শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

জল ও জঙ্গলের কাব্যতে বেড়ানো

১।
বেড়ানোর সুযোগ সবসময় আসে না। কিছু মানুষের হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়াতে এবং বিশেষ বিবেচনায় বেড়ানোর সুযোগ হয়ে গেল। মিনিবাস ভাড়া করে হৈ হৈ করতে করতে চলে গেলাম "জল ও জঙ্গলের কাব্য"তে। সময়টা ছিল অক্টোবরের শেষ শুক্রবার (২০১৫)। ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু দেশে সরকারের কৃপায় নিরাপত্তার খাতিরে স্বাভাবিক উপায়ে ফেসবুক দেখা যাচ্ছে না; তাই এবার এখানে শেয়ার করলাম।

২।
ভুল জায়গা টায়গায় নাকাল হয়ে শেষমেষ যখন পৌঁছুলাম তখন প্রায় সকাল ৯টা বাজে। ঢোকার পরেই গাছপালা দেখে মন ভাল হয়ে যায়।

৩।
ভেতরে যতটা সম্ভব গ্রাম্য ছাপ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর চারিদিকে পানিতে টুইটম্বুর বর্ষাকাল হল এটাতে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময়। সম্ভবত সেই বর্ষার কাদার কথা চিন্তা করেই ভেতরে কিছুদুর পর্যন্ত হাঁটার পথটুকু পাকা করে রেখেছে। পুকুর পাড়দিয়ে আরেকদিকে এগোতেই একটা টেবিলে শরবত নিয়ে স্বাগতম জানালো। তারপর এগিয়ে যেতে বললো। গাছের ছায়ায় গায়কের দল গান করছে। অলসভাবে কুকুর শুয়ে রয়েছে -- সবকিছুতেই একটা সহজ ধীরস্থির ভাব।
৪।
আমাদেরকে একটা কটেজ দেখিয়ে বললো, এটা আপনাদের কটেজ। এভাবে সমস্ত ভিজিটরদেরকেই তাঁদের জন্য আলাদা স্থান দেখিয়ে দেয় এখানে - সেটা তিন-চার জনের ফ্যামিলি হোক কিংবা বড় গ্রুপই হোক। গাছপালার ভেতর থেকে একটা খোলা উঠানে বের হয়ে ডানদিকের প্রথম কটেজটাই আমাদেরকে দিয়েছিলো। কটেজের ভেতরে তিনটা খাট, সোফা সেন্টার টেবিল, খাওয়ার টেবিল, কাউচ সবই ছিল। তবে মাথার উপর ঝুলানো বোতলে ভরা বাতিটা সবচেয়ে আগে দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো।


৫।
সোফাটোফাগুলো যথেষ্ট আরামদায়ক। কটেজে একটা শক্তিশালি প্যাডস্ট্যান্ড ফ্যানও ছিল। দুপুরে খাওয়ার পর সকলে যখন অন্যদিকে হাঁটতে গিয়েছিলো, তখন আমি একফাঁকে কয়েকমিনিট ঘুমিয়েও নিয়েছিলাম বলে মনে পড়ে। কটেজের সবদিকেই খোলা ঝাপের জানালা, মাটি দিয়ে লেপা মেঝে।

৬।
খোলা চত্বরে বের হয়ে ডানদিকের প্রথম কটেজটাই আমাদেরকে দিয়েছিলো। এক দফা ফুটবল খেলা চলছে!

৭।
খোলা চত্বরের অপর দিকে হল খাওয়া-দাওয়া রান্নার কেন্দ্র। এখান থেকেই তিনবার প্রতি কটেজে একেবারে বুফে সাজিয়ে দিয়ে আসে। ঢেকিতে চালের আটা বানিয়ে সেটার রুটি আর চিতুই তৈরী করে গরম গরম সার্ভ করে। লাকড়ির চুলায় রান্না হয়। ওপাশে আরেকটা ঘর হল চা-খোরদের স্বর্গ।

৮। এই সেই ঢেঁকি যে কিনা স্বর্গে গেলেও ধান ভানে ... ... (বিকালে অবসর সময়ে ছবিটি তোলা হয়েছিলো)

৯।
চা-খোরদের স্বর্গ। দুই পাশে দুই ড্রাম ভর্তি দুধ চা আর রং চা। মাঝে কফির ব্যবস্থা -- চাইলেই বানিয়ে দেয়। যত খুশি, যতবার খুশি নিন ... ... বুফে সিস্টেম বলে কথা।

১০।
রান্না বান্না শেষ। শেষ আমাদের দুপুরের খাওয়া দাওয়াও।

১১।
এটাই সম্ভবত সকালের রুটি, পিঠার কারখানা!

১২।
জায়গাটা বুফে সরবরাহ কেন্দ্র বলে মনে হচ্ছে।

১৩।
খাওয়া দাওয়ার ছবি নাই। তবে সেগুলো খুব ভাল ছিল, প্রচুর পরিমানে এবং সবগুলো আইটেম খেয়া দেখার মত জায়গা আমার মত ভুড়িয়ালের পেটেও ছিল না। বেড়াতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু বেশি ইয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাই একটু ঘুরে ফিরে দেখাই চারপাশটা

১৪।
ঐ পাড়ে লাল শাক আর মূলা ছিল ক্ষেতে। আমার মেয়ে সম্ভবত এই প্রথম মাটিতে হওয়া তরিতরকারী দেখলো (ছবিতে নাই)।

১৫।
আব্বাজান জিন্দাবাদ ... ...

১৬।
গুগল ইমেজে এই পুকুরটা পুরাই শুকনা দেখায়। এখনকার ম্যাপের ইমেজটা জানুয়ারী ২০১৪তে নেয়া বলে হয়তো।

১৭।
 খোলা চত্বরের দোলনার সামনে থেকে দক্ষিনের দিকে তাকালে এমন দেখায়। বর্ষাকালে আসার লোভ জাগাচ্ছে। গুগল ইমেজে সব সবুজ ক্ষেত-ক্ষামার!

১৮।
খানিকটা বামে তাকালে ... আসলে চত্বর থেকে সোজা তাকালে সেটা দক্ষিন-দক্ষিন-পূর্ব দিক হবে ....

১৯।
সামনের খোলা নিচু জায়গায় নেমে পেছন ফিরে চাইলে কেমন দেখায় ... ...

২০।
আর যদি অন্যদিকে তাকাই। বর্ষাকালে এটা একটা ছোট্ট দ্বীপ হয়ে থাকে নিশ্চয়ই। বাঁশের চৌকি বানানো আছে, তাতে গদি আর বালিশও দিয়ে রেখেছে ... আহা কি শান্তি!

২১।
বাচ্চালোগ খুশি থাকলে বড়দের ডিস্টার্ব দেয় না মোটেও ... ...

২২।
মেয়ে বান্দরামি করলে মানা করা করি নাই: ডেয়ারিং বাপ; ডরাইলেই ডর ... ...

২৩।
নতুন স্টাইল শিখলাম কিন্তু ... ...

২৪।
পদ্মপুকুরের ঘাটের পাশে টিউব দেয়াই ছিল। নিয়ে নামলেই হয়।


২৫।
জায়গাটা ঢাকার অদুরেই পূবাইলে। নিচে ম্যাপ দিয়ে দিলাম। গুগল ম্যাপে সার্চ করলে ভুল জায়গা দেখায়, আসল লোকেশন আরেকটু উত্তরে (আরো ২ কিমি) -- ম্যাপে দেখিয়ে দিলাম। খরচ প্রতিজন ১৫০০/- সারাদিন খাওয়া-দাওয়া (নাস্তা, লাঞ্চ, বিকালে রিফ্রেশমেন্ট) এবং সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে। বাচ্চাদের সম্ভবত ৮০০/-। আলাদাভাবে চমৎকার টয়লেট ও গোসলখানার ইউনিট রয়েছে (কলে পানি, কমোড, প্যান, টাইলস বসানো, বেসিন, আয়না, শাওয়ার ইত্যাদি)।

কোন মন্তব্য নেই: