মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১১

লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি: ইনস্টল না করেই একটি অপারেটিং সিস্টেম চালিয়ে দেখার উপায়

লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি
ইনস্টল না করেই একটি অপারেটিং সিস্টেম চালিয়ে দেখার উপায়

লাইভ সিডি কী?

লাইভ সিডি বা লাইভ ডিভিডি কিংবা লাইভ ডিস্ক বলতে বুঝায় যে এটাতে একটা বুট যোগ্য কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। কম্পিউটারে কোনরকম হার্ডডিস্ক বা স্টোরেজ ডিভাইসের সাহায্য ছাড়াই একটা সম্পুর্ন ও আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম চালানোর এটা একটা অনন্য উপায়। লাইভ ইউ.এস.বি ফ্লাশড্রাইভগুলোও লাইভ সিডির মত, তবে এগুলো কখনও কখনও লাইভ সিডির চেয়েও অনেক বেশি কাজ করতে পারে; যেমন এর মধ্যেই সিস্টেমের পরিবর্তনগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।

অপারেটিং সিস্টেমটি এজন্য তার প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ফাইলগুলো কম্পিউটারের মেমরি বা RAMএ কপি করে নেয়, এবং সেখান থেকেই চলে, হার্ডডিস্কে একটি আঁচড়ও ফেলে না। লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশন বা অপারেটিং সিস্টেমের সিডি, ডিভিডি এই সিস্টেমে করা হয় যেন ইনস্টলের ঝামেলায় না গিয়েই কৌতুহলী কেউ এটা সম্পর্কে জানতে পারে। একটি পেনড্রাইভে একত্রে অনেকগুলো লাইভ অপারেটিং সিস্টেমও রাখা যায়। মেমরি ড্রাইভে এটা নেয়ার সুবিধা হল, দরকার না হলে এটা মুছে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।

লাইভ সিস্টেমের সুবিধা ও ব্যবহার

  • ইনস্টল না করেই একটা অপারেটিং সিস্টেমে কী আছে আর কী নাই সেটা বোঝা যায়, ফলে এটা আমার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম কি না সেটা ইনস্টল না করেই চালিয়ে দেখে নেয়া যায়।
  • হার্ডডিস্ক ছাড়াই কম্পিউটার চালানো যায়। হার্ডডিস্ক কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন হার্ডডিস্ক ক্রয়ের আগ পর্যন্ত এভাবে কাজ চালানো যাবে।
  • কিংবা পাসওয়র্ডের কারণে কোন কম্পিউটার খুলতে না পারলে লাইভ বুট করে সেটা দিয়ে আপনার কাজ করতে পারেন (মেইল চেক, ডকুমেন্ট লেখালেখি, কাউকে আপনার করা কাজের ফাইল দেখানো ইত্যাদি)
  • ভাইরাস বা অন্য কোনো কারণে একটা কম্পিউটার হার্ডডিস্ক থেকে চালু হতে না পারলে, লাইভ সিডি বা ইউএসবি থেকে বুট করে এটার হার্ডডিস্কে থাকা জরুরী ফাইল অন্য মিডিয়াতে কপি করে আনা যায়। দরকার হলে হার্ডডিস্কে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা ভাইরাসও মুছে ফেলা যায়। (রিকভারি টুল)
  • কারো পেনড্রাইভে প্রয়োজনীয় ফাইলের সাথে চুপিসারে ভাইরাস আসছে এমন আশংকা করলে আর নিজের এন্টিভাইরাসে ভরসা না থাকলে, লাইভ লিনাক্স বুট করে তারপর সেই পেনড্রাইভ থেকে জরুরী ফাইল কপি করে নেয়া যায়, আবার ভাইরাস ফাইল দেখলেও ওগুলোকে দেখে দেখে মুছে ফেলা যায়।
  • কোনো কম্পিউটারের ম্যালওয়্যার আপনার সংবেদনশীল ডেটা, পাসওয়র্ড এসব চুরি করছে এমন আশংকা করলে, লাইভ সিডি থেকে বুট করে কাজ করে সেই আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। (অনলাইন ব্যাংকিং‌)
  • কোনো হার্ডওয়্যার কেনার সময়ে সেটা আপনার সিস্টেমে চলবে কি না সেটা লাইভ সিস্টেম দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায়।
  • ছোট অপারেটিং সিস্টেমগুলো নিজেকে পুরোপুরি মেমরিতে কপি করে নেয় বলে এগুলো অসম্ভব দ্রুত চলতে পারে।
  • পুরোপুরি মেমরিতে কপি করে নিলে, হার্ডডিস্ক বা সিডি ড্রাইভ চালানোর প্রয়োজন হয় না বলে, ছোট অপারেটিং সিস্টেমগুলোর লাইভ চালাতে সাধারণত কম বিদ্যূৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।
লাইভ সিস্টেমের অসুবিধা
  • সিডি / ডিভিডি থেকে প্রোগ্রাম চালু করা বড় আকারের অপারেটিং সিস্টেমগুলো একটু ধীরগতির হয়। কারণ সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের গতি হার্ডডিস্ক থেকে ডেটা ট্রান্সফারের অন্তত ১৫ ভাগের একভাগ। এছাড়া ঐ প্রোগ্রামগুলো কম্প্রেস করা অবস্থায় থাকে, ডেটা ট্রান্সফারের পর সেগুলোকে আবার ডিকম্প্রেস করে তবেই ব্যবহার করে। সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের সময়টা ইউ.এস.বি লাইভে কমিয়ে আনা যায়, তবে এতেও ডিকম্প্রেস করার সময়টা এড়ানো সম্ভব হয় না।
  • সাধারণত লাইভ সিডি সিস্টেমের কাস্টমাইজেশন সংরক্ষিত হয় না। অবশ্য পেনড্রাইভ বুটেবল করলে নিজের সেটিংসগুলো সংরক্ষণ করা যায়।

লাইভ সিডি তৈরী করবেন যেভাবে

লাইভ সিডি তৈরী করার জন্য অপারেটিং সিস্টেমটির একটা ইমেজ ফাইল প্রয়োজন হয়। এই ফাইলগুলোর নামের শেষে .iso লেখা থাকে। তাই এই ইমেজ ফাইলগুলোকে আই.এস.ও ফাইলও বলা হয়। বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই আই.এস.ও ফাইলগুলো ডাউনলোডের জন্য দেয়া থাকে। এই ফাইল ডাউনলোড করার পর সেটাকে ইমেজ ফাইল হিসেবে সিডিতে বার্ন করতে হয়। যে কোন প্রমিত সিডি রাইটার সফটওয়্যারে ইমেজ ফাইল রাইট করার জন্য পদ্ধতি দেয়া থাকে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সিডিতে ইমেজ ফাইল রাইট করার জন্য কিছু ফ্রী সফটওয়্যার পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হল।

উইন্ডোজ ৯৫ / ৯৮ / ME / ২০০০ / XP / সার্ভার ২০০৩ / ভিস্তাঃ ইনফ্রা রেকর্ডার

  • প্রথমে http://infrarecorder.sourceforge.net থেকে ইনফ্রা রেকর্ডার ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন।
  • সিডি রাইটারে একটা ব্ল্যাংক সিডি প্রবেশ করান। যদি একটা অটোরান ডায়লগ আসে তবে Do nothing বা Cancel সিলেক্ট করুন।
  • ইনফ্রা রেকর্ডার চালু করুন এবং মূল স্ক্রিনে 'Write Image' বোতামে ক্লিক করুন।
  • বিকল্প হিসেবে আপনি Actions' menuতে গিয়ে Burn image সিলেক্ট করতে পারেন।
  • এরপর আপনার উদ্দিষ্ট ফাইলটা সিলেক্ট করে দিন এবং 'Open'এ ক্লিক করুন।
  • OK ক্লিক করুন।

উইন্ডোজ XP / সার্ভার ২০০৩ / ভিস্তাঃ ISO Recorder

  • http://isorecorder.alexfeinman.com/isorecorder.htm থেকে সঠিক ভার্সনের ISO Recorder ডাউনলোড ও ইনস্টল করুন।
  • ডিভিডি রাইটারে একটা আনফরম্যাটেড ডিভিডি প্রবেশ করান (ভিস্তাতে এই সফটওয়্যার দিয়ে শুধুমাত্র ডিভিডি রাইট করা যাবে)
  • উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার খুলুন, অপারেটিং সিস্টেমের ISO ফাইলটার উপরে মাউসের ডান ক্লিক করুন এবং 'Next' সিলেক্ট করুন।
Windows 7
  • ISO ইমেজ ফাইলটার উপরে মাউসের ডান ক্লিক করুন এবং 'Burn disc image' নির্বাচন করুন।
  • আপনার সিডি বা ডিভিডি রাইটারটা সিলেক্ট করে দিন এবং 'Burn' বাটনে ক্লিক করুন। ঠিকমত রাইট হয়েছে কি না সেটা পরীক্ষা করাতে চাইলে 'Verify disc after burning' এ টিক দিয়ে দিন।

লাইভ ইউ.এস.বি তৈরী করবেন যেভাবে

উইন্ডোজ

  • কমপক্ষে ২ গিগাবাইট খালি জায়গাসহ একটা ইউএসবি ডিস্ক কম্পিউটারে লাগান।
  • http://www.pendrivelinux.com/downloads/Universal-USB-Installer/Universal-USB-Installer.exe
  • উপরের ঠিকানা থেকে ইউনিভার্সাল ইউএসবি ইনস্টলার ডাউনলোড করুন।
  • Run এ ক্লিক করুন।
  • সিকিউরিটি ডায়লগ আসলে Run এ ক্লিক করে নিশ্চিত করুন।
  • লাইসেন্স চুক্তি পড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য 'I Agree' নির্বাচন করুন।
  • Step 1এ ড্রপডাউন লিস্ট থেকে আপনার উদ্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচন করুন।
  • Step 2এ 'Browse' এ ক্লিক করে ডাউনলোড করা ISO ফাইলটা দেখিয়ে দিন।
  • Step 3এUSB ড্রাইভ নির্বাচিত করুন এবং 'Create'এ ক্লিক করুন।
Unetbootin নামক সফটওয়্যার দিয়েও USB বুটেবল করা যায় (উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স)
http://unetbootin.sourceforge.net/ থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন। নিচের ডিস্ক ইমেজের স্থলে iso ফাইলটা দেখিয়ে দিন; যদি সেটিংস সংরক্ষণ করাতে চান, তাহলে এর নিজস্ব একটা ড্রাইভ বানানের জন্য জায়গার পরিমাণ দিন; আর শেষে USB ড্রাইভটা দেখিয়ে দিন।

লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি থেকে কম্পিউটার চালু করবেন যেভাবে
হার্ডডিস্কের বদলে লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি থেকে কম্পিউটার স্টার্ট বা বুট করতে হলে এর মাদারবোর্ডে থাকা বায়োসে অপারেটিং সিস্টেম কোথায় খুঁজবে (ফ্লপি, হার্ডডিস্ক, সিডি ইত্যাদি) সেটা সেইমত বলে দিতে হয়। এটাকে বলে Boot order। কম্পিউটার চালু করলেই প্রথমে বায়োস নামের এই লুকানো প্রোগ্রামটা মাদারবোর্ড থেকে চালু হয়।

ধাপ ১: বিভিন্ন কম্পিউটারে বায়োসে প্রবেশ করার পদ্ধতি ভিন্ন হয়। কম্পিউটার চালু করে প্রথমেই স্ক্রিনে যে লেখাগুলো আসে সেখানে কোন এক জায়গায় (সাধারণত একেবারে নিচের দিকে) এমন কিছু লেখা থাকে: Press 'X' to Enter Startup যেখানে X এর জায়গায় F2 বা DEL কী লেখা থাকে। নিচের ১নং চিত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্পিউটারের জন্য কোন key চাপতে হয় সেটা দেখানো হল। কম্পিউটার চালু করেই এই key টা বার বার চাপতে থাকুন, যদি ইতিমধ্যেই স্ক্রিনে উইন্ডোজ লোগো চলে এসে থাকে তাহলে ইতিমধ্যেই কী চাপতে দেরী হয়ে গিয়েছে। কম্পিউটার রিস্টার্ট করে আবার চেষ্টা করুন।

(যদি USB কীবোর্ড ব্যবহার করে বায়োসে ঢুকতে না পারেন তাহলে একটা স্ট্যান্ডার্ড PS2 কীবোর্ড ব্যবহার করলে সমস্যা মিটতে পারে।)

ধাপ ২: বায়োস চালু হলে আসা স্ক্রিনে কম্পিউটারের অনেক সেটিংএর অপশন দেখাবে। এই স্ক্রিনে মাউস কাজ করবে না। কাজেই কীবোর্ডের তীর চিহ্নিত বাটনগুলো দিয়ে বিভিন্ন মেনুতে যেতে হবে। সাধারণত স্ক্রিনের নিচের দিকে কোন Key দিয়ে কোন কাজ করা যাবে সেটা লেখা থাকে। আপনার কম্পিউটারের বায়োসের চেহারা এই চিত্র থেকে ভিন্ন হতে পারে।

ধাপ ৩: বুট সংক্রান্ত সেটিংটা খুঁজে বের করে সিলেক্ট করুন। এটার জন্য Boot Order, Boot Sequence, First Boot Device, Boot Management, অথবা এই ধরণের কিছু লেখা থাকতে পারে। পরের চিত্রে Boot লেখা দেখা যাচ্ছে।

ধাপ ৪: বুট অপশনের স্ক্রিনে কম্পিউটারটি কী কী দিয়ে চালু বা বুট করতে পারে তার একটা তালিকা দেখাবে। এই তালিকার ক্রম পরিবর্তন করে সিডি বা ইউ.এস.বি প্রথমে নিয়ে আসতে হবে।

নিচের চিত্রে খেয়াল করে দেখুন; কীভাবে এগুলোর ক্রম পরিবর্তন করতে হবে তা ডানদিকে লেখা আছে। এক্ষেত্রে দেখুন এক জায়গায় + / - চিহ্ন দিয়ে একটি ডিভাইসকে উপরে বা নিচে সরিয়ে ক্রম পরিবর্তন করা যাবে বলে লেখা আছে।

এই পর্যায়ে এসে কোন বুট ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করার অপশন থাকে কোনো কোনো বায়োসে। এইরকম কিছু করার সময় সতর্ক বিবেচনার প্রয়োজন। হার্ড ড্রাইভ বা সিডি রম বা ইউ.এস.বি নিষ্ক্রিয় করলে সেটা থেকে কম্পিউটার চালু হতে পারবে না।

ধাপ ৫: বুট ক্রম পরিবর্তনের পর এটাকে সংরক্ষণ করে তারপর বায়োস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বেশিরভাগ বায়োসেই F10 key বা ESC key দিয়ে এই কাজ করা যায়, যার নির্দেশ স্ক্রিনের নিচের অংশেই দেয়া থাকে। যখন পরিবর্তন সংরক্ষণে কথা জিজ্ঞেস করবে তখন চিত্রের মত ‘Yes’ নির্বাচন করবেন।

ধাপ ৬: বায়োসে কম্পিউটার চালু হওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন ও সংরক্ষণ করার পর, আপনার লাইভ সিডি বা ইউ.এস.বি টি কম্পিউটারে ড্রাইভে প্রবেশ করান এবং কম্পিউটার রিবুট করুন।

ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটার হলে এটাতে উইন্ডোজ চালু অবস্থায় কখনই লাইভ ইউ.এস.বিটা লাগাবেন না, এতে এটার ফাইলগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আপনার বায়োসের চেহারা আগের ছবিগুলোর মত না হলে ঘাবড়াবেন না। স্ক্রিনেই কিভাবে কী করতে হবে তার নির্দেশনা দেয়া থাকে। বোঝার সুবিধার্থে অন্য ধরণের একটা বায়োসের ছবি দেখুন:

প্রথমে কম্পিউটার চালুর পরে বায়োসে প্রবেশের নির্দেশনা:

এবার অন্যরকম চেহারার বায়োস: এখানে লাল রংয়ে সিলেক্ট করা ২য় অপশনটার ভেতরে ঢুকতে হবে।

এবার অপশন পরিবর্তন করার স্ক্রিন

তথ্য ও চিত্রের জন্য কৃতজ্ঞতা:

লাইভ সিস্টেমের ব্যাপারে:
আরও বিস্তারিত এখানে: http://en.wikipedia.org/wiki/Live_CD

লাইভ সিডি তৈরীর ব্যাপারে:
http://www.ubuntu.com/

লাইভ ইউএসবি তৈরীর ব্যাপারে:
www.ubuntu.com
http://unetbootin.sourceforge.net/

বায়োস পরিবর্তনের ব্যাপারে:
http://www.whitecanyon.com/how-to-change-boot-order.php ;
http://www.notebookdatabase.com/2008/03/14/how-to-boot-your-notebook-from-a-cd-or-dvd/

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

বহুদিন যাবৎ নপিক্স চালিয়ে বেশ মজা পাচ্ছি


নপিক্স (knoppix) লিনাক্স ভিত্তিক আরেকটি অপারেটিং সিস্টেমের নাম। এটা সরাসরি ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে জার্মানীতে তৈরী। জনপ্রিয় উবুন্টুও কিন্তু ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে তৈরী, তবে উবুন্টু টিম নিজেরাও একটা সফটওয়্যার রিপোজিটরি মেইনটেইন করে। নপিক্সের বৈশিষ্ট হল এটা একটা লাইটওয়েট বা হালকা অপারেটিং সিস্টেম যেটা মূলত লাইভ মোডে চলার জন্য তৈরী করা হয়েছে। তবে চাইলে এটা হার্ডডিস্কেও ইনস্টল করা যায়, যার ইনস্টলার এর সাথেই দেয়া আছে। নপিক্সের বর্ণনা করার সাথে সাথে বোঝার সুবিধার্থে হালকা আর লাইভ বলে কী বুঝায় সেটাও ব্যাখ্যা করছি।
হালকা সিস্টেম
হালকা বলতে বুঝানো হচ্ছে যে এটা চালাতে রিসোর্স কম লাগে -- কম ক্ষমতার প্রসেসর এবং কম মেমরিতেও এগুলো চলে। তবে বেশ কিছু রিভিউয়ে নপিক্সকে দৈত্য বলা হয়েছে এর আকারের কারণে (ক্ষমতার কারণেও বলা হতে পারে  dream )। আরও অনেকগুলো হালকা অপারেটিং সিস্টেম আছে যেগুলোর আকারও খুব ছোট। একটা অপারেটিং সিস্টেমকে যত বেশি সুবিধাজনক করার চেষ্টা করা হবে সেটার আকার এবং চাহিদা তত বাড়তে থাকবে। তাই হালকা অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে মূলধারার অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক সুবিধাকেই ছাড় দিতে হয়। একটা মূলধারার অপারেটিং সিস্টেম লাইভ চালাতে ৩৮৪ মেগাবাইট মেমরি লাগে, আর এর ব্রাউজার, অফিস সহ অন্য নিত্য ব্যবহার্য সফটওয়্যারসহ চালাতে অন্তত ৫১২ মেগাবাইট ড়্যাম রিকমেন্ড করা হয়। আমার বাসার পিসিটাতে প্রসেসর সেলেরন ডি (পেন্টিয়াম ৪ এর তূল্য) আর মেমরি ৫১২ মেবা - এতে খুব চমৎকার ভাবেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন উবুন্টুতে সমস্ত কাজ করছি।
প্রথমেই যে জিনিষটা হালকা সিস্টেমগুলোতে আলাদা বা ছাড় দেয়া হয়েছে সেটা হল গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস বা ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট; ভয়ের কিছু নেই এতে DOS এর মত টেক্সট বা কমান্ড লাইন ভিত্তিক কিছু দেয়া হয় না, বরং এতেও মূলধারার মতই একই রকম দেখতে একটা গ্রাফিকাল ইন্টারফেস দেয়া হয়। তবে সেই ইন্টারফেসে অনেক ধরণের অপশন বা সুবিধা মূলধারার ইন্টারফেসের তুলনায় কম থাকে। কম সুবিধা নিয়ে কাজ করতে হয় বলে এগুলো কম রিসোর্সে অনায়েসেই চলে। উইন্ডোজে ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টে উইন্ডো ম্যানেজার হল এক্সপ্লোরার, একই সাথে ফাইল ব্রাউজারও এক্সপ্লোরার এমনকি ইন্টারনেট ব্রাউজারও এক্সপ্লোরার  -- এজন্যই কখনো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার চালু না হলে, ফাইল ব্রাউজারের এড্রেস বারে ওয়েব ঠিকানা লিখে দিলেই সেটাই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে রূপ নেয়। এক্সপির ক্ষেত্রে এর নাম ছিল লুনা, উইন্ডোজ সেভেনে সেটার নাম এ্যারো; আবার ম্যাকেরটার নাম অ্যাকোয়া। লিনাক্সের মূলধারার ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট হল গনোম (gnome), উবুন্টুতে এর মধ্যে নটিলাস নামক ফাইল ম্যানেজার ব্যবহৃত হয়। আবার কুবুন্টুতে KDE বা K Desktop Environment ব্যবহৃত হয়, যা অনেক বেশি ফীচার সম্পন্ন এবং এর মেমরি চাহিদাও বেশি। হালকা এনভায়রনমেন্টের মধ্য XFCE, LXDE, ROX, Ambient ইত্যাদি রয়েছে। নপিক্সে LXDE ব্যবহৃত হয়েছে, এর ফাইল ম্যানেজার বা ব্রাউজার হল: PCManFM। আরো হালকা পাপ্পি লিনাক্সে ROX ব্যবহৃত হয়।
অপর যেই মূল জিনিষটাতে ছাড় দেয়া হয় সেটা হল অফিস সফটওয়্যার। পূর্ণ ফীচার সম্পন্ন লিব্রে অফিসের বদলে হালকা সিস্টেমগুলোতে কম ফীচার সম্পন্ন টেক্সট বা ডকুমেন্ট এডিটর ও স্প্রেডশীট প্রোগ্রাম দেয়া হয়। ঠিক এই কারণেই হালকা সিস্টেমগুলো আমার ক্লাসরুমে বা পিসিতে ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে না। কারণ আমার কাজের ধরণের জন্য মূল কাজগুলো এই অফিস সফটওয়্যার নির্ভর, তাই সেটাতে পূর্ণ শক্তি চাই আমার। নপিক্সে এই ব্যাপারটায় ছাড় দেয়নি, পূর্ণ শক্তির লিব্রে অফিস দেয়া হয়েছে, যা লাইভ সিস্টেম থেকেও ব্যবহার করা যায়।
আমার নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে এবং লেখাটাকে সহজপাচ্য রাখার জন্য বিস্তারিত কিছু লিখলাম না। ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়াতে এই সংক্রান্ত পৃষ্ঠাটি দেখতে পারেন (http://en.wikipedia.org/wiki/Desktop_environment)

লাইভ মোড
লাইভ সিডি কী সেটা আপনার জানা থাকলে এই অংশটা বাদ দিয়ে পড়তে পারেন।
লাইভ মোড হল লাইভ সিডি বা লাইভ ইউএসবি থেকে একটা সিস্টেমকে ইনস্টল না করেই চালানো। হার্ডডিস্কে কোন কিছু ইনস্টল না করেই এক্ষেত্রে সিডি, ডিভিডি বা পেনড্রাইভ থেকে একটা অপারেটিং সিস্টেমকে চালানো হয়। অপারেটিং সিস্টেমটি এজন্য তার প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ফাইলগুলো কম্পিউটারের মেমরি বা RAMএ কপি করে নেয়, এবং সেখান থেকেই চলে, হার্ডডিস্কে একটি আঁচড়ও ফেলে না। লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশন বা অপারেটিং সিস্টেমর সিডি, ডিভিডই এই সিস্টেমে করা হয় যেন ইনস্টলের ঝামেলায় না গিয়েই কৌতুহলী কেউ এটা সম্পর্কে জানতে পারে। তাই লাইভ সিডির অর্থ দাঁড়ায় - এটা জীবিত এবং নিজে নিজেই সবকিছু করতে পারে :p।
লাইভ সিস্টেমগুলো শুধু সিডিতেই হয় তা নয়, এগুলো বড় আকার হলে ডিভিডিতে নেয়া যায়। আবার পেনড্রাইভ এবং ফ্লাশ মেমরি কার্ডও লাইভ বুটেবল করা যায়। এমনকি একটি পেনড্রাইভে একত্রে অনেকগুলো লাইভ অপারেটিং সিস্টেমও রাখা যায়। মেমরি ড্রাইভে এটা নেয়ার সুবিধা হল, দরকার না হলে এটা মুছে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।
লাইভ সিস্টেমের সুবিধা হল, 
  • ইনস্টল না করেই একটা অপারেটিং সিস্টেমে কী আছে আর কী নাই সেটা বোঝা যায়, ফলে এটা আমার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম কি না সেটা ইনস্টল না করেই চালিয়ে দেখে নেয়া যায়।
  • হার্ডডিস্ক ছাড়াই কম্পিউটার চালানো যায়। হার্ডডিস্ক কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন হার্ডডিস্ক ক্রয়ের আগ পর্যন্ত এভাবে কাজ চালানো যাবে।
  • কিংবা পাসওয়র্ডের কারণে কোন কম্পিউটার খুলতে না পারলে লাইভ বুট করে সেটা দিয়ে আপনার কাজ করতে পারেন (মেইল চেক, ডকুমেন্ট লেখালেখি, কাউকে আপনার করা কাজের ফাইল দেখানো ইত্যাদি)
  • ভাইরাস বা অন্য কোনো কারণে একটা কম্পিউটার হার্ডডিস্ক থেকে চালু হতে না পারলে, লাইভ সিডি বা ইউএসবি থেকে বুট করে এটার হার্ডডিস্কে থাকা জরুরী ফাইল অন্য মিডিয়াতে কপি করে আনা যায়। দরকার হলে হার্ডডিস্কে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা ভাইরাসও মুছে ফেলা যায়।
  • কারো পেনড্রাইভে প্রয়োজনীয় ফাইলের সাথে চুপিসারে ভাইরাস আসছে এমন আশংকা করলে আর নিজের এন্টিভাইরাসে ভরসা না থাকলে, লাইভ লিনাক্স বুট করে তারপর সেই পেনড্রাইভ থেকে জরুরী ফাইল কপি করে নেয়া যায়, আবার ভাইরাস ফাইল দেখলেও ওগুলোকে দেখে দেখে মুছে ফেলা যায়। (আমি আগে অফিসে বাধ্য হয়ে উইন্ডোস ব্যবহারের সময় এই কাজ করতাম)
  • কোনো কম্পিউটারের ম্যালওয়্যার আপনার সংবেদনশীল ডেটা, পাসওয়র্ড এসব চুরি করছে এমন আশংকা করলে, লাইভ সিডি থেকে বুট করে কাজ করে সেই আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। (কিছু অনলাইন ব্যাংকিং‌-এর জন্য এমন লাইভ সিডি দেয়ার কথা শুনেছিলাম)
লাইভ সিস্টেমের কিছু অসুবিধাও রয়েছে:
  • এটা যেহেতু সিডি বা ডিভিডি থেকে প্রোগ্রাম চালু করে, তাই একটু ধীরগতির হয়। কারণ সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের হার হার্ডডিস্ক থেকে ডেটা ট্রান্সফারের অন্তত ১৫ ভাগের একভাগ। এছাড়া ঐ প্রোগ্রামগুলো কম্প্রেস অবস্থায় থাকে, ডেটা ট্রান্সফারের পর সেগুলোকে আবার ডিকম্প্রেস করে তবেই ব্যবহার করে। সিডি থেকে ডেটা ট্রান্সফারের সময়টা ইউএসবি বুটেবল করলে কমিয়ে আনা যায়, তবে ডিকম্প্রেস করার সময়টাকে এড়ানো সম্ভব হয় না এতেও।
  • সাধারণত সিস্টেমের কাস্টমাইজেশন সংরক্ষিত হয় না। অবশ্য পেনড্রাইভ বুটেবল করলে নিজের সেটিংসগুলো সংরক্ষণ করা যায়।

নপিক্সের অন্য সুবিধাসমূহ

হালকা ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট হওয়ার পরেও পূর্ণশক্তির অফিস সফটওয়্যার থাকাতে নপিক্সকে আমার বেশ পছন্দ। কারণ এতে করে দূর্বল পিসিতেও এখন সম্পুর্ন প্রয়োজন মেটাতে পারছি। আর বাড়তি হিসেবে এর লাইভ সিডিতেই দারুন সব গ্রাফিকাল ইফেক্ট চালু অবস্থায় থাকে। ক্লাসরুমে এই ঝাকানাকা গ্রাফিকেল ইফেক্ট দেখেই কিছু ছাত্র আমার কাছ থেকে এটা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে। এছাড়া এটাতে মাল্টিমিডিয়া চালানোর কোডেকগুলো দেয়া থাকে, ফলে অতিরিক্তি কিছু ডাউনলোড বা ইনস্টল না করেই সাধারণ গান বা মুভি চালানো যায়।
নপিক্সের যেই সফটওয়্যারগুলো এর লাইভ সিডিতেই দেয়া থাকে তার কয়েকটা হল এমন:
  • অফিস: লিব্রে অফিস - লেখালেখি, হিসাব নিকাশ, প্রেজেন্টেশন, আঁকাআঁকি, ডেটাবেস সবগুলো কাজই করা যায় অনায়েসে। মাইক্রোসফট অফিসের ফাইলগুলোও এতে খোলা ও এডিট করা যায়। এছাড়া সরাসরি পিডিএফ বানাতে পারা লিব্রে অফিসের পুরাতন একটা দারুন বৈশিষ্ট।
  • ব্রাউজার: ক্রোমিয়াম - দারুন এই ব্রাউজারটা সম্পর্কে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নাই।
  • গ্রাফিক্স:  গিম্প - গ্নুহ ইমেজ ম্যানিপুলেশন প্রোগ্রাম বা গিম্প হল ছবি এডিট করার জন্য দারুন একটা সফটওয়্যার। ছোটখাট এডিটিংএর কাজ করার জন্য এটা ফটোশপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর ইন্টারফেসটাও ফটোশপের মত।
  • সিডি ডিভিডি রাইটার:  ব্রাসেরো নামের সফটওয়্যারটা দেয়া আছে।
  • মাল্টিমিডিয়া: গনোম প্লেয়ার, যা অডিও ও ভিডিও চালাতে পারে। এছাড়া শব্দ মিশানোর জন্য অমিক্স নামে একটি সরল মিক্সার দেয়া আছে।
  • মেসঞ্জার: পিজিন - এটা দিয়ে একই সাথে ইয়াহু, গুগল সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় মেসেঞ্জারের সাথে সংযুক্ত হয়ে চ্যাট করা যায়।
  • এছাড়া উইন্ডোজের প্রোগ্রাম রান করার জন্য এতে wine নামক একটা প্রোগ্রাম দেয়া আছে।
  • ডিস্ক পার্টিশনিঙের জন্য জিপার্টেড। IP ট্রাফিক অ্যানালাইজার ইত্যাদি সহ অনেক দারুন সফটওয়্যার দেয়া আছে এতে -- যার বেশিরভাগই আমি ব্যবহার করি না ;-p ।
অনেকদিন পর আমার দূর্বল নেটবুকটাকে খুব সাবলিলভাবে চলতে দেখছি এই নপিক্সের কল্যানে। আমি অবশ্য হার্ডডিস্কে ইনস্টল করে নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছি। এই লেখাটিও নপিক্সে বসেই লেখা। এর একটা স্ক্রিনশট দেখুন:
https://lh6.googleusercontent.com/-bb7OG0Jm8wI/TlnGiqyaqqI/AAAAAAAABAw/f1F7W4kvPec/s640/Knoppix%252520on%252520my%252520netbook.jpeg
আমার নেটবুক হল HP mini 1001TU এটম n470 প্রসেসর, ১ গিগা ড়্যাম।
তবে নপিক্স চালানোর জন্য কমপক্ষে যেই ক্ষমতা লাগবে তা হল:
  • ইন্টেল কম্পাটিবল প্রসেসর (i486 অথবা পরেরগুলো)
    ৩২ মেবা RAM এ এটা টেক্সট মোডে চলবে। কমপক্ষে ৬৪ মেবা লাগবে LXDE গ্রাফিক্স মোডে চালানোর জন্য (অন্য অফিস প্রোগ্রাম চালানোর জন্য কমপক্ষে ১২৮ মেবা ড়্যামের সুপারিশ করা হয়।)
    বুটযোগ্য সিডি রম ড্রাইভ, কিংবা একটা বুট ফ্লপি এবং সাধারণ সিডিরম(IDE/ATAPI or SCSI)
    আদর্শ SVGA-কম্পাটিবল গ্রাফিক্স কার্ড
    সিরিয়াল বা PS/2 মাউস বা IMPS/2-কম্পাটিবল USB-মাউস
ডাউনলোড
বেশিভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের মতই নপিক্স একটি ফ্রী অপারেটিং সিস্টেম। এটা ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে (৬৯৭মেবা):
বিট টরেন্ট: http://torrent.unix-ag.uni-kl.de/
কিংবা: http://www.knopper.net/knoppix-mirrors/index-en.html
সরাসরি সিডি বা সফটকপি সংগ্রহ
FOSSBD থেকে আমরা কিছু নপিক্স সিডি রাইট করিয়েছি। সেটা সংগ্রহ করতে চাইলে(২০ বা ২৫ টাকা লাগবে) কিংবা সফট কপি নিজের পেনড্রাইভে নিতে চাইলে আমার বা contact এট fossbd.org সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
https://lh5.googleusercontent.com/-elpF1cJTj30/TloUF4wP3SI/AAAAAAAABBQ/xNWl8j96EaQ/s800/knoppix_cd.jpg

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১১

"লিনাক্স ডে - ২০১১" - বাংলাদেশ, কুড়ি বছর পূর্তির উৎসব আয়োজন

লিনুস টোরভাল্ড নামক একজন দুষ্টু ছাত্র সেই সময়ে জানতো না যে তার এই দুষ্টামীর ফলে বৈপ্লবিক কিছু ঘটে যাবে ২০ বছর পর। সে এটাও জানতো না যে 'ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ' নামে একটি দুষ্টু সংগঠন ২০১১ সালে তার দুষ্টামীর জন্মদিন পালন করার নিয়ত করবে। ঐ দুষ্টু লোকটি আরও জানতো না যে সেই জন্মদিন আবার রোজা রমজানের দিনে পড়বে। জানলে নিশ্চয়ই ঈদের পরের কোন তারিখে সেই দুষ্টামি রিলিজ দিত। অবশ্য তাতেও শেষরক্ষা হত না, কারণ কোনো না কোনো বছর সেটা রোজা রমজানের দিনে পড়তোই, কারণ আরবী চন্দ্রবর্ষ ধরে যেই ক্যালেন্ডার সেটা প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে সাধারণত ১১ দিন কম থাকে - তাই প্রতিবছরই রোজা বা ঈদগুলো ১১ দিন করে এগিয়ে আসে।

দুষ্টু ছাত্রটি তার স্যারের দেয়া অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। এ আর এমন কি! .... এরকম অসন্তুষ্ট তো আমরা হর-হামেশাই হই। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারদের দেয়া বাঁশগুলো রাখার মত জায়গা থাকে না; তা-ও ভদ্রতা করে হাসিমুখে নিয়ে ফেলি। কিন্তু এই দুষ্টু ছাত্র করলো কি, সেটা নিতে রাজি হল না। শুধু নারাজি হল তা-ই না, ব্যাটা নিজেই একটা কার্নেল লিখে ফেললো। লেখার পার্টটা আমরা সবাই কম বেশি পারি, কিন্তু এটা একটা কার্নেল, যা কিনা অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ ভোমরা। ঐ দুষ্টু ছাত্র অবশ্য এই অপারেটিং সিস্টেম নিয়েই লেখাপড়া করতেছিলো - তাই হয়তো এরকম দুষ্টামি করা ওর জন্য সহজ হয়ে গিয়েছিল। হুহ্ ... ... নাইলে আমিও ঐ রকম কিছু একটা কইরে ফেলতাম। তবে চরম দুত্তু লিনুস সেই সুযোগও দিতে চায় নাই অন্যদের -- তাই তার লেখা সেই কার্নেলটা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিল।

উন্মুক্ত কার্নেল পেয়ে দুনিয়ার অন্য দুষ্টু আর বোকাগুলো করলো কি, সেটাকেই আরো শক্তিশালী করার জন্য এইটা সেইটা কোডিং যোগ করতে লাগলো। ফলে সেই কার্নেলটা আস্তে আস্তে শয়তানের মত শক্তিশালী হয়ে উঠলো। পরবর্তীতে সেটা নিয়ে লুকজন সার্ভারের ব্যবসা করে রমরমা হইলো -- দুনিয়ায় এখনো বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভার লিনুস দুষ্টুর সেই শয়তান সিস্টেম, যেটার নাম লিনাক্স, দিয়ে চলে। পরে আরো কিছু খারাপ লোক এইটা দিয়ে ডেস্কটপও সহজ করে বানিয়ে ফেললো ... ....

উফ্ ....টাইপ করতে করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। যাই, চা খেয়ে আসি .... ওহহো কেমনে কি! রোজা রমজান বলে কথা! -- চা খাওয়াও যাবে না এখন। বাকী কাহিনী জানতে চাইলে অনুষ্ঠানে আইসেন। এইবার ঘটনাটা এবার একটু অফিসিয়াল ভাষায় দেই:====
"লিনাক্স ডে - ২০১১" - বাংলাদেশ, কুড়ি বছর পূর্তির উৎসব আয়োজন।

১৯৯১ সালের ২৫শে আগস্ট, হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তির এক ছাত্র লিনুস টরভ্যাল্ডস ঘোষনা দেন উন্মুক্ত সোর্স ভিত্তিক কার্নেল “লিনাক্স” রিলিজের। সেই থেকে আজ অবধি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম সারা বিশ্বের সার্ভারের জগৎটা দাপিয়েই বেড়াচ্ছে। কিন্তু লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো এখন আর শুধুই সার্ভারের জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই বিষয়টা প্রযুক্তিপ্রেমী সব বাংলাদেশী কে জানাতে, বোঝাতে এবং ডেক্সটপ দুনিয়ায় লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের বীরত্বপূর্ণ সাফল্য গাঁথার কিছু ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ (Foundation for Open Source Solutions Bangladesh) বা সংক্ষেপে এফওএসএস বাংলাদেশ (FOSS Bangladesh) এবছরে লিনাক্সের ২০ তম জন্মবার্ষিকীতে “লিনাক্স ডে – ২০১১” উদযাপন করতে যাচ্ছে। আপনি যদি প্রযুক্তিপ্রেমী হোন এবং লিনাক্স সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকেন তো চলে আসুন আমাদের এ আয়োজনে।

আয়োজনের তারিখ ও সময়: ২৫ শে আগস্ট, ২০১১ইং, বৃস্পতিবার। সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এ আয়োজন।

আয়োজন স্থল: ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বা টিএসসি (লবি ও গেমস রুম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আয়োজনের বিস্তারিত সূচী:
১। সকাল ১০টায় ব্যানার-ফেস্টুন সহ পদযাত্রা/শোভাযাত্রা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে শুরু হয়ে, রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র পাখি চত্বরে এসে শেষ হবে।

২। সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী টিএসসির করিডোর আর লবিতে বিভিন্ন ধরনের লিনাক্স ডিস্ট্রোর ইতিহাস আর চিত্রসহ ডঙ্গল, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে প্রদর্শনী চলবে এবং এ আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

৩। আরো থাকছে ওপেন সোর্স এবং লিনাক্স নিয়ে আমাদের এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংগঠনের সেবামূলক কাজকর্মের ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, দিনব্যাপী।

৪। বিকাল ৪টা থেকে শুরু হবে আমন্ত্রিত অতিথি ও দশর্কদের মাঝে মত বিনিময় এবং আলোচনা অনুষ্ঠান।

৫। এছাড়াও আয়োজনস্থলে বিভিন্ন জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোর পেনড্রাইভ বা পছন্দের মিডিয়াতে অথবা সিডি/ডিভিডিতে বিতরনের ব্যবস্থা থাকবে।
====

আপনি আসতেছেন এইটা আগে থেকেই জানাতে চাইলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন এখানে ক্লিক করে

ঐদিন টিএসসি বন্ধ থাকে। তাই ইফতার করতে চাইলে আশেপাশের ডাস ও অন্যান্য জায়গায় যেতে হতে পারে।