শুক্রবার, ১২ জুন, ২০০৯

একটা দাপ্তরিক চিঠি (প্রেমপত্র নয়)

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

বেশ কিছুদিন আগে একটা বিষয় পড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে বিভিন্ন স্তরের পেশাদারগণের সাথে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যম ভিন্ন (…. নিজে ঐ বিষয় পড়ার সময় বই খুলে দেখিনাই … আর পড়াইতে গিয়ে আবিষ্কার!)। সেখানে দেখলাম যে টপ লেভেলের প্রফেশনালগণের জন্য নিউজলেটার টাইপের জিনিষগুলো বেশি কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যম। এটা পড়ে মাথায় পোকাটা নড়েচড়ে বসলো ….. আচ্ছা ... এই কথা, ঠিক আছে প্রয়োগ করে দেখি। আমাদের ভিসি স্যার এবং অন্য বিভাগগুলোর প্রধানকে একটা বিরাট পত্রাঘাত (ইমেইল) করে বসলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে চিঠিটাকে সফল বলতে হচ্ছে …. মূল মেইলটা ইংরেজিতে (গুছিয়ে লিখতে আমার ৬ ঘন্টার মত লেগেছিলো!!), এখানে চিঠিটার অনুবাদ প্রকাশ করলাম – বলা যায় না, কারো কাজে লাগতে পারে; আবার এখানেই ঐ লেভেলের পাঠক থাকলে প্রভাবিত হয়ে যেতে পারে ;) ।
-------

তারিখ: ১০-জানুয়ারী-২০০৯

বিষয়: Some notes on present computing practices in this university

প্রিয় মহোদয়,

আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমার এই পত্রটি পড়ার জন্য সামান্য কিছু সময় প্রার্থনা করছি।

বিবর্ণ অতীত (Gloomy background)

অন্য প্রায় সবগুলি প্রতিষ্ঠানের মত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম এবং শিক্ষাদানের জন্য অবৈধ (pirated) সফটওয়্যার ব্যবহার করে। জরূরী সফটওয়্যারগুলোর অতি উচ্চ মূল্য (উইন্ডোজ = ৫০ ইউ.এস.ডলার/পিসি; এম.এস.অফিস = ২৫০ ইউ.এস.ডি; অটোক্যাড = ৬০০ ইউ.এস.ডি. ইত্যাদি) বিবেচনা করলে, অতি প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং চাহিদা মেটাতে এটাই একমাত্র বাস্তবসম্মত উপায় বলে মনে হয়। এইসকল সফটওয়্যারের স্বত্বাধীকারী প্রতিষ্ঠানগুলি এই মুহুর্তে আমাদের বিরূদ্ধে কোনরকম আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, কিন্তু এরকম অবস্থা চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদেরকে অর্থনৈতীক জরিমানার ঝড়ো হাওয়া এবং দূর্নামের সম্মুখীন হতে পারে।

এখন মনে হচ্ছে যে সফটওয়্যার লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই; অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে হ্রাসকৃত/ভর্তূকী মূল্যে এগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা আছে (কারণঃ নিসন্দেহে আমরা ঐ সফটওয়্যারগুলোর আরো ভবিষ্যত ক্রেতা তৈরী করছি)। কিন্তু গত কয়েকবছরে খুব দ্রুতই অনেক ঘটনা ঘটে গেছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে এখন বিনামূল্যেই এ অবস্থার বিকল্প ব্যবস্থা আছে। প্রায় সবগুলি প্রোপাইটারি সফটওয়্যারেরই একটা বিনামূল্যের বিকল্প (free alternative) আছে। কোনো কোনো লোক ভাবেন যে বিনামূল্যের সফটওয়্যারগুলি মোটেও ব্যবহারযোগ্য নয় এবং খুব কম বৈশিষ্ট্য (feature) সম্পন্ন – কিন্তু বাস্তবতা সম্পুর্ন উল্টা, কিছু ফ্রী-সফটওয়্যারগুলো আমাদের অভ্যস্থ্ সফটওয়্যারগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আমি বিখ্যাত সান মাইক্রোসিস্টেম কর্তৃক তৈরী মাইক্রোসফট অফিসের বিনামূল্যের বিকল্প ওপেনঅফিস.অর্গ ব্যবহার করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যারটিকে আমার বেশি ভালো মনে হয়েছে; যেমন: বিবলিওগ্রাফী বা রেফারেন্স তৈরীর ক্ষেত্রে এবং পি.ডি.এফ. ফাইল বানানোর নিজস্ব ক্ষমতার ক্ষেত্রে। আমি অফিসের সমস্ত কাজেই (মেমো, প্রশ্নপত্র, ক্লাস লেকচার, টেবুলেশন) এই সফটওয়্যারটা ব্যবহার করছি। GIMP হলো আরেকটি দারুন সফটওয়্যার যেটা দিয়ে দামী ফটোশপে করা আমাদের কাজগুলোর সবই করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ দামী ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের বদলে বিনামূল্যের ফায়ারফক্স বা অপেরা ব্যবহার করে অধিকতর গতি এবং নিরাপত্তা পাচ্ছেন। এই তালিকাটা অনেক লম্বা এবং ক্রমবর্ধমান।

এগুলো চালানোর জন্যও আমাদের উইন্ডোজ ব্যবহার করতে হবে, এবং যদি সফটওয়্যার পাইরেসী/চুরি এড়াতে চাই তাহলে প্রতি কম্পিউটারে এজন্য ৫০ ডলার খরচ বাড়বে। অবশ্য ভর্তূকী মূল্য পেলে আরও কমে পেতে পারি। এছাড়া এই অপারেটিং সিস্টেমের ভাইরাস এবং সিকিউরিটি জনিত সমস্যা দুর করার জন্য আমাদের ঝামেলা/খরচ এড়ানোর কোন উপায় নাই।

আছে আশার প্রদীপ (There is hope)

বেশিরভাগ লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো বিনামূল্য পাওয়া যায় এবং এগুলোতে প্রয়োজনীয় সবগুলি সফটওয়্যার অপারিটিং সিস্টমের সাথেই একসাথে দেয়া থাকে। এছাড়া লিনাক্স সিস্টেমগুলির নিরাপত্তা অত্যন্ত উচ্চমানের আর সিস্টেমগুলো খুবই আস্থাজনক/স্টেবল; এগুলোর ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব। গত কয়েকবছর ধরে লিনাক্সের উন্নয়নকারীগণ উইন্ডোজ এক্স.পি/ভিস্তার মত পুরাপুরি গ্রাফিকাল এবং ব্যবহারবান্ধব অপারিটিং সিস্টেম বানাচ্ছেন। কাজেই এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো পাইরেসী জনিত কারণে যে মহাবিপদ ঘটতে পারে তার সবগুলো ক্ষেত্রেই (খরচ, নিরাপত্তা, নির্ভরতা এবং ব্যবহারযোগ্যতা) আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে।

তাছাড়া, লিনাক্সের সমস্ত সফটওয়্যারগুলোই মুক্তসোর্স – এর অর্থ হল, যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি এগুলোর প্রোগ্রামের সোর্সকোডগুলো ডাউনলোড করতে এবং দেখতে পারবেন। প্রোপাইটারী সফটওয়্যারগুলো এই সুবিধা দেয় না ফলে আগ্রহী শিক্ষার্থীগণ এগুলোর কোড দেখে কোনো কিছু শিখতে পারে না।

মজার ব্যাপার হল, আমাদের বেশিরভাগ লোকই না জেনে প্রতিদিন লিনাক্স ব্যবহার করছি। কারণ প্রায় সবগুলো গ্যাজেট যথা: পি.ডি.এ., মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ডিকশনারি ইত্যাদি লিনাক্সে চলে। তাছাড়া, পৃথিবীর বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভার এবং সুপার কম্পিউটার লিনাক্সে বা ইউনিক্সে (লিনাক্সের বাবা) চলে।

ইউরোপ এবং আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ের জন্য লিনাক্স ব্যবহার করে (তথ্যসূত্র: http://www.linux.org/info/linux_govt.html)। ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও লিনাক্স একটি অতি পরিচিত নাম। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লিনাক্স ব্যবহার করে। আর, আমি যতদুর জানি, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও লিনাক্সের পরিবর্তিত হওয়ার পথে আছে।

সমস্যাসমূহ (The obstacles)

ইদানিং তরুণ সম্প্রদায় ধীরে ধীরে লিনাক্সের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠানে এটা চালু করার ক্ষমতা/অধিকার তাঁদের নেই। কম্পিউটার সায়েন্স বা ইলেক্ট্রিকাল/ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের অপেক্ষাকৃত বয়োজেষ্ঠ শিক্ষকগণও লিনাক্সের নিরাপত্তা এবং নির্ভারতা (security and stability) সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। কিন্তু তাঁরা বর্তমানে লিনাক্সের অগ্রগতি সম্পর্কে এবং আধুনিক লিনাক্স ডেস্কটপ সিস্টেমগুলোর ব্যবহার বান্ধবতা সম্পর্কে মোটেও জানেন না। এছাড়া নেটওয়র্ক এডমিনিস্ট্রেটরগণও তাদের সার্ভারে ঐসকল লিনাক্স সিস্টেমের সার্ভার ভার্সান নিয়ে কাজ করেন - তাই তাঁরাও এগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য কতটুকু ব্যবহারবান্ধব তা জানেন না।

কাজেই শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের মনে লিনাক্স সম্পর্কে একটা পুরাতন ধ্যাণ ধারণা রয়ে গেছে (লিনাক্স হলো প্রস্তরযুগের কালো স্ক্রীনে কমান্ড লাইনে কাজ করতে হয় - এমন একটা সিস্টেম)। তাই তাঁরা এটার নিরাপত্তা, নির্ভারতা এবং সাশ্রয়ী বৈশিষ্ট জানার পরেও সাধারণ ব্যবহারকারীদেরকে লিনাক্স দিতে দ্বিধা বোধ করেন এবং আধুনিক লিনাক্সের সুবিধা থেকে সকলকে বঞ্চিত করেন।

পরিকল্পনা (The Plan)

কর্তৃপক্ষের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাগণকে লিনাক্সের সর্বশেষ বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানানো হোক (যে জন্য আমি বিজ্ঞাপন দিচ্ছি!) এবং তারপর তাঁরা সাধারণের জন্য লিনাক্স দেয়া যাবে কি না সেটা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিক (whether or not to give it a try)। কর্তৃপক্ষের জন্য এজন্য এক বা একাধিক প্রেজেন্টেশনের আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে আমার চেনা লিনাক্সে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকগণ শুধুমাত্র বিস্তারিত টেকনিকাল বিষয়াদি উপস্থাপন করবেন। স্বেচ্ছাসেবক লিনাক্স গুরুগণ কোনরকম টাকাপয়সা না নিয়েই এই কাজটা করে দেবেন (এবং দেশের জন্য কিছু করছেন জেনে সন্তুষ্ট থাকবেন।)।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভাল যে, জনাব রায়হান চৌধুরী (আমাদের ডেটাবেসের যাদুকর) লিনাক্স ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ইতিমধ্যেই বেশ ভাল জানেন। গত ২১শে নভেম্বর ২০০৮ তারিখে সাধারণ ছাত্র এবং আগ্রহীদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়েই একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল (অনুমতি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ)। অনুষ্ঠানের উপরে একটা প্রতিবেদন এখানে পাওয়া যাবে (http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?t=2569&f=42)

ছাত্রদের জন্য যেসকল কম্পিউটার আছে সেগুলোর কয়েকটিতে লিনাক্স দেয়া উচিত, যাতে করে এ বিষয়ে তাঁদের জানার একটা সুযোগ ঘটে।

প্রধান ল্যাবে আমাদের এখনও উইন্ডোজের দরকার আছে, কারণ আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছু সফটওয়্যারের ব্যবহার শেখানো হয় যেগুলো উইন্ডোজে চলে (আমরা সবই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করি!!)। এই কম্পিউটারগুলোতে আমরা অন্য কাজকর্মের জন্য মুক্তসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারি।

নতুন ছোট কম্পিউটার ল্যাবরেটরিটাতে কম্পিউটারগুলোতে ডুয়্যাল বুটিং করতে পারি। কাজেই ছাত্ররা একটা অজানা অপারেটিং সিস্টেম দেখতে পারবে।

লাইব্রেরীর সমস্ত কম্পিউটারগুলোই লিনাক্সে নেয়া সম্ভব। ঐ কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাই লিনাক্সই সবচেয়ে উপযুক্ত। আমাদের সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের সাথে আমি এই বিষয়ে আলাপ করেচিলাম - তাঁরাও এই ব্যাপারে একমত। সম্ভবত, এই কাজ করার জন্য তাদের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবুজ সংকেত দরকার। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপও এই কাজে বিনামূল্যে সাহায্য করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে - কারণ এতে তাঁরা বলতে পারবে যে "আমরা প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিকে পাইরেসীমুক্ত হতে সাহায্য করেছি"।

ছাত্রদেরকে এই নতুন কিন্তু অধিকতর ভালো কম্পিউটিং সম্পর্কে সাহায্য করার জন্য কম্পিউটার ক্লাবের মত একটা ছাত্র সংগঠন দরকার। বিভিন্ন সময়ে আমি আমাদের সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর এবং আমাদের ডীন স্যারের (প্রফেসর তপন কুমার চক্রবর্তী) সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছি। ওনারা উভয়েই একটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন - এই ধরণের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা। একটা সম্ভাব্য সমাধান হল ছাত্রদের ভর্তি ফী থেকে ২০/- টাকা করে এই খাতে নিয়ে আসা -- আমার ধারণা এইটুকুই এর কার্যক্রম চালানোর জন্য যথেষ্ট হবে। ECE বিভাগের কোন একজন শিক্ষক এই ক্লাবের মডারেটর হলে ভাল হয়। আমি ওনাদের সকলকে ভালভাবে চিনি না কিন্তু গাজী (প্রভাষক, ECE) এই মুক্তসোর্স/লিনাক্স বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী মনে হল (আমরা রাতে একসাথে অফিসের গাড়িতে বাসায় ফিরি)।

সম্ভাব্য ফলাফল (Probable outcomes)

সর্বাগ্রে, পাইরেসী এড়ানোর পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে জরিমানা, দূর্নাম এবং ঐ সংক্রান্ত ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বা থাকবে না।

লিনাক্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমাদের গ্রাজুয়েটদের চাকুরীর ক্ষেত্রকে প্রসারিত করবে।

এরকম পদক্ষেপের ফলে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির নাম কিছু বিশেষ মহলে ছড়িয়ে পড়বে। আমার ধারণা এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বাড়িয়ে দেবে। গত লিনাক্স বিষয়ক অনুষ্ঠানে (২১-নভেম্বর) প্রায় ১৩০ জন অংশগ্রহণ করেছিলো (ছবি: http://gallery.linux.org.bd/thumbnails.php?album=36)।

এসবের মধ্যে আমি কেন! (Why I am involved! )

একজন ব্যবহারকারী হিসেবে আমি পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে সবসময়ই লজ্জিত থাকতাম। একমাত্র যে উপায় আমার জানা ছিল সেটা হল এই সফটওয়্যারগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে হবে - আমি ঠিক করেছিলাম যে যখনই আমার সামর্থ হবে আমি এগুলো কিনে ব্যবহার করবো। কিন্তু পরবর্তীতে যখন আমি জাপানে, আমার ল্যাবরেটরিতে জাপানি কম্পিউটার নিয়ে হয়রান হয়ে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের সন্ধান পাই এবং খুব দ্রুতই উচ্ছসিত হয়ে পড়ি। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি আমার বাসায় কম্পিটারের সমস্ত কাজ লিনাক্সে করছি।

পাইরেসি এড়িয়ে চলার ফলে নৈতীক ভাবে শক্তিশালী হয়েছি এবং অন্যদেরকেও এই রাস্তা দেখাতে ইচ্ছুক। এছাড়া অন্যরাও ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা লাভ করুক এটাও কাম্য। এমনকি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতেও আমি লিনাক্স ব্যবহার করছি। আমার কিছু সহকর্মী এটার ব্যবহারবান্ধবতা দেখে এবং ভাইরাসমুক্ততা দেখে নিজেদের জন্য্ সংগ্রহ করেছেন।

আমি এই বিষয়ে ECE এবং IT service এর শিক্ষক ও অন্যদের সাথে কথা বলেছি। তাঁদেরকে আগ্রহী মনে হলেও এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কেউ নেই। এর ফলে আপনাকে এই প্রসঙ্গে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার বিষয় জানানোর দায়িত্বটা আমার ঘাড়েই এসে পড়লো।

আমার এই দীর্ঘ মেইল পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, যে কোন রকমের অসুবিধা সৃষ্টি করে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদান্তে .....
----------

এই উত্তরে ভিসি স্যার একলাইন লিখেছিলেন: we will look into this matter.

চিঠিটাকে সফল এজন্য বলছি যে ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীর সমস্ত কম্পিউটার উবুন্টু লিনাক্সে চলছে। বেশ লম্বা প্রস্তুতি শেষে এডমিন সেকশন এই মাসেই লিনাক্সে কনভার্ট হবে বলে শুনেছি। আমি ছাড়াও এই ইউনিভার্সিটির আরো কয়েকজন (ভিসি স্যার সহ) কোনো না কোনো কম্পিউটারে নিয়মিত লিনাক্স ব্যবহার করেন।

মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০০৯

বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার

ঘটনা-১
পথ চলতে চলতে সন্ধ্যা নেমেছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই পথ চলতি গেরুয়া বসনের, দাড়ি চুলের জটাধারী লোকটি একটা অবস্থাপন্ন গৃহস্থের বাসায় আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। সদাশয় গৃহস্থ মুসাফিরকে ভেতরে ডাকলেন। রাতের খাওয়া দাওয়ার সময় কথাবার্তা থেকে বুঝতে পারলেন যে, অতিথি বিরাট বুজুর্গ লোক। তাই, বাড়ির সবচেয়ে ভাল ঘরটাতে ওনাকে থাকতে দিলেন।

পরদিন সকালে আতিথিয়েতার প্রশংসা করে বুজুর্গ বিদায় নিলেন; বাড়ির সকলেই রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ওনার যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছুদুর গিয়েই হঠাৎ ঐ জটাধারী ফিরে আসলেন .... কোনো সমস্যা হল কি না ভেবে গৃহকর্তা একটু এগিয়ে গেলেন। জটাধারী গৃহকর্তার হাতে একটা খড়ের টুকরা দিয়ে বললেন .. ভুলক্রমে ওনার বাড়ির খড়-কুটা তাঁর দাড়ির সাথে চলে গিয়েছিল তাই ফেরত দিতে এসেছিলেন। হতভম্ব মুগ্ধ গৃহকর্তাকে ঐ অবস্থায় রেখেই লোকটি বিদায় নিলেন। আশেপাশে জড়ো হওয়া প্রতিবেশীরাও অতিথির এহেন বোকামীমার্কা সততায় অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

দুপুরে গৃহকর্তার বাড়িতে আবার গোলমাল শোনা গেল। ব্যাপার কিছুই না। অতিথি যে ঘরে ছিলেন সেই ঘর গোছাতে গিয়ে আবিষ্কার হল যে ঐ ঘরে সিন্দুক থেকে সমস্ত টাকাপয়সা হাওয়া হয়ে গিয়েছে। ............ জটার সাথে ভুলক্রমে চলে যাওয়া খড়কুটো ফেরত দেয়াটা একটা ইম্প্রেসিভ স্টান্টবাজি ছিল।

ঘটনা-২
আমার এক পরিচিত ব্যক্তির কাছে এক নেশাখোর একটা নোকিয়া ৩১১০ ক্লাসিক ফোনসেট ২০০ টাকায় বিক্রয় করতে চাইলো কিন্তু উনি সেটা নেননি। আমি খুব অবাক হলাম ..... প্রায় ৬ হাজার টাকার একটা সেট এ্যাত কমদামে পাচ্ছেন নেবেন না কেন? না হয় একটা চার্জার কিনে নিতে হবে, সেটার কতই বা আর দাম। তাছাড়া ঐ সেটটাতে কত সুবিধা একসাথে আছে .... দারুন রঙিন স্ক্রিন, ১.৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ব্লুটুথ, ক্লাস ১০ এজ মডেম ইত্যাদি। প্রতিটিই দরকারী ফীচার - কোথাও বেড়াতে গেলেন, দারুন কিছু দেখলেন; সেটা পরিচিতদের সাথে পরে শেয়ার করার জন্য ক্যামেরাটা কত কাজে দিত। এছাড়া এজ মডেম দিয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট কত সহজে পাওয়া যায়, শুধু এজ মডেমের দামই কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা। ব্লু-টুথ দিয়ে তারের ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই অন্য মোবাইল বা কম্পিউটারের সাথে ডেটা/ফাইল/ছবি আদান প্রদান করা যায় .... কত সুবিধা -- এই সুবিধাগুলোর কোনটাই ওনার কমদামী সেটে নাই; যেটাতে শুধু কল করা আর রিসিভ করা যায়। একবার আমার ঐ মডেলের ফোন ছিনতাই হয়েছিল, তাতে যত টাকার ক্ষতি হয়েছিল (তৎকালীন ক্রয়মূল্য ছিল ৮৮০০ টাকা) আপনার তার কিছুই হবে না, ছিনতাই/চুরি যদি হয়েও যায় তবুও ২০০ টাকায় এর চেয়ে অনেক বেশি ভোগ করে নিতে পারবেন। এ্যাত সুবিধার কথা বোঝানোর পরও ওনার এক কথা: নির্ঘাত ওটা চুরির/ছিনতাইয়ের মাল, তাই যত কমদামেই দিক, যত সুবিধাই থাক নেবেন না। এখন ছবি তোলার দরকার হলেও ওটা ছাড়াই চলা যাবে অতি দরকার হলে খেয়ে না-খেয়ে টাকা জমিয়ে তবেই কিনবো আর ঐসব সুবিধা ভোগ করবো।

বাঃ, ওনার বিবেক আর বিবেচনাবোধ দেখে আমি চমৎকৃত হলাম। সত্যই তো চুরির মাল যত লোভনীয় হউক না কেন সেটা পরিত্যাজ্য। আমার ধারণা এই লেখার পাঠকগণের বেশিরভাগই একই রকম মনোভাব পোষন করেন।

কিন্তু কয়েকদিন পরেই অন্য কিছু ঘটনায় আমার মনে হতে লাগলো যে আগের যেই আদর্শবাদীতা দেখেছিলাম ওটা মেকী ছিল ... শুধুই লোক দেখানো ছিল। কিংবা হতে পারে যেই আদর্শের কথা তখন আমাকে বলেছিল সেটার অর্থ ওনার উপলব্ধিতেই নাই ... শুধুই তোতাপাখির মত কপচানো বুলি। নাকি আগের গল্পের জটাধারী অতিথির মত সততা!

কারণটা আর কিছুই না। উনার বাসায় এবং অফিসে অনেক চোরাই মাল অবিশ্বাস্য কমদামে কিনে ব্যবহার করতে দেখলাম। ঐ মালগুলোর দাম ঐ চোরাই মোবাইলের চেয়ে অন্ততপক্ষে ২০গুণ বেশি। ওনাকে যখন বললাম কেন এই কাজ করছেন? অনেক কমদামে অন্য ব্রান্ডের আসল জিনিষ ব্যবহার করা যায় তখন তিনি পুরা ১৮০ ডিগ্রীর ঘুরে উল্টা যুক্তি দিতে থাকলেন ... যে ঐ ব্রান্ডে এই সুবিধা নাই সেইটা সহজে করা যায় না -- কথা বলছে যেন আগের ঘটনার খলনায়ক (আমি)।

ঘটনা ২.১
কি .... এখনও বুঝতে পারেন নাই? ঠিক আছে ..... সহজ হিসাব দিচ্ছি:

  1. উইন্ডোজ: কমপক্ষে ৫০ ডলার
  2. মাইক্রোসফট অফিস: কমপক্ষে ৪০০ ডলার
  3. এন্টি ভাইরাস: বছরে কমপক্ষে ১০ ডলার
  4. ফটোশপ: কমপক্ষে ২০০ ডলার
  5. অটোক্যাড: কমপক্ষে ৯০০ ডলার
  6. বাসার কম্পিউটারে থাকা গেমগুলোর দাম আপাতত বাদ দিলাম।

প্রতিটি কম্পিউটারে কমপক্ষে: ১৫৬০ ডলার। তাহলে অফিস ও বাসা মিলিয়ে ৩০০০ ডলারের বেশি (= প্রায় ২,১০,০০০ টাকার বেশি) দামের সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন। বলাই বাহুল্য যে ওগুলো সবই চোরাই মাল। সবগুলো সিডি মিলিয়ে ২শ টাকার বেশি খরচ হয়নি। আগের আদর্শ গুলে খেয়ে সেগুলো কিন্তু ঠিকই ব্যবহার করছেন।

তাই ইদানিং যখনই কেউ বড় বড় আদর্শের বুলি কপচায় আর নিজেই লাখ লাখ টাকার চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করে .... তখন মনের ভেতর থেকে কোনো মুগ্ধতা বের হয়ে আসে না - বরং হিপোক্রেসি দেখলে যেমন অনুভুতি হওয়ার কথা সেরকম মনে হয় (হে জটাধারী ভন্ড!)।

ঘটনা-২.২
একটু হিসাব করুন দেখি প্রতিটি কম্পিউটারে কত টাকার দূর্নীতি হচ্ছে? তাহলে একটা বাসায় কত টাকার দূর্নীতি হচ্ছে, একটা প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র এই সফটওয়্যার/কম্পিউটার খাতে কত টাকার দূর্নীতি হচ্ছে? পরপর ৫ বার দেশ হিসেবে দূর্নীতিতে যখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম তখন কি এই খাত সহ হিসাব হয়েছিল? না হয়ে থাকলে এগুলো সহ হিসাব হউক -- দূর্নীতিতে আমাদের চ্যাম্পিয়নশীপ কোনদিন হুমকীর সম্মুখীন হবে না!

দেশের জন্য ক্রিকেটাররা কোন জয় আনতে না পারুক ... আমরা ঠিকই শুধু জয় না, চ্যাম্পিয়নশীপ ছিনিয়ে আনবোই আনবো!

ঘটনা-২.৩
নিজেকে বদলানোর কী দরকার?! বরং চ্যাম্পিয়নশীপ উপলক্ষে একটা থীম সং দরকার।

ঘটনা-৩
অল্টারনেটিভ অপশনটা কি জানেন? লিনাক্স .... ঐ সবগুলো সফটওয়্যারের কাছাকাছি বিকল্প সফটওয়্যার সহ বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন সিকিউরিটি, কারণ লিনাক্সে ভাইরাসের বেইল নাই।

ঘটনা-৪
এসব বুঝাইতে গেলে বেশিরভাগ লোকই যুক্তি মেনে নেয়। আমাকে প্রচন্ড মাত্রায় সমর্থন ও উৎসাহ দেয় কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত এই পোস্টের শিরোনাম বাস্তবায়িত করে।

অবশ্য, আমার প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিচার মেনে তালগাছ ছেড়ে দিয়েছেন । সেই পত্রাঘাতের গল্প চাইলে আরেকদিন (... ... না চাইলেও জোর করে করবো .. হে হে ;) ) । আপাতত অফ যাই।

ঘটনা-৫
যাওয়ার আগে কিছু সালিসের কথাবার্তা ....

তালগাছ বক্তাঃ আরে ... বিদেশি ওরা শত বছর ধরে আমাদের শোষন করেছে, এখন ওদের জিনিষ আমরা পয়সা না দিয়ে ব্যবহার করলে ঠিকই আছে।
বস্তিবাসীঃ বিল্ডিংএ থাকা সাহেবরা আমাদের পাওনা মেরে দিয়ে বড়লোক হৈছে ... তেনাগো বাসার জিনিষ চুরি করলে ঠিকই আছে।

তালগাছ বক্তাঃ ওদের জিনিষ ছিনিয়ে নেয়াই ঠিক পন্থা ... শালারা এই দেশটাকে চুষে খাচ্ছে।
ছিনতাইকারীঃ এই শালার বেটা তোর মোবাইল দে ...

তালগাছ বক্তাঃ আরে ভাই দেশে যেই ইনকাম তাতে তো কিনে সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না। পাইরেসী ছাড়া কোনো উপায় নাই ...
ছিচকে চোরঃ চারদিকে কাজ নাই। যেগুলো আছে সেগুলোতে আর কয়টাকা দেয়। তারচেয়ে সিগনালে দাঁড়ানো গাড়ির যাত্রীর ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে দৌড় দিয়ে রেলগাড়ীর সামনে দিয়ে লাইন পার হওয়া ছাড়া উপায় নাই।

তালগাছ বক্তাঃ ফ্রী সফটওয়্যারগুলো ভাল না। হ্যান করা যায় না ত্যান করা যায় না .... কমার্শিয়াল সফটওয়্যারের সুবিধা পেতে অনেক দুর যেতে হবে। তার চেয়ে পাইরেটেড সফটওয়্যার ভাল।
ঘুষখোর আমলার ছেলেঃ এই তোর বাবাটা যে কী ..... .... এ্যাত সততা দেখায় কী হবে... বাসায় একটা এসি লাগাতে পারে না ... এই গরমে এসি ছাড়া থাকা যায় ... ছিঃ ছিঃ

.... .... ....
... ... ...


(সচলায়তনে প্রকাশিত)

বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০০৯

লিনাক্স পুরা ফালতু - ব্যবহার করে দিনকে দিন হতাশ হচ্ছি

উইন্ডোজে খেলার জন্য নিড ফর স্পীড বলে একটা গেম আছে। কঠিন লড়াই করে গাড়ীর দৌড় প্রতিযোগীতায় জিততে হয়। ওটা খেলতে কঠিন মজা পেতাম। প্রতিটা চ্যালেঞ্জ জিততে দারুন মজা। কয়েকদিন পরেই কম্পিউটারের প্রতিযোগীগুলো কোনক্রমেই পেরে উঠতো না। বন্ধু বান্ধবের যারা খেলতো তারা তো কম্পিউটারের সাথেই পারে না। আমার সাথে পেরে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না ... ... তাই ওদের সাথে খেললে মজা নষ্ট হয়ে যায়। আমার ছোট দুই ভাইও কঠিন গেমার ছিল ... ওদের সাথে তাই জমতো। এছাড়া কল অব ডিউটি বা সিমসিটি টাইপের স্ট্রাটেজি গেমগুলোও চরম আকর্ষনীয় ছিল। সবসময়ই টানটান উত্তেজনা আর চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ না থাকলে যে কোনো গেমই ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়।

লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে ভেবেছিলাম কঠিন একটা বিষয় আয়ত্তে আনছি ... চ্যালেঞ্জ জয় করছি .... কঠিন ভাব নেয়া যাবে। লোকজন ইমপ্রেস হবে। আজ এটা সমস্যা, কাল ওটা সমস্যা .... রাতে চিন্তায় ঘুম হবে না, চোখের নিচে কালি পড়বে। এই করতে হবে, সেই করতে হবে .. ... দুশ্চিন্তায় ডায়বেটিস হয়ে যাবে, হার্টের সমস্যা দেখা দিবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে ..... .... লোকজন জিজ্ঞেস করলে মুখ ঝামটা দিয়ে বলা যাবে ... "ধুর মিয়া অফ যান - জানেন নাতো কী রকম দৌড়ানীর উপরে আছি"। আহ .... কী চরম চ্যালেঞ্জ আর উত্তেজনা।

আমার সে আশায় গুড়ে বালি। লিনাক্সে কোন চ্যালেঞ্জই নাই। একেই তো বিনামূল্যে দেয় সেজন্য জুয়া খেলে টাকা হারাবার মত উত্তেজনা নাই, তার উপর চৌর্যবৃত্তির দারুন থ্রীল পুরাটাই মিস ....... অথচ পাইরেটেড উইন্ডোজে কত্ত উত্তেজনা; আজকে জেনুইনিটি টেস্ট কালকে ম্যালওয়্যার, পরশু ভাইরাস .... চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ ... কখনই ম্যাড়মেড়ে ভাব নাই।

জেনুইনিটি টেস্টের সেই উইজেটটা নিউট্রাল করা দারুন উত্তেজনাকর .... বিল কাকুর মাইক্রোসফটকে টেক্কা দেয়া বলে কথা! ইন্টারনেট ঘেটে পদ্ধতি বের করে তারপর প্রসেস বন্ধ করতে হয়, ফাইল মুছতে হয়, রেজিস্ট্রি এন্ট্রি মুছতে হয় .... এজন্য ব্যাকআপ নিতে হয় কারণ ভুল ভাল হয়ে গেলে মেশিন বসে যাবে ---- ওয়াও!! এরকম টান টান উত্তেজনা না থাকলে জীবন চলে! অবশ্য, অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহার করলে এইসব করা লাগবে না - অন্তত তাই হওয়ার কথা। অবশ্য চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহারকারীগণ হতাশ হবেন না ... ... বিল কাকুর এই উইজেট আপনাদের জীবনেও উত্তেজনার আনন্দ দিতে পারে ... অনেক অরিজিনাল / জেনুইন ব্যবহারকারীকেও এই উইজেট পাইরেটেড বলেছে বলে শোনা যায় --- অবশ্য এতে উত্তেজিত হয়ে কারো হার্ট এ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি।

তারপর ধরুন নতুন নতুন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমগুলো হাইফাই হার্ডওয়্যার ছাড়া চলে না। অনেক ড়্যাম, অনেক বড় হার্ডডিস্ক, উচ্চমার্গীয় প্রসেসর এই সব লাগেই। এ্যাতসব হাইফাই হার্ডওয়্যার কিনলে কত ভাব নেয়া যায়, বলা যায় যে ঐসব বড় বড় হার্ডওয়্যার কম্পানিকে আমরা বাঁচিয়ে রেখেছি -- অথচ ব্যাটা ফাউল লিনাক্স, কম শক্তির পিসিতেও নাকি অনায়েসে চলে। শালার ... টাকা খরচের উপায়ই নাই।

তারপর ধরেন, ভাইরাস ভাইদের কথা। সবসময় কত উত্তেজনার মধ্যে রাখে - এই মারলো রে তো সেই মারলো করে সবসময় হৈ হুল্লোরের মধ্যে থাকা যায়। একবার দেখা গেল সকলের স্ক্রীনে ছোট ব্যানারে কী জানি হ্যাক ডে লেখা দুইটা আস্তে আস্তে ইতস্তত ঘুরাঘুরি করছে। যত ক্লিক করা হয় তত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। ইন্টারনেট ঘেটে ঐটা দুর করার পদ্ধতি দেখে খুঁজে খুঁজে ওগুলো মোছা হল .... .... বলেন তো, একঘেয়ে জীবনের মধ্যে এমন ব্যতিক্রম না থাকলে ভাল লাগে! অথচ আমার কম্পিউটারে এমন কিছুই নাই। ভাইরাস নাকি বানানোরও কোন রাস্তা খোলা রাখে নাই।

আগে লিনাক্সে ভাল কোনো গেম ছিল না। তাই বড় হয়ে গিয়েছি এমন একটা ভাব আসতো। কিন্তু দেখেন কারবার, এখন দূর্দান্ত থ্রী-ডি গেমও চলে এসেছে। বড় বড় ভাব নেয়ার উপায় নাই।

আগে দেখতাম বড় ভাইরা কালো স্ক্রিনে কাজ করে ভাব নিত... ডসের মত কালো স্ক্রীনে কী কী হিজিবিজি লেখা উঠতো সেগুলো দেখে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়াতো। ভাবলাম লিনাক্স ব্যবহার করলে তেমন ভাব নেয়ার সুযোগ হবে। কিন্তু সেই আশাও পুরা হওয়ার কোনো উপায় নাই। লিনাক্সে গ্রাফিকালি ক্লিক করেই সব করা যায় - ধ্যা-এ্যা-ত্ ।

অনেক আগে ১০ গ্রাম ঘুরে একজন মেট্রিক পাশ লোক পাওয়া যেত। একনামে সকলেই তাদেরকে চিনতো। কিন্তু এখন সেইরকম অবস্থা নাই। আমার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বলেছিল তাঁদের সমস্ত গ্রাহকদের মধ্যে আমি আর একজন - এই দুইজনই শুধু লিনাক্স ব্যবহার করে। তাই আলাদা ভাবে আমাদের কথা মনে থাকে। কিন্তু ইদানিং যে দ্রুত হারে ব্যবহারকারী বাড়ছে ... তাতে সেই রেয়ার স্পিশিজ বলে ভাব নেয়ারও উপায় দুর হয়ে যাচ্ছে --- নাহ্ লিনাক্সটা আসলেই যাচ্ছেতাই হয়ে গেল।

"জানিস আমার পিসি না হ্যাক হয়ে গিয়েছিলো ... যখন বুঝতে পারলাম তখন তো সাথে সাথে ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট করলাম। তারপর সব রিইনস্টল দিয়ে ফায়ারওয়াল দিয়ে কত কি করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসলাম।" ইত্যাদি ইত্যাদি কত গল্প করার বিষয় তৈরী হয় যেগুলো লিনাক্সে হওয়ার সুযোগই নাই --- হতচ্ছাড়া লিনাক্সের কারণে বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ করার বিষয়বস্তু কমে যাচ্ছে।

সুতরাং হে রক্ত গরম যুবা, চ্যালেঞ্জিং জীবন চাইলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিন, সেটা সম্ভব না হলে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করুন; ভুলেও লিনাক্স চালানোর কথা ভাববেন না।

(সচলায়তনে প্রকাশিত)