ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমণ - ১
১।
গত কয়েকমাস যাবৎ 'বিদেশ ঘুরতে যাব' 'বিদেশ ঘুরতে যাব' করে করে বউ আমার মাথাটা প্রায় নষ্ট করে ফেলেছিলো। কিছুদিন আগে আমার ছোটভাই মালয়েশিয়া ঘুরে এসে ফেসবুকে গরম গরম দারুন ছবি পোস্ট করেছিলো। এরপর আরেক কাজিন ভুটান ঘুরে এসে যে দূর্দান্ত সব ছবি দিল তা দেখে আমিই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। তো বউয়ের মাথা গরম হওয়া স্বাভাবিক। এই উপলক্ষে বেশ কয়েক মাস আগে একবার আমাকে জোর করে এক ট্রাভেল এজেন্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো। তখন কোথায় কোথায় জানি ঘুরতে জনপ্রতি প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হবে এমন একটা এস্টিমেট দিয়েছিলো। মধ্যবিত্তের সংসারে টাকা খরচ করার মত আরো অনেক জরুরী বিষয় থাকে – সেগুলা বাদ দিয়ে ঘোরাঘুরি করার মত ঘোড়ারোগ থাকা ঠিক না।
ঘুরতে না গেলে যেহেতু ফেসবুকের স্ট্যাটাস ঠিক থাকে না তাই বাধ্য স্বামীর মত আমিও মিন মিন করে “সব আয়োজনের দায়দায়িত্ব গিন্নির” - এমন শর্তসাপেক্ষে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু শুধু রাজি হলেই তো হবে না, অফিস, স্কুল সব ছুটি লাগবে। গত কোরবানীর ঈদে আমার, বাচ্চার স্কুল আর গিন্নি – তিন জনেরই একটা কায়দামত ছুটি পাওয়া গেল।
২।
ঘোরাঘুরি করতে গেলে শুধু টাকা জমালেই হবে না, সাথে পাসপোর্ট ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ও জড়িত থাকে। তাই দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একদিন বউ-বাচ্চা সহ তিনজন স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তোলানো হল। প্রায় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পাসপোর্টগুলো নবায়ন (রিইস্যূ) করাতে হল। ভিসা করানোর দায়িত্ব ট্রাভেল এজেন্টের। তাদেরকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট জমা দিতে হল। নিজের অফিসের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট; মেয়ের স্কুলের শেষ বেতনের রিসিট; ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়ের স্কুলে যোগাযোগ করে ওর নাম থেকে ডাক নাম বাদ দেয়ানো হল যেন পাসপোর্ট আর স্কুলের ডকুমেন্টে একই রকম থাকে। সেই বাদ দেয়ানোর পর আবার একমাসের বেতন পরিশোধ করে সেই নামসহ রিসিট রেডি করা হল।
থাইল্যান্ড গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ফুকেট যেতে হবে – এমন একটা তথ্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢালার কাজটা করেছিলো গিন্নিরই এক বান্ধবী। সে যেনতেন বান্ধবী নহে; ওনারা মিয়া-বিবি একেবারে ব্যাংককের AIT থেকে মাস্টার্স পাশ করা – কাজেই ওখানকার হালচাল ভালই জানেন।
৩।
সব খরচা গিন্নি বহন করবেন বললেও শেষ মুহুর্তে শর্ত ভঙ্গ করে আমার কাছে একলাখ টাকা চাঁদা দাবী করে বসলেন তিনি। সেই আগের ট্রাভেল এজেন্টের কাছেই এবার ঈদের সময়ে নাকি বেশ ভাল একটা ডীল পাওয়া গেছে বলে জানা গেল। ঢাকা থেকে ব্যাংকক হয়ে একেবারে ফুকেট যাওয়া এবং আসা মিলিয়ে প্লেনভাড়া লাগবে বড়দের জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকার মত। আমি মনে মনে হিসাব মিলানোর চেষ্টা করতে থাকলাম: ঢাকা থেকে যশোর প্লেন উঠা-নামা বাদ দিলে ২০-২৫ মিনিটের ট্রিপ – সেটাতে লাগে ৪২০০ টাকার মত, আর এটা ২:৩০ + ১:১০ = ৩ ঘন্টা ৪০ মিনিটের ট্রিপ – সেই হিসাবে ১০ গুন ভাড়া যুক্তিসংগত বিবেচনা করা যেতে পারে। পরে অবশ্য দেখেছি, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বিভিন্ন ট্যাক্স – আসল প্লেন ভাড়া ৩০০ ডলারের কম।
এরপর ভিসা ফী। ট্রাভেল এজেন্টকে এজন্য জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে দিতে হল। ৫ কার্যদিবস লাগে ভিসা বের হতে। এটা নিয়ে কোনো টেনশন ছিল না আমার বা ট্রাভেল এজেন্টের; কিন্তু বউয়ের টেনশনের শেষ ছিল না …
ঘোরাঘুরি আর থাকার খরচ: সকালের নাস্তাসহ ফুকেটে ২ রাত (৩ দিন) আর ব্যাংককে ৩ রাত (৩ দিন) থাকা, দুইবার এয়ারপোর্ট-হোটেল ট্যাক্সি এবং দুইটা গাইডেড ট্যুরে (লাঞ্চ সহ) আমাদের ৩জনের (মিয়া-বিবি-বাচ্চা) খরচ পড়লো ৫৫ হাজার টাকা। ফুকেটের হোটেল নাকি ৩ স্টার, আর ব্যাংককে ৪ স্টার! ভাবলাম গিয়ে দেখি ঘটনা কি!
৪।
শর্ত অনুযায়ী ;-) সব দৌড়াদৌড়ি গিন্নি করেছেন। আমি যতটুকু না করলেই না ততটুকু করেছি। এমনকি আমার কী কী কাপড়চোপড় নিয়েছে তা-ও জানতাম না (লজ্জিত ইমোটিকন হবে)। ঈদের আগে পরীক্ষার সিজন --- মাস্টারি করি বলে পরীক্ষা-খাতা দেখা-গ্রেড-পরের সেমিস্টারের রুটিন সব সামলিয়ে এই সময়ে এক মুহুর্ত সময় থাকে না।
ট্রাভেল করতে হলে নাকি জিন্সের প্যান্ট লাগবে, কিন্তু আমার পুরানো কোনো প্যান্টেই ঢুকতে পারি না এখন – তাই যেদিন সন্ধ্যায় ফ্লাইট সেদিন দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার পথে বসুন্ধরার বেসমেন্টের মোস্তফা-মার্ট থেকে আমি ঢুকতে পারি এমন একটা জিন্সের মালিকানা নিলাম। তবে জিন্সগুলোর পা বানিয়েছে রন-পা'র মাপে। কাটাকাটির সময় নাই তাই ওগুলোই গুটিয়ে পড়তে হবে।
সন্ধ্যায় ঐ প্যান্ট পড়ে রওনা দিয়ে বুঝলাম মাপমত কিনলেও ওটা জায়গামত থাকতে চাচ্ছে না। ভাবলাম হাল ফ্যাশনে তো আস্তে আস্তে জিন্স নিচে নামছে, আমারটাও সেই পথ ধরেছে।
এয়ারপোর্টের চেক-ইন আর ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর দেখি প্লেন লেট। বসে থাকতে থাকতে হঠাৎই স্কুলের ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে দেখা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু কাজ করে মার্চেন্ডাইজে: ঈদের সময়ে বেচারা আর তার এক কলিগকে আমেরিকায় ক্লায়েন্টের সাথে গল্পগুজব করে কাটাতে হবে। সাধারণত ঐসকল ক্লায়েন্ট অর্ডার দিতে দেশে আসে, কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে আসবে না। আমার ভূড়ির বাড়ন্ত সাইজ দেখে বেশ অবাক হল। কিছুক্ষণ আমাদের সাথে গল্পগুজব করার পর ওর ফ্লাইটে চড়ার ডাক দিল।
কন্যা এই ভ্রমন সংক্রান্ত বিষয়ে এমনিতেই একটু এক্সাইটেড ছিল; এয়ারপোর্টের ভেতরে বিরাট এয়ারকন্ডিশনড্ স্পেস পেয়ে তো সে মহা খুশি, আর দৌড়াদৌড়ি করে কাটিয়ে দিল। আর এদিকে আমিও একটা বেল্ট কিনে জিন্স-বাবাজিকে ঠেকিয়ে দিলাম।
৫।
ঢাকা এয়ারপোর্টে শেষ পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা ডিলে হল। তবে এটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না, কারণ এমনিতেই ব্যাংককে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা ট্রানজিটে থাকতে হত। কন্যার জন্য এয়ার ট্রাভেল এই প্রথম। বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে প্লেনের ভেতরে কেমন হয় ইত্যাদি সংক্রান্ত শিক্ষামূলক ভিডিও দেখিয়েছিলাম (ইউটিউব), এছাড়া ঢাকা-যশোর ফ্লাইটের নিজের করা ভিডিও দেখিয়েছিলাম। তাই হয়তো চেক-ইন, বোর্ডিং এর লাইন ইত্যাদিতে যতটুকু এক্সাইটমেন্ট দেখলাম, প্লেনের ভেতরের বিষয়গুলোতে ততটা দেখলাম না।
ব্যাংকক এয়ারওয়েজের বিমানটি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক ছোট ছিল (এয়ারবাস ৩২০)। প্রতি সারিতে দুইপাশে ৩+৩টা করে সিট, মাঝে ওয়াকওয়ে --- অবশ্য আমাদের ৩ জনের জন্য ৩ সিটের বিষয়টা পারফেক্ট ছিল।
আকাশ থেকে নিচের দুনিয়া কেমন দেখায়, মেয়েকে সেটা দেখানোর শখ ছিল, কিন্তু রাতে ফ্লাইট হওয়ায় সেটা আর হল না। সকালে ব্যাংকক-থেকে ফুকেটের ফ্লাইটটিতে ওকে দেখাতে পারবো ভেবেছিলাম।
(পরের পর্বের জন্য এখানে ক্লিক করুন: ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমণ - ২)
গত কয়েকমাস যাবৎ 'বিদেশ ঘুরতে যাব' 'বিদেশ ঘুরতে যাব' করে করে বউ আমার মাথাটা প্রায় নষ্ট করে ফেলেছিলো। কিছুদিন আগে আমার ছোটভাই মালয়েশিয়া ঘুরে এসে ফেসবুকে গরম গরম দারুন ছবি পোস্ট করেছিলো। এরপর আরেক কাজিন ভুটান ঘুরে এসে যে দূর্দান্ত সব ছবি দিল তা দেখে আমিই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। তো বউয়ের মাথা গরম হওয়া স্বাভাবিক। এই উপলক্ষে বেশ কয়েক মাস আগে একবার আমাকে জোর করে এক ট্রাভেল এজেন্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো। তখন কোথায় কোথায় জানি ঘুরতে জনপ্রতি প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হবে এমন একটা এস্টিমেট দিয়েছিলো। মধ্যবিত্তের সংসারে টাকা খরচ করার মত আরো অনেক জরুরী বিষয় থাকে – সেগুলা বাদ দিয়ে ঘোরাঘুরি করার মত ঘোড়ারোগ থাকা ঠিক না।
ঘুরতে না গেলে যেহেতু ফেসবুকের স্ট্যাটাস ঠিক থাকে না তাই বাধ্য স্বামীর মত আমিও মিন মিন করে “সব আয়োজনের দায়দায়িত্ব গিন্নির” - এমন শর্তসাপেক্ষে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু শুধু রাজি হলেই তো হবে না, অফিস, স্কুল সব ছুটি লাগবে। গত কোরবানীর ঈদে আমার, বাচ্চার স্কুল আর গিন্নি – তিন জনেরই একটা কায়দামত ছুটি পাওয়া গেল।
২।
ঘোরাঘুরি করতে গেলে শুধু টাকা জমালেই হবে না, সাথে পাসপোর্ট ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ও জড়িত থাকে। তাই দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একদিন বউ-বাচ্চা সহ তিনজন স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তোলানো হল। প্রায় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পাসপোর্টগুলো নবায়ন (রিইস্যূ) করাতে হল। ভিসা করানোর দায়িত্ব ট্রাভেল এজেন্টের। তাদেরকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট জমা দিতে হল। নিজের অফিসের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট; মেয়ের স্কুলের শেষ বেতনের রিসিট; ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়ের স্কুলে যোগাযোগ করে ওর নাম থেকে ডাক নাম বাদ দেয়ানো হল যেন পাসপোর্ট আর স্কুলের ডকুমেন্টে একই রকম থাকে। সেই বাদ দেয়ানোর পর আবার একমাসের বেতন পরিশোধ করে সেই নামসহ রিসিট রেডি করা হল।
থাইল্যান্ড গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ফুকেট যেতে হবে – এমন একটা তথ্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢালার কাজটা করেছিলো গিন্নিরই এক বান্ধবী। সে যেনতেন বান্ধবী নহে; ওনারা মিয়া-বিবি একেবারে ব্যাংককের AIT থেকে মাস্টার্স পাশ করা – কাজেই ওখানকার হালচাল ভালই জানেন।
৩।
সব খরচা গিন্নি বহন করবেন বললেও শেষ মুহুর্তে শর্ত ভঙ্গ করে আমার কাছে একলাখ টাকা চাঁদা দাবী করে বসলেন তিনি। সেই আগের ট্রাভেল এজেন্টের কাছেই এবার ঈদের সময়ে নাকি বেশ ভাল একটা ডীল পাওয়া গেছে বলে জানা গেল। ঢাকা থেকে ব্যাংকক হয়ে একেবারে ফুকেট যাওয়া এবং আসা মিলিয়ে প্লেনভাড়া লাগবে বড়দের জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকার মত। আমি মনে মনে হিসাব মিলানোর চেষ্টা করতে থাকলাম: ঢাকা থেকে যশোর প্লেন উঠা-নামা বাদ দিলে ২০-২৫ মিনিটের ট্রিপ – সেটাতে লাগে ৪২০০ টাকার মত, আর এটা ২:৩০ + ১:১০ = ৩ ঘন্টা ৪০ মিনিটের ট্রিপ – সেই হিসাবে ১০ গুন ভাড়া যুক্তিসংগত বিবেচনা করা যেতে পারে। পরে অবশ্য দেখেছি, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বিভিন্ন ট্যাক্স – আসল প্লেন ভাড়া ৩০০ ডলারের কম।
এরপর ভিসা ফী। ট্রাভেল এজেন্টকে এজন্য জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে দিতে হল। ৫ কার্যদিবস লাগে ভিসা বের হতে। এটা নিয়ে কোনো টেনশন ছিল না আমার বা ট্রাভেল এজেন্টের; কিন্তু বউয়ের টেনশনের শেষ ছিল না …
ঘোরাঘুরি আর থাকার খরচ: সকালের নাস্তাসহ ফুকেটে ২ রাত (৩ দিন) আর ব্যাংককে ৩ রাত (৩ দিন) থাকা, দুইবার এয়ারপোর্ট-হোটেল ট্যাক্সি এবং দুইটা গাইডেড ট্যুরে (লাঞ্চ সহ) আমাদের ৩জনের (মিয়া-বিবি-বাচ্চা) খরচ পড়লো ৫৫ হাজার টাকা। ফুকেটের হোটেল নাকি ৩ স্টার, আর ব্যাংককে ৪ স্টার! ভাবলাম গিয়ে দেখি ঘটনা কি!
৪।
শর্ত অনুযায়ী ;-) সব দৌড়াদৌড়ি গিন্নি করেছেন। আমি যতটুকু না করলেই না ততটুকু করেছি। এমনকি আমার কী কী কাপড়চোপড় নিয়েছে তা-ও জানতাম না (লজ্জিত ইমোটিকন হবে)। ঈদের আগে পরীক্ষার সিজন --- মাস্টারি করি বলে পরীক্ষা-খাতা দেখা-গ্রেড-পরের সেমিস্টারের রুটিন সব সামলিয়ে এই সময়ে এক মুহুর্ত সময় থাকে না।
ট্রাভেল করতে হলে নাকি জিন্সের প্যান্ট লাগবে, কিন্তু আমার পুরানো কোনো প্যান্টেই ঢুকতে পারি না এখন – তাই যেদিন সন্ধ্যায় ফ্লাইট সেদিন দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার পথে বসুন্ধরার বেসমেন্টের মোস্তফা-মার্ট থেকে আমি ঢুকতে পারি এমন একটা জিন্সের মালিকানা নিলাম। তবে জিন্সগুলোর পা বানিয়েছে রন-পা'র মাপে। কাটাকাটির সময় নাই তাই ওগুলোই গুটিয়ে পড়তে হবে।
সন্ধ্যায় ঐ প্যান্ট পড়ে রওনা দিয়ে বুঝলাম মাপমত কিনলেও ওটা জায়গামত থাকতে চাচ্ছে না। ভাবলাম হাল ফ্যাশনে তো আস্তে আস্তে জিন্স নিচে নামছে, আমারটাও সেই পথ ধরেছে।
এয়ারপোর্টের চেক-ইন আর ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর দেখি প্লেন লেট। বসে থাকতে থাকতে হঠাৎই স্কুলের ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে দেখা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু কাজ করে মার্চেন্ডাইজে: ঈদের সময়ে বেচারা আর তার এক কলিগকে আমেরিকায় ক্লায়েন্টের সাথে গল্পগুজব করে কাটাতে হবে। সাধারণত ঐসকল ক্লায়েন্ট অর্ডার দিতে দেশে আসে, কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে আসবে না। আমার ভূড়ির বাড়ন্ত সাইজ দেখে বেশ অবাক হল। কিছুক্ষণ আমাদের সাথে গল্পগুজব করার পর ওর ফ্লাইটে চড়ার ডাক দিল।
কন্যা এই ভ্রমন সংক্রান্ত বিষয়ে এমনিতেই একটু এক্সাইটেড ছিল; এয়ারপোর্টের ভেতরে বিরাট এয়ারকন্ডিশনড্ স্পেস পেয়ে তো সে মহা খুশি, আর দৌড়াদৌড়ি করে কাটিয়ে দিল। আর এদিকে আমিও একটা বেল্ট কিনে জিন্স-বাবাজিকে ঠেকিয়ে দিলাম।
৫।
ঢাকা এয়ারপোর্টে শেষ পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা ডিলে হল। তবে এটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না, কারণ এমনিতেই ব্যাংককে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা ট্রানজিটে থাকতে হত। কন্যার জন্য এয়ার ট্রাভেল এই প্রথম। বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে প্লেনের ভেতরে কেমন হয় ইত্যাদি সংক্রান্ত শিক্ষামূলক ভিডিও দেখিয়েছিলাম (ইউটিউব), এছাড়া ঢাকা-যশোর ফ্লাইটের নিজের করা ভিডিও দেখিয়েছিলাম। তাই হয়তো চেক-ইন, বোর্ডিং এর লাইন ইত্যাদিতে যতটুকু এক্সাইটমেন্ট দেখলাম, প্লেনের ভেতরের বিষয়গুলোতে ততটা দেখলাম না।
ব্যাংকক এয়ারওয়েজের বিমানটি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক ছোট ছিল (এয়ারবাস ৩২০)। প্রতি সারিতে দুইপাশে ৩+৩টা করে সিট, মাঝে ওয়াকওয়ে --- অবশ্য আমাদের ৩ জনের জন্য ৩ সিটের বিষয়টা পারফেক্ট ছিল।
আকাশ থেকে নিচের দুনিয়া কেমন দেখায়, মেয়েকে সেটা দেখানোর শখ ছিল, কিন্তু রাতে ফ্লাইট হওয়ায় সেটা আর হল না। সকালে ব্যাংকক-থেকে ফুকেটের ফ্লাইটটিতে ওকে দেখাতে পারবো ভেবেছিলাম।
(পরের পর্বের জন্য এখানে ক্লিক করুন: ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমণ - ২)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন