বান্ধবীর চিঠি যেন বউয়ের কাছে না যায় - মুনীর হাসান
(সচলায়তনে প্রকাশিত)
গত ২৩শে জুলাই বন্টু মিন্টুর আড্ডায় গিয়েছিলাম। সচলায়তন এটার লাইভ ব্লগিং পার্টনার ছিল সেটা সকলেই জানেন আশা করছি (গৌতম দাদাকে আন্তরিক ধন্যবাদ)। সেই আড্ডা সম্পর্কে একটু ছোট রিভিউ লেখার খায়েশ জাগলো বলেই .... ....।
বেশ কিছুদিন যাবৎ (সাড়ে ৩ বছর +) নিয়মিত শুধুমাত্র লিনাক্স ব্যবহার করছি বলেই, বুঝি বা না বুঝি - এ বিষয়ে খুটিনাটি বিষয়গুলো অনলাইনে পড়ে রাখার চেষ্টা করি সবসময়। কারণ আমি জানি যে, কম্পু বিষয়ে বিপদে পড়লে নিজেকেই নিজের সাহায্য করতে হবে। এই একই কারণে প্রথম যখন কম্পিউটার কিনি ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে, তার প্রায় দুই বছর আগে থেকে নিয়মিতভাবে কম্পিউটার জগত নামক একটা পত্রিকার শুরুর মলাট থেকে শেষ মলাট পর্যন্ত পড়তাম এবং কপিগুলো সংগ্রহে রাখতাম। নিঃসন্দেহে সেই পড়াগুলো এই যন্ত্রটাকে ভালভাবে(?!?) বুঝতে অনেক সাহায্য করেছিলো - এবং কম্পুটারের সমস্যা হলে প্রায় সবসময় নিজে নিজেই হাতুড়ে চিকিৎসা দিতে পারতাম।
যা হোক, নিজের পড়ার উপরে একটু আত্মপ্রসাদ থাকলেও বন্টু মিন্টুর আড্ডাতে গিয়ে রেভুলুশন ও.এস. তথ্যচিত্র দেখে এমন কিছু নতুন তথ্য জানলাম যা লিনাক্স ও মুক্তসোর্স সম্পর্কে নিজের আগ্রহ ও শ্রদ্ধাটাকে আরও উপরে তুলে নিল। মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের জনক রিচার্ড স্টলম্যান সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে ব্লগে ফোরামে পড়েছি ... ... কিন্তু জানতামই না যে এই ব্যাটা MIT'র (= খ্যাতনামা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে গবেষণা দলের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। MIT বা স্ট্যানফোর্ড শুনলেই কেমন যেন শিরশিরে একটা অনুভুতি জাগে বেশ আগে থেকেই, আর এই ব্যাটা সেখানকারই একজন ... ...। বাকী যেসব লোকেরা এই লিনাক্স বা ওপেনসোর্স আন্দোলনের সাথে জড়িত এবং এই তথ্যচিত্রে দেখালো তারাও কিন্তু বাণের জলে ভেসে আসা কেউ না .... ... নামী সব ইউনিভার্সিটির পাগলাটে সব গবেষক। ওপেনসোর্সের জন্য কর্মরত বেশিরভাগ লোকজনই এমন সব ব্রিলিয়ান্ট লোকজন .... .... .... .... তা-ই-তো বলি, আমার কাছে জানালার তুলনায় লিনাক্স কেন এ্যাত বেশি নিঁখুত মনে হয়।
তথ্যচিত্রর শুরুর দিকে একটা হিট ডায়লগ না জানালে তো ব্লগটাই নিজের কাছে অসম্পুর্ন মনে হবে। ওপেনসোর্স পথিকৃতদের একজন বললেন যে একদিন লিফটে সুটেড বুটেড লোককে মাইক্রোসফটের লোগো বা আই.ডি. লাগানো দেখে বলেছিলেন: So .... ... you work in microsoft! ঐ লোক একটু হয়তো খুশি, জবাব দিলেন "হ ঠিকাছে, তয় তুমি কী কর চান্দু?" .... .... আমি তো একজন হ্যাকার, এ কথা ওরে বুঝাই কীভাবে ..... কিছু তো একটা বলা দরকার ... ... একটা কঠিন বিষদৃষ্টি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম: I am your worst nightmare.
যা হোক, তথ্যচিত্রের পর শুরু হওয়া আড্ডায় এক পর্যায়ে শ্রদ্ধেয় মুনির হাসান ভাই অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন। তিনি জানালেন যে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মহোদয়কে ওপেনসোর্সের বিষয়টা উপলব্ধি করাতে পেরেছেন, তাই সরকারী কাজকর্মগুলোতে ওপেনসোর্স চলে আসছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া, যেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যানদের প্রশিক্ষণ হয় সেই ল্যাবের কম্পিউটারগুলো উবুন্টুতে চলে। কিন্তু প্রশিক্ষণ অফিসের যেই কম্পুতে তিনি উবুন্টু রেখেছিলেন, পরবর্তী ব্যক্তি সেটা আবার জানালাতে নিয়ে গেছে, কিন্তু ল্যাবের গুলো পরিবর্তন করেনি ... ... কারণ জানালা বিশিষ্ট নেটওয়র্কের জানালা গলে অনেক ঝামেলা চলে আসে যা উবুন্টুতে হয় না। এরকম একবার উবুন্টু আবার জানালা দেখে মনখারাপের কিছু নাই, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, আর এভাবেই আগুপিছু করতে করতে একসময় ওপেনসোর্স চুরি করা জানালার স্থান নিয়ে নেবে।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন যেটা নিঃসন্দেহে আমাদের নীতিনির্ধারক মহলের মাথাতেও দিয়েছেন - সেটা হল "বান্ধবী বা গার্লফ্রেন্ডের কাছে লেখা চিঠির কপি যেন বউয়ের কাছে চলে না যায়" - নাইলে কিন্তু বিরাট ক্যাচালের মধ্যে পড়তে হবে! জানালাতে তথ্যচুরির কিছু ব্যাকডোর মাঝে মাঝে ইচ্ছাকৃতভাবেই দেয়া হয়, এবং NSA নামক উইজেটের কী কাজ, এই ব্যাপারে মাইক্রোসফট কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি; তবে এটা খুবই স্পষ্ট যে এন.এস.এ. আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির নামের অদ্যক্ষর ... কাজেই এই উইজেট কী করছে সেটা সহজে অনুমেয়।
মুনির হাসান ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে আমার একটা পঠিত ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। জার্মানীর পার্লামেন্ট জানালা বাদ দিয়ে লিনাক্সের দিখে ঝুকেছে এমন খবরটা ২০০১ সালের; কারণ হল জানালার খরচ বেশী ছাড়াও এর ফাঁক গলে সমস্ত গোপনীয়(!) তথ্য আমেরিকায় চলে যাচ্ছে বলে একটা থলের বেড়াল বের হয়ে পড়েছিলো। ব্লগটি লেখার জন্য এই খবরের রেফারেন্সের জন্য গুগল করলাম একটু ... ...সামান্য কিছু অবশিষ্ট খবর পেলাম এখানে এবং এখানে।
আড্ডার এমন পর্যায়ে চা বিরতি দিয়েছিলো, আর আমিও এর পরে থাকতে পারিনি (শুক্কুরবারেও ক্লাস নিতে হয় ) ... ... তাই বাকীটুকুর জন্য হয় গৌতম দাদা অথবা রণদীপম দাদার পোস্টের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নাই ... .... থুক্কু ...সকাল সকাল ব্লগ লিখে সচলে পোস্টাইতে এসে দেখি রণদীপম দাদা দারুন একখান পোস্ট দিয়ে ফেলেছেন গতরাতেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন