শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

ওভেন ছাড়াই পিজা বানানো - সচিত্র প্যান পিৎজা

Pizza/পিজা/পিৎসা/পিৎজা বানানো কঠিন কিছু না। শুধু এর উপকরণগুলো আমাদের জন্য একটু আনকমন -- তাও সবগুলো না -- শুধুমাত্র এর মূল উপকরন -চিজ বা পণিরটাই আনকমন। তবে সাধারন বাসাবাড়িতে পিজা বানানোর জন্য মূল বাধা হল ওভেন না থাকা। এই পিৎজাটি ওভেন ছাড়াই ফ্রাইপ্যানে (তাওয়া?) করা। যাদের ওভেন নাই, তাঁদের জন্য নিশ্চয়ই বেশ আগ্রহোদ্দীপক হবে বিষয়টা।

রান্নাঘরে প্রতিদিনই যাওয়া হয় -- সেটা বাসন ধোয়ার জন্য। আজ অবশ্য ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম। পিজাটি আমি বানাইনি, আমার স্ত্রী বানিয়েছে। আমি নিজে চা বানাই মাইক্রোওয়েভ ওভেনে - সেটা দিয়ে কিন্তু পিৎজা বা অন্য বেকিং আইটেমগুলো হয় না - এটা খালি মাইক্রোওয়েভ দিয়ে গরম করে। কিন্তু বেকিং ওভেন না থাকলেও ঘরে পিৎজা বানানো যায়। সেটাই আজকের সফল এক্সপেরিমেন্ট ছিলো। এ নিয়ে ইউটিউবেও ইংরেজিতে ভিডিও পাওয়া যায়। ফ্রাইপ্যানে করা বলে এগুলোকে প্যান পিজা বলে।

১। প্রথমেই মূল আকর্ষণ: পিৎজাটির ছবি দেখুন। আগ্রহ জাগলে আগে বাড়ুন ...


২। একজন স্যাটিসফাইড কাস্টমার! (আমার কন্যা - নীলিয়া)

এবার একটু তদন্ত করে দেখি পরের পিৎজাটা কিভাবে বানালো সেটা বোঝা যায় কি না ... ...

৩। যা যা লাগে - ক্যাপসিকাম, সসেজ (ইচ্ছামাফিক অন্য বস্তুও নেয়া যায়) এগুলো একটু নন স্টিকি ফ্রাইপ্যানে টেলে নিতে হয় (অর্থাৎ গরম ফ্রাইপ্যানে নাড়াচাড়া করা)। অর্থাৎ তাহলে একটু নরম হবে, কাঁচার মত কচ কচ করবে না, আর মূল পিজাতে বেক করার সময় পানি ছাড়বে না।

৪। আর অবশ্যই লাগবে চিজ বা পণির। চেডার (cheddar) চিজ নাকি এ কাজে ভাল।

৫। সসের কথা ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু। পিজা সস নামেই সস পাওয়া যায়। না পাওয়া গেলে সাধারণ সস দিয়েই চলবে (পূর্ববর্তী পিজা বানানোর বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলা হল)

৬। আটা ছাড়া তো আর ক্রাস্ট হবে না। আটার মাখার সময়ে একটু পানিতে ঈস্ট (yeast)গুলে নিয়ে দিয়ে ময়ান করতে হবে। এরকম ময়ান করে সাধারণত একটা পাতলা ভেজা কাপড়ে জড়িয়ে বাটিতে আধাঘন্টার মত ঢেকে রাখতে হয়। এতে ময়ানটা ফুলে ওঠে। কাজেই এই কাজটা শুরুতে করে বাকী প্রিপারেশন করলে সময়ের ব্যবহারটা ভাল হবে। ময়ানে লবণ না দিলেও চলে, কেন? সেটা পরে বলা আছে।

৭। বেলতে তো হবেই। একটু মোটা করে, যে সাইজের চান সেই সাইজের। তবে সেই সাইজ যেন আবার আপনার ফ্রাইপ্যান (নন স্টিকি হলে ভাল হয়) কিংবা তাওয়ার চেয়ে বড় না হয়ে যায় ...

৮। গরম তাওয়া, ঢাকনা লাগবে। পিৎজার উপরে যত কম জায়গা ছাড়া যায় তত বেশি ঘন তাপ লাগার কথা।

৯। তাওয়া বা ফ্রাইপ্যানে বেলা ক্রাস্ট (রুটি !) টা সেঁকতে হবে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতে দুই সাইডেই ভাল তাপ লাগবে। সেঁকার সময় উল্টানো যাবে না। আগুন কম-মিডিয়াম থাকবে, বেশি দিলে পুড়ে যেতে পারে।

১০। যখন ক্রাস্টের এইপাশটা এরকম বহু বাতাসের পুটুলি দেখা যাবে। তার মানে হয়তো হয়ে গেছে। পরে ছবি দেখুন।

১১। খুন্তি দিয়ে তুলে যদি নিচের দিক হয়ে গেছে বোঝা যায় তাহলে নামিয়ে ফেলুন। নামিয়ে সেটা একটা প্লেটে (বা অন্য কোথাও) উল্টিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ যে দিক ফ্রাইপ্যানের সাথে লেগে ছিলো সেটা উপরের দিকে রাখতে হবে। এই দিকটা মচমচে হয়ে যাওয়ার কথা। একটু ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিন, যেন পরেরবার উল্টাদিক সেঁকার সময়ে এদিকে ভেতরে বাতাসের পুটুলি জমা না হয়। এছাড়া টপিংগুলোও একটু ভেতরে ঢোকে।

১২। প্রথমে এর উপরে সস মাখিয়ে দিন -- সসটা অনেকটা সিমেন্টের মত, টপিংগুলোকে ভালভাবে ক্রাস্টে লাগিয়ে ফেলে। তাছাড়া সসের স্বাদ তো আছেই। এই কারণে ক্রাস্টের ময়ানে লবণ না দিলেও চলে

১৩। এরপর ইচ্ছামাফিক টপিং দিন

১৪। টপিং-২


১৫। সব শেষে চিজ ছড়িয়ে দিন -- গেল আমার চেডার চিজ

১৬। আসলে এটা একাধারে বানানো তৃতীয় পিজা। সেজন্য চিজ কম হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে স্লাইস চিজ ছিলো, সেটাই দিয়ে দেয়া হল। চেডার বা এই স্লাইস চিজ - দুইটাই লবণাক্ত। ময়াণে বা টপিং-এ আলাদা লবণ না লাগার এটাও একটা কারণ ...

১৭। এবার পুরা জিনিষটাকে আবার ফ্রাইপ্যান বা তাওয়াতে দিয়ে বেক করুন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর অল্প আঁচে করতে হবে। এতে আস্তে আস্তে চিজ গলে পুরা টপিং-এ মাখা মাখা হবে। ক্রাস্টের নিচের (আগে যেটা উপরে ছিল) দিকটা সেঁকা হয়ে বেশ খাস্তা হবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা তুলে দেখতে হবে উপরের চিজে বুদবুদের মত ফুটছে কি না। ওটা হলে রান্না পুরা হয়েছে বোঝা যায়। ওভেনে হলে অবশ্য আগুনের আঁচে উপরের দিকটা লালচে হয়ে যেত। নিচের ছবিরটা হয়নি, এটা সম্পুর্ন হতে আরো সময় লাগবে।

১৮। এই হল ফাইনাল প্রোডাক্ট। এটা অবশ্য দ্বিতীয় পিজাটা। উপরের ছবিগুলো ৩য়টা বানানোর সময়ে তোলা।


তারপর কেমন করে খেতে হবে সেটা কি বলে দেয়া লাগবে?

কোন মন্তব্য নেই: