মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০১০

প্রতিক্রিয়া পোস্ট: তবুও সম্পাদকদের সম্মানিত ভাববো

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
(ধারণাপ্রসূত পোস্ট, বাস্তবতার সাথে না মিললে সেটার দায় লেখকের)
কোনো ব্যক্তি পত্রিকার সম্পাদক শুনলেই তাঁর সম্পর্কে একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব চলে আসে। এই শ্রদ্ধা কেন আসে সেটার কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে হল যে আমাদের অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। .... বলে ফেলেই তো বিপদে পড়লাম; পাঠক উদাহরণ জানতে চাইবেন ... ... আমি আবার রেফারেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিকালি কাঁচা। আচ্ছা ঠিক আছে .... একেবারেই নিরাশ করবো না, কয়েকটা নাম মনে পড়েছে; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধূমকেতু পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, নবযুগ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিক মিয়ার নামও মনে পড়ছে।
তাছাড়া সম্পাদকগণ সম্পাদকীয় লেখেন, যেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখা হয়ে থাকে। এরকম ভারী কাজ যাঁরা করেন তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা সম্ভবত খারাপ কিছু নয়। সম্পাদকের কাজ কি শুধু সম্পাদকীয় লেখা? আমার তা মনে হয় না। বরং সম্পাদকীয় লেখাটা একটা অতিরিক্ত গুরুদায়িত্ব। গুরুদায়িত্ব তো গুরুজনদের উপরেই পড়ে। সম্পাদক নামটাই বলে দেয় যে এই পদবীধারী ব্যক্তির মূল কাজ হল সম্পাদনা করা। পত্রিকার লেখাগুলোকে ঘষামাজা করে প্রকাশযোগ্য করা, প্রয়োজনে লেখা বাছাই করা .... ইত্যাদি। জীবনে কখনো পত্রিকা সম্পাদনা তো দুরের কথা, পত্রিকাতে লেখা প্রকাশের চেষ্টা করিনি ... ... তাই আমার সব কথাই বিভিন্ন সাহিত্য/নাটক/সিনেমা/ব্লগ ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত ধারণার যোগফল।
তবে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশের সাথে জড়িত ছিলাম (কামলা খাটা)। এডিটেড বাই ... এর পরে যাদের নাম লেখা থাকতো/থাকে সেটা দেখেই বোঝা যায় সম্পাদনা করাটা কী ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রেও সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। তবে, সম্পাদক নিজে সমস্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় বলে সেই প্রবন্ধগুলোকে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের কাছে নিরীক্ষার জন্য পাঠায় (রিভিউয়ার)। রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় যে, রিভিউয়ারগণ সম্পাদকেরই বর্ধিত অংশ হিসেবে কাজ করেন।
পত্রিকার বিষয়ে ফেরৎ আসি। যে বিষয়ে সম্পাদক সাহেব ভাল জানেন না, পত্রিকাতে যদি এমন কোনো প্রবন্ধ/লেখা ছাপানোর জন্য জমা দেয়া হয় তবে সেটা কি উপযুক্ত লোককে দিয়ে সঠিকতা যাচাই করানো হয়? আমার মনে হয়, করানো হয়। এই জায়গাটাতেই সম্ভবত ধরা খেয়ে গেছেন সম্মানিত কিছু সম্পাদক সাহেব। উপযুক্ত লোকের জায়গায় ভুলে হয়তো কোনো শাখামৃগকে নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন; কিংবা জমা দেয়া লেখার লেখককেই সম্পুর্ন ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে বিশেষজ্ঞ ভেবে বসে আছেন। এরকম ভুল লোক নির্বাচন করে থাকলে সেটা শুদ্ধ করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় না, বরং ভুল থেকে শিক্ষা নেয়াটাই সঠিক পথ। কিন্তু সেটা না করলে এরকম আজেবাজে এবং ভুল তথ্যসমৃদ্ধ লেখা পত্রিকায় প্রকাশের পেছনে সম্পাদক সাহেব দায় অস্বীকার করতে পারবেন না। পত্রিকার কাছে পাঠকের দাবী অনেক, তাই পাঠককে ভুলপথে পরিচালিত করলে সম্পাদক সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাটা রাখতে কষ্ট হয়।
শিরোনামে প্রতিক্রিয়া পোস্ট দেখে ভাবছেন, এটা আবার কিসের প্রতিক্রিয়া? ... আরে ভাই, আই.টি. সেক্টর নিয়ে যখন বালছাল লেখা পত্রিকায় প্রকাশ পায় তখন মনে দূঃখে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হয়।
এমনই লেখা যে, সেটার মধ্যে কিছু ভুল থাকলে শুদ্ধ করার সাজেশন দেয়া যেত ... .... এটাতে শুদ্ধ কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়াই কঠিন। লিখেছেন যে, সেই তথাকথিত বিশেষজ্ঞকে ডাক্তার তু-ষাড় লিখতে পছন্দ করেন অনেকে; আর আছে বিশেষ-অজ্ঞ কাগু।
এ প্রসঙ্গে এস.এম.মাহবুব মুর্শেদের পোস্ট
এ প্রসঙ্গে লেনিনের পোস্ট

রবিবার, ২ মে, ২০১০

একটা অভিনব প্রতারণার ব্যর্থ প্রয়াস - সতর্ক থাকুন

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
অনেকগুলো লেখা মাথায় ঘুরছে। লেখার জন্য ফাইল খুলে সেভ করে রেখেছি কিন্তু নানা ব্যস্ততায় লেখা হয় না। কিন্তু এই ঘটনাটা চেপে রেখে দেরি করা ঠিক হবে না মনে হলো।

গতপরশু (৩০শে এপ্রিল ২০১০, শুক্রবার) দুপুরে আমার শাশুড়ির মোবাইল ফোনে (গ্রামীন) অপরিচিত নম্বর (01749 872178) থেকে একটা কল আসে। ফোনকারী বলেন যে আপনি খুব লাকি, গ্রামীন ফোন একটা প্রমোশনের জন্য তাঁদের সমস্ত সাবস্ক্রাইবারদের মধ্য থেকে লটারি করেছে, এতে আপনি ৩য় হয়েছেন। আপনি পুরস্কার হিসেবে ১৬৯০০ টাকার টকটাইম পাচ্ছেন। আপনার মোবাইল থেকে ব্যালেন্স চেক করে দেখুন যে টাকাটি পেয়েছেন কি না। পেয়ে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে জানান। যদি ১ম ২য় যারা হয়েছেন তাঁদের আগে আপনার কাছে থেকে কল পাই, তবে আরও পুরস্কার আছে।

শাশুড়ি *৫৬৬# চেপে ব্যালেন্স চেক করে দেখেন যে আসলেই ব্যালেন্সে ১৬৯০০ টাকা যুক্ত হয়েছে। ফোন করে জানালেন। তখন ওপাশ থেকে বলে আপনি আসলেই খুব লাকি কারণ আপনি সবার আগে এটা জানিয়েছেন, এতে পুরস্কার হিসেবে একটা মোটরসাইকেল পেয়েছেন। শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন এই ১৬৯০০ টাকা কি ক্যাশ করা যাবে ... উত্তরে জানালো - না করা যাবে না, তবে দুই বছর পর্যন্ত এই ব্যালেন্স ব্যবহার করা যাবে। এরপর বললেন যে বুঝতেই পারছেন যে আমি একজন বয়স্ক মহিলা ... আমি মোটরসাইকেল দিয়ে কী করবো? উত্তরে জানালেন যে আপনি এর বদলে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্যাশও নিতে পারেন। তবে এর আগে একটা কাজ করতে হবে।

শাশুড়ি আম্মার মনে একটু সন্দেহ দোলা দিচ্ছিলো, কিন্তু ব্যালেন্স চেক করাতে গ্রামীন ফোনেরই অফিসিয়াল কিছু বলে হালকা বিশ্বাস করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেই আরেকটা কাজ করতে হবে শুনলেন তখনই আবার সন্দেহটা গাঢ় হলো যে: নাহ্ এটা ফ্রড কেস মনে হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে বললো যে আপনাকে ৯ হাজার টাকা জমা দিতে হবে এখুনি। শাশুড়ি আম্মা জিজ্ঞেস করলেন যে, টাকা কেন? ....
গ্রা.ফো.: ... আরে বুঝলেন না, এসব কাজে সরকারি ভ্যাট আছে না। ওসব খরচ তো আপনাকেই দিতে হবে।

শা.আ.: আমি আগে হাতে টাকা পাই, তারপর না ভ্যাট দিবো। হাতে টাকা না আসলে ভ্যাট কোত্থেকে দিবো?
গ্রা.ফো.: ... এইতো বেশি বুঝতে শুরু করেছেন। টাকাটা যতদ্রুত সম্ভব জমা দিতে হবে।

শা.আ.: আমি এখন টাকা দিবো কোত্থেকে। আজ শুক্রবার, আগামীকাল ১লা মে বাদ দিয়ে আগামী রবিবারে ব্যাংক খুললে পরে টাকা তোলা যাবো, তার আগে টাকা দেয়া অসম্ভব।
গ্রা.ফো.: বাসায় টাকা আছে কত?

শা.আ.: এই ধরেন হাজার দেড়েক আছে বাজার খরচের জন্য।
গ্রা.ফো.: ঐটাই জমা দেন। এখুনি ফ্লেক্সি করে পাঠিয়ে দেন ... আমরা যেন প্রসেসিং শুরু করতে পারি।

শা.আ.: কিন্তু ... .
গ্রা.ফো.: এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে ১২১এ ফোন করেন। ওখানেই বিস্তারিত ভাবে মেসেজ শুনতে পারবেন।

তখন কল দিলেন ঐ নম্বরে। যথারীতি একটা অটোমেটেড কন্ঠ বিভিন্ন অপশন দেয়া শুরু করলো ... অমুক জানতে চাইলে ১ চাপুন; মটরসাইকেল সম্পর্কে জানতে চাইলে ... ...
বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিলেন। সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন করে ঝাড়ি

: ফোন কেটে দিলেন ক্যান? এজন্য মানুষের উপকার করতে হয় না।
শা.আ.: আচ্ছা কিভাবে কী করতে হবে এটা আমার হাজবেন্ডকে বলেন।

এরপর ওরা আমার শ্বশুর সাহেবকে অনেককিছু বুঝালেন। শ্বশুর সাহেবও ফ্লেক্সি করতে বেরিয়েছেন এমন ভাব নিয়ে রাস্তায় গেলেন যেন ঐপাশের লোক রাস্তার গাড়ির শব্দ শুনতে পায়। ফোনে বললেন, ফ্লেক্সি করার লোক ভেতরে গেছে কী একটা আনতে, আপনি বরং কোন নাম্বারে পাঠাতে হবে সেটা বলেন।
অপর দিক থেকে নম্বর দিল (01928 908707)। শ্বশুর সাহেব ফোন কেটে দিলেন।

কিছুক্ষণ পর ঐদিক থেকে আবার ফোন করে শাশুড়িআম্মাকে ঝাড়ি ... ... আপনার হাজবেন্ড একটা ফাউল লোক ... (গালিগালাজ)। ফোন কেটে দেয়া হলো।

অবাক ব্যাপার হলো, কিছুক্ষণ পর একাউন্ট চেক করে দেখা গেল সেই ১৬৯০০ টাকা নাই। শুধু শুধু এই ফোন টোন বাবদ ৩০ টাকার টকটাইম গচ্চা।

ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু শুধু শুধু বানিয়ে মিথ্যা বলার এবং হোক্স ছড়ানোরও কোনো প্রয়োজন নাই। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিলো আর যেখানে ফ্লেক্সি পাঠাতে বলা হয়েছিলো, সেই নাম্বারগুলো লেখা আছে শ্বশুর আব্বার কাছে। রাতে উনি (এবং আমি) বাসায় ফিরলে সেগুলো এই পোস্টে যুক্ত করে দেবো।

আমার কাছে অবাক লাগলো যে এটা কীভাবে সম্ভব! গ্রামীন ফোনের কিছু কি হ্যাক করে এমন ফ্রড করা সম্ভব ... নাকি ... কর্তৃপক্ষের অগোচরে ভেতরের কিছু লোক এমন কারবারের সাথে জড়িত?

==
ব্যাপারটায় সচেতন থাকা দরকার। আর এইরকম ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। আমার আগের মাঝরাতে ব্যাপক বিনোদন নামক পোস্টেও মুঠোফোন দিয়ে একই রকম সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। টেকনিক্যাল কারণে (ব্যালেন্স পরিবর্তন, কল সেন্টার) এই ঘটনাটা আগের ঘটনাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

==
এর আগে (বছরখানেক হতে পারে) এক চ্যাংড়া মিস কল দিয়ে দিয়ে শাশুড়ি আম্মাকে জ্বালাতো। একবার কল ব্যাক করে ঝাড়িও দিয়েছেন। বাসায় এসে আমাকে বললো দেখতো বাবা ... এটার একটা বিহিত করা যায় কি না। আমি তখন দেখি যে ওটা মধ্যপ্রাচ্যের একটা নাম্বার। আম্মাতো নাম্বার খেয়াল না করেই কলব্যাক করেছেন! ..... .... শুনে আম্মার রিয়্যাকশন: তাইতো বলি আমার ২০০ টাকা এ্যাত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল কীভাবে!

==
আরেকবার (কয়েক বছর আগে) শ্বশুরের বাসার ল্যান্ডফোনে এরকম মিষ্টি কণ্ঠের নীহারিকা নামক মেয়ে ফোন করে পুরস্কার জেতার কথা জানিয়েছিলো (আমিই সেই ফোন রিসিভ করেছিলাম!)। পরদিন যাওয়ার জন্য একটা ঠিকানাও দিয়েছিলো। কিন্তু কে আর সেধে সেধে অপহৃত (মুক্তিপণ দাবির শিকার) হতে যায়!

==
২০০৩ সালে আমার তৎকালীন অফিসে (গণপূর্ত) ফোন করে এক সন্ত্রাসীর (কালা জাহাঙ্গীর) নামে চাঁদা চেয়েছিলো। অনুনয়ের সুর শুনে আমি ঠিক সন্দেহ করেছিলাম। আমি উল্টা ওনার কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলাম। এর সপ্তাহখানেক পরেই পেপারে এরকম দুই ফ্রড গ্রেফতারের ঘটনাও বের হয়েছিলো।