মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৬

শিশুর মানসিক বিকাশে আমাদের ভূমিকা

(পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিলো)

চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়ে ধারণা হয়েছে যে, শিশুর মানসিক বিকাশ শুরু হয় মায়ের গর্ভ থেকেই। মায়ের মানসিক অবস্থাও গর্ভের শিশুর উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। মা হাসিখুশি, প্রফুল্ল থাকলে শিশুটিও হাসিখুশি ধরনের হবে। আর মা যদি খিটমিটের মধ্যে থাকে, গালাগালির মধ্যে (শুনে বা দিয়ে) দিন কাটায়, শিশুটির মানসিক গড়নেও সেটার ছাপ পড়বে। তাই আমার আশেপাশের মানুষগুলোকে বলতে শুনি, গর্ভবতী মায়েদেরকেও তার শিশু সম্পর্কে ভাল এবং পজিটিভ কথা বলা উচিৎ। একজন মানুষ যা করে, যে ধরনের অভ্যাস গড়ে তোলে তা তো তার জেনেটিক রেকর্ডকেও পরিবর্তন করে - যা তার শিশুর মধ্যে সঞ্চালিত হয়। যা হোক এখনো বাবা হই নাই- কাজেই ব্যাপারটা অত গভীরভাবে অবলোকন/পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাই নাই।

এখন বলি শিশুর কথা। বেশ কিছু দিন আগে (১০-১২ বছর) আমি আমার চাচার বাসায় বেড়াতে গেছিলাম, আমার চাচাতো বোনের বয়স তখন ১ মাস। বাচ্চা খুবই শান্ত ধরনের। যে ভাবে শোয়ায় রাখা হয় সেভাবেই শুয়ে থাকে - কোন ঝামেলা করে না। আমি ঐ কয়দিন ওকে কোলে নিয়ে খুব ঘুরালাম, এটা ওটা দেখাই আর বলি -- আপু দেখো এটা ফুল, ঐযে নীল আকাশ ইত্যাদি। ভাবছেন ১ মাসের বাচ্চাকে আমি কি পাগলের মত বুঝাইতে চেষ্টা করছি! কিন্তু অবাক ব্যাপার, এর পর থেকেই ও আর ভাল (তথাকথিত) থাকল না -- খালি কোলে উঠতে চায়, এদিক ওদিক যেতে চায় (কোলে নিয়ে দাড়ায় থাকলেও প্যাঁ প্যাঁ করে)। আমাকে চাচী বলল -- তুই ওরে এমন দুষ্ট বানালি। আমি বলেছিলাম - আমি ওর মানসিক বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছি।

পয়েন্টটা হল - শিশুকে শিখতে দেয়া উচিৎ। আরেকটা গল্প বলি (ওহ্ বোরিং ;) ).....

আমার এখানে প্রতিবেশী বাঙালি সিনিয়র ভাই-ভাবীর ৩য় সন্তানকে নিয়ে। ওর বয়স তখন প্রায় ১.৫ বছর। আমরা মগে চা নিয়ে বসলেই থাবা দিতে চায়। যতই মানা করা হয় বলা হয় ... না (জাপানীতে - দামে ) বিপদজনক (জাপানীতে - আবুনাই), গরম (আৎসুই) উ: উ: .... ও আরো মজা পেয়ে যায় -- ভাবখানা এরকম -- পাইছি, আমার দিকে তো এমন করলেই বেশী মনোযোগ দেয়.... তাইলে এইটাই করি।

আমার তখন মনে হলো - আরে! গরম (আৎসুই) যে, কি জিনিস সেটাই তো এ জানে না। ভয় পাবে বা সতর্ক হবে কেন - এটা তো ওর মনোযোগ আকর্ষনের জন্য একটা আকর্ষনীয় খেলা। আমি ওকে কোলে নিয়ে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বল্লাম - “কোরে আৎসুই, আবুনাই“ (এটা গরম, বিপদজনক)। কিন্তু ও যখন থাবা দিল তখন থামালাম না -- একটু ছেকা লাগতে দিলাম কিন্তু হাত ডুবানোর আগেই মগ সরায় নিলাম। বেচারা ভ্যাঁ -- তাড়াতাড়ি হাত মুছে ফূ.. ফু..; আবার শান্ত। আবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বল্লাম -- (এবার বাংলা আর জাপানীজ মিশায়.... কারণ আমার জাপানীজের অবস্থাও সেরকম!) “বললাম না কোরে আৎসুই“। এফেক্টটা রিমার্কেবল। এখন আর ও এই কাজ করে না -- যদি কখনো বলা হয় রিদওয়ান কোরে আৎসুই (রিদওয়ান, এটা গরম---- ওর নাম রিদওয়ান) তখন ও করে কি... দারুন একটা সমঝদার মুখভঙ্গি করে বলে - আচ্চুই উ: , আর একটা আঙ্গুল বাড়ায় দেয় ছুঁয়ে দেখার মত করে।

ইতিমধ্যে অনেক তেনা প্যাচায় ফেললাম। তাই আর উপসংহার টানলাম না। শুভেচ্ছা সহ।

কোন মন্তব্য নেই: