শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৯

ভুটান ভ্রমণ - ০২

পূর্বের অংশ: ভুটান ভ্রমণ - ০১

৬। ৩য় দিন: থিম্ফুতে বুদ্ধা পয়েন্ট, তেকিন যু, ক্লক টাওয়ার ও কেনাকাটা

৩য় দিন অর্থাৎ ১১-আগস্ট ২০১৯ - এদিন আমরা থিম্ফুতেই কাটাবো
সকালের নাস্তা, আজকে নতুন আইটেম হল একটা আঁচার আর পরিজ (সুপি ম্যাকারনির মত)
প্রথম গন্তব্য বুদ্ধা পয়েন্ট
বুদ্ধা পয়েন্টের বিশাল চত্বর দারুন চকচকে সব মূর্তিতে ভরা, দুরের পাহাড় আর মেঘের দৃশ্য অসাধারণ
বিশাল ভবন, বিশাল মূর্তি। এটার উপরের অংশে যাদুঘর। ভেতরটা অসাধারণ কারুকাজ আর ছোট ছোট বুদ্ধা মূর্তিতে ভর্তি কিন্তু ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ।
ঐ যে বামদিকের হাতির ছবিটার উপরে কালো কালো পিঁপড়ার মত দেখা যাচ্ছে ওগুলো কিন্তু মানুষ। ওদের দেখলে পুরা স্থাপনাটার আকার বুঝতে সুবিধা হবে।
গাড়ি দিয়ে মূর্তির কাছাকাছি নেমেছিলাম, কিন্তু বের হলাম এই সিঁড়ি বেয়ে। এখানে সম্পুর্ন সিঁড়ির অর্ধেক উচ্চতা দেখা যাচ্ছে। সিঁড়ির দুই পাশে পাথরের দেয়ালও ধাপে ধাপে নেমে এসেছে।
এখনও এই সিঁড়িগুলো তৈরী শেষ হয়নি। এটা শেষ হওয়ার পর যদি এদিক বেয়ে উঠতে হয় তাহলে খবর আছে!
পরের গন্তব্য খাড়া পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত তেকিন চিড়িয়াখানা - নাম "রয়্যাল তেকিন প্রিজার্ভ"। তেকিন হল ভুটানের জাতীয় প্রাণী। এটা গরুর মত বড়, কিন্তু শরীরে ভেড়ার মত পশম। ধর্মীয় কোন একটা ব্যাপার জড়িত আছে এঁদের নিয়ে ...
চিড়িয়াখানার উঁচু ঢালু পথ বেয়ে যতই হাঁপিয়ে উঠেন না কেন, তেকিনের তাতে মন ভেঁজে না। দুরেই চুপচাপ বসে থাকে।
তেকিন না আসলে কি হবে হরিণগুলো কিন্তু ঠিকই কাছে চলে আসে
তেকিন না পেয়ে ওদের স্ট্যাচুর সাথেই ছবি তোলা হল
হোটেলে ফিরে দুপুরের খানা-পিনা করে ছোট্ট একটা ঘুম দেয়া হল। আজকের খাবারের নতুন আইটেম পণির মাসালা।
এবার বিকালে থিম্পু শহরে একটু হ্যান্ডিক্রাফটস কেনা কাটা করতে যাওয়া। মেয়েরা গেল দোকানে, আর আমি রাস্তাঘাটের ছবি তুলি।
ঝকঝকে শহর, পেছনে পাহাড়
তকতকে পরিষ্কার, ভীড় ভাট্টা ছাড়া সুশৃঙ্খল রাস্তাঘাট দেখলে মনেই হয় না এটা দক্ষিন এশিয়ার কোন জায়গা
ঐ যে দুরে একটা গ্যালারিওয়ালা চত্বর। ওটাই ক্লক টাওয়ার - যাকে সিটি সেন্টারও বলা হয়।
হঠাৎ একটা ময়লার গাড়ির আগমন। আর অমনি বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ময়লা নিয়ে এসে এসে দিয়ে গেল!
কেনাকাটার আসল কাজ আপাতত শেষ, তাই এখানে একটু ঘোরাঘুরি করি। কোত্থাও কোন ময়লা প্যাকেট, কাগজ পড়ে নাই।
ক্লক টাওয়ারকে নিয়ে ছবি তোলা
এটা হল থিম্ফু জং। এর কাছে গিয়ে শুনি রাষ্ট্রীয় অতিথি আসবে দেখে টুরিষ্ট যাওয়া বন্ধ। তাই আসার পথে দুর থেকে একটা ছবি নিলাম।
এই ধানক্ষেতের জমিগুলো নাকি মং(সন্যাসী?)দের। তাই এগুলোতে এখনও কোনো অবকাঠামো ওঠেনি। দুরে নদী, রাস্তা, ঘরবাড়ি দেখা যায়।
মোমো খাইতে মন চায়। তাই ফেরার পথে কেনা হল। ৩ প্লেট (১৫টি) মোমো, ভেতরে বাধাকপি আর পণির দেয়া: ১৮০ উঁগুলট্রাম। সাথে একটা ছোট ফানটা আরো ৫০ উঁগুলট্রাম।
রাতের খাবার। আমাদের আব্দারে নতুন আইটেম ভুটানিজ খাবার মরিচ, পণিরের ঝোল: নাম সম্ভবত এমাদাতসি

৭। ৪র্থ দিন: থিম্ফু থেকে পারো গমন, দুর থেকে টাইগার নেস্ট দেখা

সকালের বিদায়ী নাস্তা। আজকের নতুন আইটেম প্যানকেক।
গাইড মহোদয়ের চা খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। বিদায় Pemaling Villa.
থিম্ফুর আরেকটা হ্যান্ডিক্রাফট মার্কেট। এখানে ৮৩টা দোকান রয়েছে।
জনগণ ক্রয়যোগ্য হ্যান্ডিক্রাফটের খোঁজে, আর আমি আকাশ বাতাসের ছবি তুলি। রাস্তা কিন্তু ওয়ান ওয়ে।
এই দোকানের মালিক আমাদের গাইড সাহেবের স্ত্রী ...
থিম্ফু থেকে পারো'র হাইওয়ে। রাজধানীকে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যুক্ত করেছে। তাই সবচেয়ে সুন্দর।
থিম্ফু থেকে পারো'র হাইওয়ে। লোকজন টয়লেটে যায়, আমি রাস্তার ছবি তুলি
হাইওয়ের টয়লেট ব্যবস্থা আসলেই খুব উন্নতমানের এবং পরিচ্ছন্ন। ১০ উঁগুলট্রাম দিয়ে ব্যবহার করা যায়।
থিম্ফু থেকে পারো'র হাইওয়ে।  আঁকা বাঁকা হলেও অনেক ভাল।
থিম্ফু থেকে পারো'র হাইওয়ে। টয়লেটের জন্য গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাও আছে। আমি অবশ্য আকাশ-পাহাড়ের ছবি তুলতেছিলাম।
পারো পৌঁছানোর ১০-১৫ মিনিট আগে নদীর সাথে দেখা করিয়ে দিলেন গাইড-ড্রাইভার সাহেব। এখানে একটা তার থেকে বেঞ্চে ঝুলে ঝুলে নদী পার হওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
জুতা-মোজা খুলে আমিও ... ঠান্ডা পানিতে নেমে কন্যার ফূর্তি (গাড়িতে বসে থেকে ওর নাকি খারাপ লাগছিল, কিন্তু এখন একদম ফ্রেশ লাগছে)
 পারো নদীর সাথে দেখা। ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ

কোথাও কোথাও নদীর মাঝে চরও পড়েছে। ডানদিকের সাদা দাগটি আসলে একটা রাস্তা।
নতুন জায়গায় যাওয়ার আগেই থেমে একটা ঘরোয়া জায়গায় দুপুরের খাবার। এখানেও সেই তথাকথিত বাঙালি খাবার। বেগুনের চাট, মুরগীর ঝোল, সালাদ আর পিকল্স (আঁচার - মটরশুটি+মূলা)। রান্না খুবই সুস্বাদু। জায়গাটির নাম সোনম'স হোমস্টে।
বাসাটির সামনে আপেল গাছ। নিচে কাঠের গুড়ির মত সব বসার জায়গা। ওনার রান্না বান্নার সব তরিতরকারী নিজের ক্ষেতেই উৎপন্ন করা।
চলতি পথে ছবি তোলা। দুরে পাহাড়ের ভাঁজে ঘোলা কুয়াশা নাকি মেঘ বোঝা যাচ্ছে না।

পাকা রাস্তা, কাঁচা রাস্তার ঢালু উৎরিয়ে, আবার একটু পাকা রাস্তা তারপর হঠাৎ করেই এই পার্কিং লট। আমাদের আগামী দু'রাতের ঠিকানা: তেনজিংলিঙ্গ রিসর্ট।
ঢালু বেয়ে উঠে ভেতরের উঠান পেরিয়ে রিসেপশন। সেখানে আপেলের জুস দিয়ে অভ্যর্থনা।
নিচ তলার রুম। কিন্তু পার্কিং লট থেকে দেড় তলা উপরে। বারান্দাটাও দারুন!
এটার বাথরুমে শাওয়ারের জন্য আলাদা চেম্বারও আছে, তবে আগেরটার মত বাথটাব নাই।
কাঠের মেঝের রুম ... এখানকার ফ্রী ওয়াইফাইও ভাল।
বামদিকের ভবনের নিচের ডানদিকের দরজাটা আমাদের কক্ষের। ডানদিকের ভবনে রিসেপশন - ডাইনিং ইত্যাদি।
উঠানের বাকী অর্ধেক ...
এটা হল প্রবেশ পথ ... এখানেও দেড়তলার মত ঢাল বেয়ে উঠতে হয়! এখন আমরা টাইগার নেস্টের জায়গাটা ঘুরে আসবো।
ঐযে উপরে বিখ্যাত টাইগার নেস্ট মনেস্ট্রি। আরেকবার শুধু এটাতে চড়ার জন্যই ভুটানে আসতে হবে। উঠতে চার-ঘন্টার হাঁটা পথ।
এমনিতেই পাতলা বাতাসে হাসফাঁস অবস্থা, কে উঠবে অত উপরে? তাছাড়া আজকে সময়ও নাই। তাই ট্রেকিং পয়েন্টে হ্যান্ডিক্রাফটস কেনাকাটা করেই ফুড়ুৎ।
ডানদিকে দুইজন বাংলাদেশি ভদ্রলোক সেইরকম রাজা-উজির মারা গপ্পো জুড়েছেন। সম্ভবত ফ্যামিলির লোকজন এখনও ট্রেকিং থেকে ফেরেনি।
আসার পথে এমনিই গাড়ি থেকে ছবি-টবি তুলি।

যখন চিকন পাহাড়ি রাস্তা ছেড়ে চওড়া রাস্তায় আসলাম, মনে হল একটু ভিডিও করি।

ফিরে এসে সেই দেড় তলা ট্রেকিং করে রিসর্টে ঢোকা
রাতের ডিনার, বুফে। (Tenzinling Resort)
ডিনারের পর উঠানে বসে ক্লিকাই। বামদিকের ঐ উজ্জ্বল কক্ষ হল একটা সুভ্যেনিরের দোকান। সন্ধ্যার পরেই খোলে।
বামদিকের নিচতলা রিসেপশন। দোতলায় ডাইনিং।

1 টি মন্তব্য:

সাকিবুল হাসান উইন বলেছেন...

স্যার আপনার ছবি গুলা অনেক মিসস করছি