গ্রেডিং পদ্ধতি এবং কিছু অগোছালো চিন্তাভাবনা
এটি একটি গবেষণাবিহীন লেখা; সম্ভবত একটু বেশি লম্বা হয়ে গেছে অনিচ্ছাকৃতভাবে। অনেকের কাছেই পুরান প্যাচাল মনে হতে পারে।
পরীক্ষার ফলাফল কী কাজে লাগে?
যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে এটার প্রয়োজনীয়তা বা objective জানা থাকলে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় সুবিধা হয়। তাই প্রথমেই পরীক্ষার ফলাফল কী কাজে লাগে সে বিষয়ে আমার সামান্য ধারণাটুকু তুলে ধরি। জ্ঞানার্জনের জন্য লেখাপড়া, তাই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হল সেই জ্ঞান কতটুকু অর্জিত হল সেটা যাচাই করে নেয়া। তবে প্রায়োগিক দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমরা নির্দিষ্ট বিষয় বা বিষয়সমূহে একজন শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের পাশাপাশি তার মেধাশক্তি পরিমাপ করার চেষ্টা করি। সেই মেধার ভিত্তিতে তাঁর উচ্চতর শিক্ষার উপযুক্ততা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এই ফলাফলের ভিত্তিতেই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মী বাছাই করা হয়।
তাই পরীক্ষার ফলাফলকে বলা যায়, উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত শিক্ষার্থী এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মী বাছাইয়ের একটা হাতিয়ার। নিয়োগকর্তা যদি পরীক্ষার ফলাফল দেখে কর্মীর যোগ্যতা বুঝতে না পারেন, তবে সেই ফলাফল এর মূল একটা উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ এবং নিয়োগকর্তার কাছে এটা একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু মনে হতে পারে না।
এজন্য শিক্ষকদের দুই ধরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। একদিকে শিক্ষক হলো কোচ ... অর্থাৎ, তিনি শিক্ষার্থীকে উপযুক্তি কোচিং বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞের জন্য প্রস্তুত করেন। অপরদিকে শিক্ষক হলো গেট-কিপার বা দাড়োয়ান, অথবা বলা যেতে পারে "কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার"। অর্থাৎ, তার প্রদত্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ইন্ডাস্ট্রি উপযুক্ত কর্মী বেছে নিতে পারবে। এটা সমাজ তথা কর্মক্ষেত্রের কাছে শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা।
আমরা শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা বলতে শুধুমাত্র পাঠদানে অবহেলা করার বিষয়টা বুঝে থাকি। কিন্তু যদি শিক্ষক কোয়ালিটি কন্ট্রোল ঠিকমত না করেন, এবং সমাজ এবং নিয়োগকারী/উচ্চতরা শিক্ষাব্যবস্থাকে উপযুক্ত কর্মী/শিক্ষার্থী বেছে নিতে সাহায্য করার মত ফলাফল না দেন, তবে সেটাও সমাজের প্রতি চরম দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করি। এই প্রসঙ্গে গণহারে এস.এস.সি.তে A গ্রেড পাওয়ার ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্য মাত্রার দৃষ্টিকটু লাগে ... মনে হয় কোনো কারখানায় প্রোডাক্ট উৎপন্ন হওয়া মাত্র সর্বোচ্চ মানের বলে নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে।
প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতি
গ্রেডিং নিয়ে মোটাদাগে কিছু বলার আগে এই সিস্টেমে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করি। এই সিস্টেমের সাথে প্রথম পরিচয় হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে। গ্রেডিং সিস্টেমের সাথে পরিচয় আরেকটু গাঢ় হয় পরবর্তীতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স করতে গিয়ে। আর এখন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুবাদে প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে ছাত্র/শিক্ষকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে আরো কিছু বলার আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কিছু প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই পদ্ধতিতে গ্রেড দেয়া হয় সেটা দেখি:
তালিকা-১
  প্রাপ্ত নম্বর   |   লেটার গ্রেড   |   গ্রেড পয়েন্ট   |
---|---|---|
৮০+ |   A + | ৪.০০ |
৭৫+ |   A | ৩.৭৫ |
৭০+ |   A - | ৩.৫০ |
৬৫+ |   B + | ৩.২৫ |
৬০+ |   B | ৩.০০ |
৫৫+ |   B - | ২.৭৫ |
৫০+ |   C + | ২.৫০ |
৪৫+ |   C | ২.২৫ |
৪০+ |   D | ২.০০ |
০-৩৯ |   F | ০.০০ |
ভাবছেন এগুলোতো জানা কথা, এ আর এমন কি ... ... । তবে দেখুন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স লেভেলে যেভাবে গ্রেড দেয়া হয় সেটার পদ্ধতি:
তালিকা-২
  প্রাপ্ত নম্বর   |   লেটার গ্রেড   |   গ্রেড পয়েন্ট   |
---|---|---|
৯০+ |   A + | ৪.০ |
৮০+ |   A | ৩.৫ |
৭০+ |   B + | ৩.০ |
৬০+ |   B | ২.৫ |
৫০+ |   C | ২.০ |
০-৪৯ |   F | ০.০ |
গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে যাঁরা খুব বেশি নাড়াচাড়া করেননি, তাঁরা নিশ্চয়ই একটু ধাক্কা খেয়েছেন এই পর্যায়ে এসে। আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে যেখানে ১০ রকম গ্রেড (ফেল সহ) সেখানে মাস্টার্সে ৬ রকম গ্রেড হতে পারে। আর প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্যটাও চোখে পড়ার মত: আন্ডারগ্র্যাডে প্রতি ৫ নম্বরের জন্য গ্রেড পয়েন্ট পরিবর্তন হয় যেখানে মাস্টার্সে এই পার্থক্য ১০। সাথে সাথে পর্যায়ক্রমিক গ্রেড পয়েন্টের পার্থক্যগুলোও দেখা যেতে পারে: আন্ডারগ্র্যাডে ধারাবাহিকভাবে ০.২৫ পার্থক্যতে গ্রেডগুলো অবস্থিত, যেখানে মাস্টার্সে এটা ০.৫০। পাস্মার্কও আলাদা: মাস্টার্সে ৫০, আন্ডারগ্র্যাডে ৪০।
একটা বিষয় নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে, দুই লেভেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দক্ষতাকে আলাদা পাল্লায় মাপা হয়। আর, একজন ছাত্র বুয়েটে যত সহজে আন্ডারগ্রাজুয়েটের গ্রেড তুলতে পারবে, মাস্টার্সে ব্যাপারটা ততটা সহজ হবে না। এমনকি যেই ছাত্র প্রতিটা বিষয়ে আগে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে এসেছে, মাস্টার্সে সেই মানের পরীক্ষা দিয়ে একই গ্রেড পাবে না: আগে ৮০ পেলেই যেখানে A+ = ৪.০ পাওয়া যেত, সেখানে মাস্টার্সে ৮০ = A = ৩.৫। আর পাশের ব্যাপারটাও খেয়াল করুন: আন্ডারগ্রাডে ৪৬ = C = ২.২৫, কিন্তু মাস্টার্সে সেটাই ফেল।
কাজেই এ থেকে অনুমান করা সহজ হয় যে সর্বক্ষেত্রে একই প্রাপ্ত নম্বরের জন্য একই গ্রেড পেতে হবে -- এমন কোন নিয়ম নেই। আর গ্রেডিং পদ্ধতি যে সব জায়গায় একই হতে হবে, বা হবে এমনটি আশা করাও উচিত নয়।
আমি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করি। এটাতে যে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তা দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা ভিন্ন। এই ভিন্নতার পেছনের কারণগুলো প্রবন্ধের শেষে জানানোর চেষ্টা করবো। নিচে এখানকার গ্রেডিং পদ্ধতি দেয়া হল:
তালিকা-৩
  প্রাপ্ত নম্বর   |   লেটার গ্রেড   |   গ্রেড পয়েন্ট   |
---|---|---|
৯০+ |   A | ৪.০ |
৮৫+ |   A - | ৩.৭ |
৮০+ |   B + | ৩.৩ |
৭৫+ |   B | ৩.০ |
৭০+ |   B - | ২.৭ |
৬৫+ |   C + | ২.৩ |
৬০+ |   C | ২.০ |
৫৫+ |   C - | ১.৭ |
৫২+ |   D + | ১.৩ |
৫০+ |   D | ১.০ |
০-৪৯ |   F | ০.০ |
গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে একটু ত্যানা প্যাচানি: (কী, কেন)
বাস্তব জীবন থেকে একটা সহজ উদাহরণ দেই। ধরুন চারজন পরীক্ষার্থী একটি পরীক্ষায় যা লিখেছে তা মূল্যায়ন করার পরে নিচের মত করে নম্বর দেয়া হল। আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করেই তাদের মেধাক্রম দেয়া হত। এখনকার পদ্ধতিতে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করে গ্রেড দেয়া হয়।
তালিকা-৪
  ছাত্রের নাম   |   প্রাপ্ত নম্বর   |   মেধাক্রম   |   গ্রেড   |
---|---|---|---|
ছাত্র-১ | ৯৩ | ১ | A অথবা ৪.০ |
ছাত্র-২ | ৭৭ | ২ | B অথবা ৩.০ |
ছাত্র-৩ | ৭৭ | ২ | B অথবা ৩.০ |
ছাত্র-৪ | ৭৬ | ৩ বা ৪ | B অথবা ৩.০ |
একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে সাধারণ মেধাক্রম পদ্ধতিতে একটা বড় দূর্বলতা রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে শুধু ১ম, ২য়, ৩য় অবস্থান দেখে তাদেরকে সম-ব্যবধানে অবস্থিত মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে ১ম স্থান অধিকারী ২য় বা ৩য়'র চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অন্য কোন ক্ষেত্রে (ধরুন যথাক্রমে ৯১, ৯০, ৬৬ নম্বর) ১ম ও ২য় হয়তো প্রায় একই নম্বর পেয়েছে কিন্তু ৩য় বা এর পরের ক্রমগুলোতে থাকা পরীক্ষার্থী এই দুইজনের চেয়ে অনেক পেছনে, যা শুধুমাত্র এই মেধাক্রম পদ্ধতিতে বোঝা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আগের এই পদ্ধতিতে মেধার তূলনা করা যাচ্ছে না।
শোনা যায় একটি বাংলা উত্তরপত্র ফটোকপি করে অনেকজন শিক্ষকে দেয়াতে তাঁদের মূল্যায়নে বিরাট ব্যবধান দেখা গিয়েছিলো। এছাড়া একই লেখা সম্পন্ন খাতা পর পর দুইবার দেখলেও একই শিক্ষকের প্রদেয় নম্বরের সামান্য হেরফের হতে পারে। তাই এই সামান্য নম্বরের হেরফেরের কারণে দুইজন ছাত্রর মেধা আলাদা সেটা জোর গলায় দাবী করা যায় না (উপরের উদাহরণে ছাত্র-২, ছাত্র-৩ এবং ছাত্র-৪ একই মেধাসম্পন্ন)। এমনকি MCQ পদ্ধতিতেও কোনো কোনো ছাত্র আন্দাজে টিক দিয়ে সম মেধার আরেকজনের চেয়ে ২/১ নম্বর বেশি পেয়ে যেতে পারে। তাই সম মেধার ছাত্রদেরকে একই কাতারে রাখার জন্য গ্রেড পদ্ধতির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো।
বাস্তব জীবনেও কিন্তু আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রেডিং তূল্য পদ্ধতি ব্যবহার করি। ১নম্বর মাল, দুই নম্বর কোয়ালিটি, ইত্যাদি কথাগুলো এজন্যই বহুল প্রচলিত। বিলাসবহুল বাসের টিকিট সবগুলোর একই মূল্য হলেও সবগুলো বাসে/সিটে কিন্তু আরাম/সুবিধা সমান নয়। আবার ইটের ভারবহন ক্ষমতা ৫০৪০ পাউন্ড/বর্গইঞ্চি (psi) হউক আর ৫১০০ psi হউক সেটাকে আমরা ১ নং মানের ইট বলি। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও সবসময় নম্বর প্রদানের মত নিঁখুত (!) পরিমাপ দেয়া সম্ভব নয় - সেসব ক্ষেত্রে আগে থেকে নির্ধারিত একটা মাত্রা/তালিকা অনুযায়ী গ্রেডিং এর মত করে শ্রেণীবিভাগ করা হয় (যেমন ধরুন: ৫ তারকা হোটেল, ৩ তারকা হোটেল; বৈদ্যূতিক যন্ত্রের শক্তি সাশ্রয়ী রেটিং; ২নং বিপদ সংকেত, ৭নং বিপদ সংকেত; প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণীর ঠিকাদার ইত্যাদি)।
প্রায় একই ভাবে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রতিটা গ্রেডের একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। যেমন:
A গ্রেড (A+, A, A-)= Excellent বা অসাধারণ |
B গ্রেড (B+, B, B-)= Very good বা খুব ভাল |
C গ্রেড (C+, C, C-)= Average বা গড়পড়তা |
D গ্রেড (D+, D, D-)= Passable বা পাশযোগ্য |
লক্ষনীয় হল যে এখনও গ্রেড প্রদানের আগে ছাত্রকে নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। কারণ একাধিক উত্তর থেকে সবগুলোতে প্রদত্ত উত্তরের সমষ্টিগত ফলাফল পেতে নম্বরের বিকল্প নাই। এই একই কারণে লেটার গ্রেডের সমতূল্য গ্রেড পয়েন্টও দেয়া হয়ে থাকে যা সিজিপিএ (কম্বাইন্ড গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) নির্ণয়ে কাজে লাগে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষার উত্তরপত্রে নম্বরপ্রদান পদ্ধতির বিকল্প এখনও বের হয়নি।
রিলেটিভ গ্রেডিং; অ্যাবসলিউট গ্রেডিং
নম্বর পদ্ধতি খুব সুবিধাজনক হলেও এটার একটা বড় দূর্বলতা আছে, যা শিক্ষার্থীদেরকে ভোগাচ্ছে বহুভাবে; এই সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হয়েছে গ্রেডিং পদ্ধতিতে। প্রথমে সমস্যাটা উল্লেখ করি: ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিন্ন প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রে কোনো বছরে সহজ এবং কখনো অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই কঠিন প্রশ্নের সময়ে একই রকম মেধা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীও বেশি নম্বর উঠাতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে অন্য ব্যাচের ছাত্রদের সাথে তার মেধার তূলনীয় মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।
এই সমস্যা সমাধানকল্পে উপরের তালিকাগুলোতে দেয়া অ্যাবসলিউট গ্রেডিং (=নির্দিষ্ট নম্বর পেলে নির্দিষ্ট গ্রেড) পদ্ধতির পরিবর্তে রিলেটিভ গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। কয়েকভাবেই এই রিলেটিভ গ্রেডিং প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম পদ্ধতিতে ক্লাসের সমস্ত ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ৫ জনকে বা ৫%কে সর্বোচ্চ গ্রেড দেয়া হবে, তারপর সেই নম্বর অনুযায়ী বাকীদেরকে একটা নির্দিষ্ট নম্বর পরপর পরবর্তী গ্রেড দেয়া হবে। কাজেই নম্বরের উপর নির্ভরশীল থাকলেও সহজ বা কঠিন প্রশ্নের সীমাবদ্ধতা এখানে কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে এই পদ্ধতিটা আমার খুব বেশি পছন্দ নয়, কারণ প্রতি ব্যাচেই যে সম-মেধার ছাত্র ভর্তি হবে এটা সদাসত্য নয়। এমনও হতে পারে সঠিকভাবে পড়ানো এবং প্রশ্ন সহজ হওয়া সত্বেও বেশিরভাগ ছাত্র খারাপ করলো, কারণ তাঁরা আসলে তেমন মেধাবী নয় - তাই তাদের সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া উচিত নয়। আবার অন্য আরেক পরীক্ষায় স্ট্যান্ডার্ড কঠিন প্রশ্ন হওয়া সত্বেও ৫%-এর বেশি ছাত্র খুব ভালো নম্বর পেল ... অর্থাৎ নির্দিষ্ট ৫% এর চেয়ে বেশি ছাত্র সমান মাত্রার মেধার অধিকারী হওয়া সত্বেও কেউ কেউ সামান্য ১ নম্বরের জন্য সর্বোচ্চ গ্রেড পাবে না ... যেটা সঠিক মেধার মূল্যায়নের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করি।
আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে গ্রেস নম্বর প্রদান। গণহারে সকলকে গ্রেস প্রদান নয়, বরং এই পদ্ধতিতে শিক্ষক ছাত্রদের সাথে তার মিথষ্ক্রিয়া বা পড়ানোর অভিজ্ঞতায় ঠিক করবেন যে এই ক্লাসের ছাত্রদের গড় মেধা আসলে কোন গ্রেডের অধিকারী। সেই গ্রেডের জন্য গড়ে যত নম্বর পাওয়া দরকার, সেটার সাথে ছাত্রদের প্রাপ্ত নম্বরের গড় তুলনা করে গড় গ্রেস নম্বরের পরিমান নির্ণয় করবেন। তারপর একটা অনুপাতের সূত্র ব্যবহার করে প্রতিটি ছাত্রের জন্য গ্রেস নম্বরের পরিমাণ বের করবেন। এতে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র যত নম্বর গ্রেস পাবে, সবচেয়ে কম নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র গ্রেস পাবে তার চেয়ে অনেক বেশি।
উল্লেখিত এই দুইটি পদ্ধতিই কাজ করবে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে, কারণ এখানে সরাসরি শিক্ষকগণই ছাত্রদেরকে মূল্যায়ন করে থাকেন। কিন্তু SSC/HSC অথবা নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে যেই পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে সেখানে যেহেতু মূল্যায়নকারী শিক্ষক সরাসরি সেই ছাত্রকে চিনবেন না, তাই রিলেটিভ গ্রেডিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতাটুকু ওনার থাকবে না। এজন্য ফিক্সড গ্রেডিং পদ্ধতির উপযোগী এমন প্রশ্ন প্রণয়ন করতে হবে যেন অসাধারণ মেধার ছাত্রকে সাধারণ মেধার ছাত্র থেকে আলাদা করার জন্য নির্দিষ্ট নম্বরের প্রশ্ন থাকে। সাধারণ মেধার ছাত্র ঐ প্রশ্নের গভীরে গিয়ে বিশ্লেষন বা উত্তর দিতে পারবে না, তাই অসাধারণ গ্রেডের উপযুক্ত নম্বরও পাবে না। যে কোন পরীক্ষাতেই এই রকম চিন্তাধারা থেকেই সঠিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।
গ্রেডিং পদ্ধতির ভিন্নতা কেন
পাঠক যদি এতদুর পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তবে ইতিমধ্যেই এই ভিন্নতার বিষয়ে কিছুটা পরিস্কার ধারণা হয়েছে। এককথায় যদি এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হয় তবে বলা যায়: বিভিন্ন স্তরের মেধার ছাত্রদেরকে আলাদা ভাবে চেনানোর জন্য যতটুকু নম্বর নির্ধারণ করা দরকার, পরিস্থিতির ভিন্নতা অনুযায়ী ততটুকুই নির্ধারণ করা হয়। আমার সীমিত অভিজ্ঞতা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়া এবং পড়ানো সংক্রান্ত, তাই উদাহরণে ওগুলোই চলে এসেছে। আশা করছি, এগুলো অন্য বিষয়গুলোর (বাণিজ্য বা অন্যান্য বিভাগের) গ্রেডিং পদ্ধতির সাথে খুব একটা আলাদা হবে না। উপরের তালিকা-১ এবং তালিকা-৩ এ ভিন্নতার কারণ এভাবেই ব্যাখ্যা করা যাবে।
বুয়েটের আন্ডারগ্রাজুয়েটে যেই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হয়, সেখানে অসাধারণ মেধা না হলে ৮০%+ নম্বর পাবে না। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে একই স্তরের চ্যালেঞ্জ সহ প্রশ্ন করা হলেও অসাধারণ মেধা প্রমাণের জন্য ৯০%+ নম্বর পেতে হবে; কারণ পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির ভিন্নতা। বুয়েটে পুরা পাঠ্যক্রম/সিলেবাসের উপরে ৩ ঘন্টার একটা ফাইনাল পরীক্ষা হয়, যাতে মোট নম্বরের ৭০% ওজন বরাদ্দ থাকে (বাকী ৩০% ক্লাস পার্ফর্মেন্স + কুইজ থেকে আসে)। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে ২ ঘন্টার ফাইনাল পরীক্ষাতে এক তৃতীয়াংশ পাঠ্যক্রম/সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত থাকে। বাকী দুই তৃতীয়াংশ দুইটি ১ ঘন্টার মিড টার্ম পরীক্ষাতে সম্পন্ন করা হয়। (ফাইনাল = ৩৫%; মিডটার্মদ্বয় = ২০%+২০%; কুইজ+এসাইনমেন্ট+ক্লাস পার্ফর্মেন্স=২৫%)। ছোট ছোট সিলেবাসে পরীক্ষার কারণে এখানে বেশি নম্বর তোলা অপেক্ষাকৃত সহজ। এই প্রতিষ্ঠানে যদি বুয়েটের মতই ৮০% এ অসাধারণ মেধার গ্রেড দিতে হয়, তবে পরীক্ষার সময়ের স্ট্রেস/চাপ-ও একই পর্যায়ের করতে হবে, অর্থাৎ মিড টার্ম বাদ দিয়ে সম্পুর্ন সিলেবাসের উপরে ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে। মজার ব্যাপার হল, ৯০%-এ সর্বোচ্চ গ্রেড অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও এখান থেকেও প্রায় ব্যাচেই দুই/একজন এই গ্রেড তুলতে সক্ষম হয় -- সেটা পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে বুয়েট/ডুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের কোর্সেও ঘটে।
সমস্যা
কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও বুয়েটের মত গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে (ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনও এমনই গাইডলাইন দিয়েছেন); অথচ সেসব জায়গায় ফাইনাল পরীক্ষায় কিন্তু বুয়েট/ডুয়েট/চুয়েট/কুয়েট-এর মত সম্পুর্ন সিলেবাসের চাপ নিতে হয় না, কারণ মিড টার্ম পরীক্ষায় কিছু সিলেবাস সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, কম মেধার ছাত্র হওয়া সত্বেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রর গ্রেড পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের গ্রেডের চেয়ে বেশি হয় (অনেকটা SSC পরীক্ষার ফলাফলের মত)।
আর একই কারণে আমার প্রতিষ্ঠানে কম গ্রেড পাওয়া ছাত্রও ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে গ্রেডের বন্যায় ভাসতে থাকে। আর এই রকম কোয়ালিটি কন্ট্রোলজনিত সমস্যার কারণে কিছু চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানও একটা নির্দিষ্ট গ্রেডের চেয়ে কম পেলে আবেদন করার দরকার নাই বলে দেয় -- অর্থাৎ এর চেয়ে কম গ্রেড পাওয়া যাকে আমরা উপযুক্ত প্রকৌশলী হিসেবে সার্টিফিকেট দিচ্ছি সেটা তার প্রাপ্ত সম্মান পায় না। মজার ব্যাপার হল, আমাদের এখান থেকে সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্যতার (CGPA>2.25) চেয়ে কম গড় গ্রেডের ছাত্র অন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে চলে গেলে শুধু যে বেশি গ্রেড পাচ্ছে (খুব ভালো B থেকে অসাধারণ A) তা-ই নয়, ওখানে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে নিয়ে যাওয়া আমাদের দেয়া গ্রেডকে ওদের নম্বর পদ্ধতিতে ফেলে নতুন গ্রেডও দেয়া হচ্ছে!!
শিক্ষকতার আদর্শ থেকে সরে গিয়ে শুধুমাত্র শিক্ষা-বাণিজ্য কেন্দ্রিক এই কোয়ালিটি কন্ট্রোল দীর্ঘমেয়াদে দেশকে কী পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে ভাবতেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া, কোনোরকম ল্যাবরেটরি ছাড়া (কোচিং-এ খারাপ মান + কোয়ালিটি কন্ট্রোলেও খারাপ মান) শুধুমাত্র সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে যাদের ডিগ্রী দেয়া হবে, সেই তথাকথিত ইঞ্জিনিয়ারের নকশা করা ভবন ফেটে যাবে, হেলে যাবে, ভেঙ্গে পড়বে; তথাকথিত ডাক্তারের রোগী আর সুস্থ হবে না। এখনই এই দেশে গুণীর কদর নাই ... ... ... আর এ অবস্থা চলতে দিলে শিক্ষিত লোকের শিক্ষাকে সমাজ আর মূল্য দেবে না। উল্লেখ্য যে বিদেশের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এরকম অবস্থা বিরাজ করে।
চাকুরীর বাজারে, নিয়োগকর্তার গ্রেডিং পদ্ধতির মূলনীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকাটাও একটা বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করছে। সকলেই লেটার গ্রেডের বদলে নিউমেরিকাল গ্রেড দেখতে চায় এবং একটির সাথে অপরটির তুলনা করে। অথচ এই গ্রেডিং পদ্ধতি সব জায়গায় এক নয়, এক হতে পারে না। বরং লেটার গ্রেডটিই ছাত্রটির আসল মেধা সম্পর্কে বলে দেয় -- সে কি অসাধারণ, নাকি খুব ভালো, নাকি গড়পড়তা ইত্যাদি। কিন্তু যখন সিজিপিএ ৩.০ এর নিচে আবেদন করতে নিষেধ করা হয়, তখন বাণিজ্য-মূখী কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম মেধার অথচ বেশি গ্রেডের ছাত্র সেখানে আবেদন করতে পারে, অথচ বুয়েটের অপেক্ষাকৃত মেধাবী ছাত্র আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হয় না! সেলুকাস!
কিছুটা অফটপিক, কিছুটা ভিন্নমত
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কি সত্যই মেধা যাচাই করতে পারছি? আমার সহপাঠিগণ বিদেশী নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গ্রেড পেয়েছে, বুয়েটে তার চেয়ে অনেক কম গ্রেড পেয়েছিলো। এছাড়া কিছু কিছু বিষয়ের পরীক্ষায় ঠিক কোন ধরণের মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় সেটাই ভেবে পাই না। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষাগুলোতে দেখেছি, মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া ভাল গ্রেড পাওয়া অসম্ভব। মুখস্থ করার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে এক প্রকার মেধা, এবং কর্মক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু তাই বলে ম্যাথ পরীক্ষায় মুখস্থ! ম্যাথের উদ্দেশ্য কি মুখস্থ? সেখানে সমাধানের দাড়ি, কমার জন্য নম্বর কাটতো!
শুধুমাত্র ভাল অংক করতে পারলেই মেধাবী -- এমন একটা ভুল ধারণার প্রচলন আছে এদেশে। ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা ও মেধার প্রয়োজন হয়। ভাল ডিজাইনার হওয়ার জন্য মার্কেটিং করার মত মেধা না থাকলেও চলবে, আবার যে ম্যানেজমেন্টে দক্ষ তার মেকানিকসে জ্ঞান/মেধার প্রয়োজন নাই। পরীক্ষার খাতায় লেখে ফাটিয়ে ফেললো, গ্রেডের বন্যায় ভেসে গেল অথচ কর্মক্ষেত্রে একটা সিদ্ধান্ত নিতে কাঁপাকাঁপি লেগে যায় ... এ ধরণের মেধার আদৌ কি খুব প্রয়োজন আছে?
আমার ধারণা, মেধা হল ক্ষমতার পরিমাপ; আর জ্ঞান হল সেই ক্ষমতা কতটুকু ব্যবহার করা হল তার একটা পরিমাপ। পরীক্ষার গ্রেডকে মেধার পরিচায়ক রূপে ব্যবহার করলেও আসলে এটা তার জ্ঞানের প্রতিফলন, মেধার প্রতিফলন নয়। অন্যভাবে বললে, একটা নির্দিষ্ট রাস্তায়, রাস্তার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দুইটি গাড়ি যদি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলে ... তা থেকে দুইটি গাড়িই সমান ক্ষমতার বলে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না, কারণ একটি গাড়ি হয়তো এর ইঞ্জিনের সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, অন্যটি এর অর্ধেক ক্ষমতা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র যদি পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে থাকে কিংবা তার কোন বিপদ ঘটে থাকে তবে বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফলে তাকে নিম্ন মেধার মনে হবে। আবার দেখুন স্কুলে কিছু সহপাঠি সবসময় পেছনের সারির ফলাফল করলেও কর্মক্ষেত্রে তাদের অধীনে তথাকথিত মেধাবী ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদিরা চাকুরী করছে। মেধা না থাকলে শুধুমাত্র চাচা/মামার জোরে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। বিদ্যালয়ের গৎ বাধা লেখাপড়া তাকে ঐ বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারেনি, তাই তার মেধা সে সেখানে প্রয়োগ করেনি। আবার, লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র কর্মক্ষেত্রে লবডংকা -- এমন উল্টা ঘটনাও দেখা যায় অহরহ!
এরকম হওয়ার কারণ হতে পারে - আমাদের লেখাপড়া পুরোপুরিভাবে কর্মমূখী শিক্ষা নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী, আইন ইত্যাদি পেশাদার লেখাপড়া থাকা সত্বেও এই ধরণের (কর্মমূখী নয় অথবা কার্যক্ষেত্রের চাহিদা পূরণ করে না) অভিযোগ আসতে থাকলে, লেখাপড়া এবং এই মেধা যাচাই পদ্ধতির সার্থকতা সম্পর্কে আরেকটু চিন্তাভাবনা করার ইন্ধন যোগায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন