রবিবার, ২ মে, ২০১০

একটা অভিনব প্রতারণার ব্যর্থ প্রয়াস - সতর্ক থাকুন

(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)
অনেকগুলো লেখা মাথায় ঘুরছে। লেখার জন্য ফাইল খুলে সেভ করে রেখেছি কিন্তু নানা ব্যস্ততায় লেখা হয় না। কিন্তু এই ঘটনাটা চেপে রেখে দেরি করা ঠিক হবে না মনে হলো।

গতপরশু (৩০শে এপ্রিল ২০১০, শুক্রবার) দুপুরে আমার শাশুড়ির মোবাইল ফোনে (গ্রামীন) অপরিচিত নম্বর (01749 872178) থেকে একটা কল আসে। ফোনকারী বলেন যে আপনি খুব লাকি, গ্রামীন ফোন একটা প্রমোশনের জন্য তাঁদের সমস্ত সাবস্ক্রাইবারদের মধ্য থেকে লটারি করেছে, এতে আপনি ৩য় হয়েছেন। আপনি পুরস্কার হিসেবে ১৬৯০০ টাকার টকটাইম পাচ্ছেন। আপনার মোবাইল থেকে ব্যালেন্স চেক করে দেখুন যে টাকাটি পেয়েছেন কি না। পেয়ে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে জানান। যদি ১ম ২য় যারা হয়েছেন তাঁদের আগে আপনার কাছে থেকে কল পাই, তবে আরও পুরস্কার আছে।

শাশুড়ি *৫৬৬# চেপে ব্যালেন্স চেক করে দেখেন যে আসলেই ব্যালেন্সে ১৬৯০০ টাকা যুক্ত হয়েছে। ফোন করে জানালেন। তখন ওপাশ থেকে বলে আপনি আসলেই খুব লাকি কারণ আপনি সবার আগে এটা জানিয়েছেন, এতে পুরস্কার হিসেবে একটা মোটরসাইকেল পেয়েছেন। শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন এই ১৬৯০০ টাকা কি ক্যাশ করা যাবে ... উত্তরে জানালো - না করা যাবে না, তবে দুই বছর পর্যন্ত এই ব্যালেন্স ব্যবহার করা যাবে। এরপর বললেন যে বুঝতেই পারছেন যে আমি একজন বয়স্ক মহিলা ... আমি মোটরসাইকেল দিয়ে কী করবো? উত্তরে জানালেন যে আপনি এর বদলে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্যাশও নিতে পারেন। তবে এর আগে একটা কাজ করতে হবে।

শাশুড়ি আম্মার মনে একটু সন্দেহ দোলা দিচ্ছিলো, কিন্তু ব্যালেন্স চেক করাতে গ্রামীন ফোনেরই অফিসিয়াল কিছু বলে হালকা বিশ্বাস করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেই আরেকটা কাজ করতে হবে শুনলেন তখনই আবার সন্দেহটা গাঢ় হলো যে: নাহ্ এটা ফ্রড কেস মনে হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে বললো যে আপনাকে ৯ হাজার টাকা জমা দিতে হবে এখুনি। শাশুড়ি আম্মা জিজ্ঞেস করলেন যে, টাকা কেন? ....
গ্রা.ফো.: ... আরে বুঝলেন না, এসব কাজে সরকারি ভ্যাট আছে না। ওসব খরচ তো আপনাকেই দিতে হবে।

শা.আ.: আমি আগে হাতে টাকা পাই, তারপর না ভ্যাট দিবো। হাতে টাকা না আসলে ভ্যাট কোত্থেকে দিবো?
গ্রা.ফো.: ... এইতো বেশি বুঝতে শুরু করেছেন। টাকাটা যতদ্রুত সম্ভব জমা দিতে হবে।

শা.আ.: আমি এখন টাকা দিবো কোত্থেকে। আজ শুক্রবার, আগামীকাল ১লা মে বাদ দিয়ে আগামী রবিবারে ব্যাংক খুললে পরে টাকা তোলা যাবো, তার আগে টাকা দেয়া অসম্ভব।
গ্রা.ফো.: বাসায় টাকা আছে কত?

শা.আ.: এই ধরেন হাজার দেড়েক আছে বাজার খরচের জন্য।
গ্রা.ফো.: ঐটাই জমা দেন। এখুনি ফ্লেক্সি করে পাঠিয়ে দেন ... আমরা যেন প্রসেসিং শুরু করতে পারি।

শা.আ.: কিন্তু ... .
গ্রা.ফো.: এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে ১২১এ ফোন করেন। ওখানেই বিস্তারিত ভাবে মেসেজ শুনতে পারবেন।

তখন কল দিলেন ঐ নম্বরে। যথারীতি একটা অটোমেটেড কন্ঠ বিভিন্ন অপশন দেয়া শুরু করলো ... অমুক জানতে চাইলে ১ চাপুন; মটরসাইকেল সম্পর্কে জানতে চাইলে ... ...
বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিলেন। সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন করে ঝাড়ি

: ফোন কেটে দিলেন ক্যান? এজন্য মানুষের উপকার করতে হয় না।
শা.আ.: আচ্ছা কিভাবে কী করতে হবে এটা আমার হাজবেন্ডকে বলেন।

এরপর ওরা আমার শ্বশুর সাহেবকে অনেককিছু বুঝালেন। শ্বশুর সাহেবও ফ্লেক্সি করতে বেরিয়েছেন এমন ভাব নিয়ে রাস্তায় গেলেন যেন ঐপাশের লোক রাস্তার গাড়ির শব্দ শুনতে পায়। ফোনে বললেন, ফ্লেক্সি করার লোক ভেতরে গেছে কী একটা আনতে, আপনি বরং কোন নাম্বারে পাঠাতে হবে সেটা বলেন।
অপর দিক থেকে নম্বর দিল (01928 908707)। শ্বশুর সাহেব ফোন কেটে দিলেন।

কিছুক্ষণ পর ঐদিক থেকে আবার ফোন করে শাশুড়িআম্মাকে ঝাড়ি ... ... আপনার হাজবেন্ড একটা ফাউল লোক ... (গালিগালাজ)। ফোন কেটে দেয়া হলো।

অবাক ব্যাপার হলো, কিছুক্ষণ পর একাউন্ট চেক করে দেখা গেল সেই ১৬৯০০ টাকা নাই। শুধু শুধু এই ফোন টোন বাবদ ৩০ টাকার টকটাইম গচ্চা।

ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু শুধু শুধু বানিয়ে মিথ্যা বলার এবং হোক্স ছড়ানোরও কোনো প্রয়োজন নাই। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিলো আর যেখানে ফ্লেক্সি পাঠাতে বলা হয়েছিলো, সেই নাম্বারগুলো লেখা আছে শ্বশুর আব্বার কাছে। রাতে উনি (এবং আমি) বাসায় ফিরলে সেগুলো এই পোস্টে যুক্ত করে দেবো।

আমার কাছে অবাক লাগলো যে এটা কীভাবে সম্ভব! গ্রামীন ফোনের কিছু কি হ্যাক করে এমন ফ্রড করা সম্ভব ... নাকি ... কর্তৃপক্ষের অগোচরে ভেতরের কিছু লোক এমন কারবারের সাথে জড়িত?

==
ব্যাপারটায় সচেতন থাকা দরকার। আর এইরকম ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। আমার আগের মাঝরাতে ব্যাপক বিনোদন নামক পোস্টেও মুঠোফোন দিয়ে একই রকম সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। টেকনিক্যাল কারণে (ব্যালেন্স পরিবর্তন, কল সেন্টার) এই ঘটনাটা আগের ঘটনাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

==
এর আগে (বছরখানেক হতে পারে) এক চ্যাংড়া মিস কল দিয়ে দিয়ে শাশুড়ি আম্মাকে জ্বালাতো। একবার কল ব্যাক করে ঝাড়িও দিয়েছেন। বাসায় এসে আমাকে বললো দেখতো বাবা ... এটার একটা বিহিত করা যায় কি না। আমি তখন দেখি যে ওটা মধ্যপ্রাচ্যের একটা নাম্বার। আম্মাতো নাম্বার খেয়াল না করেই কলব্যাক করেছেন! ..... .... শুনে আম্মার রিয়্যাকশন: তাইতো বলি আমার ২০০ টাকা এ্যাত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল কীভাবে!

==
আরেকবার (কয়েক বছর আগে) শ্বশুরের বাসার ল্যান্ডফোনে এরকম মিষ্টি কণ্ঠের নীহারিকা নামক মেয়ে ফোন করে পুরস্কার জেতার কথা জানিয়েছিলো (আমিই সেই ফোন রিসিভ করেছিলাম!)। পরদিন যাওয়ার জন্য একটা ঠিকানাও দিয়েছিলো। কিন্তু কে আর সেধে সেধে অপহৃত (মুক্তিপণ দাবির শিকার) হতে যায়!

==
২০০৩ সালে আমার তৎকালীন অফিসে (গণপূর্ত) ফোন করে এক সন্ত্রাসীর (কালা জাহাঙ্গীর) নামে চাঁদা চেয়েছিলো। অনুনয়ের সুর শুনে আমি ঠিক সন্দেহ করেছিলাম। আমি উল্টা ওনার কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলাম। এর সপ্তাহখানেক পরেই পেপারে এরকম দুই ফ্রড গ্রেফতারের ঘটনাও বের হয়েছিলো।

1 টি মন্তব্য:

Saiful Alam Saroar বলেছেন...

এমন ঘতনা আমি আরও শুনেছি।
আমার মনেহয় গ্রামীণফোনের কিছু অসাধু লোক এসব করে।
তা না হলে ব্যালান্স পরিবর্তন করবে কিভাবে ?