শুক্রবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

হিন্দির আগ্রাসন ও ভারতের ভাষা শহীদগণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারীকে নিয়ে কয়েকদিন আগেই একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখলাম। এ ব্যাপারে আমরা যেমন জানি, পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেনারেশনের ছেলেপেলেরা তেমন জানে না। এরকম একটা প্রতিবেদন দেখালো যেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রবীন লোকজন বললেন, তাঁদের জীবদ্দশায় এটা ঘটেছে - ভোলার প্রশ্নই উঠেনা; অপরদিকে একজন তরুণ/তরুণী বললেন যে ২১ জন মারা গিয়েছিলো (!), আরেকজন বললো যে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে মাতৃভাষার দাবীতে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলো কিন্তু এটা তাঁদের কোন পাঠ্যবইয়ে নাই। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আজ রাতে আমার শ্বশুরবাবার কাছেএকটা ব্যাপার জেনে অবাক হলাম যে বাংলা ভাষার জন্য শুধু বাংলাদেশেই পাকিস্থানী শাসকের গুলিতে বাঙালীরা প্রাণ দেয়নি। ভাষার দাবীতে ৫২'র পরেও শাসকের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে মানুষের - সেটা ভারতে। সুতরাং শুধু পাকিস্থানীরাই নয় ভারতীয় শাসকগণও একই ভাবে ভাষাকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। ইন্টারনেট ঘাটলে অনেক তথ্যই বের হয়ে আসবে। পাকিস্থানীদের দমণনীতির পাশাপাশি ভারতীয়দের দমণনীতিও সর্বসম্মুখে প্রকাশিত থাকা উচিত। উইকিপিডিয়াতে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পেলাম না।

১৯৫২ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের পট্টি শ্রীরামালু, রাজ্যের নিজের ভাষার দাবীতে অনশন করে মৃত্যূবরণ করেন।

১৯৬১ সালের ১৯শে মে আসামের কাছারহাটের শিলচরে শুধুমাত্র অসমীয়াকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে এবং বাংলাকে স্বীকৃতির দাবীতে ১১ জন পুলিশের গুলিতে মারা যান। তাঁরা হলেন: (নামগুলোর বানান ভুল হতে পারে - সেজন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী)
১. শহীদ কমলা ভট্ট্যাচার্য (বাংলা ভাষার জন্য প্রথম মহিলা শহীদ)
২. শহীদ শচীন্দ্র পাল
৩. শহীদ বীরেন্দ্র সূত্রধর
৪. শহীদ কানাই লাল নিয়োগী
৫. শহীদ চাঁদিচরণ সূত্রধর
৬. শহীদ সত্যেন্দ্র দেব
৭. শহীদ হিতেশ বিশ্বাস
৮. শহীদ কুমুদ রঞ্জন দাস
৯. শহীদ তারানি দেবনাথ
১০. শহীদ সুনীল সরকার
১১. শহীদ সুকুমার পুরকায়স্থ
এর ফলে আসাম সরকার বাংলাকে আসামের ৩টি জেলায় স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৬৫ সালে তামিলনাড়ু প্রদেশে ভাষার দাবীতে আন্দোলন হয়। সেখানে ভাষার দাবীতে দুইব্যক্তি নিজ শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন। এরপর দুইমাসব্যাপী আন্দোলনে ৬০ জনের বেশী আন্দোলনকারী পুলিশের গুলিতে মারা যান। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে দুইজন পুলিশও নিহত হন।

১৯৮০ সালে কর্ণাটকের রাষ্ট্রীয় ভাষা কান্নাড়া করার জন্য কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ভি.কে. গোকাকের নেতৃত্বাধীন কমিটি সুপারিশ করে। রাজ্যের ভেতরে এটার বিরোধীতাও হয়। তারপর সিনেমা ব্যক্তিত্ব ড. রাজকুমারের নেতৃত্বে কান্নাড়া ভাষার জন্য আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত প্রাদেশিক সরকার কান্নাড়াকে কর্ণাটকের সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৮৬ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় অসমীয়াকে একমাত্র শিক্ষাদান মাধ্যম করতে চাইলে আবার আন্দোলন হয়। করিমগঞ্জের আরোও দুই জন এর প্রতিবাদে ২১শে জুলাই, ১৯৮৬ পুলিশের হাতে শহীদ হন। এছাড়া আহত এবং পঙ্গু হয়ে যান বেশ কিছু লোক। আসামের কাছাড়, শিলচর ও হাইলাকান্দি জেলায় অসমীয়ার পাশাপাশি বাংলাও (মূলতঃ সিলেটি) স্বীকৃত ভাষা।

এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৬ই মার্চ, আসামের করিমগঞ্জে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীদের ভাষা স্বীকৃতির দাবীতে আরোও একজন শহীদ হন। উনি হলেন সুদেষ্ণা সিংহ (বুলু) - মাতৃভাষার জন্য ২য় মহিলা শহীদ।

যতদুর জানি, আসামের বর্ণমালা এবং বাংলা বর্ণমালার অক্ষরগুলো একটি অক্ষর বাদে অভিন্ন - অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ একটু আলাদা। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা মিশনের সম্মানে সিয়েরা লিওনে বাংলা সহকারী রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা।

সূত্রসমূহ:
http://www.freewebs.com/may19/

আরো সূত্র: বাংলানামা ব্লগ

উইকিপিডিয়াতে তামিল ভাষা আন্দোলন (কৃতজ্ঞতা: রাগিব হাসান)

উইকিপিডিয়াতে কর্ণাটকের ভাষা আন্দোলন (কৃতজ্ঞতা: রাগিব হাসান)

উইকিপিডিয়াতে অন্ধ্র প্রদেশের পট্টি শ্রীরামালার আন্দোলন (কৃতজ্ঞতা: দিগন্ত)

(লেখাটি ইতিপূর্বে একটু পরিবর্তিত আকারে সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিল। ওখানকার আলোচনার ভিত্তিতে আরোও তথ্য যোগ করে এখানে প্রকাশ করা হল।)