শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০০৮

সি.এন.জি.র মূল্যবৃদ্ধি, সাবওয়ের পরিকল্পনা ... ধোঁয়া ওড়া মাথার চান্দি

সরকার সি.এন.জি.'র দাম বাড়িয়েছে আজ থেকে। কারো জানা না থাকলে আজকের কোন দৈনিকে চোখ বুলালেই বিস্তারিত জানবেন। আমার তো সরকারী বাহন নাই, তাই ভাড়া গাড়িতেই যাতায়ত করি ..

কী হবে:

আমার বাসা (ধানমন্ডি ল্যাব এইডের পেছনে সেন্ট্রাল রোড) থেকে অফিস (গুলশান ২, অ্যারোমা'র পাশে) যেতে সবুজ সি.এন.জি.তে মিটারে সাধারণত ৬০-৭০ টাকা উঠতো। বেশি ভীড় থাকলে ৯০ টাকা পর্যন্তও উঠেছে। মিশুকওয়ালারা সবসময়ই ৮০-১০০ টাকা ভাড়া চাইতো ... মিটার -- আবার জিগায়। তাই সাশ্রয় এবং আরামের জন্য সবুজ সি.এন.জি কিংবা কালো/নীল ক্যাবে যাতায়ত করতাম।

এখন মনে হচ্ছে আবার মিশুকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তা' নাহলে বাস। একান্তই নিরূপায় হলে শয়তানের দ্বিচক্রযান। চোর-ছ্যাচ্চোড়ের স্বর্গভূমি ঢাকাতে চার চাকার জিনিষ কেনার এবং চালানোর যোগ্যতা এখনও হয় নাই।

সাবওয়ে .. হেঃ হেঃ

পৃথিবীতে আধুনিক কোন শহর ট্রেন/ট্রাম, সাবওয়ে বা স্কাইট্রেন ছাড়া আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো কেউ শখ করে বানায়নি। যানজট কমাতে এবং খরচের দিক দিয়ে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা বলেই প্রারম্ভিক বিশাল খরচ বহন করে এগুলো বানানো হয়। আমাদেরও যানজটক্লিষ্ট ঢাকা শহরেও mass public transport অর্থাৎ ট্রেন দরকার। আমাদের সরকার এদিকে এ্যাতদিন নজর দেয়নি মূলত দুটো কারণে।

  • শর্ষেতে ভুত আছে। সরকারি অনেক আমলা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাস/ট্রাক/সি.এন.জি/টেম্পু/লেগুনা ইত্যাদির ব্যাবসা রমরমা থাকবে না। কাজেই জনগন জাহান্নামে যাউক অসুবিধা নাই ... ব্যাবসা বলে কথা। (রেলওয়েতে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছে এই কথা ... অবশ্য সেটা আন্তনগর লাইনে মালগাড়ি চালানোর প্রসঙ্গে: প্রতিটি কার্গো ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসলে নেট লাভ হয় আড়াই লক্ষ টাকা। তাই সেটা বন্ধ করে শুধুমাত্র লাভহীন যাত্রীসেবা দিচ্ছে ... ট্রাক ব্যাবসাতো আর লাটে উঠতে দেয়া যায় না)
  • মাথামোটা এবং নির্বোধ কিছু গর্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় শিকড় গেড়ে বসেছে। বিশেষজ্ঞরা হাজার মাথা কুটলেও সহজ সমাধান ওদের মাথায় ঢুকবে না। আর ঢুকলেও পরবর্তী কার্যক্রম চালানোর দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস নাই ... শুধু শুধু আবার মানুষের হাস্যষ্পদ হওয়ার চেয়ে যা আছে তাই ভাল।
ইদানিং পত্রিকায় দেখলাম সরকার বলেছে যে, ঢাকা শহরে যানজট কমানোর জন্য পরিকল্পনা আছে ট্রেনের তবে সেটা মাটির তলা দিয়ে হবে। খবরটা পড়ে আমার ক্ষুদ্র অনভিজ্ঞ মস্তিষ্কে খটাশ করে একটা পোকা কামড় দিল ... সরকারের কি উচ্চতাভীতি আছে যে স্কাইট্রেন না করে মাটির তলার সাবওয়ে পছন্দ?!

স্কাইট্রেন না হয়ে সাবওয়ে হলে কী হবে ...
  • যতদুর জানি টানেল-কাটার বলে যন্ত্র দেশের নির্মান শিল্পের ঠিকাদারদের কাছে অজানা বস্তু। সুতরাং আবার চলবে খুড়াখুড়ি। আগামী ১০ বছরের জন্য খানাখন্দকের কাঁদা-ধুলোয় চলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে জনগণকে।
  • বন্যাপ্রবণ এলাকায় মাঝে মাঝেই লঞ্চডুবির মত বানের পানিতে ডুবে ট্রেনযাত্রীদের প্রাণ যাবে .... এটা অসম্ভব কিছু না।
  • যেহেতু স্কাইট্রেনের চেয়ে সাবওয়েতে খরচ বেশি কাজেই কর্তাব্যক্তিদের পকেটে লাভের ভাগ বাড়বে।
  • বিদ্যূৎ সংকটের কারণে মাঝে মাঝেই কবরে থাকার অনুভুতি হবে। ভুয়া মোল্লাদের দাপট বাড়ার একটা সম্ভাবনা আছে।
স্কাইট্রেনকে কেন সাবওয়ের চেয়ে পছন্দনীয় মনে হয়:
  • আগেই বলেছি, স্কাইট্রেনের অবকাঠামোগত খরচ সাবওয়ের চেয়ে যথেষ্ট কম।
  • স্কাইট্রেনের কাঠামোতে কিছুটা বিদ্যূৎ কম খরচ হবে। কারণ দিনের বেলায় বাইরের আলো স্টেশনগুলোকে আলোকিত করে রাখবে অনেকাংশে।
  • স্কাইট্রেন করার জন্য অবকাঠামো প্রযুক্তি দেশের নির্মাণশিল্পের আয়ত্বে। যেখানে নদীর পানির মধ্যে ব্রীজ করে, সেখানে শুকনার উপরে উচু অবকাঠামো করা কি অদেখা টানেল-প্রযুক্তির চেয়ে অধিকতর কঠিন মনে হয়?
আসল কারণ সম্ভবত, অবাস্তব ও বেকুবি সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে প্যাঁচে ফেলা যেন, সেই জনদরদী দেশনেতা ও আমলা মালিকানাধীন পরিবহন বাণিজ্য বাঁধাগ্রস্থ না হয়।

কোন মন্তব্য নেই: