বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১১

কাজ-কর্ম নিয়ে উর্বর(!) চিন্তাভাবনা

ঢিসক্লেইমার: এই লেখাটা আমার উর্বর মস্তিষ্কের সাময়িক উত্তেজনা এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে নামানো হয়েছে। কাজেই ইহার কোন তথ্যসূত্র চাইলে নিজ দায়িত্বে খুঁজিয়া লইতে হইবেক -- আমার মনে হয়, এর সূত্রগুচ্ছগুলোর কিছু অংশ আমার তথাকথিত উর্বর মস্তিষ্কে জটা পাকাইয়া রহিয়াছে।

যদি বলা হয় কী কাজ কর? তাহলে আমার মেয়ে হয়তো বলবে "কুকুল দেখি' -- আসলেই সে ইউটিউবে চালিয়ে রাখা কুকুরের ঘেউ ঘেউ দেখছে। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমার প্রতিষ্ঠান আর পদবী বলবো হয়তো। অর্থাৎ কাজ বলতে আমি চাকুরী বাকুরীকেই বুঝিয়ে থাকি -- এই কাজের বিনিময়ে আমি বেতন পাই। এই লেখার পয়েন্ট অব ভিউ হল, যেই কাজ কোন না কোন ভাবে সমাজে অবদান রাখে। ... ... নাহ্ ঠিক মনমত হল না ... ... আরেকবার একটু গুছিয়ে শুরু করার চেষ্টা করি:

আমার মেয়ের বয়স ১বছর ৮মাস ৭ দিন। ওর কাজ হিসেবে "কাপল ধুই' কিংবা "কাক দেখি' ঠিক আছে বলেই মনে হয়। আবার এর চেয়ে একটু বড় হলে ওকে স্কুলে পাঠাতে হবে -- তখন কাজ হবে লেখাপড়া শেখা এবং তার সাথে সাথে অন্য মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, অন্য প্রাণীদেরকে তো এ্যাত কঠিন স্কুল লাইফ পার করতে হয় না, আমাদের হয় কেন? কেন এই শৃঙ্খলা, কেন আমরা অন্য প্রাণীদের মত পারি না? এই প্রশ্নের একটা সুন্দর উত্তর হয়তো আছে ... ... । সেটা যাই হোক মোটা দাগে মনে হয়, বড় বা এডাল্ট হওয়ার আগে আমরা শিশু, কিশোরদেরকে সংসারের বৃহৎ কর্মযজ্ঞে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি -- তাই শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর মধ্যে কোন একটা দক্ষতা বা স্কিল উন্নয়নের চেষ্টা হয়। তাহলে ব্যাপারটা হল -- সেই কর্মযজ্ঞটাই হল আসল কাজ, আর আগেরগুলো কাজ হলেও সেটা সেই আসল কাজের পূর্বপ্রস্তুতি!

আর এই আসল কাজ বলি সেগুলোকেই যেগুলোর বিনিময়ে আয় উপার্জন হয় এবং যা সমাজব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভাল বা পজিটিভ অবদান রাখে। কে কী কাজ করে বা একটা সমাজে বা দেশে বা এলাকায় কাজের অবস্থা কী, এসব পরিসংখ্যান বা অর্থনৈতীক হিসাব কিতাবে আমরা তাই "কুকুল দেখা'কে গণ্য করি না কিন্তু "সকালে বাবা কাজে যায়' এটা হিসাবে ধরি। বেকারত্বের হিসাবের সময়েও এই ব্যাপারটাকেই উল্টাদিক থেকে হিসাব করি।

চাকুরী বা ব্যবসা করা যে কাজ সেটা আমরা জানি, কিন্তু যদি একটু বোকার মত কিংবা বেশি চালাকের মত প্রশ্ন করি -- ভিক্ষা করা, চুরি করা কিংবা খেলাধুলা করা, কবিতা লেখা কি কাজ? এগুলো সম্পর্কে আমার কিছু বিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনা আছে। সেই চিন্তাভাবনাকে সরলীকৃত রূপে বলার জন্য কাজের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার সাহায্য নিতে পারি:

বিজ্ঞান বইয়ে পরেছিলাম: কাজ = বল x সরণ .... .... যদিও এই সংজ্ঞার মধ্যে বিরাট ফাঁক আছে সেটা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় (আপেক্ষিক গতি স্খিতি + প্রাথমিক ও শেষ অবস্থা ইত্যাদি)। তাই সরাসরি এর গাণিতিক অর্থ নিয়ে মাথা ঘামাবো না। বল অর্থ কতটুকু ইফোর্ট বা প্রচেষ্টা দেয়া হচ্ছে, আর সরণ = বলে কতটুকু পরিবর্তন করছে সেটা ধরে নিলেই আমার তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে করি। তবে, আবার একটু মনে করিয়ে দেই, ইহা একটি তথাকথিত বিশ্লেষন অথবা চিন্তাভাবনা - যা মাথায় কুটকুট করছিল দেখে বের করে দিলাম।

ভিক্ষা করা
সারাদিনে একজন ভিক্ষুকে ভিক্ষা সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয় এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকার কথা না। কিন্তু সেটা কি কোনো প্রোডাক্টিভ কাজ? এই কাজকে কি আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে গণ্য করি? প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম এতে কম নয়, কিন্তু সরণ? এটা তো মনে হয় ঋণাত্নক। সমাজে এটা বিরক্তি ছাড়া কিছুই দেয় না।

আচ্ছা, ভিক্ষুকদেরকে যদি একটা অপশন দেয়া হয়, যে সারাদিনে তারা একই পরিমাণ পরিশ্রম করবে এবং একই পরিমান ইনকাম করবে কিন্তু সেটা ভিক্ষা করে নয় - বরং একটা ভাল কাজ করে: সেটা কেমন হয়? একমাসে যা ভিক্ষা দেই সেটা সেই কাজ করার ফান্ডে দিয়ে রাখবো। এই কাজ কেমন হতে পারে সে জন্য একটা ব্রেইন স্টর্মিং দরকার, আর প্রয়োগের জন্য একটা আগ্রহী আর্গানাইজিং গ্রুপ দরকার। ব্রেইন স্টর্মিং এর শুরুতেই কিছু আইডিয়া দিয়ে রাখি:
১। কোলে শিশু নিয়ে ভিক্ষা করে যে: বাসায় বাচ্চা রাখার কাজ।
২। সাধারণ ভিক্ষুক: রাস্তায় বা অন্য কোনো পাবলিক প্লেস (স্টেশন, স্কুল) পরিষ্কার রাখার কাজ + ভোকাল: দয়া করে বা আল্লার ওয়াস্তে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
৩। বিকলাঙ্গ: অফিসের বিভিন্ন ইনফরমেশন বলবে -- যেমন: মানি অর্ডার করতে হলে ৪ নম্বর কাউন্টারে যান। ইত্যাদি।


চুরি ডাকাতি করা
এই কাজ করতেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আবার পদাধিকার বলেও কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমে এই কাজ করে থাকেন। এগুলো কি কাজ?

কবিতা বা অন্য সাহিত্য চর্চা
এগুলো সমাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান - সেটা অস্বীকারের কোন উপায় নাই। কিন্তু একজন লোক কখন কাজ হিসেবে এগুলোর কথা বলতে পারে? -- যখন কবিতা আবৃত্তি করে, গান গেয়ে, বা গল্প-কবিতা-উপন্যাস ইত্যাদি লিখে বই ছাপিয়ে বা নাটক সিনেমার স্ক্রিপ্টে দিয়ে উপার্জন করতে থাকে -- তাই তো! হুমায়ুন আহমেদ -- লেখক; কিন্তু আমি এই ব্লগ লেখা কি কাজ হিসেবে সহজেই বলতে পারি?

স্পোর্টস
কেউ যদি নিজের আনন্দের জন্য খেলাধুলা করেন তাহলেও কিন্তু সাপোর্টিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য সেটা লাভজনক। কারণ খেলা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সরাঞ্জাম বিক্রি বাড়বে এতে। খেলাধুলা করা মানুষের কর্মদ্যোম ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটাকে কি আমরা কাজ বলি? কী কাজ করেন -- এমন প্রশ্নের জবাবে যদি বলা হয় ক্রিকেট খেলি - তাহলে বুঝতে হবে পেশাদার খেলোয়ার। শখের খেলা কিংবা অবসর বিনোদনের খেলাকে সাধারণত আমরা কাজ করা হিসেবে বলি না, তবে নিঃসন্দেহে সেটা কাজের অনুঘটক হিসেবে বেশ কার্যকর।

কম্পিউটারে কাজ করা
এখানেও যদি উপার্জনের সাথে জড়িত করে চিন্তা করি তাহলে বেশ একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দাঁড়াবে। আমার জন্য অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার কাজ - কারণ আমার লেকচার, প্রশ্নপত্র এবং প্রেজেন্টেশন বানাতে হয় চাকুরীর প্রয়োজনেই। মাঝে মাঝে সেই ডকুমেন্টগুলোতে গ্রাফিক্সের কাজ যথা: কিছু লোগো, কিছু ডিজাইন, কিছু ড্রইং লাগে। কিন্তু আমাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার বলা যাবে না। আমার গ্রাফিক্স, ডিজাইন বা ড্রইং দিয়ে উপার্জনক্ষম কোন পত্রিকা বা প্রকাশনা হয় না। ব্রাউজিং কোনো কোনো সময় কাজ -- কারণ, আমি এর দ্বারা প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাই যা লেকচার, প্রেজেন্টেশনে কাজে লাগে; পাশাপাশি জরুরী দাপ্তরিক ইমেইল, নোটিশ ইত্যাদিও এর মাধ্যমে পাই। তাই ব্রাউজিং কাজ। ব্লগিং, ফেসবুক আমার বিনোদন - এ থেকে উপার্জনক্ষম কোনকিছু এখন পর্যন্ত করিনি, তবে যারা ফেসবুকের অ্যাপস বানিয়ে উপার্জন করে তাঁদের জন্য ফেসবুক কাজের ক্ষেত্র বটে, আর ফেসবুক নির্মাতা বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে।

এখন চেপে রাখা প্রশ্নটা করেই ফেলি -- কম্পিউটারে গেম খেলা কি কাজ? আমার তো গেমের নেশা প্রায়ই কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ... তাই আমার ক্ষেত্রে এটা নেগেটিভ কাজ বা অকাজ। যদি এটা কাজ না হয় তবে, কোন সিস্টেমে যদি গেমিং অপশন তেমন শক্তিশালী না হয় তাহলে এটাকে অকাজের সিস্টেম বলাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে? কিংবা শুধু গেমিং সুবিধা বেশি বলে একটা সিস্টেমকে বেশি কাজের বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে? ... ... এখানে সুক্ষ্ণ বিভেদটা খেয়াল রেখে জবাব দিতে হবে - আমার জন্য যা কাজ না (হয়তো বিনোদন), সেটা অন্য কারো জন্য কাজ হতেও পারে।

শেষ পর্যন্ত কাজ নিয়ে চিন্তাভাবনার জট খুললো নাকি আরো বিষগিট্টু লাগলো সেটা নিয়েই চিন্তাভাবনা বাড়ালাম বলে মনে হয়।

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১১

আরো কত অবাক হওয়া বাকী কে জানে!

কয়েকদিন আগে টেকটিউনস নামক একটি ব্লগ সাইটে লিনাক্স নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম (বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার)। সেখানের একটা মন্তব্যে একজন লিনাক্স সিডি জোগারের উপায় জানতে চেয়েছিলেন। আমি ওনাকে ঠিকানা দিতে বলে জানিয়েছিলাম পাঠিয়ে দেব। সেই অনুযায়ী ওনাকে (এবং আরো দুইজনকে) পরবর্তীতে লিনাক্স মিন্টের ডিভিডি কুরিয়ার করে পাঠিয়েছিলাম।

দেশের লিনাক্স কমিউনিটিতে প্রচলিত প্রথা হল, এমন ক্ষেত্রে সিডির মূল্য আর কুরিয়ারের খরচটা পরবর্তীতে গ্রহীতা, প্রেরকের মোবাইলে ফ্লেক্সি, আইটপআপ ইত্যাদি করে দিয়ে দেন। তবে আমি শুরু থেকেই এরকম করি নাই। একবার অবশ্য নিয়েছিলাম। আমি বলি, আপনি ডিভিডি বা সিডি বুঝে পান, চালিয়ে দেখুন তারপর জানাবেন -- আমি কিভাবে মূল্য শোধ করবেন জানিয়ে দেব।

এই পর্যায়ে আমি তাদেরকে যেটা বলার পরিকল্পনা করে রাখি এবং বলি, সেটা হল: আমাকে এর মূল্য পরিশোধের দরকার নাই; আপনি অন্য একজন সাহায্যপ্রার্থীকে এই একইরকম সাহায্য করবেন -- এতেই আপনার ঋন (!) শোধ হয়ে যাবে। কারণ শুধু আপনার আর আমার মধ্যে লেনদেন সীমাবদ্ধ না থেকে এটা তাহলে ছড়িয়ে পড়বে -- আর সমাজটা এভাবেই সামাজিক হয়।

এই ধারণাটা নতুন কিছু নয়। ছোটবেলায় বড়ভাইদের পকেটের উপর দিয়ে অনেক কিছুই পার করেছি -- তাদেরকে তো সেটা দেয়া যাবে না। আমি সেটা দেই ছোটভাইদেরকে। একইভাবে জুনিয়র কলিগ যদি আমার সাথে ক্যাবে বাসায় আসার পথে লিফট নেয়, তাঁকে বলি শেয়ারটুকু সঞ্চয়ে রাখো, আমি যেমন আগে বড়ভাইদের কাছ থেকে নিয়েছি তেমনি তোমাকেও সামনে ছোটভাইদেরকে দিতে হবে।

বিদেশে যখন নতুন গেলাম, ওখানকার বড়ভাইরা অনেক সাহায্য করেছেন। আমিও যখন একটু পুরানা হলাম, নতুন আগতদেরকে সাহায্য করতাম। --- এভাবেই পারষ্পরিক ভাতৃত্ববোধ বাড়ে, এভাবেই চলা উচিত --- লেনদেনগুলো দুইপক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটা তাই আমার পছন্দ নয়।

অবাক হলাম গতকাল। উনি আমাকে এক ব্যাগ আম পাঠিয়ে দিয়েছেন (জনাব আব্দুর রব সাহেব চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ)। সেই ছড়িয়ে দেয়ার মূলনীতি থেকে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন হলেও আমি সত্যিই আপ্লুত। অন্তত এতে বাসায় - বনের মোষ তাঁড়ানোর জন্য প্রক্ষেপিত কটু কথাগুলো একটু হলেও কমবে।

পঠনের প্রায় ২০ বছর পর নতুন করে এই কবিতাটার মর্মার্থ উপলব্ধি হচ্ছে

The Arrow and the Song
- Henry Wadsworth Longfellow

I shot an arrow into the air,
It fell to earth, I knew not where;
For, so swiftly it flew, the sight
Could not follow it in its flight.

I breathed a song into the air,
It fell to earth, I knew not where;
For who has sight so keen and strong,
That it can follow the flight of song?

Long, long afterward, in an oak
I found the arrow, still unbroke;
And the song, from beginning to end,
I found again in the heart of a friend.

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১১

এ্যাত লাফালাফি, চিল্লাপাল্লা করি কিল্ল্যাইগ্গা?

যাঁরা জানেন না, তাঁদের অনেকেরই মনে চিন্তা খেলা করে, এই লোকগুলো নিজেরা লিনাক্স ব্যবহার করে ভাল কথা, কিন্তু আমাদের পিছে লাগছে ক্যান? এঁদের স্বার্থ কী? এদের কি মহাপুরুষ রোগে ধরছে? কাউরে ইমপ্রেস করতে চায়? নাকি কেউ কি এঁদের টাকা দেয়?: দেয় মনে হয়, অবশ্যই দেয় …. নাইলে কার ঠেকা পড়ছে পকেটের টাকা খরচ করে সিডি বানায় দিবে, সময় খরচ করে আমাদের পেছনে ঘুরবে, ইনস্টল করে দিয়ে যাবে, সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে। আমি আমার মত ভাল আছি, ভাইরাস মারতেছি, রিইনস্টল করছি, এন্টিভাইরাস কিনতেছি … প্রতিনিয়ত এই প্রতিকূল পরিবেশেও আমাকে কত কিছু শিখতে হচ্ছে, লিনাক্সে গেলেও তো শিখতে হবে। … কী?! তোমরা টাকা পাও না কারো কাছ থেকে! তাহলে কি শুধুই দলে ভারী হইতে চাও জন্য এ্যাত কিছু কর? … আচ্ছা ভাল কথা, আমারে বাদ দিয়ে হিসাব কর। … যাও মিয়া ভাগো, আমি চোরাই উইন্ডোজ ব্যবহার করি আমার রিস্কে, তোমার তাতে কী!

জ্বী ভাই, আমার তাতে এসে যায়। আপনি জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আমি কখনই আপনাকে লিনাক্স নিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে যাব না, যদি ইতিমধ্যেই গিয়ে থাকি তবে সেটা ভুল হয়েছে, কিন্তু আপনি চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে তাতে আমার সমস্যা হয়। কীভাবে জানতে চান নাকি?

সম্মান হারাতে চায় না কেউ। বড়লোকের হারানোর মত অনেক কিছু থাকতে পারে, কিন্তু গরীবের সম্মান ছাড়া আর আছে কী? (এই রে! বাংলা ছিঃনেমার ডায়লগ দিয়ে ফেললাম মনে লয় ...) বংশের সম্মান, ব্যক্তির সম্মান ইত্যাদিকে ঘিরে কত ঘটনাই না আবর্তিত হয় চারিদিকে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা আজও দেখছি অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে অপমানিত আত্মসম্মানী মানুষ। আবার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিপথগামী সদস্য বা সদস্যাকে হত্যা করে অনেক জায়গায়: এটাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অনার কিলিং বলে একটা শব্দ আছে ইংরেজিতে।

আপনি চোরাই উইন্ডোজ ব্যবহার করলে আমার সম্মান হারাই আমি। জ্বী, ঠিকই শুনেছেন ….. আপনি চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে শুধু আপনি না সাথে আমিও সম্মান হারাই। আর হারানো সম্মান ফিরানোর জন্যই আমরা নিজেদের পকেটের টাকা আর মূল্যবান সময় খরচ করি, কিন্তু কোনো রকম আত্মহত্যা বা খুনাখুনি করি না (দেখেছেন, আমি কত্ত ভালো!)।

বাংলাদেশ খারাপ মানুষের দেশ, দূর্নীতিতে আগে টানা চ্যাম্পিয়ন ছিল, আর বর্তমানে এটা পৃথিবীতে সফটওয়্যার পাইরেসী তথা চুরীতে ৩য়। এর আগে ২য় পজিশনে ছিল, ইট্টুর লাইগা ফাস্ট হইতে পারে নাই …. আফসুস! এই ব্যাপারটা আপনি উপভোগ করেন কি না আমি জানিনা, তবে আমার কাছে এদেশের নাগরিক হিসেবে অসম্মানজনক মনে হয়।

নিজে জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করেও যদি আপনাদের চোরাই সফটওয়্যারের কারণে আমাকে নাগরিক হিসেবে এই অপমানের ভাগ নিতে হয়, আমার দেশমাতাকে অপমানিত হতে হয় তাতে আমি ক্ষিপ্ত হই। কিন্তু ঐ যে বললাম, সম্মান রক্ষার্থে এখনও খুনাখুনি করি না, তাই লিনাক্স প্রচার করি। আমি টাকা দিয়ে আপনাকে জেনুইন সফটওয়্যার কিনে দিতে পারবো না (দিতে পারলেও সেটা নিতে কি আপনার নিজেকে ছোট মনে হত না?!) - তাই লিনাক্স ব্যবহার করতে বলি। কারণ, বিনামূল্যে জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করার এটাই এখন পর্যন্ত জানা একমাত্র রাস্তা। আর এটা কারো দান নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই ফ্রী সফটওয়্যারের আন্দোলন। এতে আমি সহ সমস্ত ব্যবহারকারীর বিভিন্নভাবে কন্ট্রিবিউট করি - কীভাবে জানতে চান? আজকে থাক, তবে চিন্তা (=দুশ্চিন্তা) কইরেন না, সেই কন্ট্রিবিউশন নিয়ে শীঘ্রই আরেকটা ত্যানা প্যাচানি লেখা নামাবো।

ভাইরাস মাইরাস, সিকিউরিটির সমস্যা অথবা উত্তেজনা - সেটা আপনার ব্যাপার, এগুলো আপনি এনজয় করলে আমার তাতে কী! বরং এইসব নিয়া আপনাদের পেরেশানী দেখলে আমিও আমোদিত হই, কারণ, আসলে আমিও খারাপ লুক, আর এই পেরেশানীর দলে আমিও ছিলাম এককালে। তারপরেও লিনাক্স নিয়া চিল্লাপাল্লা করার ইয়্যাকমাত্র কারণ - আমি আমার সম্মান বাঁচাতে চাই।

কখনো যদি এই দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করি তারপরেও এই দেশটাই আমার মা (টিপিকাল বাঙালীর মত, একটু বেশি আবেগ হইয়ে গেল মনে লয়) – এর গায়ে অপমানের থুথু আমৃত্যূ আমার গায়েও এসে পড়ে।