মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০০৭

সুইজারল্যান্ডের এক কোনা ভ্রমনের বিশাল অভিজ্ঞতাঃ পর্ব-২ (প্রস্তুতি)

(....পূর্বের পর্ব হতে চলমান)

আবেদনপত্রে একটা জায়গা ছিল যে, তুমি কেন নিজেকে এই প্রশিক্ষনের একজন উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে কর। ঐ জায়গাটায় ডঃ ফিরোজ আহমেদ স্যারের একটা প্রবন্ধের ভুমিকার শেষ প্যারাটা একটু ইনায় বিনায় মেরে দিলাম। অনলাইনে অ্যাপ্লাই করার সময় আব্বা পাশে বসে ছিলেন। ফর্মটা পুরণকরে পাঠায় দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে অর্টোমেটিক রিপ্লাই আসল যে আমার আবেদন পেয়েছেন। তা দেখে আব্বা তো অবাক .... এ্যাত তাড়াতাড়ি চিঠি (!) পাইল! .... .... নাহ. ইন্টারনেট, কম্পিউটার তো দারুন কাজের জিনিস; ইন্টারনেট লাইন নি্য়ে খুব ভালো করছিস --- এই ছিল ওনার বক্তব্য। এক বছর আগে চাকরী থেকে রিটায়ার করা আব্বার কথাবার্তা অবশ্য সবসময়ই এরকম .... .... এর আগে প্রিন্টার কেনার আগে অনেক গজগজ করেছিলেন – শুধু শুধু পয়সা নষ্ট বলে ... কিন্তু দেখা গেল ওইটা আসার পর ওনার চিঠি লেখা বেড়ে গেল..... আমাকে বা শাহেদকে (আমার ছোটভাই) দিয়ে বাংলা টাইপ করিয়ে, প্রিন্ট নিয়ে তারপর আবার খামের উপর ও ঠিকানা প্রিন্ট করায় তারপর চিঠি পাঠানো হত। এরকম ছাপার অক্ষরে চিঠি পেয়ে ঐ প্রাপকগণ নিশ্চয়ই খুব অবাক হতেন।

এই ফাকে বলে রাখি আব্বা ১৯৬৮ সালে সরকারি মেধাবৃত্তি নিয়ে ২ বছর কানাডায় বিজনেস এ্যাডমিনিসট্রেশনের উপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেছিলেন .... আর ঘুরেছিলেন অনেকগুলা দেশ। ফলে উনি বিদেশ ভ্রমনের পূর্বশর্ত বা প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পর্কে জানতেন কিন্তু সবসময় উনার চিন্তা ভাবনাগুলো ৩০ বছর পুরাতন পরিপ্রেক্ষিতে হত। আর খালি ঝাড়ি দিতেন ... এখন ও আবেদন করিস নাই! এখন ও পাসপোর্ট হয়নি ... ... এখনো ভিসার জন্য যাসনি ....এয়ার টিকিট হয়নি... ইত্যাদি ইত্যাদি । পরে আম্মার কাছে শুনেছি যে, আব্বা নাকি উনাকে দূঃখ করে বলেছিলেন যে... শামীমটা বোধহয় যেতে পারবে না.... ওর কাজ কাম যে ঢিলা!!

যা হউক, সব কাজ সুন্দরমত এগোলেও এক জায়গায় ঝামেলা বাধলো। ঐ ১৫দিন ভ্রমনের ও থাকা খাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করবে ওখানকার কর্তৃপক্ষ আমাকে শুধু ৫০০ ডলার দিতে হবে। আমার হিসেবে সমস্ত খরচের তুলনায় ঐ টাকা কিছুই না ... বরং একেই তো বিদেশ ভ্রমণ হবে তার উপর এইটা একটা শর্ট একাডেমিক ট্রেনিং জন্য ভবিষ্যতে আমার CV সমৃদ্ধ করবে। কাজেই খুশিমনেই টাকাটা বিনিয়োগ(!) করতে রাজি হলাম। কিন্তু ব্যাংক থেকে টাকা পাঠাতে গিয়ে শুনি, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ২০০ ডলারের বেশি পাঠানো যায় না .... পাঠাতে হলে আরো কি কি জানি আগডুম বাগডুম করা লাগবে। আমি তাও রাজি কিন্তু ওতে যা সময় লাগবে তাতে আমরা টাকা পাঠানোর শেষ সময় পার হয়ে যাবে।

মাথায় বুদ্ধি খেলল.... সুইজারল্যান্ডে ডঃ স্টেফান কে মেইল করলাম ..... খুলে বললাম সমস্যার কথা; তারপর অনুরোধ করলাম, উনি কি আমার হয়ে ৫০০ ডলার দিয়ে দিতে পারবে কি না .... আমি সুইজারল্যান্ডে এসে ওনাকে ক্যাশ ডলার দি্য়ে দিব। উনি সানন্দে রাজি হলেন আর বল্লেন যে, ফেরৎ যাওয়ার আগে যুরিখ-এ ২ দিন থেকে যেতে .... উনি আমাকে ওনার ল্যাব দেখাবেন। এতো মেঘ না চাইতেই জল – আমিও একপায়ে খাড়া। অবশ্য এ জন্য পরে আমাকে এয়ার টিকিট পিছাতে হয়েছিল..... কিছু ফী এর বিনিময়ে।

যা হোক, নতুন অফিসে জয়েন করার একমাসও হয়নি তখন, তাও ছুটি পেলাম – এক্সট্রা অর্ডিনারি লিভ (মানেটা জানতাম না তখন!)। এর মাঝে ভ্রমনের সময়ের ভিতরে মাস্টার্সের একটা পরীক্ষার ডেট পড়ছিল. ... তাও ত্যাগ করলাম বিদেশ ভ্রমনের লোভে। সমস্ত নিয়মকানুন মেনে যাত্রার দিন এয়ারপোর্টে হাজির হলাম।

(...চলবে)

কোন মন্তব্য নেই: