মুক্তিনাথ থেকে বের হয়ে জমসম পর্যন্ত আসতে ঘন্টাখানেক লেগেছিল, কারণ এবার সেই কাগবেনীর সেলফী স্পট কিংবা মূল রাস্তা থেকে বের হয়ে কাগবেনী যাওয়া আসা করতে হয়নি। এবার জমসমেও আমাদের কোনো কাজ নাই, তাই সেখানেও থামিনি। একটানে চলে আসতে চেয়েছিলাম। রাস্তা সেই আগেরটিই -- ভীষন উত্তেজনাপূর্ণ!
এই পথে যখন এটার উপর দিয়ে ব্রীজ হয়ে যাবে তখন রাস্তাটা হয়তো এত ভয় জাগানো থাকবে না
কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার কাজ প্রায় শেষের পথে। দেখতে দারুন লাগে।
আর কিছু জায়গায় এখনো রাস্তার কাজ তেমন এগোয়নি। এগুলোর মধ্যে এক ধরণের বুনো সৌন্দর্য আছে।
এর মধ্যে হঠাৎ এক জায়গায় রাস্তায় আটকে গেলাম। সামনে একটা বিরাটাকায় মেশিন দিয়ে রাস্তার পাথর ভাংছে। যাওয়ার সময় এই উঁচা উটের পিঠের মত পাথরটা টপকে গিয়েছিল আমাদের মাউন্টেন জীপ। এবার আমাদের চোখের সামনেই ২০ মিনিট ধরে সেই পাথর গুড়া করে পথ সমতল করার কাজ করছিল মেশিনটি। দুই পাশেই গাড়ির লাইন জমে গিয়েছিল তাই একটু পরে কাজ শেষ না হলেও, ভাঙ্গা পাথরগুলো সরিয়ে আমাদের যাওয়ার জায়গা করে দিল।
দুরে একটা জলপ্রপাত দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের পুরা পথের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। যাওয়ার সময়ে দেখেছি তবে থামার সাহস হয়নি। কারণ এটার দুইপাশে ল্যান্ডস্লাইড হওয়ার মত আলগা পাথর আর কাদাময় রাস্তা। থামলে গাড়ি আটকে যেতে পারে। ড্রাইভার সাহেব খুব সাবধানে এই জায়গাটা পার হয়েছিল। এটার নাম রূপসী জলপ্রপাত।
জলপ্রপাতের সামনে স্থায়ী ব্রীজ নাই। যেই কাঠের ব্রীজটা আছে সেটা পার হওয়ার সময় গাড়ির জানালা দিয়ে এই ছবিটা তোলা গেল।
জলপ্রপাত পার হয়েই আবার জ্যাম। ঢালের বাঁকে একটা বড় ট্রাকের কারণে আমাদের সাইড করে থামতে হল। এই ফাঁকে ঝটপট গাড়ি থেকে নেমে রূপসী জলপ্রপাত সহ আরো কয়েকটা ছবি তোলা গেল। কিন্তু সেই জ্যাম ছুটে গেল মিনিট খানেকের মধ্যেই তাই জলপ্রপাতের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল না।
তাতোপানি = তাতানো পানি। এখানে হট স্প্রিং আছে, তাই হয়তো এই জায়গার এরকম নাম।
তাতোপানি পৌঁছে দুপুরের খাওয়া। যাওয়ার সময়েও এখানে খেয়েছিলাম।
যাওয়ার সময়ে দূর্গম রাস্তার মাঝে হঠাৎ করে এই ঝকঝকে হোটেলটা যেন ম্যাজিকের মত হাজির হয়েছিল। তখনই এই হোটেলের থাকার একটা ইচ্ছা জেগেছিল। কিন্তু আমাদের ট্যূর অপারেটর এই
হোটেলের সাথে কখনো ব্যবসা করেনি। উনিও সস্ত্রীক আমাদের সাথে অন্য গাড়িতে কাছাকাছি সময়েই এদিকে এসেছেন। আগের পর্বে ওনাদের ছবিও দিয়েছি। এবার জমসম থেকেই ফোনাফুনি করে এটা বুক
করা হয়েছিল। আমরা এসে সামনের দিকের ভাল রুম নিলাম। অবশ্য এতে সাড়ে
পাঁচহাজার রুপীর মত বেশি খরচ সেখানেই শোধ করতে হয়েছে।
এই সেই হোটেল। এটা অফসিজন তাই হয়তো একটু কম জমজমাট। আমরা দোতলায় বামের বারান্দা ছাড়া রুমটা নিয়েছিলাম (ছবির মাঝ বরাবর)। নিচতলায় সেই রেস্টুরেন্ট।
আহা পিজা ...
নেপালে মোমো খাব না তা কি হয়! ভেজ মোমো এগুলো, তবে নন-ভেজও পাওয়া যায়।
২৮-জুন-২০২৩
ভোরে ঘুম থেকে উঠে এখানেও একটা অসাধারণ দৃশ্য চোখে পড়লো। গতদিনেও এদিকে তাকিয়ে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ছাড়া কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু ভোরে ঝকঝকে আকাশ আর একটা বরফ ঢাকা চূড়া চোখে পড়লো। নাস্তা খেয়ে বের হতে হতে এই চুড়াও যথারীতি দুষ্টু মেঘেদের আড়ালে চলে গিয়েছিল। তখন বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না যে এখানে পেছনে একটা দূর্ধর্ষ দৃশ্য আছে।
নীলগিরি দক্ষিন চূড়া, উচ্চতা ৬৮৩৯ মিটার। মনে রাখার মত একটা দৃশ্য।
সকালের নাস্তা।
ভিডিও#৭
সকালে ড্রাইভার সাহেব জানালেন আমাদের আগে পরে দুইদিকেই ল্যান্ডস্লাইডে রাস্তা বন্ধ আছে; কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। তবে ঘন্টাখানেক পরেই আমাদের যাওয়ার রাস্তা চালু হয়েছে এমন খবর পাওয়া গেল। ড্রাইভার সাহেবের পরিচিতি নেটওয়ার্ক বেশ ভাল - সবারই খোঁজখবর রাখেন। নিজের জায়গার খবর জানান আবার অন্য ড্রাইভার কোথায় সেই খবরও নিয়ে নেন।
আবার পথে
ভাঙ্গা পাথরগুলো আবার লোহার জালে আটকে বড় ব্লকের আকার দেয়া। সেগুলো স্তরে স্তরে বসিয়ে দেয়াল, রিটেইনিং ওয়াল - এই জিনিষটা আমাদের দেশে দেখার খুব একটা সুযোগ হয় না।
সামনের পথ এবং ট্রেকিং ও চলছে কারো কারো, নাকি স্থানীয়?!
এটা তিপলাং মহাবীর জলপ্রপাত। রাস্তার ঠিক পাশেই। এটাতে পর্যটকদের জন্য সিড়ি, ছবি তোলার জায়গা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা আছে। কোনরকম টিকিটের ব্যবস্থা নাই, ফ্রী।
তিপলাং মহাবীর জলপ্রপাত। জলপ্রপাত দেখলেই এর উজানে কী আছে দেখতে কৌতুহল জাগে ...
মেইন রাস্তা থেকে তিপলাং মহাবীর জলপ্রপাত
পথে। পাহাড় শুধু খাড়াই নহে, মাথার উপরেও ছাদের মত বের হয়ে এসেছে ... পাথর খোদাই করে রাস্তা চওড়া করা হয়েছে।
চা ও বাথরুম বিরতি এখানে। যাওয়ার সময়ে এখানে আমাদের ট্যূর অপারেটর সস্ত্রীক দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন। এখানে আমরা ওনাদেরকে দেখে মিনিটখানেকের জন্য থেমেছিলাম সেবার। এই জায়গার নাম গালেশ্বর। এর পরে সামনে যেই শহর সেটার নাম বেনী।
নদীর পাশের রাস্তা খুব খারাপ থাকাতে যাওয়ার সময়ও এইদিকে উঁচু পাহাড়ের উপরের বেনী শহরের মাঝ দিয়ে গিয়েছিলাম।
বেনী এলাকা। সেই নদী থেকে অনেক উঁচুতে।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য একটা ঝুলন্ত সেতু। এটার ড্রাইভার সাহেবের রেকমেন্ডেশন। বেনী থেকে নিচের দিকে না নেমে উঁচুর দিয়ে দিয়েই বাগলুং নামক শহরে পৌছুলাম।
নেপালের সবচেয়ে লম্বা ঝুলন্ত সেতু। উপরে উঠলে ভয়ে শিউরে উঠতে হয়। এটাতে উঠতেও কোনো টাকা লাগে না।
ঝুলন্ত সেতুর মাঝ থেকে একপাশের দৃশ্য। প্রচন্ত বাতাসে হাত থেকে ক্যামেরা উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন ভয় কাজ করছিল।
গান্দেকী গোল্ডেন ব্রীজ, ৫৬৭ মিটার লম্বা আর নদী থেকে ১২২ মিটার উঁচুতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন