সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০০৭

আমার বুদ্ধি কম্পিউটারের মত!!

১. ছোটবেলার কথা। বিকালে মাঠে খেলাধুলা করে বাসায় ফিরেছি। আম্মার কমান্ড আসলো .... হাতমুখ ধুয়ে আয়। বাধ্য ছেলে হাত মুখ ধুয়ে চলে এলাম (কোন কারণে ক্ষিপ্ত থাকায় বুদ্ধি কম্পুটারসম হইলো) - পাগুলো ধুলিময় রয়ে গেল... শুধু হাত-আর মুখ ধুয়ে চলে এসেছিলাম!

২. একই সময়ে আরেকরকম কমান্ড আসতো, যা নাস্তা খাবি, টেবিলে বস্। যথারীতি অতিবাধ্য ছেলে তাঁর কম্পিটারসদৃশ বুদ্ধি প্রয়োগ করলো .... চেয়ার টেনে ওটার সাহায্যে টেবিলে চড়ে বসা হলো!

৩. এখন পর্যন্ত মাঝে মাঝেই মাথা কম্পু হয়ে যায়। খাওয়া প্রসঙ্গে কেউ যদি প্রশ্ন করে কী দিয়ে খেলে -- উত্তরটা হয়: হাত দিয়ে তুলে তুলে মুখ দিয়ে চিবিয়ে খেলাম!

৪. মাঝে মাঝে অর্ধাঙ্গিনীর সাথে কিঞ্চিৎ মনোমালিন্য হয়। তখন শুনতে হয় - আমি মরে যাবো ... ...। কম্পুটার ব্রেনের রেসপন্স: এই সময়ে কোন মোড়ে যাবে; ঐখানে গিয়ে কী করবে? একা যাইয়ো না ... ...

৫. চ্যাটে/ফোনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন আসে: এখন কী করছেন? উত্তর: এইতো আপনার সাথে চ্যাট করছি / ফোনে কথা বলছি।

এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে.... সত্যই আমার বুদ্ধি কম্পিউটারের মত!! :(

জাপানে এই ধরণের উত্তর দিলে ওদের সাথে বেশ মেলে। ;)


(সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত)

শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০০৭

রূপকথাঃ ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো

রূপকথাঃ রূপক অর্থে যে কথা বলা হয়। লেখাটা মূলত: প্রজন্ম ফোরামের জন্য লেখা হয়েছিলো।



ব্যাখ্যাঃ
খেয়াল করার ব্যাপার এখানে দুইটা। প্রথমত: এখানে একটি বাহন বা ঘোড়া আছে আর আছে একজন মর্দ (নারী নয়, পুরুষ)। দ্বিতীয়তঃ এখানে টুইস্ট হলো ঘোড়ায়/বাহনে চড়ার পরেও মর্দ নিজে হাঁটছে। ঘোড়ার চেয়ে লম্বা ঠ্যাঙের ব্যাখ্যাটা মজার হলেও এখানে আসলে ঘোড়া আর মর্দকে একই সত্তা (Entity) বুঝানো হয়েছে। যে চালক, সে-ই বাহন।

আধ্যাত্ববাদে এই কথাটা দারুন একটা দর্শনকে তুলে ধরে। সেটা হলো ব্যক্তির আমিত্বকে ত্যাগ করার ক্ষমতা। যারা এই দুনিয়াকে প্রচন্ডভাবে আঁকড়ে ধরে, তারা এই আমিত্বকে ত্যাগ করতে পারে না। তাই বিশ্বাস করতে পারে না যে এই নশ্বর দেহ ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখানে শুধু কয়েকদিনের জন্য এই রঙ্গিলা দুনিয়া। সৃষ্টিকর্তা একটা দেহের মালিক করে দিয়েছেন তাকে সাময়িক ভাবে। এটা সম্পুর্নভাবে তার নয়। এটা তার বাহন মাত্র। কিন্তু এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে না বলে বাহনের মালিক হতে পারে না বরং বাহনে সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এই আঁকড়ে ধরার স্বভাবটাকে বিভিন্ন দর্শনেই নারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে - আকর্ষিত সত্তা। আর যাঁরা আকর্ষনকে ত্যাগ করতে পারে তাঁদেরকে পুরুষ বা মর্দ হিসেবে বলা হয়েছে। এখানে পুরুষ/মর্দ কিংবা নারী সত্তা আদতে রক্ত মাংসের পুরুষ বা নারী না-ও হতে পারেন। এটা স্বভাবকে নির্দেশ করে। পুরুষকে মহাপুরুষ বলে অনেক সময়। আর দেহটা যেটা দেখে আমরা পুরুষ বা নারী বলি, সেটা হলো ঘোড়া বা বাহন।

কাজেই নারী ঘোড়ায় চড়তে পারে না - কারণ সে আমিত্বকে ত্যাগ করতে পারে না বা ঘোড়াটাকে সত্তা থেকে আলাদা করতে পারে না। মর্দ ঘোড়ায় চড়ে, তারপর আবার হেঁটে যায়।


(ব্যাখ্যাটা আমার বানানো নয় - একজন গুরুর কাছে থেকে শুনে, উপলব্ধি করে লেখা/বলা)

মুখে তুলে খাওয়ানো রীতির সমস্যা

আগের একটি পোস্টে লিখেছিলাম যে, জাপানে সব শিল্পপণ্যতেই একটা অতিরিক্ত যত্বের ছাপ দেখা যায় যেটা উৎকর্ষবাদীতার একটা লক্ষণ। আরো যে জিনিষ দেখা যায়, সেটা হলো যে কোন বর্ণনার ক্ষেত্রে ডিটেইলিঙের পরিমান। সামান্য একটা কথাকেও এরা অত্যন্ত বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করে - যে কোন অনভিজ্ঞ লোকও সেটা সহজেই বুঝতে পারবে।

যেমন, কিছুদিন আগে একটা বুলেট ট্রেন (শিংকানসেন) লাইনচ্যূত হয়েছিল ভয়ঙ্কর এক ভুমিকম্পের সময়ে। সাধারণত ভূমিকম্প এলেই লাইনের ভিত্তি বা খুটিগুলোথেকে ভূ-পৃষ্ঠের অনেক গভীরে প্রবেশ করানো সেন্সর থেকে সেটার খবর পেয়ে যায় একটা যন্ত্র এবং সেই খবর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ লাইনে চলাচলকারী এবং কম্পনের উৎসের কাছাকাছি বুলেট ট্রেনে পৌছিয়ে যায়, ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেনের ব্রেক চালু হয় এবং সেটা থেমে যায়। এই বিশেষ ট্রেনটা লাইচ্যূত হওয়ার কারণ হলো ভূমিকম্পটার উৎসের খুব কাছে হওয়াতে সময় না পাওয়া। যখন ট্রেনে খবর পৌছালো, প্রায় ৩০০-৩৫০ কি.মি./ঘন্টা বেগে চলমান ট্রেন তখন থামা শুরু করেছে। আর সবচেয়ে দ্রুত হারে থামতে হলেও সেই প্রক্রিয়াতে সময় লাগে কিছুক্ষণ। ট্রেনটি যখন লাইনচ্যূত হয় (শুধু লাইন থেকে চাকাগুলো পাশে নেমে গিয়েছিলো) তখন এর গতিবেগ ছিল ১০০ কি.মি./ঘন্টা এর মত। পুরা ব্যাপারটাকে সংবাদে এ্যাত বিস্তারিত দেখানো হল যে আমার মত জাপানী-নাবুঝদেরও বুঝতে তেমন সমস্যা হয়নি। খবর বয়ানের পাশাপাশি এ্যানিমেশনের মাধ্যমে পুরা প্রক্রিয়াটা - ভূমিকম্প থেকে শুরু করে, এর সেন্সর, খবর, ব্রেক, লাইনচ্যূতি - দেখানো হল। সাথে সমস্ত তথ্যও। এর সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ভূমিকম্পের মূল ব্যাপার, এর বিভিন্ন রকম তরঙ্গ ও ওগুলোর গতিবেগ ইত্যাদি বিষয় সহজ ভাষায় এবং চিত্র ও এনিমেশনের সাহায্যে বুঝিয়ে দিল।

আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে, এটি আমার দাদাবাড়ীর। ওখানে সেচকাজের জন্য অনেক দাম দিয়ে জাপানি ইয়ানমার মেশিনযুক্ত পাম্প কেনা হয়েছিলো। একই সময়ে চীনের ডংফেং মেশিনের দামের চেয়ে এটা ৩ গুন বেশি দামী। কিন্তু চাচার কাছে শুনলাম যে এই ইয়ানমার মেশিন চলছে এখনও, যেখানে ডংফেং কিনেছিলো যারা তাদের পাল্টাতে হয়েছে কয়েকবার। কারণ, ইয়ানমারে একটা কিছু সমস্যা দিলে এটার বিকল্প আরেকটা ব্যবস্থা মেশিনের মধ্যেই করা আছে ইত্যাদি।

শেষ যে ঘটনাটা বয়ান করছি সেটা আমাদের বাসার। বাসায় গ্রামের একটা ছেলে থাকতো। কাজ করতো। ও একটু বড় হওয়ার পর ওকে এস.ও.এস. স্কুলে ট্রেড কোর্সে ভর্তি করা হল। সফলভাবে ওটা সম্পন্ন করার পর ৬ মাস এটলাস বাংলাদেশে (হোন্ডার ডীলার) শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করল। তারপর, চাকরী পেল মেনোকা মটরস-এ। এই কম্পানী ভারতের বিভিন্ন মটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ এনে দেশে সংযোজন করে। ওর প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা হলো, প্যাঁচ কাটা। ও হোন্ডার আন্দাজে ক্রু টাইট দিতে গিয়ে প্যাঁচ কেটে ঢুকে গেল - খালি হাতেই ক্রু-ডাইভার চালিয়েছিল। ধাতুর মানে এতটাই পার্থক্য।

জাপানের মাঙ্গা খুব বিখ্যাত। এগুলো কার্টুনের বই। যে কোন কাহিনীই এখানে ছবিময়। ফলে ব্যাপারটা ভিজুয়ালাইজ করা যায় সহজে।

শিরোনামে সমস্যা বলেছিলাম। কেন সেটা বলি -

সবকিছু এ্যাত সহজে পাওয়া অভ্যাসে পরিনত হওয়াতে এদের জটিল জিনিষ বোঝার ক্ষমতা মারাত্নকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ডিটেইলিং ছাড়া নিজ বুদ্ধি খরচ করে কোন জিনিষ এরা বুঝতেই চায়না। বাঙালীকে যেমন ক বললেই কলিকাতা বা কলা বা কমলা -- ঠিকভাবেই বুঝে নেয়। ওদের ক্ষেত্রে ক বললে তো হবেই না, কলা বললেও হবে না, কলার ছবি এঁকে পাশে লিখে তারপর মুখে বলে দিতে হবে। চাই কি, ছবিতে একটু কলার ফ্লেভার/গন্ধও যোগ করে দিতে হতে পারে!

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ২য় কিংবা ৩য় বর্ষে এসে শিখলাম বিব-কক। এটা হলো পানির কলের ইঞ্জিনিয়ারিং নাম। যে কোন বইয়েই বিব-কক (bib-cock) লেখা থাকে। ট্যাপ লিখলে স্যারগণ মাইন্ড করে। অবশ্য এতে আমেরিকা ব্রিটেনের ইংলিশ গ্যাঞ্জাম থাকতে পারে (পীচ আর অ্যাসফল্ট আদতে একই জিনিষঃ পার্থক্য হলো পীচ ব্রিটিশ টার্ম আর অ্যাসফল্ট আমেরিকান টার্ম)। আমার কথা বিশ্বাস না হইলে গুগলে bibcock লেখে একটু ইমেজ সার্চ দিয়েন (সেফ সার্চ)। এই আনকমন টার্মটা সাধারণ মানুষ না জানলেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের সকল ছাত্র এবং পেশাজীবি জানেন বলেই আমার ধারণা ছিল। Guess what? আমার থিসিসের পরীক্ষক (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের জাপানি প্রফেসর) ওটা জানেন না! :O :S =(( :-? X(

স্মৃতি মনে করে মেজাজ খারাপ করার আগেই লেখা বন্ধ করলাম।


(একই সাথে সচলায়তনে প্রকাশিত)

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০০৭

উৎকর্ষবাদীতা - যেভাবে দেখি

উৎকর্ষবাদীতা/পারফেকশনিজম হলো কোন একটা কাজ করার সময় ওটাকে বার বার নিখুত করার চেষ্টা এবং মনমত সুন্দর হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটার উন্নয়নে কোন বিরতি না দেয়ার একটা দারুন বৈশিষ্ট - যা কিছু মানুষের স্বভাবে থাকে। ব্যাপারটাকে খুতখুতে স্বভাবও বলা যেতে পারে। খুতখুতে স্বভাবটা আমি নিজেও পরিমিত পরিমানের বেশি পছন্দ করি না। বিশেষতঃ কিছু মানুষের এই ব্যাপারটা যখন মানসিক বিকারের পর্যায়ে চলে যায় - তখন তো নয়ই। যেমন ধরুন, কারো কারো পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বড়ই খুতখুতে স্বভাব। অসুখ বলি তখনই যখন এজন্য তিনি দিনে ৭বার গোছল করবেন, আয়নার সামনে কয়েকঘন্টা ব্যয় করবেন। কোন কোন ব্যক্তি আছেন, মাছ যতই ধোয়া হউক না কেন তাঁদের মন ভরে না - মনে হয় ময়লা তো রয়েই গেছে।

জাপানে এসে আর এদের সাথে কাজ করে বুঝলাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা পারফেকশনিস্ট বা উৎকর্ষবাদী মনোভাবের। ধরুন মেকানিকাল ল্যাবরেটরিতে কোন ছাত্র একটা যন্ত্রাংশ বানাবে, সে সেটা নির্দিষ্ট আকার দেয়ার জন্য ঘষার যন্ত্র দিয়ে ঘষতেই থাকবে ঘষতেই থাকবে -- যতক্ষণ না মনমতো হচ্ছে। সময়ের কোন ব্যাপার নাই, সন্ধা ৬টায় ল্যাব বন্ধ হয়, কিন্তু ঐ ব্যাটা দেখা যাবে রাত ১০টা পর্যন্ত ঘষতেছে। যে কোন ল্যাবে, একটা প্রেজেন্টেশন বানাবে, সেটা নিয়ে কি যে আদিখ্যেতা -- অক্ষরের রঙের ব্যাপারে, আকারের ব্যাপারে, ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন রং ইত্যাদি। দেশে কাজ করতে গিয়েছি ইউনিভার্সিটি থেকে, সাথে জাপানি প্রফেসর, আরও কয়েকজন ছাত্র। একটা ম্যাটেরিয়াল ময়লা, ব্যাস ... সবাই মিলে বসে গেলাম সবগুলো হাতে ঘষে ঘষে ধোয়ার কাজে - ১ ইঞ্চি আকারে ছোট ছোট করে কাটা ০.৫ ইঞ্চি ব্যাসের প্লাস্টিক পাইপের এক বস্তা টুকরা, ধরুন, একবস্তা ছোট ইটের খোয়ার মত পরিমান -- সবগুলো ধুলাম সবাই মিলে, প্রফেসরও বাদ নাই।

প্রথম প্রথম এসব আদিখ্যেতা মনে হলেও এখন বুঝি, জাপানের উন্নতির মূলকারণগুলোর একটি হয়ত এই উৎকর্ষবাদী মনোভাব। এরা নিজেরা কম্পিউটার বা গাড়ীর আবিষ্কর্তা না; আমেরিকা বা অন্য কোন দেশ থেকে এনেছে টেকনোলজি ---- তারপর সেই অক্লান্ত ঘষাঘষি। জাপানের প্রতিটি শিল্পপন্যের মধ্যেই এই অতিরিক্ত যত্নের ছাপটা চোখে পড়ার মত। যেমন এর ভেতরের কলকব্জা তেমনি এর বাইরের ফিনিশিং। ফলাফল ব্যবসা সফল। এ প্রসঙ্গে ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপরে নির্মিত বিভিন্ন সিনেমায় দেখা জার্মানদের কথা মনে পড়ে। ওদের প্রতিটি গাড়ী, অস্ত্রের অতিরিক্ত যত্ন নেয়া হত - তাই সবকিছুই চলতো দারুন।

এখানে একজন উড়িষ্যার বাঙালি দাদাবাবু থাকতেন, পশ্চিমবঙ্গে চাকরি, লেখাপড়ার সুবাদে বাংলা দারুন বলতেন। বলতেন এই এটিচ্যুডের পার্থক্যটা বড়ই চোখে পড়ার মত দেশে আর জাপানে। ওখানে কেনা সবচেয়ে দারুন মটরসাইকেল হিরো হোন্ডা কিনে দুদিন পরে আর ঠিকমত স্টার্ট নেয় না। সার্ভিস সেন্টারে বলে - আরে দাদা ওটা ব্যাপার না, কয়েকদিন বেশি করে কিক দিন, ঠিক হয়ে যাবে; অথচ ঐ একই ঘটনা এখানে ঘটলে কী হতো, সার্ভিস সেন্টারের প্রধান দৌড়ে আসতেন, মাথা ঝুকিয়ে গলায় কাতরতা ঢেলে দিয়ে সুমিমাসেন সুমিমাসেন (দূঃখিত অর্থে) বলে একাকার করতেন। তারপর, ওটার বদলে আরেকটা ভালো দেয়ার চেষ্টা করতেন। সার্ভিস চার্জ নিতেন না, কারণ এটা তাঁদের ত্রুটি। --- দাদাবাবু ঠিকই বলেছিলেন মনে হয়।

আমি নিজেও একটু খুতখুতে স্বভাবের মনে হয়। বিশেষত টাইপ করার সময়ে বানানের প্রতি অতিযত্ন নেবার প্রবণতাটাকে ঐ স্বভাবেরই এক রূপে বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে। যখনই টাইপ করি, কোন বানানের ব্যাপারে মনে একটু সন্দেহের উদ্রেক হলেই অভিধান ঘাটার চেষ্টা করি। অবশ্য কখনো কখনো খুব ক্লান্ত থাকলে অবশ্য ... ভুল হচ্ছে, এই ধরণের কোন অনুভুতি/সন্দেহই মনে কাজ করে না - ফলে লেখাটা হয়ে যায় দায়সারা গোছের।

অবশ্য শুরু থেকে এমন উৎকর্ষবাদী ছিলাম না। স্কুলে খাতায় এমনভাবে লেখতাম, যে হাতের লেখা দেখে বাবা বলত, যে তুই তো স্যারকে বাসায় টেনে আনবি, কিংবা, তোর হাতের লেখা পড়ার জন্য স্যার তোকে ডেকে নিয়ে যাবে। নিজের হাতের লেখা সম্পর্কে আমার নিজের ধারণাও ওরকমই ছিল। তবে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করতাম, স্যার ঠিকই পড়ে নম্বর দিত -- স্যারদের যোগ্যতা দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে যেত :D । পরবর্তীতে কোন এক সুন্দর দিনে ঠিক করলাম --- নাহ্ এভাবে অন্যদের কষ্ট দেয়া আর নয়। সুন্দর না হোক, অন্তত বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারে এমন পাঠযোগ্য করে লিখতে হবে। হ্যাঁ - ঠিকই ধরেছেন --- উৎকর্ষবাদীতা আমাকে দখল করলো বোধহয়।

ধুর ...... ...... ব্যাপার ঠিক তা না; একটু খুলে বলিঃ মূল উৎসাহ (!?) বা আগ্রহটা পেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়; বন্ধু সৌরভ (বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক), কিংবা পান্থ (ওকলাহোমাতে আছে) বা আবীর (সাউথ ডাকোটাতে আছে) সকলের হাতের লেখার পাশে আমারটা খুলতে ইচ্ছা করতো না। কিন্তু আমার ক্লাসনোট নেয়া ছিল খুব ভাল। কোচিং করার সময়েই পান্থর সাথে পরিচয় - ও ব্যাটা চার রঙের কালিতে নোট নিত। কোন লাইন কালো কালি, কোনটা নীল আবার কোনটা লাল বা সবুজ। দেখাদেখি আমিও শুরু করেছিলাম। যা হোক, ক্লাসনোট নেয়ার সময় কালির ব্যবহার আর বিস্তারিত টুকে রাখার জন্য (স্যার এই সময়ে একটু খুক খুক করে কাশলো ... এই টাইপের ডিটেইলিং ;) ) পরীক্ষার আগে কিছু ক্লাসনোট উদাসীন বন্ধু এসে আমার খাতা ফটোকপি করতো পড়ার সুবিধার জন্য। ওদের বরংবার এসে আমাকে ঘুম থেকে তোলা থেকে বাঁচার জন্যই হাতের লেখাটা একটু উন্নয়ন করতে বাধ্য হলাম শেষে (হল/ছাত্রাবাসে থাকতাম)।

সেই সুন্দর করার ইচ্ছাটা মনে প্রভাব ফেলেছিল নিঃসন্দেহে। কারণ নিজের পাঠযোগ্য লেখায় খাতার ফটোকপি দেখে নিজেই মুগ্ধ হতাম - প্রেরণা পেতাম :D ।

থিসিস করার সময় পার্টনার ছিল পান্থ। ব্যাটাও ওরকম। আমি যখন ছেড়ে দিতাম ও তখন দ্বিগুণ উৎসাহে সৌন্দর্য বর্ধনে বসতো। কাজ ছিল সফটওয়্যার বানানো, যেটা যে কোন কাঠামোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হিসাব করে দিতে পারবে। কোডিং করার পর ঐ ব্যাটা আবার বসতো সৌন্দর্য বর্ধনে .... ইনপুট, আউটপুট আর গ্রাফিকাল ফিল্ডের রূপচর্চা। থিসিস লেখার সময়ে, ও ব্যাটার জ্বালায় বিরক্ত হয়ে যেতাম .... কিন্তু দেখা যেতো, ও ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলে আমি আবার একই ভূমিকা নিতাম। সমমনা না হলে আর বন্ধুত্ব কেন ... ...

নিজের অনেক গুণগান করলাম :D । তবে, এখন আর ১০০% শুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করি না আমি। সবসময়ই চেস্টা করি মোটামুটি ৯৫% বা এর বেশি শুদ্ধ করতে। কারণ ৫০-৭০% উৎকর্ষ বা শুদ্ধভাবে লেখার জন্য এ্যাতদিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা অর্জিত দক্ষতাই যথেষ্ট। কিন্তু সেই ৭০ থেকে আগে বাড়ার জন্য জ্যামিতিক হারে চেষ্টা/যত্নের পরিমানটা বাড়াতে হয়। এসকল ক্ষেত্রে ১০০% সবসময়ই একটি কাল্পনিক ব্যাপার মনে হয়। তাই থামতে জানতে হবে। জানতে হবে কখন ও কোথায় থামতে হবে .... ...তা না হলে ঘষতে ঘষতেই জীবন পার হয়ে যাবে, অন্য কিছুই আর করা হয়ে উঠবে না।


৭-জুলাই-২০০৭
(লেখাটি সচলায়তন এবং খিচুড়ী ব্লগে প্রকাশিত হল)

বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০০৭

প্রজন্ম ফোরামের বিজ্ঞাপন

প্রজন্ম ফোরাম
করি বাংলায় চিৎকার

অনলাইনে আড্ডা ও আলোচনার জন্য সম্পূর্ণ বাংলা ফোরাম
http://forum.projanmo.com


বৈশিষ্টসমূহঃ
  • ইন্টারফেস বাংলায়: নির্দেশাবলী, মেনু, মেসেজ সবকিছুই বাংলায়।
  • বিল্টইন বাংলা স্ক্রীপ্ট: বাংলায় লেখার জন্য দরকার নেই আলাদা কোন সফটওয়্যার।
  • ইউনিজয় এবং ফোনেটিক লে-আউট সাপোর্ট (বিল্ট-ইন)
    • ইউনিজয় প্রায় বিজয়ের মতই একটি ওপেনসোর্স লেআউট।
    • ফোনেটিক হল ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার লেআউট। ইংরেজি অক্ষরে বাংলা উচ্চারণ যেভাবে চ্যাট করার সময় লেখা হয়, এতেও প্রায় ওরকম করে লিখলেই ওটা বাংলায় চলে আসে। বাংলা টাইপিং-এ সম্পুর্ন অনভিজ্ঞ হলেও এটাতে অভ্যস্থ হতে আধা ঘন্টার বেশি লাগবে না কোনক্রমেই। (Ami = আমি; blo = বলো)
    • টাইপিং-এর চমৎকার টিউটোরিয়াল আছে।
  • বাংলা টাইপিং জানেন না? নো চিন্তা ডু ফুর্তি ... আপাতত ইংরেজিতেই লিখুন। দু-একদিনের মধ্যেই ফোরামের অভিজ্ঞ সদস্যবৃন্দ নতুনদের বাংলা টাইপিং শিখিয়ে দেবে খুশি মনেই। (আড্ডা মারার সঙ্গী বাড়লে কে না খুশি হয়!)
  • ইতিমধ্যে পাঁচ-শতাধিক সদস্য, ১৫০০ এর বেশি টপিকে ১৫০০০ এর বেশি পোস্ট করেছেন।
  • বৈচিত্রময় বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন সাব-ফোরাম। অর্থনীতি, রাজনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, ট্রাবলশুটিং, সাহিত্য-সংস্কৃতি, পড়াশোনা, বিনোদন, চায়ের কাপে ঝড়, হাসির বাক্স সহ ২০টির অধিক বিভাগ রয়েছে।
  • সাধারণ আড্ডা থেকে সিরিয়াস আলোচনা সবই আছে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে।

সদস্য হোন, আড্ডা দিন বাংলায় ... সবই সম্পূর্ণ ফ্রী। লগ ইন করুন
http://forum.projanmo.com

প্রজন্ম ফোরাম
করি বাংলায় চিৎকার

বুধবার, ৪ জুলাই, ২০০৭

নামে কী বা এসে যায় !

(পোস্টটি গতকাল সর্বপ্রথম সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিলো)

নিজের নাম নিয়েই একটা ছোট অনুভুতি লেখব বলে মনস্থির করলাম। যদিও এ ধরণের তুচ্ছ ব্যাপারে লেখা আদৌ উচিৎ হচ্ছে কি না সেটার ব্যাপারে মনে একটু সন্দেহ রয়েই গেল।

জগৎ-সংসারে এ্যাত বিষয় থাকতে নিজের নাম নিয়ে কেন পড়লাম? সেটা হয়ত আমিত্বকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তবে লেখার মশলা মনে জমা হয়ে ছিল অনেক দিন আগে থেকেই, আগের লেখায় হাসান মোরশেদ ভাইয়ের একটা মন্তব্য দেখে ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।

যা হোক, আমার নামটা বেশ ... মানে বেশ ভালই লম্বা। দৈর্ঘ্যের কারণেই নামে কিছু ব্যাপার এসে যায় আমার নিত্যজীবনে।

ছোট বেলা থেকেই বিড়ম্বনার শুরু। সবার খাতার নাম লেখার জায়গায় সুন্দর নাম এটে যায়... আমারটা হয় না। তারপর, পরীক্ষার ফর্ম পূরণ, বেতন বই, ব্যাংকের জমা বই সমস্ত জায়গাতেই নিজের নামের স্থান সংকুলান করতে ন্যারো ফন্টে হাতের লেখা শিখতে হয়েছে। টোফেল পরীক্ষা দেয়ার সময় তো কানের পাশ দিয়ে গুলি গেল, আর একটা অক্ষর বেশী হলেই ফর্মে নাম আটতো না। পাসপোর্টের নামের ঘরেও বেচারা অফিসার এক লাইনে নাম লিখতে পারে নাই। আর স্কুলের ক্লাসের স্যাররা আমাকে নাম ধরে ডাকতে গেলেই কেমন জানি ঘুম ঘুম হয়ে যেত তাঁদের কন্ঠস্বর।

আমার গবেষণার কাজে, প্রফেসরের পয়সায় প্রায়ই দেশে পাঠায়, নমুনা সংগ্রহ করতে হয় -- বিমানে চড়া/নামা আর ইমিগ্রেশনের ফর্ম পূরণ করতে আমার সবসময়ই সহযাত্রীদের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

যা হোক সবচেয়ে বড় ফাপরে পড়েছিলাম জাপানে এসে। এখানে স্বাক্ষর করার তেমন চল নেই। সকলেই তার বদলে ছোট্ট সীল ব্যবহার করে। সীলগুলো গোলাকার বা চারকোনা। গোলাকার সীলগুলো মোটাসোটা একটা কলমের মত ৩ /৪ সে.মি. লম্বা এক টুকরা কাঠ। তাঁর নিচের মাথায় নামের কাঞ্জি বা জাপানী আকিবুকিমার্কা অক্ষরে নাম লেখা থাকে।

কাহিনী হলো, আমাকে দেশ থেকেই পরিচিতিমূলক সমস্ত মেইলে আমার দেশের প্রফেসর শামীম নামেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমার নতুন জাপানী প্রফেসর আমার লম্বা নাম জানলেও সবসময় সুবিধাজনক ছোট শামীম নামে ডাকতেন। জাপানে আসার পরপরই ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সেই সীল (হাংকো/ইনকান বলে) লাগবে। প্রফেসর আমাকে সহ গিয়ে অর্ডার দিলেন ... জাপানী অক্ষরে শামীম। ওটা দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুললাম। এরপর গাড়ী কেনার সময়ে জানা গেল এ জন্য সীলটাকে সিটি অফিসে নিবন্ধিত করতে হবে। কিন্তু ওখানে বলে এটা তো তোমার পাসপোর্টের নামের অংশ না এটা করা যাবে না। তখন ওখানকার অফিসার ফোনে আমার প্রফেসরকে না পেয়ে একটা চিঠি লিখে দিলেন।

চিঠি পড়ে প্রফেসর বললেন তোমার মূল নাম এ্যাত বড় যে এটা দিয়ে সাইজমত সীল বানানো অসম্ভব, তাই শেষাংশ জামান দিয়ে সীল বানাও। ওটার অর্ডার দিলাম -- কয়দিন পরে ওটা নিয়ে গেলাম সিটি অফিসে .... আবার বলে হবে না। তোমার নাম ভেঙ্গে কোন অংশ দিয়ে হবে না। তাই শেষ পর্যন্ত সীল হল ছোটখাটো মিয়া।

ওহহো.. আমার নামটাই তো দেয়া হল না: মিয়া মোহাম্মদ হুসাইনুজ্জামান (Miah Mohammad Hussainuzzaman)।

যশোরের প্রজেক্ট অফিসে আমাকে বলে মিয়াজাকির মিয়া ভাই।

তাই বলি, নামে এসে যায়। আমার পরবর্তী বংশধরদেরকে এ ধরনের ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ঠিক করেছি খুব ছোটখাট নাম রাখবো ওদের।

এ্য্যতক্ষণ শুধু অসুবিধাই বললাম। বড্ড একপেশে হয়ে গেল ব্যাপারটা। তাই বড় নামের একটা সুবিধার কথা বলে শেষ করি: এ্যাত বড় নাম সাধারণত হয় না জন্য একনামে চেনা যায়। আমার নামের মূল অংশ দিয়ে কোন ইমেইল বা অন্যকিছু রেজি: /নিবন্ধন করতে গেলে কখনই অসুবিধা হয় না। আর, কখনো যদি এই নাম দিয়ে গুগল করেন, নিশ্চিতভাবেই আমাকে খুঁজে দেবে।