সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে একটা বিরাট ইন্টারচেঞ্জের কাজ চলমান রয়েছে এখন। এটা দেখতে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জের থেকে বেশ অন্যরকম। ভাঙ্গাতে যে ইন্টাসেকশন রয়েছে সেটার টেকনিক্যাল নাম ক্লোভারলিফ ইন্টারসেকশন অর্থাৎ এটা দেখতে লবঙ্গপাতার মত। হাটিকুমরুলেরটা একটু ভিন্ন। বিভিন্ন থ্রিডি চিত্রে এটা দেখতে বেশ লাগে কিন্তু কোনদিক দিয়ে কোনদিকে কিভাবে যাবে সেটা বুঝতে কষ্ট হয়। তাই নিজে নিজে চেষ্টা করে সেটার একটা সহজ (!) সরল (!) চিত্র বানালাম যেটাতে গাড়ি চলাচলের দিক দেখানো হয়েছে। এটাতে বিভিন্ন রঙের দিক নির্দেশক তীর চিহ্ন দিয়ে গাড়ির গন্তব্য বোঝানো হয়েছে।
হুট করে পরিকল্পনা করা হল যে ঈদের বন্ধে আবার নেপালে যাব। গতবার সময়ের অভাবে দরবার স্কয়ার দেখতে পারিনি, এবার সেটা কভার করতে হবে। সাথে আরো ৩টা জায়গা সহ মোট চারটি ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট দেখা হবে। এছাড়া গতবার মেঘের দেশ চন্দ্রগিরিতে মাত্র এক রাত থেকে মন ভরেনি, এখানেও ২ রাত থাকতে হবে। যেই কথা সেই কাজ, ঈদের সময়ে এবার বাংলা নববর্ষ সহ উইকএন্ড মিলিয়ে লম্বা ছুটি - তাই টিকেটের হাহাকার। প্লেনের বিজনেস ক্লাসে টিকেট পাওয়া যেতে পারে, ইকোনমিতে নাই - চিন্তা করে দেখলাম সারা জীবনে কখনো বিজনেস ক্লাসে ওঠা হবে কি না কে জানে, এই বার চান্স নিয়ে নেই; কিন্তু আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট কিছুতেই আমাদের বেশি খরচা করাতে রাজি না। এক দিন এগিয়ে ইকোনমিতেই টিকেট করা হল। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে কাটা হয়েছে বলে খরচটা একটু বেশিই হল (১০০% দামে)। যা হোক টিকেটের ভেজালের জন্য ঈদের ছুটির আগের ২ দিন ছুটি নিতে হল। বিস্তারিত খরচাপাতি শেষে দিলাম।
আগের যুগের মত ফিল্মের ক্যামেরা নাই; ডিজিটাল ক্যামেরায় কোনো মিতব্যয়ীতা নাই। তাই যথারীতি বহু অপ্রয়োজনীয় ছবি তোলা হয়েছে। সবগুলো দিলে পাঠকের কথা বাদ দেই, আমি নিজেই বিরক্ত হয়ে যাব। তাই কয়েকটা মাত্র রিপ্রেজেন্টেটিভ ছবি মিলিয়ে কোলাজ করে দেয়া হল।
চন্দ্রগিরি হিলস রিসর্ট একটা ৫ তারকা বিশিষ্ট রিসর্ট এবং উপযুক্ত সময়ে এভারেস্ট সহ সম্পুর্ন অন্নপূর্ণা রেঞ্জের চূড়াগুলো এখান থেকে দেখা যায়। তবে এপ্রিল মাসে চারিদিক ঘোলা, দুরের কিছুই দেখা যায় নি। গতবছর জুনের শেষেও মেঘের ফাঁকে দুরের চূড়া দেখেছিলাম; চারিদিকের দৃশ্যের পরিবর্তনগুলো আরো নাটকীয় ছিল (আগের ছবি ব্লগের লিংক, ভিডিওর লিংক)। তবে এবার আবহাওয়া আউটডোর এক্টিভিটির জন্য সবচেয়ে সুন্দর ছিল। তবে সন্ধ্যায় এবং রাতে আমাদের জন্য এটা এখনও অনেক ঠান্ডা ...
ছবি: চন্দ্রগিরি হিল রিসর্টে ১ম দিন। গলায় ঝুলানো কাপড়টা ওখানকার ট্রাভেল এজেন্ট আমাদেরকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করার সময়ে দিয়েছিল।(ছবিতে ক্লিক করলে আরো বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
ছবি:
চন্দ্রগিরি হিল রিসর্টে ২য় দিন সকালে। এরপর রিসর্ট থেকে বের হয়ে পাহাড়ের চূড়ার ল্যান্ডিং স্টেশনের আশেপাশে বেড়াতে গিয়েছিলাম। (ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
চন্দ্রগিরিতে কেবল কারে করে যে কেউ যেতে পারে। সেখানে যেমন সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটা মন্দির আছে (Baleshwar Mahadev Temple) তেমনি প্রচুর একটিভিটি যেমন: ওয়াল ক্লাইম্বিং, ঘোড়ায় চড়া, বাচ্চাদের প্লেগ্রাউন্ড, ট্রাম্পোলিন, বিরাট একটা সুইং টাইপের নিরীহ এক্টিভিটির পাশাপাশি, অনেক উঁচু জিপ লাইন দিয়ে সাইকেল চালানো কিংবা ঝুলে ঝুলে যাওয়ার অপশন আছে, এছাড়া ফ্রী-ফল নামেও একটা রাইড আছে। এখানে খাওয়া দাওয়ার অনেকরকম অপশন আছে, সুভেনির শপও আছে। এগুলো সবই কেবল কার স্টেশন থেকে হাঁটা দূরত্বে। আর আমরা যেই রিসর্টে ছিলাম সেটা একটু দুরে, শাটল সার্ভিসে আনা নেয়া করে।
ছবি: কেবল কার থেকে নেমে চন্দ্রগিরি হিলস রিসর্টে যাওয়ার পথেই অনেকগুলো এক্টিভিটি দেখা যায়। এবার সেগুলো দেখতে গেলাম। মন্দিরগুলো যথারীতি সবথেকে উঁচু পয়েন্টে বানানো - এর ভিউ পয়েন্টগুলো থেকে উপযুক্ত সময়ে হিমালয়ের অন্নপূর্ণা পর্বতমালার বিভিন্ন চূড়া দেখা যায়। (ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
আমাদের এখানে ২ রাত থাকা শেষ। দৃশ্যমালায় আশাহত হলেও আবহাওয়া চমৎকার থাকায় আনন্দিত। আমরা ১২টার আগেই চেকআউট করে কেবল কারে করে নিচে। সেখান থেকে আজ দুইটা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট দেখে তারপর থামেল এলাকায় আরেকটা হোটেলে চেক-ইন করবো দুই রাতের জন্য।
(ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
৩য় দিন (১০-এপ্রিল-২০২৪): শম্ভুনাথ মন্দির (Swayambhunath) - UNESCO World Heritage Site
পুরাই বাজার, মূল্য হাজার!
সয়াম্ভুনাথ বা শম্ভুনাথ মন্দির একটা ইউনেস্কো ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট। আমাদের এবারের সফরের মূল ৪টি লক্ষ্যের একটি। তীর্থস্থান হিসেবে যে পরিমান গাম্ভীর্য থাকবে ভেবেছিলাম, ততটা তো নাইই বরং এইটা প্রচন্ড রকম প্রাণবন্ত একটা জায়গা। সিড়ি বেয়ে উঠার সময়ে এবং উপরের চত্বরেও চারিদিকে সুভেনির সহ বিভিন্ন রকম দোকান। শান্ত প্রকৃতির বানর ঘুরছে, কুড়িয়ে নিয়ে খাবার খাচ্ছে; এছাড়া চারিদিকে প্রচুর কুকুর আর কবুতর। আরেকদিকে প্রদীপ জ্বলছে, পূজা চলছে ... ...। এর চত্বর থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকার চারিদিকের একটা ভাল দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সার্কভূক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য এখানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ রূপী।
ছবি: শম্ভুনাথের জোড়াতালি ছবি (ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার একটা বিখ্যাত ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট। কাঠমান্ডুতে ৩টা দরবার স্কয়ার আছে - সবগুলোই হেরিটেজ সাইট। স্থাপত্য আর ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে এটা সোনার খনির মত। এ্যাত কিছু দেখার আছে যে দেখে শেষ করাই মুশকিল। ভেতরে অনেকগুলো অসাধারণ এবং ডিজিটাল অডিও-ভিজুয়াল যাদুঘর আছে। ঘন ঘন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে এটাতে এখনও বেশ কিছু সংরক্ষণমূলক পূণঃনির্মাণ চলছে - ঐ এলাকাগুলো এখনও উন্মুক্ত নয়। সার্ক দেশভুক্ত নাগরীকদের এটাতে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০০ রূপী -- জ্বী, টাইপিং ভুল নয়, পাঁচশত রূপী জনপ্রতি।
ছবি: কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারের জোড়াতালি ছবি (ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
৪র্থ দিন (১১-এপ্রিল-২০২৪): পাতান দরবার স্কয়ার - UNESCO World Heritage Site
কাঠমান্ডুর ললিতপুরে (থামেল থেকে ৬ কিলোমিটার) অবস্থিত পাতান দরবার স্কয়ারও একটি ইউনেস্কো ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট। দরবার স্কয়ার এবং এর আশেপাশের জনবসতি মিলেই সেটা টুরিস্ট এলাকা। আকর্ষনীয় স্থাপত্যশৈলী সহ এটার ভেতরে ২ তলা, ৩ তলা কয়েকটি দূর্দান্ত স্থাপত্যের জাদুঘর রয়েছে। কয়েকটি জায়গায় জাদুঘরের মেঝে কাদামাটি লেপে করা, জুতা খুলে প্রবেশ করতে হয়। এইখানেও পেছনে একটা চমৎকার জলাধার রয়েছে। আমরা যখন ঘুরছিলাম তখন এটার একটা চত্বরে বিয়ের ফটোগ্রাফির শুটিং চলতেছিল। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২৫০ রূপী।
ছবি: পাতান দরবার স্কয়ারের জোড়াতালি ছবি (ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
কাঠমান্ডুর সাথেই (থামেল থেকে ১৬ কিলোমিটার) ভক্তপুর এলাকায় এই দরবার স্কয়ার; এটিও একটি ইউনেস্কো ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট। দর্শনীয় এলাকার হিসেবে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড়। বেশ অনেকটা এলাকা জুড়ে স্থানীয় বাড়িঘরের মাঝে মাঝে ছড়িয়ে আরও কিছু স্থাপনা আছে। এইখানেও একটা মিউজিক ভিডিও (সিনেমার অংশও হতে পারে) শুটিং চলছিল; বড় বড় রিফ্লেক্টর সহ একই সিন কয়েকবার করে করা দেখতে আমাদেরই ধৈর্য্যচ্যূতি ঘটতেছিল। এখানে নাকি চারটা চত্বর আছে: সম্ভবত আমরা সবগুলোতেই যেতে পেরেছিলাম। ভুমিকম্পে এখানকার স্থাপনাগুলো বেশ ভালই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মনে হল। আরেকদিকে একটা বড় বাঁধানো পুকুর আছে যেখানে লোকজনকে প্যাডেল বোট টাইপের জিনিষে বোটিং করতেও দেখলাম। সার্ক দেশভুক্ত দেশেগুলোর নাগরিকদের এখানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০০ (পাঁচশত) রূপী।
ছবি: ভক্তপুর দরবার স্কয়ারের জোড়াতালি ছবি (ছবিতে ক্লিক করলে আরো
বড় রেজুলেশনে পাওয়া যাবে)
১। শেষ মুহুর্তে টিকিট কাটা হয়েছিল বলে বিমানের আপ-ডাউন ইকোনমি (ফুল ফেয়ার)
: জনপ্রতি- ৫২ হাজার টাকা * ৩ জন = মোট ১,৫৬,০০০ টাকা।
২। নাস্তা সহ (৫-স্টার) ২ রাত + নাস্তা সহ (৪-স্টার) ২ রাত + এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি দিয়ে চন্দ্রগিরি রিসর্টে যাওয়া + গাড়ি দিয়ে রিসর্ট থেকে অন্য হোটেলে যাওয়া + সবগুলো (৪টা) টুরিস্ট সাইটে ভ্রমন + এয়ারপোর্ট ড্রপ
: মোট ১,৩৪,০০০ টাকা।
৩। টুরিস্ট সাইটে প্রবেশ মূল্য:
: শম্ভুনাথ - ৫০ * ৩ = ১৫০ রূপী।
: কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার - ৫০০*৩ = ১৫০০ রূপী
: পাতান দরবার স্কয়ার - ২৫০*৩ = ৭৫০ রূপী
: ভক্তপুর দরবার স্কয়ার - ৫০০*৩ = ১৫০০ রূপী
৪। খাওয়া দাওয়া:
ঢাকার ধানমন্ডি বা বনানী-গুলশানের মতই দাম। রামাদা এনকোর ৪ স্টার হোটেলে চন্দ্রগিরি ৫ স্টারের চেয়ে দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে। পিজা কিংবা জাপানিজ খাবারের দাম ঢাকার চেয়ে একটু (১০~২০%) কম। থালী সস্তা, তবে আমার এবার সেটা খাইনি। নরমাল দোকানে রাতে ৩-নান+২পালক পনির+পানি খেয়েছি =১১২০ রূপী লেগেছে।
(১ ডলার = ১৩০~১৩১ রূপী)
৫। সুভ্যেনির
দাম খুব একটা বেশি না, আবার কমও না। পুশমিনা শাল ১০০০ রূপীরও আছে আবার ২৬০০০ রূপীরও আছে। বিভিন্ন রকম স্টোনের গয়না - দাম ঢাকার চেয়ে কম।