স্কাইফল শ্রবন অভিজ্ঞতা
জ্বী ঠিকই ধরেছেন --- এটা কার্বাইড কিংবা ফর্মালিন দেয়ার যোগ্য কোনো ফল
নহে বরং জেমস বন্ড মুভির কথাই বলছি। ... ... ... ... ন ... না না না ...
... কোনো মুভি রিভিউও না এটা। শুধু আজকে আমার সিনেপ্লেক্সে এই সিনেমা শোনার
অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করবো।
হ্যাঁ দেখার নয়, শোনার অভিজ্ঞতা, সিনেপ্লেক্সেই। কাহিনী একটু লম্বাই বটে --- জ্বী জ্বী আমার কাহিনীর কথা বলছি স্কাইফলের নয়।
গত
উইকএন্ডে বউকে নিয়ে গিয়েছিলাম আর্মি স্টেডিয়ামে, সেখানে লাইভ এস এ টিভি'র
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখলাম, মশাদেরকেও আপ্যায়ন করে এলাম। গত রাতে আবার বাসায়
ফিরে দেখি উনি ইউটিউবে অ্যানি ফ্রাংকস ডায়েরি মুভি দেখছেন। এর পর আজকেও
যখন আবার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে চাইলো আমার চক্ষু তো চড়কগাছ! কাম কাজ
নাই, প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট নাই .... খালি মুভি! আমার অত ফালতু সময় নাই --
ঐ সময়ে ঘুমাইলেও লাভ, টিভি দেখলেও লাভ অন্তত হুদাই অতগুলা টাকা খরচ করা
লাগবে না। আমারে ভুজুং ভাজুং দেয় -- বলে মুভির টিকিট ১২৫ কি ১৪০ হবে; আমার
বিলক্ষন মনে আছে আগেরবার স্পাইডার ম্যান থ্রিডির সময়ে ৩৭০ করে নিয়েছিলো ...
... ... ...
আমার আপত্তি কি আর ধোপে টেকে! বাসার পাশেই বসুন্ধরা
শপিং মল তথা সিনেপ্লেক্স। উনি চলে গেলেন মুভির টিকিট কাটতে। আমার উপর কড়া
নির্দেশ যে ফোন পেলে সেই অনুযায়ী চলে যেতে -- ঘাড়ে একটাই মাথা কাজেই ...
... ...। টিকিট পাইলেন - টেলিভিষন বা স্নো হোয়াইট নাকি চোরাবালি কোনটারই না
পেয়ে স্কাইফলের টিকিট কেটেছেন, সিনেমা শুরু হতে আরও দেড় ঘন্টার বেশি বাকী
--- বাসা থেকে ওটা ৩ মিনিটের হাঁটা পথ হলেও বাসায় আসবেন না বরং ঐ সময়ে উনি
ইভিনিং ওয়াক করবেন নিচের মোস্তফাতে। জ্বী ঠিকই শুনেছেন -- নাম শুনে খ্যাত
লাগলেও, গত ১২ই জানুয়ারী থেকে বসুন্ধরার বেসমেন্টে চালু হওয়া মোস্তফা মার্ট
সিঙ্গাপুরের খুব বড় একটা শপিং মলের শাখা। এখানে জিনিষপাতিও সেইরকম পাওয়া
যায়।
যা হোক, ৭টা ০৫ মিনিটে শুরু হবে সিনেমা, আমি গিয়ে দুইজনে পোনে
৭টাতেই ঢুকে পড়লাম। টিকেট প্রতিজন ২২৫ টাকা। সাথে সাথে তো আর হলে ঢুকতে দেয় না --- আগের শো শেষ
হওয়ার পর ক্লিনাররা বের হল, তারপর আমরা ঢুকলাম।
চুপচাপ বসে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। আমি দেখুম না তো দেখুমই না .... .... হুহ্ ।
শুধু জাতীয় সংগীতের সময়ে চোখ খুলে দাঁড়িয়েছি। বাকী সময় চোখ বন্ধ। তাই শুধু শুনেছি।
ইন্টারভেলের
আগের পর্বের মাঝামাঝি সময়ে মনে হল কোথায় জানি নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি।
কিছুক্ষন পর আবার, এবার আস্তে করে বামে ঘুরে চোখ পিট পিট করে খুলে আমার
পাশের ব্যক্তির দিকে তাকালাম -- কান্ডটা ঐ ভদ্রলোকেরই। হিংসাই লাগলো --- এই
কষ্টকর খাড়া চেয়ারে বসে, কানফাটানি ডলবি সাউন্ডেও কত আরামে ঘুমিয়ে নাক
ডাকে! সাথে সাথে বউকে দেখালাম --- দেখো খালি আমিই না, আমার চেয়েও সরেষ লোক আছে!
আবার
চোখ বন্ধ, কিন্তু ১০ মিনিট পর পাশে একটু নড়াচড়ার আভাস পেয়ে তাকিয়ে দেখি
নাহ উনি আবার ঢুলু ঢুলু চোখে দেখছেন -- আবার ঘুমাবেন হয়তো। এর কিছুক্ষন পর
ইন্টারভেল। আমি একটু ফ্রেশরুমে যাবো, পাশের লোককে পার হয়ে বের হতে হবে।
দেখলাম উনি আধা জাগন্ত অবস্থায় -- পা বাড়িয়েও দাঁড়াতে হল, কারণ ওনার পাশে
ওনার সঙ্গীনিও চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেন। ওনাকে একটু ইশারায় বললাম, যে
ম্যাডামকে একটু পা সরাতে বলুন। উনিও সঙ্গীনিকে ডেকে তুললেন। ফ্রেশরুম থেকে
সিটে ফেরত আসার সময়েও আরেকবার একইভাবে ভদ্রলোকের সাহায্য নিয়ে ওনার
সঙ্গীনিকে জাগাতে হয়েছিলো।
আবার চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে বসে আছি। তবে
মাঝে মধ্যে বামপাশের ভদ্রলোকের নাক ডাকার শব্দও পাই। এর মধ্যে একবার
মোবাইল বের করে ঘড়ি দেখার সময়ে ডানে বউয়ের পাশের দুটো সিট ফাঁকা দেখলাম ---
বউ বললো তাঁর দুই পাশে দুই চিড়িয়া। একজন আমি - চোখ বন্ধ, আর পাশের দুইজনের
কথা শুনে বুঝেছে ওরা না জেনেই এই হলে ঢুকেছে এবং হাফটাইমে ভেগে গেছে!!
মুভি
শেষ হলে বউ আমারে গুতা দিয়ে বলে চোখ খুলে ওঠ যাই। জাতীয় পতাকা আর
ইন্টারভেলের পর এই আরেকবার স্ক্রিনের দিকে তাকালাম যখন কলাকুশলীদের নাম
দেখাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম - তাহলে এম ফুলের দোকানে কাজ নিয়েছে। ও বললো না এম
তো মারা গেছে আগের এ্যাকশনে। ওহহো, তাইতো কোথায় জানি পড়েছিলাম স্কাইফলে এম
মারা যায় ... ... ... গত কয়েকদিন কাজের চাপে প্রায় পুরা সময়েই হয়
কম্পিউটার নাইলে প্রজেক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে, তাই এই আড়াই ঘন্টা
চোখ বন্ধ রেখে বেশ আরামই লাগলো -- আর মুভির আবহ সংগীত যে একটা ব্যাপার
সেটাও অনুভব করতে পারলাম অন্যমাত্রায়।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়লো বেশ
অনেকদিন আগে ঢাকায় বেড়াতে আসা ছোট্ট চাচাতো ভাইয়ের অনুরোধে তাকে নিয়ে
গিয়েছিলাম খোঁজ দ্যা সার্চ দেখতে। সেবারও চোখ বন্ধ রেখেছিলাম শুরুতে।
কিন্তু সিনেমা শুরুর একটু পরেই চোখ খুলে দেখতে বাধ্য হয়েছিলাম -- হল ভর্তি
দর্শকের হাসাহাসিতে নিজেকে বঞ্চিত করতে মন মানে নাই - অনন্ত জলিল রকস্। আর
আজকের রাতের শো বলেই হয়তো অর্ধেকের বেশি সিট খালি ছিল (যদিও চোরাবালি বা
অন্য সিনেমাগুলোর টিকিট পায় নাই) - তখন ক্লান্ত চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকাতে
এম্নিতেই ইচ্ছা করছিলো না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন