রবিবার, ১ মার্চ, ২০০৯

পরাজয়ের তেতো স্বাদ মুখে

সম্প্রতি বিডিআর বিদ্রোহের নামে যা ঘটলো তাতে পরাজিত হওয়ার একটা বাজে অনুভুতি হচ্ছে।

এই ধরণের পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানোর সময় প্রথমেই একটা গ্রুপ সেন্টিমেন্টাল ইস্যূ খুঁজে বের করে, যেটা ঐ মূহুর্তে সৈন্যদের খেপিয়ে তুলতে পারে। জানা কথা গুলি চালানো শিক্ষা পাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বেশিরভাগেরই মগজ হাটুতে চলে আসে -- সুতরাং সহজেই তাঁদেরকে বিভ্রান্ত করে ভুল করানো সম্ভব হয়।

এই গ্রুপের কাজ হল তাতিয়ে তোলা, তারপর শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। আগের গ্রুপ উন্মাদনা ছড়িয়ে দিলেও পাইকারী খুন করানোর মত অবস্থা করতে পারে না। বিভ্রান্তি ছড়ায় এই বলে যে ওরা তাদের অফিসারদের মেরেছে .... আবার ওদের কাছে গিয়ে বলে এরা মেরে ফেলেছে ... সবাইকে বলে তোমাদের একজন জওয়ানকে অফিসার গুলি করেছে। আর এদিকে কিন্তু কিলার গ্রুপ ঘুরে ঘুরে খুন করতে থাকে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত। দলীয় বা মিছিলে মানুষের ব্যবহার পাল্টে যায় (মব বিহেভিয়ার বলে আলাদা শব্দই আছে) ... রক্তের বন্যায় কিছু দূর্বল চরিত্রের জওয়ানও খুনিদের মত আচরণ করতে থাকে।

আরেকটি গ্রুপ বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। চিল্লিয়ে মিডিয়াকে জানায় মনগড়া কিন্তু বেশ মর্মস্পর্শী কিছু কাহিনী। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেটা সময় পাইয়ে দেয় কসাইদের, অগোচরে নিরাপদে বের হয়ে চলে যাওয়ার জন্য। এদের আসা যাওয়া সহজ করার জন্য বাইরের দিকে এলোপাথারি গুলিও চলতে থাকে। খবর ছড়ানো হয় যে, সেনাবাহিনীর অগ্রসর ঠেকানোর উদ্দেশ্যে এই গুলি। আর্মার্ড কার বলে এক ধরণের বাহন আছে যেটা দিয়ে এই গুলির মধ্যেও চাইলে সেনারা এগোতে পারতো।

বাইরের এজেন্টরা মিছিল করায়, মিছিলের সাথে মিশে বেরিয়ে যায় আরো কিছু ঘাতক; অগ্রসরমান ট্যাঙ্ক বহরকে আটাকানোর চেষ্টা করে পাবলিক সেন্টিমেন্ট দিয়ে। বেশিরভাগের চোখকে ধুলা দিয়ে কী রকম সাবলিল ভাবে এ্যাত বড় একটা নিখুত ক্ষতি করে দিয়ে গেল দেশের সেনাবাহিনীর!

---
বুলডগকে শক্রুকে কামড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিলে সেটা মালিককের গাল চাটবে না .. তাদের দিকেও দাঁত খিচাবে .... এই বৈশিষ্টের বুলডগই দরকার। তাই বুটের লাত্থি খাওয়া ব্লাডি সিভিলিয়ান হলেও সেনাবাহিনীর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নাই। তাঁদের এ্যাতজন উন্নত স্ট্র্যাটেজিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চৌকস শীর্ষ কর্মকর্তা হারানো সেনা কর্মকান্ডে একটা বিরাট শূণ্যতার সৃষ্টি করবে নিঃসন্দেহে।

---
সেনাবাহিনী মাথাশূণ্য হলে কার লাভ? যাদের লাভ তারাই করিয়েছে ... এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নাই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে চৌকস এবং ঈর্ষনীয় একটা সেনাবাহিনীতে পরিণত হচ্ছিলো ... জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তাঁদের দক্ষ অংশগ্রহণে এটা পুরা পৃথিবীর কাছেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই সেনাবাহিনী অস্থিরতায় টালমাটাল দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনলো; ক্ষমতা দখলের বদলে, দেশকে উপহার দিলো জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ডেটাবেস। ... সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটা দেশের এ্যাতসব সফলতা কাদের চক্ষুশূল হতে পারে?

তাই এমন আক্রমণ অস্বাভাবিক বা অনাকাঙ্খিত ছিল না। কিন্তু সেটা ঠেকাতে না পেরে নিজেরা বিভ্রান্ত হয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত ছিলাম ... প্রতিপক্ষের ফাঁদে পা দিয়েছিলাম সবাই .... পারলাম না ক্ষতিটা ঠেকাতে।

---
৭১'এর ১৪ই ডিসেম্বরে দেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা না করা হলে এ্যাতদিনে হয়তো তাঁদের কাছ থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়ে দেশ হিসেবে আমরা মালয়েশিয়া/সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যেতাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ কার্যকর ক্ষতির জন্য সঠিক নীলনকশা বাস্তবায়ন করে আমাদের চরম ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছিল। ঐটি ছিল যুদ্ধে এদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

আবার, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হারিয়ে একই রকম একটা বড় ক্ষতির সম্মূখীন হল দেশ। ভবিষ্যতে এই চৌকস কর্মকর্তাদের অভাবে না জানি কতদিন বিভিন্ন ভুলের পূনঃপৌনিক বৃত্তে ঘুরপাক খেতে হবে। কত ক্ষেত্রেই না জানি অন্য দেশগুলোর চাইতে পিছিয়ে পড়বো।

আসলেই আন্তর্জাতিক কুটকৌশলের কাছে আমরা আবার পরাজিত হলাম খারাপভাবে। মুখতা তিতা হয়ে গেছে ... সাথে রক্তের লোনা স্বাদটাও রয়ে গেছে।

(একই সাথে প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত)

কোন মন্তব্য নেই: