মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

কম্পিউটার গেম: সিমসিটির লিনাক্স ভার্সান

অত্যন্ত প্রিয় একটা গেম ছিল SimCity। লিনাক্সে একটা আছে নাম LinCity। বছর দেড়েক আগে আমার বাসার সেলেরন ডেস্কটপ/হার্ডিতে খেলেছিলাম। তখন তেমন একটা ভালো লাগেনি ... কারণ কিছুদুর পর আর ডেভেলপমেন্টের রাস্তা খুঁজে পেতাম না ... সেতু বানানো যেতো না .. ইত্যাদি (মূল সিমসিটি খেললে এটা একটু পানসে লাগবেই)।

আজ এই পোস্ট দেখে ভাবলাম সিমসিটির বিকল্প কিছু নাই নাকি ... .... তারপর লিনসিটির পেইজে গিয়ে দেখি নতুন ভার্সানটার স্ক্রিনশট। এটাতো জোস্ মনে হচ্ছে .. ... কিন্তু ডাউনলোড করে খেলার সময় কি আদৌ পাবো   :-(  

এই গেমটা সাইনাপ্টিক থেকেই ইনস্টল করা যায়। :)
উইন্ডোজের জন্যও ডাউনলোড করা যায়।



এছাড়া সিমসিটির কোডকে মূল কোম্পানি OLPC (ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড) প্রোজেক্টের জন্য ওপেনসোর্স করে দিয়েছিলো। নতুন এই ওপেনসোর্স গেমটার নাম হলো মাইক্রোপলিস। এটা খুব তাড়াতাড়িই জোস্ হয়ে উঠবে মনে হচ্ছে ... ... খেলতে মন চায় কিন্তু সময় পাই না  :-(  :-(
ডাউনলোড পেজ

সিমসিটি ৩০০০ আনলিমিটেড ভার্সানটা লিনাক্সের জন্যও ছেড়েছে বলে দেখলাম ওদের ওয়েবপেজে। ৫০ ডলারের মত দাম পড়বে। এইটা চাইলেও কি দেশ থেকে কেনার কোনো উপায় আছে?





(আমাদের প্রযুক্তি ফোরামে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০০৯

হলিউড ব্লকবাস্টার সিনেমা তৈরীতে লিনাক্স ব্যবহৃত হয়!

এটা একটা অনুবাদ। মূল রচনা এখানে: http://news.softpedia.com/news/Hollywoo … 5571.shtml

হলিউডের Disney/Pixar, DreamWorks Animation, Sony, ILM এবং অন্য সিনেমা তৈরীকারক স্টুডিও তাদের সিনেমা তৈরীর জন্য লিনাক্স ব্যবহার করছে।  বেশিরভাগ লোকই এই কথাটা না জানলেও বাস্তবে যেই ব্লকবাস্টার ছবিগুলো হলে চলছে সেগুলো সবই লিনাক্স ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে। হলিউডে উইন্ডোজ বা ম্যাকিনটোশের মত অন্য অপারেটিং সিস্টেমের বদলে লিনাক্স ব্যবহৃত হওয়ার কারণটা খুব সাধারণ: এটা ভালতর, দ্রুতগতির এবং সস্তা।

হলিউডে লিনাক্সকেই আধুনিকতম সিস্টেম ধরা হয়, এবং সোনি, ডিজনি/পিক্সারের মত বড় বাজেটের সিনেমা তৈরীকারক স্টুডিওগুলোর ৯৫%এর ডেস্কটপ এবং সার্ভারে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং এনিমেশন তৈরীর জন্য লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। হ্যাঁ .. হ্যাঁ .. আমি জানি যে আপনাদের অনেকেই বলে উঠবেন - "এটা সত্য নয়", "এটা ঠিক হতে পারে না" কিংবা, "আমি শুনেছিলাম যে ওরা ম্যাক ও.এস. এক্স ব্যবহার করে"; কিন্তু আসলে আমার কথাই সত্য এবং আপনি যেসব CGI-ব্লকবাস্টার সিনেমা দেখেন লিনাক্স দিয়েই ওগুলোর রেন্ডারিং করা হয়, কারণ এটা অন্য অপারেটিং সিস্টেমর চেয়ে তাড়াতাড়ি হয়। (CGI = Computer-Generated Imagery)

উদাহরণ হিসেবে Scooby Doo সিনেমার কথা বলা যায়; এটা Rhythm and Hues স্টুডিওতে তৈরী হয়েছে এবং পুরা সিনেমাটা রেন্ডার এবং উন্নত করা হয়েছে একটা বিশেষ কাস্টম-মেড সফটওয়্যার দ্বারা যা লিনাক্স সিস্টেমে চলে। এছাড়া The Matrix, Titanic, Gladiator, Superman Returns, What Dreams May Come, Cats and Dogs, Shrek, The Perfect Storm, Prince of Egypt, The Road to El Dorado, Antz, Chicken Run, Deep Blue Sea, Star Trek: Insurrection, Fantasia 2000, Men in Black, Hollow Man এবং আরো আরো অনেক সিনেমা লিনাক্স সফটওয়্যার (যেমন: RAYZ, Maya or Shake) ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে। আবার ভেবে বসবেন না যে, এই সিনেমাগুলো তৈরীতে ব্যবহৃত সবগুলো সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া গেছে; বরং সবগুলোর দামই ৮০০০ - ১৫০০০ ডলার বা এর চেয়ে বেশি; হলিউডে এটা ব্যাপার না।

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে খুবই জনপ্রিয় Shrek যেটা DreamWorks Studios-এ তৈরী হয়েছে; এটা রেন্ডার করতে ১০০০+ প্রসেসর, ৮০% লিনাক্স ও ২০% IRIX ব্যবহৃত হয়েছে। DreamWorks যেই যেই রেন্ডার টাওয়ার তৈরী করেছিলো তাতে ডুয়াল ১গিগাহার্জ পি৩ ২গিগা ড়্যাম যা বসানো হয়েছিলো একটা 1RU প্যাকেজে ৪১ ইউনিট উচ্চতায়, যা ৪০-৫০ ফুট লম্বা ডেটাসেন্টার ড়্যাক লাগে এমন কম্পিউটারের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন। DreamWorks তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব তৈরী সফটওয়্যার যেমন ব্যবহার করেছে, তেমনি বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত সফটওয়্যারও ব্যবহার করেছে। তাদের নিজস্ব তৈরী সফটওয়্যারগুলো SGI IRIX অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরী; আর এটা থেকে তৈরী অ্যাপ্লিকেশনগুলোর উইন্ডোজ বা ম্যাকের চেয়ে লিনাক্সের সাথে সাদৃশ্য বেশি।
http://news.softpedia.com/images/news2/Hollywood-Loves-Linux-3.png
উপরের ছবিতে DreamWorks স্টুডিওর লিনাক্স রেন্ডার টাওয়ার দেখা যাচ্ছে।

সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

হীনমন্যতার জুজুবুড়ি

(সচলায়তনে প্রকাশিত)

অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচ চলছে। মাত্র দুই/তিনদিন আগে একজন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বললেন যে বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট না খেলাই ভালো। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে দারুন লড়ছে ... বলা যায় না হয়তো হার এড়াতে লড়তে হবে অস্ট্রেলিয়াকেই ...। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড হল ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রফেশনাল এবং হারামি দল, সাথে সাউথ আফ্রিকাকেও যোগ করা যায়। কোনো দেশ ওদের সাথে খেলতে যাওয়ার আগেই মিডিয়াতে বিভিন্ন অকথা, কুকথা বলে আলোড়ন তোলা হয় ... অমুক প্লেয়ারকে ঠেকানোর কৌশল আবিষ্কার করেছি, ওরা তো খেলাই পারেনা ইত্যাদি। এছাড়া বোলিং এ্যাকশন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠতি ভালো বোলারদেরকে হেনস্থা করতে এদের জুড়ি মেলা ভার ... ...।

ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে নোংরা কথা বলা কিন্তু প্রফেশনালিজম। স্লেজিং-ও এরকম একটা টেকনিক। ওগুলো বলে তাদের নিজেদের সরাসরি কোনো লাভ না হলেও প্রতিপক্ষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ওদের উদ্দেশ্য থাকে প্রতিপক্ষের মনে একটা খুঁতখুঁত বা সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়ে মানসিকভাবে একটু দূর্বল করে দেয়া যেন খেলার সময় ওরা ওদের স্বাভাবিক নৈপূন্য দেখাতে না পারে। এই ধরণের মনের খেলা মোকাবেলা করার জন্য আবার প্রতি দলেই সাইকোথেরাপিস্ট রাখা হয়।

সোজা সাপ্টা কথায়, কাউকে কাবু করতে চাইলে সেটা মনকে কাবু করা দিয়ে শুরু করতে হয়। খেয়াল করে দেখুন: ধার্মীক লোকজনের সামনে আমরা মাথা নিচু করে কথা বলি, দ্বীনের দাওয়াত দিতে আসলে অনিচ্ছা থাকলেও তাদের মুখের উপর না বলতে পারি না ... মাথা নিচু করে পালানোর চেষ্টায় থাকি। কারণ ছোটবেলা থেকেই কৌশলে মনে মধ্যে গেঁথে দেয়া হয়েছে যে ধর্মের রীতিনীতিগুলো পালন করা ভালো, না করা খারাপ/পাপ ... কাজেই পাপবোধটা মনকে হীনমন্য করে তোলে। আর এই হীনমন্যতার সুযোগ নিয়ে কত অযোগ্য বদমাইশ লোক আমাদের উপর কর্তৃত্ব করে বা করার চেষ্টায় রত থাকে।

এই ব্যাপারটা শোষক শ্রেণীর লোকজন সবচেয়ে ভালো বুঝে এবং নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তাই শোষিতদেরকে ভালো শিক্ষা/সংস্কৃতি চর্চা থেকে বিরত রাখতে তাদের চেষ্টার ত্রুটি হয় না ... কারণ শিক্ষা আর সংস্কৃতির চর্চা মানুষের মনকে উৎফুল্ল করে, তাদেরকে একতাবদ্ধ করে, তাঁদের নিজেদের সম্পর্কে গর্ব করতে শেখায়। মানসিকভাবে উঁচু থাকলে তাঁর উপরে সহজে অন্যায় চাপিয়ে দেয়া যায় না, শোষন করা কষ্টকর হয়ে যায়। এজন্যই দেখা যায় সৎ অফিসার চোখ না নামিয়ে উঁচুপদের ঘুষখোর অফিসারের সাথে কথা বলতে পারেন, আর উপরের লেভেলে থাকা অসৎ বা হীনমন্যতায় ভোগা লোকটি সেটার মুখোমুখি হতে পারে না বলে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়ার চেষ্টায় রত থাকে। আবার আগের সময়ে দেখা যেত, শোষক জমিদার প্রজাদের লেখাপড়া শেখার সুযোগ তৈরী করতে বড়ই অনাগ্রহী, বরং তাঁদেরকে অশিক্ষিত এবং আত্মমর্যাদাহীন করতে খুবই আগ্রহী। কোনো সৎ লোককে কাবু করতে চাইলে তাঁর উপর বিভিন্ন রকম অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে তাকে হীনমন্যতায় ফেলার চেষ্টা করা হয়। একজনকে কাবু করার মত কোনো কিছু না পেলে তাঁর আশেপাশের আপনজনকে অপমান করার চেষ্টায় থাকে .... তোর ভাই তো আলকাতরার মত কালো, তোর অমুক তো আগে ডাকাত ছিলো ... ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে হীনমন্যতা ঢুকানোর প্রানান্ত চেষ্টা চলতে থাকে। আবার এ-ও দেখা যায় অভাব অনটনের অমানুষিক কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করলেও অপমান সহ্য করতে না পেরে অনেকে জীবন বিসর্জন দেয়।

হীনমন্য লোকগুলো শুভ্র সত্যবাহীদের সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারে না, তাই পেছন থেকে কামড়ানোর জন্য কুটচাল চালতে থাকে। একই গোত্রের হীনমন্য আরো কাউকে পেলে আঁকড়ে ধরে দলে ভারী হওয়ার চেষ্টায় থাকে; নিজেরা নিজেদেরকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে ... ঠিক যেন অন্ধকারে ভয় পেলে যেমন আমরা ভয় তাড়ানোর জন্য অদরকারী কথাবার্তাও খুব জোরে জোরে বলি; অথবা, নার্ভাস হলে অতিরিক্ত হাসি বা ফুর্তি দেখানোর চেষ্টা করি; কিংবা, কাকের মত খড়ের গাঁদায় মাথা ঢুকিয়ে ভাবি আমাকে কেউ দেখছে না ... ... ... কিন্তু ভয়ের জড়তা কি আর কাটে!

কাজেই হীনমন্যতার ব্যাপারটি মোটেও অগ্রাহ্য করার নয়। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় কারণ এটা মানুষকে ভীষনভাবে আক্রান্ত করে - তাই যেন কোনোভাবেই নিজের অজান্তে হীনমন্যতায় ভুগতে হয় এমন পরিস্থিতির শিকার না হই সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ের কারণে মনের গভীরে এই ক্ষতিকর হীনমন্যতা জটা পাকিয়ে আছে। চেষ্টা করি সেগুলোকে মূলসহ উপড়ে ফেলে সামনের দিকে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে। এইরকম একটা সুযোগ পেয়েছি ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের কল্যানে; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে মনের গভীরে একটা গ্লানি ও হীনমন্যতা কাজ করতো ... এইটা থেকে বের হওয়ার উপায় পাওয়া মাত্র তাই লুফে নেই ... হাসি মুখে সংশ্লিষ্ট কিছু অসুবিধা মেনে নিয়েও।

চমৎকার বিকল্প থাকা সত্বেও আমরা কি জেনেশুনে পাইরেসী করেই যাবো (এবং মাথা নিচু করে চলবো) নাকি মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করবো - এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা নিজেকেই নিতে হবে।