রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

নেপাল ভ্রমণ (জুন ২০২৩): পর্ব-০১

পর্ব তালিকা: চন্দ্রগিরি>>পোখারা>>জমসম>>মুক্তিনাথ>>তাতোপানি>>পোখারা>>থামেল

চন্দ্রগিরি: মেঘের রাজ্যে আমরা

‌২৩ জুন ২০২৩:‌

ঢাকা-কাঠমুন্ডু: বিমান, ১০:১৫ - ১১:৩৫ (১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট), সময় মত গিয়েছে।

শুনেছিলাম কোনরকম খাবারদাবার দেয়, কিন্তু আমাদের মনে হল এর পরিমান বেশ ভাল।

অন অ্যারাইভাল ভিসা। ছবি লাগে না। এয়ারপোর্টে টাচস্ক্রিন প্যানেল আছে, পাসপোর্ট স্ক্যান করে + কিছু টাইপ করতে হয়। বছরে ১ম বার ফ্রী ভিসা (১৫ বা ৩০ দিনের অপশন সিলেক্ট করতে হয়)। এছাড়া, ফ্রী ওয়াইফাই দিয়েও করা যায়, সেক্ষেত্রে পাসপোর্টের তথ্যগুলো টাইপ করে প্রবেশ করাতে হবে। এরপর ইমিগ্রেশন পার হতে ১ মিনিট লাগে। লাগেজও আমাদের আগেই বেল্টে চলে এসেছিল।

কিছু ডলার-নেপালি রুপি চেঞ্জ করা হল (@১২৮ রুপি/ডলার, এয়ারপোর্টের বাইরে রেট ০.৫~১ রুপির মত বেশি)। একটা সীম কার্ড কেনা হল ৫ জিবি ডেটা সহ। (=২৫০ রুপি)

ত্রিভূবন এয়ারপোর্ট - চন্দ্রগিরি হিল রিসর্ট : শর্টকাটে গেলে ১৭ কিলোমিটার রাস্তা, ১:৩০ ঘন্টার মত লেগেছে গাড়িতে (এই ভ্রমণে সমস্ত গাড়িই ট্যূর প্যাকেজের অংশ ছিল, তাই আলাদা কোনো খরচ করতে হয়নি)।


একটা টিলার উপরে রিসেপশন। সেখান থেকে আমাদেরকে লাগেজ সহ একটা কেবল কারে তুলে দিল + পরদিন ফেরত আসার জন্যও কেবলকারের পাস দিল। 

ঝুলন্ত গন্ডোলার উচ্চতায় কিছুটা ভীত মনে হচ্ছে



কেবল কারের পাহাড়ের চূড়ার উপরের স্টেশন থেকে বের হলে দৃশ্যটা এমন। এখানেও মন্দির, জিপলাইন, সহ আরো কিছু এক্টিভিটি আছে।

১৫ মিনিটের মত রাইড। উইকি বলছে এটা ২.৪ কিলোমিটার, ৯~১২ মিনিট, উপরের স্টেশনের উচ্চতা ২৫৫৫ মিটার। উপরে আমাদেরকে রিসিভ করলো একজন, তারপর একটা মাইক্রোবাসে করে একটু দুরে চূড়া থেকে নিচে আঁকা-বাঁকা পথে নামিয়ে আনলো রিসর্টে (পৌণে দুই কিলোমিটার রাস্তা)।

নিচে গরম থাকলেও এই চূড়াতে তাপমাত্রা একটু কম। হঠাৎ করে উপর থেকে মেঘ নেম আসতে থাকলো। তাই হাতের লাগেজ থেকে হালকা জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে মেঘের ভেতরে থাকার ছবি তোলা হল।





ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের আদলে তৈরী চমৎকার রিসর্টটিতে বেশ কয়েকটি ভবন আছে। আমাদের ঠিকানা যে ভবনে সেটার লিফটের -3 (মাইনাস থ্রী) ফ্লোরে আমাদের রুম। অর্থাৎ রিসেপশন থেকে নেমে যেই চত্ত্বরে যাচ্ছি সেখান থেকে পাহাড়ের ঢালে তৈরী এই ভবনের ৪ তলায় সরাসরি প্রবেশ করা যায়, আমাদের রুম নিচতলায়।

তখন দুপুর গড়িয়ে বিকালের শুরু। প্রায় সাড়ো ৪টা বাজে। তাই রুমে লাগেজ রেখেই উপরে (আমাদের রুম নেগেটিভ ৩য় তলায়) রেস্টুরেন্টে চলে আসলাম হালকা খাওয়া দাওয়ার জন্য। কোনো কিছুতে হালাল লেখা নাই। তাই ভেজিটেরিয়ানেই ভরসা করে ভেজ মোমো আর চাওমিনের অর্ডার দেয়া হল।



খাওয়া দাওয়ার পরে খোলা চত্বরে চমৎকার দৃশ্যের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ফটোসেশন শুরু


এর মধ্যে আবার মেঘের আগমন সাথে ঠান্ডা বাতাস। কন্যা আর মা হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে এসে সমস্ত গরম কাপড়-চোপড় পরে আবার উপরে উঠলাম। হেঃ হেঃ, ঠান্ডার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি।


পেছনে জড়ো হওয়া দলটি এই ঠান্ডায় কিভাবে এত সাবলীল ছিল সেটা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়; হয়তো গরম পানীয়র প্রতিক্রিয়া



আয়েশী মেঘ দেখা


সূর্য ডোবার ঠিক আগ মুহুর্তে আবার ম্যাজিকের মত আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। দ্রুত মুহুর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করলাম।

 
একদিকে পরিষ্কার আকাশ, আরেকদিক থেকে আবার নতুন উদ্যামে মেঘ নামছে ...

ডানদিকে পাহাড় থেকে জলপ্রপাতের মত মেঘপ্রপাত চলছে

এরমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। তাই ফ্রেশ হয়ে ডিনারের জন্য আবার সেই রেস্টুরেন্টে আগমন এবং সেখানকার খানাদানার ছবি ...

 

 

  

 




রাতে হঠাৎ দেখি মেঘ সরে গিয়ে আলোকজ্জ্বল শহর দেখা যাচ্ছে, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা 

‌২৪ জুন ২০২৩:‌

সকালে উঠে দেখি বৃষ্টি। রুমে একটা ছাতা দেয়া ছিল। সেটা নিয়ে উপরে এলাম। এখানে আরো কিছু ছাতা রাখা ছিল। ওগুলো নিয়ে উপরে রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম। আমাদের চেকআউট করতে হবে ১০টার মধ্যে। তাই তাড়াতাড়ি নাস্তা করে ছাতা নিয়ে একটু বৃষ্টি দেখতে বের হলাম। আমাদের দেখাদেখি আরো লোকজন বের হয়ে ছাতা নিয়ে ঘুরাঘুরি করা শুরু করেছিল।



রুমে ব্যাক করে চেকআউটের প্রস্তুতি আর একটু পোজ দিয়ে ছবি তোলা ...
চেক আউট করতে যাওয়ার পর হঠাৎ আকাশ পরিষ্কার হয়ে অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যেতে থাকলো।

চেকআউটের পর শাটল গাড়ির জন্য অপেক্ষারত।

সেখানকার স্টাফগণ বলছিল এই ঋতূতে এরকম পরিষ্কার আকাশ এবং দুরের ঐ চূড়াগুলো দেখতে পাওয়া একটা ক্ষণস্থায়ী দূষ্প্রাপ্য ঘটনা - আমরা ভাগ্যবান যে এই সময়ে এটা দেখতে পারছি। একটু পরেই দেখি হুড়াহুড়ি করে হোটেলের স্টাফ এবং গেস্টরা এই দৃশ্য দেখার জন্য উপরের চত্বরে জড়োে হতে লাগলো।

বামের চূড়াটা সম্ভবত Dorje Lhakpa (6966 m)

খালি চোখে যা দেখা যায় তা ছবিতে আসে না কোনক্রমেই। কিছু ভিডিও ক্লিপ আছে, জোড়া দিয়ে পোস্ট করে শেয়ার করেছি এখানে

ভিডিও#১: চন্দ্রগিরি হিল রিসর্ট


 

পুরা ভ্রমণ ৮দিন ৭ রাতের। এখানে শুধুমাত্র প্রথম রাতের আগে পরে একটা জায়গার কথা ও ছবি দেয়া হল। পর্যায়ক্রমে বাকীগুলোও আসবে।

সবগুলো প্রকাশিত পর্বের লিংক এই পাতার একেবারে শুরুতে দেয়া আছে। (পরের পর্ব এখানে)


২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

চমৎকার লিখা।। এতবার কাঠমান্ডু গেলাম কিন্তু এখানে যাওয়া হইনি।আপ্নার ইনফো কাজে দিবে

নামহীন বলেছেন...

সাবলীল উপস্থাপনা আর গতিময় ধারাভাষ্য ভ্রমণ কাহিনীটি কে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আপনার কাছে আরো এরকম অনেক অনেক লেখা চাই আর ভিডিও ব্লগের কথা নতুন করে বললাম না। সুস্থ থাকেন আর অনেক অনেক ভ্রমণ করুন এই দোয়া সবসময়। আপনার ভিডিওর অপেক্ষায় থাকলাম।

ধন্যবাদান্তে
এক হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাই।