, যেটা রোগীদের পক্ষে সম্ভব নয়; অপরপক্ষে ক্লিনিকে ডাক্তার স্থির, রোগীরা সহজেই খুঁজে পান ওনাদের। তাই ওনার চেম্বারেই গেলাম (ল্যাব এইড)। উনি কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে ছেড়ে দিলেন ... বললেন ভাল হয়ে যাবেন। ঐটা শুনেই আব্বা অর্ধেক ভাল হয়ে গেলেন, কারণ পেসমেকারের খরচের চিন্তাটা ওনার বুকে একটা বিরাট দুশ্চিন্তার বোঝার মত হয়ে ছিল। বাকীটুকু সেরে গেল ঔষধ খেয়ে।

একই হাসপাতালের এক ডাক্তার বলল যে পেসমেকার ছাড়া এই রোগী শেষ আর আরেকজন ঐ নামই নিলেন না ... ব্যাপারটা একটু অবাক করার মত - তাই না! একটু অনুসন্ধান আর চিন্তা করে এর কারণ বুঝতে পেরেছিলাম অবশ্য: আব্বা ভর্তি হয়েছিলেন মেডিসিনের ডাক্তার প্রফেসর আব্দুজ্জাহের স্যারের অধীনে। তাই তিনি মেডিসিন দিয়ে রোগ নিরাময় করলেন। বাকী ফুসমন্তর দেয়া পাতি ডাক্তাররা বেশিরভাগই সার্জারীর ডাক্তার (ক্লিনিকের ব্যবসাও মাথায় থাকে) .. তাই সেই তরিকা বাৎলায়।

এই অধ্যায় থেকে একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম .... : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন সমস্যা সমাধানের কয়েকটা বিকল্প ব্যবস্থা থাকে। যে শুধু একটাই জানে, সে সেটাকেই পরম সমাধান ধরে নেয়। আসলে পরম সমাধান বলে কিছু নাই। কাজেই চোখের সামনের সমাধান মনমত না হলে বিকল্পটা খুঁজে নিতে হবে। নিরাশ হলে নিজেরই ক্ষতি।


(দয়া করে কেউ আবার মাইন্ড খাইয়েন না)

সচলায়তনে প্রকাশিত

শনিবার, ২২ মার্চ, ২০০৮

মুঠোফোনে ইতরামী প্রসঙ্গে

মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইতরামীর মাত্রা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে।

প্রায়ই মাঝরাতে একটা ফোন নম্বর থেকে আমার স্ত্রীর ফোন নাম্বারে ফোন আসে। ফোন যে করে, সে কোন এক জায়গা থেকে নম্বরটা জোগাড় করেছে কিন্তু সে পুরোপুরি নিশ্চিত না যে নাম্বারটা আমার বউএর-ই। কারণ আমার সে কখনই ফোন রিসিভ করে একটা শব্দ করেনি। ঐ এক লোকই যে ফোন করে সেটা নিশ্চিত কারণ ডিস্টার্ব করা নম্বরটা সেভ করে রাখা আছে। ফোনটা ধরে যদি আমি হ্যালো বলি, তাহলেই লাইন কেটে দেয়।

গতকাল রাতে আরেক ফোন থেকে একটা অশ্লীল (এতটাই অশ্লীল যে এখানে দিতে রুচি হচ্ছে না) মেসেজ এসেছে। মেজাজটা এত খারাপ হয়েছে যে বলার না।

কিছু একটা করা দরকার কিন্তু সেটা কী বুঝতে পারছি না। এই সমস্যা যে একা আমার তা হয়ত না। আরো পরিচিত অপরিচিত অনেকেরই হচ্ছে সেটা নিশ্চিত। ইভ টিজিং-এর ফলে আত্মহত্যার ঘটনাও ইদানিং পত্রিকায় আসছে। মোবাইলে ইতরামীর ফলে অত্যাচারীতের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটাও সেই পর্যায়ে যাক সেটা নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।

সকল মোবাইল ফোন তো মালিকের নাম সহ রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ফোন কম্পানিতে যোগাযোগ করলে কি এ ধরণের ক্রিমিনালদের পরিচয় বের করা যাবে? পরিচয় পেলেই বা কী? আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঐ ফোনের মেসেজ যথেষ্ট হবে কি? তাছাড়া আইন প্রয়োগের কান্ডারীদের এড়িয়ে চলাই শ্রেয় বলে মনে হয়। কারণ পুলিশ আর উকিল ... দুটোই খুব খরুচে .... .... .... .... ড়্যাবকে বললে কী হবে? উল্টা আমাকেই যে হয়রানী করবে না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে?

সামাজিকভাবে এটা ঠেকানো যায় কি? বহুদিন পূর্বে সামহোয়্যারে পোস্ট করে রাগইমন আপা এমন মোবাইল ইতরামীর অভিযোগ করাতে ওনাকে বুদ্ধি দিয়েছিলাম যে শুধু নম্বরটা এখানে প্রকাশ করে দিন। সদস্য সকলেই ঐ নম্বরে ফোন করে ইতরের শান্তি বিঘ্নিত করবে। কেউ হয়ত পরিচয়ও প্রকাশ করে দিতে পারে। এই পদ্ধতিরও ক্ষতিকর দিক আছে ... ... শুধুমাত্র শত্রুতা করে নিরীহ কোন লোককে হেয় করার জন্যও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে কেউ - অবশ্যওওও.... মানুষের শুভবোধের উপর আস্থা রাখা যায় - সংখ্যালঘু এবং ছদ্মবেশী বদমাশদের জন্য ভয়ে সিটিয়ে থাকলে তো সমস্যা।

যা হোক আপাতত দ্বিতীয় পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় কি না দেখি। পরিচয় ফাঁস করে দেই ... ...
আমার স্ত্রীকে রাতে ফোন করত যে ছেলে তার নম্বর .... দিলাম না, যেহেতু আর ডিস্টার্ব করেনি।
গতরাতে অশ্লীল মেসেজ পাঠিয়েছে যে তার নম্বর: 01717 049 983



সচলায়তনে প্রকাশিত

বাসায় আই.পি.এস. নেয়া হল

বউয়ের মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে লোড শেডিং~X(। আই.পি.এস নিব নিব করে নেয়া হচ্ছিল না অলসতার জন্য। শেষ পর্যন্ত গত পরশু (বৃহস্পতিবার) ফোন করলাম পরিচিত সেই ছেলেটিকে। গতকাল (শুক্রবার) সকালে এসে আই.পি.এস. স্থাপন করে গেল। এর পর আর বিদ্যূতের লোড শেডিং হয়নি .... কাজেই আই.পি.এস. এর সুবিধাটুকুও ভোগ করতে পারিনি।

আই.পি.এস.গুলো পূর্ণ ক্ষমতায় দুই ঘন্টা বিদ্যূৎ সরবরাহ করতে পারে বলে দাবী করে। এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা (ওয়ারেন্টি) দেয়। বর্তমানে বাজারে রহিম আফরোজের আই.পি.এস.-এর প্রচার ও সুনাম সর্বাধিক। তবে দামের দিক দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে লুকাস ব্যাটারীর দাম কিছু ক্ষেত্রে রহিম আফরোজ ব্যাটারীর চেয়ে বেশি।

গত বছর আই.পি.এস. এর দাম আরো ৩/৪ হাজার টাকা করে কম ছিল। এবার ব্যাটারীর দাম বেড়ে গেছে। রহিম আফরোজের আই.পি.এস.-এর দরের চেয়ে ২/৩ হাজার টাকা কম দামে ঐ ছেলেটির সংস্থা আই.পি.এস. স্থাপন করে। গ্রাহকের পছন্দ মত রহিম আফরোজ, লুকাস বা হ্যামকো ব্যাটারী লাগিয়ে দেয়।

এবার ঐ ছেলেটির সরবরাহকৃত আই.পি.এস.-এর মূল্যতালিকা জানিয়ে দেই ... কারো উপকারে লাগতে পারে।

ক্ষমতা ---- দাম
৪০০ ভি.এ. ---- ১৬,৫০০ টাকা।
৬০০ ভি.এ. ---- ২২,০০০ টাকা।
৮০০ ভি.এ. ---- ২৮,০০০ টাকা।
১০০০ ভি.এ. ---- ৩৪,০০০ টাকা।
১৫০০ ভি.এ. ---- ৪০,০০০ টাকা। (লুকাস ব্যাটারী হলে ৪২,০০০ টাকা)
২০০০ ভি.এ. ---- ৬০, ০০০ টাকা। (লুকাস ব্যাটারী হলে ৬২,০০০ টাকা)

(ছেলেটার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে, ফোন করুন: আমিনুল ইসলাম 01554 318 026)

ঘ্যানরঘ্যানরঃ বিদ্যূৎ বিভ্রাটে গাড়ী ভাড়া বৃদ্ধি

কান টানলে মাথা আসে।

বিদ্যূৎ না থাকলে গাড়ীর জ্বালানী সংগ্রহ কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি চলে না। ফলে গ্যাস সংগ্রহের জন্য গাড়ীর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অতিরিক্ত কয়েক ঘন্টা (আগে লাগতো ১০ মিনিট এখন হয়ত ২ ঘন্টা ১০ মিনিট)। ফলশ্রুতিতে দায়ভারটা পড়ে গাড়ী ব্যবহারকারীদের উপর। ত্রিচক্রযানের ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ টাকা বেশি (আগে লাগতো ৮০টাকা এখন ১০০ টাকা)। আশেপাশে ভাড়া করার মত তিন চাকার গাড়ীও আর চোখে পড়ে না .... নির্ঘাৎ গ্যাস স্টেশনে লাইনে অপেক্ষমান। অতএব.... মাথা পেতে দিলুম।


সচলায়তনে প্রকাশিত

মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০০৮

দেশে উন্নয়নের গতি প্রকৃতি: অনলাইন লেনদেন

ঘটনা-১
শামীমের একটা বই দরকার। দেশে ঐ বই পাওয়া যায় না। কিনতে হলে অনলাইনই ভরসা। কিন্তু হায় অনলাইনে কোন বিল দেয়া যায় না। বসে বসে আঙ্গুল চোষ, বই পড়ার দরকার নাই।

ঘটনা-২
নাদিয়ার একটা ঔষধ দরকার যেটা আমেরিকান একটা কম্পানি তৈরী করে। বাংলাদেশের কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়েই অনলাইনে কেনাকাটা করা যায় না। ভাগ্যক্রমে ওর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী খালা সেই সময় ঢাকাতে। উনি ওনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্ডার দিতে রাজি হলেন... বিনিময়ে সমস্ত খরচটাই ওনাকে টাকা বা ডলারে দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু..... ঐ ওয়েবসাইটের অর্ডার ফর্মে ঠিকানা লেখার জায়গায় ড্রপ-ডাউন বক্সে বাংলাদেশ দেয়ার কোনই উপায় নাই। ভারতের নাম দেয়া যায় অবশ্য!

ঘটনা-৩
বাপ্পী টুকটাক প্রোগ্রামিং করে। অনলাইনে কিছু কাজ করে তাঁর কিছু ডলার রোজগার হয়েছে। পে-পালে (Paypal) একটা একাউন্ট খুলে সেই টাকা ওখানে পেমেন্ট করা হয়েছে। কিন্তু বাপ্পী ঐ টাকা/ডলার কোনদিনই পাবে না। কারণ বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে ওটার সাপোর্ট নাই।

ঘটনা-৪
রাজু, বাপ্পীর মতই বেশ ডলার উপার্জন করেছে অনলাইনের কাজ করে। কয়েকশ ডলার সহ ওর পে-পাল একাউন্ট ব্লক হয়ে গেল গ্রহণযোগ্য ক্রেডিট কার্ড নম্বর না দেয়াতে। পরবর্তীতে রাজু অবশ্য অন্য একটা একাউন্ট খুলে ওটাতে প্রবাসী বড়ভাইয়ের ক্রেডিটকার্ড নম্বর দিয়ে রেখেছে। তবে কোন টাকাই সে দেশে আনতে পারে না... তাই ঐ ডলার দিয়ে বিভিন্ন জিনিষ/সফটওয়্যার কেনে।

ঘটনা-৫
নাসিম xoom নামক একটা সাইট পেয়েছে। যেটা দিয়ে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যায়। ঢাকার কয়েকটা ব্যাংকের কয়েকটা বিশেষ শাখা থেকে টাকা পাঠানো যায়। টাকা পাঠানোর ৩ঘন্টার মধ্যেই সেটা তোলা যায়। কিন্তু কে জানি বললো সেটা নাকি আইনসঙ্গত নয়।

প্রজন্ম ফোরামে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা/আফসোস দেখতে পারেন।

দেশের সরকার নাকি ভারতের মত অনলাইনে আয় করার জন্য ইন্টারনেট ... ইত্যাদি বিস্তার করছে/করবে। উপরের ৫টি ঘটনা দেখে তো সেরকম মনে হওয়ার কোন কারণ দেখি না।


পোস্টটি সচলায়তনেও করা হয়েছে।