সোমবার, ২১ জুন, ২০১০

শখের কাজ ফেলনা নয়

(সচলায়তনে প্রকাশিত)
এই সেমিস্টারে রবিবার আমার সাপ্তাহিক বন্ধ। আর এমন ছুটির দিনের অলস সন্ধ্যায় বিদ্যূৎ চলে গেলে নেটবুকের ব্যাটারী ক্ষয় করে মাথায় ঘুরতে থাকা বিষয়ে ব্লগ লেখা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে কিচ্ছু লিখছি না, কারণ বাবাকে নিয়ে যেই স্মৃতি আর অনুভুতি সেটা ফিকে হওয়ার নয়, তাছাড়া তরল পদার্থ কীবোর্ডের ক্ষতি করতে পারে। তাই অন্য যেই বিষয়টা মাথা থেকে মুছে যাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা আছে সেটা নিয়েই আপাতত তেনা প্যাচাই একটু।

খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমার বাছ বিচার একটু কম এবং লবনের কমবেশিতে খেতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। আমার ৩০+ বি.এম.আই. (Body Mass Index, BMI= weight in kg / sqare of height in meter) এই খাদ্যরসিকতার বিষয়টাকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে। আমাকে খাওয়াতেও লোকজন (চাচী/ফুফু ইত্যাদি) পছন্দ করে ... ... কারণ তাঁদের সমস্ত রান্নাই আমার অসাধারণ ভাল লাগে সেটা আমার খাওয়া দেখেই উনারা বুঝে নিতে পারেন। শুধুমাত্র নিজ বাসায় আমাকে খাওয়া দাওয়াতে নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ এতে আমার স্বাস্থ্যহানী হওয়ার আশংকায় ওনারা যথেষ্ট আন্তরিক। হাসাহাসি করার কিছু নাই ... ... আগের আমলে স্বাস্থ্যহানী বলতে শুধু টিংটিঙে পাতলা স্বাস্থ্য বুঝানো হত ... ...কিন্তু আধুনিক মা/শাশুড়ি/বউরা বি.এম.আই.-এর রেঞ্জ (18 - 22 kg/m2) জানে ও বোঝে। আদর্শ রেঞ্জের সর্বোচ্চ মান থেকে আমার ওজন প্রায় আধমন বেশি (!) ... কাজেই আন্ডারওয়েটের মত ওভারওয়েটও সুস্বাস্থ্য নয় অর্থাৎ এটা স্বাস্থ্যহানী।

একটু চা খেয়ে আসি ... ...

আধাঘন্টা পর, আমি কিন্তু চা খেয়ে ফিরে এসেছি .... যা হোক, যেটা বলছিলাম:
খাওয়া দাওয়াতে খুব আগ্রহী হলেও রান্না করার ব্যাপারে আমাকে আনাড়ি বলা যায়। তবে অনেক রেস্টুরেন্টে যে দারুন খাবার রান্না করে সেটা আমরা সবাই জানি ... আর জেনে জেনে সেসব জায়গায় খেতে চলে যাই। আবার অনেক বাসাতেই এমন সুন্দর কিছু আইটেম মাঝে মাঝে শখ করে রান্না করা হয়, যার কোনো তুলনা কোনো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবে না। অনেক সময়ে আমি বা আরও গুণমুগ্ধ খাদক এই সব মা/চাচী/খালা/ফুফু/ভাবীদেরকে বলি যে আপনার এই আইটেম যদি বিক্রি করা যায় তবে সেটা অমুক হোটেলের ব্যবসাকে লাটে উঠিয়ে দেবে। কিন্তু সেই সব গুণী মহিলারা শুধুই হাসেন, তাঁদের রান্না করা খাবার বা তৈরী করা আচার বিক্রয় করেন না, শুধু আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করতেই বিনামূল্যে (কৃতজ্ঞতাটুকু অমূল্য) এসব অকাতরে হাসিমুখে দিয়ে দেন।

বিনামূল্যে দেন অর্থাৎ এগুলো পেতে কোনো টাকা দেয়া লাগেনা, এটা সত্য হলেও দানের ব্যাপারটা যে পুরাপুরি একপেশে হয় সেই কথাটা পুরাপুরি ঠিক নয়। কারণ, আমাদের মনে ওনারা যেই স্থান করে নেন এবং রান্নাবান্নার ক্ষেত্রে প্রথম পরামর্শের উৎস হন -- এই ধরণের স্থান টাকা খরচ করলেও সহজে পাওয়া যায় না।

.... .... আচ্ছা কী যেন বলছিলাম ... ... ও হ্যাঁ মনে পড়েছে; শখের কাজ যে পেশাদার কাজের চেয়ে উন্নত মানের হতে পারে তার একটা উদাহরণ দিচ্ছিলাম (বাবুর্চির চেয়ে ভাল রান্না)। ইচ্ছা করলে এটা নিয়ে আরও ত্যানা প্যাচানো যায় ... ... যেমন, কোনো কোনো লোকের সংগ্রহ করা তৈলচিত্র কোনো যাদুঘরের সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। একজন শখের শিল্পীর গান পেশাদারদের ছাড়িয়ে যেতে পারে; শখ করে করা হাতের কাজ (কাঁদামাটির কাজ/ কাঠ খোদাই করা / পেইন্টিং ইত্যাদি), পেশাদার কাজের চেয়ে হাজারগুণ ভাল হতে পারে ... ... কারণ পেশাদার কাজে গ্রাহকের চাহিদার বাইরে কিছু করার দরকার হয় না, আবার অতিরিক্ত কিছু করলেও উল্টা ফল হতে পারে, কিন্তু শখে মানুষ যা করে সেটার মধ্যে নিজের সমস্ত কল্পনা, আবেগ এবং মননশীলতা স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারে; নিজের কল্পনার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে পারে।

আক্কেলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি ... কাজেই ওপেনসোর্স সফটওয়্যার মাত্রই নামকরা প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটারি সফটওয়্যারের চেয়ে নিম্নমানের/পচা হতে হবে বলে সস্তার তিন অবস্থা মার্কা তালগাছের মালিকগণনিশ্চয়ই এখনও আগের মত করেই ভাববেন ... ... আক্কেলমান্দদের জন্য শুধু শুধু বিনামূল্যের সচলায়তন, অভ্র, উইকিপিডিয়া, ফায়ারফক্স বা লিনাক্স নিয়ে কথা বলার দরকার নাই .... শুভরাত্রি।

কোন মন্তব্য নেই: