শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমণ - ৩


(আগের পর্বগুলোর লিংক:
ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমণ - ১
ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমণ - ২ )

১৬।
এখানে এসে প্রথমে যে বিষয়টা অনুভব করলাম সেটা হল বিশেষত আমি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পোশাকআশাক পরে আছি। রাস্তাঘাটে ছেলেরা সাধারণত থ্রী-কোয়ার্টার বা হাফ প্যান্ট আর চপ্পল পরে ঘুরছে। অনেক মেয়েরা যে হাফপ্যান্টগুলো পড়ে ঘুরছে ওগুলো সাধারণত ছেলেদের প্যান্টের তুলনায় অর্ধেক দৈর্ঘের, ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্যান্টের কাপড় ছাড়িয়ে নিচ দিয়ে পকেটের নিচের অংশ দেখা যাচ্ছে। অবশ্য স্বাভাবিক পোশাকে কিংবা এমনকি বোরখা পরা লোকজনও দেখলাম ওখানে। অধিকাংশের পায়েই চপ্পল বা হালকা টাইপের স্যান্ডেল। তাই প্রথম সন্ধ্যায় হোটেলে ফেরার পথে আমরা তিনজনের জন্যই হালকা দুই ফিতার চপ্পল কিনে নিয়েছিলাম বাংলা রোডের একটা দোকান থেকে। পরবর্তী সময়ে ফুকেটে পুরা সময় এই চপ্পল পরে ঘুরেছি। শুধুমাত্র প্লেনে ট্রাভেলের সময়ে জুতা পরেছি – তাও সেটা ব্যাগেজে বেশি জায়গা নেয় বলে। ২য় দিন সন্ধ্যায় আরও জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়াতে নিজের জন্য একটা হাফ-প্যান্টও কিনে নিয়েছিলাম – আমার বেঢপ সাইজ পেতে একটু ঘুরতে হয়েছিল অবশ্য।

১৭।
২য় দিন ছিল ঢাকা থেকে ক্রয়কৃত ট্যূর প্যাকেজ – ফী ফী আইল্যান্ড ট্যূর। সকালে অতি কষ্টে বিছানা ছেড়ে নিজেরা এবং মেয়েকে রেডি করে নিচে নেমেছি এমনভাবে যেন নাস্তা করে রওনা দিতে পারি। যখন নেমেছি তখন ঠিক ৭টা বাজে। নিচের রেস্টুরেন্ট, যেটাতে গত দুপুরে খেয়েছিলাম সেখানেই নাস্তার আয়োজন। সেই রেস্টুরেন্টে ঢোকার আগেই হোটেলের লবিতে এক লোক জিজ্ঞেস করে ফি ফি আইল্যান্ড? ---- ইয়েস! একটা কাগজ দেখিয়ে বললো - ইয়োর নেম?, দেখি একটা লিস্টে ভুল বানানে আমার নাম লেখা আছে, পাশে ২+১ এরকম কিছু সংখ্যা - পরে বুঝেছি ওটা হল ২জন + ১জন বাচ্চা’র সিম্বল – কাজেই ঐ লোক সহজেই প্র‌োফাইল মিলিয়ে আমরাই যে যাত্রী সেটা লবিতে আন্দাজ করে নিতে পেরেছে। ‘টেক ব্রেকফাস্ট, কার ইন ফ্রন্ট’। মনে মনে ভাবলাম, কি গিরিঙ্গি – এই ব্যাটার আরো ১৫ মিনিট পরে আসলে কি সমস্যা হইতো? আমরা নাস্তা করতে ঢুকলাম।

কোনোরকমে একটু খাওয়ার পরই ঐ লোক রেস্টুরেন্টে হাজির। বলে ৫ মিনিট শেষ, গাড়ি সামনে আছে। মেজাজটা একটু খারাপ হলেও চা না খেয়েই রেস্টুরেন্টের সামনে বের হলাম। একটা উঁচু ছাদের বড় মাইক্রোবাস সেখানে অপেক্ষায়। সামনে ড্রাইভারের সিটের সারি বাদে পেছনে চার সারি সিট – অর্থাৎ ১৩ জন যাত্রী নিতে পারে এটি। মাইক্রোবাস ছাড়ার পর যেই না ভেবেছি ‘বাপরে! আমাদের জন্য এ্যাত বড় গাড়ি দিয়েছে’ – তখনই আমাদের হোটেল থেকে বড়জোর ৫০০ ফুট সামনে আরেকটি হোটেলে প্রবেশ করলো। ওখানে কিছুক্ষণের মধ্যে আরো ৩/৪ জন ককেশান (সাদা বা লালচে চামড়ার) টুরিস্ট উঠলো। গাড়ি সেখান থেকে বের হয়ে আরো হাফ কিলোমিটার পর আরেকটা হোটেলে ঢুকলো। সেখান থেকে আরো ৭/৮ জন উঠলো – গাড়িটার একটা সিটও খালি থাকলো না। এরপর গাড়িটা পাতং থেকে বের হয়ে পূর্ব-উত্তর দিকে আগাতে থাকলো। মেয়ের ঘুম পুরা হয়নি, তাই নতুন মানুষ দেখা কৌতুহল মিটিয়ে ও ঘুমাতে থাকলো।

১৮।
আমাদের হোটেলের সামনের রাস্তাটা ওয়ান ওয়ে। সম্ভবত সেই কারণে গাড়িতে ওঠার সিরিয়ালে আমরা প্রথমে ছিলাম। সব যাত্রী নিয়ে গাড়িটা যেতে যেতে রাস্তার একটা সিগনালে দাঁড়ালে দেখি আশে পাশে একই সাইজের আরো ৬-৭টা গাড়ি। বুঝলাম টুরিস্টদের জন্য এখানে এটা একটা কমন বিষয়। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট চলার পর এটা একটা নৌবন্দরের সামনে পৌঁছুলো। আমাদের আগে পিছে একই রকম আরো অনেকগুলো গাড়ি। ড্রাইভার আমাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথা গুনে ওখানে থাকা আরেকজনের দায়িত্বে দিল। সেখানেও আরেক লিস্টে নাম মিলিয়ে আমাদের প্রত্যেকের কাপড়ে একটা করে হলুদ রঙের ফি ফি আইল্যান্ড লেখা স্টিকার লাগিয়ে দিয়ে বলল‌ো এগিয়ে যেতে আর একেবারে লাস্ট জাহাজে উঠতে।

দুইটা জাহাজের ডেকের উপর দিয়ে গিয়ে আমাদের তিনতলা জাহাজে (নাকি লঞ্চ?! ক্রুজার?) উঠলাম। এখানে এক ক্রুজার থেকে আরেকটাতে যাওয়ার সময় উঁচা সাইডগুলো পার হওয়ার জন্য সিড়ি লাগিয়ে রেখেছে যেন কোনরকম হাইজাম্প-লংজাম্প না করেই স্মুথলি হেঁটে যাওয়া যায়। এই ক্রুজারগুলো টপকানোর সময় খেয়াল করলাম দুইবার দুইজন লোক আমাদের ছবি তুললো। আন্দাজ করলাম আসার সময়ে ছবি বেঁচবে …

ক্রুজারে সেখানকার ক্রু বলছে যেখানে খুশি বস (এর ইংলিশ উচ্চারণ একটু ভাল ছিল)। আমরা দোতলায় উঠে দেখি ইতিমধ্যে গুটিকয় লোক সেখানে বসে আছে। এটার উপরে ছাদ আছে, সেখানে যাওয়ার সিড়িও আছে। পেছনের এদিকটা খ‌োলা, সামনের দিকে একটা দোকানের মত, আর তার পেছনে প্রায় অর্ধেক ক্রুজার জুড়ে সম্ভবত হলরুমের মত বড় কেবিন। এই খোলা জায়গায় সারি সারি আরামদায়ক/বড় সাইজের প্লাস্টিকের চেয়ার বিছানো। দুই সাইড আর পেছনের রেলিং ঘেষে বেঞ্চের মত বসার জায়গা। ক্রুজারের বামসাইড - পূর্বদিকে প্রচুর র‌োদ, তাই ছাদে ওঠার সিড়ির ডান পাশে ছায়া দেখে একটা জায়গায় বসলাম তিনজন।

১৯।
আমাদের কারোই গতরাতে যথেষ্ট বিশ্রাম হয়নি - তাই বসে বসে ঝিমুচ্ছি। মাঝে মাঝে ভেঁজা বাতাসের ঝাপটা একটু আরাম দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্রুজারের ছাড়ার নাম নাই। এর মধ্যে কন্যার ক্লান্তি এবং ঘুমজনিত সমস্যা - দুয়েক পশলা বমি হয়ে গেল। এর মধ্যে ক্রুজারে আরো লোক উঠছে তো উঠছেই। আমাদের নাস্তা পুরা না করে এ্যাত আগে নিয়ে আসলো আর এদিকে দেরী করতেছে -- ব্যাপারটা হোটেলওয়ালাদের ষড়যন্ত্র কি না ভাবছিলাম বসে বসে।

নতুন নতুন মানুষ দেখতে খারাপ লাগছিলো না। বিশেষত যখন পুরা রান দেখানো মানুষজন থাকে তখন কে আর এ ব্যাপারে কমপ্লেইন করবে :D। খেয়াল করে দেখলাম, আমাদের আশেপাশে যাঁরা বসেছে তাদের কারো কারো স্টিকারগুলো নীল রঙের। এরপর সবুজ রঙের স্টিকারওয়ালা কিছু যাত্রীকে ক্রুজারের ক্রুগণ দেখি গাইড করে এই দোতালার সামনের দিকে কেবিনে ঢুকিয়ে দিল। আশেপাশের কথাবার্তায় বুঝলাম - সবুজ স্টিকারওয়ালারা এসি কেবিনে থাকবে। বাইরে একটু গরম-গরম ছিল তা সত্য - সেটা আবহাওয়া আর ছোট ছোট পোশাকের দুই কারণেই। কিন্তু তাই বলে চমৎকার ক্রুজে ওদের ওরকম কেবিনে ঢুকে যাওয়াটা আমার কাছে একটু বোকামীই মনে হচ্ছিলো। যা হোক, প্রায় ৫০ মিনিট অপেক্ষার পর আমাদের ক্রুজার ছাড়লো -- নাস্তা মিস করানোর জন্য ইতিমধ্যেই গাড়িওয়ালাকে শাপ-শাপান্ত করা হয়ে গিয়েছে কয়েকবার।
২০।
ক্রুজার ছাড়ার পর বাতাস আরো আরামদায়ক হয়ে উঠলো। প্রায় ঘুম ঘুম পরিবেশ - কিন্তু চারপাশে এ্যাত চমৎকার দৃশ্যাবলি ছেড়ে কে ঘুমায় ;) । সামনের দোকান থেকে গিন্নি আর কন্যা গিয়ে কন্যার জন্য চারপাশে কার্নিশওয়ালা একটা হ্যাট কিনলো। মাঝে মাঝে দুয়েকজনকে ডিসপোজেবল কাগজের কাপে করে চা কিংবা কফি খাইতে দেখে তদন্তে বের হলাম -- কারণ সামনের দোকানে চা-কফির কোনো আয়োজন ছিল না। রেলিঙের ফাঁক দিয়ে লক্ষ্য করলাম নিচতলার ডেকে এই চা-কফি ওয়ালাদের বিচরণ বেশি।

নিচের তলায় একটু ঘুরে এসে যা যা আবিষ্কার করলাম তা হল - আমাদের ঠিক নিচেই দুপাশে মহিলা এবং পুরুষদের বেসিন সুবিধা সহ একাধিক টয়লেটের ঝকঝকে তকতকে ইউনিট আছে। এছাড়া, আরেকটু সামনে কেবিনের মত চারপাশ বন্ধ ডেকে ঢুকলে সেখানে স্কুবা-ডাইভিং টাইপের জিনিষপাতি ভাড়া দেয়ার দোকান আছে বামপাশে, আর, ডানপাশের দোকানে চমৎকার চা-কফি সাজানো --- এবং তা-ও বিনামূল্যে। বাঙালি তো ফ্রীতে আলকাতরাও খায় -- চা-কফি বাদ্দিবো কেন! তবে কফি খাওয়ার আগে কোন আকৃতির কাগজের গ্লাসে ঠান্ডা পানি খেয়ে প্রাণ জুড়ালাম (জ্বী, সেটাও ফ্রি :) )। অবশেষে নাস্তা তথা চা মিস করা দূঃখ ভুলে গেলাম।

২১।
উপরে এই খবর আমার পরিবারে পৌঁছালে তারাও এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলো। গোপাল ভাঁড় আর রাজার গল্প জানা কে না জানে টয়লেট একটি জরুরী বস্তু ... । গিন্নি নিচতলায় অভিযানে গেলে -- এটা অভিযান কারণ খাড়া সিড়ি বেয়ে চলন্ত ক্রুজারের দুলুনী এবং সিনেমাটিক উপায়ে ছিটকে বাইরের অথৈ সমূদ্রে পড়ে যাওয়ার আশংকা উপেক্ষা করে নামতে হয়েছে ওনাকে ---- আমরা: মানে আমি এবং কন্যা ক্রুজারের ছাদে অ্যাডভেঞ্চারে গেলাম ... ;)

ইয়াল্লা! মারহাবা! ছাদে দেখি আরো এলাহি কারবার। একই রকম প্লাস্টিকের চেয়ার বিছিয়ে রাখা ছাড়া কিস্যুই নাই -- কিন্তু ওখানেই বেশ কিছু লোকজন সূর্যালোক পোহাচ্ছে! বিশেষ করে ছাদের সামনের দিকে একটু উঁচু জায়গাটায় সংক্ষিপ্ত পোশাকে আধশোয়া মিছিল -- এ্যাতদিন জানতাম বিচে টিচে গেলে এসব দেখা যায়; কিন্তু সেটা আসলে সমুদ্রের পাড় - এই মাঝ সমুদ্রের তিনতলার রৌদ্রের তুলনায় নিঃসন্দেহে কম গ্রেড পাবে। আমরা গরমে মরি আর এরা র‌‌োদে পোড়ে কেন সেটা বুঝতে আরো কিছুক্ষণ উপরে ঘোরাঘুরি করলাম। ওখানে আমাদের মতই বেশি কাপড়-চোপড় পরা বাঙালাদেশী বিশাল পরিবার দেখলাম একটা - বিশাল মানে মা-বাবা থেকে আন্ডা বাচ্চা সবই ছিল - প্রায় ফুটবল টিমের সমান। আবার দোতালায় নেমে দেখি গিন্নি ইতিমধ্যেই সিটে ফিরেছেন আর আমাদের খোঁজে ইতিউতি তাকাচ্ছেন।

২২।
যখন দুর থেকে নিচের ছবির মত খাঁড়া একটা দ্বীপ দেখলাম; ভাবলাম আহ পৌঁছে গেলাম মনে হয়। কিন্তু এটা আসলে মোটেই আমাদের গন্তব্য নয়। এর পাশ দিয়ে চলে আসলাম। পুরা পথে এরকম আরো কয়েকটা খাড়া পাড়ের মনোমুগ্ধকর ছোট দ্বীপ পার হয়েছিলাম। ছবি তোলার এমন চমৎকার উসিলায় ছাদে যাব না তা কি হয়!




২৩।
ছাদের গরমে -- মানে আসলেই রোদের গরমের কথা বলছি -- ক্লান্ত হয়ে নিচতলায় আবার পানি খেতে এসে আবিষ্কার করলাম ঐ দোকানদ্বয় যেই এয়ার কন্ডিশনড স্পেসে সেটার ভেতরে পুরা জায়গাটাতেই বহু যাত্রী বসে আছে। ওখানে যাত্রীদের জন্য সারি সারি চেয়ার ফিট করা আছে। ভেতরে ঐ বাংলাদেশি পরিবারটার লোকজনও আছে মনে হল। প্রতিটা চেয়ারের হেলান দেয়ার জায়গায় একটা করে লাইফ জ্যাকেট কায়দা করে পেঁচিয়ে রাখা। কাজেই উপরে গিয়ে গিন্নি আর কন্যাকে নিচে নিয়ে আসলাম আর খালি চেয়ার খুঁজে বের করে সেখানে বসে পড়লাম। আসলেই বাইরের হিউমিড জায়গার চেয়ে এই জায়গাটা এখন আকর্ষনীয় মনে হতে থাকলো।

বসে বসে ঝিমাচ্ছি, আর ওদিকে দেখি মেয়ে অবশেষে ঘুমিয়েই পড়লো। তবে আমাদের এই সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না -- স্পিকারে ক্রুজারের ক্যাপ্টেন কি কি জানি ঘোষনা দিল; সম্ভবত ইংরেজিতেই বলেছিলো, কিন্তু তা বোঝে কার বাপের সাধ্য! ভাবসাবে যা বুঝলাম আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। But I was wrong!

২৪।
আমরা যেখানে বসেছিলাম সেটা ছিল প্রায় সামনের দিকে, ডানপাশে। কাজেই সামনের এবং দুইপাশের উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে বাইরের দিকটা বেশ ভালই দেখা যাচ্ছিলো। লাউডস্পিকারের কথা শুনে চোখ খুলে সামনে যা দেখলাম তা এক-কথায় অসাধারণ। বাম থেকে ডানে বিস্তৃত খাড়া পাহাড়ের মাঝে একটা চওড়া ফাটলের মত জায়গার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পাহাড়গুলো খাড়াভাবে এ্যাত উঁচুতে উঠে গেছে (কিংবা আমরা এ্যাত কাছে চলে এসেছি) যে সামনের উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছিলো না। মাঝখানের ফাটলের মত খাড়িতে ডানদিকে একটা ছোট্ট বিচ দেখা যাচ্ছে, সেখানে কিছু মানুষ ঘোরাঘুরি করছে, কিছু ছোট ছোট নৌকায় আশে পাশে ঘুরছে – একেবারে যেন কল্পনার দেশের দৃশ্য।

এখানে ক্রুজার কোথায় ভিড়াবে সেটা নিয়ে একটু চিন্তা চিন্তা ভাব হচ্ছিলো। এই পর্যায়ে দেখি আমাদের ক্রুজারটা ১৮০ ডিগ্রি এবাউট টার্ন করিয়ে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখলো। কিভাবে নামানামি হবে, কোথায়ই বা লাঞ্চ করাবে এসব খোঁজ করতে ক্রুজারের পেছনের দিকে খোলা ডেকে বের হয়ে আসলাম। দেখি দুয়েকটা নৌকা ক্রুজারের কাছাকাছি এসেছে, আর ওগুলোতে কয়েকজন উঠেও পড়ছে। কিন্তু পরিষ্কার কোনো তথ্য কোথায়ও কাউকে ঘোষনা করতে শুনলাম না। অবশ্য তেমন দুশ্চিন্তা হয়নি, কারণ ঝাঁকের কৈয়ের মত সবাই যেদিকে যাবে সেদিকেই তো যাব। এমন সময় আবার লাউড স্পিকারে দূর্বোধ্য ইংরেজিতে কি কি জানি বললো। বলতে না বলতেই আবার ক্রুজার ছেড়ে দিল … … … আরে! এটুকুই নাকি? লাঞ্চ ক‌োথায় ভাবতে ভাবতে বুঝলাম ক্রুজারটা ডানদিকে পাহাড়ের ধার ঘেষে যাচ্ছে। তখন মেমরি রিওয়াইন্ড করে যতদুর বুঝলাম, ক্যাপ্টেন বলেছে যে এই জায়গাতে ঢেউ খুব বেশি - ক্রুজার স্টেডি রাখতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে; আমরা অন্যদিকে নামবো।

২৫।
পাহাড়ের ধার ঘেষে একটু আগাতেই মনে হল এদিকে সাগর অনেকটাই শান্ত, কারণ দুলুনী কমে গেছে। আর পাহাড়টা ঘুরে একটা উপসাগরের মত জায়গায়, অর্থাৎ তিনদিকে পাহাড় বা ল্যান্ড আর একদিকে সমূদ্র - ঘুরতেই দুলুনি পুরাপুরিই নাই হয়ে গেল। আসার পথে পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে খাড়ির মত জায়গায় ছোট ছোট ট্রাডিশনাল নৌকা আর আধুনিক স্পিডবোট দুরকম বাহনে আরো অনেক পর্যটককে বিভিন্ন পানির অ্যাডভেঞ্চারে আছে বলে মনে হল। পাহাড়ের গায়ে পানির কাছাকাছি কিছু গুহার মত জায়গাও দেখলাম।

কেবিনের ভেতরে এসে এই তথ্য দিয়ে বসতে বসতে আশেপাশে আরেকটু নজর দেয়ার অবসর মিললো। অনেক লোকজনই কেবিনের চারদিক দিয়ে সরু বারান্দার মত জায়গায় বের হয়ে বাইরের দৃশ্য আরও ভালভাবে উপভোগ করা চেষ্টা করছে। কেউ কেউ সামনের দিকের ছোট্ট ডেকে পৌঁছে গিয়ে ছবি তুলছে। কন্যা যেহেতু ঘুমাচ্ছে, আমরা মিয়া-বিবি ওকে রেখেই একপাশের একটা দরজা দিয়ে বের হয়ে ঐ সরু বারান্দা হয়ে সামনের ডেকে গেলাম ছবি টবি তুলতে। ততক্ষণে আমরা একেবারে শান্ত উপসাগরে, ঘাটের দিকে অগ্রসরমান।
কেবিনের ভেতরে লক্ষ্য করলাম বেশ কিছু যাত্রী মোটামুটি কলছেড়ে দিয়ে ওয়াক্ ওয়াক্ চালিয়ে যাচ্ছে। মুখের সামনে একটা পলিথিন যে ধরেছে আর সরানোর নাম নাই। এই সামান্য দুলুনি বা রোলিং-এ আমাদের বা অন্য বাঙালি ফ্যামিলির কারোই কিস্স্যূই হয় নাই। "হুঁ হুঁ বাবা -- সমূদ্র লাগবে না, বিদেশীরা পারলে আমাদের রাস্তায় গাড়িতে চড়ে ঘোরাফিরা করে আইসো, বুঝবা রোলিং কত প্রকার ও কী কী!"

২৬।
ক্রুজারটা অবশেষে ঘাটে ভিড়লো। ডান-বাম দুদিকেই পাহাড়। মাঝের একটু জায়গায় বেশ কিছু স্থাপনা দেখা যাচ্ছে। ঘাট থেকে বামদিকে একটা ছোট বীচ। ক্রুজারের একজন কর্মী একটা বাক্সের উপর দাঁড়িয়ে কি কি জানি বলে যাচ্ছে। শুনলাম লাঞ্চ দুপুর একটায় একটা হোটেলে, এখন বাজে সাড়ে ১১টার মত। অতশত শোনার সময় নাই, ঝাঁকের সাথে যাব ভেবে আমরা নেমে পড়লাম। ঘাটে টোল দিতে হয় জনপ্রতি ২০ বাথ। এটা নিয়ে দুয়েকজনকে ক্রুজারের মধ্যেই হাউকাউ করতে দেখলাম -- তাদের প্যাকেজে সব খরচ দেয়া আছে, এগুলার কথা বলা নাই ইত্যাদি ইত্যাদি।

জায়গাটা সম্ভবত কিছুদিন আগে বড়সড় কোনো ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছিলো। কারণ ঘাটের রেলিংয়ের সাথের লাইটপোস্টগুলো মুচড়িয়ে ভাঙ্গা হয়েছে মনে হচ্ছিলো। ঘাট থেকে বের হলেই বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের হাটের মত পায়ে হাটা পথ আর দুপাশে দোকানপাট। কোন দোকানে ট্যূর প্যাকেজ বিক্রয় হচ্ছে, কোনটাতে স্কুবা গিয়ার, কোনটাতে সুভ্যনির, কোনোটাতে খাবার। হঠাৎ সেখানেই ডানদিকের গলিতে একটা 7-Eleven চোখে পড়লো। তাড়াতাড়ি সেটাতে ঢুকে কিছু খাবারদাবাড় কিনলাম। এই খাবারগুলো সেই হোটেল বা কোথাও বসে খাওয়া দরকার। আমার জামাতে লাগান‌ো ফিফি আইল্যান্ড স্টিকারটা কোথায় জানি খসে পড়েছে। একই রকম স্টিকার লাগানো একজনকে জিজ্ঞেস করে লাঞ্চের স্থানের দিক পেলাম। সেটা আসলে সেই সেভেন ইলেভেন থেকে সামান্য একটু সামনেই -- নাম ফি ফি হোটেল।

২৭।
হোটেলের সামনে ডানে বামে সুন্দর বসার জায়গা। সেখানে সোফা, চেয়ার পাতা আছে। বামদিকের জায়গাটাতে আমরা বসলাম। আরো স্টিকার লাগানো গেস্ট এদিক সেদিক বসে ছিল। পাশেই একটা সুইমিং পুল। আমরা সেখানে বসে আগে কেনা খাবারগুলো খেলাম -- আহ্ শান্তি। অন্যপাশে বিড়াল দেখতে পেয়ে মেয়ে সেদিকে গেল। এখানেকার বিড়ালগুলো মানুষ দেখলে ভয়ও পায়না পাত্তাও দেয় না। মেয়ে গিয়ে বেড়াল ছুঁয়ে আদর টাদর করে আসলো। হাত ধুইয়ে নিয়ে আসলাম তারপর। সুইমিং পুলের পাশ দিয়ে ওদিকেই খাওয়ার আয়োজন। সেখানে প্রচুর ল‌োক খাচ্ছেন। সবুজ স্টিকারযুক্ত লোকজনের জন্য ১২টায় লাঞ্চ শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে কেউ একজন ঝপাং করে সুইমিংপুলে লাফ দিলো। সাথে সাথে কোত্থেকে হোটেলের এক লোক এসে তাকে কড়া ভাষায় বললো - নো সুইমিং হেয়ার; সুইমিং ৫০০ বাথ। ঐ পর্যটকও আমাদের মত ট্যুরের অংশিদার; খাওয়ার আগে বীচে টিচে ভিজে এসে এখানে ফ্রেশ হতে চেয়েছিলো। হোটেলের দুইজন গেস্ট সেখানে ইতিমধ্যেই সাঁতার কাটছিলো; তারা এবং আমরা যারা খাওয়ার জন্য অপেক্ষায় - সবাই বেশ অবাক হয়ে পুরা ঘটনা দেখলাম। যা হোক এদিকে লাঞ্চের প্রথম পর্ব শেষে আবার টেবিল রেডি করতে থাকলো। কিছু অতি উৎসাহী টুরিস্ট সেখানে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে গেল - যদিও ১টার আগে তাঁদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।

২৮।
এ্যাতক্ষণ নিশ্চিন্তে বসে থাকলেও যখন লাঞ্চের জন্য যখন হেলেদুলে নিচতলার রেস্টুরেন্টে ঢুকতেছিলাম তখন দেখি সকলের হাতেই টিকেট। কোত্থেকে পেল কে জানে। আমার তো শার্টে লাগানো স্টিকারও নাই। তারপরও নিষ্পাপ বেশে স্বাভাবিক মুখে এগিয়ে যেতেই সেখানকার একজন হাতের লিস্ট থেকে বললো তোমার নাম এটা? আমি দেখি ৪/৫ জনের সাথে আমার নামও আছে। হ্যাঁ বলতেই বললো ৩ আর ৪ নম্বর টেবিলে ত‌োমাদের আয়োজন। উফ্ফ্ টেনশনে পড়তে গিয়েও বেঁচে গেলাম ... আর ওদের টুরিস্ট ব্যবস্থাপনায় অবাক হয়ে গেলাম।

খাওয়ার টেবিলগুলো গোলাকৃতির, চারপাশে ১২জন বসার আয়োজন। টেবিলের মাঝে একটা ঘুরতে সক্ষম ট্রের মত আংশ আছে; সমস্ত খাবার-দাবাড় সেখানেই সার্ভ করা হয়েছে। খুব আহামরি কিছু খাবার না হলেও সবগুলোই ছিল উপাদেয়। ভাত, নুডলস্, চাইনিজ ভেজিটেবল, মুরগী, সাধারণ ভেজিটেবল, কেশ‌‌োনাট সালাদ, ক্লিয়ার স্যূপ -- সবকিছুই গরম গরম। আমার মেয়ের দেখলাম ডোনাটের মত দেখতে গোল গোল পেঁয়াজের টুকরা বেসনে (বা আটা টাইপের কিছুতে ) ভাজা বেশ পছন্দ হয়েছে। সেখান থেকে পেঁয়াজটুকু বাদে বাকি অংশটুকু খাচ্ছে! সামনে দুই বাচ্চাওয়ালা একটা মিডল-ইস্টের ফ্যামিলি বসেছিলো। ওরা তেমন কিছুই খেল না -- হয়তো এদিকের ভাত-নুডুলস, রান্না বা ফ্লেভার ওদের ভাল লাগেনি। ডানে এক বাচ্চাওয়ালা বাংলাদেশি একটা পরিবার বসেছিলো - তারা আর আমরা গল্পসল্প করতে করতে বেশ মজা করেই খাওয়া দাওয়া করলাম।

২৯।
ঠিক আড়াইটায় ক্রুজার ছেড়ে যাবে। কাজেই খাওয়া দাওয়ার পর সব মিলিয়ে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় পাওয়া গেল ঘুরাঘুরি করার জন্য। ঠিক করলাম ঘাট থেকে দেখা বামদিকের বীচটায় একটু পা ভিজিয়ে আসবো। তাই ওদিকে রওনা দিলাম। হোটেলের পাশে নিচের ছবির মত পাদি, তাও কিনা ফাইভ স্টার - লেখা দেখে ভাবলাম ছবি তুলে রাখি। আগে অন্য হোটেলের মেনুতেও পাদি দেখেছিলাম -- আমার ধারণা এটা ভাতের স্থানীয় নাম; বউয়ের হিসাবে এটা আসলে ইংরেজি পেডি (Paddy) থেকে আসা অপভ্রংশ - কাজেই গন্ধযুক্ত পাদি নয়, বরং উচ্চারণ হতে পারে পাডি!

৩০।
খাওয়া দাওয়ার পর গরম দুপুরে খুব জোরে হাটা সম্ভব নয়। আর ছুটিতে রিলাক্স করতে বেড়াতে এসেছি, দৌড়াতে নয়। তাই ধীরে ধীরে যখন ঐ বীচে পৌঁছুলাম তখন ২টা বেজে গেছে (প্রতিটা ছবিতেই টাইমস্ট্যাম্প দেয়া আছে)। এখানকার বীচটা পুরা অন্যরকম। ঘাটের স্ট্রাকচারের পর পাড় বাধানো ফুটপাথ। বাধানো ফুটপাথের নিচেই এক দুই ফুট বালু দেখা যায় আর তারপরেই পানি। দেখতে দেখতেই একজন সাদা চামড়ার লোক সেখান দিয়েই নেমে টুকুস করে পানিতে নেমে গেল। আর পাড়ের কাছেই পানি যথেষ্ট গভীর।

বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পানির দিকে তাকানোও মুশকিল। নারী-পুরুষ জড়াজড়ি করে পানিকে বেডরুম বানিয়ে ফেলেছে। আবার সাথে ক্যামেরায় আরেকজন সেগুলো তুলছে। যা হোক কিছুদুর আগালে পাড় বাধানো ফুটপাথ শেষ। কিছুটা বালুর সৈকত দেখা গেল। রোদের দৌরাত্নে আমাদের ছাতা আর হ্যাটগুলোর কাজের অভাব হল না। পানির ধারে পা ভিজানোর জন্য সর্বমোট ৫মিনিট সময় খরচ করতে পারলাম।

এখানকার বালুগুলো অন্যরকম। বেশ ভারী মনে হয়, কারণ পানি একেবারে সুইমিং পুলের পানির মত স্বচ্ছ টলটলে। তলা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। সাধারণ বীচে ঢেউয়ের চোটে নিচের বালুতে পানি ঘোলা লাগে, কিন্তু এখানে তেমন নয় -- বালুর ঘোলা তীরে আছড়ে পরা ৩-৪ ফুট পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর তীর থেকেই খাড়া গভীর হওয়ার কারণে এখানকার টুরিস্ট স্পীডবোটগুলো একেবারে পাড়ের কাছে নোঙর করে রেখেছে। প্রাকৃতিক জলাধারের তীরে পানি এ্যাত স্বচ্ছ হতে পারে নিজের চোখে না দেখলে সেটা বিশ্বাস করা কষ্টকর।
৩‍১।
ফিরে আসতে আসতে এ্যাত কম সময়ের জন্য আফসোস হতে থাকলো। জোর কদমে পা চালিয়ে আমরা মোটামুটি ঠিক আড়াইটায় ক্রুজারে উঠে পরলাম। আর ৫ মিনিটের মধ্যেই সেটা ছেড়েও দিল।  কেবিনে ঢোকার আগে দেখি সকালের ছবি চমৎকার প্লেটে প্রিন্ট করে বিক্রয়ের জন্য অফার করছে। দুই পিস করে কিনলাম -- একেকটা ১০০ বাথ। মেয়ে তো পুরাই অবাক - বলে মা-বাবা আমরা তো দেখি ফেমাস হয়ে গেলাম!

ফেরার সময়ে আর উপরে না গিয়ে নিচের তলার এয়ার কন্ডিশন্ড জায়গায় বসবো বলে সেখানে ঢুকেও কোনো সিট খালি পেলাম না। সবার শেষে আসলে তো এমনই হওয়ার কথা। তবে সবগুলো সিটের সামনে হেলানো উইন্ডস্ক্রিনের নিচে অনেকগুলো প্লাস্টিকের হালকা চেয়ার স্ট্যাক করে রাখা ছিল। সেখান থেকে কয়েকটা খুলে নিয়ে ঐ হেলানো নিচু জায়গার আশেপাশেই তিনজন বসে পড়লাম। বামে ৩জন মধ্যবয়স্ক জাপানি আর ডানে ৩/৪ জন ককেশান যুবক যুবতি বসলো।

এই সময়ে সাগরের ঢেউ একটু বেশিই মনে হচ্ছিলো। কারণ আমরা যখন চেয়ারে বসে ভাতঘুম দেয়ার চেষ্টায়, তখন সামনের উইন্ডস্ক্রিনে বৃষ্টির মত ঢেউ আছড়ে পড়ছিল‌ো। মাথার উপরে একটু পেছনে বিশাল টিভির স্ক্রিনে তখন মিঃ বিন দেখাচ্ছিলো। নিজের দিকে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম সাগরে পা ভিজিয়ে আসার সময়ে আমাকে এমনি ফিরিয়ে দেয়নি, প্যান্টের পায়ের গুটানো ভাজে কয়েকশ গ্রাম বালুও দিয়ে দিয়েছে।

৩২।
ঝিমাতে ঝিমাতে রোলিংএর কারণে পেছনে আর কেউ কল ছেড়েছে কি না সেটা আর দেখার সুযোগ হয়নি। ফুকেটের কাছাকাছি আসার পর ঢেউ একটু কমেছিলো। ফুকেটের ঘাটে ভেড়ার মিনিট দশেক আগে একজন ক্রু এসে হাজির। হাতে লিস্ট। নাম মিলিয়ে বলে গেল নেমে ২২ নম্বর বাসে উঠতে। এদের ম্যানেজমেন্টে আবার অবাক হলাম। নামার সময়ে আরেকজন ফটোগ্রাফারের তোলা ছবি নিয়ে বসেছিলো সেগুলোও কিনলাম।

ফিরতি পথের গাড়িতে আবার মাথাগুনে লোক উঠলো - কোন সিট খালি থাকলো না। গাড়িও আলাদা, যাত্রীও আলাদা। আমাদের সামনে তিনটা বাচ্চা - সম্ভবত আফ্রিকান কোন দেশের হবে। এর মধ্যে ১৩ বছরের মেয়েটা যে পটর পটর কথা বলতেছিলো বাকী দুইটা খুব একটা বেশি সুযোগ পাচ্ছিলো না (সেই কথাবার্তার মধ্যেই ওর বয়সটা জানা গিয়েছিলো)। মেয়েটা ইংরেজিতেই খুব সুন্দর অ্যাকসেন্টে কথা বলছিলো। আমার কন্যাও খুব মজা করে শুনলেও ওদের সাথে অংশগ্রহণ করলো না। পথিমধ্যে অন্য একটা হোটেলে সেই পরিবার নেমে গেল।

হোটেলে ফিরে শাওয়ার নেয়ার সময় প্যান্টের পায়ার ভাজের সেই বালু পরিষ্কার করতে গিয়ে পুরা একাকার অবস্থা। মেয়ে গোসলের সময় শুনি গুনগুন করে কি যেন গান গাচ্ছে -- অর্থাৎ এই ভ্রমণে তার মুড খুবই ভাল। আজ সন্ধ্যাতেও হালকা শপিং চললো; বাংলা স্ট্রিট ভেদ করে বীচে গেলাম আসলাম। পরদিনের জন্য ফোনে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে গাড়ি ঠিক করলাম কারণ আজ রাত এখানে থেকে পরদিন সন্ধ্যার ফ্লাইটে আমাদের ব্যাংকক যাত্রা আছে।

(পরের পর্ব: ফুকেট ও ব্যাংকক ভ্রমন - ৪)

কোন মন্তব্য নেই: