শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১০

যানজট নিরসনে তাহলে প্রতিদিন হরতালই কি সেরা সমাধান?

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
ইদানিংকালে যানজট নিরসনে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের বেশ কিছু বক্তব্য আমাকে বিষ্মিত করেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, উনি অর্থমন্ত্রী - যোগাযোগ মন্ত্রী নন!

এর মধ্যে একটি হল প্রাইভেট কারে ৫ জন ছাড়া চলা যাবে না। আহা ... ... এতে সঙ্গিযাত্রী হিসাবে কিছু বেকারের নিশ্চিত কর্মসংস্থান হবে। বাসা থেকে ৫ জন বের হল। বাচ্চা স্কুলে নামার পর ৫ জনের কোটা পূরণ করার জন্য সেখান থেকে একজন সঙ্গিযাত্রী উঠবে গাড়িতে (ঘন্টা হিসাবে মজুরি দিতে হবে) .... এভাবে শেষজন নামার আগ পর্যন্ত লোক অফিসে নামবে সঙ্গিযাত্রী উঠবে। ফেরার পথেও একই রকম কাহিনী। সঙ্গিযাত্রী বা প্রক্সি/ডামি যাত্রী হিসেবে কর্মসংস্থানের ফলে কিছু লোকের হয়তো বেকারত্ব দুর হবে (ছিনতাই বৃদ্ধির আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না), তবে উৎপাদনশীলতা বাড়বে না, বরং অতিরিক্ত ভারবহন করার কারণে জ্বালানী খরচ বাড়বে।

নির্দিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা না থাকলে এই রকম ব্যবস্থাটা (যার টেকনিক্যাল নাম কার-পুলিং car pooling) মানুষের ভোগান্তি আরেকটু বাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। যানজট বেশি হয় অফিস টাইমে, অর্থাৎ, অফিস শুরু এবং ছুটির সময়ে। তখন হঠাৎ করে (খুব কম সময়ের ব্যবধানে) বিপুল সংখ্যক লোক রাস্তায় নেমে আসে। নির্দিষ্ট আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এলাকা থাকলে দেখা যায় যে একই আবাসিক/বাণিজ্যিক এলাকা থেকে ৪/৫জন লোক ৪/৫টা গাড়ি ব্যবহার করে একই বাণিজ্যিক/আবাসিক এলাকায় যাচ্ছে। যাত্রা শুরু এবং গন্তব্যস্থল একই হওয়াতে এরা ৪/৫টি গাড়ির বদলে একটি গাড়ি দিয়েই যাতায়াত করতে পারে, যার ফলে রাস্তা থেকে কিছু গাড়ি কমে গিয়ে যানজট কমাতে সাহায্য করে।

ঢাকায় আমার জানামতে নির্দিষ্ট সময়ে এরকম নির্দিষ্ট যাতায়াতের জন্য কার শেয়ারিং বা কার পুলিং খুব ভালভাবেই বিদ্যমান। অফিসের কর্মকর্তা যাত্রাপথে অন্য সহকর্মীদেরকে তার গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু এক বাসা থেকে বের হওয়া ৪ জনের গন্তব্য ভিন্ন হলে তখন কী হয়? বাড়ির একজন সিটি কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা, ওনাকে কলেজে নামিয়ে তারপর ছেলে আর ছেলের বউয়ের অফিস মিন্টো রোডের পাশের রাস্তায় (ওল্ড এলিফ্যান্ট রোড); এরপর কনসালট্যান্ট কর্তার ৩/৪টি কর্মস্থলের যে কোনো একটিতে (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট / মগবাজারের কনস্ট্রাকশন ফার্ম/ মনিপুরিপাড়ার কনস্ট্রাকশন ফার্ম / মহাখালি / অন্য কোনো অফিস)। এরকম একটা কর্মঠ ও কর্মব্যস্ত পরিবারের অতি প্রয়োজনীয় গাড়ি চালাতে তবে এরপর থেকে প্রথমে উল্লেখ করা সঙ্গিযাত্রী বা ডামি যাত্রী ছাড়া পথ খোলা থাকবে না। আর তা না করতে চাইলে হয় ক্যাব বা রিক্সা ... ... যা যানজট কমাবে কীভাবে সেটা বুঝি না।

বিদেশের কিছু কিছু শহরে কার পুলিং সফলতার সাথে প্রযুক্ত হয়েছে .... .... প্রশ্ন হল কীভাবে?
এসব শহরে পরিকল্পিত ভূমির ব্যবহার প্রযুক্ত হয়েছে, ফলে নির্দিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠেছে। এছাড়া ঐ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা যুক্ত করে এমন নির্দিষ্ট রাস্তা আছে। আসা এবং যাওয়ার জন্য দুইপাশে নির্দিষ্ট লেন ছাড়াও রাস্তার মাঝ বরাবর একটা অতিরিক্ত বিশেষ লেন আছে। এই লেনে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এই লেনটির বিশেষত্ব হল, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এটি দিয়ে আবাসিকের দিক থেকে অফিসের দিকে আর দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উল্টাদিকে (অফিস-আবাসিক) চলাচলের জন্য খোলা থাকে। অর্থাৎ যেদিকে চাহিদা বেশি সেদিকে সেবা দেয়। এই লেন ব্যবহার করে অনেক দ্রুত যাওয়া যায়, কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে এটা ব্যবহার করা যায়। বাস কিংবা কমপক্ষে ৪জন যাত্রী আছে এমন কার বিনা বাঁধায় এই লেন ব্যবহার করতে পারে। অন্যরা ব্যবহার করতে চাইলে উচ্চমাত্রায় টোল দিয়ে করতে পারে। অর্থাৎ কার পুলিং করলে বিশেষ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে ... ... ... "পেটে খেলে পিঠে সয়', ঢাকায় প্রাইভেট কারের জন্য এমন কোন সুবিধার ব্যবস্থা আছে কি? আর, প্রাইভেট কারের বদলে পাজেরো (পাবলিক না হয় নির্লজ্জ্ব মন্ত্রী বা এমপিদের মত বিনাট্যাক্সে নাই কিনলো) ব্যবহার করা শুরু করলে তখন নিয়মটা কেমন হবে?

এরপর আরেকটা উদ্যোগের কথা জেনে হাসবো নাকি কাঁদবো তা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। এটা হল জোড় আর বেজোড় সংখ্যার প্রাইভেট কার বিষয়ক। অন্যান্য গাড়ির মতই ১০০% ট্যাক্স দিয়ে কেনা এই গাড়িগুলোর দোষ হল, এরা সংখ্যায় বেশি। তাই একদিন জোড় সংখ্যা বিশিষ্ট ও অন্যদিন বেজোড় নম্বরবিশিষ্ট কার রাস্তায় চলাচল করতে পারবে। যাদের একটি মাত্র গাড়ি তারা তাহলে বাকী কর্মদিবসগুলোতে কীভাবে যাতায়াত করবে? এমনতো নয় যে যথেষ্ট পরিমান গণপরিবহন ব্যবস্থা করা সত্বেও দুষ্টু মানুষ ওগুলো ব্যবহার না করে শুধু শুধু গাড়ি বের করে রাস্তায় যানজট বাড়াচ্ছে। বরং অকার্যকর এবং অনুপযোগী গণপরিবহন ব্যবস্থায় অতীষ্ট হয়েই স্বল্প আয়ের এই দেশেও, মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়েই, অন্য দেশের চেয়ে আড়াইগুন দামে প্রাইভেট কার কিনছে। নাহলে কোন মধ্যবিত্তের ঠেকা পড়েছে যে বেতন দিয়ে ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে, এদের তেল/পার্টস্ চুরি ও মোবাইল হারানো সহ্য করে, রিক্সার ঘষা খেয়ে, ২/৩ ঘন্টা গ্যাসের জন্য সিরিয়াল ধরে গাড়ি চালানোর?

ট্যাক্সির ধারণাটাই হল যাত্রী এতে উঠে কোথায় যেতে হবে যাত্রী তা বলবে - শহরের যে কোনো জায়গায় যেতে এরা বাধ্য ... ... অথচ ঢাকায় ক্যাব/ট্যাক্সিকে গন্তব্যে যাবে কি না সেটা জিজ্ঞেস করতে হয় আগেই, এবং ওরা সেখানে যেতে চায় না; আবার গেলেও ৬০ টাকার ভাড়া ১৫০টাকার কমে যায় না। আর এখানে প্রাইভেট কার ব্যবহারকারীদেরকেও ঠেলে দিলে আরও কী তুঘলকী কাণ্ড ঘটবে তা কল্পনা করা দুরূহ।

গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত না করলে এবং ট্রিপ ডিমান্ড না কমালে যানজট কমানোর উদ্যোগগুলো সফল হবে না - এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না। গণপরিবহণ প্রসঙ্গে গত ২২শে ডিসেম্বর রাতে দেশ টিভিতে সোজাকথা নামক টক-শোতে আমন্ত্রিত অতিথি জনাব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া সাহেব (শুরু থেকে দেখিনি বলে ওনার পদমর্যাদা জানা হয়নি) সরকারের তরফ থেকে যে সকল উদ্যোগের কথা জানালেন সেগুলোকে আমার চমৎকার এবং সঠিক মনে হল। উনি বলেছিলেন যে, পর্যায়ক্রমে (১০-১৫ বছর) তিনটি রুটে MRT / মেট্রো ট্রেন চালু করা হবে। দেশের বিদ্যূৎ ব্যবস্থা, ভূতত্ব এবং খরচ বিবেচনা করে এগুলো যতদুর সম্ভব মাটির উপরে এবং উড়াল লাইনে (স্কাই ট্রেন) করা হবে। সামান্য কিছু জায়গায় হয়তো স্থানাভাবে বাধ্য হয়ে পাতালে যেতে হতে পারে। তাহলে সিঙ্গাপুর বা ওসাকা/টেকিওর মতই কিছু উপরে আর কিছু নিচে হচ্ছে। আর, ব্যাংককের মতই রাস্তার ডিভাইডার থেকে কলাম তুলে উপরে লাইন হবে। MRT করতে প্রচুর অর্থ লাগবে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের উপর বিরাট ঋনের বোঝা চাপিয়ে দেবে।

তবে আগামী বছরেই যা হবে সেটা হল কিছু কিছু রুটে BRT বা বাস রেপিড ট্রানজিট। এটাতে উপরোল্লিখিত কার পুলিং লেনের মতই বাস চলাচলের জন্য রাস্তায় বিশেষ সুরক্ষিত লেন আলাদা করা হবে। এখানে চলাচলের জন্য সুপরিসর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস আনা হবে (কোরিয়া বা ভারত থেকে এবার যেগুলো আসছে সেগুলো নয়)। বাসে ওঠা-নামা করার জন্য প্ল্যাটফর্ম এমন হবে যেন অতি দ্রুত ওঠা/নামা যায় (মেট্রো'র মতই)। বিভিন্ন ক্রসিংএ ও সিগনালে এই বাসগুলো অগ্রাধিকার পাবে। ফলে বাসে যাতায়াত হবে আরামদায়ক এবং প্রাইভেট গাড়ির চেয়ে দ্রুততর। সারা ঢাকাতে এই সুবিধা ছড়ানোর জন্য দুই তিনটি প্রাইভেট কম্পানিকে লিজ দেয়া হবে। এজন্য পরিবহন কম্পানিগুলো একিভূত করার জন্য কাজ চলছে। MRT'র তুলনায় কম যাত্রী বহন করলেও BRTতে খরচ সেই তুলনায় অনেক কম হবে।

ট্রিপ ডিমান্ড কমানোর প্রসঙ্গে চমৎকার একটা উদ্যোগ ছিল এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক বন্ধের আইডিয়াটা। এখন পর্যন্ত আমি এই উদ্যোগের সুফল ভোগ করছি। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশের কারণেও ট্রিপ ডিমান্ড বা যাতায়াত চাহিদা কমেছে। এভাবে অফিসের কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে (ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি, অনলাইন বুকিং, অনলাইন আবেদন পত্র জমা দেয়া ইত্যাদি) ততই যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা কমে তা যানজট কমানোতে সাহায্য করবে।

এরকম যৌক্তিক কাজকর্মগুলো এ বিষয়ে পেশাদারগণ যাতে দক্ষভাবে করতে পারে সেটা নিশ্চিত করলেই মন্ত্রী মহোদয় সকলের অকুন্ঠ সমর্থন পাবেন। যানজট বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা বুঝাতে অযথা উদ্ভট কাজকর্ম করার প্রয়োজন নাই। নাহলে দেখা যাবে আজ প্রাইভেট কার বন্ধ করার পর উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীতে সরকার-ই প্রতিদিন হরতাল না ডেকে বসে।

শেষে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত, জাতীয় স্থল পরিবহন নীতিমালা, এপ্রিল ২০০৪ হতে ঢাকা মহানগরীর জন্য নীতিমালা অংশটি আপনাদের জন্য সংযুক্ত করলাম। এতে চমৎকার দিক নির্দেশনা আছে।

এইটা পড়ার আগেই বলি, এটা ডাউনলোড করতে পারবেন এখানে ক্লিক করে (মাত্র ৪১৫ কিলোবাইট)। তবে ওটার বাংলা লেখাগুলো কোনোভাবেই ইউনিকোডে আনতে না পেরে শেষে টাইপ করে ফেললাম।

৯. ঢাকা মহানগরীর জন্য নীতিমালা

৯.১ পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম

৯.১.১ সরকার ঢাকা নগরীর পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করবে।
৯.১.২ গণপরিবহনের উন্নতি, যানজট হ্রাস ও পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করবে। এ ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
     ১. মহানগরীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী আধুনিক গণ-পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা প্রণয়ন
     ২. অধিক সংখ্যায় সুপরিকল্পিত বাস রুট চালু;
     ৩. গণ-পরিবহন ব্যবস্থায় উচ্চমানের যানবাহন ব্যবহার এবং সার্ভিসের মান বৃদ্ধি;
     ৪. বেসরকারী খাতের বাস অপারেটরদের অংশগ্রগণের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি; 
     ৫. বাস সার্ভিসকে অগ্রাধিকার প্রদান; 
     ৬. সব ধরণের যানবাহন থেকে দূষণ হ্রাস;
     ৭. সড়কের উপর পার্কিং এবং সড়কের অনধিকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ;
     ৮. ট্রাফিক ব্যবস্থারনার উন্নয়নে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ;
     ৯. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার;
     ১০. পদযাত্রীদের জন্য উন্নততর সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি; 
     ১১. গণপরিবহন ব্যবস্থার মূল্যায়ন;
     ১২. সকলের জন্য বিশেষ করে দূর্ঘটনা প্রবণ (vulnerable) সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য উন্নততর নিরাপত্তা ব্যবস্থা; 
     ১৩. পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা; এবং
     ১৪. উন্নত ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা।

৯.২ অযান্ত্রিক যানবাহন

৯.২.১ প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিক্সা চলাচল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। অপ্রধান সড়কে চলাচলকারী রিক্সাকে কেবল প্রধান প্রধান সড়কের নির্ধারিত স্থানেই ক্রসিং করতে দেয়া হবে।
৯.২.২ সড়ক সংযোগস্থল (intersection) উন্নতিকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সড়ক সংযোগস্থলের ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে বজায় রাখার স্বার্থে সড়ক ও ফুটপাথের সন্ধিস্থল (curb side) রিক্সামুক্ত করা হবে।
৯.২.৩ শহরতলীর যেসব এলাকায় বাস নেটওয়ার্ক অপেক্ষাকৃত স্বল্প এবং/অথবা চলাচল কম সে সব এলাকায় ফিডার সার্ভিস হিসেবে রিক্সা ব্যবহার হবে।
৯.২.৪ আগামী ১০ বছরে রিক্সার ট্রিপ অর্ধেকে কমিয়ে আনা হবে।

৯.৩ অটো রিক্সা

৯.৩.১ ২-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যানবাহনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে ঢাকায় ৪-স্ট্রোক সিএনজি অথবা পেট্রোল চালিত অটো-রিক্সা ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৯.৩.২ প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিক বাস সার্ভিস প্রবর্তনের পর ঐসব রুটে পর্যায়ক্রমে অটো-রিক্সা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
৯.৩.৩ কেবলমাত্র বাস এবং রেল পরিবহনের ফিডার সার্ভিস হিসেবে অটো-রিক্সা ব্যবহার উৎসাহিত করা।
৯.৩.৪ চূড়ান্ত পর্যায়ে অটো-রিক্সা চলাচল বন্ধ করা।

৯.৪ প্রাইভেট কার

৯.৪.১ জরুরী সার্ভিস সমূহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (যেমন সড়ক পার্শ্বে পণ্য বোঝাই-খালাসের জন্য সাময়িক বিরতিস্থল নির্ধারণ) রেখে সড়কের উপরে পার্কিং নিয়ন্ত্রণের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
৯.৪.২ পুরাতন ঢাকা এবং এরূপ অন্যান্য যে সকল স্থানের সড়ক কার ব্যবহারের জন্য অনুকুল নয় সে সকল স্থানে শুধু পায়ে চলার ব্যবস্থা প্রবর্তনের কার্যক্রম গ্রহন করা।
৯.৪.৩ ২০২২ সালে ঢাকার প্রাইভেট কারের ব্যবহার মোট যান্ত্রিক যানবাহন ট্রিপের ৩০% এর মধ্যে সীমিত রাখা।

৯.৫ ট্রাক

৯.৫.১ সকল নতুন বাণিজ্যিক ও শিল্প স্থাপনার জন্য সড়কের বাইরে ট্রাকে পণ্য বোঝাই-খালাসের প্রয়োজনীয় সুবিধা গড়ে তোলা।
৯.৫.২ ঢাকার রাস্তায় দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে পর্যালোচনা করা।
৯.৫.৩ কন্টেইনার ট্রাকে মালামাল ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য নতুন সুবিধাদি সৃষ্টি করা।

৯.৬ রেলওয়ে

৯.৬.১ জয়দেবপুর-নারায়নগঞ্জ লাইনে রেল কমিউটার সার্ভিস প্রবর্তন।
৯.৬.২ ২০১২ সালের মধ্যে কমিউটার রেল সার্ভিসের মাধ্যমে দৈনিক ২,০০,০০০ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।
৯.৬.৩ গণ-পরিবহন (Mass Transit System) পরিকল্পনা প্রণয়ন, পাতাল, এলিভেটেড ও সার্কুলার রেলওয়ে ব্যবস্থা প্রবর্তন, পরিবহন সেক্টরে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগীতায় সমীক্ষা পরিচালনা করা।

৯.৭ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

৯.৭.১ ঢাকা মহানগরীর জন্য একটি পূর্নাঙ্গ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন।
৯.৭.২ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন কারিগরি কৌশল প্রবর্তন।
৯.৭.৩ পদযাত্রীদের জন্য উন্নততর সুবিধাদি এবং একই গ্রেডে নিরাপদ ক্রসিং সুবিধার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচী প্রণয়ন।
৯.৭.৪ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাদি, বিশেষত: ঝুঁকিপ্রবণ সড়ক ব্যবহারকারীগণের (vulnerable road users) বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ।
৯.৭.৫ কোন নতুন উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে ট্রাফিকের প্রতিক্রিয়া নিরূপণের (traffic impact assessment, TIA) সমীক্ষা করা এবং সে মতে এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাদি সৃষ্টি করা।

৯.৮ প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি

৯.৮.১ সাধারণভাবে ডিটিসিবি'র ভূমিকা হবে সমন্বয়কারীর। তবে একে নিম্নবর্ণিত বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে শক্তিশালী করা হবে-
     ১. প্রকল্পের ভৌত (physical) বাস্তবায়ন
     ২. প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার নির্ণয়
     ৩. যৌথ দায়িত্ব সম্পন্ন প্রকল্পের সমন্বয় সাধন
৯.৮.২ ডিটিসিবি'র বিশেষ দায়িত্ব হবে যাত্রীর চাহিদা যথাযথভাবে পূরণের লক্ষ্যে একটি নিরাপদ, দক্ষ ও আধুনিক বাস রুট নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা। রুট ইজারা (route franchising) ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডিটিসিবি নিজস্ব কৌশল বা পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে।

1 টি মন্তব্য:

maq বলেছেন...

ঢাকাকে ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া অন্য কোন ফলপ্রসু আইডিয়া মাথায় আসছেনা। আমাদের ঢাকামুখীতা কমানো দরকার। "দেশের সবকিছু ঢাকাতেই হবে, সুয়ৌগ থাকলে পরে অন্য জায়গায় হবে" - এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নাহলে দেশের সব চাপে জর্জরিত ঢাকার ভবিষ্যতে যে কী আছে কে জানে!