নামে কী বা এসে যায় !
(পোস্টটি গতকাল সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিলো)
নিজের নাম নিয়েই একটা ছোট অনুভুতি লেখব বলে মনস্থির করলাম। যদিও এ ধরণের তুচ্ছ ব্যাপারে লেখা আদৌ উচিৎ হচ্ছে কি না সেটার ব্যাপারে মনে একটু সন্দেহ রয়েই গেল।
জগৎ-সংসারে এ্যাত বিষয় থাকতে নিজের নাম নিয়ে কেন পড়লাম? সেটা হয়ত আমিত্বকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তবে লেখার মশলা মনে জমা হয়ে ছিল অনেক দিন আগে থেকেই, আগের লেখায় হাসান মোরশেদ ভাইয়ের একটা মন্তব্য দেখে ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।
যা হোক, আমার নামটা বেশ ... মানে বেশ ভালই লম্বা। দৈর্ঘ্যের কারণেই নামে কিছু ব্যাপার এসে যায় আমার নিত্যজীবনে।
ছোট বেলা থেকেই বিড়ম্বনার শুরু। সবার খাতার নাম লেখার জায়গায় সুন্দর নাম এটে যায়... আমারটা হয় না। তারপর, পরীক্ষার ফর্ম পূরণ, বেতন বই, ব্যাংকের জমা বই সমস্ত জায়গাতেই নিজের নামের স্থান সংকুলান করতে ন্যারো ফন্টে হাতের লেখা শিখতে হয়েছে। টোফেল পরীক্ষা দেয়ার সময় তো কানের পাশ দিয়ে গুলি গেল, আর একটা অক্ষর বেশী হলেই ফর্মে নাম আটতো না। পাসপোর্টের নামের ঘরেও বেচারা অফিসার এক লাইনে নাম লিখতে পারে নাই। আর স্কুলের ক্লাসের স্যাররা আমাকে নাম ধরে ডাকতে গেলেই কেমন জানি ঘুম ঘুম হয়ে যেত তাঁদের কন্ঠস্বর।
আমার গবেষণার কাজে, প্রফেসরের পয়সায় প্রায়ই দেশে পাঠায়, নমুনা সংগ্রহ করতে হয় -- বিমানে চড়া/নামা আর ইমিগ্রেশনের ফর্ম পূরণ করতে আমার সবসময়ই সহযাত্রীদের চেয়ে বেশি সময় লাগে।
যা হোক সবচেয়ে বড় ফাপরে পড়েছিলাম জাপানে এসে। এখানে স্বাক্ষর করার তেমন চল নেই। সকলেই তার বদলে ছোট্ট সীল ব্যবহার করে। সীলগুলো গোলাকার বা চারকোনা। গোলাকার সীলগুলো মোটাসোটা একটা কলমের মত ৩ /৪ সে.মি. লম্বা এক টুকরা কাঠ। তাঁর নিচের মাথায় নামের কাঞ্জি বা জাপানী আকিবুকিমার্কা অক্ষরে নাম লেখা থাকে।
কাহিনী হলো, আমাকে দেশ থেকেই পরিচিতিমূলক সমস্ত মেইলে আমার দেশের প্রফেসর শামীম নামেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমার নতুন জাপানী প্রফেসর আমার লম্বা নাম জানলেও সবসময় সুবিধাজনক ছোট শামীম নামে ডাকতেন। জাপানে আসার পরপরই ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সেই সীল (হাংকো/ইনকান বলে) লাগবে। প্রফেসর আমাকে সহ গিয়ে অর্ডার দিলেন ... জাপানী অক্ষরে শামীম। ওটা দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুললাম। এরপর গাড়ী কেনার সময়ে জানা গেল এ জন্য সীলটাকে সিটি অফিসে নিবন্ধিত করতে হবে। কিন্তু ওখানে বলে এটা তো তোমার পাসপোর্টের নামের অংশ না এটা করা যাবে না। তখন ওখানকার অফিসার ফোনে আমার প্রফেসরকে না পেয়ে একটা চিঠি লিখে দিলেন।
চিঠি পড়ে প্রফেসর বললেন তোমার মূল নাম এ্যাত বড় যে এটা দিয়ে সাইজমত সীল বানানো অসম্ভব, তাই শেষাংশ জামান দিয়ে সীল বানাও। ওটার অর্ডার দিলাম -- কয়দিন পরে ওটা নিয়ে গেলাম সিটি অফিসে .... আবার বলে হবে না। তোমার নাম ভেঙ্গে কোন অংশ দিয়ে হবে না। তাই শেষ পর্যন্ত সীল হল ছোটখাটো মিয়া।
ওহহো.. আমার নামটাই তো দেয়া হল না: মিয়া মোহাম্মদ হুসাইনুজ্জামান (Miah Mohammad Hussainuzzaman)।
যশোরের প্রজেক্ট অফিসে আমাকে বলে মিয়াজাকির মিয়া ভাই।
তাই বলি, নামে এসে যায়। আমার পরবর্তী বংশধরদেরকে এ ধরনের ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ঠিক করেছি খুব ছোটখাট নাম রাখবো ওদের।
এ্য্যতক্ষণ শুধু অসুবিধাই বললাম। বড্ড একপেশে হয়ে গেল ব্যাপারটা। তাই বড় নামের একটা সুবিধার কথা বলে শেষ করি: এ্যাত বড় নাম সাধারণত হয় না জন্য একনামে চেনা যায়। আমার নামের মূল অংশ দিয়ে কোন ইমেইল বা অন্যকিছু রেজি: /নিবন্ধন করতে গেলে কখনই অসুবিধা হয় না। আর, কখনো যদি এই নাম দিয়ে গুগল করেন, নিশ্চিতভাবেই আমাকে খুঁজে দেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন